রংধনু - পর্ব ৬৮ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


ইদহান রাহমানের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেলা।বাহিরে ভীষন ঠান্ডা পড়ছে।আদনান আর নিশাদ আব্বা আর ছোট দাদাকে নিয়ে বাজারে গেলো আর আম্মাকে দেখতে পাচ্ছে বেলা চাপকলের সামনে ওজু করছে।বেলা চারিদিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশের রুমে তাকায়। সাইমন ঘুমিয়ে আর সাঁঝ ওর চুল হাতিয়ে দিচ্ছে।আর পিছনের রুমে বিভান পূর্নাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।কিছুক্ষন আগেই ওরা সন্ধ্যার নাস্তা করেছিলো।বাহিরের চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় জোনাকি পোকাদের উড়তে দেখা যাচ্ছে।বেলা মুগ্ধ চোখে সেদিকে তাকিয়ে।জুলেখা বানু ওজু শেষে ঘরে ঢুকছিলেন বেলার পাশ ঘেষে।হঠাৎ মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
''কিরে বেলা নামাজ ফড়বিনা?"
বেলা মৃদু হেসে মিনমিন করে বলল,
''নাই আম্মা।"
''অহ।আমি পইড়া আই।"
''আইচ্ছা।"
জুলেখা বানু হেঁটে হেঁটে ভেতরে চলে গেলেন।গিয়ে বড় জামাইকে দেখে বলেন,
''তুমি এখন বইবা বিভান?"
বিভান পূর্নাকে শুইয়ে বলল, 
''ওকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম।আপনি নামাজ পড়বেন?"
''হ বাবা পড়তাম তো।"
বিভান মেয়ের গায়ে কম্বল টেনে বলল,
''আমি যাচ্ছি নামাজ পড়ুন আপনি।"
বলে বেরিয়ে আসে বিভান।হাঁটতে হাঁটতে মেইন ডোরের সামনে এসে দেখে বেলা দাঁড়িয়ে।বিভান বেলার পিছে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই বেলা চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে বিভানকে দেখে মৃদু হেসে বলল,
''ভয় পাইয়ে দিলেন।ও ঘুমিয়েছে?"
বিভান বেলার কাঁধে ছোট্ট চুমু খেয়ে বলল,
''হুম।ঘুমালো অনেক বলার পর।"
বেলা ছোট্ট শ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে থাকলো।বিভান পিছন থেকে বেলার গলা জড়িয়ে নেয় একহাতে।বেলার মাথা ঠেঁকলো বিভানের গলায়।বেলা মৃদু হেসে বলল,
''কি করছেন?"
''কি করলাম?বৌয়ের সাথে দাঁড়িয়ে একটু কাছে থাকার চেষ্টা করছি।তোমাকে তো এখন পাওয়াই হয়না।কবে আমার বুকে গভীরে শুয়ে ঘুমিয়েছো মনে আছে তোমার?"
বেলা নিজের গলায় রাখা বিভানের হাত ছুঁয়ে মৃদু হেসে বলল,
''হুম।আচ্ছা আপনার কেমন লাগছে আমাদের বাড়িতে?"
''খুব ভালো।সবাই এত অতিথিপরায়ণ ভীষন। বেশ ভালো লাগছে এখানে।"
বেলা হেসে স্বামীর বুকে মাথা ঠেঁকিয়ে বলল,
''সেটা আমাদের সৌভাগ্য মিঃ শেখ।"
''হুম বলেছে।এত ভাল শ্বশুড় বাড়ি পেলাম।বলতে হবে সৌভাগ্য আমার।"
বিভান বেলার মাথার কোনায় চুমু দিয়ে কথা বলতে থাকে।হঠাৎ পিছন থেকে গলা পরিষ্কারের শব্দে বিভান সরে এসে পিছে তাকায় সাথে বেলাও।সাঁঝ মিটমিটিয়ে হাসছে।বিভান মৃদু হাসলো।বেলা কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে। সাঁঝ মজা করে বলল,
''ভাই আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?"
বিভান ভ্রু কুঁচকে বলল,
''না। কেন?"
''না ভাবছিলাম এখানে হয়ত বৌ কে সময় দিতে পারছেননা.........বুঝি ভাই।"
''আরে নাহ সাঁঝ তা না।কথা বলছিলাম আমরা।"
সাঁঝ কিছু বললনা আর।হঠাৎ লাবনী আর কুঞ্জন কোথা থেকে দৌড়ে এলো র্যাকেট হাতে।লাবনী বলল,
''আপা খেলবি র‍্যাকেট?"
বেলা মাথা নাড়তে যাচ্ছিলো।পিছন থেকে সাঁঝ বলল,
''আপা চল না প্লিজ।শীতে এটা খেলবোনা হয় নাকি?"
বিভান বলল, 
''আরে চলো বেলা।আর আদনান আর নিশাদ এখনো আসেনি তো।"
কুঞ্জন বলল,
''ভাইয়ারা আসতে আসতে এক ম্যাচ খেলেনি আমরা।"
বিভান বলল,
''ওকে সাঁঝ আগে আসো আমি আর তুমি খেলি।"
সাঁঝ বলল,
''ভাই আপনাকে অপমান করতে চাচ্ছিনা।কিন্তু এতো জোর করে বলছেন খেলতেই হয়।তবে হারাতে পারবেননা।"
বিভান বলল,
''সেটাতো সময়ই বলে দেবে।"
দুজনে খেলতে শুরু করে।সাঁঝ বিভানকে হারাতে পারছেনা। বিভান এতো ভালো খেলবে সাঁঝ বুঝতে পারেনি।কুঞ্জন বলল,
''বাহ কেউ কম নয়।"
হঠাৎ সাঁঝের ব্যাটের বাহিরে কক টা চলে গেলো।সাঁঝ হাসছিলো।বলতে লাগলো, 
''অনেক ভালো খেলেন ভাই।"
''থ্যাংক ইউ।"
এর মাঝে নিশাদ আদনান ওরা চলে এসেছে।বিভান বলল,
''নিশাদ আসো খেলো আমার সাথে।"
নিশাদ হাত নাড়িয়ে জানালো নামাজ পড়ে আসছে।আদনান এসে যোগ দিলো।তবে বিভানের সাথে পেরে উঠেনি।তারপর এলো লাবনী।এভাবে অনেকটা সময় চলে গেলো।নিশাদ ও হেরে গেলো বিভানের কাছে।শেষে বেলা এলো সবার চাঁপাচাপিতে। বিভান আর বেলার খেলা চলছে।এদিকে প্রিয়াশা পূর্নাকে কোলে নিয়ে খেলা দেখছে।সবাই খেলা দেখছিলো।প্রায় পনের মিনিটের মধ্যেই বিভান বেলার কাছে হেরে গেলো।সবাই চিৎকার করে উঠে খুশিতে।লাবনী আর কুঞ্জন এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ বলল,
''দেখলেন ভাই বৌয়ের কাছে হেরে গেলেন তো।"
বিভান মৃদু হেসে বলল,
''একজন একজনের কাছে তো হারতেই হতো।"
সাইমন ও ঘুম থেকে জেগে গেলো।সবাই মিলে রাতে খেয়ে শুয়ে পড়ে।পরদিন সকালে নাস্তা করে নিশাদ,বিভান আদনান আর ইকরাম রাহমান বেরিয়ে পড়ে রাফসানের সাথে কথা বলার জন্য।গিয়ে দেখলো অনেকে মিলে পুকুরে মাটি ঢালছে।নিশাদ সেখানে গিয়ে বলল,
''এসব কি?এই পুকুর কেন ভরাট করবি?"
রাফসান বলল,
''চলে আসছিস?শোন এখানে আমি বিল্ডিং করবো।অনেক বড় বিল্ডিং হবে।"
ইকরাম রাহমান রেগে বললেন,
''বিল্ডিং করবি নিজেদের জায়াগায় আমার জায়গায় কেন আসলি?আমার বাপ আমার লাইগা রাখছে।এখানে কোন বিল্ডিং হবেনা।"
আদনান বলল,
''রাফসান ভাই এটা অন্যায়।এমন করতে পারবেননা।পুকুর আমাদের এখানে কিছু করতে পারবেননা।"
রাফসান বলল,
''তোরা বললি আমি মাইনা নিমু।যা তোরা।"
নিশাদ গিয়ে রাফসানের শার্ট চেঁপে ধরে বলল,
''ভাল মতো বলার পরও কথা বুঝোসনা তাড়াতাড়ি যা।"
হঠাৎ বিভান এসে নিশাদকে সরিয়ে
বলল,
''হাতাহাতি করোনা।আমি দেখছি।"
নিশাদ সরে এলো।বিভান বলল,
''আপনার সমস্যা কি?শুনলাম আপনাদের জায়গার অভাব নেই।এখানে কেন বানাতে হচ্ছে?"
রাফসান বলল,
''এই মিঞা আপনে কে?আমাদের মাঝে আসবেননা।"
বিভান বলল,
''ওহ চিনেননা?বেলার হাসবেন্ড আমি।"
রাফসান বলল,
''শুনেন আপনি জামাই মানুষ।এমন ঝামেলায় আইসেননা।"
বিভান বলল,
''শুনেন যখন আপনি সহজ কথায় বুঝেননা তাহলে আমাকে আসতেই হবে।"
রাফসান বলল,
''দেখেন আমাকে এখানে কাজ করতে দিলে কথা বাড়েনা।"
বিভান বলল,
''ইলিগ্যালি কাজ করবেন তো আপনাকে আটকাবেনা?"
রাফসান বলল,
''শুনেন যাই বলেন আমি এখানে বিল্ডিং করবো সেটা আপনারা রাজি থাকেন বা না থাকেন?"
বিভান তার শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল, 
''শুনেন অনেক ভদ্র ভাবে কথা বলছিলাম। তবে এখন বলছি তুমি যেখানে চাকরী করো সেখানে তোমার বস কিরন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আপনি যদি চান ওকে বলে আপনার চাকরী শেষ করে দিবো।তখন কি করবেন?আপনার পরিবারের কি হবে ভাবেন।আর যদি বিল্ডিং এর এতো শখ থাকে 
পরিবার ভুলে যান।কিছু করতে ও পারবেননা?কারন পুলিশের কাছে গেলে নিজেই ফেঁসে যাবেন।সো ভালোয় ভালোয় কাজ বন্ধ করে চলে যান।"
রাপসান বিভানকে গালাগাল দিতে দিতে বেরিয়ে পড়লো।ইকরাম রাহমান এসে বিভান কে জড়িয়ে বললেন,
''আব্বা আরো একবার বাঁচাইলা।তোমারে কি কইয়া ধন্যবাদ দিমু।"
বিভান বলল,
''বাবা ধন্যাবাদ দিয়ে পর করে দিচ্ছেন।জায়গাটাতো দাদা আপনাকে দিয়েছিলো সেখানে ওনি অন্যায় ভাবে বিল্ডিং করবে আর আমি কিছু বলবনা?"
নিশাদ বলল,
''ভাই চলেন বাড়িতে।আম্মা কল করতেছিলো।"
''চলো।"
সেদিন সারাদিন সবাই ঘুরে বেড়িয়ে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ওরা।বাড়িতে সবাই কে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো।সাঁঝ আর সাইমন বনানীতে নেমে গেলো।ওরা সবাই বাসায় চলে আসে তখন রাত বারোটা।বেশ ক্লান্ত সবাই।খাওয়ার কোন ঝামেলা নেই কারন গাড়িতে খেয়ে নিয়েছিলো সবাই।
এদিকে পরদিন সকালে সবাই অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।
........................প্রিয়াশা নিজের চেম্বারে এসে বসলো।বড় ক্লান্ত লাগছে ওর।রাতে তেমন ঘুম ও হয়নি ওর।কিছুক্ষন পর বস রুমে এসে বলল,
''চলে এসেছো?"
প্রিয়াশা ম্লান হেসে বলল,
''জি স্যার।"
লোকটা হেসে বলল,
"'সারারাত ঘুম হয়নি নাকি আদনান দেয়নি ঘুমোতে?"
প্রিয়াশা রেগে গেলেও সামলে রাখলো নিজেকে।হঠাৎ ওনি বললেন,
''শুনো বুধবারে আমার সাথে চিটাগাং যাবে।শুধু আমি আর তুমি আর কেউনা।তারপর ইচ্ছে মতো তোমাকে আদর দিবো।আমি জানি তোমার ইচ্ছা আছে বাস আদনানের জন্য পারোনা।"
প্রিয়াশা রেগে বলল,
''স্যার কিছু বলছিনা বলে ভাববেননা চুপ থাকবো।আমিও বলতে পারি।"
বস এসে ওর থুতনি চেঁপে ধরে বলল,
''শুনো আমার দরকার তোমার শরীর আমার তোমার জামাইয়ের দরকার চাকরী।আমাকে খুশি করো তাহলে তোমার জামাইয়ের চাকরী থাকবে নাহলে ভুলে যাও।"
প্রিয়াশার চোখে পানি চলে আসে।বস সরে চেয়ারে বসে বলল,
''কফি আনো যাও।"
প্রিয়াশা চোখ মুছে বেরিয়ে গেলো কফি আনতে।সেদিন ছুটির পর বেরিয়ে আসে আদনান আর প্রিয়াশা।প্রিয়াশার চোখে মুখে ভয় লেপ্টে আছে।আদনান সেটা খেয়াল করে বলল,
''প্রিয়াশা কিছু হয়েছে?"
প্রিয়াশা কেঁদে বলল,
''আমি কি করবো আদনান?আমার অনেক ভয় লাগছে।"
আদনান প্রিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''কি হয়েছে বলো আমাকে।"
প্রিয়াশা সব খুলে বলল সকালের কাহিনী।আদনান বলল,
''চিন্তা করোনা.........কিছু হবেনা।আমি ভাবছি কি করা যায়।"
প্রিয়াশা নির্ভরতার দৃষ্টিতে আদনানের দিকে চেয়ে রইলো।

!!!!

সেদিন রাতে প্রিয়াশা আর আদনান দুজনে পরিকল্পনা বানালো বসকে শাস্তি দেবার জন্য।রাত দুটো দুজনে পাশা পাশি শুয়ে আছে আদনান প্রিয়াশা।আদনান আড় চোখে প্রিয়াশার দিকে তাকায়।প্রিয়াশা জানালার দিকে চেয়ে আছে।বেশ শীত পড়েছে ইদানিং।আদনান প্রিয়াশা দুজনে দুটো পাতলা কম্বলে জড়িয়ে আছে।আদনান হাত বাড়িয়ে প্রিয়াশার গাল স্পর্শ করে।বিয়ের পর থেকে একটাবারের জন্য ও বৌকে কাছে পাওয়া হয়নি ওর।আজ পেলে কি খুব বেশি দোষ হয়ে যাবে?ভেবেই আদনান হাত বাড়িয়ে প্রিয়াশার গাল স্পর্শ করে।হঠাৎ গালে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় শিহরিত হয়ে উঠে।পাশে তাকিয়ে আদনানের দিকে তাকায় প্রিয়াশা।আদনান এগিয়ে এসে প্রিয়াশার পিছনে হাত দিয়ে ওর অপর কাঁধ স্পর্শ করে কাছে টেনে নেয় আদনান।প্রিয়াশা এতটুকু হয়ে স্বামীর বাহুপাশে অবস্থান করে।আদনান প্রিয়াশার কানের ওপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই প্রিয়াশা কেঁপে উঠে আদনানের হাত চেঁপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
''কি করছেন এসব?"
আদনান ওর কোমড় চেঁপে ধরে ওর খোপা করা চুল গুলো খুলে চুলের ঘ্রান নিতে নিতে বলছিলো,
''আমার বৌয়ের ভালবাসায় মিশে যেতে চাইছি।প্রিয়াশা ভালবাসি তোমাকে।"
প্রিয়াশার চোখের কোনা গড়িয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করে।কম্পিত কন্ঠে বলতে লাগলো,
''আদনান আমি তো নষ্ট। আপনার যোগ্য না নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু নিজের ভালোর চিন্তা করতে গিয়ে আপনার জীবন শেষ করেছি।মাফ করবেন?"
বলে কাঁদতে থাকে প্রিয়াশা।আদনান প্রিয়াশার মুখটা উঁচু করে বলছিলো,
''এভাবে কেন বলছো প্রিয়াশা?তোমাকে আমি বিয়ে করেছি আমার জন্য আমার ভালো থাকার জন্য।তোমার সাথে তখন কি হয়েছিলো সেটা আমার জানার ব্যাপার না প্রিয়াশা।তুমি এখন আমার স্ত্রী আমাদের বাসার বৌ।ওসব অতীত দুঃস্বপ্ন প্রিয়াশা।ওগুলো ভেবে আমাদের ফিউচারটাকে নষ্ট করোনা।"
প্রিয়াশা আদনানের দিকে চোখতুলে তাকায়।বলতে লাগলো,
''জানিনা কতোদিন বাঁচবো কিন্তু যতোদিন আছি আপনার সাথে বাঁচতে চাই আপনাকে ভালবাসতে চাই ভালবাসবেন?"
''অপেক্ষা করছো কেন?আমি তো আছি তোমার জন্য তোমাকে ভালবাসার জন্য।"
প্রিয়াশা মৃদু হেসে আদনানের বুকে মাথা রাখে।আদনান প্রিয়াশাকে শক্ত করে জড়িয়ে বলল,
''আর কিসের অপেক্ষা প্রিয়াশা?চলোনা আজ এক হয়ে যাই।একে অপরে মিশে যাই চলো।!"
প্রিয়াশা আদনানের বুক থেকে মাথা সরিয়ে উপরে তাকায়।আদনান মৃদু হেসে প্রিয়াশার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দুগালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সামনে আসে।দুজনের মাঝে বিন্দুমাত্র দূরুত্ব পর্যন্ত নেই।প্রিয়াশা আদনের দিকে তাকাতে পারছেনা।আদনান ওকে টেনে নিয়ে প্রিয়াশার ঠোঁটজোড়া নিজের মাঝে নিয়ে নেয়।তারপর পুরো পরিবেশ কেমন নিস্তব্ধ হয়ে যায়।বাহিরের শীতল বাতাস আর দুজনের ভারি নিশ্বাসের শব্দ মিশে যেতে থাকে একে অপরের গভীরে।
রাত বাড়ছে নিশ্বাসের শব্দ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।আজ পরিবেশটাও এই মিলনের আনন্দে গান গাইছে।এদিকে সারারাত ঘুমোতে পারছেনা বেলা।কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে সারাশরীর জুড়ে।হুমায়রার পাশ থেকে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় বেলা।তারপর গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকায়।ভাবছিলো এই মাসটায় কতো কিছুই হয়ে গেলো।যতোই ভাবছে বুকটা যেন ভারি হয়ে আসছে ওর।হঠাৎ পাশে কারোর কথায় কেঁপে উঠে বেলা।পাশে তাকিয়ে দেখলো নিশাদ দাঁড়িয়ে।বেলা একটু হেসে বলল,
''ঘুমোস নি?"
নিশাদ স্মীত হেসে বলল,
''না আপা আসছেনা।তুই ঘুমাসনি যে?"
''ভাল লাগছেনা।এ কয়েকদিনে কতো কিছু হয়ে গেলো ভাবতেই কেমন লাগছে।"
নিশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 
''ঠিক বলেছিস আপা।সাঁঝ আর আদনানের বিয়ে হলো আর হুমায়রার এত বড় একটা অঘটন।জীবনটা কেমন যেন তাইনা?"
বেলা ম্লান হেসে বলল, 
''হুম।তা তুই বিয়ে করছিস না যে?"
কিছুটা লজ্জা পেলো নিশাদ। কিছুই বললনা।বেলা বলল,
''ইদ্রির কোন খবর আছে?"
নুিশাদ মাথা নেড়ে বলল,
''না আপা আসলে এতকিছু হয়ে গেলো খবর নিতে পারিনি।"
''দেখ ফেমিলি ফেমিলির জায়গায় আর ইদ্রি ইদ্রির।জানি তুই হুমায়রার ব্যাপারটায় খুব ডিস্টার্বড।কিন্তু ইদ্রির দায়িত্ব কিন্তু তোর ওপর এখন।ওর কথাটাও ভাবতে হবে নিশাদ।"
নিশাদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
''আপা আমি নিজেকে সামলাতে চাইছি আগে।কারন ওর সামনে গেলে ভেঙ্গে পড়বো।আর নিজেই খুব কষ্টে আছে আঙ্কেলের মৃত্যুতে।আর আমি চাইনা এমন অবস্থায় ওর সামনে যাই।"
বেলা ভাইকে ছুঁয়ে দেয়।নিশাদ বলল,
''আপা তুই ঘুমা গিয়ে আমার ও ঘুমাতে হবে।সকালে অফিস আছে।"
বেলা যেতে যেতে বলল,
''তুই ও ঘুমা গিয়ে।রাত জাগিস না।"
..........................এদিকে ইদ্রি সকালে উঠে কলেজের জন্য রেডি হচ্ছিলো।জীবনটা কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে ওর।কলেজ বাসা পড়াশুনা আর কোচিং,আর কিছু নেই।কোন আনন্দ নেই কোন সুখ নেই।থাকবে কি করে লোকটা ওকে ভুলে গেছে।ওকে কল দেয়না দেখা করতে আসেনা।তার কি দেখতে মন চায়না তার ইদ্রিকে?এই তার ভালবাসা?ভাবতেই ইদ্রির চোখ ভরে আসে।দুহাতে চোখ শক্ত করে মুছে নেয় ও।ব্যাগটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরুতেই ইমতিয়াজের সামনে পড়ে ও।ইমতিয়াজ বোনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।কারন আজকাল বোনটাকে দেখলে খুব মায়া হয়।বাবার মৃত্যুতে এ কি হাল হয়ে গেলো ওর?ওর এত আদরের কলিজার টুকরো বোনটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে এ কয়দিনে।ইমতিয়াজ বলল,
''কলেজ যাচ্ছিস?"
ইদ্রি ম্লান কন্ঠে বলল,
''জি ভাইয়া।"
''দিয়ে আসবো?"
''না ভাইয়া আমি পারবো।"
''হুম।"
ইদ্রি হঠাৎ জ্বলজ্বলে চোখে বলল,
''ভাইয়া ওনার কোন খবর আছে?"
বোনের এমন কথায় তাকায় ইমতিয়াজ।ইদ্রির চোখজোড়া ছলছল করছে গলা কাঁপছে।ইমতিয়াজ কি বলবে বুঝতে পারলোনা। বোনকে কি বলবে?নিশাদকে কতোবার কল দিলো ও তো কল ধরলোনা ব্যাক ও করলোনা।ইমতিয়াজ ইদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল 
''ওর সাথে দেখা করবো আমি।তুই ভাবিসনা আমি কথা বলবো ওর সাথে।"
ইদ্রি চোখজোড়া মুছে নিয়ে বলল,
''আমি গেলাম ভাইয়া।"
বলেই চলে যেতে থাকে ইদ্রি।ইমতিয়াজ সিড়ি থেকে নিচে তাকিয়ে দেখলো ইদ্রি একগ্লাস জুস খেয়ে উঠে পড়লো টেবিল থেকে।ইমতিয়াজের গাল বেয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ে।ইদ্রি বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে।ইমতিয়াজ কি যেন ভেবে দ্রুত রেডি হয়ে নেমে আসে নিচে।ছেলেকে এভাবে বেরুতে দেখে অসুস্থ সৈয়দা বেগম বললেন,
''তোর না অফিস ছুটি?"
''মা আমি কাজে যাচ্ছি।পরে এসে বলবো।"
ও সামনে যেতে নিলে সৈয়দা বেগম বললেন,
''বাবা শোন।"
ইমতিয়াজ মায়ের দিকে তাকায়।বলল,
''জি মা।"
''নিশাদকে পারলে আসতে বলিস।দেখলি তো মেয়েটা কি হাল করেছে নিজের।ছেলেটা আসছে ও না কেন বুঝিনা।বাবা ওকে আসতে বলিস।"
ইমতিয়াজ মাথা ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে যায়।গন্তব্য নিশাদের অফিস।নিশাদের অফিসে পৌছেই ওর চেম্বারের সামনে এসে নক করলো ইমতিয়াজ।হঠাৎ পিছন থেকে একজন লোক বলল,
''স্যার মিটিং করছেন।"
ইমতিয়াজ পিছনে তাকিয়ে বলল,
''ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।"
লোকটা হেসে বলল,
''আপনি ইমতিয়াজ ভাই না?স্যারের বন্ধু।"
''হা।"
''আপনি ঐখানে বসেন।মিটিং শেষ হলে ডাকবো।"
ইমতিয়াজ একটা চেয়ারে এসে বসলো।আধঘন্টা পর লোকটা এসে বলল,
''স্যার ডাকছেন আপনাকে।"
ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়ায় তারপর নিশাদের রুমের পানে এগুতে শুরু করে।রুমের কাছে এসে দেখলো নিশাদ একটা ইসলামিক বই পড়ছে।ইমতিয়াজ বলল,
''আমি আসতে পারি?"
নিশাদ উপরে তাকিয়ে বলল,
''বলার কি হলো।আয় তুই।"
''না ভাবলাম ভুলে গেলি হয়ত সেজন্য তোকে বলে ঢুকতে হবে।"
নিশাদ উঠে এসে ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো,
''ভুলিনাই দোস্ত।কিভাবে ভুলবো তোদের?একজায়গায় আমার বেস্টফ্রেন্ড আর আরেক আমার ভালবাসা কিভাবে ভুলবো বল?জীবন টা কিসের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো বুঝাতে পারবোনা।মাফ করে দিস দোস্ত।কিন্তু ভুলে যাওয়ার দোষে দোষী করবিনা দোহায় লাগে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন