মিহির বর্ণের রাগ টাকে ভিষন ভয় পায় ৷ সেই ভয়ে মিহির চুপ করে বসে আছে ৷ মিহির জানে এখন কোন টু শব্দ করলে বর্ণ ওকে চলন্ত গাড়ি থেকে লাথি মেরে ফেলে দিতে পারে৷
পনেরো মিনিটের মাথায় বর্ণ আয়মান চৌধুরীর সামনে দারিয়ে আছে ৷ আয়মান চৌধুরী তার ছেলে কে দেখে চায়ের কাঁপ টেবিলের উপর রেখে বর্ণের দিকে তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল " কাজটা একদম ঠিক করোনি বর্ণ ৷ তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করেনি৷ "
"" ড্যাড তুমি কি বলতে চাইছো ? "
" আমি কি বলতে চাইছি তুমি সেটা খুব ভালো করে-ই জানো ৷ তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু-ই জানি না ৷ ভূলে যেওনা আমি তোমার বাবা তুমি নও ৷ তোমাকে একটা কথা-ই বলবো তুমি যা করছো ঠিক করছো না মেয়েটাকে তুমি আর কষ্ট দিও না ৷ এই ছোট্ট বয়সে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে তারপর সেই এক্সিডেন্ট ৷""
"" আই নো ড্যাড তুমি কি বলতে চাইছো আমি তা খুব ভালো করেই বুজতে পারছি বাট ড্যাড এবার আর আমি আমার ভালোবাসাকে আমার থেকে দূরে চলে যেতে দিবো না ৷ অনেক খোজার পর সে নিজে ধরা দিয়েছে আমার কাছে হোক সেটা কো-এন্সিডেন্স বাট এসেছে যখন তখন আর আমি ওকে ছাড়বো না ড্যাড"
"" কি করতে চাইছো তুমি?"
" বিয়ে..."
"" ওয়াট! বিয়ে! ""
"" ইয়েস ড্যাড বিকজ সি ইজ অনলি মাইন ৷"
" আমি তোমার সির্দ্ধান্তে কখনো বাধা দিবো না কিন্তু একটা কথা মনে রেখো মেয়েটা বড্ড দুঃখী মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দিয়ো না ৷ আর একটা কথা মেয়েটার চারিদিকে বিপদের জাল বিছিয়ে আছে তোমার একটা ভূল পদক্ষেপ মেয়েটার জীবনটা ওই জানোয়ার গুলো কেড়ে নিতে পারে সো বি কেয়ার ফুল""
"" ইয়েস ড্যাড , চার বছর আগে যে ভূল করেছিলাম আমি সেই ভূল এখন আর আমি করবো না ৷ শত্রুর শেষ আমি রাখবো না ৷ আমার টিয়াপাখিকে যারা যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের কে আমি ভয়ঙ্কর মৃত্যু দিবো ৷ ""
"" আমিও চাই তুমি ওদের ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেও ৷""
৯!!
ছন্দ আজ চুপচাপ নুডুলস খেয়ে যাচ্ছে ৷ ছন্দের বাবা মা ভাই ছন্দের এই চুপচাপ থাকা টা যেন মেনে নিতে পারছে না৷ গত তিন বছরে খুব কম হাতে গোনা ছন্দ কে এভাবে চুপ থাকতে দেখেছে সবাই ৷ ছন্দ সব সময় খুব হাসি খুশি থাকে ৷ ঠোটের কোনে হাসির রেখা সব সময় ফুটে থাকতো তবে আজ কি হলো?
"" ছন্দ মামুনি কি হয়েছে তোমার আজ এতো চুপচাপ কেন?""(সাব্বির আহাম্মেদ )
"" কিছু না আব্বু ""
"" ছন্দ সত্যি করে বল কি হয়েছে তোর কেউ কিছু বলেছে তোকে?""(কাব্য)
"" না ভাইয়া কেউ কিছু বলেনি ৷ তোমরা টেনশন করো না আমি ঠিক আছি৷" ছন্দ ঠোটের কোনে জোর পূর্বক হাসি টেনে টেবিল ছেড়ে উঠেগেল..
"" সাবু(সাব্বির) আমার মনে হয় ছন্দের কিছু একটা হয়েছে ৷ ওর চোখ মুখ দেখে আমার কিছু ভালো লাগছে না৷""
"" চিন্তা করো না কিয়ারা আমি খোজ খবর নিবো৷" (সাব্বির আহাম্মেদ )
" হু তাই করো ৷ কাব্য মেডেসিন গুলো এনেছিস?"
" হ্যা আম্মু তোমার রুমে রেখে এসেছি""
"" কিসের মেডেসিন কাব্য? "(রুনা)
"" বউমা আমাকে যে প্রতিদিন এতো এতো ঔষধ খেতে হয় জানো না? ""
"" স্যরি মা আমি বুজতে পারি নি"
"" হু যাও খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে রেস্ট নেও ""
"" জ্বি মা"
রুনা মন খারাপ ধিরে ধিরে উপরে নিজের রুমে চলে গেল৷ রুনা কে রুমে যেতে দেখে সবাই যেন সস্থির নিশ্বাস ফেললো৷
"" কাব্য খাওয়া শেষ করে আমার রুমে আয় ""
"" ওকে আম্মু..""
এদিকে ছন্দ রুমে ঢুকে একটা ছবি বুকে জরিয়ে ধরে অঝরে কাদতে লাগলো ৷
"" কেন কেন কেন এমনটা হলো আমার সাথে কেন বলো? সে দিন আমরা তো একি গাড়ি করে যাচ্ছিলাম তবে শুধু তুমি কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলে আমাকে সাথে কেন নিলে না সাদিক কেন ? আমি কি অপরাধ করেছিলাম যে বিয়ের রাতে আমাকে বিধবা হতে হলো কেন? আমার রঙিন জীবন টা ধুসূর সাদা কালো কেন হলো? সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের কটু কথা অলক্ষী অপয়া শুনতে হয়েছে কেন সাদিক? আমাকে কেন শুনতে হলো কেন সাদিক?""
কান্নায় ভেঙে পড়ে ছন্দ ৷ যে কান্না কারো কান অবদি পৌছায় না ৷ ছন্দ এখনো দু-চোখ বন্ধ করলে সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা ভেবে কেঁপে ওঠে....লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে সদ্য বিয়ে করা স্বামীর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ির যাওয়ার জন্য গাড়ি করে বেরিয়ে পরে কিন্তু মাঝপথে গাড়ি ব্রেকফেল করে অন্য গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে সেই এক্সিডেন্টে ছন্দ গাড়ি থেকে ছিটকে পরে আর গাড়িটা ব্রিজ থেকে নদীতে পড়ে যায়৷ ঘটনা স্থলে ছন্দ বাদে ড্রাইভার আর সাদিক দুজনে মারা যায়৷ এক্সিডেন্টের পর ছন্দ তিনমাস পর হসপিটাল থেকে রিলিজ হয়৷ তারপর শুরু হয় প্রতিবেশিদের কটু কথা ৷ সবটা সামলে উঠতে ছন্দের বেশ সময় লাগে ৷ ছন্দ আবার কলেজ যেতে শুরু করে এইচ এস সি পরীক্ষা দেয় ৷ খুব ভালো রেজাল্ট হয়না ছন্দের তবুও পাশ করে যায়৷
১০!!
দরজায় নক পরতে তারা হুরো করে ছন্দ ছবিটা বালিসের নিচে লুকিয়ে ফেলে ৷ দ্রুত চোখ মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে দরজা খুলে দেয়৷
"" ভাইয়া তুমি ?""
"" কেন আসতে পারি না"(কাব্য)
"" নাহ তা কেন এসো ভিতরে এসো"
কাব্য রুমে ঢুকে মেডেসিন বক্স বের করে তাতে কিছু মেডেসিন রেখে দেয় ৷ ছন্দ মেডেসিন গুলো দেখে কাব্য কে প্রশ্ন করে "" ভাইয়া আবার এনেছো এই মেডেসিন গুলো""(মুখ ফুলিয়ে)
"" আমি জানি আমার পুচকু বোনটির ঔষধ খেতে একদম পছন্দ করে না ৷ কিন্তু আমার বোনটি কে জানে এই ঔষধ না খেলে বোনটি অসুস্থ হয়ে পড়বে?""
"" হু জানে তোমার বনু এখন তোমার বনুর আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে""
"" তাই তাহলে তো বনুকে নিয়ে বের হতে হয়৷ ""
"" সত্যি ভাইয়া"" এক গাল হাসি নিয়ে..
কাব্য ছন্দের গাল টেনে দিয়ে বলে" রেডি হয়ে নে আমি ওয়ালেট নিয়ে আসছি ""
"" ওকে ভাইয়া যাস্ট দুমিনিট ৷ আমি রেডি হয়ে আসছি""
কাব্য ছন্দ কে নিয়ে বেরিয়ে পরে গলির মাথায় ভালো আইসক্রিম পার্লার থাকায় দুজনে হেটে চলে যায়৷
" বনু এখানে বস আমি তোর প্রিয় চকলেট আইসক্রিম নিয়ে আসছি ""
"" ওকে""
ছন্দ ফোন বের করে সেলফি তুলতে লাগলো ৷ অন্যদিকে ছন্দের মুখে হাসি দেখে অন্যকারোর হৃদয়ে শিতল হওয়া বয়ে যাচ্ছে ৷
"" টিয়া পাখি আর মাত্র কিছুদিন তারপর তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো ৷ তুমি আমার ভালোবাসার খাচায় বন্দি হবে৷ কিন্তু তার আগে তোমাকে সব পুরনো স্মৃতি মনে করতে হবে৷ যে স্মৃতিতে শুরু থেকে আমার বসবাস টিয়া পাখি""
.
.
"" এই নে তোর আইসক্রিম "
ছন্দ আইসক্রিম টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো কাব্য চুপচাপ ছন্দের বাচ্চাদের মতো আইসক্রিম খাওয়া দেখছে ৷
"" ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে আছো কেন বলোতো আমার পেট খারাপ করবে তো"" ছন্দের কথা শুনে কাব্য টিসু পেপার দিয়ে ছন্দের মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম মুছে দেয়৷""
"" পাগলি একটা .. বনু রাত অনেক হলো এখন বাড়ি ফেরা যাক ৷""
"" হামম বাট ভাইয়া আমার আরো চারটা আইসক্রিম চাই""
"" ওয়াট চারটা ! বনু তোর ঠান্ডা লেগে যাবে এতো গুলো খাওয়া যাবে না""
"" ওকে ফাইন তাহলে আমিও বাড়ি ফিরবো না""
"" ওকে ফাইন নিয়ে আসছি তোর আইসক্রিম .."" কাব্য টেবিল ছেড়ে উঠে যেতে একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে একগুচ্ছু কাটগোলাপ ছন্দের হাতে দিয়ে পালিয়ে যায়৷ ছন্দ ছেলেটাকে পিছুন থেকে ডেকেও কোন লাভ হয় না৷ কাটগোলাপ ছন্দের সব থেকে প্রিয় ফুল ৷ ফুল গুলো দেখে ছন্দ বাচ্চা ছেলেটার কথা নিমিশে ভূলে গেল৷ ফুল গুলো নাকের কাছে নিয়ে ছন্দ ফুলের ঘ্রান নেওয়ার চেষ্টা করছে ততোক্ষনে কাব্য এসে হাজির হয় ৷ কাব্য ছন্দের হাতে ফুল দেখে কাপাল কুচকে প্রশ্ন করে "" বনু এই ফুল কোথায় পেলি? "
"" কিছুক্ষন আগে একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে ফুল গুলো দিয়ে পালিয়ে গেল৷""
"" ওহ আচ্ছা , চল বাড়ি ফিরে যাওয়া যাক""(গম্ভির গলায়)
"" হুম""
কাব্য ছন্দে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বলে" বনু তুই ভিতরে যা আমার একটু কাজ আছে ৷ কাজটা সেরে আসছি""
"" আচ্ছা"" ছন্দ আইসক্রিম খেতে খেতে ভিতরে চলে যায়৷ কাব্য ছন্দ কে ভিতরে চলে যেতে দেখে কাব্য আবার ব্যাক করে আইসক্রিম পার্লারে আসে৷
দুর থেকে কেউ একজন কাব্য কে আবার ফিরে আসতে দেখে বলতে লাগলো" অনেক খেলেছো কাব্য এবার আমি তোমাদের সাথে গেম খেলবো ৷ গেট রেডি ফর দিস গেম কাব্য ৷ খুব তারাতারি তোরা তোদের পাপের শাস্তি পাবি ৷ ছাড়বো না আমি কাউকে ছাড়বো না ৷ "" ঠোটের কোনে রহস্যময় হাসি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো ...
১১!!
" স্যরি স্যার এটা আমাদের রুলস এর বাইরে এটা আমরা করতে পারবো না"" (ওয়েটার)
কাব্য পকেট থেকে টাকা বের করে ওয়েটারের সামনে রাখতে ওয়েটারে চোখ দুটো চক চক করে ওঠে..
"" তাই নাকি এবার ও কি রুলস এর বাইরে যাওয়া যাবে না?"বাকা হেসে বললো কাব্য...
"" স্যার ভিতরে আসুন ওখানে আজকের সব সি সি ক্যামেরার ফুটেজ পাবেন"" (ওয়েটার)
কাব্য ওয়েটারের পিছুন পিছুন গিয়ে ছোট্ট রুম টায় ঢুকে যায় ৷ কাব্য ল্যাপটপের সামনে বসে পনেরো মিনিটের আগের ভিডিও ফুটেজ দেখছে ৷ ওখানে সেই বাচ্চা ছেলেটাকে ছাড়া আর কাউ কে আশে পাশে দেখলো না ৷ কাব্য সিরিয়াস ভঙ্গিতে সেই বাচ্চাটিকে চেনার চেষ্টা করছে কিন্তু কাব্য ছেলেটিকে চিনতে পারেনি৷ বাধ্য হয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যায় কাব্য....
.
.
.
বর্ণ ড্রিং করছে আর একটা মেয়ের ছবি দেখছে ৷ তখনি বন্যা নক না করে বর্ণের রুমে প্রবেশ করে ৷ রুমে ঢুকে বর্ণের হাতে ছবিটা দেখে চমকে যায় বন্যা...
"" ভা,,ভাইয়া তোর হাতে ছন্দের ছবি কেন?""কাপা কাপা গলায় বললো বন্যা...
বন্যার গলা পেয়ে বর্ণ পিছুনে তাকিয়ে দেখে বন্যা অবাক চোখে ছন্দের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে... বর্ণের প্রচন্ড রাগ হলো কিন্তু তার কলিজর টুকরো বোনের উপর রাগ দেখাতে বর্ণ একদম নারাজ৷ বর্ণ ছন্দের ছবিটা একটা ফাইলের ভিতরে রেখে বন্যা কে বসছে ইশারা করলো বর্ণ ৷ বন্যা ভাইয়ের ইশারা বুজতে পেরে সামনে সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়ে ৷
"" তোর বেস্টফ্রেন্ড এর ছবি আমার কাছে দেখে নিশ্চয় খুব অবাক হচ্ছিস ""
বন্যা মাথা নাড়লো যার অর্থ হ্যা....
বর্ণ মুচকি হেসে উঠে দারায় ...
"তোর মনে অনেক প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এটা আমি খুব ভালো করেই জানি বন্যা ৷ কিন্তু এখনো তোর সবটা জানার সময় হয়নি তবে একটা কথা বলো তোর বেস্টফ্রেন্ড ছন্দ আমার হৃদস্পন্দন আমার ভালোবাসা যার জন্য গত চার বছর আমি অপেক্ষা করছি ৷ যার কথা ভেবে আমার সারাটা দিন কাটে ৷ আমার সম্পূর্ন ভাবনায় যার বিচরন৷ সে তোর বেস্টফ্রেন্ড""
বন্যা তার ভাইয়ের কথা শুনে হ্যা করে তাকিয়ে আছে ৷ বন্যা এতো বছরে বুজতে পারলো তার ভাইয়ের এতোটা পাল্টে যাওয়ার কারন আর এই কারন টা তার-ই বেস্টু ছন্দ ৷ তবে বন্যার টা ভেবে ভালো লাগছে ছন্দ হয়তো বার সুখি হবে ৷ হয়তো ওর সুখ ওর ভাই ৷
বন্যা একগাল হাসি নিয়ে হাসি নিয়ে বসা থেকে উঠে দারিয়ে বর্ণ কে জরিয়ে ধরে.......