আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

রংধনু - পর্ব ৭৩ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


সৈয়দা বানুর কথায় পুরো শরীর কেমন ঠান্ডা হয়ে যায় নিশাদের।আড়চোখে ইদ্রিকে দেখে ও।মেয়েটা কাঁদছিলো তবে মায়ের কথায় ও যেন ভীষন অবাক বুঝতে সময় লাগলোনা নিশাদের।অপরদিকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ইমতিয়াজ। মা এমন কিছু বলবে ও নিজে ও জানতো না।এমনিতেই বুঝতো মা নিশাদকে পছন্দ করেন কিন্তু ইদ্রিকে বিয়ে দিতে চাইবেন বুঝতে পারেনি ইমতিয়াজ। নিশাদের হাত জাপটে ধরেছে সৈয়দা বানু।কাঁপানো গলায়  বললেন,
''বলো বাবা কিছু বলো!!!"
নিশাদের ভিতরটা কাঁপছে।এ মুহূর্তে কি করবে ও?কাকে বলবে?মেয়েটাকে ভালবাসে ও খুব ভালবাসে কিন্তু এভাবে বিয়ে!!আবার আন্টির কথা ও ফেলনা নয়।ভীষন অসুস্থ দেখাচ্ছে।তাকে নিরাশ করতে চায়না।নিশাদ কে ইমতিয়াজ আর ইদ্রি দুজনেই দেখছে তবে ভিন্ন দৃষ্টিতে ভিন্ন চিন্তা ধারা নিয়ে।ইমতিয়াজ ভাবছে দোস্ত হ্যা বল।মাকে বল তুই ভালবাসিস ইদ্রিকে।কতোটা ভালবাসিস আমি জানি।কিন্তু এই মাকে কথা দে তুই ওকে বিয়ে করবি।আর অপরদিকে ইদ্রি ভাবছে কিছু বলছেননা কেন ওনি?কাল ও তো বললেন বৌ করে দেখতে চান।ছোট্ট একটা ইদ্রি চান আর এখন?চুপ করে আছেন?কি চলছে তার মনে?ইদ্রির হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে চিন্তা আর ভয়ে। তবে ওর চিন্তাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে নিশাদ সৈয়দা বানুর হাত দুহাতে ধরে বলল,
''অবশ্যই করবো আন্টি।আপনি জলদি সুস্থ হয়ে যান।আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে।আপনার দোয়া ছাড়া ভালো থাকবো কি করে বলুন?আর ইদ্রিকে নিয়ে চিন্তা করবেননা।আমি যা পারি ততটা দিয়ে ওকে আগলে রাখবো।আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।আপনার ইদ্রি ভালো থাকবে খুব আদরে থাকবে আমার বাসায়।"
নিশাদের কথা গুলোয় যেন প্রচন্ড শান্তি পেলেন সৈয়দা বানু। চোখের জল গড়াতে থাকে।দুহাতে মোনাজাত ধরে কাঁদো কন্ঠে উপরে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
''হে খোদা আমি আজকে নিশ্চিন্ত।আমার ইদ্রিকে নিয়ে নিশ্চিন্ত।আমি এখন খুব শান্তিতে মরতে পারবো।আমার আর কোন কষ্ট নাই।"
দোয়া করে ওনি নিশাদকে আবার বলতে লাগলেন,
''বাবা কি শাতি দিলা ভাবতে ও পারবানা।তোমাকে আল্লাহ দীর্ঘজীবি করুক।কিন্তু বাবা তোমার বন্ধুতো বিয়প করেনা।ওরে কিছু বলোনা।আমার কি ইচ্ছে করে না নাতি পুতির মুখ দেখতে?"
নিশাদ হেসে দরজার দিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজকে দেখে মাথা ঘুরিয়ে সৈয়দা বানুর দিকে ফিরে বলল, 
''আন্টি বৌ ঠিক আছে।আপনি সুস্থ হয়ে নিন........বৌ শীঘ্রই চলে আসবে।"
নিশাদের কথায় অবাক ইদ্রি আর ওদের মা।সৈয়দা বানু ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
''কিরে ইমতু কথাটা কি সত্যি?মেয়ে কে?"
ইমতিয়াজ এগিয়ে আসে মায়ের দিকে।তারপর মায়ের গাল ছুঁয়ে বলল,
''মা তুমি তাকে খুব পছন্দ করো.....চিনো ওকে।তুমি জলদি সুস্থ হয়ে যাও।ও চলে আসবে।"
সৈয়দা বানু অবাক হয়ে বললেন,
''কে তোর বান্ধবী না?কি নাম জানি?"
পাশ থেকে ইদ্রি বলল, 
''মা তমা আপু।"
সৈয়দা বানু সেদিন ভীষন খুশি হন।যেন ওনার অর্ধেক রোগ সেড়ে গেছে।ইমতিয়াজদের ড্রয়িংরুমে এসে বসে নিশাদ।আন্টি ঘুমোচ্ছেন।ওদের কাজের মহিলা রানু খালা রোল ভাজছেন।ইদ্রি দূর থেকে নিশাদকে দেখছিলো।তবে আজ অজানা কারনে তার নিকটে যেতে লজ্জা হচ্ছে।ভীষন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।এ অনুভূতির নাম কি ওর জানা নেই।তবে মনের মাঝে শুধু একটাই ভাবনা আসছে কিছুদিনের মাঝেই ও মিসেস নিশাদ হবে।সবাই বলবে ঐতো নিশাদের বৌ যাচ্ছে।ইকরাম আঙ্কেলের বড় ছেলের বৌ যাচ্ছে।পূর্না বেবির বড় মামী যাচ্ছে।ইস ওর ও সংসার হবে।খুব কিউট সংসার......ও বড় বৌ হবে।খুব মমতাময়ী শাশুড়ী,বাবার মতো শ্বশুর,দেবর, জা আর খুব ভালবাসবে তার প্রিয় মানুষটি ওর স্বামী।ভাবতেই বুকটা ভরে এলো ওর।পাকঘরে কাপে চা ঢালতে ঢালতে গুনগুনিয়ে যাচ্ছে ইদ্রি।পাশে রানু খালা বললেন,
''কি গো মা।গান গাইতাছো যে?বিয়ার কথা হইছেনি?"
ইদ্রি ভীষন লজ্জা পেয়ে মাথা দুলায়।নিশাদ ইমতিয়াজের সাথে কথা বলছে।ইমতিয়াজ বলল,
''তুই না আমার কাজটা খুব সহজ করে দিলি।নাহলে কিভাবে বলবো ভেবে মরে যাচ্ছিলাম।"
চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে নিশাদ।এতক্ষন ভাবছিলো হ্যা বলে দিলো তবে আম্মা আব্বাকে জানাতে পারেনি।শুধু জানে আপা.... আর কেউনা।কি করবে ও?আপা ও চলে যাবে।ভাবতেই দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে ওর।ইমতিয়াজের কথায় ঘোর কাঁটে নিশাদের।জবাবে স্মীত হেসে অস্ফুটস্বরে জবাব দিলো,
''হুম।"
নিশাদের এমন জবাবে সন্তুষ্ট না ইমতিয়াজ।ওর চেহারাই বলে দিচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবছে নিশাদ।এরই মাঝে নাস্তা এসে গেলো।গরম গরম রোল,কাবাব খুদা ধরানো ঘ্রান ছড়াচ্ছে।খাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ইমতিয়াজ বলল,
''কি ভাবছিস?"
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশাদ।বলল,
''ভাবছিলাম আব্বা আম্মাকে কি করে বলবো?আপা জানে শুধু আর আপা চলে যাবে।আমি কি করবো?বলতো?কিছু কাজ করছেনা মাথায়।দমবন্ধ লাগছে।"
ইমতিয়াজ ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলল, 
''বুঝতে পারছি।সময় নে তুই।দুলাভাই ডেট বাড়াতে পারবেনা?"
নিশাদ চায়ে চুমুক দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
''জানাতে হবে।"
এদিকে নিশাদকে পাকঘরের দরজা থেকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে ইদ্রি।লোকটাকে একা পেলে কথা বলতো ও।তাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতো।বুকটা ফেড়ে দেখাতো আজ কতো খুশি ও।তবে ভাইয়ার জন্য হয়ে উঠছেনা সেটা।ভাবতে বুক ভরে জমা হলো এক রাশ অভিমান কষ্ট আকাঙ্খা।আর সেই মিশ্র অনূভুতিতে তাকিয়ে আছে ভাইয়া বেরুবে কখন?চল্লিশ মিনিট পার হলো ইমতিয়াজের সরে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই।আশ্চর্য লোকটাকি ওকে খুঁজছেনা?সে কেন বলছেনা আমার সাথে কথা বলতে চায়?ইদ্রির রাগ হচ্ছে।হঠাৎ শুনতে পেলো নিশাদ দাঁড়িয়ে বলল,
''আসছি অনেকটা সময় পেরুলো। অফিস যাবো এখন।"
তখনই ইমতিয়াজ বলল,
''দাঁড়া "
বলে ভিতরে ঢুকে গেলো ও।তখনই ইদ্রি দৌড়ে নিশাদের কাছে এলো।চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু নিয়ে বলল,
''আই লাভ ইউ।আমি আজ কতোটা খুশি বলতে পারবোনা।"
কিন্তু নিশাদ কোন উত্তর না দিয়ে পিছনে ইশারা করলো ইমতিয়াজ।ইদ্রি ভাইকে দেখে সরে গেলো দ্রুত।পাকঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।ইমতিয়াজ নিশাদের কাছে এসে হাসছিলো আবার সেই হাসি নিয়ে বোনের দিকে ও তাকায়।ইদ্রির মনে হচ্ছিলো ভাইয়া হয়ত ওকে দেখেছে তাই হাসছে।বেশ লজ্জা লাগছে ওর। তবে নিশাদ বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইদ্রির মনে হলো ওর দিকে তাকিয়েছে।ইদ্রি তাকাতেই নিশাদ ইশারায় কি যেন বলল।তবে ওর মুখ নাড়ানো দেখে মনে হলো বলেছে আই লাভ ইউ টু।
.......................সেদিন রাতে ঘরে ফিরে নিশাদ।আজ সারাটাদিন গভীর ভাবনায় কেঁটেছে ওর সময়।ভাবনা হচ্ছে আব্বা আম্মাকে নিয়ে।কি করে জানাবে ওর আর ইদ্রির সম্পর্কের কথা?আর আব্বা শুনলে কিভাবেই বা গ্রহন করবেন ব্যাপারটিকে যেখানে পাত্রী ওর চেয়ে ষোল বছরের ছোট।ব্যাপার গুলো ভাবতে ভাবতে কেমন যেন মাথা ঝিম ধরে যায় ওর।দ্রুত শাওয়ার নিতে চলে যায়।এদিকে বেলা তরকারি গরম দিয়ে পূর্নাকে খাওয়াতে এসে দেখে জুলেখা বানু নাতনীকে রাজ্যের ভুত পেত্নীর গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন।আর পূর্না হা করে মুখে ভাত নিয়ে নানুর কথা শুনছে।ওনার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।কিন্তু এটাই তো নানি দাদিদের ভালোবাসা।হাজার গল্প শুনানো তাদের অভ্যাস।বেলা হেসে ফেলে তারপর মায়ের কাছে বসে মেয়েকে পানি খাইয়ে বলল,
''আম্মা কি কইতাছো ও কিছু বুঝতাছে?তোমার গল্প গুলা কিছুই যাইতেছেনা ওর মাথায়।"
জুলেখা বানু হেসে বললেন,
''তারফরেও এরে গল্প শুনাইয়া বুক ঠান্ডা করি বেলা বুঝতিনা।"
বেলা হেসে মেয়েকে বলল,
''খেয়ে নাও মা।তোমার কাপড় বদলাতে হবে তো।"
পূর্না গিলে নেয় মায়ের কথায়।জুলেখা বানু নাতনীর মুখে আরেক লোকমা ভাত দিয়ে বলল,
''নিশাদরে কস না বিয়া করতো।হেই কবে বিয়া কইরবো?বয়স হইছে আমগোর।মইরা যামু আমরা।আমাগোর কি শখ নাই নিশাদের বৌ দেখোনের?"
বেলা বলল,
''আম্মা ও এখন তোমাদের নিয়াই ভাবতাছে।বিয়া করবো।"
''কইরবো।তোর ভাইরে বিয়ার কথা কইলে নাক চৌদ্দ হাত উরফে উডায়।"
বেলা হেসে ফেলে মায়ের কথায়।হঠাৎ দরজার কোনা থেকে নিশাদ বলল, 
''আপা একটু এদিকে আয় তো। "
দরজার দিকে তাকিয়ে বেলা বলল,
''ভাত দিবো?"
নিশাদ মাথা নাড়িয়ে বলল,
''না আপা।আয় না প্লিজ।"
বেলা উঠে ভাইয়ের সাথে রুমে গেলো।নিশাদের রুমে আদনান আর বিভান দুজনেই বসে।সাথে সাঁঝ ও আছে।নিশাদ বলল,
''কথা আছে আমার।কিভাবে বলবো বুঝতে পারতেছিনা।"
নিশাদের এমন কথায় বেশ অবাক বিভান আদনান আর সাঁঝ।আদনান আর সাঁঝ ভাইকে এভাবে কথা বলতে আগে দেখেনি।বিভান বলল,
''কি বলবে বলো। "
নিশাদ কি যেন ভেবে বলল,
''আপা ইদ্রির কথা তোকে বলেছিলাম।আসলে ভাই ইদ্রি আমার বেস্টফ্রেন্ডের ছোট বোন।ইমতিয়াজ কে মনে আছে না আপনার?"
বিভান মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''হ্যা আছে তো।কেন?"
নিশাদ সব খুলে বলল।আজ যা যা হলো সব।সব শুনে বিভান, আদনা,সাঁঝ প্রচন্ড অবাক হলো।নিশাদ এতদিন ধরে প্রেম করছে আর কেউ জানতে পারেনি?বিভান বলল,
''দেখো মেয়েটার মা অসুস্থ বাবাও মারা গেছে।তুমি বাবা মাকে নিয়ে ভেবোনা আমি আছি।বলবো বাবাকে।তুমি এখন ইদ্রিকে নিয়ে ভাবো।একজন মাকে কথা দিয়েছো।এটার মূল্য কম নয়।তুমি একদম ভেবোনা কাল সকালে বাবার সাথে কথা বলবো।নিশ্চয়ই রাজি হবেন ওনি।"
বিভানের কথায় ভরসা পেলো নিশাদ।বলল,
''ভাই আপনাকে ধন্যবাদ দিলে ও কম হবে।"
বিভান হেসে বলল,
''দুলাভাই না তোমাদের ভাই হিসেবে দেখো।ভালো লাগবে আমার।আর তোমরা তো আমাদের ছোট ভাইবোন।এতটুকু করতেই পারি তাইনা?"
নিশাদ মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকায়।বিভান আর নিশাদের কথা শেষ হতেই সাঁঝ বলল,
''ভাই আমি ভীষন খুশি তবে তুই প্রেম করলি মানে আমাদের কাউকে না জানিয়ে ঠিক হজম হচ্ছেনা।"
বোনের কথায় হেসে ফেলে নিশাদ।বলল,
''আমি ও জানতাম না যে ভালবাসি।তবে হয়ে গেলো কিভাবে জানি।আর জানানোর সময়টাই পেলামনা।এত কিছু হয়ে গেলো এর মধ্যে।সময় সুযোগ কোনটাই পাইতেছিলাম না।"
নিশাদ কে থামিয়ে সাঁঝ বলল,
''মজা করছিলাম ভাই। তবে মেয়েটা খুবই লক্ষী সবার সাথে সহজে মিশে যেতে পারে।"

!!!!

সকাল থেকে ইকরাম রাহমানের সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে বিভান। ওনি এখনো ওঠেননি।বিভান দেয়াল ঘড়িতে দেখলো সকাল দশটা বাজে।বিভান সোফায় বসে সংবাদ পত্রটা হাতে নেয়।কিন্তু সেখানে আসলে মনটা টানছেনা।বাবার সাথে কথা বলা উচিৎ।নিশাদ ও অফিসে গেলো।বিভানের উত্তেজনায় কিছু ভালো লাগছেনা।সংবাদ পত্র টা রেখে উঠে দাঁড়ায়।সকাল থেকে পূর্নাটাও বিরক্ত করছে।খুব কাশি দিচ্ছিলো।রাতে বেলাদের সাথে ঘুমিয়েছিলো পূর্না।কিন্তু ওর অনবরত কাশি তে কেউই ঘুমোতে পারছিলোনা।অগত্যা বিভাানকে উঠে আসতে হয়।এসে দেখে পূর্না কাশতে কাশতে কান্না করছে আর বেলা ওকে কোলে নিয়ে বসে আছে।পাশে সাঁঝ ও উঠে বসলো।ঘুমাবে কি করে?বাচ্চাটা কান্না করছে অনবরত।এদিকে ওরা সারাদিন কাজ করে ভীষন ক্লান্ত।তাই বিভান বেলার কাছে গিয়ে বলল,
''ওকে আমার কাছে দাও।তোমরা ঘুমাও আমি দেখছি কি করা যায়।"
বেলা ওকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''আপনি ঘুমোন।আমি ওকে আদার পানি করে দেই মধু দিয়ে তাহলে কাশি কমে যাবে।"
সাঁঝ পিছন থেকে বলল,
''আপা আমি ও আসি।"
বেলা মাথা নেড়ে বলল,
''না তোর অফিস আছে ঘুমা আমি দেখি।"
বলেই বেলা পাকঘরে যাবার জন্য পা বাড়ায়।বিভান ও ওর পিছু চলে আসে।বেলা মেয়েকে বিভানের কোলে দিয়ে বলল, 
''একটু রাখুন আমি আদা আর দারচিনি এলাচি ছেঁচে নেই।"
বলেই বেলা পাঁটা নামায়। বিভান বলল,
''একটু লবঙ্গ ও দিওও।ভালো কাজ করবে।"
বেলা বলল,
''জি।"
বিভান পূর্নাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে হাঁটতে থাকে কিন্তু কান্না থামছেনা।জুলেখা বানু উঠে আসেন।চিন্তিত স্বরে বলেন,
''কিরে বেলা পূর্নার শরীর বেশি খারাপ?"
বেলা মাথা উঠিয়ে বলল,
"'জি আম্মা।কাশির জন্য ঘুমাইতে পারেনা।কি করি বলো তো?"
জুলেখা বানু জিজ্ঞেস করেন,
''ও কই এহন?"
বেলা বলল,
''বিভান বারান্দায় নিয়ে গেলো।"
জুলেখা বানু বললেন,
''বেলা কাইল তোর আব্বা অথবা কুঞ্জনরে কইয়া তুলসি পাতা আনাইয়া দিমু।কাশি কইমা যাইবো।"
বেলা মাথা নাড়ে।এরপর আদার পানি বানিয়ে পূর্নাকে কোলে নিয়ে চেয়ারে এসে বসে।সামনে বিভান আর জুলেখা বানু দাঁড়িয়ে।পূর্না কাঁদছে আর কাশছে জোরে জোরে।এরমাঝে ইকরাম রাহমান প্রিয়াশা উঠে এসেছে সাথে আদনান ও।বেলা পূর্নার মুখ জোর করে ধরে আদার পানি খাওয়াতে থাকে।যতোবারই মুখে দিচ্ছে বাচ্চাটা কাশি দিয়ে সব ফেলে দিচ্ছে।একসময় বেলা কেঁদে ফেলে।কোনমতে ওগুলো খাইয়ে দিলে।সবাই ওর দিকে মন খারাপ করে চেয়ে আছে।বিভান বলল,
''বেলা ওকে নিয়ে কিছুক্ষন হাঁটি আমি।আপনারা সবাই শুয়ে পড়ুন।"
প্রিয়াশা বলল,
''এতো কাশি কিভাবে যে হলো?"
বিভান মেয়েকে নিয়ে হাঁটতে থাকে।বেলা টেবিলের ওপর পূর্নার ফেলে দেয়া পানি গুলো মুছে নেয়।সেদিন রাতে কারোর ঘুম আসেনি।একের পর একজন পূর্নাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে।এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে বিভান।ঘুমিয়ে থাকা পূর্নার মাথা ছুঁয়ে দিতেই খেয়াল করলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।বিভান গলা ছেড়ে ডাকে, 
''বেলা!!!"
দৌড়ে আসে বেলা।বিভান বলল,
''পূর্নার খুব জ্বর।কাউকে দিয়ে ঔষধ আনাও।আমি তো চিনিনা তেমন কিছু।"
বেলা চিন্তিত মুখে মেয়ের কপাল গাল ছুঁয়ে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।বিভান এবার মেয়ের কাছে গিয়ে বসতেই ইকরাম রাহমান এসে বললেন,
''কি অবস্থা ওর?"
বিভান বলল,
''অনেক জ্বর বাবা।আপনি নাস্তা করলেন?"
ইকরাম রাহমান চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
''করলাম।ঔষধ দেয়ার লাগবো ওরে।সারারাত ঘুমায় নাই।"
বিভান চুপ করে বসে থাকলো।হঠাৎ বলল,
''বাবা আপনার আর মায়ের সাথে কথা ছিলো।খুব দরকার।"
ইকরাম রাহমান জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে জুলেখা বানু কে ডাকতে লাগলেন। জুলেখা বানু আসতেই বিভান বলল,
''আপনাদের সাথে দরকারি কথা আছে আমার।"
ইকরাম রাহমান আর জুলেখা বানু দুজনেই বিভানের দিকে তাকিয়ে।ইকরাম রাহমান বললেন,
''কি বলবা বাবা?"
বিভান বলল,
''বাবা নিশাদকে নিয়ে কথা।সেটা হলো ওর বন্ধু ইমতিয়াজের বোন ইদ্রির সাথে নিশাদের সম্পর্ক মাস খানেক যাবৎ।"
ইকরাম রাহমান রেগে বললেন,
''তারমানে এইজন্যই বিয়া করবোনা হে?"
'বিভান মাথা নিচু করে বললেন,
''বাবা সেটা কারন হতে ও পারে নাও হতে পারে।বাবা ও সবসময় আপনাদের কথাই চিন্তা করে।ভাইবোনের কথা চিন্তা করে।আর ব্যাপারটা হলো মেয়েটা কিছুদিন আগেই বাবা হারালো।খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো।আজ ওর মা ও খুব অসুস্থ।ওনি হয়ত বাঁচবেননা।ওনি নিশাদকে রিকোয়াস্ট করেছেন ও যেন মেয়েটাকে বিয়ে করে।ইদ্রি ও নিশাদকে অনেক ভালবাসে।মেয়েটা অনেক লক্ষী।বয়স হিসেবে বেশ ভালো বুঝে সব কিছু।আপনাদের কোন অভিযোগ থাকবেনা ওকে নিয়ে আশা করি।এখন বাবা আপনাদের কি উচিৎ হবে মেয়েটার অসুস্থ মায়ের কথা ফেলে দেয়া।এ কাজ টা যদি আপনার পূর্নার সাথে হয় তখন কি করবেন আপনি?"
ইকরাম রাহমান পূর্নার দিকে একপলক তাকিয়ে ধীর স্বরে বললেন,
''মাইয়াডা তো অনেক ছোড।আর তাছাড়া ও কিছু বুঝবে সংসারের?"
বিভান বলল,
''বাবা সবাই এসে সব বুঝে যায়না।ওকে সবাই মিলে সাহায্য করবে সময় দিবে।বাবা মেয়েটা নিশাদের অযোগ্য না।প্লিজ মেনে নিন।আর তাছাড়া আমরা ও চলে যাবো চারদিন পর।নিশাদকে বিয়ে টা দিয়ে যেতে না পারলে বেলার কষ্ট থেকে যাবে।সেটা আপনি সহ্য করতে পারবেন?"
ইকরাম রাহমান বললেন,
''তাইলে আর কি করার?মাইন্যা নিতেই অয়।পোলা সারাজীবন সংসারের লাইগা খাঁটছে।আমাগোর কিছু করা উচিৎ ওর লাইগ্যা। কি কও জুলেখা?"
জুলেখা বানু এবার মুখ খুললেন।বলতে লাগলেন,
''মাইয়াডা তো খারাপ না খুব ভদ্র আর ভালা।তাছাড়া সৈয়দা আফাও খারাফ না।বিয়া দেওন যায়।আর তোমরা চইলা যাইবা কিছুদিনের মইধ্যে তাইলে যা করার এহনই করার দরকার।"
এরই মাঝে লাবনী এসে পূর্নাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়ে মাকে বলল,
''কুঞ্জন ভাইয়া ঔষধ আনছে ওকে নিয়ে যাই।"
বলে চলে গেলো লাবনী।তবে বাবা মা আর দুলাভাইয়ের কথায় বুঝলো নিশাদ ভাইয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে ভাবতেই খুশি হয়ে গেলো ওর মনটা।পূর্না কে নিয়ে গেলো বেলার কাছে।এদিকে বিভান বলল,
''বাবা কি করবেন এখন?"
''জামাই তুমি কও।"
বিভান কি যেন ভেবে বলল,
''আমি একটা কথা বলি।আপনারা বলেন করা যায় কিনা?"
ইকরাম রাহমান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান বিভানের দিকে।
.......................এদিকে অফিসের ফাঁকে ইমতিয়াজের সাথে দেখা করতে আসে নিশাদ।ইমতিয়াজের অফিসে এসেছে ও।ইমতিয়াজ খেয়াল করলো নিশাদের চোখ কেমন হয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে ঘুম হয়নি সারারাত।ইমতিয়াজ বলল,
''কিরে ঘুম হয়নি কাল?"
নিশাদ বলল,
''নারে।বাচ্চাটা এতো অসুস্থ।সারারাত কাশির সাথে কান্না কাটি।বেচারী ঘুমোয়নি।বাসার সবাই জেগে ছিলো।সকালে আসার সময় দেখলাম খুব জ্বর।"
ইমতিয়াজ ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলল,
''মেডিসিন দিচ্ছেনা?"
নিশাদ বলল,
''কাল রাত থেকেই কাশি।কোন কারন ছাড়াই কাশি হচ্ছে।"
''ওহ।তা কি কাজে আসলি?"
নিশাদ বলল,
''হুমায়রার ব্যাপারটার কিছু হলো?"
ইমতিয়াজ বলল,
''কয়েকজনকে ধরে এনেছে।এরমাঝে তিনজনের ছবি পাঠিয়েছে পুলিশ।তোদের বাসার পাশের সেদিনকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওদের দেখা গেছে।এখন এরাই কিনা সেটা হুমায়রা ভালো জানে।"
নিশাদের চোখ জ্বলে উঠে।বলল,
''কই ছবি গুলো?"
ইমতিয়াজ ওর ফোন থেকে নিশাদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে বলল,
''তোর হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর।"
নিশাদ ফোন অন করে কিছুক্ষন যাবৎ ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একবার।ইমতিয়াজ হঠাৎ বলল,
''বাসায় কথা হলো তোর আর ইদ্রির ব্যাপারে?"
নিশাদ মাথা তুলে তাকায়।তারপর বলল,
''দুলাভাই সাঁঝ আর আদনান কে কাল বললাম।দুলাভাইয়ের তো আজ বলার কথা।এখন দেখি কি করে।"
ইমতিয়াজ নিশাদের হাত ছুঁয়ে বলল,
''একটু জলদি করিস।"
নিশাদ ধীরে মাথা ঝাঁকায়।কিছুক্ষন সেখানে সময় কাঁটিয়ে বেরিয়ে আসে নিশাদ।নিচে আসতেই ওর নম্বরে কল আসে কার যেন।নিশাদ ফোন বের করে দেখলো বেলা কল করেছে।নিশাদ ফোন রিসিভ করতেই বেলা বলল,
''কই তুই?"
নিশাদ কিছুটা অবাক হলো।বলল,
''ইমতিয়াজের কাছে আসছিলাম এখন অফিসে যাচ্ছি।পূর্না ঠিক আছে?"
''ঔষধ দিলাম।জ্বর নেই এখন।একটু কষ্ট করে বসুন্ধরায় চলে আয়।"
নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, 
''কেন আপা?"
''আগে আয় তারপর বলছি।"
নিশাদ আচ্ছা বলে কল কেঁটে দিলো।তারপর রওনা হলো বসুন্ধরার উদ্দেশ্যে।সেখান পৌছুতেই বেলা আর বিভানের সাথে দেখা নিশাদের।বেলা বলল,
''চল গয়নার দোকানে যাই।"
নিশাদ অবাক হয়ে বলল,
''কেন আপা?"
বেলা বলল, 
ওনি আব্বা আম্মার সাথে কথা বলল তোদের নিয়ে।আজ আমরা কয়েকজন গিয়ে ইদ্রিকে আংটি পরিয়ে আসবো।বেশি আয়োজন করবোনা। ছোটখাটো অনুষ্ঠান করবো তোদের বিয়ের।কারন আমাদের ও তো বেশি দিন নেই।পরে নাহলে বড় অনুষ্ঠান করবো আমরা।"
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেলে বেলা।নিশাদের কানে বেলার কথা গুলো বাজতে থাকে বারবার।নিশাদ বলল,
''আব্বা মেনে নিয়েছে?"
বেলা অবাক হয়ে বলল,
''এতক্ষন কি বললাম?"
পিছন থেকে বিভান মিটিমিটি হাসছে।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।