রাত এগারোটা নাগাদ রিশিকেশে পৌছে গেলো বেলা আর বিভান।রিশিকেশের সুইস কটেজ হোটেলে রুম বুকিং করে নেয় তৎখনাৎ।বেলা গাড়িতে কিছু খায়নি।বিভান রিসেপশনিস্ট থেকে চাবি নিয়ে বেলাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।ওদের রুমটা রুফটপের সাথে।পাশে রয়েছে পাহাড় পর্বত।রুমের লক খুলে দিলো একজন হোটেল কর্মচারি।বেলা আশেপাশে দেখছে।সামনে ছাদ।আর সেখানে পাহাড়ের কালো ছায়া।বিভান রুমে গিয়ে বেলা কে বাহিরে দেখে জোরে বলল,
''বেলা কি করছো বাহিরে?"
বেলা সামনে তাকিয়ে রুমের ভেতর বিভানকে দেখে বলল,
''এখানে আসুন।বাহিরে কি সুন্দর লাগছে পরিবেশটাকে।রাতের আঁধার ঘন কালো পাহাড়ের ছায়া পড়েছে যেন কোন কুমারী কন্যার ঘন কালো চুল।"
বিভান হেসে বাহিরে বেরিয়ে আসে।আসলেই বেশ লাগছে পাহাড়টাকে। বেলার কাঁধে হাত রেখে বিভান বলল,
''চলো ওখানটায় গিয়ে বসি।"
বেলা পাশে তাকিয়ে বিভানকে,
''তার আগে ফ্রেশ হতে হবে।"
বিভান একটু হেসে বেলাকে নিয়ে ভিতরে চলে আসে।দুজনে ফ্রেশ হয়ে নেয়।বিভান নিচে চলে যায় ডিনার আনতে।বেলা খাটে বসে হাতে লোশন লাগাচ্ছিলো।কিছুক্ষন পরই রুমে আসে বিভান সাথে করে ফ্রাইড রাইস চিকেন সালাদ আর কফি।
বেলা রাইস দেখে বলল,
''এখন এত ভারি খাওয়া খাবেন?"
''হুম আমার খুব খুদা পেয়েছে।"
প্লেট নিয়ে বেলার সামনে এসে বসে বিভান।বেলা অবাক চোখে তার ভালবাসার মানুষটিকে দেখছে।লোকটা এভাবে কখনো খায়না।বেলা বলল,
''আপনি কি ঠিক আছেন?"
''হুম কেন?"
বেলা কিছু বলল না আর।চুপচাপ খেতে থাকে।খাবার শেষে দুমগে কফি ঢেলে ছাদে চলে আসে ওরা।সামনের অন্ধকার কালো পাহাড়টা ভীষন রহস্য ময় হয়ে উঠেছে।
বেলা কফির মগে চুমুক দিয়ে লোহার রেলিং এ হাত রাখে।কুয়াশায় ভিজে আছে সেটা। বিভান বেলাকে দেখছে একমনে।রাতে আঁধারে বেলার সুন্দর মুখ আরো গভীর সুন্দর হয়ে উঠেছে যার গভীরতার শেষ নেই।ঘন্টার পর ঘন্টা কেঁটে যায় বেলা উঠে যেতে চায়না।রাতের কালো আঁধার ওকে গ্রাস করেছে।ওর মনযোগ আকৃষ্ট করেছে।বিভান বলল,
''কাল সকাল পর্যন্ত আছি।এসে দেখো সকালে।"
''এতোটা সুন্দর লাগবেনা বিভান।"
''ফজরের নামাজ পড়ে এসে দেখো ভুলতেই পারবেনা এর সৌন্দর্য।"
বেলা মিষ্টি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বিভানের সাথে রুমে চলে আসে।ওদের খাটটা ভালোই বড় আছে।বিভানের কোল ঘেষে শুয়ে পড়ে বেলা।দুজনে কম্বলের মায়ায় জড়িয়ে পড়ে।এত সকালে নাস্তা খেতে চায়না নিশাদ।তবু ও খেতে হবে।মায়ের আদেশ।সাঁঝ শুয়ে আছে। পুরো শরীর জ্বরে পুড়ছে।হুমায়রা কলেজে চলে গেছে লাবনী আর কুঞ্জন ওদের স্কুল আর কলেজে।আদনান আরেকটি ইন্টারভিউ এর জন্য বের হবে তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিস করছিলো।সাঁঝ খুব কষ্টে বিছানা থেকে নেমে আসে।তারপর ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ায়।নিশাদ বসে খবরের কাগজ পড়ছে। জুলেখা বানু পাকঘরে কি যেন বাঁটছে।সাঁঝ হেঁটে পাকঘরে এসে দাঁড়ায়।চায়ে বলগ এসে গেছে। চাপাতা দেয়া হয়নি।সাঁঝ কে দেখে জুলেখা বানু বলল,
''কিরে খাবি কিছু?"
''না আমার খাওয়া না ভাই কুমিল্লা যাবে নাস্তা দাওনি।"
''হেইডা আমি করুম তুই যা হুইতা থাক।তোর ভাইয়াগোরে নাস্তা দিয়ে তোর লাইগা আনতাছি।"
সাঁঝ চাপাতা হাতে নিয়ে পানিতে দিয়ে বলল,
''বড় ভাইয়ারে নাস্তা দেই।কতক্ষন ধরে বসে আছে।"
জুলেখা বানু শিল টাকে উঠিয়ে রেগে বলল,
''গেলি এহোনো।এইডা দিয়া বাইড়াইয়া মান্জা ভাইঙ্গা ফালামু হারামজাদি। যা এহান থেহে।"
মায়ের চিৎকার শুনে নিশাদ চিৎকার করে বলল,
''কি হইছে আম্মা?সাঁঝ তুই এখানে কেন?"
''ভাইয়া তোর নাস্তা বানাইতেছিলাম।আম্মার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। "
নিশাদ রেগে বলল,
''যা শুয়ে থাক।আম্মা আমার নাস্তা দাও বের হতে হবে। "
সাঁঝ আবার বলল,
''ভাইয়া আমি দিচ্ছি।"
জুলেখা বানু আবার শাঁসিয়ে উঠলেন,
''গেলি তুই?"
সাঁঝ ঝটপট বেরিয়ে রুমে এসে খাটে বসে থাকে।নিশাদ আর আদনান কে নাস্তা দিয়ে জুলেখা বানু সাঁঝের জন্য নরম খিচুরী বানিয়ে নেয়।নিশাদ দৌড়ে বাসে উঠে গেলো।বসার জায়গা নেই।অগত্যা দাঁড়িয়ে থাকতে হলো ওকে।যাত্রাবাড়ি শেষে কয়েকজন নেমে গেলো।নিশাদ একজন বৃদ্ধ লোকের সাথে বসে পড়ে।লোকটা ওরদিকে দেখে একটু হেসে বলল,
''একটু ফানি দিবা আব্বাজান।"
নিশাদ বোতল এগিয়ে দেয় লোকটির দিকে।লোকটি পানি খেয়ে বলল,
''আল্লাহ তোমার ভালো করুন।"
নিশাদ একটু হাসে তবে কিছু বলেনি।এদিকে সাইমন রাতটা খুব চিন্তায় কাঁটালো।আজ বিকেলে যখন ঘরে ফিরলো।দেখলো নষ্ট লিফট তিনতলায় আটকে আছে।হয়ত এতটুকু ভাবেনি ভিতরে কেউ আটকে যেতে পারে।অপর একটি লিফটে করে বাসায় ফিরে আসে।নিপুণ টেবিলে ভাত বেড়ে বলল,
''তোমার ভাইয়ের ঘরে ফিরতে সময় লাগবে।পারলে বেসন এনে দিও বেগুনী বানাবো।"
সাইমন ভাত খেয়ে একটু বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে দারোয়ানকে কল দিয়ে বেসন আনতে বলল।তারপর সিগারেট নিয়ে বেরিয়ে এসে লম্বা টান দিতে থাকে।ও খেয়াল করলো এখনো লিফট বন্ধ তিনতলায়।
আরেকজন দারোয়ানকে কল দিয়ে উপরে আসতে বলে সাইমন।লোকটা আসতেই সাইমন বলল,
''মিস্ত্রী ডাকো খোলার ব্যাবস্থা এক্ষুনি করো।"
''জি স্যার।"
লোকটা মিস্ত্রী ডাকতে চলে গেলো।
_________________________________________
সাইমন কেন যেন তিনতলায় নেমে এসে লিফটের দরজা দুটোকে জৌর পূর্বক ফাঁকা করার চেষ্টা করে।কারন ভিতরে আটকে থাকলে তাকে বের করতে হবে। লিফটের ভেতর আলো নেই।তবে কারোর হাতে থাকা ব্রেসলেট জ্বলজ্বল করছে। সাইমন ভয় পেয়ে গেলো।টানতে লাগলো দরজা। এটা আর খুলছেনা।সাইমন দারোয়ান কে কল করে বলল,
''মিস্ত্রী নিয়ে এক্ষুনি লিফট খোলার ব্যাবস্থা করো।কে যেন আটকে গেছে।"
দশমিনিটের মাঝে লিফট খোলায় সাইমন।তারপর দেখতে পায় সাঁঝকে।জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে মেয়েটা। সাইমন কোলে তুলে নেয় সাঁঝকে।তারপর ঘরে নিয়ে আসে।নিপুন সাঁঝকে দেখে বলল,
''এ কে?"
সাইমন কিছু বলেনি চুপচাপ সাঁঝকে রুমে নিয়ে আসে।ডাক্তার আনার ব্যাবস্থা করে সাঁঝের মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরায়।বেশ কষ্টে চোখ খুলে সাইমন কে দেখে কি যেন বলার চেষ্টা করে সাঁঝ।সাইমন ওর গালে হাত দিয়ে কিছু বলেনা।শুধু দেখতে থাকে সাঁঝকে।সাঁঝ চোখজোড়া বুজে নেয়। সাইমন ঘুমাতে পারেনা।অস্থির চিত্তে বারান্দায় হাঁটতে থাকে।সাঁঝের নম্বর ও নেই যেন কল দিয়ে খবর নেবে।এদিকে আদনান ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে এলো।কালকের অফিসটা থেকে কোন কল আসেনি।ভয়ে বুকের একটাপাশ খালি হয়ে আসে।এক বোতল পানি নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা গিলে নেয়। এদিকে বেলা আর বিভান পরদিন সকালে বেলা আর বিভান ছাদে কিছুটা সময় পার করে দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে পড়ে গীতা ভবনের জন্য।রুম বিল পে করে বেরিয়ে আসে ওরা।কিছু দূরত্বেই গীতা ভবন পেয়ে যাবে ওরা।গাড়িতে উঠে বসে বিভান বেলা। বিভানের ফোন বেজে উঠে।ফোন বের করে দেখলো বন্দনা আখতারের কল।বিভান বলল,
''মা কল দিয়েছে।"
শাশুড়ীর কথায় বেলার বুক কেঁপে উঠে ভয়ে।বিভান ফোন ধরে বলল,
''মা বলো।"
''তোরা কই।কাল রাতে ঘরে ফিরিসনি।কল ও দিস নি।কই তোরা?"
''মা আমি বেলাকে নিয়ে রিশিকেশ আসছিলাম।এখন গীতা ভবন যাচ্ছি।রাত হবে ফিরতে।চিন্তা করোনা। "
কিছুটা রেগে বন্দনা আখতার বললেন,
''বৌকে নিয়ে ঘুর।স্বর্গে নিয়ে যাবে বৌ।মায়ের তো পরোয়াই নেই তোর।মা মরুক বাঁচুক তোর কি?"
বিভান বেলার দিকে চেয়ে ইশারা করে বলল একটু কথা বলে নেই।বেলা কিছু না বলে ম্লান হাসে।বিভান বেরিয়ে মাকে বলল,
''মা কি আজে বাজে বকছো?তোমার চিন্তা কেন থাকবেনা?বাসায় ইশান কি এমনে এমনে গিয়েছিলো।বেলা বলেছিলো বলেই ওকে তোমার কাছে পাঠিয়েছি যে কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি?'
বন্দনা আখতার রেগে বললেন,
''হুম হুম বুঝলাম তোর কতো চিন্তা আমার জন্য।ঘরে আয় জলদি।"
বলেই কল কেঁটে দেন বন্দনা আখতার।বিভান ফোন সরিয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলো।মাকে ঠিক বুঝতে পারেনা ও।বেলা কিছু বলার আগে বিভান গাড়িতে ঢুকে বলল,
''মা একটু চিন্তা করছিলো।তবে এখন ঠিক আছে।"
বেলার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ।মলিন কন্ঠে বলল,
''বিভান চলুন ঘরে ফিরে যাই।গীতা ভবন যেতে হবেনা।"
বিভান বেলার তলার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
''বেলা রানী শুধু শুধু ভাবছো।এভ্রিথিং ইজ ওকে।আমি আছি না?কিছু হবেনা। "
বেলা কিছু বলে ম্লান হাসে।ওরা গীতা ভবন পৌছে গেলো।বিভান লঞ্চের জন্য টিকিট কাঁটতে গেলো।বেলা একটা বেঞ্চে বসে আছে।ও দেখলো একটা ছোট্টবাবু একজন মহিলার কোলে।বাচ্চাটিকে মা চুমু খাচ্ছে।বাচ্চাটি হাসছে আর হাত নেড়ে খেলছে।বেলার চোখে পানি চলে আসে।বিবাহের এই তের বছরের জীবনে মা হওয়ার স্বপ্ন অপূর্নই থেকে গেলো।
এদিকে সেদিন রাতে ঘরে ফিরে নিশাদ সব কাজ সমাধান করে।পায়ের অবস্থা বেশ খারাপ কারন অনেকটা রাস্তা দাঁড়িয়ে আসতে হয়ে ছিলো।
!!!!
গীতা ভবন থেকে ঘরে ফেরার পথে সাঁঝের নম্বরে কল দেয় বেলা।নিশাদ কে কয়েকবার কল দেয়ার পর ধরছিলোনা।আর আদনান বলল ও বাহিরে তাই অগ্যত সাঁঝকে কল দিল বেলা। শুয়ে আছে সাঁঝ।মাথাটা ভার হয়ে আছে।মুখের ভেতরটা একদম তেতো হয়ে আছে।চোখ জোড়াও জ্বলছে।কালকের কথা মনে হতেই গা কাঁপতে লাগে ওর।ওর কিছু হয়ে ও যেতে পারতো।কিন্তু সাইমন এসে ওকে বাঁচিয়ে নিলো।লোকটাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে।কথা গুলো ভাবার মাঝেই কল আসে সাঁঝের নম্বরে।শুয়েই ফোন নিয়ে দেখলো বেলা কল করেছে।সাঁঝ উঠে বসে কল রিসিভ করে,
''আসসালামু আলাইকুম আপা।ভালো আছিস?"
''ওয়ালাইকুম আসসালাম।তোদের কি খবর?"
''আলহামদুলিল্লাহ। আপা তুই গাড়িতে?"
''হ্যা রিশিকেশ গিয়েছিলাম।লঞ্চে ঘুরেছি এখন বাসায় যাই।"
''ওহ। ভাই কেমন আছে?"
''ভালো।তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?অসুস্থ?"
''জ্বর ছিলো আপা।আমি এখন ঠিক আছি।"
বেলার কন্ঠে চিন্তার ভাব।ও বলল,
''জ্বর কবে এলো?"
''কাল এসেছিলো।ঋতু পরিবর্তন হয় জানিস তো।"
''হুম।আম্মা আব্বা কই?"
''বাড়িতে গেছে আব্বা।আম্মা কাজ করে।"
''নিশাদের কল রিসিভ হচ্ছেনা।"
''ভাইয়া কুমিল্লা গেছিলো।ঐখান থেকে আসছে।তাই একটু টায়ার্ড। "
''ওহ।লাবনী কুঞ্জন হুমায়রা ওদের কি খবর?"
''হুমায়রার সামনে পরীক্ষা।পড়া নিয়ে ব্যাস্ত।আর বাকিরা ভালো আছে।"
''তোদের খাওয়া শেষ?"
''জি আপা।"
''আব্বা কবে গেলো?"
''কাল সকাল ভোরে।"
''ওহ।সাঁঝ বাসায় এসে গেছি।পরে ফোন দেই ওকে?"
''আচ্ছা আপা।বন্দনা আন্টিকে সালাম দিবি।"
''ওকে।"
বেলা কল কেঁটে গাড়ি থেকে নেমে আসে।বিভান গাড়ি পার্ক করে বেলাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছেন বন্দনা আখতার।বেলা কে দেখে ভীষন রাগ হলে ও বিভানের সামনে হাসার চেষ্টা করতে করতে ওদের সামনে এসে দাঁড়ান।তারপর বললেন,
''কেমন ঘুরলে তোমরা?"
বিভান বলল,
''ভালো ছিলো।তুমি কেমন আছো মা?"
''ভালো।বেলা তুমি কেমন?"
''এইতো মা। খেয়েছেন?"
''না।তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম।যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো।"
বেলা ম্লান হেসে বিভানের সাথে উপরে যেতে থাকে।রুমে এসে বিভান বলল,
''দেখলে মা কতটা নরমাল ছিলো।শুধু শুধু ভয় পাও।"
বেলার মুখ চিন্তা আর ভয়ে জুবুথুবু।তারপর ও নিজেকে সামলে বলল,
''এটা ভয় না বিভান সম্মান।ওনাকে না বলে গিয়েছিলাম তাই খারাপ লাগছিলো।"
''হুম।"
বেলা আলমারি থেকে দুজনের কাপড় চোপড় বের করে নেয়।বিভান কাপড় হাতে নিয়ে বলল,
''আগে তুমি যাবে না আমি?"
''আপনিই চলে যান।আমি পরেই করি।"
''দুজনে একসাথে করবো চলো।"
বলে বেলার হাত টানতে থাকে বিভান।বেলা বলল,
''কি করছেন ছাড়ুন!!"
''বেলা চুপচাপ আসো আমার সাথে।"
বলে বেলাকে প্রায় কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো বিভান।বেলা অনেক বলে ও থামাতে পারেনি।এদিকে নিশাদ অনেকটা সময় ঘুমিয়ে উঠে।এখন একটু ভালো লাগছে।ও উঠে খাটে বসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বেলার অনেক গুলো কল।নিশাদ অস্ফুটস্বরে বলল,
''ইসস আপা কল দিয়েছিলো আর ঘুমাচ্ছিলাম আমি।"
নিশাদ কল ব্যাক করে কিন্তু ফোন রিসিভ হয়না। ও উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।সাঁঝ পাকঘরে দাঁড়িয়ে আছে।হুমায়রা আর মা কাজ করছে।সাঁঝ বলল,
''হুমু যেয়ে পড়তে বস।আমি করতেছি এগুলা।"
মেয়ের কথা শুনে জুলেখা বানু বলল,
''তোরা দুনুডাই যা।হুমায়রা যায়া ফড়তে বয়।সাঁঝ যায়া ঘুমা।শরীল ভালা না তোর।"
''মস হুমায়রা যাক।আমি কাজ করি তোমার সাথে।"
জুলেখা বানু বললেন,
''তাইলে শাক গুলা বাইচ্ছা দে।তোর ভাইয়ে খাইবো।"
সাঁঝ নিচে বসে শাক বাছতে গেলে আদনান বলল,
''উপরে বসে কর।ঠান্ডা লাগবে।এমনিই জ্বর বাঁধাইছে।ওনি আবার নিচে বসে শাক বাছবে।"
সাঁঝ চেয়ারে বসে শাক বাছতে থাকে।নিশাদ টেবিলে এসে বসে বোনের সাথে শাক বাছতে বাছতে বলল,
''আপা কাউরে কল দিছিলো?"
সাঁঝ বলল,
''দিছিলো।তোরে পায়নি তাই আমার কল করছিলো।"
আদনান ওদের কথা শুনে বলল,
''বাহিরে ছিলাম।আপা কল দিয়েছিলো।বললাম বাহিরে আছি আমি।ঘরে গিয়ে ফোন দেই।"
সাঁঝ বলল,
''এখন ফোন দিয়ে কাজ নেই।আপা আর ভাই বাহির থেকে আসছে।টায়ার্ড এখন।"
নিশাদ তৎখনাৎ বলল,
''তাহলে কাল কথা বলবো।ওরা রেস্ট করুক।"
এতক্ষন বড় মেয়ের কথা শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা জুলেখা বানু। পাকঘর থেকে এসে বলল,
''তাইলে আমার লগে ও কথা কওয়ায়া দিবি।মাইডার লগে কথাই হইতে ফারেনা।"
নিশাদ বলল,
''আচ্ছা আম্মা।"
আদনান ও শাক বাছতে বসে যায়।সাঁঝ ভাইদের দিকে তাকায়।এমন ভাই যেন প্রতিটা ঘরে ঘরে আল্লাহ পাঠায়।চোখ ভরে আসে সাঁঝের।পরদিন সকালে সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে গেলো।সাঁঝের শরীর আগের চেয়ে ভালো আছে।তাই আজ সব গুলো টিউশানে জয়েন করবে।তাই মায়ের সাথে মিলে সব রান্না বান্না করে নেয়।আদনান প্রথম ইন্টারভিউ দিয়েছিলো সেখান থেকে কল পায়।তারা বলল আগে ট্রেনিং নিবে তারপর ওর এক্টিভিটি দেখে সিলেক্ট করবে। আদনান আশার আলো দেখতে পায়।বুক ভরে উঠে খুশিতে।
চিৎকার করে ডাকতে থাকে আম্মা সাঁঝ শুনো তোমরা।
↑
↑
↑
জুলেখা বানু সাঁঝ দৌড়ে আসে।জুলেখা বানু বলল,
''কিরে চিল্লাস কিল্লাই?"
আদনানের মুখে খুশির স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি লেপ্টে আছে।ও হেসে বলল,
''আম্মা ঐদিন ইন্টারভিউ দিছিলাম না?ওরা কল দিছে।এখন একমাসের ট্রেনিং নিবে।"
আদবানের কথায় মা খুশিতে কেঁদে ফেলে দোয়া চাওয়ার মতো হাত জোড় করে বললেন,
''আল্লাহর অশেষ রহমত।"
সাঁঝ খুশিতে হেসে বলল,
''আম্মা দোয়া করো ভাইয়াদের জন্য।"
''হেইডা আবার না করিরে আম্মা।বড় ফোলাডা জানলে কতো খুশি হইবো।"
আদনান বলল,
''ভাই বাসায় ফিরলে জানামু।তার আগে আপারে কল দেই।"
আদনান ফোন বের করে বেলাকে কল দেয়ার জন্য।জুলেখা বানু বললেন,
''আমারে ও দিস।"
''আচ্ছা আম্মা।"
সাঁঝ সব কাজ শেষ করে রেডি হতে থাকে।টিউশানি গুলাতে আজ জয়েন করবে।অনেক দিন ভার্সিটি ও কামাই গেলো।মাস্টার্সে নতুন ভর্তি হয়েছে।প্রথমে এতো গ্যাপ দিলে পরীক্ষাগুলোয় খুব সমস্যা হবে।এখন ভার্সিটি যাবে তারপর টিউশানি।সাঁঝ বেরিয়ে আসে কলেজে যাওয়ার জন্য।।
এদিকে সেদিন সকালে বিভান অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো।তখনই রুমে প্রবেশ করেন বন্দনা আখতার।ছেলে কে রুমে একা পেয়ে বললেন,
''শোন ব্যাংকক থেকে জুলি আসছে।প্রথম ইন্ডিয়াতে আসছে।ওর একটা চাকরীর খুব দরকার।"
জুলির কথা শুনে রেগে যায় বিভান।মোটা কন্ঠে বলল,
''তো আমি কি করবো?"
প্রচন্ড অবাক বন্দনা আখতার।তার ছেলে এ কিভাবে কথা বলল?বন্দনা আখতার বললেন,
''এ কিভাবে কথা বলছিস বিভান?আর জুলি কে নিয়ে তোর এতো সমস্যা কেন?"
বিভান বলল,
''মা সমস্যা জুলি না ওর আচার আচরন ওর ইন্টেনশনস।"
''দেখ অতোসতো বুঝিনা তুই ওকে আজ কে রিসিভ করবি।"
রেগে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয় বিভান।বলল,
''মা ও এখানে থাকবেনা।"
''কেন?কেন থাকবেনা?আমার ভাইয়ের মেয়ে অবশ্যই থাকবে।"
''মা এনিয়ে পরে কথা হচ্ছে। আর ওকে রিসিভ করবো না আমি।"
বলেই রেগে বেরিয়ে গেলো বিভান।নিচে এসে জুস একটু খেয়ে চিৎকার করতে লাগলো,
'' বেলা এদিকে এসো।"
বেলা ভয় পেয়ে দ্রুততার সাথে বিভানের দিকে এগিয়ে আসে।বিভান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো।বেলা আসতেই ওকে টেনে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।বেলা ভয়ে শেষ।বিভান অনেকটা সময় নিয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর কোমড় হ্যাচকা টান দিয়ে বেলাকে বুকে টেনে নিয়ে ওর কাঁধে মুখ গুঁজে বলল,
''ভালোবাসি।"
বেলার চোখ ভিজে আসে।হাতের কোনা দিয়ে চোখ মুছে বলল,
''বিভান বাসায় আমরা।আপনার ও তো দেরি হচ্ছে।"
সরে আসে বিভান।তারপর বেলার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
''আসি।"
''ওকে।"
এসব টুকুই বন্দনা আখতার দেখে ভীষন রেগে যান।বেলা স্বামী কে বিদায় দিয়ে সরে আসে।এদিকে ক্লাশের ফাঁকে হুমায়রা ফোনটা একটু বের করে নেয়।হৃদয় আহমেদ নামে একজন মেসেজ রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। মেসেজ ছিলো নীলপরী নীলাঞ্জনা আপনি।এত অপরুপাকে প্রথম দেখলাম।
মেসেজ পড়ে হাসি আসে হুমায়রার।হাসি আটকে মেসেজ দিলো এসব ফাউল কথা বলতে আসবেননা সাবধান।
ফোন রেখে দিলো হুমায়রা।প্রায় দুমাস যাবৎ লোকটার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলে আছে।এদিকে বিকেলে অফিস থেকে ফিরে এসে চারতালায় যাওয়ার কথা ভাবলো সাইমন।যাওয়ার কারন ও নিজেই জানেনা।চারতলায় বেল দিতেই রিদ্ধিদের কাজের মেয়েটা দরজা খুলে।সাইমন বলল,
''ভাবি কই?"
''ডাইকা আনতাছি।"
কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর সাইমন দূরে সোফায় বসা সাঁঝকে দেখতে পায়।এটাই কি কারন ছিলো এখানে আসার?কেন যেন মনে হচ্ছে মিস সাঁঝই ওর এখানে আসবার কারন।সাঁঝ রিদ্ধি কে পড়াচ্ছে।কিছুক্ষন পর রিদ্ধির মা এসে বলল,
''আরে সাইমন তুমি?"
ওনার ডাকে সাইমনের ঘোর কাঁটে।বলল,
''জি ভাবি জানতে এলাম ভাল আছেন?কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো?"
''আরে নাহ কি বলো?ভিতরে এসে বসো।"
''না ভাবি কাজ শেষ।অফিস থেকে এলাম।"
''কাজ শেষ!!কি কাজ?"
''না ভাবি কিছুনা আসি।রিদ্ধি পরে দেখা হবে।"
রিদ্ধিকে ডাকার সাথে সাঁঝ আর রিদ্ধি দুজনে সাইমনের দিকে তাকায়।রিদ্ধি বলল,
''জি আঙ্কেল আসবেন।"
সাঁঝ স্মিত হেসে রিদ্ধিকে বলল,
''পড়ো তুমি।"
সাইমন মিটমিটিয় হেসে বেরিয়ে গেলো।সাঁঝ বুঝতে পারেনা হাসির কারন।ও বুঝতে ও চায়না।রিদ্ধির মা বলতে লাগলো,
''কখনো এভাবে এসে খোঁজ নেয়নি।তাহলে আজ কি হলো?"
রিদ্ধি বলল,
''মনে হয় এমনিই এসেছে।"
সাঁঝ ওদের কথা শুনে ভাবছে লোকটা ওকে দেখে অদ্ভুত ভাবে হাসছিলো।হাসির মাঝে ছিলো রহস্য ভরা।