সেদিন বেলা বিভান ইকরাম রাহমান আর জুলেখা বানু ইমতিয়াজদের বাসায় চলে যান।সেখানে ইদ্রিকে আংটি পরিয়ে আসে ওরা।এমনকি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসে।ঠিক হলো তিনদিন পর ছোট্ট অনুষ্ঠান করে ইদ্রি নিশাদের বিয়ে হবে কারন তারপরদিন রাত বেলা বিভানের ফ্লাইট।ঘরময় ভরে উঠে আমেজ।ঘরোয়া ভাবেই অনুষ্ঠান করা হবে তাই আর তেমন কাউকেই জানালোনা ওরা।শুধু নিশাদের নানু আর মামা মামীরা বিয়ের দিন আসবেন।সব ঠিক ঠাক করে হালকা নাস্তা সেড়ে বাসার পথে রওনা হয় ওরা। রাস্তায় ইকরাম রাহমানকে খোশমেজাজে মনে হচ্ছিলো।অন্তত বড় ছেলের বৌ তো ঘরে আসবে।ছেলেটাও ভালো থাকবে।আর ইদ্রিকে ও ওনার বেশ পছন্দ হয়েছে।মেয়েটা বেশ লক্ষী।জুলেখা বানু আর বাবাকে ইদ্রি কে নিয়ে গল্প করতে দেখে বেশ খুশি বেলা আর বিভান।মনে মনে দোয়া করছিলো সব ঠিক ঠাক মতো হয় যেন।বাসায় পৌছানোর পর সাঁঝ বেলাকে নিয়ে এলো রুমে।জানতে চাইতে শুরু করলো কি কি কথা হয়েছে?বেলা হাসি মুখেই সব বলছিলো আদনান আর সাঁঝকে।ওরা শুনে তো সেই খুশি।হঠাৎ বিভান এসে বেলাকে ডেকে নিয়ে গেলো।রুমে এনে বলল,
''সাঁঝ আর প্রিয়াশাকে নিয়ে শপিং করে আনো সবার জন্য।কাল সন্ধ্যায় নিশাদের হলুদ করে ফেলবো।সো রেডিমেড কিছু পেলে ভালো।"
বেলা মাথা ঝাঁকালো।বলল,
''ঠিক বলছো সেলাই করতে দিলে সপ্তাহ খানিকের আগে দিবেনা।"
বিভান বেলার হাতে টাকা দিয়ে বলল,
''দেখো এগুলো দিয়ে যা পারো করো।পরে আবার দিবো লাগলে।"
বেলা টাকা নিয়ে হাসি মুখে বেরিয়ে আসতেই ইকরাম রাহমান থামালো ওকে।তারপর হাতে দশহাজার টাকা দিয়ে বলল,
''কিছু জমাইছিলাম।এর থেকে কিছু নিয়া যা। যা লাগে খরচ করিছ।"
বেলা বলল,
''আব্বা আপনার জামাই দিছে।"
ইকরাম রাহমান মেয়েকে থামিয়ে বললেন,
''এইহানে আইওনের ফর থেকা পোলাডার খরচ হইছে অনেক।ভবিষ্যতের লাইগা কিছু রাখ মা।জামাইর টাকা খরচ করিস না বেশি।"
বেলা বাবার টাকা নিয়ে বলল,
''এখন তো ওনি ওদের জন্য খরচ করতেছে।সমস্যা হবেনা আব্বা।"
''আইচ্ছা এহন যা।মার্কেট বন্ধ হইয়া যাইবো।"
সেদিন ওরা বেশ কিছু শপিং করে আনে।ইদ্রির হলুদের জন্য একটা লেহেঙ্গা ডালা বাট সব সম্পূর্ণ হয়নি।সেদিন রাতে ইমতিয়াজ জানায় ও আর সৈয়দাবানু এসে নিশাদকে আংটি পরিয়ে যাবে।
রাতে সবাই গল্প করছিলো একসাথে।নিশাদ বেলাকে ডেকে বলল,
''আপা ইমতিয়াজ বলল পুলিশ তিনজনকে পেয়েছে।তবে ওরা সেদিন রাতে ছিলো নাকি তা নিয়ে পুলিশ দ্বিধাগ্রস্ত।এখন কিছু ছবি আছে ইমতিয়াজ দিলো আমাকে।হুমায়রাকে জিজ্ঞেস কর সেদিন রাতে ওরা কেউ ছিলো কিনা।"
কথা বলার সময় নিশাদের গলা কাঁপছিলো।ফোনটা ধরে বেলার সামনে।
বেলা অবাক চোখে নিশাদের ফোনের দিকে তাকায়।তারপর ফোনটা কাঁপা হাতে নিয়ে বলল,
''আসছি আমি।"
বলে রুমে এলো বেলা সাঁঝকে সাথে নিয়ে।হুমায়রা বসে পড়া শুনা করছে আর পূর্না ওর কোলে বসে ফোনে কি যেন দেখছে।বেলা আর সাঁঝ বোনের পাশে এসে বসতেই হুমায়রা স্মীত হেসে বোনের দিকে তাকায়।বেলা বলল,
''ওকে নিয়ে বসে আছিস। তোর ডিস্টার্ব হচ্ছেনা?"
হুমায়রা মাথা নাড়লো।বলল,
''না আপা একদম না।কিছু বলবি?"
সাঁঝ কিছুক্ষন চুপ থেকে পূর্নাকে বলল,
''আম্মু তুমি একটু বাহিরে যাও।খালামনির সাথে কথা বলবো।"
পূর্না অবাক হয়ে বলল,
''কি বব্বে কালামনি?"
বেলা বলল,
''কথা আছে।তুমি যাও মা।ওখানে নানু মামারা আছে।যাও তুমি।"
পূর্না নেমে চলে গেলো রুম থেকে।বেলা ফোনে ছবি গুলো বের করে হুমায়রা কে বলল,
''সেদিন রাতে কয়জন এসেছিলো।তোর মনে আছে?"
হুমায়রা ভয় পেয়ে বোনদের দিকে তাকায়।সাঁঝ বলল,
''দেখ ভয়ের কিছু নেই।তুই বললে ওদের ধরতে সহজ হবে।আর কঠিন শাস্তি হবে ওদের।"
হুমায়রার চোখে পানি।কাঁপা কন্ঠে বলল,
''তিনজন।"
বেলা হাতের ফোনটা হুমায়রার দিকে ধরে বলল,
''দেখতো ওরা কিনা?"
হুমায়রা ছবির দিকে তাকায়।ওর মনে পড়ে যায় সেই রাতের কথা।ওদের অট্টহাসি ওর আর্তনাদ।কানের সামনে এখন ও বাজছে।হুমায়রা কেঁদে ফেললো।বলতে লাগলো,
''হ্যা ওরা তিনজনই ছিলো।"
সাঁঝ বলল,
''ঠিক করে দেখ।ওরাই কিনা?"
হুমায়রা ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল,
''হ্যা।"
বেলা আর সাঁঝ দুজনে মিলে হুমায়রাকে জড়িয়ে ধরে।কারন ও কাঁদছিলো খুব।সেরাতটা পেরিয়ে যায়।সকাল হয়ে আসে।বেলা সাঁঝ আর প্রিয়াশা কাজ করছে।সাইমন চলে এসেছে সকাল সকাল।বিকেলে রান্না বান্না শুরু হবে।তবে ওরা নিজেরাই ইমতিয়াজ আর জর মায়ের জন্য রান্না করবে।নাস্তার পর সকাল এগারোটায় ইমতিয়াজ আর সৈয়দা বানু চলে আসেন।বেশ ক্লান্ত আর অসুস্থ দেখাচ্ছে ওনাকে।বেলাআর সাঁঝ ওনাকে এনে বসায়।নিশাদ বাজারে গেছে কিছু কেনা কাটা করতে চলে আসবে।ইমতিয়াজ সাইমন বিভান আদনান আর ইকরাম রাহমানের সাথে গল্প করছে।কুঞ্জন ও দোকানে।লাবনীকে বেশ খুশি লাগছে।সকাল সকাল গোসল করে এখন সাজছে।সবাই একটু করে রেডি হয়েছে।প্রিয়াশা আর বেলা শাড়ী পরেছে সাথে সাঁঝ ও।আধঘন্টা পর নিশাদ চলে আসে বাজার থেকে।ওকে দেখে ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''তোকে আংটি পরাতে এলাম আর তুই বাজার করছিস?কেমন জামাই তুই?"
নিশাদ অবাক হয়ে বলল,
''কেন জামাইরা বাজার করতে পারেনা?"
ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''পারে তো।"
নিশাদ একটু হেসে বলল,
''আমি রেডি হয়ে আসছি।তুই বোস......"
নিশাদ রুমে চলে গেলো।
বিভান উঠে দাঁড়ালো।বলল,
''তোমরা বসো আমি ডেকে আনি।"
বলেই বেরিয়ে আসে বিভান।চলে গেলো বেলাদের রুমে।সৈয়দা বানু ওদের সাথে গল্প জুড়েছেন।বিভান হেসে বলল,
''বেলা নিশাদ চলে এসেছে।আসো তোমরা।আন্টি চলে আসেন।ওরা ড্রয়িংরুমে আছে।"
সৈয়দা বানু হেসে বললেন,
''আচ্ছা।আসতেছি বেলা সাঁঝ হুমায়রা লাবনী চলো।"
বেলা আর সাঁঝ ওনাকে দাঁড় করালো।ওরা ড্রয়িংরুমে চলে এলো।সাঁঝ আজ নীল রং এর একটি সিল্কের শাড়ী পরেছে।আজ দুজনের হৃদয়ে ঝঙ্কার তুলল ওর এই রুপ।এক ওর স্বামী আর ইমতিয়াজ।কিছুসময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলো ইমতিয়াজ।সৈয়দা বানু ওর পাশে বসতেই চোখ সরিয়ে নেয় ও।পূর্না বিভানের কোলে বসা ছিলো।বেলা ওকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,
''এখানে এসো।ওরা কাজ করবে এখন।"
পূর্না অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
''কি কাজ মা?"
বেলা বলল,
''দেখো তুমি।"
নিশাদ নীল পাঞ্জাবী পরে আসে।তারপর ইমতিয়াজ আর সৈয়দা বানুর মাঝে এসে বসে।
ইমতিয়াজ সৈয়দা বানুর হাতে আংটির বক্স তুলে দিলো।সৈয়দা বানু আংটি নিয়ে নিশাদের হাতে পরিয়ে দেয়।সাথে সাথে সবসই হাত তালি দিতে শুরু করে।সৈয়দা বানু নিশাদের হাত ধরে কেঁদে বললেন,
''বাবা আগে ছিলা আমার ইমতিয়াজের বন্ধ এখন আমার ছেলে।আমার একটাই আবদার বাবা।বাপ মরা মেয়েটাকে ভালো রাইখো।আর কিছু্ লাগবেনা আমার।"
নিশাদ ওনার হাত ধরে বলল,
''একদম চিন্তা করবেননা আন্টি ওকে কখনো কষ্ট দিবোনা। আপনাদের অভাব ওকে আঁচ করতে দিবোনা।"
নিশাদের কথায় সৈয়দা বানুর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।কুঞ্জন ছবি তোলায় ব্যাস্ত।সবার ছবি তুলে দিচ্ছিলো।একসময় সাইমন দাঁড়িয়ে ওদের সাত ভাইবোনের ছবি তুলে দেয় মা বাবা সহ।এংগেজমেন্টের পর সবাই আবার ও গল্পে মেতে উঠে।সেদিন দুপুরে খেয়ে দেয়ে ওরা বেরিয়ে যায়।আজ ইমতিয়াজরা ডালা নিয়ে এসেছিলো।সেখানে ছিলো নিশাদের হলুদ আর বিয়ের পাঞ্জাবী হলুদ আর যাবতীয় জিনিস পত্র।আজ রাতে নিশাদের হলুদ।বেলারা দুপুরের কাজ শেষে বেরিয়ে যায় শপিং এর জন্য।ইদ্রির জন্য লেহেঙ্গা কেনা হবে।নিশাদ অবশ্যই কিছু টাকা দিয়েছে। আদনান দিতে চেয়েছিলো কিন্তু ওরা নেয়নি কারন জব নেই ওর।এমনকি এনজিও এর কাজ শুরু হয়ে গেছে।বেলা সাঁঝ প্রিয়াশা হুমায়রা শপিং এ এসেছে।হুমায়রাও আসতে রাজিই ছিলো।বেলাও চাইছিলো বের হোক হুমায়রা ওর তাহলে ভালো লাগবে।সারাদিন ঘুরে ঘুরে কিছু শপিং করে নেয় ওরা।ইদ্রির বিয়ের লেহেঙ্গা কেনা হয়ে গেছে।একদম লাল টুকটুকে একটি লেহেঙ্গা কিনেছে ওরা।
সন্ধ্যার শুরুতেই মামা মামী নানু আর চাচী চলে এসেছেন।রাফসান আর ইস্মিতা আসেনি।অবশ্য ওরা আসুক সেটা কেউই চায়না।ওরা চায়না এমন কেউ এসে পরিবেশ নষ্ট করুক।বাহির থেকে কিছু খাবার কিনে আনা হবে সাথে বাসায় ও রান্না করা হচ্ছে।এরই মাঝে ভূবন কাব্য কল্যান ফারহান ওরা ও চলে এসেছে।পুরো বাড়িটা সরগরম হয়ে এসেছে।বন্ধুরা এসেই নিশাদকে রেডি করাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।আর বেলা সাঁঝ রান্নায় এখনো ব্যাস্ত সাথে প্রিয়াশাও।রান্নার সুঘ্রান পুরো বাড়িতে আটকে গেছে। আর ছোট্ট পূর্না অবাক দৃষ্টিতে চারিদিক দেখছে।ইমতিয়াজ ও এসেই নিশাদের রুমে চলে গেলো।
!!!!!
গতদুদিন যাবৎ চোখে এক ফোঁটা ঘুম ও নেই ইদ্রির।বুকভরা একরাশ চিন্তা, ভয়, ভালো লাগা বলতে গেলে এক মিশ্র অনুভূতি খেলে যাচ্ছে।একদমই ঘুম হচ্ছেনা।নিশাদের সাথে নতুন পরিচয় নয়।সম্প্রকের ছয়মাস হতে চলল।তারপরও এমন অদ্ভুত অনুভূতি। যেন লোকটা একদম নতুন ওর জন্য।খুব দ্রুতই লোকটা তার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাবে।তার হয়ে যাবে সম্পূর্ণ ভাবে।ভাবতেই লজ্জায় মাথা মত হয়ে গেলো ইদ্রির।সে সত্যিই এবার সেই বাড়ির বড় বৌ হবে।তার অনেক বড় পরিবার হবে।বাবা থাকবে মা থাকবে আর বড় বোন আর কতোগুলো ভাই।আর সবচেয়ে ভালবাসার মানুষটা।লোকটা ওর বর হবে আর ও হবে তার বৌ।তাদের একটা সংসার হবে ছোট্ট একটা নিশাদ আসবে।ওকে আম্মু বলবে আর ওনাকে আব্বু।ইদ্রি উঠে বসে।হয়ত অল্পকয়টা দিন এ বাসায়।তারপর রংধনু নিবাস হবে ওর স্থায়ী ঠিকানা।লোকটার বুক হবে ওর বালিশ সেখানে মাথা রেখে ঘুমাবে ও।লোকটা ওকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে ওর ঘুম ভাঙ্গাবে।তবে ঘর ছাড়ার কথা ভাবতেই বুকটা কেমন করে উঠে ওর।এতবছর পর ভাই আর মাকে পেয়েছে আবার ও হারাবে।কেন মেয়েদের পর হতে হয় বাবা মায়ের?বড় বৌ মানে শুধু বৌ হওয়াই নয় অনেক দায়িত্বের ভান্ডার। অনেক কিছু দেখে শুনে সামলে রাখতে হয়।দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইদ্রি।ও কি পারবে এত দায়িত্ব পালন করতে?ও কি পারবে সবাই কে আপন করে নিতে?ভাবতেই আশ্চর্যরকম ভয় লাগতে থাকে ইদ্রির।বিছানায় রাখা ফোনটার দিকে তাকায় ইদ্রি।সেটিকে হাতে নিয়ে কল দেয় নিশাদের নম্বরে।সে কি ঘুমিয়েছে?ওর তো একটু ঘুম ও হচ্ছেনা।সারাদিন শপিংমল ঘুরাঘুরি করেছে ভাইয়ের সাথে।পা টাও কেমন ব্যাথা করছে।রিং হচ্ছে তার নম্বর।ইদ্রি অপেক্ষা করছে তার কন্ঠস্বর শোনার।ফোন রিসিভ হতেই শুনতে পেলো হৈ হুল্লোড়।নিশাদ কল ধরেই বলল,
"'সামনে সবাই আছে।পরে কল দিচ্ছি।"
বলেই কল কেঁটে দেয়।ইদ্রি ফোনটা রেখে বারান্দায় এসে বসে।আধঘন্টা পর কল আসে ওর নম্বরে।ইদ্রি ফোন নিয়ে দেখলো নিশাদ কল করছে।ইদ্রি কল রিসিভ করতেই নিশাদ বলল,
''বলো।"
ইদ্রি ভ্রু কুঁচকালো। বলল,
''এটা কেমন কথা?ফোন করেই বলো। "
নিশাদ মৃদু হেসে বলল,
''কি বলবো?"
ইদ্রি কি যেন ভেবে লাজুক মুখে বলল,
''এই আপনার অনুভূতি!!!"
''সেটা বলে বুঝাতে পারবোনা।শুধু দোয়া করছি সবটা ঠিক মতো হয়ে যাক।তারপর তুমি বাসায় আসবে আব্বা আম্মার বড় বৌ মা হয়ে আমার বৌ হয়ে আর..........."
নিশাদকে থামিয়ে দেয়।ওর ভীষন লজ্জা লাগছে শুনতে।কেন যেন এসব ভাবতেই বুক কাঁপছে।ইস এমন অনুভূতি আগে তো হয়নি।ইদ্রি বলল,
''হয়েছে।আর বলবেননা..."
''কেন?"
''এমনি।অন্য কিছু বলুন।"
নিশাদ শোয়া থেকে উঠে বসে।সারাদিনের কাজে বেশ ক্লান্ত ও। তারওপর হলুদে বন্ধুরা এসে খুব হাসাহাসি করলো তারওপর অনেকেই আসলো বাসায়।সবার সাথে ছবি তোলা থেকে শুরু করে কখনো মিষ্টি খাওয়া আবার কখনো ঝাল।একদম ক্লান্ত লাগছে।অপেক্ষা করছিলো কখন নিজ বিছানায় গিয়ে শুতে পারবে ও?ইমতিয়াজ ও বেশি সময় হলোনা বেরিয়েছে।বড় দুলাভাই ওর সাথে কথা বলছিলো।নিশাদকে সেখানে বসে থাকতে হয়েছে।ওর মনে হঠাৎ ভাবনা এলো ইদ্রি খুব আদুরে বড় হয়েছে।কোন কমতিই ছিলোনা ওর জীবনে।সবারই স্বপ্ন থাকে বিয়েটায় নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আনন্দ করবে সাজবে।খুব ধুমধাম করে বিয়ে করবে।কিন্তু ওদের বিয়েটাতো খুব সাধারন ভাবে হচ্ছে।ইদ্রির মন ভীষন খারাপ থাকবে।হয়ত অনেক কিছু চেয়ে ও বলবেনা।কষ্টটা বুকে জমানোই থেকে যাবে হয়ত।নিশাদ যদি ইদ্রির থেকে জেনে নিতে পারে তাহলে ভালোই হয়।অন্তত কিছুটা হলে ও কষ্ট কমবে।কারন বিয়ে তো জীবনে একবারই হয়।নিশাদ কিছুটা ভেবে বলল,
''দেখো আমি জানি তোমার হয়ত বিয়ে নিয়ে অনেক প্ল্যান ছিলো।থাকাটাই স্বাভাবিক সবারই থাকে।কিন্তু বুঝোতো আপারা চলে যাবে।তাই তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।তোমার কোন ইচ্ছা আছে?বলো আমাকে।পূরন করার যথাসাধ্য চেষ্টা আমি করবো।।"
ইদ্রির চোখ ভরে আসে।গলা ধরে আসতে থাকে।বলল,
''কি বলেন?যা হচ্ছে আমার কাছে সম্পূর্ণ লাগছে কোন কমতি না।সবার ইচ্ছে থাকে আমার ও ছিলো।কিন্তু এটা ও ইচ্ছা ছিলো যাকে বিয়ে করবো সে আমাকে সবচেয়ে ভালবাসবে।আপনাকে পেয়ে আমি খুশি।আর অভিযোগ নেই আমার সত্যি.... "
নিশাদ কিছু বলতে পারেনা।চোখের কোনা ভরে আসে। বাকি রাতটা কেঁটে গেলো ভালোবাসায় পূর্ন আলাপচারিতায়।দুজনেই হেসে উঠছিলো মাঝে মাঝে আবার মগ্ন হয়ে শুনছিলো অপরপাশে থাকা প্রিয় মানুষটির কন্ঠ।এদিকে বেলা শুয়ে এপাশওপাশ করছে।বারবার ভাবছে ভাইটার ও বিয়ে হয়ে যাবে। নিশাদকে ভালবাসবে খুব কেউ আসবে ওর জীবনে।কতোটা পরিবর্তন হবে ওর জীবনটা।দায়িত্ব বাড়বে।নিশাদের বিয়ের কথায় নিজের সময় গুলো কে ভাবতে থাকে বেলা।যখন বিভানের সাথে বিয়ে হয়েছিলো জীবনটা কতো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো।সম্পর্ক বেড়েছে। ও বৌ হয়েছে হয়েছে স্ত্রী তারপর মা।হঠাৎ বেলার ফোনে মেসেজ আসে।বেলা ফোন চেক করে দেখলো বিভান মেসেজ করেছে।ও লিখেছে,
''বেলা বিয়ের পরবর্তী সময়গুলোর কথা খুব মনে পড়ছে তাইনা?"
বেলা বেশ অবাক।ওভাবছে বিভান ও একই ভাবে ভাবছিলো ওদের বিয়ের সময়ের কথাগুলো।বেলা উত্তর দিলো,
''হা খুব।আপনি ও ভাবছিলেন?"
''শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম এগুলো।তুমি ও বুঝি তাই ভাবছিলে?"
''হা কেন যেন সময় গুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।"
রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে এলো।রাত চারটা পর্যন্ত জেগে সকালে উঠে ইদ্রি।মাথা টা ভার হয়ে আছে ওর।একটাপাশ কেমন ব্যাথা করছে সাথে মাথাটাও ঘুরাচ্ছে।গোসল সেড়ে ডাইনিই টেবিলে এসে বসে ইদ্রি।সামনে মা নাস্তা করছেন।শরীর সুস্থ না হলে ও মনের দিক দিয়ে যে বেশ ফুরফুরে আছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে।আজ ওর হলুদ নতুন জীবনের আরেকটা ধাপ এগুবে আজ।সৈয়দা বানু ইদ্রিকে একপলক দেখে বললেন,
''তমা একটু পর আসবে।তোকে পার্লারে নিয়ে যাবে।ফেসিয়াল আর যা যা দরকার করে নিস।বিকেলে গেস্টরা আসবে........সময় নেই বেশি।"
কথা গুলো একনাগাড়ে বলে থামলেন সৈয়দা বানু।তারপর আবার বলতে লাগলেন,
''শোন জীবনটা পুরো বদলে যেতে চলেছে।তুই বদলে যাসনে।অনেক দায়িত্ব আসবে কাঁধে কষ্ট হলে ও পালন করার চেষ্টা করবি।নিশাদের আব্বা আম্মা ভীষন ভালো মানুষ তোকে খুব আদর করবেন।সেই আদরের সম্মান রাখার চেষ্টা করবি।তোর বাবা নাই তবে ভাই আছে কখনো নিজেকে দূর্বল ভাববিনা।ভাই কখনো ফেলে দেবেনা। আর সেখানে তুই বড় বৌ হলে ও বয়সে অনেক ছোট সবারই লাবনী ছাড়া।সবসময় খেয়াল রাখবি যেন তোর আচরনে কেউ কষ্ট না পায়।বিয়ের পর মেয়েদের অনেক কিছু বুঝতে হয় করতে হয়।তুই পারবি আমি জানি।"
কথাগুলো বলে শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছেন সৈয়দা বানু।হঠাৎ অনুভব করলেন তার ছোট মেয়েটাও তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।ইদ্রি ইতোমধ্যে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
কিছুক্ষন পর তমা আসলে ইদ্রি ওর সাথে পার্লারে চলে যায়।অনেক কাজ পার্লারে,সময় ও কম।
............................এদিকে নিশাদদের বাসায় বিয়ের তোড়জোড় বেশ ভালভাবেই চলছে।সবাই কাজে ব্যাস্ত।সাইমন ও আসা যাওয়ার মধ্যেই আছে।কিন্তু ছুটি পায়নি নিশাদ।বিয়ের আগের দিন টাও ঘরের কাজে হাত দিতে পারেনি।নিশ্চয়ই সবার ওপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে।তবে কিছু করার নেই নিশাদের।একদিকে ওর বিয়ে অপরদিকে হুমায়রার সেই কেস।হুমায়রা ওদের চেনার পর থেকে নাকি পুলিশ নিজেদের কাজ জোরে সোরে শুরু করেছে।তাদের মধ্যে একজন ছেলে হৃদয়। সে নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছে।তবে মনে হচ্ছেনা খুঁজতে বেশি পোহাতে হবে।ভেবেই কাজে মন দেয় নিশাদ।এদিকে বেলা সাঁঝ সকাল থেকে মার্কেটে দৌড়াচ্ছে। অনেক কিছু বাকি কিন্তু সময়টাই কম।দ্রুত কমপ্লিট করতে হবে।তারওপর ইন্ডিয়ায় যাওয়ার জন্য প্যাকিং শুরু করতে হবে।সব মিলিয়ে ওদের দম ফালানোর জায়গা নেই।
দুবোন মিলে এ দোকান ও দোকান খুঁজে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে থাকে।ইদ্রির জন্য কিছু স্বর্ন ও কিনে ফেলেছে।শপিং শেষ করে ঘড়ি দেখে বেলা।পাঁচটা বেজে গেছে নিশ্চয়ই আদনান আর কুঞ্জন ইদ্রির হলুদের জন্য বেরিয়ে গেছে।পূর্নাও বাসায় সেই সকাল থেকে প্রিয়াশার কাছে।সেজন্য বেলার তেমন চিন্তায় পড়তে হচ্ছেনা।