দুইদিন পর সম্পূর্ণা বাপের বাড়ি এলো। আশিক গিয়ে ওদের নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণাকে। শাদাব সন্ধ্যায় আসবে ওর বন্ধুদের নিয়ে। ইয়াসমিন বেগম বললেন," জামাই শ্বশুর যাওয়ার সময় কিছু নিয়ম আছে। কথাটা শুনে শাদাব বিরক্তিকর গলায় বলল, " মা এইখানেও নিয়ম? তাও আবার এই মেয়ের জন্য?ইয়াসমিন বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বললেন," জামাইদের কিছু নিয়ম থাকে।তবে না মানলেও সমস্যা নেই। আগে থেকেই যখন এই প্রথা প্রচলিত তাই এখনো মানুষ করে।"
-" কী প্রথা?"
-" আজকের দিনে গেলে জামাইদের মুদি বাজার থেকে শুরু করে মাছ মাংসও নিতে হয়।"
শাদাব মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল," আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি আসছি।"
-" সাবধানে যাস।"
শাদাব বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার দুই বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিয়ে এলো সম্পূর্ণাদের বাড়ি যাবে বলে।
সম্পূর্ণা আসার পর থেকেই ঘুমাচ্ছে। বাড়ির সবাই আসছে আর যাচ্ছে তাকে দেখার জন্য। কিন্তু সে কারো উপর তোয়াক্কা না করেই ঘুমিয়ে আছে তাবিয়ার রুমে। এই বাড়িতে আসার পর থেকে তাকে তার রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না। কী আছে কে জানে? শুধু এইটুকুই বলছে শাদাব আসলে এক সাথে।
সন্ধ্যায় সাতটায় শাদাব এলো। আসার সময় বাজারের সব যেন ও নিয়ে চলে এসেছে। মনে হচ্ছে সুপার শপ খুলে বসেছে। সাইফুল ইসলাম সোফায় তাদের বসতে দিয়ে নিজে বসে, "কী দরকার ছিল এইগুলোর বাবা। তোমরা এখন শিক্ষিত পোলাপান। তোমরা যদি প্রথাটা ধরেই রাখো তাহলে সামনের জেনারেশন কী শিখবে? আগে দাদা দাদীরা মেনে আসছে তাই হয়তো সবাই এখনো একটু আকটু মানে। কিন্তু তুমি তো এলাহি কান্ড করে বসেছ।"
এমন সময় আতিকা বেগম তাবিয়া আর মেজ ভাবি এসেছে। সাথে কতরকমের নাশতা ট্রে-তে। শাদাব সবাইকে সালাম দিয়ে চোখ দুটো সম্পূর্ণাকে খুঁজছে। কোথায় গেল? আমি এসেছি সে কী শুনতে পায়নি? ভাবতে ভাবতে তাবিয়া বলে উঠলো, সম্পূর্ণা আসার পর থেকেই ঘুমিয়ে যাচ্ছে। এত করে ডাকলাম আসলো না এইখানে।"
শাদাব মনে মনে ভাবছে আমার কথা শুনেও সে এলো না? ওর তো বোঝা উচিত আমি এই বাড়িতে প্রথম এসেছি। কাউকে তেমন চিনিও না। একটু কাছে থাকলে সাহস পেতাম। আবার নিজের মনকে উল্টিয়ে বলল," ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আসোলে আমিও মেয়েটাকে তেমন ঘুমাতেই দিইনি এই কয়টা দিন। সহ্য করে গেছে নাকি সুখী হয়েছ জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। হঠাৎ করে আতিকা বেগম বললেন," তাবিয়া, জামাইকে তোমার রুমে নিয়ে যাও। সম্পূর্ণা ওইখানে আছে আর তোমার চাচী শ্বাশুড়িরাও সেখানে। সবার বকবকানির মাঝেও সম্পূর্ণার কোনো খবর নেই। শাদাব এসে সবাইকে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো। সবার দিকে একবার তাকিয়ে সম্পূর্ণার দিকে নজর দিলো। দেখে সে গুটিয়ে শুয়ে আছে। মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলছে আর সম্পূর্ণার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার কথা বলছে। হঠাৎ সম্পূর্ণা চোখ খুলে দেখে শাদাব দাঁড়িয়ে আছে দরজার সাথে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে বিড়বিড় করে বলল কখন এসেছে আল্লাহ ভালো জানে। খাট থেকে নেমে শাদাবের সামনে গিয়ে," তুমি কখন এলে?"
-"অনেকক্ষণ। উঠলে কেন আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে।"
তাবিয়া তখন বলল," ভাইয়া এসেছে তোমাকে একবার বলে গিয়েছি আমি। বাট তুমি ঘুমের ঘোরে খেয়াল করনি।"
-" ওহ।"
শাদাব বিড়বিড় করে বলল," তুমি ভয় পাচ্ছ কেন এত?
সম্পূর্ণা দ্বিধা গলায় বলল, " কই না তো।"
শাদাব আর কথা না বাড়িয়ে আবার চলে গেল ড্রইংরুমে। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে,"সম্পূর্ণার রুম খোলা হলো তাবিয়া আর মেজ ভাবি লামিয়া আরও কয়েকজনে মিলে সম্পূর্ণাকে রুমের সামনে নিয়ে, "শাদাবকে বল টাকা দেওয়ার জন্য।এত কষ্ট করে বাসর ঘর সাজালাম এমনি এমনি তো যেতে দিব না।"
সম্পূর্ণা শাদাবের দিকে তাকিয়ে," ওদের দাবিটা কী মিটানো যাবে?"
শাদাব সম্পূর্ণার কথা শুনে তাকে কিছু না বলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভাবি আপাতত এইটা কী চলবে না?"
লামিয়া মুচকি হেসে বলল," মোটামুটি চলে। তবে আজ ছেড়ে দিচ্ছি পরবর্তীতে ছাড়া হচ্ছে না।"
-" ন্যাড়া বেল তলায় একবারি যায় ভাবি।"
কথাটা বলতেই সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। শাদাব কথাটা বলে সবার সামনেই সম্পূর্ণাকে কোলে নিয়ে রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তাবিয়ার রুমে এসে সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।লামিয়া বলল," মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে আল্লাহ এইবার একটু সুখ দেখালেই হলো। শাদাব ছেলেটা বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। আমাদের সম্পূর্ণার ভুলগুলো শুধরে কীভাবে আপন করে নিয়েছে দেখেছিস?"
তাবিয়া এগিয়ে এসে বলল, " আপনি ঠিকি বলেছেন ভাবি। নরক থেকে তো মুক্তি পেয়েছে এটাই অনেক।"
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে শাদাব ওয়াশরুমে যাবে। সম্পূর্ণা আগেই উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেছে। নিজের চুল আঁচড়াতে আচঁড়াতে দেখে শাদাব ঘুম থেকে উঠে বসেছে। সম্পূর্ণা বলল, " আমাদের বাড়িতে বেডরুমে এডজাস্ট ওয়াসরুম নেই। তোমাকে ড্রইংরুমের ওয়াশরুমে যেতে হবে। এই বাড়িটা আমার দাদু করে গিয়েছেন। দাদু মারা যাবার পর বাবা শুধু সামান্য আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলেছে এতটুকুই।"
শাদাব গাঢ় গলায় বলল, " আমি লুঙ্গি, তোয়ালে ব্রাশ নিয়ে ওয়াশরুমে যাব? এইটা তুমি ভাবলে কী করে?"
-" তাহলে?"
-" আমি যাচ্ছি তুমি আসো এইগুলা নিয়ে।"
কথাটা বলেই শাদাব বিড়বিড় করতে করতে এই জন্যইতো কাল ভাবছি আমাকে কমন ওয়াশরুমে নেওয়ার কারণ কী? এখন বুঝতে পারছি সেই কারণ। "
শাদাব উঠে যেতেই সম্পূর্ণা পিছন পিছন এইগুলো নিয়ে হাঁটছে। শাদাবকে ব্রাশ এগিয়ে দিয়ে এইগুলো এইখানে রাখবো?"
-" ছি ছি এই জায়গায় রাখলে আমি আবার এইগুলা পরবো? সম্পূর্ণা তুমি এমন কেন? আমার পছন্দ অপছন্দ তোমার শীগ্রই জানা উচিত। "
সসম্পূর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে," আস্তে আস্তে জেনে নেব।"
সম্পূর্ণা দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শাদাব গোসল করে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। সম্পূর্ণাও পিছন পিছন। আতিকা বেগম বিষয়টা খেয়াল করলেন। তিনি লামিয়াকে বললেন," লামিয়া, ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন জানি লাগছে। ও বাথরুমে যাবে তাই বলে সম্পূর্ণা দাঁড়িয়ে থাকবে কেন?"আতিকা বেগম কথা শেষ করতেই সম্পূর্ণা তোড়জোড় দেখিয়ে বলল," মা শাদাবের নাশতা হয়েছে? একটু তাড়াতাড়ি করো না!"
আতিকা বেগম কপাল কুঁচকে বললেন," উঠলো তো মাত্র।তুই এমন দেখাচ্ছি যেন দুইমাস থেকে না খেয়ে আছে।"
-" মা বকবক ভালো লাগে না। নাশতাটা দাও আমি রুমে নিয়ে যাচ্ছি।"
লামিয়া বলল," চাচী থাকনা। নাশতা তো রেডিই আছে।"
আতিকা বেগম আবার বললেন," রুমে খাবে? কিন্তু তোর বাবা যে বসে আছে জামাইয়ের সাথে খাবে বলে।"
সম্পূর্ণা কথাটা শুনে কিছু না বলে নাশতা নিয়ে রুমে চলে গেল। আতিকা বেগম অবাক হলেন। সম্পূর্ণার হয়েছেটা কী? এক সাথে নাশতা খেলে কী হতো?"
সম্পূর্ণা এসে খাটের উপরে নাশতার ট্রে রেখে," তুমি খাও আমি বসছি।"
-" তুমি খেয়েছ?"
-" আমি পরে খাব। তুমি খাও।"
শাদাব ধমক দিয়ে বলল," পরে খাবে মানে? পরে আলসার হলে ডাক্তার নিয়ে আমাকেই দৌড়াতে হবে। হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।"
সম্পূর্ণা বুঝে উঠতে পারে না এই লোকটাকে। ভালো না-কি খারাপ বুঝা বড্ড দায়। একবার মনে হয় নিজেকে পতিতা-দের একজন। কারণ পতিতাদের কোনো সম্মান নেই। তারা রাত বিরাতে কাপড় খোলে পুরুষ মানুষের মনোরঞ্জন করে। সম্পূর্ণাও তো তাই করছে।শাদাব যখন খুশি আসবে এসেই যেন সম্পূর্ণার শরীরটাই তার সব। কিন্তু আবার কিছু কেয়ারিং দেখলে মনে হয়, না মানুষটা খারাপ না। হয়তো বিয়ের প্রথম প্রথম তাই এমন করে। শাদাব সম্পূর্ণাকে খাইয়ে দিয়ে বলল," বিকেলে বাড়ি চলে যাব।"
সম্পূর্ণা মাথা উঠিয়ে বলল," কেন?"
শাদাব রাগী চোখে তাকিয়ে," মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতো থাকবা। কিসের এত তর্ক! হুম?"
সম্পূর্ণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।
বিকেলে আতিকা বেগম মন খারাপ করে বলল," মেয়েটা আসলো একদিন হলো না এখন যেতেই হবে? বাবা শাদাব থেকে যাও না বাবা?"
শাদাব একগাল হেসে বলল," জি আম্মা" আমি তো থাকতেই চাইছি। কিন্তু সম্পূর্ণা থাকতে চাইছে না। ওকে কত করে বুঝালাম, আসলাম যখন থেকেই যাই। কিন্তু না ও আমাদের বাড়ি যাবেই।"
কথাটা শুনে সম্পূর্ণা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। শাদাব সম্পূর্ণার দিকে তাকিয়ে, " তাই না সম্পূর্ণা?"
সম্পূর্ণা তড়িৎভাবে ঘনঘন উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।
সাইফুল ইসলাম সম্পূর্ণার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠেই চলে গেলেন নিজের রুমে। আতিকা বেগমের কিছু আর বলার রইল না।
সেদিন বিকেলেই শাদাব বাড়ি ফিরে এলো।
.
.
.
চলবে......................................