ভারি বৃষ্টিপাত! এমন তুমুল বৃষ্টিতে মেঘপূর্ণ আকাশের নিচে রাস্তায় পড়ে আছে পূর্ণতা! মাথার নিচে ফুটপাত অংশ এবং পা দুটো রাস্তায় ফেলা! বৃষ্টির ব্যাপক প্রবলতায় পথঘাট শূন্য হলেও শ্রেয়া ছাতি মাথায় পইপই করে ভার্সিটির আশেপাশে খুজছে! প্রচন্ড পা ব্যাথা নিয়ে বিছানা ত্যাগ করে রাজিবও পূর্ণতার খোঁজে ব্যাচে গিয়েছে!আয়মান আসতে চেয়েছিলো পারেনি শ্রেয়ার হুঙ্কারবানীতে। আয়মানের কপাল মারাত্মক ব্যথায় নাস্তানাবুদ সেটা রাজিব ও শ্রেয়া ভালোভাবে জানে তাই পূর্ণতার খোজাখুজিতে আয়মানকে আসতে নিষেধ করেছে। ভার্সিটির সবখানে খোঁজা শেষ করে রাজিবকে কল করলো শ্রেয়া,
- শ্রেয়া?কোনো খবর পেয়েছিস!
- পাচ্ছি না রাজিব! পূর্ণতা এখানে কোথাও নেই!কেউ ওকে দেখেনি!!
- অসম্ভব! পূর্ণতা ব্যাচেও নেই! গেল কোথায়?
- আমার প্রচুর ভয় হচ্ছে রাজিব! পূর্ণতা যদি আবার পাগলামো করে বসলো? মেয়েটা এখন স্থিতিতে নেই! প্রচুর ভয় হচ্ছে দোস্ত!!
- টেনশন করিস না। ওর বাসার দিকে আয়। ওখানে একটা কঠিন খোঁজা দে! আমি আসছি।
ধুতির পায়জামা একহাতে আলগি করে পানি বাচিয়ে একটা রিকশা করলো শ্রেয়া! ছাতা হাতে থাকা সত্ত্বেও বেশ ভিজে গেছে শরীরটা। রিকশার হুড উঠিয়ে রিকশাওয়ালাকে দ্রুততার সাথে ঠিকানায় নিয়ে যেতে বললো। কোলে ভিজে যাওয়া ছাতাটা বন্ধ করে রেখে রিকশাওয়ালার দেওয়া পলিথিনটা দুহাতে মেলে ধরলো!বৃষ্টির ঝাপটা যেনো হিংস্র হয়ে উঠছে। দুহাতে শক্ত করে ধরা প্লাস্টিকের পলিথিনটা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে!! শ্রেয়া পলিথিনটার শেষ প্রান্তে পা দিয়ে চেপে নিজেকে ঢেকে দুপাশটা রিকশার হুডে চেপে ধরলো। তবুও বৃষ্টির ছাটে মুখ ভিজে যাচ্ছে শ্রেয়ার! ঠিক পনের মিনিট পর রিকশার ভাড়া চুকিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো পূর্ণতা এসেছে কিনা। কিন্তু পূর্ণতা সেই সকালে বেরিয়েছে আর নাকি ফিরেনি। শ্রেয়ার মন বসে যাচ্ছে পূর্ণতার নিখোঁজ অবস্থা দেখে। এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকা যায়? শ্রেয়া আবার ছাতা খুলে বৃষ্টির মধ্যে বাসার কাছাকাছি রাস্তায় চেক করতে গেলো। সবখানে দেখা শেষ শুধু পূর্ণতার বাসায় কাছে কিছু রাস্তায় দেখা বাকি। পথিমধ্যে রাজিবও লেংড়া পায়ে উপস্থিত হলে দুজনে একসাথে খুজতে খুজতে খানিকটা দূরে রাস্তায় উপরে পূর্ণতাকে চেতনাশূন্য হয়ে পড়ে থাকতে দেখে! রাজিবের বুকটা ছলকে উঠলো! সে লেংড়া পা দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে দ্রুতগামীতে সর্বোচ্চ বেগে পূর্ণতার কাছে গেলো। শ্রেয়া ছাতা ফেলেই ভোদৌড়!
অদম্য চেষ্টায় পূর্ণতাকে বাসায় নিয়ে গেলো শ্রেয়া ও রাজিব। রাজিবের মনটা বিষন্ন ভারে নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। পূর্ণতাকে নিয়ে যেটার আশঙ্কা করেছিলো তাই হয়েছে! ও বাসায় না গিয়ে রাস্তায় বসে হ্যালুয়েশনের শিকার হয়েছে। অতিরিক্ত মেন্টালি ফোর্সের কারনে পূর্ণতা সেন্সলেস হয়ে রাস্তায় পরে গেছে। শ্রেয়া ও রাজিব পূর্ণতার দুইপাশে বিছানায় আসন করে বসে আছে। শ্রেয়ার চুলসহ পুরো জামা ভিজে শেষ। রাজিবের কালো শার্টটাও গায়ের সাথে লেপ্টে আছে খাপে খাপ। নূরানী দুটো টাওয়াল দিয়ে চা আনতে চলে গেলে বেশ খানিকক্ষন পর শ্রেয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে উঠে,
- রাজিব, আমি কিছু ভাবতে পারছিনা পূর্ণতাকে নিয়ে। ও এমন ছিলো না। ওর ব্যবহার কক্ষনোই এমন ছিলো না। আজ যদি আমরা খুজে না পেতাম?
রাজিব ডানহাত দিয়ে চুলগুলোকে পেছনে টেনে মুখভর্তি নিশ্বাস ছাড়লো। পূর্ণতার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
- ওকে সাইক্রিয়াস্টিটের কাছে নিবি? এভাবে চলতে থাকলে পাবনায় পাঠাতে আর সময় লাগবেনা। আন্টি যদি বায় মিস্টেকেও এই ঘটনার ব্যাপারে জানে তো...
চোখ বন্ধ করে আরেকটি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রাজিব। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমি কালই সাইক্রিয়াটিস্টের এ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্ম করছি। আয়মানকে আমি বুঝিয়ে বলবো। তুই জাস্ট পূর্ণতাকে হ্যান্ডেল করিস,কেমন?
- ঠিক আছে। রাজিব? একটা কথা বলবো?
- ফরমালিটি করছিস কেন বলতো?
- একচুয়েলি ফরমালিটির প্রয়োজন ছিলো তাই। দোস্ত তুই পূর্ণতাকে ভুলার ট্রায় কর।মেয়েদের কাছে এসব ফিলিংটিলিং কখনো চোখ এড়ায় না। মুখে না বললেও আকার ইঙ্গিতে এগুলা বুঝার মতো ঐশ্বরিক ক্ষমতা সব মেয়েদের আছে। ছেলেরা হয়তো এটা জানেনা।
- তুই ভাবছিস পূর্ণতা জানে..
- আমি ভাবছিনা। আমি সিউর হয়েই বলছি পূর্ণতার তোর ফিলিংয়ের ব্যাপারে সবটাই জানে, বুঝে এবং অনুভব করে। বাট ফ্যাক্টস ইজ, পূর্ণতা তোর জন্য এ্যাফেকশান ফিল করেনা। যেটা করে সেটা জাস্ট বন্ধুত্বের ফিলিং।
রাজিব মাথা নিচু করে বিছানার উপর দৃষ্টি ফেলে। মন প্রচন্ড খারাপ লাগছে! প্রচণ্ড!
- রাজিব, তুই যেমন আমার বন্ধু। পূর্ণতাও সেম। আমি চাইনা তোর জন্য আমাদের এই চারজনের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হোক। তোর ছোট্ট ভুলের কারনে পূর্ণতা আরো প্রেশারে পরুক,অবশ্যই তুই এটা চাস না।
রাজিব উত্তরে কি বলবে জানেনা। পূর্ণতা নামক দূর্বলতার কাছে রাজিবের স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন মাথাটা কাজ করেনা। আচ্ছা প্রেমাত্মক ব্যাপারটা এতো ভয়াবহ কেনো?যেখানে মস্তিষ্কের সাথে মনের মিল হয়না!!কি অদ্ভুত!
.
নিয়মশৃঙ্খলার সাথে ন্যায়নীতি যুক্ত হয়ে তৈরি হয় 'রাজনীতি'। রাজনীতি ব্যাপারটা শুনলে মনেহয় রাজা রাজা ভাব। আসলে ব্যাপারটা মোটেও কিন্তু তা না। 'রাজ' শব্দটা রাজ্যের মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সৃষ্টি করেছে নতুন নীতি তথা 'রাজনীতি'। ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে যেমন পরিবারের প্রতিটা মানুষ ধর্মনীতিতে দীক্ষিত হয়ে উঠে। ঠিক তেমনি রাজ্যে বসবাস করা প্রতিটা প্রজার জন্য সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের প্রেক্ষিতে রাজনীতির সূচনা ঘটে। কিন্তু যুগে যুগে রাজ্য বিলুপ্ত হলেও রাজনীতির চর্চা আজো ধুমধামের সাথে মাতিয়ে চলে। যেটা হয় তীব্র রূপে! প্রবল আন্দোলনের উল্লাসে! দেশ পরিচালনায় যেমন সৎ, সমাজসেবক, ন্যায়নিষ্ঠ যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ লাগে। তেমনি লাগে আগামীর জন্য নতুন এক নেতামুখ। আজকের ছাত্রসমাজ আগামীর সেই নতুন নেতায় পরিণত হওয়ার জন্য তীব্রগতিতে রাজনীতি নামক অনিশ্চিত পথে নামে। সদ্য উজ্জীবিত টগবগে তরুণরা পরিবার ছেড়ে পড়াশোনার তাগিদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে যুক্ত হয় রাজনীতির বিভিন্ন অঙ্গ সংঠনে। নিজেকে যুক্ত করে দেশের মানুষের জন্যে কিছু করার তাগিদে। তাদের মনপ্রাণ উত্তেজিত হয় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রদর্শন করতে। সবার মধ্যে নিজেকে পরিচিত করার মতো সুপ্ত খায়েশ থাকে। যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে কম তবে ছেলেদের মধ্যে দেখা যায় বড্ড বেশি। ছেলেরা সবার কাছে সমাদৃত হতে চায়, পরিচিত মুখ হাতে চায়, মানুষ তাদের এক নামে চিনুক তা যেনো খুব বেশি করেই চায়। তা যদি হয় রাজনীতি! তাহলে তো কথাই নেই। গরম রক্তে উত্তেজিত মানসিকতায় ঝেপে পরে। নিজেকে বিনিয়োগ করে দীর্ঘ মায়াজাল রাজনীতিতে।
.
- মিস পূর্ণতা, আপনি কি জানেন আপনার হ্যালুয়েশনের কারনে মেন্টালি দিক থেকে কেমন ক্ষতি হচ্ছে?
- না।
- বেশ, তাহলে শুনুন। আপনি মিষ্টার আয়াশ ওয়াসিফ পূর্ব নামে একটা ছেলেকে নিয়ে দিনরাত যে ডুবে থাকেন এতে আপনি দিনদিন মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ঝুকে পরছেন।
- ওহ্। পূর্ণতার কোনো ভাবাবেগ নেই। স্বাভাবিক উত্তর।
- এভাবে যদি চলতে থাকে আপনি মাইন্ডে কোনো স্মৃতি ক্যাপচার করতে পারবেন না। ইউ ক্যা স্যা, লস অফ মেমোরি।
- তবুও মরবো না? ব্রেন স্টোক হবেনা?
সামনে বসা ডাক্তার বেশ বিষ্মিত হয়ে যায় পূর্ণতার উদ্ভট কথায়। এই মিষ্টি চেহারার মেয়েটা মরার চিন্তা করছে? মাই গড! কি ডেডফুল সিচুয়েশান! ডাক্তার টেবিল থেকে চশমা নিয়ে চোখে এটে দুহাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় টেবিলে রাখল।
- মিস পূর্ণতা প্লিজ নিজের জন্য না হলেও আপনার ফ্রেন্ডগুলোর কথা চিন্তা করুন। আপনার জন্য ওরা আমার পায়ে ধরে তাৎক্ষণিক এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে। আমি কখনো সিরিয়াল ছাড়া রোগী দেখিনা, বাট আপনার জন্য আমি আমার প্রোফেশনাল লাইফে এই প্রথম রুলস ব্রেক করলাম। জাস্ট আপনার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে। বুঝছেন?
- আমি ওদের বারন করেছিলাম এখানে আনতে। ওরা শুনেনি।
- ওরা আপনার সিচুয়েশন টলারেট করতে পারছেনা মিস। প্লিজ নিজেকে প্রোপার করুন, একতরফা ফিলিংয়ের জন্য নিজেকে শেষ করবেন না। আগে রিলেশন ছিলো আপনার?
- ছিলো। কিন্তু তার জন্য আমার অনুভূতি এখন নেই।
- এটা লাভ না। একতরফা ফিলিং।
- ওটা একতরফা ছিলো না। উনি প্রথম ঝুকেছেন। আমি তো পরে...
- মেবি উনার দিক থেকে সাময়িক মোহ ছিলো। যেটা আপনার ক্ষেত্রে একটু একটু করে বিপদজ্জনক ফিলিংয়ে কনভার্ট হয়েছে। আপনার জন্য বেটার এটাই হবে তাকে ভুলে যান। লাইফে নিজের থট ক্লিয়ার রেখে এগিয়ে যান। এই নশ্বর পৃথিবীতে একা এসেছেন, একাই আপনাকে ফিরে যেতে হবে। সেখানে এই অপ্রীতিকর যন্ত্রণা পুষে নিজের ক্ষতি করবেন না।
- আপনাকে একটা প্রশ্ন করি ডক্টর?
- অফকোর্স, কন্টিনিউ।
- ধরুন, আপনার ও আমার অচেনা অজানা একটা প্লেসে সামনাসামনি দেখা হয়েছে। প্লিজ নোট ইট..আমি খুবই জখম এবং সেন্সলেস। আর আপনি গাড়ি দিয়ে আপনার কাজিনদের সাথে একটা ট্রাজেডি ঠেকাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে আপনি সবকিছু ভুলে আমাকে তুলে এনে সেবা করলেন। আপনার কাজিনরা সেটা একদম সহ্য করতে পারছে না। এখানে আপনি কি করবেন? মানে মেয়েটার জন্য কি করতেন জানতে চাচ্ছি।
- ওয়েল আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি বলবো, আপনাকে হসপিটালে পাঠিয়ে সেখানে নার্সকে বলে কিছু টাকা রেখে চলে আসতাম।
- এটুকুই করতেন? আর কোনো সাহায্য করতেন না?
- আমার কাজিনরা যদি আপনাকে নিয়ে অকয়ার্ড ফিল করে আমি অবশ্যই আপনাকে বেশিক্ষন রাখতে দায়বদ্ধ হবো না। তবে হিউমেনিটির জন্যে আপনার সেন্স ফিরার আগ পযর্ন্ত ওয়েট করতাম। দ্যান সেন্স ফিরলেই আমার রিসপন্সিব্লিটি শেষ।
ডক্টরের কথা শেষ হতেই পূর্ণতা খিলখিল করে হেসে দিলো। ডক্টর ভ্যাবাচেকা খেয়ে কৌতুহল দৃষ্টিতে চোখ থেকে চশমা খুলে টেবিলে রাখল। পূর্ণতা মুখে হাত চেপে হাসি থামাতেই বলে উঠলো,
- সরি সরি...আসলে আপনার কথা শুনে আমার কেন যে হাসি পেল জানিনা। কিন্তু আপনি জানেন? পূর্ব উনার সব কাজিনকে সামনে রেখে আমার সেবা করেছে। ইভেন, উনার কাজিনরা আমার পায়ে ব্যথা দিয়ে গাড়ি থেকে একটা রাস্তায় ফেলেছিলো। আমি তখনও খুব অসুস্থ ছিলাম। কথাই বলতে পারতাম না। বাট উনি কিভাবে যে আমায় খুজে পেলেন আদৌ জানিনা। আমাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে উনি মাঝেমাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন। শুধু দেখাই করতেন। ওরকম বদ মতলব, আমি উনার কাছ থেকে কখনো ফিল করিনি। এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিবেন?
ডক্টরের মুখে অদৃশ্য তালা লেগে গেলো। যাকে একতরফা বলে গলা হাকিয়ে উনি লেকচার দিচ্ছেন সেটা কি আসলেই একতরফা? উত্তর পেলেন - 'না, একতরফা না।' ডক্টর টেবিল থেকে লম্বা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস তুলে পুরোটা পানি খেয়ে ঠোট মুছে বললেন,
- আপনার তথাকথিত মিষ্টার কোথায়?
- জানা নেই। আপনি কিন্তু উত্তরটা দেননি আঙ্কেল।
- আন্সার দেওয়ার মতো ওয়ার্ড মিলাতে পারছিনা মিস। গোজামিল কেস আপনার ঘটনাটা। একদিকে মনেহচ্ছে সে আপনার প্রতি উইক! আবার আপনার এই নাজুক সিচুয়েশন দেখে মনে হয় একতরফা!আপনাকে কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি। এ্যান্জাইটির মেডিসিন। অতিরিক্ত উদ্বেগ সমস্যা কিছুটা কমাবে।
পূর্ণতা ডক্টরের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন স্লিপ নিয়ে বেরিয়ে আসে। শ্রেয়া ও রাজিব চুপচাপ করিডোরে পায়চারি করছিলো পূর্ণতাকে দেখে ওরা এগিয়ে গেলো। পূর্ণতা ম্লান দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফ্লোরে নিক্ষেপ করে হাটতে লাগলো। রাজিব ফস করে ওর হাত থেকে স্লিপটা নিয়ে পকেটে পুরে চলে এলো ওর বাসায়। পূর্ণতার মা আজ হসপিটালে না গিয়ে বাসায় বসে টিভি দেখছেন। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলে উনি টিভির রুম থেকে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে দরজা খুলতেই দেখেন পূর্ণতা ও তার ফ্রেন্ডরা। পূর্ণতার মা খোদেজা কবির পূর্ণতার উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,
- কই গিয়েছিলি?
- মরতে। পূর্ণতার বির্মষ গলায় জবাব।
এই উত্তর শুনে শ্রেয়াদের সামনেই ঠাস করে চড় মারলেন খোদেজা। মেয়ের ত্যাড়া উত্তর শুনলে উনি রাগ দমিয়ে চলতে পারেন না! হাত উঠিয়ে নয়তো কাঠের মোটা স্কেলে কয়েক ঘা মেরে দেন তৎক্ষণাৎ। পূর্ণতা চোখ নিচু করে অশ্রু ছেড়ে দিলে শ্রেয়া ওকে আগলে ধরে বলে উঠে,
- আন্টি আপনি ওকে মারলেন কেন? ও তো অসুস্থ আন্টি!!
খোদেজার কড়া গলায় উত্তর,
- শারীরিক অসুস্থ হলে কক্ষনো মারতাম না! কিন্তু পাগলামিপূর্ণ অসুস্থতার জন্য আমি মারতে বাধ্য হবো! ভেতরে আসো তোমরা। রাজিব, আসো।
'ডিপ্রেশন' শব্দটা ভয়ংকর ঘাতক! একটা মানুষের চেতনাশক্তিকে খুন করতেও সক্ষম! পূর্ণতা ডিপ্রেশনভুক্ত রোগী ছিলো এবং উদ্বেগপূর্ণ সমস্যায় জর্জরিত ছিলো। গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্বে পূর্ণতাদের মতো রোগীর সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। যেখানে দিনদিন ভূতুড়ে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সংখ্যা। প্রায় ৬০% মানুষ চিকিৎসা গ্রহন করেও ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণ পায় না। অনেকে ডিপ্রেশ্ড হয়ে বেছে নেয় মৃত্যুর পথ। হতাশা, যন্ত্রণা, অবহেলা থেকে জন্ম নেয় 'ডিপ্রেশন নামক নিরবখুনি'।আচ্ছা? যারা আমাদের আশেপাশে হাসছে তারা কি প্রকৃতপক্ষে খুশি আছে? না নেই। একবার তাদেরকে নিরিবিলি পরিবেশে এনে জিজ্ঞেস করে দেখুন। জানতে পারবেন, একটা হাসিখুশি মানুষের মধ্যেও আছে ডিপ্রেশনের আহাজারি। আসলে, 'হাসিখুশি মানুষরা সবচেয়ে বেশি মুখোশধারী'। কেউ না মানলেও আমি মানি।
- শ্রেয়া, রাজিব? চা খাবি?
- আমি লং চা খাবো। রাজিব তুই বল,
- আমি কিছু খাবো না রে।
নূরানী চায়ের আদেশ পেয়ে চলে যেতেই রাজিব, শ্রেয়া ও পূর্ণতা বিছানায় গোল হয়ে বসে। পূর্ণতা চোখ নিচু করে আছে। শ্রেয়া ফোন নিয়ে চ্যাটের মাধ্যমে আয়মানের কাছে সব ঘটনা জানিয়ে দিচ্ছে। রাজিব সারারাত ঘুমায়নি। পূর্বের বিষয় নিয়ে খুবই চান্ঞ্চল্যকর একটা তথ্য পেয়েছে যা এখন বলার জন্য আকুপাকু করছে রাজিব। হাতে হাত ডলে ঠোট কামড়ে উশখুশ করছে।
শ্রেয়া ফোন হাতে ব্যাপারটা আড়চোখে লক্ষ করতেই বলে উঠে,
- রাজিব তুই ঠিক আছিস? সাপের মতো মোচড়াচ্ছিস কেন?
- ধুর! তুই আর উদাহরন পাস না?
- এক চড় মেরে বত্রিশ দাঁতের মাড়ি ফোকলা দিবো! কি নিয়ে কুইকুই করছিস খুলে বল। লুকাবি! তো খাবি চড়!
রাজিব ঠোট ভিজিয়ে গলা ঝেড়ে পূর্ণতার দিকে একবার তাকিয়ে শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
- আমি পূর্বের ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছি দোস্ত। বলবো?
পূর্ণতা দৃষ্টি তুলে রাজিবের দিকে সহায় হয়। শ্রেয়া কোল থেকে বালিশ ফেলে চেচিয়ে বলে উঠে,
- কি জেনেছিস! তাড়াতাড়ি বল!!
- পূর্ব নাস্তিক। ও বামপন্থীর লোক ছিলো। ধর্মে টর্মে বিশ্বাস করেনা। এখন যাদের সাথে পলিটিক্স করছে তারা ভালো না।
পূর্ণতার চোখ স্থির হয়ে গেছে রাজিবের কথা শুনে! 'নাস্তিক'? কি বলে!! শ্রেয়া দুহাতের তালুতে ঠোঁট ঢেকে অক্ষিগোলক বিশাল করে তাকিয়ে আছে। রাজিব ওদের থমথমের অবস্থা দেখে ঢোক গিলে আবার বলে উঠলো,
- পূর্বের প্রচুর শত্রু! সেদিন যে আমরা মার খেয়েছি ওরা পূর্বের দলের লোক ছিলো না।
- মানে!, পূর্ণতার জোরালো গলায় চিৎকার!
- মানে খুব স্পষ্ট। পূর্ব তোকে বাঁচানোর জন্যই সেদিন তোকে চিনার চেষ্টা করেনি। মনে আছে? ওইযে মেয়েদের মতো কানে দুল! খয়েরী রঙের শার্ট পড়ুয়া একটা ছেলে এসেছিলো? ওরা যাচাই করতে এসেছিলো দোস্ত! তুই যদি একবার বলতি তুই পূর্বকে ভালোকরে চিনিস! মেবি আজ তুই আমাদের সামনে থাকতি না। পূর্ব ইনডাইরেক্টলি তোকে বাঁচাচ্ছে!
.
.
.
চলবে......................................