রংধনু - পর্ব ২৯ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


প্রচন্ড রেগে আছে আদনান। ইন্টারভিউ দিতে এসে ওকে এভাবে আঘাত পেতে হলো।রানটা টনটন করছে।বাথরুমে চলে আসে ও। রানটা দেখে নেয়। সে জায়াগাটা লাল হয়ে আছে।বেরিয়ে আসে আদনান।বেরিয়ে দেখলো মেয়েটা বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখমুখে আতঙ্ক আর চিন্তার ছাপ লেগে আছে।আদনান পাশ কেঁটে যেতে নিবে তখনই মেয়েটা মলিন কন্ঠে বলল, 
''সরি আবারও। আমি সত্যি অনেক তাড়াহুড়োয় ছিলাম।কিভাবে হলো বুঝতে পারিনি।"
আদনানের মনটা নরম হলো।ও পিছনে ফিরে হালকা হেসে বলল,
''ইটস ওকে।এমন টা হয়ই।সবকিছু সিরিয়াস নিলে হয়না।"
''থ্যাংক ইউ।"
মেয়েটা হেসে ফেলে।আদনান বলল,
''আপনি পিছু পিছু চলে এসেছেন।ডাক পড়েনি আপনার?"
''নাহ।আমার সিরিয়াল নম্বর সাতাশ।আপনার?"
''ত্রিশ।"
''ওহ।চলুন অপেক্ষা করি তাহলে।"
''জি।"
আদনান আর মেয়েটা হাঁটতে থাকে।মেয়েটার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।কেমন এক অজানা মলিনতা গ্রাস করে আছে।আদনান আড়চোখে তাকায়।কোঁকড়ানো চুল গুলোর একটু অংশ সামনে বেরিয়ে আছে।চোখে মোট গ্লাসের চশমা।ঠোঁটগুলো কাঁপছে।কি যেন বলছে বিড়বিড় করে।আদনানের অবাক লাগে।মেয়পটা এমন করছে কেন?এমন অদ্ভুত আচরন।আদনান গলা পরিষ্কার করে বলল,
''আমার মনে হয় আপনার চুল বেঁধে নেয়া উচিৎ।ফিটফাট হয়ে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হয়।"
মেয়েটা ওর দিকে লাফিয়ে তাকায় যেন ভয় পেয়ে গেছে।আদনান বেশ অবাক হয়।মেয়েটা ভয়ে ভয়ে বলল, 
''জি!!!"
''চুল এলোমেলো হয়ে আছে আপনার।বেঁধে নিন।"
''ওকে।কিন্তু ডাকলে?"
''জলদি করুন।ওদিকটা সামলে নিবো।"
মেয়েটা ঢোক গিললো বার কয়েকবার।তারপর বলল, 
''ওকে।"
আদনান অবাক হচ্ছে।মেয়েটা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আদনান এসে বসে।পঁচিশ নম্বর সিরিয়াল চলছে।বেশি সময় লাগবেনা।মেয়েটা চলে এলেই হয়। কিছুক্ষন বাদেই মেয়েটা এসে বসে গেলো ওর পাশে।আদনান বুঝে ও ওর দিকে তাকালো না।মেয়েটা হঠাৎ ডেকে বলল,
''শুনুন!!!"
আদনান পাশ ফিরে তাকায়।চুল গুলো।এখন খোঁপায় জড়ানো।মেয়েটা বলল,
''এখন ঠিক লাগছে তো?"
''হুম।ঠিক লাগছে।আপনার ফাস্ট ইন্টারভিউ?"
''জি।"
বলেই মেয়েটা সামনে ফিরে মাথা নিচু করে বসে রইলো।আদনান বলল,
''ভয়ের কিছু নেই।ওনারা যা জিজ্ঞেস করবেন কন্ফিডেন্টলি উত্তর দিবেন।"
''জি।আমার না একটু চিন্তা হচ্ছে।একটু প্রবলেম তো।"
''কি প্রবলেম?"
অজান্তেই জিজ্ঞেস করে আদনান।কিছু বলতে যাবে মেয়েটা তখনই ওর ডাক পড়লো।মেয়েটার নাম প্রিয়াশা মিত্র।আদনান কিছুসময়ের জন্য চুপ হয়ে গেলো ওর নাম শুনে।স্তব্ধ হওয়ার কারন না থাকলে ও আদনান স্তব্ধ হলো কোন কারন ছাড়াই।ইন্টারভিউ শেষ করে মেয়েটা বেরিয়ে এসে আদনানের কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
''ওনাদের কথায় মনে হলো জবটা হবে।আপনার ও কি প্রথম ইন্টারভিউ? "
আদনান মাথা নাড়লো।মেয়েটা হেসে বলল,
''ওহ।আচ্ছা আমি আসি তাহলে।"
আদনান মাথা ঝাঁকায়।প্রিয়াশা মাথা ঘুরিয়ে যেতে লাগলো দরজার দিকে।
....................... পনের মিনিটের মাঝেই সাইমনকে আসতে দেখা গেলো।সাঁঝ হাসার চেষ্টা করে তবে বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেছে।ওর কেনাকাটা বাকি আছে।এতক্ষন অন্তত কিছু একটা কিনতে ও পারতো।লোকটার কারনে কিছু হলোনা।সাইমন মাথার ওপর একটা পেপার ধরে দৌড়ে সাঁঝের কাছে এসে দাঁড়ায়। দুজনের কাছেই ছাতা নেই।সাইমন বলল, 
''চলুন।"
''বৃষ্টি হচ্ছে।কিভাবে যাবো?"
''সেটাও তো কথা।শপিং বেশি দরকার?"
''জি মোটামুটি। "
সাইমন কি যেন ভাবলো তারপর বলল, 
''এভাবেই করবো।অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্স।"
দুষ্টুমির হাসি তার মুখে।সাঁঝ চিন্তায় পড়ে গেলো।এভাবে ভিজে ভিজে শপিং করবে কিভাবে?জিনিস গুলো আসলে ও দরকার তবে কাল আসলে ও কিনতে পারবে।সাঁঝ বলল,
''কাল এসে কিনবো।"
''আজই কিনেন।কাল অন্য কোন সমস্যা ও তো হতে পারে তাইনা?কাজ পরেরদিনের জন্য ফেলে রাখতে নেই।"
''বৃষ্টি!!"
সাঁঝের দৃষ্টি আকাশের পানে।সাইমন সাঁঝকে দেখছে।ওর গাল ওর চোখ ঠোঁটজোড়া অস্বাভাবিক আকারের আকর্ষনীয় লাগছে।সাইমন চায় ওকে ছুঁয়ে দিতে। বিশেষ করে চিকন গোলাপী ঠোঁট দুটো কাঁপছে।সাইমন চায় সেগুলো ওর আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতে।কিন্তু এ অসম্ভব ও ওকে চায় তবে এভাবে নয়।নিজের বৌ করে চায় নিজের পাশে চায় সবসময়। সাইমন এবার নিজের দৃষ্টি আকাশের দিকে ঘোরালো।তারপর শান্ত গলায় বলল,
''চলোনা এভাবেই শপিংটা হয়ে যাক আর বৃষ্টিপ্রেমটাও জমবে।"
সাঁঝ চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়।সাইমন আকাশের পানেই চেয়ে আছে।সাঁঝ একটু হেসে আকাশের দিকে তাকায়।সাইমন ওকে না দেখেই হাত বাড়িয়ে সাঁঝের হাত স্পর্শ করে।নিজের আঙ্গুলের ভাজে সাঁঝের আগুল নেয়।সাঁঝ নিচে তাকিয়ে দুজনের হাত দেখে তারপর মুখ উঠিয়ে সাইমনের দিকে চায়।তার নজর সাঁঝের পানে। মুগ্ধ হাসি তার ঠোঁটের কোনে।সাঁঝ মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''চলুন।"
সাইমন হেসে হাঁটতে লাগে।ওরা দুজন বেরিয়ে আসে সেই দোকান টা থেকে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ওরা হাঁটছে।সাইমন সাঁঝকে আড়চোখে দেখে।না চাইতেও সাইমনের চোখ ওর কোমড়ে চলে যায়।না বলাই ভালো তবে বেশ আকর্ষনীয় ওর কোমড়খানা। সাঁঝের হাঁটার সাথে তাল রেখে সেটি ও চলছে।সাইমন নিজের চোখ সরিয়ে পাশে তাকায়।রাস্তার দোকান গুলোর ওপর পলিথিন দেয়া।সাইমন চোখ কুঁচকে বুজে নেয়।মনে মনে বলতে থাকে''শিট সাইমন!!এত নোংরা হয়ে তাকাবিনা। তাকে তুই চাস ভালবাসিস।তবে ভালবাসা নোংরা না সাইমন।পবিত্র ভালবাসা।তাকে তুই পবিত্র ভাবে চাস নোংরা ভাবে নয়।"সাঁঝহঠাৎ একটা দোকানে ঢুকে গজ কাপড় কিনতে।সাইমন ও ঢুকে।সাঁঝ কাপড় পছন্দ করছে সাইমন তা দেখছে।
...........................নিশাদ রাস্তায় হাঁটছে।অফিস থেকে কিছুসময়ের ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে।বুক খানা বড় খালি লাগছে।আজ তিনদিন ইদ্রিকে কম্পিউটার শেখাতে যায়নি ও।বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে নিশাদ ফুটপাত ধীরে হাঁটতে থাকে।হঠাৎ একটা ছোট বাচ্চা এসে ওর প্যান্ট টানতে লাগলো,
''ভাইয়া হুনেন।"
নিশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো ছোট্ট একটি ছেলে।নিশাদ আদরীয় হাসি হেসে বলল, 
''বল।"
''জামা নাই।টাহা দেবেন?"
নিশাদ নিচে তাকায়।আসলেই গায়ে শতছেড়া একটি শার্ট আর একটা প্যান্ট।সেটা ও ছেড়া।নিশাদের খুব মায়া হয়।মানিব্যাগ খুলে দেখে সেখানে পাঁচশত টাকার নোট আর নেই।নিশাদ বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে নিজের মানিব্যাগের দিকে তাকায়।টাকা আসবে যাবে তবে এখন এই টাকাটা পেলে বাচ্চটির মুখের হাসির দাম সহস্রগুন বেড়ে যাবে।নিশাদ একটু হেসে টাকা দিয়ে বলল,
''যা ভালো দেখে জামা প্যান্ট কিন।"
''থাংকু ভাইয়া।"
কিন্তু হঠাৎ একটা লোক দৌড়ে টাকাটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো ছেলেটার হাত থেকে।নিশাদ অবাক।লোকটা ছেলেটার গালে চড় দিচ্ছে কারন টাকাটা ছাড়ছেনা ছেলেটা।নিশাদ সহ্য করতে পারেনা।দৌড়ে এসে লোকটাকে সরিয়ে রেগে বলল,
''এসব কি?ওর টাকা নিয়ে এমন করছেন কেন?"
''আরে মেঞা যান গিয়া কাম করেন।আরে দে টাকা দে।"
বাচ্চাটার হাত থেকে টানতে থাকে টাকাটা।নিশাদ বলল,
''টাকাটা নিবেননা।কাজ করে টাকা আয় করতে শিখেন।এভাবে পথশিশুদের টাকা নেন কেন?"
লোকটা হঠাৎ নিশাদের কলার চেঁপে ধরে বলল,
''বেশ্যার পোলা।যা মায়ের কাছে গিয়া ঘুমা।আইছে টাকা চু***তে।"
নিশাদের সহ্য হলো না।লোকটার গালে চড় দিয়ে তার কলার চেঁপে বলল,
''মা**চো* মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবিনা।"
এভাবে হাতাহাতি লেগে গেলো।লোকটা নিশাদের নাকে জোরে ঘুষি লাগায় ওর পেটে লাথি দওতেই তিনজন লোক এসে ওদের সরায়। নিশাদ পেট ধরে দাঁড়িয়েছিলো।ওর নাক থেকে ও রক্ত পড়ছে।লোকগুলো বলল,
''মারামারি করেন ক্যালা?"
নিশাদ নাক চেঁপে বলল,
''এই খান*র পোলা বাচ্চার টাকা নিচ্ছিলো।আমি থামাতেই আমার মাকে নিয়ে নোংরা কথা বলে।"
লোকগুলো সেই ছিনতাই কারীকে পিটিয়ে ভাগিয়ে দেয়।বাচ্চাও টাকা নিয়ে নিশাদের দিকে চেয়া আছে।নিশাদ কিছু বলতে পারেনা।ওর চোখজোড়া ঘোলা হয়ে আসছে।জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নিশাদ।তবে জ্ঞান হারানোর আগে শুনতে পেয়েছিলো লোকগুলো বলছিলো এরে ডাক্তার খানা লইয়া যাই।অনেক রক্ত বাইরইতাছে।নিশাদকে ডাক্তার খানায় এনে তারা ওর ফোনের কল লগে ঢুকে।ইদ্রি কল করছিলো একটু আগে।তারা চিন্তা না করেই ইদ্রির নম্বরে কল দেয়।
...............................ইদ্রি টেবিল থেকে উঠে রুমে আসছিলো।ইমতিয়াজ ও টেবিলে বসে খাচ্ছিলো।ইমতিয়াজ বোনকে দেখছে বেশ চুপচাপ।আগে এমনটা কখনোই ছিলোনা।তাহলে এখন কি হলো?এতো চুপচাপ আগে দেখেনি ইদ্রিকে।রুমে প্রবেশ করতেই ইদ্রির সেল বেজে উঠে।ইদ্রি নম্বরটা দেখে মৃদু হাসে।অনেক আকাঙ্খার কল এটি।সে কল করেছে ওকে।তিনদিন পর তার কন্ঠস্বর শুনতে পাবে ইদ্রি।ইদ্রি কল রিসিভ করে কানে দিতেই একজন বলল,
''এই ফোনডা যেনার ওনি হাসপাতালে বর্তি।আপনে একটু আইয়েন।"
''কি হয়েছে ওনার?"
কাঁপা কব্ঠে জানতে চায় ইদ্রি। তাারা পুরো ঘটনাটি খুলে বলতেই ইদ্রি কেঁদে ফেললো।হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে ইদ্রি দৌড়ে বেরিয়ে আসতেই ইমতিয়াজ বলল,
''কই যাস?"
''আহম্মদিয়া হাসপাতাল ভাইয়া।"
ইদ্রি কোনমতেই কান্না লুকোতে পারেনি।ইমতিয়াজ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে ইদ্রির দিকে।ও বলল,
''মানে কি? হয়েছে কি?"
''নিশাদ স্যার ভর্তি সেখানে।রাস্তায় নাকি একজন ওনাকে মেরেছে।"
বলেই কেঁদে উঠে ইদ্রি।বন্ধুর জন্য বোনের এমন কান্নার কোন লজিক খুঁজে পায়নি ইমতিয়াজ।তবুও এখন লজিক খোঁজার সময় না।বন্ধু হাসপাতালে ওকে যেতেই হবে।ইমতিয়াজ একাই যেতে নিচ্ছিলো।কিন্তু ইদ্রি বলল,
''ভাইয়া আমি ও আসব?"
''তুই গিয়ে কি করবি.?"
''প্লিজ ভাইয়া।"
ইমতিয়াজ কিছুটা ভেবে বলল, 
''চল।"
.........................বিভানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে বেলা।চোখজোড়া এখনো ভিজে আছে।এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর শরীর বিভান বেলার চুলে হাত চালাতে চালাতে বলল,
''বেলা তুমি যেমন আছো যেভাবে আছো আমি তোমাকে ভালবাসি।আমার তুমি হলেই চলবে।আর কিছু লাগবেনা প্রমিজ।গুঁমড়ে কেঁদে উঠে বেলা।বলতে লাগল,
''বিভান আমাকে মাফ করবেন।কখনই আপনাকে বাবা বানাতে পারবোনা।আমি চাই আপনার চিহ্ন আমার ভেতর ধারন করতে।কিন্তু পারলাম না বিভান।আমি অসহায় আমি কি করবো বলুন।ইচ্ছে খুব হয় মা ডাক শুনতে।কিন্তু পারলামনা।আমার দোষ।"
বিভান ওর দিকে ওর মুখ দুহাতের আঁজলে নিয়ে বলল,
''বেলা তোমার দোষ নেই।কন্সিভ করেছিলে তুৃমি।কিন্ত এ্যাক্সিডেন্টালি বাচ্চাটা হারিয়ে ফেলেছিলাম।এখানে আমাদের কারোর হাত নেই।নিজেকে দোষী মনে করবেনা একদম।"
বেলা কেঁদে বিভান কে জড়িয়ে নেয়।বিভান ও বেলাকে নিজের বুকে আশ্রয় দেয়।

!!!!

ইদ্রিদের আসার কিছুসময় পরই সাঁঝ চলে আসে হাসপাতালে।ইমতিয়াজ নিশাদের ফোন থেকে সাঁঝকে কল করেছিলো।নিশাদ চোখ খুলে পাশে দাঁড়ানো সাঁঝকে দেখতে পায়।সাঁঝ ওর কপালে হাত রেখে বলল,
''কেমন লাগছে ভাইয়া?"
''হুম ভালো।আমি ঠিক আছি।"
''আমিতো জানতেই পারতাম না।যদি ইমতিয়াজ ভাই কল  না দিতো।"
''ইমতিয়াজ এসেছে?"
''হুম বাহিরে ইদ্রি সহ বসে আছে।"
ইদ্রির নাম শুনে নিশাদের কেমন লেগে উঠে।ওরা আগে কিভাবে জানলো কে জানে?নিশাদ বোনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, 
''বাসায় জানে?"
''আদনানকে কল দিছিলাম।আম্মারে জানাই নাই।নাহলে কেঁদে বাসা মাথায় তুলবে।আব্বা আর আদনান আসতেছে।"
''আচ্ছা।ওদের ডেকে নিয়ে আয়।"
''জি ভাইয়া।"
সাঁঝ দরজা খুলতেই ইমতিয়াজ আর ইদ্রি সেদিকে তাকায়।সাঁঝ বলল,
''ভাইয়া ভিতরে আসেন।"
''ওকে।"
ইমতিয়াজ ইদ্রিকে নিয়ে ভিতরে এলো।ইদ্রি সাঁঝের পিছনে দাঁড়িয়ে।ইমতিয়াজ নিশাদের কাছে এসে  দাঁড়ায়।বন্ধুর মাথায় হাত রেখে বলল, 
''কি হইছিলোরে মারলো কেন?"
''আরে বাচ্চা একটাকে টাকা দিছিলাম জামা কেনার জন্য।ছিনতাইকারী এসে বাচ্চার টাকা নিয়ে যাইতে চাইছিলো।গিয়ে ধরলাম গালাগালি শুরু করে দিলো আম্মাকে নিয়ে।মাথা তো গরম হয়ে গেলো আমার।"
''ওহ বুঝলাম।"
ইমতিয়াজ কি যেন বলতে গিয়ে ও চুপ করে রইলো।নিশাদ সাঁঝের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে গিয়ে ইদ্রিকে দেখতে পায়।ইদ্রির এক চোখ দেখা যাচ্ছে।নিশাদের হাসি পায়।ও বলল,
''সাঁঝ তুই তো ভিজে গেছিস।ঠান্ডা লাগবে তো।"
''না ভাইয়া ঠিক আছে।"
''তোর ঠান্ডার সমস্যা আছে চলে যা।আদনান আর আব্বা তো আসতেছে।আম্মাকে ও তো সামলাতে হবে।"
সাঁঝ কি যেন ভেবে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।ইদ্রি ইমতিয়াজের দিকে একবার চেয়ে নিশাদের দিকে তাকায়।মেয়েটার চোখ ভেজা।নিশাদের বুক কেমন যেন করতে থাকে।নিশাদ ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
''তোরা কেমন করে জানলি?"
ইমতিয়াজের কপাল কিছুটা কুঁচকে এলো।তারপর কিছুটা ভেবে বলল,
''ইদ্রি কে কল দিলো এক লোক।ও এসে বলল তুই হাসপাতালে তারপর আমি এসে সাঁঝ কে কল দেয়ালাম।ভাবলাম আঙ্কেল কে না জানিয়ে ওকে জানালে ভালো হবে।আঙ্কেল জানলে আন্টি ও জানার সম্ভাবনা ছিলো।আন্টির এমনিতেই মন নরম।কান্না কাটি করে অসুস্থ হবে।"
নিশাদ ম্লান হাসে। তারপর চোখ সরিয়ে আনে ইদ্রির দিকে তারপর বলল,
''পড়াশুনা কেমন চলছে?"
ইদ্রি মাথা নুঁইয়ে ঝাঁকালো।গলা ধরে আসছে।চোখ ভারি হয়ে আসছে।কান্নার দমকে গলা ব্যাথা ও করছে।বুক খুব দ্রুত উঠানামা করছে।নিশাদ চোখ সরিয়ে বলল,
''তোরা নাহলে বাসায় চলে যা।বৃষ্টি কমে এলো।"
''হুম।আচ্ছা পরে কথা হবে নাহলে।আসবো বাসায়।"
''হুম অবশ্যই।"
ইমতিয়াজ বেরিয়ে যায় ইদ্রিকে নিয়ে।নিশাদ ইদ্রির বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকায়।মেয়েটার চোখ ভিজে এসেছিলো।এরই মাঝে সাঁঝ এসে বলল,
''ভাইয়া আদনান আর আব্বা আসছে আমি যাই নাহলে।একটু পরে ছেড়ে দেবে।"
''আচ্ছা ঠিক আছে।"
সাঁঝ বেরিয়ে এলো।আদনান আর বাবা ভিতরে এলো।সাঁঝ আসার সময় সাইমন কে বলেছিলো সে যেন চলে যায় কারন কেউ দেখলে সমস্যা।তবে সে যায়নি বসেই ছিলো গাড়ি নিয়ে।সাঁঝ গিয়ে গাড়িতে ঢুকে সাইমনের পাশে বসলো।সাইমন বলল,
''ভাইয়া কেমন আছে?"
''ভালো আছে।আপনি চলে যেতে পারতেন।"
''তুমি একা যাবে নাকি?"
''একা গেলে কি হয়?"
''তোমাকে অন্য মানুষ দেখলে আমার ভালো লাগেনা।আমার বৌকে আমিই দেখবো।"
সাঁঝ ভ্রু উঁচু করে গলায় দুষ্টুমির ভাব এনে বলল,
''বৌ হয়ে গেলাম নিমিষেই?"
''সেটাতো কবেই আর বৌতো একসময় হবেই আমার।ভাবলাম এই মাস শেষে ভাই ভাবিকে পাঠাবো  তোমাদের বাসায়।আর দুরুত্ব সহ্য হচ্ছে না।"
সাঁঝের বুক ধক করে উঠলো বিয়ের কথায়।বাবা ভাইয়া কি বলবে?সাঁঝ মাথা ঘুরিয়ে জানালার বাহিরে তাকায়।মুখের রং উবে গেছে একদম।সেদিন সন্ধ্যায় নিশাদকে ঘরে নিয়ে আসে আদনান আর বাবা।নিশাদকে দেখে মা কাঁদতে শুরু করে দেন।তবে সা্ঝ হুমায়রা ওনাকে সামলে নিয়েছিলো।
.................হাসপাতাল থেকে ফিরে ইদ্রি কিছুটা চুপ হয়ে গেলো।ইমতিয়াজ ব্যাপারটা বেশ খেয়াল করেছে।ইদ্রি রুমে গিয়ে চুপ করে বসে আছে।ইমতিয়াজ ইদ্রি কে কিছুসময় দেখে দরজায় নক করে। ইদ্রি চোখমুছে বলল,
''আসো।"
ইমতিয়াজ ভিতরে ঢুকে।ইদ্রি ভাইকে দেখে বলল,
''ভাইয়া তুই?কিছু লাগবে?"
''না।কথা আছে তোর সাথে।"
''জি।"
''কি হয়েছে তোর?কেমন যেন হয়ে গেলি তুই।হাসপাতালে যাওয়ার আগে কাঁদছিলি এখন এসে চুপ হয়ে গেছিস।"
ইরি চুপ হয়ে গেলো।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।কি জবাব দেবে ও?কি বলবে?নিশাদ কে ওর ভালো লাগে?নাকি.........
''কিরে?"
''না ভাইয়া হঠাৎ এমন খবর শুনে কান্না এলো।"
''এতো ইমোশনাল তুই জানতামনা।তা ও আসেনা কেন পড়াতে জানিস?"
ইদ্রি ভাইয়ের দিকে মাথা তুলে তাকায়।ইমতিয়াজ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে।ইদ্রি আবার ও মাথা নামিয়ে নিলো।ইমতিয়াজ বলল, 
''আমি জানি নিশাদ এমন ছেলে না যে ও হুটহাট করে আসা বন্ধ করবে।না পারলে ও আগে জানাতো।কি হয়েছে বল তো?"
ইদ্রির গলা কাঁপছে।মায়ের কথাগুলো আসলেই ওর ভালো লাগেনি যেমনটা নিশাদের ভালো লাগেনি।ইদ্রি বলল,
''ভাইয়া সেদিন মা নিশাদ স্যারকে বলছিলো স্যার বিয়ে করেনা।আমাকে ওনি পড়ায়।মা নাকি ভরসা পায়না।মা আবার কোচিং এর স্যারের  কথা ও বলেছিলো।"
''কোচিং!!!কোন কোচিং আবার?"
''জানিনা।এরপর ওনি মনে হয় কষ্ট পেয়েছিলেন।"
ইমতিয়াজ চুপ হয়ে গেলো।ও জানে নিশাদের ব্যাপারে।নিশাদ এমন ব্যাপার গুলো নিতে পারেনা।ইমতিয়াজ কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।সেদিন রাতে ইদ্রি নিশাদের নম্বরে কল দেয়।কয়েকবার রিং হওয়ার পর নিশাদ কল রিসিভ করে।ইদ্রির জানে পানি আটকে গেছিলো এখন যেন বাঁচলো।দুজনেই চুপ কি বলবে বুঝতে পারছেনা।নিশাদ কানে ফোন দিয়ে ইদ্রির কথার অপেক্ষায়।ইদ্রি কথা বলছেনা দেখে নিশাদ বলল,
''কিছু বলবে?"
ইদ্রি ঢোক গিলে।কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ওর।তবে লোকটার সাথে অনেক কথা আছে ওর।অনেক কথা বলার আছে।
''ইদ্রি কিছু বলো।"
নিশাদ আবার ডেকে উঠে।ইদ্রি বলল,
''জি।আপনি ভালো আছেন?"
''এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তুৃমি?"
''ভালো।আপনি আর মারমারি করবেননা প্লিজ।"
''কেন?"
''ব্যাথা পেয়েছেন দেখলেন তো?"
''দেখো কোথাও অন্যায় দেখলে তো প্রতিবাদ করবোই তাইনা?"
''তারপর ও। "
''হুম।তোমার কি খারাপ লেগেছে?"
ইদ্রি এবার কান্না থামাতে পারলোনা।গুঁমড়ে কেঁদে উঠে বলল,
''হুম।"
''বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন?আমি ঠিক আছি।"
ইদ্রি কাঁদতে থাকে।নিশাদ ওর কান্না শুনছিলো।ওর বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা করছে।মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।ইচ্ছে ওর সাথে অনেকটা সময় কাঁটাতে।ওর হাত ধরে পাশাপাশি  হাঁটতে।নিশাদ চোখ বুজে নেয়।সেদিন অনেকটা রাত পর্যত ওদের কথা হয়।
.........................বিভান নিশাদের খবর জানতে পারে কুঞ্জনের কাছ থেকে।কুঞ্জনকে কল করেছিলো মা সহ সবার খবর নিতে।কিন্তু কুঞ্জন নিশাদের কথা বলাতেই বিভান অনেকটাই চিন্তি হয়ে যায়।কুঞ্জন জানিয়েছিলো নিশাদ ফিরলে কল করা হবে ওকে।বিভান অপেক্ষা করতে থাকলো।রাত দশটায় আদনানের কল এলো বিভানের নম্বরে।বিভান বাহিরে ছিলো।তাই আদনানের কল রিসিভ করে।কারন বেলার সামনে কথা বলা যাবেনা।বেলা এমনিতেই চিন্তিত তারওপর এটা শুনলে কান্না করবে আরো বেশি চিন্তা করবে।আদনান বলল,
''আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া ভালো আছেন?"
''আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা?"
''আছি ভালো।"
''নিশাদ কেমন আছে?"
''বেটার। কথা বলবেন?"
''দাও।"
আদনান নিশাদের কাছে এসে ফোন দিয়ে বলল,
''কথা বল।বিভান ভাইয়া।"
নিশাদ ফোন কানে নেয়।বিভান বলল,
''কি খবর?শুনলাম ব্যাথা পেয়েছো?"
''জি ভাইয়া।আপা জানে?"
''না ভাই আসলে এমন পরিস্থিতি নাই তোমার বোনকে কিছু জানাবো।"
''কি হলো?"
বিভান সব খুলে বলে।নিশাদের বুক যেন খালি হয়ে আসে।বোনের কষ্ট একটু হলে ও বুঝতে পারছে ও।বিভান বলল,
''কান্না কাটি করছে শুধু।"
''হুম।অন্য হাসপাতালে দেখাননা কি বলে।"
''দেখাবো ভাই।তা নিজের খেয়াল রেখো।ঔষধ নিও টাইমলি।বাবা মাকে সালাম দিও।"
''জি ভাইয়া।এখন বাসায় যাবেন?"
''হুম।রাত হলো তো।"
''ওকে।আপাকে দেখে রাইখেন।পরে আমি কল দিবো আপাকে।"
বিভান ফোন রেখে বাসার পথে রওনা হয়।বেলা এশার নামাজ পড়ে শুয়েছিলো।বিভান কে দেখে উঠে বসে।বিভান হাত মুখ ধুয়ে বেলার পাশে এসে বসে।বেলা বলল,
''নামাজ পড়লেন?"
''মসজিদ থেকে এলাম।"
''ওহ।আপনি বসুন।আমি খাওয়া গরম করছি।"
''বেলা তুৃমি রেডি হও।বাহিরে যেয়ে খাবো।"
''না কি বলেন?মা আছে তো।"
''তো কি হয়েছে।তাছাড়া মায়ের ও দাওয়াত আছে আজ বান্ধুবীর বাসায়।"
''ওহ।দেখলাম একটু আগে বের হলো।ভাবলাম আশেপাশে হয়ত গেছে।"
''যাই হোক এত কথা বলোনা যাও রেডি হও।"
''রান্না করা আছে।"
''সেগুলো পরে খাওয়া যাবে যাও রেডি হও।"
বেলা চুপচাপ শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।সেদিন ওরা কিছুক্ষন গাড়িতে ঘুরে বাহিরে ডিনার করে নিয়েছিলো।
এরপর আরো কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যায় বেলাকে।কয়েকটা টেস্ট ও করিয়েছিলো।তবে সব রিপোর্ট সেইম।বেলা মা হতে পারবেনা।বেলা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলো।তবে বিভান কিছুটা সামলে নিয়েছিলো বেলাকে।এদিকে বিভানদের কোম্পানীর ত্রিশ বছর পূর্তিতে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে সামনের সপ্তাহে।এ অনুষ্ঠানের একসপ্তাহ আগ থেকেই আয়োজন শুরু। কোম্পানীর নিজস্ব কনভেনশন সেন্টারে হবে এই পার্টি।বিভান ভেবে নিয়েছে সবাইকে নিয়ে যাবে।বেলার মন টাও ভালো হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন