তোকে ঘিরে - পর্ব ০৯ - ফাবিয়াহ্ মমো - ধারাবাহিক গল্প


ট্রেনের সিটে নির্লিপ্ত চাহনিতে ভোরের আকাশ দেখছে পূর্ণতা। যেকোনো মূহূতেই শ্রাবণের বৃষ্টির মতো কেদে দিবে মনটা। অপেক্ষায় কাটানো নির্ঘুম রাত্রির চোখদুটো এখনো চাতক পাখির মতো কারোর জন্য প্রতীক্ষায় আছে। সে যেনো একবার আসুক। শেষ বার হলেও আসুক। শূন্যময় স্টেশনে যাত্রীর মতোই সে যেনো ট্রেনে উঠুক। পূর্ণতার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে। আকাশ সমেত যন্ত্রণা গিলে নিজেকে তীব্ররূপে সংযত রাখছে। বাবা,মা পাশে সে কাদবে না। কাদলে কি উত্তর দিবে পূর্ণতা জানেনা। পূর্ণতার বাবা ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের তিনটি সিট নিয়ে কেবিনে বসে আছে। বর্তমানে সে ঘুমিয়ে।মা সিটে হেলান দিয়ে তন্দ্রায় ডুবে গেছে। পূর্ণতা জানালার কাছে সিটে বসে বাইরে মুখ দিয়ে ওদিক এদিক দেখছে। হঠাৎ তীব্র একটা সাইরেন বাজিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন জড়তা ছেড়ে চলতে শুরু করলো। পূর্ণতা অন্যসময় ট্রেনের সাইরেনের শব্দে কানে হাত লাগায় আজ অস্থিরতায় চুপসে গিয়ে ঠোট কামড়ে আছে তার অপেক্ষায়। স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে দেখে পূর্ণতা জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করে উঠলো! মানুষটা এতো নিষ্ঠুর? একটা বার দেখতে এলো না??এক ঝলক মুখদর্শন পেলে তৃপ্তি পেতো পূর্ণতা কিন্তু পূর্ব আর আসলোনা। হঠাৎ কোলের উপর সাইড ব্যাগ থেকে মায়ের ফোনটা বাজতে লাগলো। একবার, দুইবার পরপর অনেকবার বাজতেই পূর্ণতা সেটাকে বিরক্তির সাথে স্ক্রিন না দেখেই রিসিভ করলো। একগাল অশ্রাব্য ভাষায় যেই কথা শুনাবে ঠিক তখনই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো কাঙ্ক্ষিত গলাটা, 'পূর্ণ...' পূর্ণতা শিউরে উঠে ঝট করে ফোনের স্ক্রিনে চেক করলো নাম্বার আননোন। গলার স্বর চিরচেনা, পরিচিত, সে মানুষটাকে চেনে! পূর্ণতা জড়তার আবেশে খুবই অস্ফুট কন্ঠে বললো, 'হ্যালো...'
ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের জবাব। কি ভয়াবহ সেই শব্দগুলো। পূর্ণতা কানে ফোন চেপে চোখ বন্ধ করে সেই নিশ্বাসের শব্দগুলো মনের ভেতর গেথে নিচ্ছে। সুন্দর মানুষের সবকিছুই সুন্দর। সেটা হোক কথা, বা তার নিরবতা। সবকিছুর যেনো থাকে আলাদা একটা ভাষা। পূর্ণতা মুখে ওড়না চেপে কেদেঁ ফেলে। সে কিছুতেই মানতে পারছেনা পূর্বের সাথে আর দেখা হবেনা। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। অসহনীয় কষ্ট। নিরবতা ছিন্ন করে ওপাশ থেকে নিচুকন্ঠের আবারো সুর চলে এলো, 'ভালো থেকো...' পূর্ণতার গলদেশ অসম্ভব ব্যথা করছে কান্না চেপে রাখাতে। গলার কন্ঠনালী ফেটে যাবে চিৎকার করে না কাদতে পারলে। এ কেমন কষ্ট? মন পুড়ছে, দহনক্রিয়ায় দগ্ধ হচ্ছে, শরীরটাও মনের সাথে বিক্ষোভ করছে। ছোট্ট হয়ে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো চোখের কান্নায় গাল গড়িয়ে ওড়না ভিজিয়ে দিচ্ছে। পূর্ণতা আর কথা বলতে পারলো না। কান থেকে ফোন সরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে কেদে দিলো। ট্রেনের ঝনঝনানি, বাতাসের হুহু হিমেল হাওয়ায় ঢাকা পড়লো পূর্ণতার অশ্রুপাতের শব্দগুলি। কান্নার আওয়াজ বাবা বা মায়ের কানে যেতে পারলো না, জানতে পারলো না ওপাশ থেকে কল করা নিষ্ঠুর মানুষটি। 

.

শহুরে জীবন মানেই ব্যস্ততায় ঘেরা হট্টগোল পরিবেশ যেখানে মানুষ অনুভূতিশূন্য হয়ে জীবন গড়ার তাগিদে লড়াই করে। ভোরের সূর্য ফোটার পর মানুষ জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে ঠিকই কিন্তু রাত যত গভীর হয় মনের অসুস্থতা ততো যেনো বেড়ে যায়। ক্লান্ত দেহের নিঃসাড় মনটা তখন অন্ধকার রুমে নিঃসঙ্গ হয়ে বালিশ ভেজায়। পূর্ণতার ক্ষেত্রেও তাই হলো। সকাল হলেই ক্যাম্পাস, ব্যাচ, বন্ধুদলের আড্ডা, ছোটখাটো ট্যূর দিয়ে ব্যস্ততায় কাটে কিন্তু রাত্রি নামলে দিকভ্রান্ত হয়ে আকাশে পূর্বদিকের খোঁজ করে। পূর্ণতার কাছে পূর্বের নাম্বার নেই, একজেক্ট ঠিকানা নেই, কি করে কিছুই জানা নেই। একমাস বহু চেষ্টার পরিক্রমায় পূর্বকে কোথাও খুজে পায়নি। আনিশা ঠিকানা জানতো কিন্তু সে ঠিকানা বলতে চায়নি। গ্রামে গিয়ে পূর্বের বিষয়ে সব তথ্য নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই সব রাস্তা বন্ধ। কারন, নানাভাই দেশে নেই। চিকিৎসার তাগিদে ইন্ডিয়ায় গেছে। নানাবাড়ির অজুহাত ছাড়া পূর্ণতাকে ওখানে যাওয়ার অনুমতি কক্ষনো দিবেনা। পূর্ণতা ওখানকার এলাকা তেমন একটা চিনেনা। মায়ের ফোন থেকে কল দেওয়া নাম্বারটিও বন্ধ, দীর্ঘ একমাস দিনে-রাতে কল করেও পায়নি সংযোগ। 

পূর্ণতা কফির মগে চামচ নাড়তে নাড়তে বারান্দায় যেয়ে দোলনায় বসলো। রূপায়ন টাওয়ারের দশম তলা থেকে উদাসীন হয়ে রাতের ঝিলিমিলি ব্যস্ত শহর দেখছে অপলক। পূর্ণতার বাবা অফিসে, মা হসপিটালে। দুজনেই আজ কর্মস্থলে থাকবেন, আসবেন না রাতে। বাসায় থাকলে পূর্ণতা কখনো রুমের লাইট জ্বালায় না। ওর অন্ধকারময় সিচুয়েশন খুব বেশি পছন্দ। কফিতে চুমুক লাগিয়ে পা দিয়ে দোলনাটা ঠেলে দিয়ে দোল খেতে লাগলো। পূর্ব?আমাকে ভুলে গেছেন? আমি আপনাকে প্রতিটা মূহুর্তে স্মরন করি। জানিনা কেমন আছেন আপনি। হয়তো ভালো থাকবেন। কিন্তু আমি ভালো নেই। ছয় মাস পেরিয়ে গেলো অথচ আপনাকে আমি ভুলতে পারিনি। কোনো ছেলেকে নিয়ে এতোটা বিভোর থাকবো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। কফিতে যতোটা চুমুক দেই আপনার ঠোটদুটোর কথা মনে পড়ে যায় আমার। আপনিও তো ওই ঠোট দিয়ে এভাবেই কফি বা চা খেয়ে থাকেন তাইনা? ওই কফির কি সৌভাগ্য দেখেছেন? আপনার ঠোটের স্পর্শ বারবার সে পাচ্ছে। অথচ আমি এক অভাগা, যে আপনাকে খুজতে খুজতে এখন হতভাগা হয়ে গিয়েছি। স্মরন করছেন তো? পূর্ণ বলে যে একটা তীক্ষ্ম সুরে ডাক দিতেন এখনো আমার কানে বাজে। আপনার চেহারাটা ঘুমানোর পরেও এতো স্পষ্টভাবে দেখি যে ঘুম থেকে উঠলে মনেহয় আপনি পাশে আছেন। কিন্তু আপনি তো নেই। আপনার কোনো ছবিও আমার কাছে নেই জানেন?কিন্তু মনের ক্যানভাসে আপনার ছবিটা এতো রঙ্গিন অনুভূতির রঙে একেছি যে পৃথিবীর কোনো শিল্পীই সেই ছবি নিখুঁতভাবে আকতে পারবেনা। মনের শিল্পী সবাই হতে পারেনা পূর্ব। মন তো কারিগর, যেখানে স্মৃতির পরশে অবাস্তব একটা দুনিয়া মানুষ নিজের ভেতরে বানায়। সুখ পায়। আমিও বানিয়েছি আপনাকে নিয়ে। ওই দুনিয়ায় আপনার অদ্ভুত এক আগমনের অপেক্ষায় আছি। আমার বিশ্বাস, ভরসা, আস্থা আছে ছোট্ট এই গোলাকার দুনিয়ায় আপনাকে আমি খুজে পাবোই। 

বিছানা থেকে ফোন আনতে গিয়ে দেখলো বন্ধু আয়মান কল করেছে অনেকগুলো। পূর্ণতা বারান্দায় গিয়ে পুনরায় দোলনায় বসে কল করলো আয়মানের নাম্বারে। বাজতে বাজতে রিসিভ করলো আয়মান। 
- হারামখোর কতগুলা কল দিছি! ফোন সাইলেন্ট রেখে কিসের মজা পাস আমি বুঝিনা!
- সরি বন্ধু, ফোনটা সাইলেন্টে রাখার বদ অভ্যাস আছে। এটা জানিস তো।
- খোঁজ পাইছিস কোনো?
- উহু,
- রাজিব, আমি, শ্রেয়া, কাল একটা ছোটখাট অভিযান চালাবো। নাম দিয়েছি - 'পূর্ব অভিযান'। তুই আসবি?
পূর্ণতা খিলখিল করে হেসে দিলো আয়মানের কথা শুনে। আয়মান ভড়কে গিয়ে বললো,
- কেলানি বন্ধ কর হারামি। বল কালকে যাবি? 
- না দোস্ত। কাল সম্ভব না। তোরা যা। উনার কোনো ইনফরমেশন পেলে আমাকে জানাস। বাবা, মা দুজনেই বাইরে তো...
- আঙ্কেল আন্টি বাসায় নাই? তুই খাইছিস কিছু? 
- নিজেরটা নিজেই রান্না করে খেয়েছি। আচ্ছা দোস্ত রাখি? এখন ঘুমাবো...
- তোর মন খুব খারাপ নারে? ওই ছেলেটাকে নিয়ে আজো মনটা খারাপ করে আছিস তাইনা? মিথ্যা বলবি না খবরদার। ছয়টা মাস কুত্তার মতো খুজলি বাট পেয়েছিস বল? ছেলেটা নিজেও তোকে স্মরন করেনা পূর্ণতা।তুই যে পাগলের মতো বিহেভ করিস এ ব্যাপারেও পূর্বের কিছু যায় আসেনা। 
- ঘুমাবো দোস্ত রাখি। 

পূর্ণতা কলটা কেটে মাথা নুয়ে ভারী শ্বাস ছাড়লো। নিজেকে এতো অসহায় লাগছে। সিয়ামের সাথে ব্রেকআপের সময়ও এতোটা অসহায়বোধ হয়নি। পূর্ণতা মাথা তুলে আকাশে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে পূর্বের কল্পনা করলো। পূর্বের পাপড়িপূর্ণ চোখের মায়া, চুলের অগোছালো ভাব, ঠোঁটের মৃদ্যূ মৃদ্যূ কাপুনি, বুকের ভেতর আস্তো দুনিয়া পুষে রাখার মতো সুঠামতা। পূর্ণতা পূর্বের সৌন্দর্যের কল্পনাতীতে মগ্ন হয়ে সুন্দর সুরে ঠান্ডা পরিবেশে গান ধরলো তাহসানের,

তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার,
যতো দূরে চলে যাও রবে আমার,

থেমে গেলো গিয়ে স্মরন করলো ট্রেনের মধ্যে পূর্বের মাথা নিজের কোলে দেখার তীক্ষ্ম অনুভূতি। একটু থেমে আবারো গাইতে লাগলো,

স্তব্ধ সময়টাকে ধরে রেখে....পূর্ণতা বদ্ধ চোখেই হেসে ফেললো গানের লাইনটুকু গেয়ে। সেদিন পূর্ব জোরপূর্বক কোলে বসিয়ে ওকে নিয়ে কতশত খুনশুটি বাধালো। একটু থেমে আবার গেয়ে উঠলো পূর্ণতা,

স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার,
তবে আজ কেন একা আমি
আলো হয়ে দূরে তুমি...

এটুকু গেয়েই পূর্ণতা থেমে গেলো। চোখ খুলে গালে হাত ডলতেই বুঝতে পারলো গাল ভিজে উঠেছে। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো। ফেসবুকে স্ক্রল করতেই একটা গ্রুপে অদ্ভুত পোস্ট দেখতে পেলো। সেখানে প্রচুর এংগ্রি রিয়েক্ট এবং অনেক শেয়ার হয়েছে। 

ভার্সিটিতে আমদানি হচ্ছে মাদকের যোগান। শতশত শিক্ষার্থীরা আজ ঝুকে যাচ্ছে মৃত্যুঝুকির দিকে। কে নিবে দায়ভার? কে করবে এসবের সংস্কার? 

ক্যাপশনের সাথে আরো পনেরটা ছবি সংযুক্ত দেখে ছবিগুলোতে ক্লিক করলো। শিক্ষার্থীরা খোলাখুলি দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে ড্রাগস খাচ্ছে, ধুমিয়ে নিকোটিন ফুকছে। পূর্ণতা বিড়বিড় করে কপাল কুচকে বললো, ছাত্রনেতারা কোথায়? ওদের চোখে এসব পড়েনা? দিনদুপুরে শিক্ষার্থীরা নেশা করে বেড়াচ্ছে কেউ কিচ্ছু বলছেনা? পূর্ণতা ডেটা কানেকশন অফ করে ডান কাতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। এসব দেখতে ওর রুচি নেই।

নাস্তার টেবিলে ডিমচিনিতে ভাজা পাউরুটির পিসে কামড় দিতেই বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
- পূর্ণতার মা? কথাটা বলেছিলে?
মা পাউরুটির উপর ছুড়ি দিয়ে জেলি ভরাতেই বলে উঠলেন, ' না। তুমি বলো'
আমি দুজনের কথায় বেশ চিন্তিত হয়ে পাউরুটিতে আরেক কামড় দিয়ে বলে উঠলাম,
- তোমরা কি আমাকে নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছো?
বাবা ভরা গলায় বললেন, হ্যাঁ।
- কি বিষয়ে? 
- শোন্ মা, তুই তো বলেছিলি অনার্সে উঠলে আমরা তোর জন্যে ছেলে দেখতে পারবো। এখন তো তুই অনার্সেও পড়ছিস আবার এই ফাকে আনিশার বিয়েটাও সেরে গেল। এখন তোর নানাভাই খবর পাঠিয়েছে তোর বিয়েটাও সেরে ফেলতে। তুই বুঝতে পারছিস তো কি বিষয়ে কথা বলছি?
আমি চোখ স্থির করে খাওয়া আটকে থম মেরে তাকিয়ে আছি। বিয়ের কথা কেন উঠলো? আমি কিভাবে বিয়েতে মত দিবো? বাবা আমার প্লেটে আরেক পিস পাউরুটি তুলে দিয়ে বললেন, তোর ব্যাগে একটা ছেলের ছবি চুপিচুপি রেখেছি ওটা দেখে বলিস। আর তোর মা খুব পছন্দ করেছে ছেলেটাকে। এখন তুই যদি ছেলেটার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে দেখতি তাহলে ভালো হয়। 

আমি ফট করে জোর গলায় মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম, 
- বাবা? মা যদি ছেলেটাকে এতোই পছন্দ করে তাহলে এক কাজ করো! ওই ছেলের সাথে মাকে বিয়ে দিয়ে দাও। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। বায়!

ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে হন্তদন্তে বেরিয়ে যেতেই ক্যাম্পাসের গেটে পথ আটকালো বন্ধুটিম। রাজিব, আয়মান বাইক দিয়ে এসেছে, শ্রেয়া এসেছে রিকশা করে। আজ নাকি ক্লাস হবেনা। ভার্সিটিতে একটা ফাংশনের আয়োজন করা হয়েছে যা আমি বা আমার বন্ধুদল জানতো না। রাজিব মুখ গোমড়া করে বলে উঠলো,
- এখন কি হবে পূর্ণতা? তোর আর আমার রিপোর্ট কালেক্ট করা এখনো বাকি। পরশু লাস্ট ডেট, কাল ফ্রাইডে। 
শ্রেয়া রাজিবের পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে খিচিমিচি করে বললো,
- তোদের দুটোকে থাবড়া দিয়ে কান লাল করে দেওয়া উচিত! পূর্ব নামক পুরুষকে খুজে তো পেলি না এখন রিপোর্টটা কিভাবে করবি আমিও দেখবো!
আয়মান কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো শ্রেয়ার বাজখাই গলার কন্ঠ শুনে আমাদের কাছে ভিড়ে ফোন কেটে আমার দিকে জিজ্ঞাসু সুরে বললো,
- নটাংকি, এটা চেচাচ্ছে কেন? কিরে?
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম, 
- রিপোর্টের জন্য। তোরা দুটো তো অন্য ডিপার্টমেন্ট, তোদেরটা আরো দেরি আছে। কিন্তু পরশু যে আমার আর রাজিবের জমা দেওয়ার ডেট মনে ছিলো না। 
- শালার এইজন্যই ওয়ার্ন করছিলাম আগে রিপোর্টটা কমপ্লিট কর তারপর ওই পূর্ব পশ্চিম কে খুজিস। আমার কথার মূল্য আছে? 
পাশ থেকে রাজিব মিনমিন করে বলে উঠলো, 
- পূর্ণতা একটা উপায় আছে, বলবো?
- কি উপায়?
- তোর না একটা খালাতো ভাই আছে ওয়াকিল!! সে তো মার্স্টাসে পড়ছে উনাকে একটু বল আমাদের হেল্প করতে।
- ইশরে আমার মাথায় কেন বুদ্ধিটা এলোনা! এই কাজের জন্য ভাইয়া বেষ্ট!

 ওয়াকিল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।আমরা সবাই বাস ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যেয়ে দাড়ালাম। ব্যাপার কি? এখানে দেখি উৎসব মুখর সাজ? আজ আসলে দিনটা কি? আমি রাজিবের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই রাজিব মুচকি হেসে বলে উঠলো, দোস্ত ওদের ক্যাম্পাসে ফ্রেশনারদের ইভেন্ট। যাবি ভেতরে? আমি হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়িয়ে ভেতরে ঢুকে ওয়াকিল ভাইকে কল দিলাম।ফোন রিসিভ করছেনা বাজতে বাজতে হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর ভীড়, শিক্ষার্থীদের জমকালো সাজ, সূদূরে একটা বিশাল স্টেজ সাজানো হয়েছে সেখান থেকে মেবি কারোর গান গাওয়ার আমেজ উঠবে। মাথায় উপর গ্রীষ্মের তেজী সূর্যে আমার প্রায় ক্লান্ত হয়ে একটা গাছতলার নিচে পাকা পাটাতনে বসলাম। এর মধ্যে মাইকে একটা এনাউন্সমেন্ট হতেই আমরা বাধ্য হয়ে কানে দুহাত চাপলাম। কি চিৎকার!! শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ের চিৎকারটাই যেনো তুঙ্গে!মাইকের চেয়েও তীব্র চিৎকার! রাজিব আর আয়মান শ্রেয়া ও আমাকে রেখে ঠান্ডা কোক আনতে বাইরে চলে গেলে শ্রেয়ার মধ্যে চাপা উত্তেজনা কাজ করে। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলি, 
- তুই ওদের নবীন উৎসব নিয়ে এক্সাইটেড কেন?
শ্রেয়া মুখে হাজারো হাসির আভাস ফুটিয়ে বললো,
- একটু আগে যার নাম এনাউন্স হয়েছে সে কে জানিস? 
- না তো, কিন্তু তুই কি তাকে চিনিস?
- আবার জিগায়! এই ভার্সিটিতে আমার এক আপু পড়ে বুঝলি সে তো ওই ছেলেটার উপর হাবুডুবু খায়!! কিন্তু সমস্যা একটাই ছেলেটা পলিটিক্স করে। তাও খারাপদের সাথে। সবাই বাঘের মতো ভয় পায়।
- ওহ্, 

হঠাৎ দেখি আমার ফোনে ওয়াকিল ভাইয়ের কল,
- পূর্ণতা কল দিয়েছিলি তুই? এতোগুলা মিসকল?
- ভাইয়া আমি তোমার ভার্সিটিতে। স্টেজটা থেকে অনেকটা দূরে একটা গাছ আছেনা? ওখানে আছি। তোমার হেল্প লাগবে। 
- কি তাজ্জব! তুই আইইউবি থেকে একা আসলি? খালা জানলে তোর যা হাল করবে!
- গ্যাং আছে ভাইয়া। তুমি একটু জলদি আসো। 
- আমি পারবো না পূর্ণতা। তুই একটু স্টেজটার পাশে যে বিল্ডিং আছেনা? ওটার থার্ড রুমে আয়। ওরা আমাকে ছাড়বেনা বুঝলি। 
- ভাইয়া ওখানে প্রচুর ভিড়! তোমার রুমে আসতে প্রচুর দম যাবে!
- কিছু করার নেই বোন। তোরা আউট স্টুডেন্ট জানতে পারলে গলাধাক্কা দিয়ে বের করবে। ত্রিসীমানার ওদিক দিয়ে আসলেই বিপদ। আমার সাথীরা কাজের জন্য ছাড়ছেনা। কিভাবে আসি?
- আচ্ছা আমরাই আসছি। 

বাধ্য হয়ে ভিড় ঠেলতে ঠেলতে রাজিব ও আমার রিপোর্ট শিট হাতে নিয়ে এগুচ্ছি। ওই দুটো কোকের নাম করে কোথায় যে গেলো আল্লাহ্ মালুম! এদিকে মানুষের চাপাচাপিতে আমার দম বন্ধ হবার জো! শ্রেয়া আমার ওড়না নিজের হাতে বেধে নিয়েছে বলে আমি দ্রুততার সাথে এগুতেও পারছিনা। হঠাৎ মনে হলো বামদিক থেকে কেউ আমার পেটের কাছ হাত দিলো। আমি মুখ উঠিয়ে বাম দিকে ফিরতেই একটা ছেলেকে দেখতে পেলাম। সে তৃপ্তি সহকারে লালসা মিটিয়ে ভিড়ের মধ্যে আমার কোমরের উপর হাত রেখে হাত উপরে ছুয়ে ছুয়ে তুলছে। আমি ওড়নাটা মুচড়ে শ্রেয়ার হাত যেখানটায় বাধা ওই অংশে টান মারলাম। শ্রেয়া আমার বিপদগামী সংকেত বুঝলো কিনা জানিনা ও আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিজেই ঠেলাঠেলি করে আমাকে নিয়ে বেরুলো। আমি হাটুতে দুইহাত রেখে মাটির দিকে কিছুটা ঝুকে নিশ্বাস ছাড়ছি। শ্রেয়া কমনরুম খুজার দৃষ্টিতে বলে উঠলো, 
- ভিড়ের মধ্যে ছুয়েছে ঠিক না? 
- হু,
- ওই ইবলিশের বাচ্চার কঠিন বিচার হোক! আমি এই আর্জি জানাই ! জানোয়ার শালা!

ওয়াকিল ভাইয়ের কাছে সব ঘটনা উল্লেখ করে নিজেদের রিপোর্টটাও কমপ্লিট করে বিদায় দিয়ে বেরুলাম।। কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার কোলাহলের পরিবর্তে বাইরে এখন মারপিট হচ্ছে! পাঁচজন ছেলে দলবদ্ধ হয়ে একটা ছেলেকে মাটিতে শুয়িয়ে প্রচুর পেটাচ্ছে। নাক ফেটে, মুখ কেটে রক্ত! শিক্ষার্থীরা সেই দৃশ্য চুপচাপ অবলোকন করছে। গান বন্ধ হয়ে চারধারে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে! আমি একটু খেয়াল করতেই চমকে উঠে শ্রেয়ার কবজি চেপে ধরলাম। শ্রেয়া আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো,
- কি হয়েছে?
- ওই ছেলেটাই তো ছুয়েছিলো... 

আমার ষষ্ঠইন্দ্রীয় বলছে নিশ্চয়ই কিছু ঘোরতর কাহিনি হচ্ছে আমার সঙ্গে। আমি ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষাটা মিলাতে পারছিনা। একটু আগে ভিড়ের মধ্যে এই ছেলেটা আমাকে স্পর্শ করেছিলো এখন ও জনসমূখে মার খাচ্ছে। সবকিছুই কেমন জটলা লাগছে। মানে সবকিছু! আমাকে বিব্রতবোধ করতে দেখে শ্রেয়া গেটের বাইরে এনে টিস্যু দিয়ে আমার কপালে লেগে থাকা ঘাম মুছিয়ে বললো,
- পূর্ণতা? তুই উদ্ভট বিহেভ করছিস কেন?ওই ছেলে মার খাচ্ছে একদম ঠিক হয়েছে! দেখছিস দোয়া করতে দেরি কবুল করতে দেরি না!!

আমি ছটফট করে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে চন্ঞ্চলতার সুরে বলে উঠলাম,
- শ্রেয়া আমার কেমন জানি ফিল হচ্ছে। আমার মন খুব ঘাবড়ে যাচ্ছে দোস্ত। কিছু তো নিশ্চয়ই আছে এখানে। আমি ধরতে পারছিনা, দেখতে পারছিনা শুধু অনুভব করতে পাচ্ছি। 
শ্রেয়া ব্যাগের চেইন খুলে পানির বোতল এগিয়ে বললো,
- পানিটা খেয়ে নে। তুই তো মারামারি দেখতে পারিস না তাই হয়তো মন বেচইন হয়ে আছে। 
আমি ধাক্কা দিয়ে বোতল সরিয়ে চেচিয়ে বললাম,
- না! আমি মারামারির জন্য এমনটা করছি না! ভুলেও এটা ভাববিনা! আমার মন বলছে এখানে এমন কিছু আছে যা আমি বহুদিন ধরে খুজছি! 
- গর্দভের মতো কথা বলিস না পূর্ণ! 
পূর্ণ - ডাকটা বিদ্যূতের মতো মাথায় চিলিক দিয়ে উঠলো! আমি সাথেসাথে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে অস্পন্দ ভঙ্গিতে বলে উঠি, আমি হয়তো পূর্বকে দেখেছি! পূর্ব এখানেই আছে!
শ্রেয়া কপাল কুচকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, কিহ্! এখানে তোর সেই কল্পপুরুষ থাকবে? পূর্ণতা প্লিজ প্লিজ পাবলিক প্লেসে আবার পাগলামো করিস না!!আমি হ্যান্ডেল করতে পারবোনা।
- ও কল্পে নয় বাস্তবেই আছে! পূর্ব এখানেই আছে! আমার মন বলছে দোস্ত! 

আমাদের মধ্যে একদফা তর্কযুদ্ধ হতেই রাজিব ও আয়মান কোক হাতে চলে এলো। শ্রেয়ার কথা শুনে ওরা তিনজন আমাকে পাগল সাব্যস্ত করলো! আমি নাকি দিনদিন বিরহের দোটানায় পাগল হয়ে যাচ্ছি পূর্বকে নিয়ে চারপাশে কল্পনা করছি। ওরা আমাকে আর ওখানে থাকতে দিলো না একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। মাকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা খুলে বললো। আমি রুমের দরজা আটকে ফুলদানি ছুড়ে মোবাইলটা আছাড় মেরে পাটে পাটে আলাদা করে ফেলেছি, বিছানার চাদর উল্টে বালিশের তুলা বের করে রুমের চেহারা বিভৎস করে ফেলেছি। আমার তান্ডবের শব্দে মা না পারতে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমাকে ঠাস করে থাপ্পর মেরে আলমারির সাথে ধাক্কা মেরে বললো, আমি যদি আরেকবার পাগলামি করি সোজা এ্যাসাইলামে পাঠিয়ে দিবে। বাবা অফিসের কাজ ফেলে ছুটে এলেন আমার কাছে। আমি বারান্দায় বসে দোলনায় মাথা রেখে চোখের পানি ফেলছি। বাবা আমার সামনে বসে মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
- মা রে তুই বড় হয়েছিস এখনো ওভাবে জেদ ধরলে চলে? তুই কোন্ ছেলের জন্য এমন করছিস আমাকে বল। আমি সব বন্দোবস্ত করবো।
চোখ থেকে টলটল করে পানি নাক গড়িয়ে দোলনায় পড়ছে। বাবা যে অফিস থেকে সোজা আমার রুমে এসেছেন বোঝাই যাচ্ছে। পায়ের সু জুতাও খুলেনি এখনো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলেন,
- তোর মায়ের সাথে কথা বলবি না তুই। কিভাবে গালটা লাল করে দিছে! তোর নানা বাড়িতে থাকলে এই মহিলাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম! 
আমি তপ্তকর নিশ্বাস ছেড়ে নাক টেনে মাথা তুলে বললাম, 
- মা আমাকে মারলো কেন? আমি তো উনার সাথে বিদ্রুপ আচরন করিনি। 
- তোর মায়ের তো সবখানেই আঙ্গুল ঢুকিয়ে কথা বলার স্বভাব! তুই উঠ মুখটা ধুয়ে নে। আমার সাথে খাবি। 
- তুমি অফিসে যাবা না?
- মেয়ে আমার কাদছে! আমার আবার কিসের অফিস?? জাহান্নামে যাক অফিস!

বাবার কথা শুনে হাসতে বাধ্য হলাম। বাবার এই ছোট ছোট আচরনগুলো আমার জন্য অনেককিছু। কোনো মেয়ে তার মায়ের চেয়ে বাবাকে তেমন প্রায়োরিটি দেয় না। বাবা মানে রাগী, মেজাজী, খিটখিটি প্রাণী যার সাথে কথা বললেই খাবো ধমক! কিন্তু আমি আমার বাবার সাথে সবচেয়ে বেশি বন্ধুসুলভ। বাবা নিজ হাতে খাইয়ে দিতে বললেন,
- ছেলে কে? নাম কি? কোথায় থাকে? 
- কিছুই জানিনা। নাম শুধু জানি পূর্ব। 
- পূর্ব? বাপ মা আর নাম খুজে পেলো না ছেলের নাম রাখলো পূর্ব? 
- তুমি ফাজলামো করো না বাবা। 
- শুধু নাম জানলে তো কিছুই করা যাবেনা। আর কিছু জানলে বল। 
- নানাভাইয়ের বন্ধু ওয়াসিফ নানার নাতী হয়। বড় নাতী। 
বাবার মুখ আগুনে পুড়ে যাওয়া ভষ্মস্তুপের মতো কালো হয়ে গেলো। আমি খাবার চিবিয়ে কিছু বলবো বাবা তার আগেই বলে উঠলেন,
- পানি খা। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তোর মায়ের কানে এ ব্যাপারে কিছু বলিস না। ভুলেও নাম উচ্চারণ করবি না। ঠিক আছে? 

আমি অবুকের মতো মাথা নেড়েচেড়ে হ্যাঁ বোঝাই। বাবা প্লেট হাতে চলে গেলেন রুমের দরজা চাপিয়ে। বাবা হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরন করলেন কেন? 
পরদিন সকালে একনাগাড়ে কলিংবেল বাজানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। কে এলো এতো সকাল সকাল? মা খুব সকালেই হসপিটালে চলে গেছে। বাবা তো নাক ডেকে ঘোড়া বেচে ঘুমাচ্ছে। এক বালতি পানি ঢাললেও উনার ঘুম একফোঁটা ভাঙবেনা এমন কঠিন ঘুম তার! কলিংবেল এখনো বাজিয়েই যাচ্ছে! উফ...মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে নাকি! মরার ওড়নাটাও কাজের সময় হাতের কাছে পাইনা! তাড়াতাড়ি ওয়ারড্রব থেকে চাদর নিয়ে টিশার্টের উপর জড়িয়ে দরজা খুলতেই দেখি দারোয়ান। লোকটার মুখ কিসমিসের মতো বিরক্ততে চুপসে আছে। আমাকে দেখেই সে বললো,
- আপনেরে নিচে একজন ডাকছে।। দেখা করবো বলে।
- কে ডেকেছে? 
- হেইডা আমি কেমনে কইতাম? আমি তো মাইনষের পিসনাল লাফ লইয়া বইয়া থাকিনা। 

 পার্সনাল লাইফ কে পিসনাল লাফ বানিয়ে দারোয়ানটা চলে গেল নিচে। একবার নিজের দিকে তাকালাম। ঢোলা পায়জামা, লং টিশার্ট, গায়ে চাদর ঠিকঠাক মতো আছে কিনা। লিফটে নিচে নেমে গেটের বাইরে যেই পা রাখলাম ধপাস করে পায়ের কাছে কিছু পড়লো! বুক ধড়ফড় করে উঠলো আমার!আমি কয়েক পা পিছিয়ে মানসিক ভাবে বিহ্বল হয়ে ঢোকের পর শুধু ঢোক গিলতেই পায়ের কাছে ছেলেটা হাটুগেড়ে দুহাত জোর করে বলে উঠলো,
- আমাকে ক্ষমা করে দেন আপু। আই এম সরি। কালকে আপনার সাথে যা যা করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেন...

আমি আহাম্মকের মতো ছেলেটার কাছ থেকে আরো পিছিয়ে গিয়ে বলে উঠলাম,
- তুমি এখানে কিভাবে? 
ছেলেটা তীব্র আকুতির সুরে আহাজারি করে বললো,
- আপনার কোমরে হাত দিয়েছি ওরা আমার তিনটা দাঁত ফেলে দিছে আপু। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আপনি শুধু একবার বলুন 'আমাকে ক্ষমা করে দিছেন'..ওরা আমাকে ছেড়ে দিবে...
আমি ভাবসম্প্রসারন মিলানোর মতো শব্দই খুঁজে পাচ্ছি না। একবার এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সন্দেহজনক কাউকে দেখতে না পেয়ে ছেলেটার দিকে বলে উঠলাম,
- আচ্ছা ক্ষমা করলাম। আর কখনো কোনো মেয়েকে হ্যারাস করবেনা। 

ছেলেটা অনেকগুলো ধন্যবাদ দিয়ে চোখের পানি মুছে শার্টের হাতায় মুছে লেংচে লেংচে চলে গেল। আমি ওর খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটা দেখছি। সাঝ সকালে এ কেমন অদ্ভুতকাণ্ড হলো? আমাকে টাচ করার ব্যাপারে আমি আর শ্রেয়া ছাড়া অন্য কেউ জানতো না! সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি কিভাবে জানলো! সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছে। খুবই আজগুবি হচ্ছে !! 
.
.
.
চলবে.....................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন