পরাণ প্রিয়া - পর্ব ২৭ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


প্রিয়তা উঠানে এসে দাঁড়াতেই প্রিয়তার মা একটু অবাক হলো।তিনি জামা কাপড়গুলো রোদে শুকাতে দেওয়ার জন্য বেহিরে এসে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।সত্যিই কী প্রিয়তা এসেছে?
হাতের জামা কাপড়গুলো রেখে দৌড়ে প্রিয়তার কাছে এসে,প্রিয়তা!মা তুই এসেছিস? কথাটা বলে কান্না জড়িত চোখে জড়িয়ে ধরেছে।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো।
প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে জামাই বাবা আসেনি? কই ওকে তো দেখছি না? 
খুব শান্ত গলায় প্রিয়তা বললো,ও আর  আসবে না মা! কথাটা বলেই প্রিয়তা বাড়ির  ভেতর ঢুকে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে দিলো।
দরজায় নিজের পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অজরে চোখের পানিগুলো ঝরাতে লাগলো।নুর জাহাজ বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে পিছন পিছন এসে দরজা বন্ধ দেখে, প্রিয়তা কী হয়েছে মা?ওই বাড়িতে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
প্রিয়তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নুর জাহান বেগম অসহায় মুখে সোফায় বসে পড়লেন।
প্রিয়তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।কি করে পারলো সে নিবিড়কে এইভাবে বলতে? নিবিড়ের মনে কতটা কষ্ট পেয়েছে সেটা তো আমি বুজি।নিবিড় প্লিজ আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন।আমি জানি আপনি আমায় কতোটা ভালোবাসেন।প্রিয়তা কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো।

নিবিড় সকাল থেকে একটু পানিও মুখে দেয়নি।প্রিয়তা তাকে কি করে বলতে পারলো তার শরীরের জ্বালা মিটিয়েছে ওকে দিয়ে?ও তো জানে আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারি না।কারো সাথে তেমন মিশতে পারি না।কাউকে ওর মতো করে ভালোবাসতে পারি না।তারপরেও কেনো সে এমন করলো।কী কম দিয়েছি আমি ওকে?একদিন চলে গেলো।
নিবিড়ের বাড়িতে সবাই থমথমে হয়ে আছে।যে যার রুমে পড়ে আছে।সালমা বেগম নিবিড়ের জন্য খাবার নিয়ে এসে টেবিলের উপর রেখে লাইট ধরিয়ে,যে চলে গেছে তার জন্য কেনো চিন্তা করে খাওয়া বন্ধ করে দিবি?
তুই যে ওকে কতটা ভালোবাসিস সেটা ওর বুজা উচিত ছিলো। 
নিবিড় চুপ করেই চোখ বন্ধ করে আছে।
সালমা বেগম আবার বললো,খেয়ে নে বাবা।প্রিয়তা এমন একটা কাজ করবে আমি জীবনেও ভাবিনি।শেষে কিনা মেয়েটার সংসার নিয়ে টানাটানি?
নিবিড় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,হেলান থেকে ঠিক করে বসে,মা প্রিয়তার নামে আমি এখানে কোনো কথা শুনতে চাই না।কে কি করলো কিংবা করে তার আমার থেকে তুমি ভালো জানো না।মা বিজনেসম্যান মানুষ এমনি এমনি হওয়া যায় না চোখ কান খোলা রেখেই দূর পথে পাড়ি দিতে হয়।

নিবিড়ের কথা শুনে সালমা বেগম মনে মনে বললো, আমি জানি নিবিড় আমার মেয়ে এই কাজ করতে পারে না।নিশ্চয়ই আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
নিবিড়ের কাছে এগিয়ে এসে,তুই উঠে খেয়ে নিস।আমি তোর বাবাকে ঔষধ দিয়ে আসি।এরপরেও যদি তুই না খাস তাহলে আমিও খাবো না।

প্রিয়তা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এসে ড্রইংরুমে বসেছে।নুর জাহান বেগম এসে পাশে বসে, কাল থেকে তো কিছুই খাসনি মা।এখন কিছু একটা খেয়ে নে।
-মা আমার ইচ্ছে করছে না।
-কি হয়েছে ওই বাড়িতে?
-কিছু হয়নি মা।তোমার মেয়ে কিছু দিনের জন্য সুখের রাজ্যে গিয়েছিলো ঘুরতে।সময় পুরিয়ে গেছে তাই চলে আসতে হয়েছে।
-তুই কী সত্যিই আর ওই বাড়িতে যাবি না? আমি না হয় জামাইকে একটা ফোন দিয়ে দেখি। আমি বললে নিশ্চয়ই সে তোকে এসে নিয়ে যাবে।ছেলেটা খুব ভালো।তোকে অনেক ভালোবাসে সেদিন নিজের চোখে দেখলাম।
-না মা, তুমি ওকে কোনো ফোন দিবে না।আমি যে ভাবে আছি ভালো আছি।আচ্ছা মা তুমি থাকো আমি কলেজে ইশাকের সাথে একবার দেখা করতে হবে।চাকরিটা যে আমার আবার বড্ড প্রয়োজন । 
-চাকরিটা যদি না হয়?
-অন্য কিছু দেখবো।চিন্তা করো না মা।তোমার মেয়ে এখন বাস্তবতা খুব ভালো করে বুজে। এই কয়েকটা মাস অনেক কিছু শিখেছি।কীভাবে শত আঘাতে নিজেকে সামলিয়ে নিতে হবে।
কথাটা মনে মনে বললো,মা নিবিড় যে আঘাত পেয়েছে সে আঘাতের তুলনা আমার আঘাত কিছু না।মানুষটার কাছে শিখেছি কি করে শত কষ্টে নিজেকে সামলাতে হয়।

কয়েকদিন হয়ে গেলো।নিবিড় আর প্রিয়তার মাঝে একবারও কথা হয়নি।নিবিড় বার বার ফোন হাতে নিয়েও আবার ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।প্রিয়তাও ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। 

সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে এসে নাশতার টেবিলে বসলো।নাদিয়া সবাইকে নাশতা দিয়ে অধরাকে খাওয়াচ্ছে।
রিসাদ এখনো নাশতা করতে আসেনি।নাদিয়া শেফালীকে ডেকে রিসাদকে ডেকে আনতে বললো।
নিবিড় সামান্য কিছু মুখে দিয়ে উঠে ড্রইংরুমে এসে খেয়াল করলো জরুরী ফাইলটাই নেওয়া হয়নি।নিবিড় উপরে গিয়ে ফাইলটা নিয়ে ফোনে মাহিদের কল আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লো। 
- হ্যাঁ মাহিদ বলো।
-স্যার ম্যাডাম তো কলেজে জয়েন করেছে।আমি সব ব্যাবস্থা করেছি।এবং ইশাক সাহেবকে বলেছি ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলে যেনো উনি বলে, সবকিছু যেনো উনিই করেছেন। 
- ওকে।এককাজ করো,একজন গার্ড লাগিয়ে দাও, ম্যাডাম কি করে না করে সেসব জানার জন্য।দরকার হলে ম্যাডামকে  কে ফোন দেয় কে এসএমএস দেয়,,,,, 
কথাটা বলেই নিবিড় অস্থির গলায় বললো,  মাহিদ তুমি ফোন রাখো।আমি অফিসে এসেই কথা বলছি।
ফোন রেখেই, আমি এতো বড় ভুল কীভাবে করলাম।হাতের কাছেই প্রমাণ থেকে কেনো বাহিরে দৌড়াদৌড়ি করছি।প্রিয়তাকে যে এসএমএস দিতো ওই নাম্বার তাহলে কার? নিবিড় অন্য একটা ফোন পকেট থেকে বের করে,এই নাম্বার প্রিয়তা ছাড়া কেউ জানে না।এইটা দিয়েই ফোন দিয়ে দেখি। ভাগ্যিস প্রিয়তা যাওয়ার আগে ওর ফোন থেকে নাম্বার নিয়েছিলাম।
নিবিড় ফোন দিতেই রিসাদের রুম থেকে ফোনের রিংটোন বাজতেই নিবিড়ের কানে এসে আওয়াজ লাগছে।নিজের কান থেকে ফোন নামিয়ে কোথায় আওয়াজ হচ্ছে? নিবিড় নিজের রুম থেকে বেরিয়ে রিসাদের রুমের দিকে নজর পড়লো।নিবিড় আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে রিসাদের রুমে যেতেই দেখে রুমে কেউ নেই। কিন্তু খাটের উপরেই ফোনটা বাজতে বাজতে কল কেটে গিয়েছে।নিবিড় আবার ফোন দিয়ে একদম ফোনের কাছে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নিজের নাম্বার। নিবিড় একটুও অবাক না হয়ে, আমার ধারণাটাই ঠিক।
রিসাদ ওয়াশ রুমে থেকে এসে,নিবিড়ের হাতে নিজের ফোন দেখে, অবাক হয়ে,,তু,,মি?হঠাৎ এই রুমে।
নিবিড় নিজেকে সামলিয়ে, মুচকি হেসে তোমাকে ডাকতে আসলাম।এগারোটা মিটিং আছে তুমি ওখানে থামবে।
রিসাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালেও এইটা মাথায় আসলো না নিবিড় আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেলো কেনো? 
নিবিড় মুচকি হেসে,আসলে তুমি আমার আদরের বড় বোনের স্বামী। আপনি আপনি বলতে কেমন জানি লাগে।ওকে তাহলে তুমি আসো আমি যাই।

রিসাদ স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে, যাক বাবা নিবিড় কিছু বুজতে পারিনি।কিন্তু আমার মনের কথাটা শুনে নিলো?

নিবিড় নিচে এসে কাউকে কিছু না বলে অফিসে চলে গেলো।
অফিসে এসেই নিজের কেবিনে গিয়ে চেয়ারে বসে,রিসাদ আর প্রিয়তার নিশ্চয়ই কোনো অতীত আছে যেটা এরা দুজন সবার কাছ থেকে লুকিয়েছে।কিন্তু কি সেটা? প্রিয়তা আমি এই কয়েকদিন নিজের চোখ দুটো এক করতে পারিনি।আর তুমি একবারও ফোন দিয়ে বললে না নিবিড় আপনি ঠিক আছেন? কার ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি খুঁজে নিলে? কেনো করলে এসব? আমার ভালোবাসা কি তোমার কাছে এতোটাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য। নাহ্ বিকেলে গিয়ে আমি প্রিয়তাকে নিয়ে আসবো।বাড়ির সবাকে যে করে হোক কিছু বুজিয়ে প্রিয়তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।

কিছুক্ষণ পর মাহিদ এসে,স্যার ডেকেছেন?
-হুম।তোমার ম্যাডাম কলেজ থেকে গেলে আমায় বলবে। আমি ওই বাড়িতে যাবো।
-জ্বি স্যার।

মোশারফ হোসেন সালমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,সালমা একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
-কী? 
-নিবিড় কিন্তু আগের মতো হয়ে গেছে।কারো সাথে কথা বলে না।চুপচাপ হয়ে থাকে। প্রিয়তা থাকতে তো দুইএকটা কথা শুনা যেতো এখন তো তাও না।
-চিন্তা করো না।প্রিয়তা ফিরে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর আমার বিশ্বাস নিবিড় প্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনবে।

বিকেল ঘনিয়ে এসেছে।প্রিয়তা কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে পেচিয়ে চুলগুলো বেঁধে, মা ওমা রিয়া ইভাদের বাড়ি থেকে আসেনি? 
নুর জাহান বেগম চুলায় চা বসিয়ে বাহিরে এসে, নারে।
-কিন্তু মা ওর তো পরীক্ষা তাই না? 
-চিন্তা করিস না,কাল হয়তো চলে আসবে,,,,
-মা ভিতরে আসো তো।বাহিরে থেকে কী বলো? চা হয়েছে?
নূর জাহান বেগম কিছু বলছে না।তাকিয়ে আছে সামনে থাকা মানুষটার দিকে।নুর জাহান বেগম এগিয়ে গিয়ে, কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে এইভাবে শাস্তি কেনো দিচ্ছো? আমার মেয়েটা কী অন্যায় করেছে? 
নিবিড় নুর জাহান বেগমকে সালাম দিয়ে,মা আপনার মেয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে।
এতো কারো দোষ নেই।
-ঠিক আছে বাবা আমার মেয়ে যে অন্যায় করেছে তার হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
নুর জাহান বেগম হাত জোড় করতেই নিবিড় হাত ধরে বুকে জড়িয়ে, ছিঃ ছিঃ মা কি করছেন আপনি? মা প্রিয়তাকে আমি নিতেই এসেছি।
- হ্যাঁ বাবা ওকে নিয়ে নিয়ে যাও।ইভা আর অনিলা আসলে ওকে কথা শুনাতে ছাড়বে না।তোমার বাড়ি থেকে যদি সুন্দর ভাবে আসে তাহলে কিছু বলবে না। কিন্তু এইভাবে থাকলে লোকজন নানান কথা বলবে।
প্রিয়তা নুর জাহান বেগমের সাড়াশব্দ না পেয়ে,মা তোমাকে কত বার বলেছি আমাকে এক কাপ চা দিও।আমি নিজে করতে গেলাম তুমি,,,,
এগিয়ে এসে নিবিড়কে দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।বুকের ভিতর প্রচন্ড চিনচিন ব্যাথা করছে।নিবিড় সত্যি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে? কিন্তু এখানে কেনো এসেছে ও? বাড়ি সবাই জানে?
প্রিয়তা নিজেকে সামলিয়ে কিছু না বলে ঘরের ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় নিবিড় দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, প্রিয়তা আমার কথা শুনো।তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
-কিন্তু আমার আপনাকে কিছু বলার নাই।
-প্রিয়তা আমি তোমায় নিতে এসেছি।
-আপু জানে?
নিবিড় নিচের দিকে তাকিয়ে, না।কিন্তু তুমি আমার স্ত্রী তোমার অধিকার আছে ওই বাড়িতে থাকার।
-স্যরি মিস্টার নিবিড় আমি ওই বাড়িতে যেতে পারবো না।আর আপনি কী আমাকে এখানে দয়া দেখাতে এসেছেন? আপনার অনেক টাকা আছে আমি জানি।সেটা এখানে এসে আমায় বুজাতে হবে না।
-শেটাপ।কী ভেবেছো তুমি নিজেকে? মহান হতে চাইছো? তুমি কী ভেবেছো আমি কিছু বুজি না? নাকি আমি জানতে পারবো না?প্রিয়তা যে ভালোবাসে সে জানে ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা কী।প্রিয়তা ভালোবাসার মাঝে বিশ্বাস থাকতে হয়,ভরসা থাকতে হয়। একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে ভালোবাসে সেটা শুধু শরীর দেখে নয়।ভেতরে যে মন আছে সেটাও দেখে।তুমিই বলো,  আমি যখন তোমায় ভালোবেসেছি তখন কিন্তু তুমি আমার কাছে বেশি আসতেও না। এবং কী আমিও তোমার কাছে যেতাম না।তাই বলে কী আমাদের ভালোবাসা হয়নি?
নিবিড় আর প্রিয়তার কথা শুনে নুর জাহান বেগম আর মাহিদ দূরে সরে গেলো।
প্রিয়তা নিবিড়ের কথা শুনে,প্লিজ আপনার এসব জ্ঞানী কথা আমি শুনতে চাই না।আপনি যদি আমায় সত্যি ভালোবাসতেন তাহলে দেড় বছরের এগ্রিমেন্ট করতেন না। বুজলাম করেছেন পরে যখন আমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে তখন তো পারতেন পেপারগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে?
-প্রিয়তা তুমি বাচ্চাদের মতো কথা বলছো? ওই পেপার তুমি পড়ে দেখেছো? তাহলে কেনো উল্টো পাল্টা বকবক করছো? এখন এসব বাদ দিয়ে তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরে চলো। 
-না আমি যাবো না।আমি এখানেই ভালো আছি।ছোটো বেলা থেকেই সবার কথা শুনে বড় হয়েছি এখন না হয় মরণ পর্যন্ত শুনবো। আমি চাই না আমার কলঙ্কের দাগ নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে।আমি তো আপনাকেও ঠকিয়েছি তাই না।আপুর সংসার ভাঙ্গতে চেয়েছি। তাহলে আপনি এখন কেনো এখানে এসেছেন? সেদিন তো সবার সামনে সব বিশ্বাস করেই নিয়েছেন।
- কোন শালায় তোমাকে কলেজের প্রফেসর বানিয়েছে? মাথায় এতো গোবর নিয়ে থাকো।এই, তুমি বাচ্চাদের শিখাও কী আমারে একটু বলো তো? 
-মানে?
-আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দিই।তুমি আমাকে আগে এইটা বলো,রিসাদ যে তোমাকে এসএমএস করতো তুমি আমায় আগে বলোনি কেনো?
কথাটা শুনেই প্রিয়তা চমকে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, কি যা তা বকছেন উনি আমাকে এসএমএস দিবে কেনো?

-কথাটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলোতো? 
প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে কি বলবে বুজতে পারছে না।
নিবিড় মুচকি হেসে,পারবে না বলতে।কারণ আমি জানি তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলতে পারো না।কেনো বললে না, বলো?
-রিসাদ মাঝে মাঝে তোমার হাত ধরতো, ভয় দেখাতো তাই না? সেগুলোও তো আমায় বলোনি।
প্রিয়তা ধীর গলায় বললো, আপনি কি করে এতো কিছু জানলেন?
-তোমার না জানলেও চলবে।আগে বলো তুমি সবার সামনে সত্যিটা কেনো বলোনি?তোমায় আমি সুযোগ দিয়েছি বার বার।রুমে এসেই তো বলতে পারতে?
প্রিয়তা কিছু বলছে না দেখে নিবিড় ধকিয়ে,কেনো বলোনি,বলো?
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আমি আপনাকে অনেক বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখনই বলতে চেয়েছি একটা না একটা প্রবলেম হয়ে যেতো।আপনার মনে আছে যেদিন আপনি বলেছিলেন রিসাদকে আমার অফিসের এমডি বানাবো, আমি সেদিনও বলতে চেয়েছি।কিন্তু আপনার কথা শুনার পর আপনি বিশ্বাস করবেন না ভেবেই আমি আর বলিনি।হয়তো আপনি আমায় ভুল বুজতেন।
নিবিড় ধীর গলায় বললো, একবার তো বলে দেখতে পারতে? আমি তোমায় ভুল বুজি কিনা সেটা যাচাই করে নিতে।প্রিয়তা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মানে জানো? 
আমার তো মনে হয় তুমি জানো না।যদি জানতে আমাদের মাঝে এতো বড় দেওয়াল বানিয়ে ফেলতে না।একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীর সাথে মন খুলে তার জীবনের সবকিছু শেয়ারই না করতে পারে তাহলে এই সম্পর্ক থেকে লাভ কী? স্বামী তো সেই যার কাছে নিজের স্ত্রী কোনো কথা বলতে দ্বিধায় পড়বে না। কখনো মনে আসবে না আমি এই কথা বললে আমার স্বামী আমাকে ভুল বুজবে অবিশ্বাস করবে।যদি এসব কথা মনে হয়ে থাকে তাহলে সে সম্পর্কের কোনো নাম নেই,কোনো রঙ নেই।
তোমাকে আমি আগেই বলেছি,আমার কাছে কিছু লুকাবে না।আমি যদি এক পা সামনে বাড়াই তুমিও এক পা সামনে বাড়িয়ে আসবা।তাহলে সে সম্পর্কে কখনো নষ্ট হয় না।এখন তুমি বলো আমি কী তোমার যোগ্য স্বামী নয় বলে আমার কাছে সব লুকিয়েছো? নাকি আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছো না? 
প্রিয়তা কিছু বলতে পারছে না।গলাটা ভারী হয়ে এসেছে।হঠাৎই নিবিড়ের বুকে নিজেকে লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে, স্যরি!  
নিবিড়ও প্রিয়তাকে জড়িয়ে দরে, আই লাভ ইউ। 
-হুম।
-প্রিয়তা আই লাভ ইউ।
-জানি তো।
-আমি আই লাভ ইউ বলছি তোমাকে।
- হ্যাঁ শুনেছি।
নিবিড় এবার প্রিয়তাকে ছাড়িয়ে দুপাশের কাঁধ শক্ত করে ধরে,আবার সেদিনের মতো শুরু করেছো?
একটু ভালো কথা বললে মাথায় চড়ে বসো।এই তোমার প্রবলেমটা কী?আই লাভ ইউ বললে মানুষের আনসার এইরকম হয় আমার জানা নাই।
প্রিয়তা ন্যাকামি গলায় বললো,আমি করি তাতে আপনার কী? এখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন। 
নিবিড় অবাক হওয়ার ভাণ করে,ওয়েট, ওয়েট।আমি তোমাকে ধরলে আমার জ্বালা মিটাই এখন তুমি কেনো আসছো? 
-ইচ্ছে করে বলিনি তো?
-তাহলে এই কয়েকদিন আমায় ছাড়া ছিলে কীভাবে? 
-দুই মাস পর তো এমনি আপনাকে ছাড়া থাকতে হবে। এখন এতো ভালোবাসা দেখিয়ে লাভ কি?
-আসলেই তো।মাহিদ ফাইলটা নিয়ে আসো।
ম্যাডামকে এখুনি চলে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন