রংধনু - পর্ব ২৫ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


রাত এগারোটায় রুমে চলে যায় জুলি।দেড়টায় বিভান ঘুমিয়ে পড়ার আগে দরজা খুলে বাহিরটা একবার চেক করে নেয়। ওদের রুমের বিপরীত রুমটাই হলো জুলির।ওর রুমের আলো জ্বলছে।তারমানে জুলি এখনো ঘুমোয়নি।এদিকে বিভানক বাহিরে তাকাতে দেখে অবাক বেলা।চুল আঁচড়াচ্ছিলো।চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বিভানের কর্মকাণ্ড লক্ষ করছিলো ও।লোকটা দরজা খুলে কি করতে চাইছে?বেলা একটু জোরেই বলল,
''কি করছেন বাহিরে তাকিয়ে?"
বিভান একবার ওর দিকে ফিরে ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বলল,
''শশশ ওয়েট।"
বেলা চুপ করে রইলো তবে ভ্রু কুঁচকে বিভানের কার্যকলাপ দেখতে থাকে।কিছুক্ষন পর সরে আসে বিভান দরজা লক করে বেলার কাছে আসতে থাকে।বেলা চুল খোঁপা করে চিরুনীটা রেখে দিলো।বিভান ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।বেলা বসে বলতে থাকে কি করছিলেন ওভাবে?
বিভান একটু উঁবু হয়ে ওর দুপাশে হাত রেখে নিজের মুখটা বেলার কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
''দেখলাম কেউ লুকিয়ে দেখছে কিনা?"
বলেই বেলার কানে চুমু দিয়ে আলতো কামড় লাগায় বিভান।বেলা কেঁপে উঠে। ওর গলা কাঁপছে।কম্পিত গলায় ধীরে বলল,
''কে দেখবে?"
''সেটা বুঝতে পারোনা?"
বলেই অপর কানে সেই একই ভাবে কামড় দেয় বিভান।একটু যন্ত্রনা হলে ও বেলার কাছে মুহূর্তেই সেটা অতি আনন্দের হয়ে উঠতে থাকে।বিভান বেলার গালে চুমু দিতে দিতে ওর গলা থেকে শাড়ীর আঁচল সরিয়ে দেয়।বেলা ঘন ঘন নিশ্বাস নিয়ে বিভানের পিঠ জড়িয়ে ধরে দুহাতে।বিভান বেলার গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে এক হাতে টেবিল ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দেয়।দুজনের ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দ বাতাসে মিলে যেতে থাকে।ঠিক দুটোয় জুলি বেরিয়ে আসে।বিভানদের জানালার দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করে।কিন্তু রুমটি সাউন্ড প্রুফ তাই কোন রকমের শব্দ পায়নি।বেলার ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে আবেশে চুমু খাচ্ছিলো বিভান।হঠাহ জানালায় ঠক করে শব্দ হতেই বিভান বেলা সেদিকে তাকায়।বেলা রীতিমতো ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে।বিভান অনেকটা সময় সেদিকে কান খাাড়া করে রাখে কিছু হয় কিনা? কিন্তু কিছুই হলোনা।বিভান আবার ও বেলার ঠোঁটে মন দিলো।এদিকে কিছু শুনতে না পেয়ে জুলি রেগে জানালায় হাত দিয়ে বাড়ি মেরে রুমে চলে যায়।
..........................
রাতে নিশাদ একটু সুস্থ বোধ করছে।তবে শুধু ভালো মতো চোখই খুলতে পেলো।আর কিছুই পারলোনা।চোখ খুলে ফোনটা হাতে নেয় কিন্তু হাত দুটো ব্যাথায় ভরে আছে।খুব কষ্ট করে ফোনটা ওপেন করে দেখতে থাকে মিসড কল অদেখা বার্তা।নিশাদ সেগুলো চেক করা ছাড়া কিছু করতে পারেনা।ফোনটা পাশে রেখে ধীর গলায় ডাকলো, 
''সাঁঝ কই তুই?"
সাঁঝ কাজ করছিলো।ভাইয়ের ডাকে দৌড়ে আসে।নিশাদ ওর দিকে তাকায়।সাঁঝ বলল,
''জি ভাই!!খাবি কিছু কি দিবো?"
নিশাদ একটা হাত উঁচিয়ে ওকে কাছে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।সাঁঝ কাছে যেতেই নিশাদ ধীরে বলল,
''কুঞ্জনের শরীর কেমন? জ্বর আছে?"
''না ভাই কম আছে?ডাকবো?"
'''না।ওকে পেইন কিলার দিস বেশি ব্যাথা করলে।আদনান কেমন আছে?"
''ভালো ভাই।কথা হয়েছিলো।ও ভালো আছে।"
''ওহ।"
সাঁঝ বলল,
''ভাত খাওয়ায় দেই?"
''খিদা নাই।যা করছিলি কর গিয়ে।"
''ওকে।"
সাঁঝ বেরিয়ে গেলো।নিশাদ ফোনটা নিয়ে ইদ্রির কল চেক করে।অনেকবার কল দিয়েছে মেয়েটা তবে কেন?
নিশাদ ফোনটা আবার ও রেখে চোখবন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে।হঠাৎ মেসেজ টোনে চোখ খুলে নিশাদ।ঘুম আসছিলো না অবশ্য।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইদ্রির বার্তা।সেটা ছিলো,
''কেমন আছেন?একটু ভালো লাগছে?খেয়েছেন?"
নিশাদ ভাবনায় পড়ে যায়।মেয়েটার বার্তা গুলো কেমন যেন ওকে টানে।ও তাৎখনিক উত্তর দিয়ে বার্তা প্রেরন করে, 
''ভালো।খাইনি খাবো ও না।রাত জেগে মোবাইল না ঘেঁটে ঘুমাও।"
কিছুক্ষন পর ইদ্রির বার্তা আবার এলো।ও লিখলো,
''খেয়ে নিন।না হয় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবেন।আমি ঘুমিয়ে পড়বো একটু পরই।"
নিশাদ বার্তাটি দেখে তবে কিছুই বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।ফোনটা পাশে রেখে আবার ও চোখ বুজে নেয় নিশাদ।রাত তিনটা কুঞ্জনের চোখে ঘুমের কোন আভাস নেই।চোখ বন্ধ করতেই নিশাদের অগ্নিমূর্তির রুপটা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠে ও।হঠাৎ মনে হলো ওর কপালে কারোর হাত।কুঞ্জন হঠাৎ কেঁপে পাশে তাকিয়ে  দেখলো পুরুষ ছায়া।কুঞ্জন কিছু বলার আগেই ছায়াটা ওকে শোয়া অবস্থায় জড়িয়ে গুঁমড়ে কাঁদতে থাকে।কুঞ্জন বুঝতে পারে এটা নিশাদ ছাড়া আর কেউ নয়।কুঞ্জনের বুক ভয়ে দুরুদুরু কাঁপতে শুরু করেছে।কুঞ্জন শুনতে পায় নিশাদের শরীর কাঁপছে আর খুব গরম ও।কুঞ্জনের ও চোখ ভরে আসে।ভাইয়ের পিঠে হাত রাখে খুব কষ্টে।কারন ওর হাত ও খুব ব্যাথা। নিশাদ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো,
''ভাইকে মাফ করে দিস বাচ্চা।এতোটা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। মাফ করে দিস ভাই।আমি তোদের খুব ভালোবাসি।তোদের কোন খারাপ দেখলে শুনে খুব কষ্ট হয়।তবে আমি ক্লান্ত না।তোদের জন্য করতে একটু ও কষ্ট হয়না।একটু ভালো মতো পড়াশুনা করলে পারিস।"
কুঞ্জন কেঁদে কেঁদে বলতে শুরু করলো,
''ভাই আমি সরি।আমি ভুলে খেয়ে ফেলছিলাম।আর কখনো হবেনা ভাই।আমাকে মাফ করে দিস।"
নিশাদ মুখ উঠিয়ে আঁধারে ভাইয়ের কেঁটে যাওয়া মুখ দেখে সেখানে চুমু দিয়ে বলল,
''খুব ব্যাথা পেয়েছিলি না?"
''একটু।"
''দেখি তো সর।আজ এখানে ঘুমোই।আমার শরীর কাঁপছে রুম পর্যন্ত যেতে পারবোনা।"
কুঞ্জন একটু সরে গিয়ে ভাইকে ঘুমাতে জায়গা করে দিলো।নিশাদ শুয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''জানিস ছোট বেলায় এভাবেই ঘুমোতি।"
''তোর সাথে? "
''হ্যা তো?"
কুঞ্জন হেসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
..........................
হুমায়রা লাবনী সাঁঝ বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে।মাঝে লাবনী আর দুপাশে দুবড় বোন।হুমায়রা কানে হেড ফোন গুঁজে চোখ বুজে আছে।লাবনী সাঁঝকে জড়িয়ে ধরে একপা ওর গায়ে উঠিয়ে দিয়েছে।সাঁঝ ফোন চেক করছে আর অন্য হাতে লাবনীর চুল হাতিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ লাবনী নাক শিটকে বলল,
''ইস ছি কি গন্ধ!!!"
পরক্ষনে সাঁঝ ও গন্ধ পেয়ে মুখের সামনে থেকে ফোন সরিয়ে বলল,
''লাবনী এটা কি ছিলো?"
''আমি কি জানি?আমাকে জিজ্ঞেস করিস কেন?হুমায়রা আপু আছে না?"
সাঁঝ হুমায়রার দিকে তাকায়।ম্যাডাম স্ফুর্তিতে আছে। গান শুনছে।সাঁঝ ডাকলো ও শুনে না।আবার ও ডাকে তারপর ও শুনেনা।এবার সাঁঝ ওর হেড ফোন খুলে দিতেই হুমায়রা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।সাঁঝ ধমকে বলল,
''খবিস কোথাকার!!কি খেয়ে এসেছিস ইদুর পঁচা?"
বোনের কথায় উঠে বসে হুমায়রা।বলল, 
''কি হলো?"
''গন্ধ পাস না খাচ্চর?"
হুমায়রা আর কিছুই বলতে পারে না শব্দ করে হেসে দেয়।সাঁঝ আরো বেশি রেগে বলল,
''যা বাথরুম করে আয় খবিশ কোথাকার।"
হুমায়রা হাসি থামিয়ে বলল,
''হুম নিজেতো দাও না মনে হয়।ঐদিন একবার পাদ দিয়ে আমারে মেরে ফেলতে নিছিলি।আমার জায়গায় তোর জামাই থাকলে নির্ঘাত হার্টফেল করতো।"
সাঁঝের ও হাসি পায়।তারপর ও রাগী কন্ঠে বলল,
''আমারটা বাদ দিয়ে নিজের টা ভাব।এক পাদে বোন দের মেরে ফেলতে নিছোস। তোর জামাই মনে হয় বলবে আহ সুন্দর গন্ধ আমার বৌয়ের পাদে।খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।"
পাশ থেকে লাবনী হেসে বলল,
''পাদ খাওয়া যায় সাঁঝ আপু?
হুমায়রা ওর কথার জবাবে বলল,
''খাবি।আরেকটা দিবো?"
''না বাবা না মরেই যাবো।হুমায়রা আপু পারলে গোসল দিয়ে এসো।পুরো শরীর পঁচে গেছে না তোর?"
সাঁঝ ও হেসে দেয়।হুমায়রা আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সাঁঝ আর লাবনী আবার ও শুয়ে পড়ে।
.....................
এদিকে সেলিম সাহেবের আর দেখা পেলো না আদনান।মন খুব খারাপ।আজ সকালে যখন বসের কাছে গিয়েছিলো।সে বলল,
''আরে পাঁচশত টাকার জন্য কি?দিয়ে দিবে আর কি?এজন্য আবার বিচার দিতে হয় বাচ্চাদের মতো?দেখো অবস্থা।তুমি বললে সেলিম অনেকের টাকা নিয়েছে।কই কেউই তো বিচার দেয়নি।"
আদনান ভাবে আসলেই তো।ও আসলো এর আগে কেউ আসেনি।ও বলল,
''স্যার টাকাটা না দিলে যেতে পারবোনা আমি।বুঝার চেষ্টা করেন।"
বস কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,
''আরে মিঞা যাও।তোমার এসব ফালতামি কথা শোনার সময় নাই আমার।"
আদনান আর সহ্য করতে পারেনা।দৌড়ে গিয়ে ওনার কলার টেনে বলল,
''কি ফালতু কথা বলি?আমি ফালতু কথা বলি?ঐ হারামির বাচ্চা ইতরের পোলা আমাদের কষ্ট কি বুঝবি তুই?রাজপ্রাসাদে থাইকা কি বুঝবি হ্যা?আল্লাহর গজব পড়বে বুঝলি গজব পড়বে।"
আদনানের চিৎকারে অনেকেই চলে এসেছে।ওনি রীতিমতো ঘেমে একাকার।সবাই আদনান কে খুব কষ্টে সরায়।ও তখন ও গালাগালি করছিলো। ওকে নের করে আনে। তখন বস ও বেরিয়ে এসে ওর কাছে এসে বলল,
''শালা তোর সাহস কম না আমার গায়ে হাত দিস।তোকে দেখাচ্ছি।"
বলেই ওকে চড় মারতে লাগলো ইচ্ছা মতো।আদনানের দুহাত লোকেরা ধরে আছে।বস বলল,
''ওকে নিয়ে আটকায় রাখ।কোন খাওয়া দিবিনা।যেদিন আমরা যাবো ওকে গাড়ির পিছনে নিয়ে যাবি।ওর বাসার সামনে ফেলে দিয়ে আসবি তোরা।"
বলেই ভিতরে ঢুকে গেলেন ওনি।।আদনান লজ্জায় অপমানে রাগে ফুঁসতে থাকে।

!!!!

বেলার বুক ধুকপুক করছে।আজ চারদিন পর দিল্লীতে ফিরছে ওরা।মা কতো টা রেগে থাকবেন ওর সাথে কে জানে?বেলা ব্রাশ করে গোসল সেড়ে বেরিযে আসে।বিভান পাঞ্জাবী পরেছে আজ।দিনটা শুক্রুবার।ওর মসজিদে নামাজ পড়বে আজ।বিভান পাঞ্জাবীর বোতাম লাগিয়ে বেলার পিছনে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে গালে আলতো চুমু দিয়ে বলল,
''ভালবাসি।"
''আমিও।"
বিভান খেয়াল করলো বেলার কথাগুলো অন্যরকম লাগছে।কারন যতোবারই বিভান ওকে জড়িয়ে ভালবাসি বলেছে বেলা খুব সুন্দর করে হেসে ওর গালে হাত রেখে বলত আমি ও ভালবাসি।কিন্তু আজ বৌটা কেমন যেন চুপ হয়েছে।বেলার থেকে সরে এসে ওকে নিজের পানে ফেরায় বিভান।বেলার চেহারা মলিন হয়ে আছে।বিভান ওর দু কাঁধে হাত রেখে বলল,
''কি হয়েছে?"
বেলা মাথা নাড়লো।মুখে ম্লান হাসি টেনে বলল,
''কিছুইনা।আমি ঠিক আছি।চলুন না নাস্তা খাই।"
''বেলা তুমি লুকোতে চেষ্টা করোনা।অন্তত আমার কাছ থেকে।প্লিজ বলো কি হয়েছে?"
''আমি মাকে নিয়ে চিন্তিত। আমি না বলে এসেছিলাম।মা তো খুব রেগে থাকবেন।"
''বেলা আমি বলেছি তো।মা রেগে থাকবেননা।আর তুমি ও মন খারাপ করোনা।আমি আছি।"
বেলা একটু হাসলো।তারপর ও ওর আতঙ্ক লাগছে বন্দনা আখতার কে নিয়ে।ওরা নাস্তা খেতে নিচে চলে আসে।জুলি নাস্তা খাচ্ছিলো।বিভান বেলাকে নিয়ে আরেকটা টেবিলে গিয়ে বসে সুকান্ত দাসকে ডেকে বলল,
''আমার জন্য একটা পার্সোনাল রোমান্টিক সিটের ব্যাবস্থা করেন যেখানে আমি আর আপনার বৌদি একসাথে খাবো।দুপুরে ও সেখানে খাবো।"
''অবশ্যই।এক্ষুনি রেডি করছি বসুন।"
সুকান্ত দাস হেসে চলে গেলো।হোটেলের ডেকোরেটর দের একটা ডাইনিং ঠিক করতে শুধু দুইজনের জন্য।জুলি শুনে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় ওদের দিকে।বেলা বলল,
''বিভান এখানেই ঠিক আছি।সবার সাথেই খাই।"
বিভান বেলায় মন দেয়।ওর দিকে ফিরে বলল,
''বেলা বিয়ের তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যায়নি।তের বছর পার হয়ে গেলো।অন্তত এখন যখন এক সুযোগে চলে এসেছি তাহলে শেষ দিনটাকে স্মৃতিময় করে যাই।অন্তত মনে থাকবে সবসময় এই চারটা দিন।"
বেলা হাসে বিভানের দিকে।বিভান বেলার গাল আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।কিছুক্ষন পর সুকান্ত দাস এসে বললেন,
''আপনার রোমান্টিক রুম আর স্পেশাল নাস্তা হাজির।এখান থেকে ডান দিকে গিয়ে দেখবেন সাদা পর্দা টানানো।ঐটার অপরপাশেই আপনাদের রুম।"
বিভান ধন্যবাদ জানিয়ে বেলাকে নিয়ে সেই রুমটায় যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।জুলি ওদের যাওয়ার পানে চেয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে।বেলা আর বিভান রুমটায় চলে আসে।খুব সুন্দর করে সাজানো রুমটা।রুমের ভেতর দেয়ালে সাথে লাগানো দুটো ফুলের টব আর সেখানে বড় বড় দুটো গোলাপ ফুলের তোড়া।খাবার টেবিল টাও বেশ পরিষ্কার ভাবে সাজানো।বিভান বেলাকে নিয়ে সামনা সামনি দুটো চেয়ারে বসে।বিভান খাবারের ওপর থেকে ঢাকনা তুলে বেলা আর নিজের প্লেটে বাড়ে।
বিভান নিজের প্লেট থেকে বেলার মুখে একটু খাবার তুলে দেয় বেলা ও বিভানকে খাইয়ে দিলো।
এদিকে জুলি নিজের টেবিল থেকে উঠে আসে।সুকান্ত দাস বিভানকে যখন দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলো তখন জুলি ও শুনে নিয়েছিলো।তাই ও উঠে সেদিকে হাঁটতে থাকে।বিভান বেলাকে খাইয়ে দিতে দিতে ওর গালে আলতো করে চুমু খায় এবং জুলি সেটা দেখে নেয়। এবং রেগে সরে আসে।সেই দুপুরে ও বেলা আর বিভান সেই জায়গায় লাঞ্চ করে।লাঞ্চের সময়ে গানের ব্যাবস্থা হয়েছিলো ওদের জন্য।
.......................সাঁঝ আর পারছেনা নিতে এসব।সাইমন ওর সামনে ও আসছে না কথা বলছেনা।সেদিন হয়ত লিফ্টে ছিলো বলে দেখা হয়েছিলো।সেদিন সকালে সাঁঝ শুয়ে ভাবছিলো হয়ত সেদিন কথা গুলো ওনাকে সেভাবে বলা ঠিক হয়নি।রেস্টুরেন্টে যা বলেছিল তা হয়ত মজা করেছিলেন।কিন্তু রাগের মাথায় সাঁঝ অনেক রুড হয়ে গিয়েছিলো।সাঁঝের খুব খারাপ লাগছে।লোকটাকে সরি বলা উচিৎ।কিন্তু সে সামনেই আসছেনা।ও কি করবে এখন?কিভাবে লোকটার সাথে কথা বলে তাকে সরি বলবে?সাঁঝের হঠাৎ খেয়াল হলো একদিন সাইমনের সাথে বেরিয়েছিলো ঘুরতে সেদিন খিলগাঁওতে সাইমন সাঁঝকে ওর অফিস দেখিয়ে বলেছিলো,
''জানেন এটা আমাদের দুই ভাইয়ের অফিস।অবশ্য ভাইয়া তেমন আসেনা।আমিই আসি।"
জবাবে সাঁঝ বলে ছিলো, 
''ওহ আচ্ছা।"
''হুম।"
সাঁঝ লাফিয়ে উঠে বসে।এতক্ষনে সে হয়ত অফিসে চলে গেছে।সাঁঝের বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ।তার সাথে দেখা হলে হয়ত কথা বলবে।কারন অফিসে অন্তত এড়িয়ে যাওয়ার কথা না।সাঁঝ খাট থেকে নেমে রেডি হয়ে নেয়। তারপর কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসে।রিক্সা নেয় সাইমনের অফিসের জন্য।রাস্তায় প্রচুর জ্যামের কারনে পৌছুতে ভীষন দেরি হয়ে যায়।সাঁঝ পৌছে দৌড়ে অফিসে ঢুকে রিসিপশনের কাছে এলো।রিসিপশনে দুজন লোক ছিলো।সাঁঝ কে তারা দেখে সালাম দিয়ে বলল, 
''জি ম্যাডাম কি জানতে চান?"
''একজনের সাথে দেখা করবো।"
'কি নাম ম্যাডাম?"
''সাইমন আহমেদ রুদ।"
লোকটা কিছু বলার আগে একটা কল আসে ল্যান্ডফোনে।সে তেমন কিছুই বলেনি শুধু শুনে গেলো।এবং হুম বলতেই ফোন কেঁটে গেলো।লোকটা সাঁঝকে উদ্দেশ্য করে বলল,
''Sir is out of the office.You should come another day."
সাঁঝ ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিযে আসে।খুব কান্না পাচ্ছিলো ওর।সারা রাস্তায় ফুঁপিয়ে কেঁদেছে ও।ঘরে যায়নি ও।ইশিতাকে পড়িয়ে নেয়।অবশ্য আজ ওর পড়ানোর ডেট নয়।তাও পড়িয়ে নিলো।
ঘরে ফিরে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে সাঁঝ।সাইমনের নম্বর টা দেখে। কল দেয়ার কথা ভাবলে ও দিলোনা।নিজেকে এতোটা নিচে নামাতে পারবেনা ও।
.....................এদিকে আদনান না খেয়ে আছে।ওকে একটা রুমে বন্দী করা হয়েছে।রুমটিতে কোন খাট নেই একটা পাঁটি বিছানো একটা নোংরা বাথরুম।ফ্লোরটাও পরিষ্কার না।আদনান চোখ বুজে দোয়া পড়তে থাকে।রুমটিতে কেমন ভ্যাপসা একটা গন্ধ।আদনান নোংরা একদম পছন্দ না।আর ওকে এমন রুমে থাকতে হচ্ছে।ওর ফোনটাও অফ হয়ে গেছে।এখানে চার্জ দেয়ার ব্যাবস্থা নেই।উঠে দাঁড়ায় আদনান রুমটায় খুঁজতে থাকে কোন সুইচবোর্ড আছে কিনা।কিন্তু পেলোনা।আদনান এবার পাঁটিতে বসে পড়ে।এটিও কেমন স্যাঁতস্যাতে।বালিশ আছে না থাকার মতো।আদনান দু হাঁটু ভাজ করে বসে।ওর দম আটকে আসছে রুমটায়।
কি করবে বুঝতে পারছেনা আদনান।পরশু দিনটার অপেক্ষা।ঘরে ফিরে গেলে ও হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচবে।হঠাৎ দরজায় শব্দ হয় আদনান বুঝতে পেলো কেউ প্রবেশ করবে।আদনা৷ন সোজা হয়ে বসে।ও দেখলো একটা ছেলে আছে এখানে সবাই কে চা পানি এগিয়ে দেয়।ছেলেটার হাতে এক প্যাকেট বিস্কিট একটা মামের বোতল।ছেলে টা ওকে এসে বলল,
"আমি আইছি যে কেউরে কইয়েননা।আমারে মারবো।"
আদনানের মুখে এক ফোঁটা সুখের হাসি।মাথা নেড়ে বলল,
''কাউকে বলবোনা।"
''জি ঠিক আছে।"
ছেলেটা চলে যেতে থাকলে আদনান ভাবতে ও যদি ওর ফোনটায় চার্জের ব্যাবস্থা করে দিতে পারে তাহলে ভালোই হবে।আদনান ডেকে বলল,
''এই পিচ্চি শোন।"
''জি।"
''আমাকে ফোনটা একটু চার্জ দিয়ে দিবি?বাসায় কথা বলতে পারছিনা।"
''চিকন চার্জার না চ্যাপটা?"
''চিকন।আমার চার্জার আছে।"
''আইচ্ছা দেন।রাইত দিয়া যামু নে।"
''ওকে।"
আদনানের অবশ্য কিছু করার ছিলোনা।এই ছেলেটা ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ও।তাই চার্জের জন্য দিয়েই দিলো।
...................এদিকে নিশাদের সাথে কুঞ্জনের সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটাই ভালো হলো।কুঞ্জন পরদিন সকাল থেকে ভাইয়ের সাথেই।কুঞ্জনের সাথে সব মিটমাট করার পর থেকে ওর মন অনেকটাই হালকা হয়েছে।তবে শরীরের দূর্বলতা কাঁটছেইনা।এদিকে জুলেখা বানু হঠাৎ রুমে এসে বললেন,
''তোর বন্ধুর বাসা থেকে তরকারি রাইন্দা ফাডাইছে।"
''কোন বন্ধু আম্মা?"
''ইমতিয়াজ।"
''ওহ।"
''আয় দেখ কি দিছে?"
''আম্মা কি দরকার?খাওয়ার সময় দেখবোনে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন