রংধনু - পর্ব ২১ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


সে এসে সাঁঝের সামনে দাঁড়ায়।সাঁঝ অবাক চোখে লোকটাকে দেখছে।সে কি সত্যিই ওকে ড্রপ করে দিবে?একটা অচেনা মেয়ের জন্য কেন এ কাজ করবে সে?সাঁঝ সাইমনের চোখজোড়া দেখছে।একদম নেশা লাগানো চাহনি তার।এটা কি শুধু সাঁঝেরই মনে হয় নাকি সবার?সাঁঝ বেশিক্ষন তার চোখের পানে চাইতে পারেনা।বুকের গভীরে কেমন এক অস্থিরতা কাজ করছে ওর।সাইমন সাঁঝের অস্থিরতা কে হয়ত উপলব্ধি করতে পারছেনা।সে বুঝলে কতোটা লজ্জাজনক অবস্থায় পড়তে হতো ওকে।সাঁঝ এবার বলল,

''আপনি!! "
''জি। বলেছিলামনা ড্রপ করে দেবো।"
''আপনি সিরিয়াস?"
''হুম।কেন মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?"

সাঁঝ কিছু বলতে পারেনা।চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।সাইমন এবার সাঁঝের হাত ধরে বলল,

''দেরি হচ্ছে চলুন।"

সাঁঝ কোন কথা না বাড়িয়ে লোকটার সাথে হাঁটতে শুরু করে।সাইমন গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে সাঁঝকে বসার জন্য ব্যবস্থা করে দিলো।সাঁঝ পাশে বসা সাইমনকে দেখছে।সে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।সাঁঝ সাইমন কে দেখে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।দুজনের মাঝের গভীর নীরবতা বিরাজ করছে।সাইমন সাঁঝ কে আড় চোখে দেখে নেয়।মেয়েটাকে কে যেন লজ্জার আবরনে আবৃত করে দিয়েছে।মেয়েটার গাল দুটো লজ্জার লাল বর্নে বর্নিত।চোখজোড়ার পাতা বারংবার উঠানামা করছে।নীরবতা আর ভালো লাগেনা সাইমনের।ও তো চেয়েছিলো মেয়েটার সাথে কিছুটা মুহূর্ত কাঁটাতে একটু গল্প করতে।কিন্তু সে তো নিজ দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে।সাইমন আর পারেনা নিতে এই নীরবতা।গাড়ি থামিয়ে দেয় ও।ধৈর্য শক্তি আর অবশিষ্ট নেই ওর মাঝে।সাঁঝ ও চমকে গেল কিছুটা। ও বলল,

''মৌন ব্রত পালন করছেন?"
''নাতো কেন?"

হঠাৎ কথা বলে উঠায় সাইমন গাল বেঁকিয়ে হাসলো।সাঁঝ আবার ও লজ্জা পেয়ে বলল,

''আরে সেটা না।আসলে কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আপনি আমাকে ড্রপ করবেন।আপনার বাসার মানুষ জানতে পারলে?"
''কি হবে?"

কথাটা বলে সাইমন একটু এগিয়ে এলো সাঁঝের দিকে।সাঁঝ সরতে পারেনা। আশেপাশে তাকিয়ে সাঁঝ কি যেন খুঁজতে থাকে।বুকটা বড় ধুকপুক করছে।সাইমন খেয়াল করলো সাঁঝের কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমে আছে।যা ওর সৌন্দর্য কে অনেক গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাইমনের মুখে দুষ্টু হাসি।ও সরে এসে একটা টিস্যু সাঁঝের দিকে এগিয়ে দিয়ে  বলল, 

''কপালেের ঘাম মুছে নিন।"

সাঁঝ কোন কথা বার্তা ছাড়াই টিস্যুটা নিয়ে ঘর্মাক্ত কপাল মুছে নেয়।সাইমন আবার ও গাড়ি স্টার্ট  করে।সাঁঝ এবার তাকায় সাইমনের দিকে। লোকটা গাড়ি চালাচ্ছে।সাঁঝ সাইমনের স্টিয়ারিং ধরা হাতটা দেখে। হাতের কোনার আঙ্গুলটায় কালো পাথরের একটা আংটি।ওর গায়ের সাদা শার্টটার বুকের ওপরের দুটো বোতাম খোলা।সাঁঝের কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি জাগাচ্ছে।
সাঁঝ মুখ ফিরিয়ে জানালার বাহিরে তাকায়।সাঁঝের প্রচন্ড লজ্জা লাগতে শুরু করে যখন সে  বলল,

''কথা না বলে আমার শরীর স্ক্যান করা হচ্ছে?

সাঁঝ লজ্জা মুখ লুকিয়ে ফেলে। সাইমন শব্দ করে হেসে উঠে।সাঁঝ লজ্জায় মাটি ফেড়ে ঢুকে যেতে চাইছে।সাইমন বলল,

''বিব্রত বোধ করবেননা। আমি মজা করছি।"

আপনার কথা গুলোই তো লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।কেমন করে লজ্জা না পাই?সাইমন বলল,

''কিছু খাবেন?"
''না।একটু জলদি চলুন।কাল পরীক্ষা আছে।"
''ওহ।কয়টায়?"
''নয়টায়।"
''ওকে।"

সাইমন গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলো।বাসার সামনে গাড়ি থামতেই চটজলদি নেমে গেলো সাঁঝ।তারপর একটু উঁবু হয়ে বলল,

''ধন্যবাদ।"
''ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই ম্যাম।এভাবে সবসময় পেয়ে যাবেন।হয়ত সারাজীবনের জন্য পেতে ও পারেন।"

সা্ঝ কিছু না বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।সাইমন হাসতে থাকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।ঘরে পৌছে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় সাঁঝ।বুকটা এত কাঁপছে কেন?সে কেন এ কথাটা বলল?কথাটার মানে কি ছিলো?বাথরুমে ঢুকে মুখে ইচ্ছামতো পানি ঝাপটাতে থাকে সাঁঝ।এদিকে বিভান বেলাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।বেলা চুপচাপ শুয়ে আছে তার বুকে।অদ্ভুত প্রশান্তি পায় ও এই জায়গাটায়।বিভান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

''মুহূর্তের জন্য আমারকে নিয়ে  খুব ভয় পেয়প গিয়েছিলে তাইনা?"

বেলা সরে এসে বলল,

''আপনাকে নিয়ে নয়।জুলির ওপর ভরসা করতে পারিনা।"

বিভান ওকে আবার ও বুকে টেনে নিয়ে বলল,

''দেখো বেলা আমি ও একজন পুরুষ।তুমি আমার স্ত্রী।যেখানে তোমার স্বামী এমন এক মেয়ের সাথে বাহিরে ছিলো যার খারাপ নজর আমার ওপর আগ থেকেই।তোমার ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।"
''জি।"

বিভান বেলাকে সামনে আনে।ওর চিবুকে হাত রেখে মুখটা নিজের দিকে টেনে এনে বলল,

''বিশ্বাস হারিওনা আমার ওপর থেকে।"
''কখনোনা বিভান।আপনাকে অবিশ্বাস করতে গেলে নিজের ওপর বিশ্বাস করতে পারবোনা।"

বিভান বেলার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ওকে টেনে নেয় বুকে।জড়িয়ে ধরে পরম উষ্ণতায়।ধীরগতিতে উত্তরার  রাস্তা ধরে হাঁটছে নিশাদ।আজকের সারাদিনটাকে ভাবছে ও।
কিভাবে যেন সময়টা চলে গেলো।সময়টা আটকে যেতে পারতো।পারতো চিরবিরাজমান হয়ে থাকতে।পরক্ষনেই নিশাদের হুঁশ হয়।এটা ভুল কি ভাবছে ও?মেয়েটা ওর ছাত্রী।ছোট বোনের মতো।
সামনেই বাস স্ট্যান্ড দেখা যাচ্ছে।পাশেই পান বিড়ি সিগারেটের দোকান।নিশাদ সেখানে গিয়ে একটা বেনসন আর সেন্টারফ্রুট চুইঙ্গাম কিনে নেয়।সিগারেটে টান দিয়ে ফোন হাতে নেয়।ব্যাটারি মরে গেছে।নিশাদ বিরক্ত হয়ে অস্ফুটস্বরে বলল,

''উফ!!কেউ ফোন দিলে তো পাবে ও না।"

ফোনটা ফের পকেটে ঢুকিয়ে বাসের জন্য ওয়েট করতে থাকে আর সেই সাথে লম্বা টান সিগারেটে।
জুলেখা বানু সাঁঝের কাছে বসে আছে।সাঁঝ বই নিয়ে বসলো।তবে ওর মন ফোনে।আদনানের নম্বরে কল দিয়েছে।আদনান কল রিসিভ করতেই সাঁঝ ফোন কানে রেখে বলল,

''কি অবস্থা?"
''এই আছি বোইন।কি যে পেরেশানি বিশ্বাস করবিনা।"
''কি হইছে?সব ঠিক আছে তো?"
''নারে যে খাটাইলো।সেটা বড় কথা না কথা হলো বাথরুম।এতো নোংরা।বমি করে দিছিলাম।খাওয়াও কি বাজে।চালে পোকা।ডালে পানি মিশানো ছিলো।"

সা্ঝের কান্না চলে আসে।নিজেকে শক্ত রেখে বলল,

''সবসময় ভালোই খাস।খেয়ে পেট বাড়িয়েছিস এখন কমা।"

রেগে গেলো আদনান।অপরপাশ থেকে চিৎকার করে বলল,

''ফাজলামি করবিনা।একদিনে আমার জান শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর উনি ফাজলামি করে।রাখ বেডি।"
''এই তোর সাথে কথা বলার ইন্টারেস্ট নাই।আম্মা কথা বলবে।"
''দে আম্মাকে।"

সাঁঝ মায়ের কাছে ফোন দিয়ে বলল,

''বাহিরে গিয়ে কথা বলো।কাল পরীক্ষা আছে।"
''আইচ্ছা গেলাম।"

সাঁঝ পড়তে থাকে।হঠাৎ লাবনী দরজার কাছে এসে বলল,

''আপু আসতে পারি?"
''হুম আয়।"
''আপু একটা কথা বলতাম।"
''বল জলদি।"
''হুমায়রা আপু একটা ছেলের সাথে চ্যাট করে।হৃদয় আহমেদ নাম।"

সাঁঝ বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

''কই দেখলি?"
''সকালে দেখলাম।"
''ওহ।আচ্ছা পরে কথা বলবোনে।"
''আপু আমার নাম বলিস না।ও আমাকে মারবে নাহলে।"
''মারবেনা।যা তুই।"

লাবনী খুশি মনে বেরিয়ে গেলো।সাঁঝের অনেক খারাপ লাগতে থাকে।আদনান ভীষন কষ্টে আছে।ওদের মাঝে আদনান নোংরা একদম সহ্য করতে পারেনা।বাথরুমে পানি থাকলে সেখানে পা রাখতে চায়না।কিন্তু এখন!!একটা চাকরীর  জন্য সব সহ্য করতে হচ্ছে।নিশাদ সিগারেটে শেষ ফুঁক দিয়ে পেটমোটা একটি বাসে উঠে যায়।বসার জায়গা যাও পেলো পাশে একটি মেয়ে ছিলো।নিশাদ কে দেখে খালি সিটটায় একটা ব্যাগ রেখে বলল,

''অন্য একজন আছে।"

নিশাদ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।ওর সামনে দুটো তিনটে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওদের জামার পিছনে পিঠে ফিতা বাঁধা।খুবই উগ্র সাজ।মেয়ে গুলো কাস্টমসর নিয়ে কথা বলছিলো।একজন বলল,

''নাজমা জানোস নি কাইল রাইতের কাস্টমার বেডাডায় এতোবড় কাইস্টা আছিলো।সারাডা রাইত দইরা আমারে খাঁমছাইছে।অনেক কষ্ট দিয়া করছে।"

সামনের জন্য বলল,

''কি করবিরে বোইন।হাসান নামের পোলা একডা আইছিলো।হে আমারে একডা টাকা ও দিলোনা।কইরাই চইলা গেছে।"

নিশাদের কাছে নামটা পরিচিত মনে হলো।আর বুঝতে দেরি হয়নি এরা কে?নিশাদের খুব অস্বস্তি লাগছে।পাশের মেয়েটাকে বলল,

''আপু কেউ তো বসছেনা।একটু বসতে দিন।"
''না কেন?মেয়ে দেখলে কুরকুরানি উঠে তাইনা?দাঁড়ায় থাকেন।কে আসবে?কেউ আসবেনা।"

নিশাদের প্রচন্ড রাগ লাগছে।মেয়েটা দুটো সিট নিয়ে বসে আছে আবার ওকে উল্টাপাল্টা কথা ও বলছে।নিশাদ বলল,

''শুনেন ম্যাম আপনি বাজে কথা বলবেননা ওকে?আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কথাটা বলিনি।নিজের মন মানসিকতা ঠিক করবেন।"

মেয়েটা হঠাৎ উঠে তেড়ে এলো ওর দিকে চিৎকার করে বলল,

''কি বললি?আমার মনমানসিকতা খারাপ?তোরা তো খারাপ লোক।বেশ্যাপাড়ায় যাস আবার উল্টাপাল্টা কথা বলস।"

বাসের পুরো পরিবেশ পাল্টে গেলো।সব যাত্রীরা নিশাদকে সন্দেহের চোখে দেখছে।নিশাদ বলল,

''বাজে ভাবে কিছু বলিনি এখনো।তুই তোকারি কাকে করছেন?মেয়েদের যথেষ্ঠ সম্মান দিতে পারি।তাই আপনাকে কিছু বলিনি এখনো।চুপ করে বসে থাকেন।"
মেয়েটা আর কিছু না বলে বসে পড়লো।সামনের মেয়েগুলো নিশাদের শরীরে গুতো দিয়ে বলল,

''রাগ কমাতে চান?আসবেন নাকি?"

নিশাদ বেশ রেগে গিয়ে বলল,

''বাস থামান।আমি নামবো এখানেই।"

কন্ডাক্টর বলল,

''ফার্মগেট তো আরো দূরে।"
''সমস্যা নেই।নামবো।"

বাস থামাতেই নিশাদ নেমে গেলো।আজ প্রথম ওর ওপর হ্যারেজমেন্টের আরোপ এসেছে।মাথা জ্বলছে নিশাদের।যেগুলো ওর একদম পছন্দ না আজ সেগুলোর দোষী হতে হলো।
কয়েকটা দিন পার হতে থাকে।জুলির জব হয়ে গেছে।ওকে একটা কোয়ার্টার দিয়েছে অফিস থেকে।তবে অফিস থেকে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গা পাঠানো হয় জুলিকে।জুলি বলে দিয়েছে প্রথম এক মাসে ওর সাথে কাউকে যেতে হবে ওর সেফ্টির জন্য।অফিস থেকে বিভানকে কল দিয়ে ওরা জানায় বিভান কে জুলির সাথে বাহিরে যেতে হবে প্রজেক্টের কাজে।সেখানে থাকতে হতে পারে দু একদিন।

!!!!

বিভান কাপড় চোপড় চোপড় গুছাচ্ছে।বেলা বিভানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।বিভান বেলার উপস্থিতি বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু করতে পারছেনা।কারন যতোদিন গিয়েছিলো সেদিনই চলে আসতে পেরেছিলো।কিন্তু কাল গেলে চারদিন থেকে আসতে হবে।বেলা তার লোকটাকে দেখছে। তার চাহনির ভাষা বুঝতে পারছেনা বেলা।লোকটা কেন কিছু বলছেনা?কেন এতোটা চুপ করে আছে?বিভান ব্যাগ গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো তোয়ালে নিয়ে।
বেলার বুক ফেঁটে কান্না পায় কথা কেন বলেনা সে?কি হয়েছে তার?বিভান বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে।বেলা ওকে দেখছে।বিভান বেশ ব্যাস্ত হয়ে আছে।রাতে খাওয়ার পর দুজনে পাশাপাশি শুয়ে ছিলো।বেলা বিভানকে দেখছে।লোকটার চোখ বোজা।কিন্তু সে ঘুমায়নি বেলা জানে।তাই বিভানের বুজে শুয়ে সেখানে আলতো করে হাত রাখতেই বেলার মাথায় হাত রেখে ওর চুল গুলোয় বিলি কেঁটে দিতে থাকে বিভান।নিজেকে আর সামলাতে পারেনা বেলা।কেঁদে উঠে গুঁমড়ে।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো, 

''কথা বলছেননা কেন বিভান?কি হয়েছে আপনার?কেন এমন করছেন?আমার কি কোন ভুল হয়েছে?তাহলে শাস্তি দিন।কথা কেন বলছেননা?"

বিভান বলল,

''বেলা সব ঠিক আছে।কোন দোষ করোনি তুমি।দেখি ঘুমাও।কাল আবার বের হতে হবে জুলির সাথে।"

বেলা মাথা উঠিয়ে বিভানের দিকে তাকায়।লোকটা স্বাভাবিক ভাবে বলে দিলো জুলির সাথে সেখানে যাবে।কি করে যেতে পারে সে?কিভাবে এত সহজে বলে দিলো?কিভাবে থাকবে বেলা এতটা দিন লোকটাকে ছাড়া।বিভানইবা কি করে থাকবে ওকে ছেড়ে?বেলার মাথা ঘুরে যায় কথা গুলো ভাবতেই।বিভান কিছু না বলে বেলাকে আবার শুইয়ে দিয়ে বেলার পিঠে নিজের হাত জোড়া আড়াআড়ি ভাবে বেঁধে দেয়। এদিকে পনেরদিন যাবৎ আদনান চিটাগাং থাকছে।ওর সময় গুলো একেবারেই ভালো যাচ্ছেনা।এখানকার খাবার খেয়ে ওর পেট খুব খারাপ হয়ে গেছে।শুধু স্যালাইন খেয়ে থাকতে হচ্ছে কারন এখানে কেউ ওর মন মতো খাবার বানাবেনা।আদনানের শরীর ও বেশ খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে কাজ গুলো ঠিক মতো করতে পারেনা।যতোদিন যাচ্ছিলো মন ভীষন খারাপ হয়ে যেতে থাকে।কারন ওর কাজের দক্ষতার ওপর চাকরীটা নিশ্চিত হবে।শরীর খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কাজ গুলো ভালমতো করার চেষ্টা করতে থাকে আদনান।চাকরীটা না হলে ভাইয়ের জন্য কিছু করতে পারবেনা, পরিবারের জন্য কিছু করতে পারবেনা।ওর রুমমেট গুলো ও একদম কপোরেট করতে পারেনা।ওনারা কে কার থেকে ভালো করতে পারেন কে কারটা মেরে খেতে পারে। কিন্তু আদনানের একদম ভাল লাগছেনা।আর ও আসার আগে যা শুনেছিলো এখন ওদের কথা কাজে মিল ও পাচ্ছেনা।কিছুটা দ্বিধায় ভুগতে  শুরু করেছে আদনান।ওরা ১৫০০০ টাকা  নিয়েছিলো।ভাই খুব কষ্টে টাকা দিয়েছিলো।এখন সমস্যা হলে কি করবে?ভাইয়ের টাকা কিভাবে দিবে?বহুল চিন্তায় মাথা কাজ করেনা আদনানের।খুব সকালে উঠতে হয় ওদের।তারপর কাজ শুরু হয়।আদনানের কাজ গুলো নিয়ে ও সন্দেহ কাজ করে।কাজ গুলো ওর পোস্ট অনুযায়ী নয় কিংবা অফিস অনুযায়ী নয়।মাথা একদম কাজ করেনা আদনানের।খাওয়ার পরপরই কেমন ঘুম পায়।আগে নাস্তা কিংবা ভাত খেলে ঘুম পেতো আর এখন স্যালাইন খেলে।আদনান আর ওর রুমমেট রা খুব জলদিই ঘুমিয়ে যায় প্রত্যেকদিন।এদিকে সাঁঝ সাইমনের সাথে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো লজ্জা লাগেনা কিংবা অস্বস্তি ও কাজ করেনা।সাইমন কয়েকদিন ধরে ওকে ঘরে পৌছে দিচ্ছে গাড়িতে করে।এমনকি সাইমনের ছুটির সময় গুলোতে ওরা একসাথে ঘুরতে যায়।দুজনে একসাথে বসে গল্প করে,কফি কিংবা চা খায়।সাইমন খুব খেয়াল রাখে সাঁঝের।এমন কি সাইমনের যে দিন গুলোয় ছুটি ছিলো সাঁঝকে পরীক্ষার হল থেকে নিয়ে রিদ্ধির বাসায় দিয়ে আসতো আবার ঘরে পৌছে দিতো।সাঁঝ কয়েকদিনে সাইমনের ওপর ওর আস্থা অনেকটাই গাঢ় হয়ে গেছে।লোকটা ওর কতো খেয়াল রাখে।
না চাউতে ও সাইমনের এ ছোট্ট কাজ গুলো ওর হৃদয়ে জায়গা করে নিতে থাকে।
সেদিন সাইমন ওর ভার্সিটিতে এসে দাঁড়ায়।সা্ঝ পরীক্ষা দিয়ে নেমে সাইমনকে দেখে বলল,

''এসে গেছেন?"
''চলে এলাম।এক্সাম কেমন হলো?"
''ভালো।"
''হুম।রিদ্ধিকে পড়াতে যাবে?"
''আজ তো নেই।"

সাইমন হঠাৎ কি চিন্তা করে বলল,

''চলো একজনের সাথে দেখা করাবো আজকে।"
''কার সাথে?"

কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলল সাঁঝ। সাইমন সাঁঝের গাল হালকা চেঁপে বলল,

''আগে ভয় পেলে তার সাথে দেখা করবে কি করে?"
''কার সাথে দেখা করাবেন?"
''আগে আসো তারপর নিজেই দেখে নিবে।"

সাঁঝ আর বাড়ায়নি কথা।সাইমনের সাথে ওর গাড়িতে এসে বসে।সাইমন গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে।সাঁঝের চিন্তা হচ্ছে কই যাচ্ছে ও?এদিকে ইদ্রির সাথে এই পনেরটা দিনে নিশাদ অনেকটাই মিশে গেছে।ইদ্রির কথায় এখন হাসে ও।পর্যাপ্ত পরিমানে উত্তর ও দেয় ওর কথার।এদিকে সকালে ছেলের জন্য কাজের লোকদের নাস্তা রেডি করতে বলেন বন্দনা আখতার।আজ খুব অবাক ওনি।বেলা একটাবার ও নিচে আসেনি।এমন তো তের বছরে কখনো করেনি।
কিছুসময় পর বিভান বেলা নেমে আসে।কাজের লোক দুজন উপর থেকে দুটো বড় লাগেজ আরেকটা বয়াগ নামিয়ো আনে।বন্দনা আখতার বলেন,

''তোর ছোট ব্যাগ হলেই চলে।লাখনৌ যাচ্ছিস।এতগুলো ব্যাগ কি করবি?"

বিভানের মুখে হাসি।ও বলল,

''একা যাচ্ছিনা।আর একা জুলির সাথে  যাওয়া আমার দ্বার হবে না।"
''কেন? কে যাচ্ছে তোর সাথে?"
''কে আবার মা?বেলা যাবে আমার সাথে।"

বন্দনা আখতার প্রচন্ড অবাক হন।প্রচন্ড রেগে গেলেও প্রকাশ করেন নি।তবে বিভানকে বললেন,

''ঐখানে গিয়ে জুলির সাথে বাহিরে থাকবি।ও যেয়ে কি করবে?"
''মা বেলাকে আমার দরকার পড়ে।আর ও সেখানে ঘুরবে।আগে কখনো যায়নি।এর আগে নেইনি কারন থাকিনি।কিন্তু এখন চারদিন ওকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা। "

সাঁসা করে উঠেন বন্দনা আখতার।ভেংচি কেঁটে বললেন,

''বাপু বিয়েতো আমরা ও করেছিলাম তবে এতো আহ্লাদ পাইনি।"

বিভান চুপচাপ বেলাকে নিয়ে নাস্তা করতে বসে।বেলা খেতে গিয়ে সামনে তাকিয়ে বন্দনা আখতারকে দেখতে পায়।বন্দনা আখতার প্রচন্ড রেগে ওকে দেখছেন।পারলে যেন ওর চুল টেনে ছিড়ে ফেলবে। 
বেলা ভয়ে মাথা নামিয়ে নেয়।নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে পড়ে ওরা।এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি বিভানের গাড়ি।
ইদ্রিকে পড়াতে এসেছে নিশাদ।আজ ইদ্রি টিশার্ট আর স্কার্ট পরে আছে।নিশাদ ওর রুমে প্রবেশ করতেই ইদ্রি একটা স্কার্ফ গলায় পেঁচিয়ে হাসলো।নিশাদ চেয়ারে বসে।আর ওর পাশে ইদ্রি।নিশাদ ইদ্রিকে বলল,

''বেশ ডেভেলপমেন্ট হয়েছে দেখছি।"
''থ্যাংক ইউ।"

হেসে বলল ইদ্রি।নিশাদ বলল,

''আর বেশি কিছু বাকি নেই।তবে দুটো বড় কাজ বাকি।ও গুলো শিখতে বেশি সময় লাগবেনা।ওগুলো শিখানোর আগে তোমার পরীক্ষা নিবো।দেখবো কতোটা শিখেছো।"

শেষ হয়ে আসার কথা শুনে ইদ্রির বুক মুহূর্তে খালি হয়ে আসে।তারমানে নিশাদ খুব অল্পকদিন আসবে আর।আর আসবেনা ওকে পড়াতে?ভাবতেই কেমন লাগতে থাকে।ইদ্রি এবার বলল,

''পড়া শেষ হয়ে গেলে তো আর আসবেননা আপনি।একটা অনুরোধ।"
''কি?"
''মাঝে মাঝে কল দিবো।বিরক্ত হতে পারবেননা।আর একবার ঘুরাতে নিয়ে যাবেন।হয়ত এটাই শেষ ঘুরা হবে।"

নিশাদ ইদ্রির কন্ঠে কষ্টের আভাস পেলো।নিজের বুকের গভীরে কেমন করতে থাকে।নিশাদ কিছু না বলে ল্যাপটপে মন দেয়।আসলেই কি শেষ হয়ে যবে?
এদিকে সাঁঝ কে নিয়ে একটা রেস্তোরায় চলে আসে সাইমন।রাজধানীতে এটা গোল্ডেন চিমনি নামে পরিচিত।সাঁঝের বাসার কিছুটা কাছে এটা।হাতিরপুল বাজারের পাশে।সাঁঝ সাইমনের দিকে তাকাচ্ছে ভয়ার্ত চোখে।সাইমন তিনজনের জন্য স্যুপ, উন্থন,রাইস অর্ডার করলো আর সাথে চিকেন চিলি আর কিছু সবজি।সাঁঝ বলল,

''বলেননা কে আসবে?"
''আরে বাবা একটু ধৈর্য প্লিজ।বিশ্বাস করোনা আমাকে?"
''করি কিন্তু!!"
''কি?"

সাঁঝ কিছু বললনা।চুপ হয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর একজন লোক এসে ওদের সামনে বসে বলল,

''কিরো ডাকলি যে?"
''ভাই ও সাঁঝ।তোকে বলেছিলাম।"

লোকটা সাঁঝের পানে চেয়ে বলল,

''সুন্দর তো।কি করো তুমি?"

সাঁঝ বুঝলো লোকটা সিয়াম।সাইমনের ভাই।তবে ও  অবাক।লোকটা হঠাৎ কি বলছে এসব?সে জেনে কি করবে ও কি করে?তারপর ও বলল,

''মাস্টার্স করছি।আর টিউশনি করাই আপনাদের বাসার চারতলায়।"
''ওহ।কয় ভাই বোন?তুমি কতো নম্বর?"
''আমি চারনম্বর। ভাই বোন সাতজন আমরা।"
''মাশাল্লাহ।বাসা কই?"
''কাঁঠাল বাগান বাজার।"
''হুম।গ্রামের বাড়ি!!!"
''নোয়াখালী।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp