মেঘের খামে অনুভূতি (পর্ব ১২)


জীবন সবার সাথে স্পৃহাদের বসার ঘরের সোফায় বসে আছে। জয় বাদে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। জীবন হঠাৎ করে কেন বলছে সে স্পৃহাকে বিয়ে করবে। তানিয়া পলাশ জীবনের সাথে কথা বলছেন। মারিয়া তোহা স্পৃহা রুমে। জীবন এখানে এসেছে এটা স্পৃহা বিশ্বাসই করতে পারছে না। জীবনকে বিয়ে করার কথা স্পৃহা কোনোদিন কল্পনাও করেনি। তার সাথে কি হচ্ছে এসব তা স্পৃহা ভেবে পাচ্ছে না। মারিয়া বলল,
'ছেলেটা তোকে বিয়ে করতে চায়। তোর জন্য এখানে এসেছে। আর খালামণি আঙ্কেল হাজার প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছে। এতো ভালো একটা ছেলেকে হাত ছাড়া করতে চাইছে। এই মহিলা গুলো কি চায় আমি কিছুই বুঝি না বাবা।'
তোহা মুখ কালো করে বলল,
'তোমার খালামণির তো মাথা খারাপ। কিন্তু আমার খালামণিরও মাথা খারাপ কবে হলো? খালামণি মা'কে বুঝাতে পারছে না। জীবন ভাইয়ার মত ছেলে হয় নাকি? ঐ বাদাইমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হীরের টুকরো ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছে না।'
মারিয়া আর তোহা কথা বলছে। স্পৃহা চুপ করে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবছে জীবন কেন তাকে বিয়ে করবে। 
'উনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে। তাহলে উনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চান। আমাকে ভালোবাসেন না তবুও কেন বিয়ে করবেন। ঐ মেয়ের সাথে তাহলে উনার এমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। ওদের দু'জনকে এক সাথে দেখে আমিই কি ভুল কিছু ভেবে নিয়েছে?'
স্পৃহা যাকে ভালোবাসে সে তাকে বিয়ে করতে চায়। তার বাবা মা'র কাছে তাকে চাইতে এসেছে। এখন সে তাদের বাড়িতে বসে আছে। স্পৃহা কি এখন খুশি হবে? তার কি খুশি হওয়া দরকার?

পলাশ বললেন, 
'দেখো বাবা তুমি জয়ের বন্ধু। সে হিসেবে আমরা তোমাকে চিনি। কিন্তু বিয়েসাদির ব্যাপারে তো এতটা জানা যথেষ্ট না। তুমি যদি তোমার বাবা মা'কে নিয়ে আসতে তাহলে আমরা বড়রা কথা বলতাম।'
জীবন পেছনে হেলান দিয়ে বসে ছিল। সে সোজা হয়ে বলল,
'আঙ্কেল আমার বাবা মা বেঁচে নেই। আমি এখন ইন্টার দিয়েছি,তখন উনারা কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান।'
'দুঃখিত বাবা আমি জানতাম না। '
'সমস্যা নেই। আমার বড় আব্বু, বড় আম্মু আছে। উনাদের কাছেই বেশি সময় থাকি। বাবা মা বেঁচে থাকতে আমরা সবাই এক বাসাতেই থাকতাম। কিন্তু উনারা চলে যাবার পর আমি অন্য ফ্ল্যাটে থাকি। বাবার বিজনেস এতদিন বড় আব্বু সামলাতেন। এখন আমিই দেখছি।'
তানিয়া বললেন, 
'তাহলে বাবা তুমি উনাদের আসতে বলো। আমরা উনাদের সাথেই কথা বলি।'
'সরি আন্টি। বড় আব্বু আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করেন না। আমার লাইফের সব সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিই। বড় আম্মু আমার সব সিদ্ধান্তেই আমার সাথে থাকেন। উনার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই।'
তানিয়া আর পলাশ আর কি বলবেন তা বুঝতে পারছেন না। মেহেরুন তানিয়াকে সাইডে ডেকে নিয়ে গেলেন। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন, 
'কি করছিস তুই তানিয়া! ছেলেটা নিজে থেকে স্পৃহাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা জানি ও কেমন ছেলে। জয়ের সাথে এত বছর ধরে মিশছে। জয় নিশ্চয়ই খারাপ কোনো ছেলের সাথে স্পৃহার বিয়ে হতে দিবে না।'
'কিন্তু আপা ছেলেটার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই। জেঠা, জেঠি আছে কিন্তু তাদের সাথেও থাকে না। এমন একটা ছেলের সাথে কীভাবে মেয়ের বিয়ে দেই বলো তো।'
'এই কথা তুই বলছিস? সোমের সাথে মারিয়ার বিয়ে দেবার জন্য আমি যখন রাজি ছিলাম না তখন তো আমাকে অনেক বুঝিয়েছিস। এখন নিজের মেয়ের বেলায় নাক কুঁচকাচ্ছিস। স্পৃহা আমার মেয়ের মতন। ওর উপর আমারো অধিকার আছে। আমি এই ছেলের সাথেই স্পৃহার বিয়ে দিব।'
'কিন্তু আপা,,,'
'কোনো কিন্তু না। তুই কেন বুঝতে পারছিস না। সমাজের মানুষ এই ছেলেকে নিয়েই স্পৃহার নামে কথা তুলছে। এর সাথে স্পৃহার বিয়ে হলেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কেউ আর কিছু বলতে পারবে না। আর স্পৃহাও জীবনের সাথে ঢাকা গিয়ে ওখানে থেকেই বাকি পড়াশোনা কমপ্লিট করতে পারবে। ছেলেটা দেখতে ভালো। নিজের বিজনেস আছে। স্পৃহা ওর সাথে ভালোই থাকবে।'
'কিন্তু নাফিজ তো ওর বাবা মা'কে নিয়ে আসবে বলেছে।'
'আসলে না করে দিবি। তোরা তো আর আগে থেকে কথা দিয়ে রাখিস নি। এমনিতেও ঐ ছেলেটাকে আমার পছন্দ না। মারিয়া জয় তোহা কেউই ওকে দেখতে পারে না।'
'ওর ফুপু কি বলবে বলো তো?'
'ধুর ছাতার ফুপু! আপন ফুপু নাকি? আর তার ছেলে ভালো হলে আমরা না করতাম নাকি। এখন তুই মানুষের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য তোর নিজের মেয়ের জীবন নষ্ট করবি নাকি?'

তানিয়া পলাশ রাজি হয়ে গেলেন। জীবনের কথায় আজ রাতেই কাজী এনে বাসায় বিয়ে পড়ানো হলো। এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে স্পৃহার সাথে কি হয়ে গেল, স্পৃহা তার কিছুই বুঝতে পারছে না। সত্যিই কি জীবনের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে? এখন থেকে কি সত্যিই ওরা স্বামী স্ত্রী? স্পৃহা কখনো ভাবে নি সে জীবনকে স্বামী হিসেবে পাবে। এটা তার কল্পনার বাইরে ছিল। জীবন বলেছে রাতেই সে স্পৃহাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবে। তোহা স্পৃহার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। মারিয়া স্পৃহার হাত ধরে বলল,
'দেখলি তোর ভাগ্যে শেষমেশ জীবনই লিখা ছিল। সত্যিই আল্লাহ কার জন্য কাছে ঠিক করে রেখেছেন তা আমরা কেউই জানি না। এইতো সেদিন তুই জীবনকে ভালো করে চিনতিও না। অথচ আজ তুই ওর বিয়ে করা বৌ।'
স্পৃহা মারিয়ার কথা শুনছে আর একটু আগের ঘটনা মনে করছে। জীবন আর ও পাশাপাশি বসে ছিল। তাদের সামনে কাজী সাহেব বসে ছিলেন। জীবন তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে অথচ তার সাথে একবার কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না। স্পৃহাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো, সে এই বিয়েতে রাজি কিনা। জীবন তার পাশে বসে থেকেও একবার তার দিকে তাকায় নি। বিয়ে পড়ানোর পরই জয়ের সাথে কোথাও বেরিয়ে গেল। যাবার সময় বলে গেল ফিরে এসে রাতে সবার সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঢাকায় ফিরে যাবে। স্পৃহা এখন তার বৌ তাই স্পৃহাকেও সাথে নিয়ে যাবে। মারিয়া স্পৃহাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
'কি ভাবছিস এতো?'
স্পৃহা মারিয়া দিকে চেয়ে বলল,
'আপু উনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন?'
'কেন বিয়ে করলেন মানে? মানুষে বিয়ে কেন করে? '
'উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। ভালোবাসলে নিশ্চয়ই আমাকে জানাতেন। এখানে এসে আমার সাথে কথা বলতেন। উনি তো কিছুই করলেন না। বাবা মা'র সাথে কথা বললেন ঠিকই কিন্তু আমার মতামত তো নিলেন না।'
'স্পৃহা কোন লেভেলের গাধী তুই? ছেলেটা তোকে না ভালোবাসলে তোর বিয়ের খবর শুনে ঢাকা থেকে আমাদের সাথে ছুটে আসতো? তোর বাবা মা'কে বলে কয়ে রাজি করাতো? নাকি তোকে বিয়ে করতো? ভালোবাসে বলেই ও তোর কাছে ছুটে এসেছে। জঙ্গলে পুরো একটা রাত তো একসাথে ছিলি। তবুও তুই কিছু বুঝতে পারলি না গাধী একটা।'
মারিয়া যা কিছুই বলুক স্পৃহার মন কেনই যেন মানতে চাইছে না, জীবন তাকে ভালোবাসে বলে বিয়ে করেছে। মারিয়া বলল,
'উল্টাপাল্টা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। ওর সাথে ঢাকা যা। দু'জন কিছুদিন এক সাথে থাক। নিজেদেরকে সময় দে। একে অন্যের ব্যাপারে সবকিছু জান। তখন নাহয় বলিস জীবন তোকে ভালোবাসে নাকি বাসে না। আগে থেকেই কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। আর আমি তো জানি, তুই সবাইকে নিজের মায়ায় ফেলে দিতে পারিস। জীবন তোকে ভালো না বাসলেও ও তোর মায়ায় পড়ে গেছে। এক সাথে থাকতে থাকতে মায়া থেকে মুহাব্বত তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না আমার বোন। সব চিন্তা বাদ দিয়ে জীবনের সাথে গুছিয়ে সংসার কর। দেখবি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।'

স্পৃহার বিয়ে এরকম ভাবে হবে তা কেউ ভাবে নি। গায়ে হলুদ হলো না। বিয়েতে কোনো অনুষ্ঠানও হলো না। কোনো আত্মীয় স্বজনদের বলা হয়নি। একপ্রকার লুকিয়ে চুকিয়েই স্পৃহার বিয়ে দেয়া হলো। মেয়ের বিয়ে নিয়ে মেহেরুনের কতই না আশা ছিল। বড় মেয়ের বিয়ে খুব ধুমধাম করে দিবেন। কিন্তু নিয়তি আগে থেকে যা ঠিক করে রেখেছে তার বাইরে কোনকিছুই হওয়া সম্ভব না। তানিয়া আর মেহেরুন নতুন জামাইয়ের জন্য রান্না করছে। বিয়েটা যেভাবেই হোক জীবন এখন এবাড়ির জামাই। তানিয়া ব্যস্ত হাতে রান্না সামলাচ্ছেন। মেহেরুন বললেন, 
'আমরাও নাহয় আজ ওদের সাথে ফিরে যাই।'
মেহেরুন করুণ মুখ করে বললেন, 
'স্পৃহা চলে গেলে তো বাড়িটা এমনিতেই ফাঁকা হয়ে যাবে। এখন তুমিও যদি চলে যাও তাহলে আমি কীভাবে থাকবো?'
'জয় তো ওদের সাথে যাবে। তাই বলছিলাম।আচ্ছা থাক যাব না। আমি আর মারিয়া ক'টা দিন থেকে তারপরই নাহয় যাব।'
'আপা আমার মেয়েটা নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে পারবে তো? ওর নিজের সংসার গুছিয়ে নিতে পারবে? '
'খুব পারবে। আর স্পৃহা না পারলে জীবন ওকে সবকিছু মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। জীবন ছেলেটা আমাদের স্পৃহার অযত্ন হতে দিবে না। দেখলি না ঐ দিন কীভাবে স্পৃহাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসলো।'
জয়ের সাথে জীবন ফিরে এসেছে। রাতে সবাই একসাথে বসে খেয়েছে। খাওয়ার সময় মারিয়া জোর করে স্পৃহাকে জীবনের পাশে বসিয়ে দিয়েছে। বিদায়ের সময় সবাই অনেক কান্নাকাটি করেছে। তানিয়ার দু'টা মেয়ে থেকে আজ একজন নিজের ঘর ছেড়ে পরের বাড়ি চলে যাচ্ছে। এটা তানিয়া মেয়ে নিতে পারছেন না। তিনি স্পৃহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই আছেন। তোহাও বোনকে ধরে কাঁদলো। বাবা মা তোহাকে ছেড়ে স্পৃহার আসতে ইচ্ছে করছিল না। পলাশ জীবনের কাছে এসে বললেন, 
'আমার মেয়েটা একটু গম্ভীর। সহজসরল,একটু বোকাও। ওখানে গিয়ে স্পৃহা মানিয়ে নিতে পারবে না। আমি জানি স্পৃহা ওর সমস্যার কথা তোমার সাথে কেন কারো সাথেই বলবে না। তুমি ওর খেয়াল রেখো বাবা। আমার মেয়েকে কষ্ট পেতে দিও না। এভাবে হঠাৎ করে তোমাদের বিয়েটা হয়েছে। জানি না তোমার পরিবার কীভাবে নিবে। যা কিছুই হয়ে যাক তুমি স্পৃহার পাশে থেকো। ওকে কখনো ভুল বুঝো না। এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।'
জীবন উনার হাত ধরে বললেন, 
'আপনি স্পৃহাকে নিয়ে একটুও টেনশন করবেন না আঙ্কেল। আমি স্পৃহার সব ধরনের খেয়াল রাখবো। কোনো কিছুর কমতি হতে দিব না। ওকে এতটুকুও কষ্ট পেতেও দিব না। আর আঙ্কেল আমার পরিবারের কেউ স্পৃহাকে একটু অসম্মান করবে না। সবাই ওর অনেক খেয়াল রাখবে। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি স্পৃহার অযত্ন করবো না। ওকে সুখে রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।'
জীবনের কথায় উনি একটু স্বস্তি পেলেন। তানিয়া এখনো মেয়েকে ছাড়ছেন না দেখে জয় বলল,
'আন্টি এবার স্পৃহাকে যেতে দাও তো। ছাড়ো আমার বন্ধুর বৌকে। আরে বাবা এতো কান্নাকাটির কি আছে। স্পৃহা কি আমাদের থেকে দূরে থাকবে? তোমার কান্না দেখে তো ইচ্ছে হচ্ছে জীবনকে ঘরজামাই রেখে যাই।'
জয় খালামণিকে স্পৃহার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
'তোহা তোর মা'কে সামলা তো। আমরা আমাদের বৌ নিয়ে বের হই এবার। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। পরে আবার রাস্তায় ডাকাত ধরে বসবে।'
কেঁদে কেঁদে স্পৃহার চোখ,নাক,মুখ লাল হয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে স্পৃহার হেঁচকি উঠছে। সবাইকে ছেড়ে যেতে সত্যিই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। জীবন আড়চোখে দু'তিন বার স্পৃহাকে দেখলো। জীবন সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। 
'আঙ্কেল আন্টি আসি।'
তোহার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
'আসছি তোহা। আমি কিন্তু কিছুদিনের ভেতরেই তোমাকে নিতে আসবো।'
জীবন স্পৃহার হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়ির কাছে এসে স্পৃহার হাত ছেড়ে দরজা খুলে তাকে ভেতরে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। জয় পেছনে বসেছে। জীবন গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাড়ি থেকে কিছুদূর আসার পরও স্পৃহা কাঁদছে। জীবন ড্রাইভ করতে করতে কয়েকবার স্পৃহার দিকে তাকালো। জয় পেছন থেকে স্পৃহার মাথায় চাপড় দিয়ে বলল,
'ভেবলি তুই এখনো কাঁদছিস? তোকে কাঁদতে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে তুই-ই একমাত্র মেয়ে যে এই প্রথম বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস। আরে বাপ তুই একা তো যাচ্ছিস না। আমিও তোর সাথে যাচ্ছি। তবুও তুই কাঁদছিস। চোখ মুছ তো এবার। বরের পাশে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদলে, আমাদের জামাই বাবাজি কি ভাববে বল তো? তুই তো আমাদের মানসম্মান ডোবাচ্ছিস।'
জীবন সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল,
'ওর গায়ে একদম হাত দিবি না। কাঁদছে একটু শান্তিতে কাঁদতে দে। হালকা লাগবে। শুধু শুধু ডিস্টার্ব করছিস কেন ওকে?'
'ওরে ব্যস। বিয়ে করে এখনও একদিনও হলো না। তুই এখনই বৌয়ের হয়ে কথা বলছিস। খুব দরদ দেখি। আমার বোনকে এখন আমি মারতেও পারবো না।'
'না পারবি না। এখন তোর বোন আগে আমার স্ত্রী,পরে তোর বোন। তাই তুই ওকে মারতে পারবি না।'
'ভালোই হয়েছে। এই জন্যেই বন্ধুর কাছে বোন বিয়ে দিয়েছিলাম? ভেবেছিলাম বন্ধু অন্তত বোনকে আমাদের থেকে পর করে দিবে না। এখন তো দেখছি...'
জয় পেছনে বসে একা একাই কথা বলছে। জীবন একটু হেসে রুমাল বের করে স্পৃহার দিকে না তাকিয়েই এগিয়ে দিয়ে বলল,
'এটা নাও। চোখ মুখে নাও। বেশি কান্না করলে আবার মাথা ব্যথা করবে।'
ঢাকায় পৌঁছুতে পৌঁছুতে অনেক রাত হয়ে গেল। জয় আর এতো রাতের জীবনের বাসায় গেল না। ওর বাড়ির সামনেই নেমে গেল। জয় গাড়ির জানালা দিয়ে ঝুঁকে এসে বলল,
'এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। তাই একেবারে কাল সকালেই তোদের দেখতে যাব। তোরা এখন সাবধানে যাস।'
জীবন বলল,
'হুম।'
জীবন নিজের ফ্ল্যাটে না গিয়ে বড় আব্বুর বাসায় চলে আসলো। সে বিয়ে করেছে এটা এখনো কেউ জানে না। বড় আম্মুকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে। এখন কিছুদিন স্পৃহাকে নিয়ে এখানেই থাকবে ভেবেছে। একা ফ্ল্যাটে স্পৃহা এতো তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নিতে পারবে না। এসব মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওকে একটু সুযোগ দিতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে জীবন বলল,
'এসে গেছি। নেমে আসো।'
স্পৃহা গাড়ি থেকে নেমে এলো। জীবন বলল,
'এখানে আমার বড় আব্বু, বড় আম্মু থাকেন। এটা আমারও বাড়ি। তবে আমি ওদের সাথে থাকি না।'
স্পৃহা হ্যা না কিছুই বলল না শুধু একটু মাথা নাড়ালো। কয়েকবার কলিং বেল শব্দ হওয়ার পর জমিলা এসে ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে দিলো। জীবনকে দেখে বলল,
'জীবন বাবা তুমি এতো রাতে?'
'হ্যা খালা।'
'তোমার সাথে এইটা কে?'
'আপনাদের বৌমা।'
জীবনের কথা শুনে জমিলার চোখের সব ঘুম উড়ে গেল। তিনি বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে বললেন,
'বৌমা? মানে তোমার বৌ? তুমি বিয়া করছো?'
'হুম।'
জীবন দোতলার দিকে তাকিয়ে বলল,
'সবাই কি ঘুমিয়ে গেছে?'
'হ। ডাকমু সবাইরে?'
'না থাক দরকার নেই। এতো রাতে কাউকে জাগাতে হবে না। সকালেই দেখা হবে। খালা আমরা এখন রুমে যাচ্ছি। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। আমাকে এক কাপ কফি দিবেন?'
'তুমি ঘরে যাও। আমি নিয়া আইতাছি।'
জীবন স্পৃহাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। স্পৃহা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ঘরটা ভালো করে দেখছে। সবকিছু গোছালো। জীবন এখানে বেশি আসে না। তাই তার ঘর সবসময় গোছানোই থাকে। জীবন বিছানায় বসে বলল,
'তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ো। রাত অনেক হয়েছে।' হাত দিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে বলল,
'ঐ দিকে ওয়াশরুম। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।'
স্পৃহা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলে জীবন ঢুকলো। এর মধ্যে জমিলা জীবনের কফি নিয়ে চলে এসেছে। জীবন মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে বলল,
'কফিটা টেবিলের উপর রেখে আপনি চলে যান খালা। এতো রাতে আপনার ঘুম ভাঙালাম। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।' জীবন টাওয়েল রেখে কফির কাপ হাত নিয়ে স্পৃহার দিকে চেয়ে বলল,
'তুমিও শুয়ে পড়ো।'
এটা বলেই জীবন ব্যালকনিতে চলে গেল। স্পৃহা বিছানায় এসে শুয়ে পরেছে। একপাশে কাত হয়ে শুয়ে সে ভাবছে। বিয়ের প্রথম রাত নাকি বাসর রাত হয়। কিন্তু তার সাথে এসব কি ঘটছে। এটা কেমন বিয়ে ছিল তার? জীবন তাকে কেন বিয়ে করেছে তাও সে জানে না। সত্যিই কি জীবন তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে? জীবনের সাথে তার বিবাহিত জীবনটা কেমন হবে? মানিয়ে নিতে পারবে জীবনের সাথে? জীবনকে কি তাকে বুঝবে? এসব ভাবতে ভাবতে স্পৃহা কখন যেন ঘুমিয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর জীবন রুমে এসে দেখে স্পৃহা ঘুমিয়ে পরেছে। জীবন রুমের লাইট অফ করে দিলো। সে কি অন্য রুমে চলে যাবে নাকি সোফায় শুয়ে পরবে তা ভাবছে। বেশি না ভেবে জীবন সোফাতেই শুয়ে পড়লো। সোজা হয়ে শুয়ে বাম হাত কপালের উপর রেখে ভাবছে। সে যা করেছে তা কি ঠিক করেছে? নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তার ভুল হয়েছে? এই বিয়েতে কি জীবন সুখী হতে পারবে? নাকি স্পৃহাই সুখী হবে? তাড়াহুড়ো করে নেওয়া তার এই সিদ্ধান্ত কি দু'টা মানুষের জীবন নষ্ট করে দিবে? যাই হোক শত কিছুর মাঝেও সে স্পৃহাকে কষ্ট পেতে দিবে না। স্পৃহার যেন কোনো অসুবিধা না হয় তা লক্ষ রাখবে। 
'জয়ের কাছে স্পৃহার বিয়ের কথা শুনে কেন আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম? স্পৃহার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যেত,তাতে আমার কি ছিল। আমি কেন ওকে নিয়ে ভাবতে গেলাম। অন্য কেউ তাকে ভালো রাখতে পারবে না, এই ভাবনা কেন আমার মাথায় আসলো? এখন নিজে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি, এখন কি আমি ওকে ভালো রাখতে পারবো? এই মেয়েকে নিয়ে আমার এতো চিন্তা কিসের? আমি কেন এর কথা ভাবি?'

সকালে জমিলা ফরিদার কাছে সবকিছু বললেন। জীবন বিয়ে করে বৌ নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরেছে এটা ফরিদা বিশ্বাস করতে পারছেন না। জীবন আর কাউকে বলুক বা না বলুক উনাকে তো অবশ্যই বিয়ের কথা জানাবে। এভাবে হুট করে বিয়ে করে ফেলার মানে কি? সবাইকে জানালে তারা কি জীবনের বিয়ে মেনে নিতো না। ফরিদা জীবনের নিচে আসার অপেক্ষা করলেন। সকালে আর ওদের ডাকতে গেলেন না। 
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। জীবন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। স্পৃহা তার পেছন পেছন আসছে। জীবন পেছন ফিরে বলল,
'এসো স্পৃহা। পেছনে আসছো কেন?'
জীবন স্পৃহার হাত ধরে নিচে নেমে এলো। এতক্ষণে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। জীবন চেয়ার টেনে স্পৃহাকে বসিয়ে নিজেও স্পৃহার পাশের চেয়ারে বসে গেল। ব্রেড নিতে নিতে সবার উদ্দেশ্য করে বলল,
'ও স্পৃহা। আমার ওয়াইফ আর এবাড়ির ছোট বৌ।'
জীবনের কথা ফরিদার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ফরিদা একবার স্পৃহার দিকে তাকালো। প্রথম দেখায় স্পৃহাকে উনার পছন্দ হয়েছে। তবুও তিনি খুশি হতে পারছেন না। জীবনের বড় আব্বু আনোয়ার হোসেনের কোনো ভাবান্তর হলো না। জীবনের এমন একটা কান্ডে তিনি রাগ করেছেন নাকি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। আনোয়ার হোসেন কারো দিকে না তাকিয়ে খেতে খেতেই বললেন, 
'একা একা বিয়ে করে নিয়ে আসার কোনো দরকার ছিল না। আমাদের জানালে আমরা গিয়ে ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতাম। অনুষ্ঠান করে বিয়ে করাতাম। যাক সেসব কথা। বিয়ে যখন করেই ফেলেছো আর বৌকেও বাসায় নিয়ে এসেছ তাহলে আমাদের কাছের কিছু মানুষদের নিয়ে ছোট একটা পার্টির আয়োজন করি। অবশ্য যদি তোমার ইচ্ছা থাকে।'
বড় আব্বুর কথা শুনে জীবন মনে মনে বেশ চমকালো। বড় আব্বু সবকিছু এতো সহজে মেনে নিলেন? উনি তো জীবনের সাথে আরশির বিয়ে দিতে চাইতেন। তাহলে এখন স্পৃহাকে জীবনের বৌ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন কীভাবে? ফরিদাও স্বামীর কথা শুনে অবাক হলেন। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আনোয়ার হোসেনের দিকে তাকালেন। জীবনও বড় আব্বুকে চমকে দেওয়ার জন্য বলল,
'ঠিক আছে পার্টি নাহয় দেয়া যাবে। কেউই তো আমাদের বিয়ের কথা জানে না। পার্টিতেই সবার সাথে স্পৃহার পরিচয় করিয়ে দিব। আর আমরা কিছুদিন এবাড়িতে থাকবো।'
'অফকোর্স থাকবে। এটা তোমারও বাড়ি। এখানে কিছুদিন কেন সব সময় থাকতে পারো।'
আনোয়ার হোসেন খাওয়া শেষ করে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন। ফরিদা কি বলবে বুঝতে পারছেন না। নিজের স্বামীকে তিনি কোনোদিনও বুঝে উঠতে পারেন নি। কিন্তু আজ তো জীবনকেও চিনতে পারছেন না। জীবন বড় আম্মুকে বলল,
'তুমি কিছু বলবে না? '
ফরিদা কিছু বলার আগে আনোয়ার হোসেন তাকে ডাকলেন। ফরিদা উনার কাছে গেলেন। স্পৃহা এতক্ষণ চুপচাপ সবার কথা শুনছিলো। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এতো সুন্দর একটা পরিবার থাকতে, জেঠা জেঠি সবাই থাকতে জীবন একা একা গিয়ে বিয়ে করলো কেন? আর এই মানুষ গুলোর সাথেই বা জীবন থাকে না কেন? কেন একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে সে। কেন ওদের সাথে জীবনের এতটা দূরত্ব? স্পৃহা কিছু খাচ্ছে না দেখে জীবন বলল,
'কি হলো তুমি খাচ্ছো না কেন?'
জীবন নিজেই একটা ব্রেডে জ্যাম লাগিয়ে স্পৃহার দিকে এগিয়ে দিলো। গ্লাসে জুস ঢেলে স্পৃহার হাতে দিয়ে বলল,
'জুসটা খাও। ব্রেকফাস্টে কি তুমি এসব খাও? নাকি পরোটা করে দিতে বলবো? '
জীবন জমিলাকে ডাকলে স্পৃহা বলল,
'আমি এসবই খেতে পারবো। পরোটা করতে হবে না।'
'আচ্ছা তাহলে সবটুকু শেষ করে তারপর উঠবে। আমি রুমে যাচ্ছি। অফিসে যাব রেডি হতে হবে।'
স্পৃহা মাথা নাড়ালো। জীবন চলে গেলে স্পৃহা আর কিছু খেলো না। তার খেতে ইচ্ছে করছে না। রাতে বাড়ি থেকে এসেছে এখনো কারো সাথে কথা হয়নি। না জানি বাবা মা তোহা কি করছে। এতক্ষণে ফরিদা চলে এলেন। স্পৃহা খাবার সামনে নিয়ে চুপ করে বসে আছে দেখে উনি বললেন,
'খাচ্ছো না কেন মা?'
মা ডাক শুনে স্পৃহা উনার দিকে তাকালে ফরিদা স্পৃহার পাশে বসে বললেন, 
'নতুন বাড়িতে সবকিছু মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুমি মানিয়ে নিবে। তোমার বাড়িতে কে কে আছে?'
'বাবা মা আর ছোট বোন।'
'ওহ। '
ফরিদা হেসে বললেন, 
'দেখলে কান্ড। তুমি আমার জীবনের বৌ আর আমি তোমার বিষয়ে কিছুই জানি না। তোমার বাড়িতে কে কে আছে তা এখন তোমার থেকে জেনে নিতে হচ্ছে।'
বড় আম্মুকে স্পৃহার ভালো লাগলো। মানুষটা কত সুন্দর করে করে বলছে তার সাথে। 
'জীবনকে তুমি কতদিন ধরে চিনো? এই ছেলেটা পুরো পাগল। আমাকে কখনো তোমার কথা বলে নি। এতো সুন্দর একটা মেয়েকে সে পছন্দ করে এটা জানলে কি আমরা তার বিয়ে করাতাম না? নিজে গিয়ে একা বিয়ে করতে হতো?'
জীবন রুম থেকে স্পৃহাকে ডাকছে শুনে ফরিদা বললেন, 
'ঐ দেখো পাগলের কান্ড। তুমি খাচ্ছ সে এখন তোমাকে ডাকছে। আচ্ছা তুমি একবার গিয়ে দেখে আসো তো কেন ডাকছে।' 
স্পৃহা উঠে দাঁড়ালে তিনি বললেন, 
'তুমি তো কিছুই খেলে না মা।'

স্পৃহা রুমে আসলে জীবন তার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
'জয়! কথা বলো ওর সাথে।'
স্পৃহা ফোন কানে নিলো। ওপাশ থেকে জয় বলল,
'কেমন আছিস ভেবলি?'
'ভালো। তোমরা? '
'আমরা সবাইও ভালো আছি। ভেবলি তুই ব্রেকফাস্ট করেছিস?'
'হুম। '
'জীবন তোর সাথে? '
'হুম। '
'ও ঠিকমত তোর খেয়াল রাখছে তো? নাকি আমার ভেবলিটার অযত্ন করছে।'
'রাখছে ভাইয়া।'
জীবন টাই বাধতে বাঁধতে আড়চোখে স্পৃহাকে দেখছে। জয় বলল,
'খালামণির সাথে তোর কথা হয়েছে? '
'না।'
'তাহলে আমি ফোন রাখার পর কথা বলে নিস। তোর জন্য হয়তো টেনশন করছে।'
'আচ্ছা।'
জয় কল কেটে দিলে স্পৃহা জীবনকে ফোনটা ফেরত দিতে নিলে জীবন বলল,
'আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে নাও। আমি অফিস থেকে ফেরার সময় তোমার জন্য নতুন ফোন নিয়ে আসবো।'
স্পৃহা তার মায়ের সাথে কথা বলছে, 
'মা তুমি কেমন আছো?'
'...
'আমিও ভালো আছি। বাবা কোথায় মা... 
জীবন রেডি হতে হতে স্পৃহার কথা বলা শেষ হয়ে গেল। স্পৃহা জীবনকে ফোন ফিরিয়ে দিলে জীবন তা পেকেটে রেখে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেল। স্পৃহা জীবনের পেছন পেছন সিঁড়ি পর্যন্ত এসে দাঁড়াল।

জীবন অফিসে বসে ফাইল দেখছে। একজন এসে দরজায় নক করলে জীবন ফাইলে চোখ রেখেই বলল,
'আসুন। '
লোকটা ভেতরে এসে জীবনের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, 
'স্যার আপনি যার বায়োডাটা আনতে বলেছিলেন তা এনেছি। এই নিন।'
একটা ফাইল জীবনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল লোকটা। জীবন হাতে থাকা ফাইল সরিয়ে নিয়ে লোকটার হাত থেকে এই ফাইলটা নিয়ে তাতে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল,
'আচ্ছা। আপনি এখন আসতে পারেন।'
'স্যার উনাকে কি কিছু বলতে হবে? '
'না। আপনি উনাকে কিছু বলবেন না। যা বলার তা সময় হলে আমিই বলবো। '
লোকটা চলে গেল। ফাইল দেখতে দেখতে জীবন ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে একটু হাসলো। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন