পরাণ প্রিয়া - পর্ব ১৮ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


রাত এগারোটা নিবিড় এখনো বাড়ি আসেনি, প্রিয়তা নিবিড়ের ফোনে অনেক বার কল দিয়েছে।বার বারই ফোন বন্ধ বলছে।প্রিয়তা চিন্তিত হয়ে পড়লো,ওনি তো ফোন এইভাবে বন্ধ রাখে না। সেদিন না জেনে আমি ওনাকে যা ইচ্ছা তাই বলেছি। কিন্তু আমারই বা কি দোষ আমি কী করে জানবো শয়তানটা আমাকে এতোগুলা এসএমএস দিয়ে রাখবে।
প্রিয়তা মাহিদকে ফোন দিয়ে,
-জ্বি ম্যাডাম বলুন?
-আপনার স্যার কোথায়? 
-স্যার তো সন্ধ্যায় চলে গেছে। বাসায় যায়নি?
-না,প্লিজ আপনি জানেন ওনি কোথায় যেতে পারে? 
-ম্যাডাম আমি কিছুই জানি না। আমি খবর নিয়ে দেখছি ওনি কোথায় আছেন।

কাকে খুঁজে পাচ্ছো না, ভাইকে?
প্রিয়তা ফোন রেখে পিছনে ফিরে, আপু দেখো না তোমার ভাই সেই সকালে বাহিরে গেছে এখনো আসেনি কিন্তু ওনি তো এমন করে থাকেন না।
নাদিয়া প্রিয়তার কাঁধে হাত রেখে ভাই আজ আসবে না প্রিয়তা।
প্রিয়তা একটু অবাক হয়ে কেনো আসবে না? 
-তুমি তার জীবনে নতুন তাই এখনো কিছুই জানো না।ভাই এমনি, কাউকে নিজের কষ্টটা বুজতে দেয় না।সবসময় নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়ালে রাখে।চলো আমি তোমাকে দেখাবো কারণ এইটা আমার দ্বায়িত্ব।ভাই যেখানে আছে চলো তোমাকে নিয়ে যাই।কথাটা বলে  প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে,
বাবা, মা তোমাদের হলো? দাদী কই তুমি আসো।আমি প্রিয়তাকে নিয়ে গাড়িতে বসছি।

সালমা বেগম নিরব স্থির হয়ে আছেন।প্রিয়তা কি সব মেনে নিয়ে তাকে আর আগের মতো ভালোবাসবে? সেই ভয় মনে হাজারটা প্রশ্ন জেগেছে। 
প্রিয়তা সালমা বেগমের দিকে তাকিয়ে, মা কি হয়েছে তোমার? তুমি কী কোনো কারণে চিন্তিত?
সালমা বেগম মাথা নাড়িয়ে না বুজাল।

গ্রামের রাস্তায় পেরিয়ে গাড়ি এসে থামতেই,আপু আমরা কোথায় আসলাম?

মোশারফ হোসেন গম্ভীর গলায় বললেন তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের কবরের স্থানে। 

প্রিয়তা মুচকি হেসে, বাবা আপনিও দেখি মাঝে মাঝে সবার মতো হয়ে যান।আপনি মাকে সামনে রেখে এখুনি মেরে ফেলতে চান নাকি?

সালমা বেগম ভারী গলায় বললো, তোর শ্বশুর ঠিক বলছে মা।কথাটা বলতেই দুইজন লোক এসে,বড় সাহেব আপনাগো একক্ষণ আসার সময় হইলো? ছোটো সাহেব সেই সন্ধ্যায় আইসা পড়ছে।বড় মা আপনি কেমন আছেন? অনেক দিন পর আপনি আইলেন।

-চাচা এইবার থেকে সবসময় দেখতে পাবেন। চাচী আপনি কেমন আছেন? 
-এই তো বেশি ভালা নাই।তয়ে এখন খুব ভালা আছি।
নিবিড়ের দাদী গাড়ি থেকে নেমে,তোমরা কি এইখানেই সব বইলা ফেলবা? চলো ভেতরে যাওন যাক।
সালমা বেগম কিছু না বলেই চুপচাপ ভেতরে চলে গেলেন। চাচী আপনাদের ছোটো সাহেবের বউ।
- মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। কিন্তু ছোটো সাহেব বিয়া করলো আর আমাগোরে একটু জানালো না।
-চাচী কেউ জানে না।তবে এখন থেকে জানবে।
প্রিয়তা ইনারা এইবাড়িতে আছেন ত্রিশ বছরের বেশি হবে।আমরা চাচা চাচী বলেই ডাকি।
প্রিয়তার সব কিছু যেনো গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে।কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই বুজতে পারছে না।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে একটু অবাক হলো ঠিক যেনো একটা রাজবাড়ি। দোতালায় ভবন কিন্তু কেমন যেনো সব অদ্ভুত। 
 
প্রিয়তা এইদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে, হঠাৎই করিমের বউ, (যাকে নাদিয়া চাচী বলে ডাকলো।)এসে 
বউমা আপনি ছোটো সাহেবরে খুঁজতাছেন? চলেন আমার লগে।ওনি উপরে নিজের ঘরে আছে।প্রিয়তা চাচীর পিছন গিয়ে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই, এই রুমেই আছে। আপনি যান আমি সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি।
প্রিয়তা রুমে এসে দেখে নিবিড় একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের চোখের পানি গুলো ওই ছবির গ্লাসের উপর পড়ছে।বাবা, এই রাক্ষস আবার কাঁদতেও জানে নাকি।
প্রিয়তা এসে সামনে দাঁড়াতেই,নিবিড় তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে দাঁড়িয়ে, তুমি এইখানে? 
-আসলে আমি বুজতে পেরেছি আপনি অনেক কষ্টে আছেন।কারণ আপনাকে আমি কখনো কাঁদতে দেখেনি আজ আপনার চোখে পানি,,,,,

নিবিড় ধমকিয়ে রাগী স্বরে বললো, এনাফ।আজকের দিনে আমি কারো কাছ থেকে সহানুভূতি চাই না।আর তোমাকে এখানে কেনো এনেছে? গেটআউট, নাউ গেটআউট।
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায়, আপনি এমন করছেন কেনো? আমি বুজতে পারছি আপনার কষ্টটা।
-না বুজতে পারো নি। সবাই দূর থেকে শুনিয়ে যায়, আমি বুজতে পেরেছি,আমি কষ্টটা জানি। আসলে কেউ জানে না।কেউ বুজে না।সবাই শুধু উপরের থেকে তামশা করে।নিজের এই দুটো চোখে নিজের মাকে আগুনে জ্বলতে দেখেছি,কেউ বুজবে না এই কষ্ট।  প্লিজ আজকের দিনটা অন্তত আমায় একা থাকতে দাও। কথাটা বলেই নিবিড় প্রিয়তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।

সালমা বেগম এসে প্রিয়তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তুই আমার সাথে আয়।নিবিড় তোকে আজ ওর জীবনে জায়গা দিবে না এই একটা দিন ও সবার থেকে আলাদা থাকে। প্রিয়তা সালমা বেগমের রুমে আসতেই দেখে এখানেও দেওয়ালে সে ছবিটা। 
প্রিয়তা এবার সালমা বেগমের দিকে তাকিয়ে, মা ইনি কে আমায় একটু বলবে? 
সালমা বেগম অসহায় গলায় বললো, নাজিফা ইসলাম।নিবিড় আর নাদিয়ার মা!
প্রিয়তা অবাক হয়ে, মানে? মা তুমি এইসব কি বলছো?
-হেরে এটাই সত্য।আমি নিবিড়ের জন্মদাত্রী মা নয়।আমি শুধু নিবিড়কে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি।
-মা তুমিও আমার সাথে ইয়ার্কি করছো? প্লিজ মা আমার এসব আর ভালো লাগে না।
-তোকে যে ভালো লাগাতেই হবে মা। কারণ সত্যের কাছে সবাইকে একদিন হার মানতে হয়।
জানিস? নিবিড় তো প্রথম প্রথম আমায় সহ্যই করতে পারতো না।আমার সাথে কথাও বলতো না।কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছি।নাদিয়া এখনো মাঝে মাঝে আমায় ছোটো মা বলে ডাকে। কিন্তু আমি মনে করি জুহির মতো তারার আমার সন্তান। 
প্রাপ্তি কথাগুলো শুনে আস্তে আস্তে পিছিয়ে খাটে ধপাস করে বসে পড়লো।সালমা বেগম আবার বললো,নিবিড়ের মায়ের কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।শুনেছি নিবিড়ের ছোটো চাচার কারণেই নাকি মৃত্যু হয়েছে।তবে নিবিড়ের চাচা এখন দেশে থাকেন না।কোথায় থাকে এটাও কেউ জানে না।আপার লাশ যখন পাওয়া যাই কেউ চিনে নাই।তবুও শনাক্ত করে আপা মনে করেই তোমার বাবা এই বাড়ির সামনে যে মসজিদটা আছে ওইখানেই করব দেওয়া হয়েছে।
কিভাবে মারা গেছে ওনি মা? 
আগুনে পুড়ে।এইবাড়ির একদম পশ্চিম পাশের যে রুমটা আছে ওইরুমে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর আপা নাকি তখন সেখানেই ছিলেন।নিবিড় তখন সাত বছরের ছিলো।ও স্কুল থেকে এসে এগুলো সহ্য করতে পারেনি।চোখের সামনে মাকে এভাবে জ্বলে যেতে দেখে কার ভালো লাগে বল?
তবে আরেকটা কথাও এখানে থেকে যায় সেদিনের পর থেকে ওদের কাজের মহিলাটাকেই নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি।তোর শ্বশুর আপাকে করব দিয়ে গ্রাম থেকে শহরে চলে যায় নাদিয়া, নিবিড় আর নিবিড়ের দাদীকে নিয়ে।
কিন্তু মা তুমিই তো আমাকে বললে দাদী নাকি তোমার বিয়ের দশ বছর পর মারা যায়, তাহলে এখন যে আমাদের সাথে থাকে ইনি কিভাবে দাদী হয় আমাদের?
সালমা বেগম মুচকি হেসে, এতোদিন তোর মনে এইপ্রশ্নটা অনেক ঘুরেছে তাই না?
ইনি নাজিফা আপার মা।কিন্তু নিবিড় আর নাদিয়া ওনাকে নানী না বলে দাদী বলেই ডাকে।
প্রিয়তা আমি জানি তুই আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসবি না তাই না? কারণ আমি তো নিবিড়ের মা,,,,
প্রিয়তা সালমা বেগমকে বলতে সুযোগ না দিয়ে জড়িয়ে বুকের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে,তুমিই আমার মা।আমি এতোদিন যা জেনে এসেছি সেটাই ভবিষ্যতেও জানা থাকবে।তুমি কেমন মা সেটা আমার জানার বিষয় নয়।অনেক আপন মাও তোমার কাছে ধোঁপে টিকবে না।কারণ তোমার সন্তানদের জন্য তোমার ভালোবাসা যে অসীম। 

সারাটা সাত প্রিয়তা আর সালমা বেগম গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছে।সকালে একটু খানি চোখ লাগতেই ফজরের আজান দিতেই দুজনেই উঠে পড়লেন।বাড়িতে নানা রকমের মানুষের আনাগোনা।বাহিরের উঠানের এক কোণে রান্নার তোড়জোড় আয়োজন চলছে।গ্রামের মানুষেররা এসে মোশারফ হোসেনের সাথে দেখা করে যাচ্ছে।সকাল বেলা জুহি রিসাদ  শেফালী আর মাহিদ এসেছে।
নিবিড় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে বাহিরে চেয়ার দিয়ে আসন পাতা হয়েছে, বসার রুম থেকে পেপার নিয়ে সেখানে গিয়ে বসেছে সে। প্রিয়তা কোথায়? ওকে দেখছি না কেনো? কাল ওকে এইভাবে না বললেও হতো।মেয়েটা আসলে যাই বলি না কেনো মুখ বুজে সহ্য করে নেয়।প্রিয়তা জুহি নাদিয়া করিডর দিয়ে হাঁটে এগিয়ে আসতেই হাসির আওয়াজ শুনে নিবিড় নিউজ পেপারটা একপাশে সরিয়ে তাকিয়ে দেখে প্রিয়তা। 
সকাল সকাল মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।তবে বাসার থেকে এখানে আসার পর একটু আলাদা লাগছে মনে হচ্ছে কিছু একটা মিস্টেক হয়েছে।
হঠাৎই এসএমএস এর কথা মনে পড়তেই নিবিড় নিমিষেই গম্ভীর হয়ে, তুমি আমাকে এখনো জানালে না ওই এসএমএসগুলো কে পাঠিয়েছে।আমি জানি তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো কিন্তু ওই লোকটা তোমার পিছনে পড়েছে কেনো সেটাও আমার জানতে হবে।সেদিন নাম্বারটা নিতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।ঢাকায় ফিরে গিয়ে ওর ফোন থেকে যেই করে হোক নাম্বারটা নিয়ে আমাকে দেখতে হবে।

মাহিদ নিবিড়ের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে, স্যার আপনাদের বাড়িটা খুব সুন্দর। একদম আগেরকার জমিদার বাড়ির মতো।তবে বাড়িটায় রঙ করে নিলে আরও ভালো লাগবে।
নিবিড় মাহিদের কথার প্রসংগ পাল্টিয়ে, রিসাদ সাহেব কোথায়?
-ওনি রান্নার লোকদের দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছেন।আপনার বাবাই ওনাকে বলেছে।

প্রিয়তাকে ডেকে সালমা বেগম সবার জন্য নাশতার ট্রেটা হাতে তুলে দিয়ে,যা তো সবার সকাল থেকে খাওয়া হয়নি।নিবিড় একটুপর কফি না ফেলে খবর আছে।
সবাই এসে বসছে নাশতা খাওয়া জন্য।প্রিয়তা নিবিড়ের হাতে কফির কাপ দিতেই,বসো এখানে!
প্রিয়তা বসছে না দেখে, কথা কানে যায় না?
প্রিয়তা বসতেই নিবিড় বিড়বিড় করে,চুল গুলো ছেড়ে দাও।
-মানে কী? সবার সামনে আমি চুল খুলে হাঁটবো? বাবা দেখলে আমার আস্ত রাখবে?
নিবিড় রাগী চোখে তাকাতেই,খুলছি তো,এমন করছেন কেনো?
প্রিয়তা চুল চেড়ে দিতেই, এইবার মাথায় ওড়না দাও।যেনো বুজা না যায়।
-উহু,কি আজব প্রানী আপনি?
নিবিড় কফিটা শেষ করে, রুমে চলো।
-মানে?
-তোমার জানতে ইচ্ছে হলো না আমি কোন প্রানী? সেদিন যেহেতু বুজতে পারোনি আমি কোন প্রানী আজ বুজিয়ে দিবো চলো।
-আপনি আসলেই একটা রাক্ষস। নাদিয়ার চোখ পড়তেই,কিরে ভাই দুজনে মিলে কি এতো ফুসুরফুসুর করছিস আমাদেরকেও বল একটু শুনি।
-আপু,প্রিয়তা বলতে চাইছে যে আজ সন্ধ্যায় সে সবাইকে রান্না করে খাওয়াবে কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না।
-আমি এই কথা কখন বললাম? 
-এইকি তুমি ভুলে গেলে? মাত্রই তো বললা।দেখ আপু বাবা আমায় কি বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসছে কয়েকদিন পর তো বলবে আমাকেই চিনে না।আমি কে? 
রিসাদ নিবিড় আর প্রিয়তার এসব দেখে শুধু গম্ভীরমুখে তাকিয়ে দেখছে।
-আপনি আমার সাথে এসব কি করছেন।আপু সত্যি বলছি আমি এইকথা বলিনি।ওনিই তো আমাকে বললো,রুমে চলো, সেদিনের,,,,,,কথাটা বলতেই জিভে কামড় দিয়ে,প্রিয়তা তুই এসব কি বলছিস সবার সামনে?
সবাই শুনে অট্র হাসি দিতেই নিবিড় বললো,থামলে কেনো বলো সেদিন কি? আপু জিজ্ঞেস কর ওকে কি হয়েছে সেদিন?
প্রিয়তা নিবিড়ের কানের কাছে এসে,আপনি কিন্তু আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন।এইসব বলা যায়?
-সেটা আমি কি করে জানবো? তোমার বলতে ইচ্ছে হয়েছে তুমি বলো।আমি ঘরে গেলেম।
নিবিড় উঠে চলে যেতেই,দিলেন তো আমায় ফাঁসিয়ে।রাক্ষস একটা।সবার সামনে আমাকে অপদস্ত করে গেলো।

জুহি ভ্রু কুঁচকে, কি হলো ভাবী বলো? সেদিন কি?
-আসলে, 
-কি 
-আসলে ওনি,,,
নিবিড় দোতালায় করিডোর দাঁড়িয়ে প্রিয়তা উঠে আসো আমার ফাইলটা খুঁজে দিয়ে যাও।
-আসলে আমায় ডাকছে,বলেই তড়িৎ ভাবে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো।
সবাই হাসতে হাসতে নাদিয়া বললো,বাবা তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
-হু।
-ভাই কতো চেইঞ্জ হয়ে গেছে।আগে তো কারো সাথে কথাই বলতো না।
-আপু জানিস ভাবী আসার পর থেকেই ভাইয়া এখন একটু একটু সবার সাথেই মিশে।

প্রিয়তা আসতেই,তোমার ভিতরে কোনো কিছু আটকে রাখতে পারো না তাইনা?
-আমি কি করলাম, আপনার কারনেই তো সব হলো।
-তোমার মাঝে কোনো গভীরতা নেই।আসলে আমি ভুল ভেবেছিলাম।আমি ভাবতাম প্রিয়তার গভীরতা অনেক। আর মুখটাও তো একটু বন্ধ রাখতে পারো তাই না?
প্রিয়তা কথাগুলো শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আর বিড়বিড় করে বলছে,সারাক্ষণ শুধু বকাঝকা করে।একটু ভালোবাসলেই তো পারে।তা না খালি রাগ দেখাবে।
নিবিড় সামনে এসে দাঁড়িয়ে, ওড়নাটা মাথার থেকে সরিয়ে,ওইটা সবার সামনে দিতে বলেছিলাম।তুমি জানো? চুল বাঁধা থাকলে আমার কাছে মনে হয় তোমার রূপে একটা কিছু মিস্টেক।তোমাকে খোলা চুলেই সুন্দর দেখায়।
প্রিয়তার মুখ হাসি হাসি দেখে নিবিড় এইবার গম্ভীর গলায় বললো, তাই বলে সারাদিন পেত্নীর মতো চুল ছেড়ে রাখতেও বলিনি।
-কিহ আমি পেত্নী?  আমি আর এখানে থাকবোই না।
কথাটা শুনে নিবিড় মুচকি হেসে প্রিয়তার পিছন থেকে হাত টেনে ধরে,নিজের সামনে এনে,আস্তে করে কানের কাছে চুমু দিয়ে,রাগ ভেঙ্গেছে?
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।খাটের উপরে একটা প্যাকেট আছে, একটা শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি ।দুপুরের আগেই পরে নিবে।
কারণ দুপুরে অনেক লোক আসবে।আর আমি চাই নিবিড়ের বউয়ের প্রসংশায় সবাই মেতে উঠুক।
-আপনি কি বউ বাজারে তুলবেন নাকি যে গ্রামের সবাইকে দেখাতে হবে?
-প্রিয়তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমি সবাই বলতে বুজাইছি আমার ফুফুরা,কাজিন।অন্য কাউকে নয়।ওকে?
-হু।
-এইবার যাও।আমার অফিসের কিছু কাজ আছে।সেগুলো শেষ করেই আমি আসছি।

রিসাদ নিজের রুমে এসে, থমথমে হয়ে বসে আছে।অধরা খাটে বসে খেলছে আর নানান কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু রিসাদের সেইদিকে কান নেই।নাদিয়া এসে, কি হলো? মেয়েটা তোমার সাথে কথা বলছে আর তুমি অন্যমনস্ক হয়ে আছো?
কিছু হয়েছে রিসাদ?
-না।স্যরি আসলে আমি খেয়াল করিনি।
-তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তা করছো?
- হ্যাঁ, নাহ্। কই নাতো।
নাদিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে, আমি জানি তোমার কিছু হয়েছে।খারাপ কিছু হলে আমাকে জানিয়েও প্লিজ।
-হুম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন