তোকে ঘিরে - পর্ব ০৫ - ফাবিয়াহ্ মমো - ধারাবাহিক গল্প


- পূর্ণতা মা! এ কি হাতের অবস্থা! কামড় কে দিয়েছে? মা তোর হাতে কামড়ের দাগ কিভাবে?

সন্দিহান ভঙ্গিতে একবার মামীর দিকে তো আরেকবারে দাতঁ বসানো হাতের দিকে তাকাচ্ছি! আশেপাশে প্রচুর মেহমান কিছু গলা দিয়ে বের করলেও তিল থেকে তিল বানিয়ে পুরো গ্রাম রটিয়ে ফেলবে!
- খালামনি আমি কামড় দিয়েছি বুঝছো? হাতের রগ টান দিয়েছিলো তো। তাই কামড় দিয়েছি। 
 আমি গলায় ঢোক গিলে মাথায় কিছু মিথ্যা কথার ঝুলি গুছিয়ে সেটা ঝপাঝপ ঠিক জায়গায় মেরে রুমে গিয়ে কাত। বিছানায় কাটা পায়ের নিচে বালিশ রেখে চোখ বন্ধ করে ভাবছি কামড় কে দিলো? হাতটা সামনে এনে দেখলাম খাপে খাপ একদম দু'পাটি দাঁতের শক্ত কামড়! কি অদ্ভুতকাণ্ড! আমাকে এইভাবে কামড় কে দিয়েছে আজব!

বিকেল গড়িয়ে পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়তেই ক্লান্ত শরীরে প্রবেশ করলো একদল! ওয়াসিফ মূসা নাতী নাতনিদের অভ্যর্থনা জানানোর পরিবর্তে ঠিকানা বাতলে দিলো সিড়ির উপর কক্ষের। সবাই হাসিখুশি মনে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আকাশচুম্বী ভয়ার্ত অবস্থা গিলে ধরলো! 

- দরজাটা চাপিয়ে এক এক করে বিছানায় বোস! 

পূর্বের কথা অমান্য করার সাধ্য কোনোকালেই ওদের ছিলো না তাই আজো নেই। সবাই বিছানায় বসলে মিথুন দরজা চাপিয়ে শেষ খালি জায়গাটায় ভীত হয়ে বসলো। পূর্ব ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে দুলছে। আগাম ঝড়ের পূর্বকালীন নিরবতা! এক ঘোর বিপদ যে আচ্ছন্ন করে ধরেছে সেটা সবার বুঝা শেষ। সায়মা ভয়ের চোটে ফুয়াদের শার্ট খামচে ধরেছে, ফুয়াদ হাতে হাত ঘষাঘষি করছে, মিথুন অনবরত ঢোক গিলছে, জাওয়াদ লুকোচুরি দৃষ্টিতে একবার পূর্বকে আরেকবার তাকাচ্ছে ফ্লোরে। পূর্বিকা সাথে নেই দাদীর সাথে কলপাড়ে গিয়েছে। এখন ওদেরও ইচ্ছে করছে পূর্বের কাছ থেকে রেহাই পেতে! আল্লাহ্! পূর্ব ভাই কি আমাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে? একমনে ওরা আল্লাহ্কে ডাকছে!

- পূর্ণ কই?

পূর্বের শান্ত গম্ভীর গলাটাও যেনো একেকটা বিষযুক্ত তীরের মতো বুকে যেয়ে বিধলো! সায়মা আরো শক্ত করে শার্ট খামচে ধরলে কুকিয়ে উঠে ফুয়াদ! আর্তনাদের শব্দটুকু দুঠোটের চাপাচাপিতেই হজম করে নিলো! মিথুন চাপাকন্ঠে বলে উঠলো,

- পূর্ব ভাই পূর্ণতাকে আমরা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছি বলেছিলাম না? 
পাশ থেকে জাওয়াদ সম্মতির সুরে পাগলের মাথা নেড়ে বললো,
- হ্যাঁ হ্যাঁ পূর্ব ভাই, হ্যাঁ।। ওই মেয়েকে আমরা ওর স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছি। 

পূর্ব ফ্লোরে পা ঠকে চেয়ার থামিয়ে কিছু একটা নেওয়ার জন্য ড্রেসিংটেবিলের কাছে গেলো। বেশ মোটা একটা কালো বেত দেখা যাচ্ছে ওখানে। একবারি দিলেই কুপোকাত অবস্থা!পূর্বের ডানহাতের মুঠোতে বেতের উপস্থিতি টের পেয়ে সবকয়টা জমকালো ভঙিতে কাপঁতে শুরু করেছে। গায়ে পর্যাপ্ত পরিমানে শীতের কাপড় থাকা সত্ত্বেও কাঁপছে। পূর্ব এগিয়ে আসলো ওদের দিকে এবং একমিনিটও অপেক্ষা করলো না! রাগে হাত উচিঁয়ে এলোপাথাড়ি পেটাতে লাগলো! নিশব্দ রুমের মধ্যে এখন চিৎকার ও আর্তনাদের বাজনা! কি বিভৎস ভঙ্গিতে চিল্লাচ্ছে! ভয়ংকর প্রতিধ্বনিতে ঝংকার তুলছে রুমের কোনা কোনা! 

- পূর্ব ভাই!! ভাই ভাই! মাফ করে দেও ভাই।। আমরা মিথ্যা কথা বলবো না ভাই।। সরি ভাই।। আহ... ভাই মেরো না ভাই...

উপর থেকে ফুয়াদ, জাওয়াদ ও মিথুনের চিৎকার শুনে বারান্দায় পাতা চৌকিতে বসে দাদা ফুঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। পূর্বকে আজ বাধা দিতে ইচ্ছে করলেও একটা মেয়েকে নিয়ে নূন্যতম বিবেকবোধ যাদের কাজ করেনা তাদের সাথে এমন করাটাই স্বাভাবিক ! একটা মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে তাকে বাচানোর মতো মূখ্য কর্ম যারা করেনা তাদের জন্য পূর্বের হাতে শাষনই ঠিক! পূর্ব বেধরম মারছে! আরো মারুক! তাতেও যদি ওদের বিবেক ফিরে পায়! এতেই তুষ্টি! ইয়াং জেনারেশন হয়েছে বলে কি মর্ডান থট পালন করতে হবে? এ কেমন বিচার?

পূর্ব হাফিয়ে উঠে হাত থেকে বেত ছুড়ে পা চালালো বাইরের দিকে। দরজায় পা দিতে গিয়ে থমকে দাড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে ওদের যন্ত্রণামাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,
 
- কোনোদিন মিথ্যা বলার আগে এটা ভাববি মানুষের জন্য কল্যাণ করছিস নাকি অমঙ্গল! ড্রেসিংটেবিলের ফোর্থ ড্রয়ারে ফাস্ট এড বক্স আছে লাগিয়ে নিবি! মানুষকে তুচ্ছ ভাবিস না! আজ কাউকে হেল্প করলে উপরে আল্লাহ্ তোদের সাহায্য করবে! বাট তোরা সেটা বুঝলি না ছি!

পূর্ব চুলের ব্যাকব্রাশ করতে করতে বাইরে চলে গেলে ফুয়াদ আহত জায়গায় হাত রেখে বলে,

- নিজের এই জখম ছুঁয়ে বলছি এর প্রতিটা ব্যথার শোধ যেপর্যন্ত আমি না নিবো ততোদিন স্বস্তির নিশ্বাস আমি ছাড়বো না! তোকে অভিশাপ দেই পূর্ব! তুই একদিন এমনি এক যন্ত্রণায় ভুগবি ওইদিন লাগানোর জন্য পাশে ঔষুধও পাবিনা! শালা তুই ধুকে ধুকে মরবি!

ফুয়াদের লাগাম ছাড়া কথা শুনে সায়মা ব্যথা হাতেই ঠাস করে চড় মারলো! যদিও সায়মাকে দুটার বেশি থাপ্পর এবং হাতের তালুতে একটার বেশি বেতাঘাত করেনি। ফুয়াদ ভ্রুঁকুচকে সায়মার দিকে তাকাতেই সায়মা ফুঁসে উঠে বললো,

- তুই পূর্বকে কোন্ মুখে অভিশাপ দিস! তোর মুখ না আমি জ্বলসে দিবো জানিস না? অভিশাপ ফিরিয়ে নে বলছি! এক্ষুনি নিবি!
ফুয়াদ চোখমুখ রক্তিম করে সায়মার চুলের মুঠি টেনে বলে উঠে,
- জানোয়ারের বাচ্চা! তুই কার জন্য দরদ দেখাচ্ছিস! শালা কুত্তার মতো আমাদের ট্রিট করলো চোখে দেখলি না? রাস্তার বেশ্যাকে তুলে এনে মাদার**দ সেবা করছিলো দেখছিস? আমরা যেনো ওর হাতের পুতুল! আহা! যেমন ইচ্ছা তেমনই হুকুম চালালো! ইচ্ছামতো পেটালো!
জাওয়াদ তেড়ে এসে সায়মার চুল ছাড়িয়ে ফুয়াদের মুখে ঝাপটানি সুরে বলে উঠলো,
- ফুয়েল রে তেল অপচয় করিস না! আস্তে বল! দেয়ালেরও কান আছে ভাই! যদি একটা ওয়ার্ড বাইরে পাচার হয় তোর দিন কিন্তু শেষ!
মিথুন ফাস্ট এড বক্স এনে ফ্লোরে জবুথবু হয়ে তুলো ছিড়ে বলে উঠলো,
- বড় কাকা মরা না পযর্ন্ত নিস্তার পাবো না ভাই। বড় কাকা যেপযর্ন্ত আছে বাপ-পোলার জুটি কায়েম থাকবে। একটু ধৈর্য্য ধর! বুড়াটা মরুক! তারপর দেখ আমরা কি করি। নে তুলাটা ঠোটে চেপে ধর,

পূর্ব ওদের মারপিট করতো না। না ওদের পেটানোর কোনো ইচ্ছা ছিলো। পূর্ণতার মতো একটা মেয়েকে যখন ল্যাংড়ার মতো বানিয়ে দিয়েছে এদের শায়েস্তা না করলে রক্ত ফুটবে! পূর্ব সিড়ি ভেঙ্গে পা চালিয়ে দাদার পাশ কেটে যেতেই দাদা পিছন থেকে বলে উঠলো,

- দাদুভাই?
পূর্ব পা থামিয়ে মাথা ঘুরিয়ে বললো,
- জ্বি দাদাজান, কিছু বলবেন?
- খোলাবাড়ি থেকে একটা বিয়ের দাওয়াত এসেছিলো দাদুভাই। তুমি কি আমার সাথে ওখানে যাবে? উনার নাতনীর বিয়ে ধুমধাম করে দিয়েছে তো পুরো গ্রামবাসীকে দাওয়াতের পসরা পাঠানো হয়েছে। তোমার দাদীর তো হাটুব্যথা। তা তুমি আমার সাথে চলবে?
- নাতনীর বিয়ে?
- হ্যাঁ, আবদুস সালামকে চিনো না? ওর নাতনীকে বিয়ে দিছে। সেই মেয়ে ঢাকায় পড়তো বুঝলে। কোন না কোন ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক জানি ছিলো, বিয়ের আগের দিন সে কি কান্ড! কান্নাকাটি করে বাড়ি শুদ্ধো মাথায় তুলে ফেলেছিলো!
- দাদাজান আপনি কার কথা বলছেন স্পষ্ট বুঝতে পারছিনা। 
- মেম্বার সাহেবের নাতনি। এখন চিনলে তো? ওইযে খোলাবাড়ি এলাকার সুন্দর বাড়িটা?

পূর্ব পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাদার সাথে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে। সূর্য পশ্চিমের সীমান্তে অর্ধ ডুব দিয়ে হালকা লালিমা আভা আকাশে ফুটিয়ে তুলেছে। গ্রামীণ পথ, মাঝেমাঝে সাই করে ছুটে যাচ্ছে দু একটা রিকশা। রাস্তায় পূর্বকে দেখতে পেয়ে অনেক পথচারী ইতিমধ্যে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। গ্রামে গেলে এটাই বিরাট সমস্যা! নতুন মুখ দেখতে পেলে সবাই স্থির চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। পূর্ব ও দাদা হাটতে হাটতে অনেকদূর চলে এসেছে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে ব্যালেন্স শূণ্য। আশেপাশে রিচার্জের দোকান খুজতেই বুঝলো এটা গ্রাম, এখানে বাজার ছাড়া রিচার্জ সম্ভব না। মন্ডলবাজার যেতে কম হলেও চল্লিশ মিনিট লাগবে। কে যাবে? পূর্ব দাদাকে বিয়েবাড়ি যেতে বলে একটা পিচ্চি বাচ্চাকে আটকে বললো,
- শোন তো এখানে রিচার্জের দোকান পাওয়া যাবে?
পিচ্চিটা গ্রামের টানা টানা সুরে বলে উঠলো,
- আমনে কি এত্তি নতুন আচ্চেন?
পূর্ব গ্রামের ভাষা একটু আধটু বুঝে তাই স্মিত হেসে বললো,
- নতুন না রে, অনেকদিন পর আসছি। 
- ও আচ্চা।। ভাই আমনে মেম্বার বাড়ির ওত্তিদুলাল কাক্কার দুকানে যান গা, ওত্তি থিন টেহা ভরিয়েন। দুকান ওডা খুলাই থাহে,
- খোলা পাবো তো? দেখ টাকা রিচার্জ করাটা দরকার!
- খুলা থাহে ভাই, আমনে যাই দেহেন। 
- আচ্ছা। 

পূর্ব পিচ্চিটার হাতে একশো টাকার কচকচে নোট ধরিয়ে চলে যায় মেম্বারবাড়িদিকে। পিচ্চিটার কি খুশি!! একশো টাকা পেয়ে দূর থেকে তার দলবল ডেকে একটা টংয়ের মতো দোকানে গিয়ে কোক, চিপস, রুটি অনেককিছু কিনে খায়। পূর্ব মাথা ঘুরিয়ে পিচ্চিটার হাসিটা একবার দেখলো। কি সুন্দর প্রাণবন্ত হাসি! গরিব ঘরের ছেলে না হলে এই পিচ্চি সত্যি একটা রাজপুত্রের মতো দেখতে! পূর্ব চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ছাড়লো। অদ্ভুত একটা শান্তি লাগছে! খুবই অদ্ভুত।
 
.

- পূর্ব কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো? বল না পূর্ণতা! ওকে চিঠিটা দিয়েছিলি? পূর্ণতা চুপ করে থাকলে একটা থাপ্পড় লাগাবো!
- রিল্যাক্স রিল্যাক্স আপু!! আগে জিরিয়ে নাও তো! আমি সব বলছি। 
- তাড়াতাড়ি বল পূর্ণতা! তাড়াতাড়ি বল!!
- আপু উনি ঠিক আছেন, ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। খালি রাগ নিয়ে থাকেন এটাই সমস্যা। তুমি সহ্য করছো কিভাবে? আমিতো একদিনেই ভাই কানে ধরেছি মরলেও ওই লোকের সামনে যাবো না!
- ওকে ওর মতো থাকতে দিলে কাউকে কিছু করেনা পাগলী। তুই নিশ্চয়ই কিছু করেছিস? নাহলে তোর সাথে খামোখা রাগ কেনো দেখাবে?
- আমাকে থাপ্পর মেরেছে আপু! কঠিন থাপ্পর! কান জ্বালাপালা করে দিয়েছে বুঝলি! 
- এমনে এমনেই মেরেছে? অবিশ্বাস্য!
- আপু আমি মিথ্যা বলিনা তুই ভালো করে জানিস। পূর্ব ভাই খুবই বদমেজাজী! খুব মানে হাই লেভেলের বদমেজাজী! উনি তো একে ঝাড়ি মারে! তার উপর নিজেই এসে কোলের উপর জুড়ে বসে!
- হোয়াট! হোয়াট ননসেন্স!
- আপু প্লিজ ইংলিশে ঝাড়ি দিস না। পূর্ব ভাই এমনেই আমার অবস্থা ফাটা বাঁশের চিপাগলি বানিয়ে দিয়েছে! 
- খুলে বল পূর্ণতা! কোলে বসে মানে?
- আরে বলছি। ট্রেনে উনি হাই তুলছিলো আমি বললাম ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু উনি করেছে কি জানিস আপু? প্রথমে এক ঝাড়ি মারলো! পরে উনি নিজেই আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। 
- তুই মিথ্যা বলছিস! ১০০% মিথ্যা বলছিস! পূর্ব তোর কোলে মাথা? না না মিথ্যা বলছিস!! তুই সত্য বলতে পারিস না! তিন বছর ধরে ওর সাথে চলেছি, দেখেছি, ওকে চিনি! ও আমার স্পর্শ নিতে পারতো না! ও তোর কোলে.....ইম্পসিবল! ইম্পসিবল!

ফোনের ওপাশ থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হতেই টুট টুট টুট একনাগাড়ে বাজতে থাকলো। পূর্ণতা কান থেকে ফোন সরিয়ে চমকে যায়! আনিশা ফোন কেটে দিলো নাকি ফোনের ওপাশে ওর কিছু হয়েছে??

সন্ধ্যার দিকে হাতমুখ ধুয়ে বাড়ির পেছনের দিকটায় হাটছি। হাটছি বললে ভুল হবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি। দূরের আমগাছটার সাথে একটা হলুদ বাতি জ্বালানো হয়েছে বিধায় অন্ধকারের ঝাপসাটা এখন নেই। বাবা-মা, বলতে গেলে সবাই আনিশা আপুর বিয়ের মেহমান দেখতে ব্যস্ত। আমি চুপিচুপি এখানে নিরিবিলি পেয়ে একা হাটছি। ঠান্ডা স্নিগ্ধ পরিবেশে দারুন লাগছে। 

- তুমি এখানে কি করো!

হঠাৎ কারো ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে মাথা ঘুরিয়ে যেই তাকাবো ওমনেই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে ধপ করে মাটির উপর পড়লাম! শরীরের সমস্ত ভর কোমরে পড়েছে। টনটন করে ব্যথা করছে। আমি চোখ খুলে দেখার পূর্বেই কেউ আমাকে শূন্যে ভাসিয়ে তুললো যেনো! আমি ঠোঁটে ঠোট চেপে চোখ খুলে দেখি চেনামুখ! সেই রাগী রাগী চোখদুটো! চোখের মনিতে অতল গহ্বরে লুকোনো মায়া লেপ্টানো! সে আমার দিকে তাকিয়ে গুরু গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,

- আমি কি সুন্দরবনের বাঘ? খেয়ে খেলবো? আমাকে দেখলে তুমি ভয় পাও কোন আহ্লাদে!

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে আছি। এটা নির্ঘাত স্বপ্ন! সিরিয়াসলি একটা স্বপ্ন! আমার চড় খাওয়া উচিত একটা! আচ্ছা আপু বলেছিলো বেহুদা কিছু বললেই নাকি এই সামনের মানুষটা ধুপাধুপ চড় মারে। ট্রায় করবো নাকি?

- বড় ভাই ভালো আছেন?

কয়েক সেকেন্ড পর আমি এক চিৎকার মারলাম! আমার চিৎকারে গাছের ডালে বসে থাকা পাখিগুলো সব কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে গেলো। আমার কোমরের হাড্ডি মেবি দুই টুকরো হয়ে দুইভাগ হয়ে গেছে। চোখ বেগতিক কান্নায় ফেটে পড়ছে! কোমরের একই জায়গায় পরপর দুবার ব্যথা পাওয়ার আকষ্মিকতায় শরীর কেমন ঝিমঝিম করছে। অশ্রুপূর্ণ চোখে মাথা তুলে তাকাতেই দেখি উনি পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঠোঁট শক্ত করে দাড়িয়ে আছেন। উনাকে 'ভাই' ডাকার নমুনা এভাবে চুকাবো জানলে জীবনেও এমন ফাজলামি করতাম না।।

দেখতে দেখতেই চোখের সামনে কালো অন্ধকার আচ্ছন্ন করতেই শরীর ঢলে পড়লো মাটিতে। চোখের পাতায় অন্ধকারের আধুলি ছাড়া দেখতে পেলাম না কিছুই। 
.
.
.
চলবে.......................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন