কৃষ্ণাবতী - পর্ব ১০ - মুশফিকা রহমান মৈথি - ধারাবাহিক গল্প


সৌদামিনী সারার কথাগুলো মন দিয়ে শুনে। কথাগুলো তাকে ও ভাবাচ্ছে। কাগজগুলো রেখে সারার পাশে বসে সে। অধীর কন্ঠে বলে,
- কি করবো আমি? 

সারা এবার প্রশান্তির হাসি হাসে। তারপর বলে,
- কিছুই না, তুই শুধু দেবকে নিজের কাছে রাখ। ওকে নিজের থেকে দূর হতে দিস না। ওই মেয়ের প্রতি ওর সমোবেদনা রয়েছে। তুই এই সমোবেদনাটা সমোবেদনাই থাকতে দে। এমন যেনো না হয় ওই কৃষ্ণা নামক মেয়েটাকে দেব ভালোবেসে ফেলে। 
- দেব কখনোই ওকে ভালোবাসবে না। আর কৃষ্ণাকে বিয়ে করেছে কেবল ই ওর জীবন বাঁচাতে, এখানে ভালোবাসার প্রশ্নই উঠে না। 

দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো সৌদামিনী। সৌদামিনীর বিশ্বাস দেখে সারার মনটা খানিকটা হলেও খারাপ হয়ে যায়। এতো বিশ্বাসের পরিণতি এতোটা কঠোর হতে পারে এটাই যেনো ভাবতে কষ্ট হচ্ছে সারার। সৌদামিনীর ঘাড়ে হাত রেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলে সে,
- সৌদামিনী বিশ্বাস ভালো, অন্ধঃবিশ্বাস ভালো নয়। দায়িত্ব ব্যাপারটা ও অনেক বড় একটা জিনিস। এমনতো নয় দায়িত্বের বিয়ে গুলো টিকে না। ঠিক ই টিকে থাকে। তুই ভেবে বল তো, কৃষ্ণার জন্য তোর সাথে কি কখনো খারাপ আচারণ করে নি দেবব্রত। নাকি তোর কারণে কৃষ্ণাকে এভোয়েড করেছে। দুটোর একটাও করে নি দেবব্রত। তার কাছে কৃষ্ণার গুরুত্ব তোর থেকে কম নয়। এটাই ভয়। কখন যে এই গুরুত্বটা তোর থেকে বেশি হয়ে যাবে। তখন কিন্তু কেঁদেও কুল পাবি না। তুই আর দেব একই কলেজে চাকরি করিস। সুতরাং তুই ওর কাজের সময়টুকু ওর সাথেই কাটাতে পারবি। এই সুযোগটাকে কাজে লাগা। 

সারার ইঙ্গিত বুঝতে দেরি হলো না সৌদামিনীর। মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো সে সারাকে। আদুরে গলায় বললো,
- তোর মতো বান্ধবী না থাকলে আমি সত্যি একটা ভুল করে বসতাম। কাপুরুষের মতো পালিয়ে যেতাম। থ্যাংক্স রে

বন্ধুত্ব জিনিসটা সত্যি খুব ভাবনার। বন্ধু যেমন ভালো বুদ্ধি দেয়, আবার কিছু বন্ধু খারাপ বুদ্ধি ও দেয়। আমাদের বন্ধুদের এই উপদেশ বিভিন্ন সময়ে আমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দেয়। সৌদামিনীর ক্ষেত্রেও তার বিপরীত কিছু ঘটলো না। সারার উপদেশ সৌদামিনী, দেবব্রত এবং কৃষ্ণার জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসবে_____

সন্ধ্যা ৬টা,
রুমে ধুপের গন্ধে ম ম করছে। কৃষ্ণা এখন স্নান করে এসেছে মাত্র। সকালে গোপালের আরতি করা হয় নি। এখন সন্ধ্যা বেলায় আরতি করবে। আয়নার সামনে ভিজে চুলগুলি মুছছিলো কৃষ্ণা। আজকাল মনটা বেশ ভালো কৃষ্ণার। দেবব্রত তাকে দূর দূর করছে না। কিছু বইপত্র কিনে দিয়েছে যাতে পড়াশুনা করতে পারে। চুল মুছে সিঁথিতে সিঁদুর দিতে যাবে তখনই দরজায় নক পড়লো। অন্না তখন পড়ায় ব্যস্ত। তাই মাথায় আঁচলটা টেনে কৃষ্ণা এগিয়ে যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই দেখে দেবব্রত দাঁড়িয়ে আছে। 
- ব্যস্ত?

কৃষ্ণাকে দেখেই দেবব্রত প্রশ্ন করে উঠে। নম্র স্বরে কৃষ্ণা উত্তর দেয়,
- না, কিছু লাগবে মাষ্টারমশাই? 
- তোকে লাগবে
- হ্যা?? 

দেবব্রতের কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় কৃষ্ণা। খানিকক্ষণ নিজের দিকে অবাক চোখে দেখতে দেখে দেবব্রত বুঝতে পারে সে কি বলেছে। নিজের বোকামিতে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় সে। হালকা কাশি দিয়ে বলে, 
- না মানে তোর সাথে কথা ছিলো
- জ্বী বলুন
- কাল থেকে অন্নার সাথে কলেজে যাবি। আমি তোর ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। সেকেন্ড ইয়ারেই ভর্তি করিয়েছি তোকে। ফার্স্ট ইয়ারে যে গ্যাপ আছে। সেটা আমি তোকে কমপ্লিট করিয়ে দিবো। 
- সত্যি আমি কলেজে যাবো?
- হ্যা যাবি, বইখাতা তো এমনি এমনি কিনে দেই নি আমি। তবে একটা কথা, সেই কলেজেই আমি শিক্ষাকতা করি। সুতরাং কেউ যাতে না জানে আমার আর তোর সম্পর্ক। ওকে?
- হুম

কৃষ্ণার সম্মতি পেয়ে দেবব্রত মুচকি হাসি দেয়। একটা মানুষের হাসি এতো সুন্দর হতে পারে, দেবব্রতকে না দেখলে হয়তো কৃষ্ণা জানতোই না। পেটের মধ্যে যেনো হাজারখানিক প্রজাপতি উড়ছে কৃষ্ণার। কাল কলেজে যাবে, আবার পড়াশুনা করবে। আহা কি আনন্দ। 

দেবব্রত চলে গেলে মিটিমিটি হাসি হেসে রুমের ভেতরে আসে কৃষ্ণা। 
- দাদাভাই কি ভালোবাসার কথা বললো নাকি তোকে?

অন্নার প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো কৃষ্ণা। অন্না তখন তার দিকে দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। অন্না আর তার মাঝে একটা চুক্তি হয়েছে। তারা দুজন দুজন কে ঘরের মধ্যে তুই করেই কথা বলবে। কিন্তু ঘরের বাহিরে তাদের সম্পর্কটা থাকবে ননদ ভাবির।  
- ওরে আমার রায়বাঘিনী ননদিনী, এতো কৌতুহল কেনো তোমার মনে? 
- বাহ রে, আমার দাদাভাই এই কদিন ধরে যেভাবে তুইতে মত্ত হয়েছে তাকে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক নয়?
- তুই সত্যি লাজ লজ্জার মাথা খেয়েছিস তাই না?
- যাহ আমি কি বললাম, এখন বলবেন দাদাভাই এই সাজগ সন্ধ্যায় আমার রুমে কি করতে এসেছে। আমার খোঁজ নিতে তো আসেন নি জানা আছে 

অন্নার কথায় বেশ লজ্জা পায় কৃষ্ণা। গাল জোড়া একবারেই টমেটোর ন্যায় রঙিন হয়ে উঠে। লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
- আমাকে উনি তোর কলেজে ভর্তি করেছেন
- সত্যি?
- হুম, কাল থেকে যাচ্ছি তোর সাথে
- কিন্তু একটা সমস্যা আছে
- কি সমস্যা?
- তোর এই সিঁথি ভর্তি সিঁদুর নিয়ে কিন্তু আমার সাথে যাওয়া যাবে না বলেদিলুম

অন্নার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে উঠে কৃষ্ণা। সিঁদুর,শাখার ব্যাপারটায় তার চিন্তা আগের কালের মতোই। প্রাণ যাবে তবে এই শাখা সিঁদুর সে কিছুতেই নিজ থেকে দূর করবে না। বেশ ক্ষ্রিপ্ত কন্ঠে বললো,
- না না, এই সিঁদুর আমি মুছবো না। মা বলতেন, শাখা সিঁদুর এয়োস্ত্রীর অলংকার। এটা খুললে স্বামীর অকল্যাণ হয়। 
- ওরে বলদ, এটা ঢাকা। তোর গ্রাম নয়। যদি তোর সিঁথিতে সিঁদুর দেখে না মানুষ তাহলে আমাদের শুদ্ধ বাল্যবিবাহের কেসে জেলে ভরে দিবে। তাতে না আমার দাদাভাই এর অকল্যাণ বই কল্যাণ হবে না। বুঝলি পাগল?
- তাহলে উপায়?  
- একটা উপায় অবশ্য আছে। কাল সকালে আমি তোকে তৈরি করে দিবো। তাতে তোর সিঁদুর ও থাকবে আর দাদাভাই ফাসবেও না

অন্নার কথায় বেশ নিশ্চিন্ত হয় কৃষ্ণা। এবাড়িতে এই মেয়েটার সাথেই তার ভালো বনে। মনেই হয় না গ্রামের বান্ধবীদের ছেড়ে এসেছে সে। 

সকাল ৯টা,
কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণা৷ অন্নার একটি সাদা সালোয়ার কামিজ তার পরণে। অন্নার খুব সুন্দর করে তার চুল বেধে দিয়েছে। তাতে সিঁদুর রাঙানো সিঁথি ও দেখা যাচ্ছে না। অন্নার সাথেই হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলো। তখনই.....
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন