দীর্ঘ দুঘন্টা পর আদনানকে এক অচেনা মেয়ের সাথে দেখে বেশ অবাক সবাই।ফরসা ছাড়া কোকড়ানো চুল আর লাল শাড়ীতে আচ্ছাদিত ভীত চেহারার মেয়েটিকে দেখে কুঞ্জন ফিসফিসিয়ে বলল,
''সুন্দর তো আপুটা।"
ইকরাম রাহমান তো ভ্রু কুঁচকে অচেনা মেয়েটিকে দেখছে।প্রিয়াশা কে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই সবাই বিস্ময় নিয়ে মেয়েটাকে দেখতে থাকে।জুলেখা বানু সাঁঝের লাগেজ ঠিক করছিলেন আদনানের প্রিয়াশাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
''মাইয়াডা কেরে আদনাইন্যা?"
আদনান স্মীত হেসে ধীর স্বরে বলল,
''আমার কলিগ আম্মা।"
''ওহ।তোর লগে অফিসো কাম করেনি?"
''হু।ও সাঁঝের বিয়ের জন্য আসছে।আমাদের বাসা চিনতেছিলোনা।তাই নিয়া আসলাম।"
ইকরাম রাহমান ভ্রু কুঁচকে বললেন,
''ভালা হইছে।বইতো কও।হিমায়রা সাঁঝ এই মাইয়ারে নিয়া বহা।"
বাবার ডাকে সাঁঝ এগিয়ে আসে।নিশাদ বিভান কেউই নেই বাসায়।সাঁঝ এসে প্রিয়াশা কে বলল,
''চলুন আপু....."
প্রিয়াশা মৃদু হেসে সাঁঝের সাথে হাঁটতে শুরু করে।ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে একবার পিছু ফিরে তাকায় আদনানের দিকে।চোখে মুখে অজানা ভয়ে ছেঁয়ে গেছে প্রিয়াশার মুখে।আদনান ভরসার দৃষ্টিতে তাকায় যেন মেয়েটির দিকে।প্রিয়াশা সাঁঝের রুমে আসতেই দেখলো বেলা আর পূর্না বসে আছে।পূর্না বেলার কোলে বসে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রিয়াশার দিকে।প্রিয়াশা বাবুটাকে দেখে মৃদু হাসলো। ওর যেন ভীষন ভালো লেগেছে বাবুটাকে দেখে।বেলা সাঁঝকে উদ্দেশ্য করে সুধায়,
''ও কে সাঁঝ?"
সাঁঝ প্রিয়াশাকে খাটে বসিয়ে বলল,
''আদনান ভাইয়ার কলিগ।আপু বসো।"
বেলা মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করে নাম কি তোমার?"
''প্রিয়াশা ইসলাম।"
লাবনী অবাক দৃষ্টিতে প্রিয়াশাকে দেখছে।ওর মনে হচ্ছে কই যেন দেখেছিলো মেয়েটিকে।প্রিয়াশা সাঁঝ আর বেলার মাঝে বসে আছে চুপ করে।বুক কাঁপছে আতঙ্ক আর ভয়ে।পূর্না প্রিয়াশার ভয়ার্ত মুখ দেখে হেসে বলল,
''আন্তি তুমি এতো বয় পাত্তো কেন?তোমাতে কেউ মালবেনা।"
বেলা মেয়েকে ধমকে বলল,
''পূর্না চুপ থাকো মা।"
প্রিয়াশা ছোট্ট মেয়েটার মুখে হিন্দি শুনে অবাক।বেলা কে প্রশ্ন করলো,
''আপু আপনারা হিন্দিতে বলছেন যে?"
বেলা হেসে বলল,
''একচুয়ালি আমার হাজবেন্ড ইন্ডিয়ান।তাই ও হিন্দিতে বলছে। "
''ওহ।বাবুটা অনেক মিষ্টি।"
''ধন্যবাদ প্রিয়াশা।"
জুলেখা বানু সাঁঝের রুমে আসেন।লাবনীকে ধমকে বললেন,
''মেয়মান আইছে কিছু দেস না কেন?হুমায়রা কোতায়?"
লাবনী বলল,
''আপুকে ছাদে যেতে দেখছিলাম।"
বেলা পূর্নাকে মায়ের কোলে দিয়ে বলল,
''মা ওকে দেখো আমি নাস্তা রেডি করি।"
প্রিয়াশা বেলাকে থামিয়ে বলল,
''না আপু আপনি বসুন।আমার পেট ভরা তো।"
বেলা বলল,
''একটু তো খেতে হবে।প্রথম এলে তুমি বসো আমি আসছি।"
প্রিয়াশা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''আপু আমি একটু সাহায্য করি। আজ তো এই আপুর বিয়ে।"
সাঁঝ হেসে বলল,
''না আপু মেহমান আপনি। কি বলেন?আমরা করবো।"
প্রিয়াশা মাথা নেড়ে বলল,
''তা কি হয়?আজ আপনার বিয়ে আপনি কাজ করবেননা।আমি এসেছি একটু হেল্প করি?"
প্রিয়াশার কথায় বেলা না করতে পারেনা।বলতে লাগলো,
''নাস্তা করে তাহলে আমার মেয়েটাকে একটু খাইয়ে দিও ঠিক আছে?"
প্রিয়াশা মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকায়।সাঁঝ আর বেলা বেরিয়ে যায় কাজে।এদিকে আদনান বেলা আর সাঁঝকে বেরিয়ে যেতে দেখে সাঁঝের রুমে প্রবেশ করে।প্রিয়াশাকে পূর্নার সাথে বসে থাকতে দেখে বলল,
''কিছু লাগলে আমার বোনদের বইলো।আপুরা এনাফ হেল্পফুল।"
প্রিয়াশা মাথা ঝাঁকায়।পূর্না মামাকে দেখে হাত বাড়িয়ে বলল,
''মামা কোলে নাও।"
আদনান ভাগনীকে আদর করে বলল,
''তোমার মামীর সাথে থাকো খুব আদর করবে।"
আদনানের কথায় প্রিয়াশা লজ্জায় এতোটুকু হয়ে মাথা নামিয়ে নেয়।বিকেল নাগাদ সাঁঝকে বেলা হুমায়রা প্রিয়াশা আর লাবনী সহ পার্লারে নিয়ে যায়।দুপুরে বিভান আর নিশাদ ফিরে এসে প্রিয়াশাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো তবে আদনানের কথায় ওরা নিশ্চিন্ত হয়।সাঁঝকে নিয়ে মেয়েরা বেরিয়ে গেলো প্রায় ঘন্টাখানেক হয়েছে।বিভান পূর্নাকে ঘুমা পাড়াচ্ছে।এদিকে নিশাদকে চিন্তিত পদে এরুম ওরুম করতে দেখে বিভান বলল,
''কিছু হয়েছে নিশাদ?বলতে পারো।"
নিশাদ থেমে বলল,
''ভাইয়া আমার বেস্টফ্রেন্ড ইমতিয়াজের নম্বরে কল যাচ্ছেনা।ওর বোন ও কল রিসিভ করছেনা।সকাল থেকেই ট্রাই করছি।"
নিশাদের কথায় বিভানের বেশ চিন্তা হলো। আসলেই তো ফোন ধরছেনা চিন্তার বিষয়।বিভান বলল,
''ওর কোন ক্লোজ ফ্রেন্ড আছে যার সাথে যোগাযোগ সবসময় থাকে।তার থেকে খবর নাও।"
নিশাদ ভাবলো বিভান ভুল বলেনি।তমা ওদের বাসায় আসা যাওয়া করে।হয়ত তমা কিছু জানতে ও পারে।নিশাদ বলল,
''ঠিক বলেছেন ভাই।আমি দেখছি।"
নিশাদ তমার নম্বরে ডায়াল করে কানে রাখে ফোন।কয়েকটা রিং হওয়ার পর তমা রিসিভ করে কল।হেসে বলল,
''কি মিঃ বোবা কেমন আছিস?"
নিশাদ লজ্জিত কন্ঠে বলল,
''এই তো।তোর কি খবর?"
''এই আছি।তা সাঁঝের বিয়ের কাজ কতোটুকু হলো?আমি আসবো? হেল্প লাগবে?"
''আরে নাহ।সেন্টারে একেবারে চলে আসবি।আচ্ছা ইমতিয়াজ কই রে?ও কল ধরছেনা।"
তমা কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইলো।তারপর শান্তস্বরে বলল,
''নিশাদ ও মেইবি আজ তোর কল রিসিভ করবেনা।তুই ওকে বিয়েতে যেতে বলবি।বুঝিসই তো এখন বাসার অবস্থা।"
নিশাদের মন ভীষন খারাপ হয়ে গেলো।এজন্য বুঝি ওর বেস্টফ্রেন্ড আসবেনা ওর বোনের বিয়েতে?ব্যাপারটা ভাবতেই বুক ভার হতে থাকে নিশাদের।ম্লান কন্ঠে বলল,
''ও আসবেনা আমি ভাবতেই পারছিনা।ও আসলে সাহস পেতাম বুঝিস তো।বোনটা চলে যাবে আমার সাহস হচ্ছেনা ওকে বিদায় দেয়ার।ওকে আমার দরকার ছিলো আজ।অন্তত অল্প কিছু সময়ের জন্য থাকলে ও ভালো লাগতো।"
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তমা।কিছুক্ষন ভেবে বলল,
''চিন্তা করিসনা। আমি দেখি ওকে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।তুই বিয়ের দিকটা সামলা। "
নিশাদ স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
''থ্যাংকস তমা।"
''ওয়েলকাম।বিয়েতে দেখা হচ্ছে তাহলে।"
''ওকে।"
নিশাদ ফোন কেঁটে মৃদু হেসে বিভানের দিকে তাকায়।সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সাঁঝের কনের সাজ সম্পূর্ন হয়ে যায়।কথা হলো ওরা পার্লার থেকে সোজা কমিউনিটি সেন্টার চলে যাবে।বিভানরা নিজেরা ও রেডি হয়ে নেয়।পূর্নাকে রেডি করিয়ে দেন জুলেখা বানু।আদনান গাড়ি নিয়ে আসে সবার জন্য।নিশাদ মা বাবা আর বাকি সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।জুলেখা বানু গাড়িতে উঠতেই নিঃশব্দে কেঁদে ফেলেন কারন আর কিছু ঘন্টা পরই তার সাঁঝ চলে যাবে তার শ্বশুর বাড়িতে।কুঞ্জন মাকে স্বান্তনা দিতে শুরু করে।কিন্তু মায়ের কান্না কি আর স্বান্তনায় থামে?"
কমিনিউটি সেন্টারে পৌছে ওরা খেয়াল করে জামাইরা এখনো আসেনি।ওরা ভিতরে ঢুকে পড়ে।সেখানে ঢুকেই আদনানের চোখ জোড়া প্রিয়াশাকে খুঁজতে থাকে। কই গেলো মেয়েটা?হঠাৎ খেয়াল করলো বেলার একপাশে প্রিয়াশা আর অপরপাশে হুমায়রা আর লাবনী।প্রিয়াশা বেশ মিশে গেছে ওদের সাথে।প্রিয়াশা বেলা চকলেট রং এর শাড়ী পরেছে।আর সাথে স্নিগ্ধ সাজ।খুব সুন্দর লাগছে প্রিয়াশাকে।আদনানের সাথে চোখাচোখি হতেই প্রিয়াশা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।আজ লজ্জাটাই ওর সুন্দর চেহারায় বেশ ফুঁটেছে।নিশাদ আর বিভান সাঁঝের কাছে এসে দাঁড়ায়।সাঁঝ স্টেজে বসা।দুলাভাই আর ভাইকে দেখে ওর হাস্যোজ্জ্বল চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।বিভান নিশাদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
''সাঁঝ কে ভীষন ভালো লাগছে তাইনা নিশাদ?"
নিশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''জি ভাই খুব সুন্দর লাগছে।"
সবাই সাঁঝের সাথে কিছু ছবি তুলে নেয়।কিছুসময়ের মাঝেই বরের গাড়ি আসতে দেখা গেলো।সাথে সাথে বেলা লাবনী হুমায়রা আর ওদের কাজিন বোনেরা বেরিয়ে আসে।হুমায়রা দরজার সামনে লাল ফিতা আটকে গেট ধরে বলল,
''দুলাভাই টাকা দিন নইলে গেট খুলবোনা।"
মিষ্টি কালার শেরওয়ানীতে বেশ লাগছে সাইমনকে।পাশে দাদী আর মিতুল।মিতুল বলল,
''দড়ি ছিড়ে ঢুকে যাবো।"
লাবনী বলল,
''দেখিতো ছিড়ে দেখান।"
সাইমন হেসে বলল,
''ছিড়াছিড়ি করতে হচ্ছে কেন?আমার শালীরা চেয়েছেনা?পাঁচটাকা দিবো তোমাদের।"
লাবনী অভিমানী সুরে বলল,
''এটুকুন একটা শালী আমি।মাত্র পাঁচটাকা আমার ইজ্জত?এ জীবন রাখবোনা।"
ওর কথায় সবাই হাসতে শুরু করে।
এনিয়ে আরো কিছুক্ষন হাস্যরসের মাঝেই চলে গেলো।শেষমেষ চল্লিশহাজার টাকা দিয়ে ভিতরে ঢুকে সাইমন।সাঁঝকে দেখে কপাল ওপরে ওর।সিদুর রং এর লাল বেনারসী তে প্রিয়মানুষটিকে এতো ভাল লাগবে জানলে আরো আগেই বিয়ে করে নিতো ও।কাজী ও চলে এসেছে কিছুসময়ের মাঝেই।বিয়ে পরানোর সময় সাঁঝ ভীষন কাঁদছিল।বেলা লাবনী হুমায়রার চোখ ভিজে যায়।জুলেখা বানু ভীষন কাঁদছেন দেখে ওনাকে নিশাদ সামলাচ্ছে।বিয়ে পরানোর পরপরই শুরু হলো মিষ্টি মুখ।মালা বদল ও হয়ে গেলো।হঠাৎ নিশাদ গেটের সামনে তমা আর ইমতিয়াজকে দেখে বেরিয়ে আসে।ইমতিয়াজের চোখজোড়া ভীষন লাল হয়ে আছে।নিশাদ ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
''কি অবস্থা?"
ইমতিয়াজ ধীর স্বরে বলল,
''ভালো লাগছেনা।আসতাম না আমি তমা জোর করে নিয়ে এলো।"
ইমতিয়াজের কথায় নিশাদ রেগে বলল,
''এজন্য আমার কল ও ধরবিনা তুই?"
ইমতিয়াজ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
''দোস্ত ইদ্রির ব্যাপারটা জানিস তো কেমন ক্রেজি হয়ে গেছে।আর আমার ও কোথাও যেতে ভালো লাগেনা।"
নিশাদ ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
''ভিতরে চল।সাঁঝকে দেখবি। "
সাঁঝের কথায় ইমতিয়াজের ভীতর যেন অসহ্য যন্ত্রনা হতে থাকে।তমা বলল,
''বিয়ে পড়া হইছে?"
নিশাদ অস্ফুটস্বরে বলল,
''হুম।"
ইমতিয়াজ আর কিছু বলতে পারলোনা।হয়ত নির্ঘাত কেঁদে ফেলবে।আর নিশাদ বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই ভীষন কষ্ট হবে ওর।নিশাদ ইমতিয়াজ আর তমাকে ভিতরে নিয়ে এলো।সাঁঝকে দূর থেকে দেখে ইমতিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মেয়েটাকে ভীষন ভাবে ভালবাসে।তবে সে আজ অন্য কারোর।ভাবতেই নিশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয় ওর।তমা সাঁঝ আর সাইমনের সাথে কিছু কথা আর ছবি তুলে ইমতিয়াজ আর নিশাদের কাছে ফিরে আসে।ইমতিয়াজ নিশাদ কে ধীরে বলল,
''তুই সাঁঝের কাছে থাক।আমি আছি।কোথাও গিয়ে বসবো।"
নিশাদ বলল,
''ওকে।আমি অনেক খুশি কারন তুই এসেছিস।কিছু করতে হবেনা তোকে।"
নিশাদ চলে যেতেই ইমতিয়াজ তমাকে নিয়ে অন্য এক রুমে চলে গেলো।এদিকে সেন্টারের দেয়ালে কিছু আয়না বসানো।সেখানে প্রিয়াশা নিজেকে দেখছে।আজ হুট করে জীবনটা কেমন পাল্টে গেলো।অভিশপ্ত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে এটাই অনেক।তবে ও স্বার্থপর হয়ে গেলো না তো?নিজের সুখের জন্য আদনান সরি আজ তো সে তার স্বামী যার সাথে ঘন্টাখানেক সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো।সকালে চাচীর মার আর ধনেশের দেয়া শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আদনানকে কল দিয়েছিলো প্রিয়াশা।ছুটে এসেছিলো আদনান।প্রিয়াশা ওকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কা্ঁদতে কাঁদতে বলেছিলো কিভাবে তার ব্রাহ্মণ বাবা নিজের কাজের লোকের কাছে ওকে বেঁচে দিয়েছিলো তারপর চাচীর দেয়া অত্যাচার।তার মুখের কটু কথা আর বছরের পর বছর ধনেশের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলো।এই ছাব্বিশটা বছর যেন ওর জীবনে নরক হয়ে গিয়েছিলো।প্রিয়াশার কথায় স্তব্ধ আদনান।সামনে সরে এলো আদনান।প্রিয়াশা কাঁদছিলো আর বলছিলো,
''আপনাকে বলতাম না কিন্তু পারছিনা আর।আমি বাঁচতে চাই।"
আদনান প্রিয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে।তারপর শান্তস্বরে বলল,
''বিয়ে করবে?'
আদনানের কথায় বোকা বনে যায় প্রিয়াশা।তবে আদনানের প্রস্তাবে ও যেন নতুন বাঁচার উৎসাহ পেলো। তাই দ্বিতীয় বার না ভেবেই বলল,
''করবো।"
আদনান বলল,
''তুমি যতক্ষন হিন্দু আছো তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা আমি।"
প্রিয়াশা জ্বলজ্বলে চোখে বলল,
''যদি বাঁচার জন্য ধর্ম ত্যাগ করতে হয় আমি করবো।কিন্তু বাঁচতে চাই আমি।"
আদনান বলল,
''প্রিয়াশা তুমি কি সত্যি রাজি ধর্ম পাল্টাতে।তোমাকে জোর করবোনা আমি।"
প্রিয়াশা আদনানের হাত ছুঁয়ে বলল,
''আমি রাজি।"
এরপর সব পাল্টে গেলো।প্রিয়াশা মিত্র থেকে প্রিয়াশা ইসলাম হয়ে গেলো।তারপর আদনান ওকে বিয়ে করেই ঘরে ফিরে যায়।নিজের শ্বশুরবাড়িতে পা রাখতেই ওর মনে হলো,
''এ যেন আজ ওর নতুন জীবনের সূচনা হলো।"
প্রিয়াশা ওর নিজের ঘোর কাঁটিয়ে বাস্তব জগতে ফিরে এলো ফোনের কাঁপুনিতে।ফোন অনকরে সামনে ধরলো প্রিয়াশা।আদনান মেসেজ পাঠিয়েছে।সেখানে ছিলো,
''আমার বৌকে আর কারো দেখার অধিকার নেই।তাকে শুধু আমিই দেখবো।তাকে দেখার অধিকার শুধু আমারই আছে, ওর নিজের ও নেই।"
মেসেজ দেখে প্রিয়াশা ভীষন লজ্জা পেয়ে পিছনে তাকিয়ে আদনানকে দেখতে পায়।আদনান হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।প্রেমাসিক্ত সেই হাসি।
এদিকে ইমতিয়াজ তমাকে অন্য রুমে এনে চুপ করে বসে রইলো।তমা মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো,
''বুঝতে পারছি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে।"
ইমতিয়াজের চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।বলতে লাগলো,
''বেস্টফ্রেন্ডের কথা রাখতেই এলাম। কিন্তু এখন হয়ত নিজেকে ধরে রাখতে পারবোনা তমা।সাঁঝ আজ অন্য কারো হয়ে গেলো।ওকে এতো ভালবাসি সেটা ও বুঝলোওনা।আমি কি করবো তমা?একদিকে বাবা চলে গেলো আর যাকে ভালবাসলাম সে অন্য কারোর স্ত্রী আজ।কিভাবে মেনে নেবো আমি?"
তমার চোখ ভরে এসেছিলো।কিছু বলতে পারেনি ও।চুপচাপ ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে।এতো কান্নার মাঝে ওরা দরজার অপরপাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকা দূর্বল হৃদয়ের পুরুষ মানুষটাকে ও হয়ত খেয়াল করেনি।"
!!!!
গেস্টদের খাওয়ার তদারকি করছে আদনান নিশাদ আর বিভান। বেলা সাইমনের দাদীর সাথে কথা বলছিলো।সাইমনের দাদী বেশ বিচক্ষন আর বুদ্ধিমতি।খুব সুন্দর করে সাজিয়ে কথা বলতে পারেন ওনি।বেলার মনে হলো সাঁঝ খুব ভালো থাকবে ওনার কাছে।এদিকে লাবনী প্রিয়াশাকে সময় দিচ্ছে।প্রিয়াশাকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব আতংকে আছে।না জানি ওনার বাবা ভাইয়েরা কি মনে করে।কেউ কি ওদের বিয়েটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারবে?ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো প্রিয়াশার।আবার না ওকে চাচীর কাছে ফিরে যেতে হয়।সেটা তো ও পারবেনা।ও রেহাই চাচ্ছিলো সেই অভিশপ্ত জীবন থেকে।আদনান তার জীবনে আলো হয়ে এসেছে।ওকে মুক্তি দিয়েছে।আর প্রিয়াশা নিজেও প্রিয় মানুষটাকে পেয়ে গেলো নিজের করে।কথা গুলো ভাবার মাঝেই প্রিয়াশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে।হঠাৎ লাবনীর ডাকে ঘোর ভাঙ্গে ওর।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাবনীর দিকে তাকায়। লাবনী বলে উঠলো,
''আপু তুমি ভয় পাচ্ছো কেন?আঙ্কেল আন্টি বকা দেবে বেশি রাত হলে?"
প্রিয়াশার ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসি হারিয়ে গেলো।ম্লান মুখে মাথা নাড়িয়ে বলল,
''আমার বাবা মা নেই।চাচা চাচীর কাছে থাকি।"
''ওহ সরি।"
মন খারাপ করে বলল লাবনী।হঠাৎ বেলাকে আসতে দেখা গেলো লাবনীদের কাছে।বেলা এসেই লাবনী কে বলল,
''টেবিল খালি হয়েছে প্রিয়াশা তুমি খেয়ে ফেলো।বাসায় যেতে হবে তোমার।"
প্রিয়াশা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।কিভাবে বুঝাবে ও আজ ওদের ঘরেরই একজন সদস্য?ওদের মেজ ছেলের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী।প্রিয়াশা কিছু না বলে চুপচাপ বেলার সাথে খেতে চলে এলো।খাবার সময়ে আদনানকে সেখানে প্রিয়াশা দেখতে পায়।আদনান টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ায়।প্রিয়াশার চেহারায় আতঙ্ক ভয় সব যেন বৃদ্ধি পেয়েছে।ওদের নীরবতা যেন অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।আদনান ভাবছিলো প্রিয়াশা চিন্তা করোনা কিছু হবেনা।আমি আছি না?আর সেখানে প্রিয়াশা ভাবছিলো সবাই কি বলবে?আপনাকে ভুল বুঝবে আদনান।নিজের সুখ খুঁজতে গিয়ে আপনাকে বিপদে ফেলে দেইনি তো?
এদিকে নিশাদকে আসতে দেখে বিভান বলল,
''সাঁঝ আর সাইমন কে নিয়ে আসি একসাথে বসবো।"
নিশাদ মাথা ঝাঁকায়।তারপর ম্লান কন্ঠে বলল,
''ভাইয়া আমার ফ্রেন্ডদের ও বসিয়ে দিতেন।যদি টেবিল খালি থাকে।"
বিভান তাড়া দিয়ে বলল,
''অবশ্যই ডাকো ওদের।"
নিশাদ তমাকে কল দিয়ে বলল ওরা যেন খেতে আসে।বন্ধুদের খেতে বসিয়ে দেয়ার মুহূর্তে নিশাদ সেখানে ছিলোনা।ইমতিয়াজ বারবার নিশাদ কে খুঁজে যাচ্ছিলো আহত দৃষ্টিতে।এদিকে সাঁঝ আর সাইমন একসাথে খেতে বসেছে।একপাশে দাদি অপরপাশে মিতুল।আর তারপর ছিলো বেলা বিভান, আদনান,কুঞ্জন, হুমায়রা আর লাবনী।বেলা হঠাৎ বলল,
''নিশাদ কই?"
পাশ থেকে আদনান বলল,
''ভাইরে দেখলাম ইমতিয়াজ ভাইয়াদের টেবিলের দিকে যাইতে হয়ত ঐখানেই।"
বেলা ভাবলো হয়ত ঐখানেই আছে তাহলে।এদিকে ভূবন বলল,
''কিরে ইমতু নিশাদ কই?"
ইমতিয়াজ শুকনো মুখে বলল,
''অনেক্ষন যাবৎ দেখিনি।"
পাশ থেকে কল্যান বলল,
''শালা আমাদের ফালায় কই গেলো?"
তীর্থ বলল,
''হয়ত বোনের সাথে খাচ্ছে।আর আমারে তাড়াতাড়ি যাইতে অইবো। সকালে অফিস আছে।
সাইমন সুযোগ পেয়ে সাঁঝের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল,
''পরীটাকে নিজের করে পেলাম,বড় সুন্দর লাগছে।আর তো তর সইছেনা.......আজতো তুমি শেষ সাঁঝ!!!!"
সাইমনের কথায় লাজরাঙা দৃষ্টিতে আড় চোখে তাকায় সাঁঝ।পাশ থেকে মিতুল বলল,
''কে শেষ ভাইয়া?"
বোনের কথায় চোখ গরম করে তাকায় সাইমন।তারপর ওকে থামতে ইশারা করে নিজে খেতে আরম্ভ করে।দাদি সাঁঝকে একটু করে খাইয়ে দিয়েছিলেন।খাবার শেষে সাঁঝ সাইমন আবার ও স্টেজে এসে বসে।বিভান আর বেলা এগিয়ে এলো স্টেজের দিকে।বিভান সাইমনের পাশে বসে বলল,
''সেদিন পুরোনো আংটি দিয়েছিলাম।আজ নতুন টা পরিয়ে দিবো।দাও তোমার হাত।"
সাইমন হাত এগিয়ে দিতেই বিভান ওর হাতে নতুন আংটি পরিয়ে দেয়। অনেকেই অনেক কিছু উপহার দিল।এসব কিছু দূর থেকে দেখে যাচ্ছিলো ইমতিয়াজ।পাশে দাঁড়িয়ে তমা।ও বলল,
''তোর গিফট দে দোস্ত।"
তমার কথায় ইমতিয়াজের বুক কেঁপে উঠে।ধীরে বলল,
''ওর সামনে গেলে আটকাতে পারবোনা নিজেকে।"
''তুই পারবি আমি জানি।যা দিয়ে আয়।"
বান্ধুবীর কথায় ইমতিয়াজ এগিয়ে আসে স্টেজের কাছে।নিজের হাতের অর্নামেন্টস বক্স সাঁঝের হাতে দিয়ে নিজেী শক্ত রেখে বলল,
''সাঁঝ তুমি সবসময় আমার বন্ধুটার ছায়া হয়ে ছিলে।ছোটবোন হয়ে ও বড় দায়িত্ব পালন করেছো।তোমার এই গুন গুলো খুব ভালো লেগেছে আমার।তুমি যেখানে যাবে সেই বাড়িটা আলোকিড হয়ে যাবে সাঁঝ।ভালো থেকো।নিজের ঘরটাকে সামলিও।আর সাইমন সাহেব ওকে ভালো রাখবেন কেন কষ্ট পেতে দেবেননা।মেয়েটা খুব লক্ষী।"
কথাগুলো বলার মুহূর্তে ইমতিয়াজের গাল গড়িয়ে অশ্রু ঝড়ছিলো।সাইমন ইমতিয়াজের হাত ধরে বলল,
''ভাইয়া আপনার বোন আমার কাছে ভালো থাকবে।আমাদের দোয়া করবেন।"
ইমতিয়াজ সাইমনের জন্য আনা ঘড়ি পরিয়ে দিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে নেমে আসে নিচে।বিভানের কাছে এসে বলল,
''ভাইয়া আমার যেতে হবে।"
বিভান মৃদু হেসে বলল,
''আরো কিছু সময় থাকোনা।নিশাদটাও কই যেন গেলো।তোমাদের সাথে খেয়েছিলো?"
বলে আশেপাশে তাকাতে থাকে বিভান।ইমতিয়াজের সেই চিন্তা আসে নিশাদকে এখনো দেখেনি ও নিজেও।ইমতিয়াজ বলল,
''না খায়নি তো।ভাইয়া আমি দেখি ও কই আছে।পেলে পাঠিয়ে দেব।আসি তাহলে, আল্লাহ হাফিজ।"
বিভান মুচকি হেসে বিদায় দেয় ইমতিয়াজ কে।ইমতিয়াজ আর তমা হেঁটে হেঁটে নিশাদকে খুঁজছিলো কিন্তু পাচ্ছেনা।হঠাৎ ওরা মেইন গেটের সামনে আসতেই নিশাদকে দেখতে পেল পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।ইমতিয়াজ আর তমা এগিয়ে গেলো ওর দিকে।নিশাদের কাঁধে ইমতিয়াজ হাত রাখতেই নিশাদ কেঁপে উঠে।এতটাসময় যাবৎ ভাবনায় ব্যাস্ত ছিলো ও।তখন তমা আর ইমতিয়াজের কথা আড়াল থেকে শুনে নিশাদের বুক কেঁপে উঠেছিলো।বারবার মনে হচ্ছিলো হয়ত বন্ধুর ভালবাসাকে তার কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলেছে ও।ওর প্রানের বন্ধু ইমতিয়াজ কে কষ্ট দিয়েছে।তার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে নিশাদ।সাঁঝকে এতোটা ভালোবাসতো ইমতিয়াজ আর নিশাদ সেটা চোখের আড়াল করেই চলে গেলো।এখন কি ও নিজের ভালবাসাকে পাবে?ইমতিয়াজ কি ওর ওপর রেগে নেই?প্রথম ভালবাসা ছিলো সাঁঝ। আর নিশাদ তো ওর প্রথম ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়েছে তাহলে নিশাদ কি করে ওর প্রথম ভালবাসা পাবে।কারন ইমতিয়াজ তো ইদ্রির ভাই।এসব ওলটপালট ভাবনার মাঝেই নিশাদের কাঁধে ইমতিয়াজ হাত রাখতেই শরীর কেঁপে উঠে নিশাদের।পাশে তাকিয়ে দেখলো ইমতিয়াজ আর তমা দাঁড়িয়ে।নিশাদের চোখজ্বলজ্বল করছে।ইমতিয়াজ হাসার চেষ্টা করে বলল,
''আমাকে আসতে বলে এখানে দাঁড়িয়ে কেন?আমরা খেতে বসলাম তুই আসলিও না।কেন?"
নিশাদ কান্নার স্বরে বলল,
''কেমনে পারিস?হ্যা?কি ভাবে পারিস এতো কষ্ট পেয়ে ও হাসতে?আমি পারিনা কেন?"
ইমতিয়াজ অবাক হয়ে বলল,
''কিসের কষ্ট?বাবা কে হারিয়েছি সেই কষ্ট আছে।ভালো লাগা আছে যে আমার বোনটাকে তুই ভালবাসিস।"
নিশাদ তৎখনাৎ বন্ধুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে।বলতে লাগলো,
''সরি দোস্ত।আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম।তোর অনুভূতি টাকে বুঝলামনা মাফ করে দে প্লিজ।তুই কেন বলিস নি সাঁঝের প্রতি তোর অনুভূতির কথা?কেন বলিসনি এতো ভালবাসিস আমার বোনটাকে।"
ইমতিয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেলো।বলতে লাগলো,
''আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সাইমনকে সাঁঝ ভালবাসে শুনে বলিনি।আমার ভালবাসাকে কিভাবে কষ্ট দিতাম বল?আমিতো ভালো থাকতে পারতামনা।"
দুই বন্ধুর মাঝে অনেক টা সময় কাঁটলো এভাবে একে অপরকে জড়িয়ে।দুজনের চোখ অশ্রুসিক্ত।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তমা নিজেকে আটকাতে পারেনি।কেঁদে ফেলেছিলো অজান্তেই।কিছুসময় পর ইমতিয়াজ সরে এসে বলল,
''কাঁদিসনা পাগল।আমি ভালো আছি চিন্তা করবিনা।দোয়া করি সাঁঝ যেন খুব ভালো থাকে।নিশাদ অশ্রুসিক্ত চোখে বলল,
''অধম বন্ধুটাকে মাফ করে দিস।কিছুই করতে পারলাম না।"
ইমতিয়াজ ওর গালে আস্তে চাপড় দিয়ে বলল,
''হারামি তুই সবচেয়ে বড় গিফট আমার আর আমার পাগলী বোনটার জীবনে।এর চেয়ে আর কি চাই বল।যা খেয়ে নে একটু পর সাঁঝ চলে যাবে।"
নিশাদ মাথা নেড়ে তমার দিকে চেয়ে বলল,
''বন্ধুটার দিকে খেয়াল রাখিস।"
তমা মাথা নেড়ে মৃদু হাসে।নিশাদ ভিতরে চলে গেলো ইমতিয়াজ আর তমার চলে যাবার পর।ভিতরে আসতেই দেখলো বেলা খাবার প্লেট নিয়ে বসে আছে। নিশাদ কাছে যেতেই রেগে বলল,
''কই ছিলি?না খেয়ে কই ছিলি তুই?"
নিশাদ বলল,
''সরি আপা একটু কাজ ছিলো।"
বেলা বলল,
''এসে চুপচাপ খেয়ে নে।কোন কথা ছাড়া।"
নিশাদ এসে বোনের পাশে বসে যায়।বেলা লোকমা ধরে ভাইকে খাইয়ে দেয়।
এদিকে সাঁঝের যাওয়ার সময় চলে এসেছে।মাকে ধরে সাঁঝ জোরে চিৎকার করে কাঁদছিলো।নিশাদ সাইমনের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
''আমার বোনটার দিকে খেয়াল রেখো সাইমন।খুব লক্ষী মেয়ে সাঁঝ।খুব ভালো।ওকে কষ্ট দিও না প্লিজ।"
সাইমন নিশাদকে আশ্বস্ত করে বলল,
''চিন্তা করবেননা ভাইয়া সাঁঝ ভালো থাকবে।অনেক ভালো রাখবো।"
নিশাদের কাছে এলো সাঁঝ।বোনকে বুকে জড়িয়ে নেয় ও।নিশাদ থেকে ছাড়ানোই যাচ্ছিলো না সাঁঝকে।নিশাদ বলছিলো,
''নিজের সংসারে যাচ্ছিস।ভালো থাকিস।সবাই দেখে শুনে রাখবি কলিজা।"
এরপর বাকি সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সাঁঝ।কিন্তু বিপদ দেখা দিলো যখন পূর্না কান্না শুরু করলো।বারবার সাঁঝের শাড়ী টেনে বলছিলো,
''কালামনি দেওনা তুমি।আমি ও দাবো।"
সাঁঝ ভাগনী কে জড়িয়ে চুমু খেয়ে বলছিলো,
''চলে আসবো মা।তুমি আম্মু নানু নানার দিকে খেয়াল রেখো।"
সাঁঝ চলে গেলো ওদের ছেড়ে নিজের নতুন পরিবারে।এদিকে আদনান চিন্তায় পড়ে গেলো।ও কি করবে এখন?প্রিয়াশার কথা কি করে জানাবে।তখনই সামনে প্রিয়াশা এগিয়ে এসে বলল,
''আমি কি করবো এখন?আপনি বলবেন কখন?"
আদনান বলল,
''বলবো অপেক্ষা করো।"
বলেই আদনান সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিশাদের দিকে পা বাড়ালো।নিশাদের কাছে এসে বলল,
''ভাই একটা কথা আছে।"
নিশাদ বলল,
''বাসায় গিয়ে বলিস।"
''না ভাই এখনই।"
নিশাদ অবাক হয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে।তারপর কি ভেবে বলল,
''চল।"