ভালোবাসি তোকে - পর্ব ৫৮ - অনিমা কোতয়াল - ধারাবাহিক গল্প


মাথায় ভার অনুভব করে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। ঘরে অনেক মানুষের উপস্থিতিও টের পেলাম। তখনকার কথা মনে পরতেই বুঝতে পারলাম সবাই মিলে আমার জন্যে হয়তো এতক্ষণে আমি মাথা চেপে ধরে উঠে বসতে নিলেই আপি বলে উঠল,

--- " এই কী করছিস টা কী? চুপচাপ শুয়ে থাক।"

বলে একটা বালিশ রেখে বেডে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিল। আমি ক্লান্ত দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আল্লাহর রহমতে বাড়ির ছোট থেকে বড় সব একসাথে এসে আমার রুমে ভীর জমিয়েছে। বাড়িতে এত কাজ সব ফেলে এরা আমার এখানে এসে বসে আছে। আম্মু এসে আমার পাশে বসে বলল,

--- " এরকম শরীর খারাপ কীকরে করলি বলত? সকাল থেকে দেখেছি ঠিকমত খাস নি কিচ্ছু। এমন করার কোন মানে হয়?"

আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,

--- " আচ্ছা, এভাবে ওকে বকাবকি করছ কেন? এমনিতেই অসুস্থ মেয়েটা।"

সবাই এটা ওটা বলছে আর আমি আশেপাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে খুঁজছি। না জানি কী অবস্থা হয়েছে লোকটার। আমার একটু কিছু হলেই তো পাগল পাগল হয়ে যায়। কিন্তু পুরো রুমে আদ্রিয়ানকে দেখতে পেলাম না। আব্বু আম্মু আর বাকি বড়রা চলে গেল। নানু, বড় মামী আর আম্মু এখনও আছে। রাতে আবার হলুদের অনুষ্ঠান আছে। মলি আপু আমার পাশে বসে বলল,

--- " কী হয়েছে কী তোর বলত হঠাৎ এভাবে মাথা ঘুরে পরে গেলি?"

আমি মাথায় হাত রেখে বললাম,

--- " আসলে সকালবেলা থেকে কিছুই ঠিক করে খেতে পারিনি আজ তাই হয়ত।"

এরমধ্যে মেঝ মামু আর আপি একটু বিরক্ত হয়ে বলল,

--- " তোকে নিয়ে আর পারা যায় না। আদ্রিয়ান কিন্তু খুব রেগে আছে।"

আমি কিছু বলব তারমধ্যেই আদ্রিয়ান দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। আদ্রিয়ানকে দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না ওর মুড এখন ঠিক কীরকম। আমি উঠে নামতে গেলেই আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

--- " মামনী ওকে নড়তে না করো আমি কিন্তু এবার ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলব। আর তাতে যদি তোমাদের কারও সমস্যা হয় তাহলে বল আমি তোমাদের মেয়ে তোমাদের কাছেই রেখে যাবো।"

সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে আর আমি মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। বড় মামী বলল,

--- " আদ্রিয়ান থাকনা। মেয়েটার ওপর এখন আর রাগ করোনা।"

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে ভেতরে কী এসে বলল,

--- " রাগ করবো না তো কি করব বলতে পারো মামী ? দুইটা দিন একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ম্যাডামের খাবারের দিকে নজর দেওয়া হয়নি আমার , দেখ আজ শরীরের অবস্থা দেখ।"

আম্মু যেন আদ্রিয়ানেরই আসার অপেক্ষা করছিল। এখন নিশ্চয়ই নিজের সেই বিখ্যাত কুটকাচালি করবে। আম্মু বলল,

--- " হ্যাঁ সেটাই। ধরে বেধে একটু খাওয়াও তো। একমাত্র তোমার কথাই তো শোনে ও।"

আমি একটু বিরক্ত হয়ে তাকালাম আম্মুর দিকে। কী শান্তি পায় আমায় এভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে? আদ্রিয়ান মাথা ঝাকিয়ে বলল,

--- " একদমি না মামনী। তোমার মেয়ে আমার কথা একদমই শোনে না। শুনলে নিজের এরকম হাল করত না। উনি অসুস্থ হবেন, আমি ওনার টেনশনে আধপাগল হয়ে যাবে এটা দেখে তো উনি ভীষণই মজা পান। তাইনা?"

আমি মুখ কাচুমাচু করে বসে আসি। বাকি সবাই একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আস্তে আস্তে চলে গেল। আমি আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দিলাম। না জানি এখন ঠিক কী কী ভাবে বকাবকি শুরু করবে। আদ্রিয়ান শান্তভাবে আমার দিকে কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে পাশের টি-টেবিল এ রেখে দেওয়া এক প্লেট কাটা ফল এগিয়ে দিয়ে বলল, 

--- " তাড়াতাড়ি শেষ করো। একটা ফলের পিসও যাতে বাকি না থাকে।"

আমি প্লেটটা হাতে নিয়ে অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলব তার আগেই ও ধমক দিয়ে 

--- " তাড়াতাড়ি শুরু করো!"

আমি খানিকটা চমকে উঠে তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করে দিলাম। একদমি ভালো লাগছে না খেতে কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখে খেয়ে নিতে বাদ্ধ হলাম। যেই আমি হাফ পিছ আপেল একঘন্টা লাগিয়ে নাক কুচকে খাই, সেই আমি পুরো এক প্লেট ফল বিশ মিনিটের মধ্যে খেয়ে নিলাম। পুরোটা শেষ করে ফাঁকা প্লেট আদ্রিয়ানের হাতে দিতেই আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

--- " গুড গার্ল।"

আমি দুর্বল দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে ঢেকুর দিলাম। উনি আঙ্গুল দিয়ে আমার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল,

--- " একদম বেড থেকে নামবেনা এখন। প্রোগামের সময় বউমনি এসে সাজিয়ে নিয়ে যাবে।"

আমি অসহায় মুখ করে বললাম,

--- " আমি সৃষ্টি আপুদের বাড়ি যাবোনা? হলুদ আর গিফটস গুলো নিয়ে?"

উনি শক্ত চোখে তাকালেন আমার দিকে আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

--- " আচ্ছা যাবোনা।"

উনি শার্ট হাতে নিয়ে পরতে পরতে বলল,

--- " একটু পর বউমনি এসে রেডি করে দেবে। আমিও যাচ্ছি।"

বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল আমিও ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। লোকটা সত্যি পাগল। এমনিতে রাগ দেখালেও এমন কিছু করতেই পারেনা যেটাতে আমি কষ্ট পাবো। 
হলুদের রাতটা বেশ ভালোভবেই কাটলো নাচগান মজা খাওয়া-দাওয়া করে ভালোই কাটলো। ঘুমোতে যাওয়ার আগে আদ্রিয়ান জোর করে এক গ্লাস দুধ খাইয়েছে।‍ যদিও দুধটা খাওয়ার পর একটু গা গোলাচ্ছিলো কিন্তু আদ্রিয়ানকে বুঝতে দেইনি।

__________________

পরেরদিন সকালে ভোর ভোর আমরা সবাই পুকুর ঘাটে পানি আনতে গেলাম। গ্রামে এই রিতীটা খুব সুন্দরভাবেই মানা হয়, দেখতেও ভালো লাগে হলুদ রঙের শাড়ি পরে, কোলে কলসি নিয়ে পানি আনতে যাওয়া। সবাই একে একে একে কলসে পানি ভরে চলে এল। আমি কলস ভরে নিয়ে উঠে আসার সময় হুট করে আবারও আমার মাথাটা ঘুরে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি কলসটা রেখে গাছ ধরে দাঁড়ালাম। আপি, আপুরা সবাই তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে দাঁড়াল। আমি কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বললাম,

--- " আমি ঠিক আছি। জাস্ট মাথাটা ঘুরছিল। প্লিজ তোমাদের ভাইকে এসব বলনা। আজ আমার সব আনন্দ মাটি করে ছাড়বে!"

আপি ভ্রু কুচকে বলল,

--- " নিজের অযত্ন করে অসুখও বাঁধাবে আবার আদ্রিয়ানকে ভয়ও পাবে ওয়াও।"

হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আপি বলল,

--- '' এই তুই প্রেগনেন্ট নস তো? কাল থেকেই এমন হচ্ছে?"

মলি আর মিলি আপুও সায় দিয়ে একই কথা বলল। আমি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললাম,

--- " তোমরা থামবে? আজাইরা প্যাঁচাল শুধু! চলো তো। এরকম তো আমার প্রেশার ফল করলেও হয়।"

মলি আপু বলল,

--- " হ্যাঁ তাও হতে পারে। বমি টমি হয়?"

আমার যে কাল রাতে গা গোলাচ্ছিল সেটা বলা যাবেনা তাহলেই পুরো যেকে ধরবে আমায়। তাই মাথা নেড়ে না করলাম।ওরাও আর কথা বাড়ালোনা। সকালে ভাইয়াকে হলুদ তেল মাখিয়ে গোসল-টোসল করিয়ে সবাই ফ্রি হয়ে আমাদের মামাবাড়ির বিরাট উঠোনে পাটি বিছিয়ে বাড়ির সবাই কলা পাতায় খিচুড়ি খাচ্ছি। আদ্রিয়ান আমার পাশেই বসেছে। আমি অর্ধেক খিচুড়ি খাওয়ার পর হঠাৎ করেই আমার ভীষণভাবে গা গুলিয়ে উঠল। মুখ চেপে ধরে তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়ে একটু দূরে একটা গাছ ধরে বমি করে দিলাম। আদ্রিয়ানও আমার পিছে চলে এসে আমার পিঠে হাত বুলাতে শুরু করল। অর্ণব ভাইয়া অলরেডি পানি নিয়ে এসছে। কিছুক্ষণ পর আমার বমি থামতেই আদ্রিয়ান আমায় একহাতে জড়িয়ে ধরে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটা মুছে দিল। তারপর পানি খাইয়ে দিয়ে ওখানের একটা চেয়ার এনে বসালো। আম্মু চিন্তিত হয়ে বলল,

--- " আজ আবার এমন কেন হল? কাল থেকে তো ঠিকমতই খাচ্ছে।"

 নানু বলল,

--- " দেখেছ আমিতো কালকেই বুঝেছিলাম নতুন মেহমান আসছে। বুড়িদের কথা বাসি হলে তবে ফলে।"

নানু সবার সামনে এভাবে বলছে যে আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। বড় মামী বলল,

--- " আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ের অনুষ্ঠানটা মিটুক এরপর ঢাকা গিয়ে টেষ্ট করিয়ে নেবে। আদ্রিয়ান যাওতো ওকে নিয়ে ঘরে যাও।"

আদ্রিয়ান সবার সামনে দিয়েই আমায় কোলে তুলে নিয়ে হাটা দিল। এই ছেলেটা এমন কেন? শুধু সবার সামনে লজ্জায় ফেলে আমায়। রুমে এনে আমাকে বেডে বসাতেই আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ করে বললাম,

--- " দেখো আমি কিন্তু কাল থেকে তোমার সব কথাই শুনেছি। আমায় বকবেনা।"

ও আমার পাশে বসে বলল,

--- " সেজন্যই বেশি টেনশন হচ্ছে। হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন? অনেক খারাপ লাগছে না? চল ডক্টর দেখিয়ে নিয়ে আসি?"

আমি ওর হাত ধরে বললাম,

--- " পাগল হয়ে গেছ নাকি? কালকের দিনটাইতো পরশু আমরা চলে যাব। আর তাছাড়াও আমার এখন খারাপ লাগছে না। কাল থেকে বিয়ে বাড়ির উল্টোপাল্টা খেয়েছি তাই হয়ত এমন হয়েছে। বমি করার পর ভালো লাগছে।"

কিন্তু আমার কথায় যে মহাশয় তেমন সন্তুষ্ট হতে পারেননি, আর তার চিন্তা এক বিন্দুও কমেনি সেটা বুঝতে পারছি। হঠাৎ করেই আমায় নিয়ে একটু বেশিই চিন্তায় পরে গেলো ও। বাড়ির সবাইও একটু টেনশনে আছে। আমাকে কম্প্লিট বেড রেস্টে থাকতে বলে চলে গেলো সে। ধুর কার ভালোলাগে এসব?

_________________

দশটার দিকে বাবা মামনীরা চলে আসার পর আর নিজেকে আর রুমে আটকে রাখতে পারিনি বাইরে চলে এসছি। আমায় বাইরে দেখে আদ্রিয়ান একটা চোখ রাঙানী দিয়েছিল বাট আপাতত আই ডোন্ট কেয়ার, পরেরটা পরে দেখা যাবে হুহ। সবাইকে বলে দিয়েছি আমি এখন পিট আছি তাই আর কেউ কিছুই বলেনি। সবার সাথে মজা, আনন্দ করে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছি তখনই নূর আপুকে দেখতে পেলাম ওনাকে দেখেই আমার কেমন জেন একটা অপরাধবোধে ভুগি আমি। ওনার চোখে চোখ রাখার সাহস করে উঠতে পারিনা। নীড় আদ্রিয়ানের কোলে খেলা করছে। আমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে যেতে নিলেই নূর আপু ডাকল আমায় আমি দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলাম আপু নিজেই এগিয়ে এল আমার দিকে। আমি হেসে বললাম,

--- " তোমার তো কাল আসার কথা ছিল আজ এলে যে?"

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নূর আপু আমার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল আমার রুমে এনে হাত ছেড়ে বলল,

--- " এভাবে ইগনোর করছিস কেন আমায়? রেগে আছিস?"

--- " না, না। রাগবো কেন?"

--- " তাহলে?''

আমি কিছু বলতে পারলাম না মাথা নিচু করে আছি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নুর আপু বলল,

--- " মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী হয়না অনি। ওটাই নিয়তি। ইশরাকের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী কেন হবি? ও যা করেছিল নিজের বন্ধুত্বের জন্যে করেছে। আর একদম ঠিক করেছে।"

আমি চমকে তাকালাম নূর আপুর দিকে। তারমানে আপু সবটা জানে? নূর আপু একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে ওনার ফোন বের করে কিছু একটা করল। ফোন থেকে ইশরাক ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে এল,

--- " আই এম সরি নূর। এটাই হয়ত তোমাকে বলা আমার শেষ কথা। আমি জানি আমি হয়ত খুব স্বার্থপরের মত কাজ করছি। কিন্তু কী করব বল? আদ্রিয়ানও আমার প্রাণ। তুমি জানো ছোটবেলা থেকে আজ অবধি অনেক করেছে ও আমার জন্যে যা আমি বলেও শেষ করতে পারবোনা। আমার সবরকম মুহূর্তে আমার পাশে ছিল ও। তার বিনিময়ে এটুকু করবো না? পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও, আর আমার বাবুকে কিন্তু সুস্হভাবে তোমাকেই পৃথিবীতে আনতে হবে। ওকে বল ওর বাবা ওকে ভিষণ ভালোবাসে, ওকে নিজের হাতে মানুষ করার স্বপ্নও দেখেছিল। কিন্তু ওর বাবার ভাগ্যে এসব ছিলোইনা, বেশি স্বপ্ন দেখেছিলাম তো। খুব ইচ্ছে করছে জানো তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে কিন্তু পারছিনা। জানি তোমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, পারলে তোমার এই স্বার্থপর হাজবেন্ডকে ক্ষমা করে দিও। ভালোবাসি, খুব বেশিই ভালোবাসি।"

আমার চোখ দিয়ে নিরবে ছল পরছে নূর আপুও কাঁদছে। আপু চোখ মুছে আমার কাধে হাত রেখে বলল,

--- " ও যা করেছে তার জন্যে আমার গর্ব হয়। গর্ব হয় যে আমি ওর মত একজনের স্ত্রী। আর আমি এটাই প্রার্থনা করি ওর মত এরকম স্বার্থপর যেন সবাই হতে পারে। কিন্তু এসবে তোর দোষ নেই। একদমই নেই।"

আমি নূর আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। নূর আপুও কাঁদছে শব্দ করেই কাঁদছে। আমিও আটকাচ্ছি না। কখনও কখনও কাঁদা উচিত। ভেতরটা হালকা হয়।

_____________________

ভাইয়ার বিয়ে মিটিয়ে কালকেই ঢাকা চরে এসছি আমরা। আর আজ হসপিটালে এসছি।হসপিটালের বাইরে আমি গাড়িতে বসে টেনশন করছি আর আদ্রিয়ানের আসার অপেক্ষা করছি। জানিনা রিপোর্টে কী আসবে। চিন্তা হচ্ছে কুব। কিছুক্ষণ পর আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদ্রিয়ান এল। এসে ড্রাইভিং সিটে বসল। চোখে মুখে একরাশ গাম্ভীর্য। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল,

--- " রিপোর্ট পসিটিভ।"

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। কিছুক্ষণ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কাঁপাকাঁপা হাতে নিজের পেটে হাত রাখলাম। পেটে হাত রেখেই ছলছলে চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

--- " আমি মা হবো? আমাদের বেবি আসছে?"

--- " হুম।"

আমি সাথে সাথেই চোখের কোণের জলটা ছেড়ে দিলাম কিছুক্ষণ চোখ বুঝে ফিল করলাম এই মুহূর্তটাকে। কিন্তু আদ্রিয়ানের গম্ভীর মুখ মনে পরতেই চোখ খুলে বললাম,

--- " তুমি খুশি হওনি?"

আদ্রিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। ওর হালকা ঘাম বেড়োচ্ছে ও আমার হাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলল,

--- " নূরকে, বউমনিকে দেখেছি আমি। তুমি পারবেতো? আমার আরেকটু সময় দেওয়া উচিত ছিল তাইনা?"

আমি একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললাম,

--- " আদ্রিয়ান আমার একুশ বছর হয়ে গেছে। এতটাও বাচ্চা নই আমি। আমি নিজেও একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট, তাই আমি জানি আমি ঠিক পারব।"

আদ্রিয়ান আমার কথায় খুব একটা স্বস্তি পেলোনা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ করেই আমার পেটে হাত রাখল। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,

--- " এখানে আমাদের বেবি আছে তাইনা? একটু একটু করে বড় হবে। এরপর বাইরে আসবে, কচিকচি হাতপা নাড়বে, খিলখিল করে হাসবে, কাঁদবে, আমি বুকে জড়িয়ে ওর কান্না থামাবো, ওর হাত ধরে একপা একপা একপা করে হাটতে শেখাবো, আদো আদো কন্ঠে বাবা ডাক শুনবো।"

এটুকু বলে ঝুকে আমার পেটে আলতো করে একটা চুমু দিলো। আমি একদৃষ্টিতে দেখছি ওকে। একটু আগেই ভয় পাচ্ছিল কিন্তু মুহূর্তেই এই বাচ্চা নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে ফেলল মনে। এরকম পাগলামো আরেকনকেও করতে দেখেছিলাম আমি। কত স্বপ্ন, ইচ্ছা ছিল তার মনে। কিন্তু শেষে? শেষে সেই স্বপ্নগুলো একেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই না এখন।
.
.
.
চলবে..............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন