আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

শূণ্যতায় আমি পরিপূর্ণ (পর্ব ০২)


নিবিড়ের দরজা জোরে জোরে ধাক্কানো দেখে নিবিড় ভাবনা থেকে হড়বড় করর উঠে গিয়ে দরজা খুলে রুপন্তিকে হাঁপাতে দেখে, 
কি হয়েছে রুপন্তি?
রুপন্তি কোনো কথা বলতে পারছে না।সমস্ত শরীর ঘামছে।নিবিড়কে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
নিবিড় স্তম্ভিত হয়ে গেছে, রুপন্তির অবস্থা দেখে কী বলবে বুজতেই পারছে না।কিছুটা সময় রুপন্তির মাথায় শান্তনার হাত বুলিয়ে,কী হয়েছে বলবি তো।না বললে কীভাবে বুজবো তুই কাঁদছিস কেন?
রুপন্তি তবুও কিছু বলছে না।
নিবিড় শান্ত গলায় বললো,মা কোথায়? কথাটা বলেই মায়ের কিছু হয়েছে ভেবেই রুপন্তিকে ছেড়ে দৌড়ে মায়ের রুমে গেলো।কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে এসে,জোরালো গলায় বললো, মা কথায় রুপন্তি?
রুপন্তির যেনো কান্না থামছেই না।নিবিড় এসে রুপন্তিকে ঝাঁকিয়ে, মা কোথায় রুপন্তি? মায়ের কী হয়েছে?
-মায়ের কিছু হয়নি ভাইয়া।মা হসপিটালে।
-মা হসপিটালে! কিন্তু কেন?
-কুয়াশকে  নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।ওর হাজবেন্ড নাকি আই সি ইউতে আছে।সবাই সেখানেই গেছে।
নিবিড় রুপন্তিকে ছেড়ে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে।হঠাৎই কানের কিনারা ঘেসে চিকন স্রোতের ঘাম বেয়ে যাচ্ছে।
শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো নিস্তেজ হয়ে গেছে।
রুপন্তি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া! এই ভাইয়া।কথা বলছিস না কেনো?
নিবিড় স্তব্ধ গলায় বললো, কোন হসপিটাল আছে?
রুপন্তি বলতেই নিবিড় আর এক মুহুর্তেও দেরি করলো না।হসপিটালের পথে রওনা হলো। 

কুয়াশা ভাপা পিঠার প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়ের সামনে।
নিবিড় হাতের ফোনটা পাশে রেখে,ওয়াও ভাপা পিঠা! 
নিবিড়ের বাবা আর চাচা নিজেরা খেতে খেতে বললো,
গরম গরম খেয়ে নে।না হলে ঠান্ডা হলে খেতে মজা পাবি না।কেমন শক্ত শক্ত হয়ে যায়।
নিবিড় চাচার কথা শুনে মুচকি হেসে পিঠার প্লেটটা নিয়ে,কিরে ভোরের কুয়াশা!  শিখে নিচ্ছিস নাকি মায়ের কাছ থেকে।শেখ শেখ তোর স্বামীকে বানিয়ে খাওয়াতে হবে তো।
কুয়াশা ন্যাকা স্বরে, দেখেছো জেঠু তোমার ছেলে আসার পর থেকেই আমার পিছনে পড়েছে।
নিবিড় হা হা হা করে হেসে,বুজেছি তুই এখনো বড় হসনি।না হলে এখনো নালিশ করতে হয় বড়দের কাছে?
-জেঠু,,,,,,,!
নিবিড় তুই শুরু করেছিস কী মেয়েটার সাথে,মা তুই যা ওকে আমি বকে দিবো।
-বাবা আমি কী ওর মতো বাচ্চা আমায় বকে দিবে?
-চুপ কর তো।এখন কাজের কথা বল।তোর অফিস কেমন চলছে?
-খুব ভালো।তবে ওখানের জবটা ছেড়ে এখানেই জব নিয়েছি ইউনিভার্সিটিতে। 
-এখন বিয়ের কথা কিছু ভেবেছিস?
কথাটা শুনেই নিবিড় কুয়াশার দিকে তাকালো।কুয়াশা নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রান্নাঘরে চলে গেলো। 
নিবিড় বাবার দিকে তাকিয়ে, বাবা প্লিজ আপাতত বিয়ে-শাদি নিয়ে আমি এখন ভাবতে চাই না।
আমার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। এখুনি যদি এইসব ভেবে বসে থাকি তাহলে জীবন পাড়ি দিতে পারবো না।
নিবিড় আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। 
কুয়াশা নিবিড়ের কথা শুনে মন খারাপ করে মনে মনে ভাবছে, কি এমন ক্ষতি হয় বিয়ে নিয়ে ভাবলে?  আমি যে অপেক্ষার প্রহর গুনি উনার তো কোনো খবরই নেই।
আচ্ছা ও কি করে জানবে আমি অপেক্ষার প্রহর গুনি? ও তো কখনো জানতেই পারিনি। 

নিবিড় রুমে এসে ফোনে শুভর সাথে কথা বলতে বলতে দরজায় কেউ উঁকি দিচ্ছে টের পেয়ে আস্তে আস্তে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
কুয়াশা যখন দরজা আবার খুলে উঁকি দিতে যাবে নিবিড় তার আগেই দরজা খুলতেই কুয়াশা এসে নিবিড়ের গায়ে পড়তেই দুজন একসাথেই নিচে পড়লো।
-ইশ,,,,,,,এইটা কি করছোস তুই?
কুয়াশা নিবিড়ের শরীরে উপরে থেকেই মুখে কিছু না বলে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে। 
-তুই চুরি করে আমায় কেন দেখছিলি? এখন উঠ!
ওরে বাবা,  মনে হচ্ছে হাতির নিচে পড়েছি।
-কী আমি হাতি? এখুনি দেখাচ্ছি মজা, কুয়াশা উঠেই নিবিড়কে আরও শক্ত করে চেপে গলা টিপে ধরে,আমাকে আর হাতি বলবে? বলো বলবে?
নিবিড় কিছু বলতেও গিয়েও আটকে গেলো নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসার কুয়ার মুখে।নিবিড়ের চোখে কুশার চোখ, নাকে নাক ঠোঁটে ঠোঁট। প্রতিটি নিশ্বাস যেনো আগুনের আভা। দুজনেই কিছুটা সময় যেনো হারিয়ে ছিলো দুজন দুজনার চোখে।
কুয়াশাই আগে নিজেকে সংযত করে হড়বড় করে উঠে দৌড়ে নিবিড়ের রুম থেকে যেতেই নিবিড়ের মায়ের সাথে ধাক্কা। রহিমা বেগম সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিবিড়ের রুমের দরজা খোলা। রহিমা বেগম মুচকি হেসে, দুজনের আবার খুনসুটি শুরু হয়ে গেলো?
কুয়াশা কিছু না বলে দৌড়ে নিবিড়ের বাসা থেকে বেরিয়ে দোতলায় চলে গেলো।নিজের রুমে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে খাটে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। নিবিড়ের নিশ্বাস যেনো তাকে নতুন করে ঘায়েল করছে।নিবিড়ের ঘায়ের গন্ধ যেনো তার শরীরে লেগে আছে।কুয়াশা পাগলের মতো নিজের গায়ের গন্ধ নিতে লাগলো।তাড়াতাড়ি করে গিয়ে জামাটা চেইঞ্জ করে নিয়ে ভাঁজ করে আলমারিতে রেখে দিলো।নিবিড়ের সাথে এই প্রথম তার স্পর্শ যা সে কখনো ভুলতে পারবে না।স্মৃতি হয়ে রাখার জন্যই জামাটা সে এইভাবেই রেখে দিলো।

দুইদিন কেটে গেলো কুয়াশা আর নিবিড়ের দেখা হয়নি।দেখা হবেই বা কী করে কুয়াশা লজ্জায় তিনতলায় যায় না সেদিনের পর থেকে।
দুপুরে শাহানাজ বেগম নিবিড়ের জন্য সামান্য রান্না করছে নিবিড়ের পছন্দ অনুযায়ী।  গুরুর মাংসের কালোভুনা, পোলাও, বেগুন ভর্তা, ইলিশ মাছ ভাজা, জলপাইয়ের ডাল।
সবগুলো রান্না করে কুয়াশাকে ডাকলো।
-মা ডেকেছো?
-হেরে,,তোর নিবিড় ভাইয়ার জন্য রান্না করলাম।এইগুলো নিয়ে দিয়ে আয়।
-আমি যাবো?
-তো কে যাবে? আমি এখনো গোসল করিনি,নামাজ পড়তে হবে। যা এইগুলো নিয়ে যা।আর ওকে খাইয়ে তারপর আসবি।
-আচ্ছা মা,ভাইয়া তো এসেও খেতে পারে।
-ছেলেটা উপর নিচ করবে সামান্য খাবারের জন্য? এতো কথা না বলে দিয়ে আয়।
কুয়াশা আর কথা না বাড়িয়ে নিবিড়ের বাসায় গেলো।
রহিমা বেগম কুয়াশাকে খাবার হাতে করে দেখে,কীরে? এই দুইদিন তোকে দেখলাম না কেনো?
কুয়াশা সেকথার উত্তর না দিয়ে,জেঠী মা! 
রহিমা বেগম টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে,বল?
-মা ভাইয়ার জন্য খাবার পাঠিয়েছে!
কুয়াশা খাবারগুলো টেবিলে রেখে,ভাইয়া কোথায় জেঠী মা?
এইখানে নতুন  ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছে।আজ প্রথম দিন তাই বললো দুপুরেই চলে আসবে।তুই বস না।জেঠী মা নামজটা পড়ে আসি।
-আপু কোথায়?
-ও কলেজে। 

রহিমা বেগম চলে যেতেই কুয়াশা আস্তে আস্তে নিবিড়ের রুমে গেলো।নিবিড়ের খাটে শান্ত হয়ে বসলো।বালিশটা টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে,আচ্ছা তুমি কী কখনোই আমায় বুজবে না? নাকি শুধু আমি একাই তোমায় ভালোবেসেছি?  আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে তোমার মনে আমার জন্য কতখানি জায়গা আছে।ছোটো বেলা থেকে একটাই নাম এই মনে গেঁথেছি তা হলো,মেহেবুব ইসলাম নিবিড়। 
ছোট্র মনের ভালোবাসা নাকি নিষ্পাপ হয়।থাকেনা চাহিদা, আভিজাত্য নষ্টামি।
আমিও তো তাহলে তোমায় ছোটো থেকেই ভালোবাসি। 
-জানি আমি। তাই তো আমিও তোমায় ভালোবাসি।
কথাটা শুনেই কুয়াশা পিছনে ফিরতেই কাউকে দেখতে ফেলো না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মনের ভুল ভেবে উঠতেই দেখে নিবিড় রুমে ঢুকছে।
নিবিড় কুয়াশাকে দেখে, কী ব্যাপার তোকে দেখাই যাচ্ছে না।
কুয়াশা কিছু না বলে মুগ্ধ হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কালো প্যান্ট সাদা শার্ট গলায় টাই বেশ মানিয়েছে নিবিড়কে।এই প্রথম নিবিড়কে এইভাবে  দেখেছে সে।
নিবিড় হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে,এই তোর সমস্যা কী বলতো?  আমার সামনে আসলে তুই এমন হ্যাং হয়ে থাকিস কেন? 

গাড়ির সামনে হঠাৎই বিড়াল আসাতেই নিবিড় গাড়ি ব্রেক করলো।ভাবনাটা এতোটাই গভীর ছিলো খেয়াল নেই কোনো দিকে।কিছুটা সময় পরেই হসপিটাল এসে পৌঁছালো নিবিড়। 
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।