রংধনু - পর্ব ৬২ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


হঠাৎ দরজায় নকের শব্দে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা তুলে তাকায় নিশাদ।বিভান বাহির থেকে বলছে, 
''নিশাদ আমি আসবো?"
নিশাদ একটু সোজা হয়ে বসলো।তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল,
''জি ভাই আসুন।"
বিভান রুমে ঢুকে মৃদু হাসে।তারপর দরজা চাঁপিয়ে বলল,
''ঘর টা এত শূন্য লাগছে সাঁঝের অনুপস্থিতিতে। এমন লাগবে আগে বুঝিনি।"
নিশাদ ছোট্ট শ্বাস ছাড়ে।মুহূর্তে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে আসে।সাঁঝ এতক্ষনে একশতবার ওর খবর নিতো।কিন্তু ও আসবেনা আর খবর নিতে।আপা আর কতোদিন বা থাকবে?নিশাদের বুকে অজানা যন্ত্রনা হতে থাকে।বিভান হেসে ওর পাশে এসে বসে।নিশাদ বিভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
''ভাই আপনি সহজে রাগ করেননা ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। 
বিভান দুষ্টু হেসে বলল,
''কি নিয়ে রাগ করবো?বাবার কথায়?ওনি তো আমার ও বাবা তাইনা?বাবা মায়ের অধিকার আছে রাগ করার।আর ভুল তো করেছিলাম তাইনা?এই বকা গুলো তে ও ভালোবাসা থাকে নিশাদ।খুঁজে নিতে হয়।
নিশাদ বিভানের দিকে ফিরে বসে বলল,
''ভাই চৌদ্দ বছর আগে মনে হয়েছিলো আপা ভুল করেছিলো।কিন্তু এখন একদম মনে হয়না।মনে হয় যে সেদিন আপনারা চলে না গেলে আপার সাথে কি হতে পারতো ভাবতেই শিউরে উঠে শরীরের একেকটা লোম।"
বিভান নিশাদকে থামিয়ে বলল,
''তবুও ভুল তো ভুল তাইনা।বিয়েটা অন্যভাবে ও হতে পারতো।
যাই হোক।যা হয়ে ছিলো সেগুলো ভুলে যাওয়া যাক এখন বর্তমানকে ভাবো।বিয়ে করতে হবে তাইনা?ছোট ভাই বৌ নিয়ে এলো তো।"
নিশাদ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,
''ভাই ওসব নিয়ে এখন ভাবছিনা।আগে পরিস্থিতি ঠান্ডা হউক।"
বিভান মৃদু হেসে বলল,
''হুম তুমি তোমার আপা সব সময় পরিবারের কথাই ভাবো।আমার ভালো লাগে।"
নিশাদ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
''ভাবতে হয় ভাই।"
বিভান মাথা ঝাঁকিয়ে বসে রইলো কিছুসময় যাবৎ।বিভান হঠাৎ বলল,
''ঘুমাবেনা তুমি?"
নিশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''বাবা মাকে একবার দেখে আসি।তারপর ঘুমোবো এসে।"
বিভান মাথা ঝাঁকিয়ে শুয়ে পড়ে।নিশাদ রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে আসতেই খেয়াল করলো ইকরাম রাহমান বসে আছেন।চোখের চশমা খুলে আড়ালে চোখ মুছে যাচ্ছেন।নিশাদের বুকটা কেমন করে উঠে।সবসময় এই মানুষটার কঠিন দিকটা দেখে এসেছিলো কিন্তু আজ যেন মানুষটাকে জড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।নিশাদ ধীর পায়ে বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়।ইকরাম রাহমান ছেলের অবস্থান বুঝতে পেরে মাথা উঠিয়ে নিশাদের দিকে তাকায়।তারপর বললেন,
''ঘুমাসনাই?"
নিশাদ বাবার হাত ছুঁয়ে বলল,
''আপনি ও ঘুমান নাই। কিছু লাগবো আব্বা?"
ইকরাম রাহমান মাথা নেড়ে কাঁপুনে কন্ঠে বললেন,
''ঘুম আইবোনারে নিশাদ।বুকটা জ্বলতাছে বড়।নিশ্বাস বন্ধ হইয়া যাইতাছে।মাইয়াডা এরুম ওরুম ঘুরতো আইজকা কার বাড়িত চইলা গেছে।"
বলেই কেঁদে ফেলেন ইকরাম রাহমান।নিশাদর চোখ ভরে আসে।বসা অবস্থায় ইকরাম রাহমানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''আব্বা তুমি ভাইঙ্গা পড়লে আমাগোরে সামলাইবো কে.....কও?কাইন্দোনা আব্বা।সাঁঝ ভালো থাকবো সুখে থাকবো।আসা যাওয়া তো করতেই থাকবো তাইনা?"
ইকরাম রাহমানের কান্না যেন বন্ধ হয়না।হঠাৎ নিশাদের চোখ পড়ে দরজার ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা বেলার দিকে।বেলার চোখে ও পানি।দূর থেকে বাবা ভাইয়ের কান্না দেখতে দেখতে কখন যে চোখ ভরে এলো বুঝতে পারেনি বেলা।বুকটা কেমন করছে ওর।আজ যদি বাবা সব ভুলে ওকে আর বিভানকে বুকে টেনে নিতো তাহলে ভালো হতো খুব।বেলা সরে আসে সেখান থেকে।তারপর ঘুমন্ত পূর্নার দিকে তাকায়।এদিকে বাবা আর ভাইয়ের কান্নার শব্দে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আদনান।ততক্ষনে ইকরাম রাহমান আর নিশাদ সরে এসেছে একে অপর থেকে।আদনান বলল,
''আব্বা আম্মা ও কান্দতাছে আর তোমরা ও এখানে কান্দতাছো।বড় অসহায় লাগতাছে।"
নিশাদ ভাইয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
''তুই শক্ত থাক। কাউকে তো স্ট্রং থাকতে হবে।"
আদনান এগিয়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে গুমড়ে কেঁদে উঠে।বলতে লাগলো,
''খুব ঝগড়া করতাম।এখন মনে হইতেছে সময় গুলা শুধুই নষ্ট হইছিলো।আরো ভালো সময় ও কাঁটাইতে পারতাম।"
নিশাদ ভাইয়ের হাত রেখে বলল,
''সম্পর্ক গুলো এমনই।জানিস ভাই বোনের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি মিষ্টি হয়।কখনো ঝগড়া আর কখনো ভালবাসা।দেখা যায় ঝগড়ার সঙ্গী চলে গেলে অপরটার অনেক কষ্ট হয়।কারন ভালবাসাটা কখনোই কম ছিলোনা।"
আদনান সরে এসে চোখ মুছে নেয়।নিশাদ বলল,
''প্রিয়াশা কি করে?"
''বসে আছে ভাই।"
''তুই শুয়ে পড়।সকালে অফিস আছে।"
আদনান মাথা ঝাঁকিয়ে রুমের দিকে পা বাঁড়ায়।

........................রুমে এসেই প্রিয়াশাকে দেখে হঠাৎ কেমন যেন লাগে আদনানের।ওর বিয়ে হয়েছে প্রিয়াশা ওর বৌ ভাবতেই অজানা ঝড় বয়ে গেলে হৃদয়ের অন্তরালে।কিছু না বলেই  বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় আদনান।।আজ হঠাৎ জীবন এভাবে বদলে যাবে বুঝতে পারেনি।কি থেকে কি হয়ে গেলো,টের ও পেলোনা।জীবন টা বড় অদ্ভুত!!! রুমে খাটের ওপর বসে থাকা প্রিয়াশার দিকে একপলক তাকিয়ে বাহিরে তাকায় ও।প্রিয়াশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা আদনানকে দেখছে।লোকটা এভাবে দূরে দাঁড়িয়ে কেন?কাছে এসে কি কথা বলতে পারছেনা?এত কি সংকোচ তার?প্রিয়াশা তো তার স্ত্রী তাহলে?প্রিয়াশা মুখ খুলল।বলতে লাগলো,
''আপনার কি সমস্যা হচ্ছে আমি রুমে থাকায়?"
প্রিয়াশার প্রশ্নে চমকে উঠে আদনান।মাথা ঘুরিয়ে প্রিয়াশাকে কে দেখে।আঁধারে চমৎকার লাগছে ওকে।আদনান মাথা নেড়ে বলল,
''না কেন?"
''আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে। তাই বললাম।"
আদনান বলল,
''ভালো লাগছে বাহিরের পরিবেশটা দেখতে।"
প্রিয়াশা খাট থেকে নেমে এগিয়ে এসে আদনানের পাশে দাঁড়ায়।প্রিয়াশার গায়ে লাল শাড়ী।পিঠের ওপর লম্বা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে ছড়ানো।আদনান প্রিয়াশার পিঠের চুল গুলো আলতো করে নেড়ে দিয়ে বলল,
''চমৎকার লাগছে তোমাকে।"
প্রিয়াশা আদনানের দিকে তাকায়। তবে সেই দৃষ্টিতে খুশির বদলে ছিলো দুঃখ।ভাবছে লোকটাকে ঠকালো ও।আদনান ভ্রু কুঁচকে বলল,
''মন খারাপ কেন?"
প্রিয়াশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
''অন্যায় হয়েছে আপনার সাথে।মাফ করবেন।"
আদনান ভ্রু কুঁচকে বলল,
''কি অন্যায়?"
''এমন একটা মেয়েকে জীবনে জড়ালেন যে কিনা রাতের পর রাত ধর্ষিত হয়েছে।"
আদনান রেগে প্রিয়াশার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর চিবুক চেঁপে ধরে বলল,
''যায় আসেনা।আমি আমার প্রিয় মানুষটাকে বিয়ে করেছি কোন ধর্ষিতাকে না।আমি জানি তুমি আমার বৌ আমার সঙ্গীনি।আর অন্য কিছুনা।"
প্রিয়াশার চোখ ভরে এলো।ও বলল,
''প্রিয় মানুষ!!কখনো বলেননি ভালবাসেন।"
''বলিনি তো কি হয়েছে।আজ বলছি ভালবাসি।আর আগে বলিনি কারন ভয় হতো যদি হারিয়ে ফেলি।তবে এখনতো ভয় নেই।পেয়ে গেছি।আর হারাতে চাইনা।"
প্রিয়াশা আর কিছু না ভেবে আদনানকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।লোকটাকে আসলেই পেয়ে গেছে।কিছু দিন আগে ও মনে হচ্ছিলো ওর অতীত জানলে আদনান কখনো ভালবাসবেনা তবে সেই ভয় নিমিষেই দূর হয়ে গেলো।লোকটা ওকে ভালবাসে।ওর স্বামী ওকে ভালবাসে।ভাবতেই মন টা ভরে গেলো প্রিয়াশার।আদনান প্রিয়াশাকে সামনে এনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
''চলো ঘুমিয়ে পড়ি।অফিস আছে কাল।"
প্রিয়াশা মৃদু হেসে বলল,
''ওহ হ্যা।চলুন তাহলে।"
প্রিয়াশা আর আদনান পাশাপাশি শুয়ে।তবে ওদের নজর একেঅপরের দিকে।আদনান হঠাৎ প্রিয়াশাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর মাথা বুকে রেখে চুল হাতাতে থাকে।প্রিয়াশার বারবার মনে হতে থাকে আজ থেকে ও পরিপূর্ণ জীবন লাভ করেছে।ওকে আর মৃত্যু যন্ত্রনা পেতে হবেনা।ভাবতেই আদনানকে শক্ত করে জড়িয়ে চোখ বুজে নেয় প্রিয়াশা।
............................এদিকে জীবনের দীর্ঘতম রাতটি কাঁটিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে সাঁঝ।গায়ে চাদর জড়িয়ে পুরো রুমটায় একবার নজর বুলায় ও।তারপর বিছানার অপরপাশে চোখ পড়তেই চেহারায় খুশি লজ্জা সব একসাথে ভর করলো যেন।লোকটাকে পেয়ে গেলো শেষ পর্যন্ত।এখন তারা এক ভাবতেই লজ্জায় ঠোঁট টিপে হাসে সাঁঝ।হঠাৎ ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখলো আটটা বাজে।ভয় পেয়ে যায় সাঁঝ।আজ প্রথম এতো দেরিতে উঠলো।দাদু হয়ত রেগে আছেন।সাঁঝ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই দেখলো সাইমন খাটে বসে আছে।মুখে দুষ্টু হাসি লেগে আছে তার।সাঁঝ নীল শাড়ী পরেছে সাথে হালকা গয়না আর একটু সাজ।সাইমন সাঁঝ কে পিছন থেকে জড়িয়ে বলল,
''এমন একটা সকালের কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা আজ সত্যি। ভাবতেই কেমন লাগছে।"
সাঁঝ সরে এসে পিছে সাইমনের দিকে ফিরে বলল,
''দেরি হয়ে গেলো।আপনি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামুন।"
সাইমন ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''আজ অফিস নেই ম্যাম।কাল বিয়ে হলো আর আজ দূরে সরিয়ে দিচ্ছো।কাজটা ঠিক না।"
সাঁঝ সরিয়ে বলল,
''পাগলামো করবেননা।দাদি ওয়েট করছে।আমি গেলাম আপনি আসুন।"
বলে আর একটু ও অপেক্ষা করেনি সাঁঝ রুম থেকে বেরিয়ে আসে দরজা খুলে।নিচে এসেই দেখলো সোফায় বসে চা খাচ্ছেন জাহানারা বেগম।সাঁঝ লজ্জা পেয়ে ওনার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
''দাদি সরি।কখন এত লেট হয়ে গেলো বুঝলামনা।"
জাহানারা বেগম মায়াবী হেসে বললেন,
''কি যে বলো নাতবৌ।কাল আসছো সারাদিন অনেক পোহাতে হয়েছে।কিছু হবেনা।চা দিতে বলবো?"
সাঁঝ মাথা নেড়ে বলল,
''না দাদু চিন্তা করবেননা মিতুল কই?"
''ও তো কোচিং গেলো কেন?"
''এমনিই।"
জাহানারা বেগম হেসে বললেন,
''সাইমন জাগেনি?"
''জেগেছে।একটু পরই নামবেন।"
''ওহ।"
কিছুক্ষন পরই সাইমনকে নামতে দেখা গেলো।সাঁঝ দাদি আর সাইমন মিলে নাস্তা সেড়ে নেয়।হঠাৎ সাঁঝের নম্বরে কল আসে।সাঁঝ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আদনানের নম্বর থেকে কল এসেছে।সাঁঝ ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে আদনান বলল,
''কি খবর?"
সাঁঝের কান্না আসতে চায়।তবু কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,
''ভালো।তোরা কেমন আছিস?"
''আলহামদুলিল্লাহ। দাদি সাইমন কেমন আছে?"
''ভালো।অফিস যাসনাই?"
''যাবো।একটা কথা ছিলো খুব দরকার।"
''কি? "
আদনান লজ্জিত কন্ঠে বলল,
''আসলে হুট করে এতো কিছু হলো বুঝতে পারলামনা।নিজেকে অপরাধী লাগছে।"
সাঁঝ চিন্তিত মুখে বলল,
''সব ঠিক আছেনা?"
''ঠিক আছে।জানিনা কিভাবে নিবি আমার কথা।কিন্তু তোর জানতে হবে।"
সাঁঝের বুক কেমন করে উঠে।আদনান কখনো এভাবে কথা বলেনি তাহলে আজ কি হলো?
আদনান বলল,
''প্রিয়াশা আসছিলো কাল মনে আছে?"
''জি তোর কলিগ।"
''না সাঁঝও কলিগ না আমার ওয়াইফ।"
সাঁঝ থমকে গেলো।সামনে দাদি আর পাশে সাইমন।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।

!!!!

দাদিকে বলে সামনে থেকে উঠে রুমে আসে সাঁঝ।আদনান অপরপাশ থেকে আদনান সব খুলে বলছিলো।কথা গুলো শোনার মুহূর্তে সাঁঝের চোখের কোনা ভরে আসে।এজন্য নয় যে আদনান না জানিয়ে বিয়ে করেছে কিন্তু প্রিয়াশা কতগুলো বছর অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।এত নির্যাতন সহ্য করে ও বেঁচে ছিলো।হয়ত একটা মেয়েই অপর এক মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারে।সাঁঝকে চুপ দেখে আদনান আবার বলল,
''সরি।বুঝতেছি তোর খারাপ লাগছে।"
সাঁঝ চোখ মুছে নিয়ে বলল,
''কি বলিস রাগ করিনি।ভালো করেছিস তুই।"
আদনান হেসে বলল,
''ভাবছিলাম অনেক রাগ করে থাকবি।"
''আমি রাগ করলেই খুশি হোস তুই।"
দুষ্টু হেসে বলে সাঁঝ।আদনান বলল,
''এখনো খুশি হই তোকে জ্বালিয়ে।যাই হউক কি করছিস?"
''নাস্তা করে এলাম।ভাবি কি করে?"
বোনের মুখে ভাবি শুনে আদনানের ভীষন ভালো লাগে।বলে উঠলো,
''অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।"
''ওহ। আচ্ছা তোরা অফিসে যা।বাসায় কল দিবো নে।"
''আল্লাহ হাফেজ।"
সাঁঝ কল কেঁটে পিছনে ঘুরতেই সাইমনের সাথে ধাক্কা খায়।সাঁঝ চমকে উঠে স্বামীকে দেখে।থতমত গলায় বলল,
''আপনি.....খাওয়া শেষ?"
সাইমন কিছুটা অবাক হয় সাঁঝকে এমন করতে দেখে।ভ্রু কুঁচকে বলল,
''কি হলো?এমন কেন করছো?"
সাঁঝকে চিন্তিত দেখায়।কি বলবে সাইমনকে?ভাই বিয়ে করেছে সবাইকে না জানিয়ে!!এ ছাড়া কিই বা করতে পারে একদিন না একদিন জানবেই।পরে জানলে সাইমনের খারাপ লাগবে।ভাবতে ভাবতেই সাইমন সাঁঝের কাঁধ শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল,
''বলো সাঁঝ কি হয়েছে?"
''আদনান ভাই ওর কলিগ প্রিয়াশাকে বিয়ে করেছিলো কাল সকাল।"
কথাটা শুনে সাইমন সরে আসে।সাঁঝ সব কিছু খুলে বলে সাইমনকে।সব শোনার পর সাইমন বলল,
''খারাপ কিছু করেনি।মেয়েটাকে বাঁচিয়েছে।বাবা মেনেছে?"
''হুম বড় দুলাভাই মানিয়েছে অনেক কিছু বলে।"
''ওহ।সাঁঝ দাদি কে এখন কিছু বলোনা মিতুল কে ও না।সময় সুযোগ বুঝে বলবো আমি।"
সাঁঝ মাথা ঝাঁকিয়ে মৃদু হাসে।সাইমন কিছুক্ষন সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ওর হাত হ্যাচকা টেনে বুকে নিয়ে নেয়।সাঁঝ ভয় পেয়ে বলল,
''কি করছেন এসব?"
শক্ত করে সাঁঝের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
''আমার বৌ যা ইচ্ছা করছি।তোমার কি ম্যাম?"
সাঁঝ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে।সাইমন ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে দেয়।
...........................এদিকে সেদিন সন্ধ্যায় নিশাদ অফিস থেকে বেরিয়ে ইমতিয়াজের বাসার পথে রওনা হয়।ইদ্রির সাথে অনেকটা সময় কাঁটাবে ও আজ।বাসায় পৌছানোর পর সৈয়দা বেগমের মুখোমুখি হয় ও।ওনার চেহারায় মলিনতা প্রকাশ পেয়েছে।চোখের নিচে কালি পরে গেছে।ক্লান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,
''বাবা তোমার খুব কষ্ট হচ্ছেনা?"
নিশাদ অবাক হয়ে বলল,
''কিসের কষ্ট আন্টি?"
''আমি বুঝি বাবা।তোমাকে বারবার আসতে হচ্ছে ইদ্রির জন্য।এদিকে তোমার বোনটার ও বিয়ে হলো অনেক চাপ পড়ছে না বাবা?"
নিশাদ স্তব্ধ হয়ে গেলো।নিজের ভালবাসার মানুষটার জন্য করতে ওর মোটেই কষ্ট হচ্ছেনা বরং ভালো লাগছে।অন্তত কিছুটা সময় কাঁটাতে পারছে ইদ্রির সাথে।নিশাদ বলল,
''আন্টি কি বলছেন কষ্ট হবে কেন?"
''কষ্ট হয় বাবা।কিন্তু ইদ্রিকে তুমি ছাড়া কেও সামলাতে পারেনা আমি ও না।তুমি আমার মেয়েটাকে সামলাচ্ছো। কিভাবে যে ধন্যবাদ দিবো?"
নিশাদ মৃদু হেসে বলল,
''আন্টি এটা আমার দায়িত্ব।আমার মোটেই কষ্ট হচ্ছেনা।"
সৈয়দা বেগম নিশাদকে ছুঁয়ে বললেন,
''নিশ্চিন্ত করলে বাবা।ইদ্রি রুমে আছে যাও ওর কাছে।"
নিশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে সিড়িয়ে ইদ্রির রুমের পানে হাঁটতে থাকে।ইদ্রির রুমের সামনে আসতেই দেখলো রুমের আলো নেভানো।আসলে এখন বেশির ভাগ সময়েই ইদ্রির রুমের আলো নেভানো থাকে।নিশাদ ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে রুমে প্রবেশ করে।ইদ্রি এখনো নিশাদকে খেয়াল করেনি।ও শুয়ে আছে তবে ওর দৃষ্টি ফোনে বাবার ছবির দিকে স্থির।নিশাদ ইদ্রির পাশে বসে মাথায় হাত রাখে।ইদ্রি নিশাদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে পাশে তাকাতেই চোখ ভরে এলো ওর।গুঁমড়ে কেঁদে উঠে শিশুদের ন্যায়।বলতে লাগলো,
''এত দেরি করলেন কেন?আমার একটু ও ভালো লাগেনা।খুব কান্না পায়।বাবা নাম্বারটাও অফ করে রেখেছে।কি করবো বলেন তো?কতোবার কল দিলাম।ফোন ধরলোনা।"
নিশাদ ইদ্রিকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছিলো,
''দেখ ইদ্রি বড় হচ্ছো তুমি।তোমাকে বুঝতে হবে। সবাই একদিন চলে যাবে।আমরা সবাই চলে যাবো।মৃত ব্যাক্তি কখনো ফিরে আসেনা।আঙ্কেল ও আসবেনা।"
ইদ্রি আরো জোরে কেঁদে কেঁদে বলছিলো,
''আব্বু বলেছিলো কখনো যাবেনা।তাহলে কেন চলে গেলো?আব্বু যায়নি মিথ্যা বলছেন আপনি।বিশ্বাস হয়না আমার।আব্বু ফিরে আসবে।"
নিশাদ বুঝাতে থাকে আবার।সেদিন অনেকটা রাত কাঁটিয়ে দিয়েছিলো ইমতিয়াজদের বাসায়।ঘরে ফিরে ইমতিয়াজ।দরজার বাহিরে নিশাদের জুতা দেখে অবাক হয় ও।বারোটার বেশি বাজে নিশাদ এখনও যায়নি?
ঘরে ঢুকতেই রানু খালা বললেন,
''আফনের বন্দু আইছে হেই নয়টায় অহনো যায়নাই খায় ও নাই।খালায় কতো ডাকলো হুনলোইনা।"
ইমতিয়াজ ভ্রু কুঁচকে ইদ্রির রুমের দিকে তাকায়।তারপর বলল,
''খায়নি?"
''না।"
ইমতিয়াজ দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠে যেতে থাকে।ইদ্রির রুমে গিয়ে দেখলো নিশাদের কোলে ঘুমিয়ে ইদ্রি।নিশাদ দেয়ালে মাথা ঠেঁকিয়ে ঘুম।ইমতিয়াজের ইচ্ছে হচ্ছিলোনা বন্ধুর ঘুম ভাঙ্গাতে কিন্তু মা দেখলে অন্য কিছু ভাবতে পারে তাছাড়া ও খায়নি এখনো।ভেবেই ইমতিয়াজ নিশালদের কাঁধে হাত ছোঁয়ায়।বলে উঠে,
''নিশাদ!!!"
ইমতিয়াজের ডাকে কিছুটা কেঁপে উঠে নিশাদ।চোখ ঘুমন্ত চলখ আধোখুলে বন্ধুকে দেখে বলল,
''তুই চলে আসছিস?"
ইমতিয়াজ মাথা ঝাঁকায়।হঠাৎ নিশাদের মনে হলো বাজে কয়টা?ঘড়ি চেক করে চোখ কপালে নিশাদের।বারোটা পঞ্চাশ বাজে।নিশাদ ইদ্রিকে শুইয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন চেক করে দেখে বাবা, আপা আর বিভান ভাই আদনানের অনেক কল এসে আছে।নিশাদ বলতে লাগলো, 
''একটা বেজে গেলো।গেলাম কাল আসবোনে।"
বলেই নিশাদ যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ছিলো।ইমতিয়াজ ওকে থামিয়ে বলল,
''থাবড়ামু।বস একসাথে ডিনার করবো।পারলে আজ থাক।"
নিশাদ মাথা নেড়ে বলল,
''কি বলিস?পাগল নাকি........গেলাম আমি। "
আবার ও বেরিয়ে যাচ্ছিলো নিশাদ।ইমতিয়াজ ওকে প্রায় ধরে রেখেছিলো।একসাথে রাতের খাবার খেয়ে ঘরে ফেরে নিশাদ।
.............................সেদিন রাতে হুমায়রা রুমে বসে কথা বলছিলো হৃদয়ের সাথে।আজকাল হৃদয় খুব বেশি চায় ওকে নিজের বিছানায় পেতে চায় ব্যাপারগুলো ওর কেমন লাগলে ও নিজের ভালবাসাকে হারাতে চায়না হুমায়রা।কাল দেখা করতে যাবে হৃদয়ের সাথে।কলেজ ফাঁকি দিয়ে বেরুবে ওরা।অপরপাশ থেকে হৃদয় বলছিলো,
''বিলিভ করোনা আমাকে?"
''কোন ব্যাপারে?"
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে হুমায়রা।হৃদয় বলল,
''এই যে আমার সাথে হোটেলে যেতে চাওনা।"
''দেখো বিশ্বাস করি কিন্তু বিয়ের আগে ওসব তো ঠিক না।"
হৃদয় ওকে আশ্বস্ত করে বলল,
''আরে বাবা আমি তো বিয়ে করবো।তোমার সাঁঝোআপুর ও তো বিয়ে হয়ে গেলো।আমিও বাবাকে এই সপ্তাহে পাঠাবো।হুমায়রা বলল,
''দেখো এমন করলে আমি কিন্তু......
''কি তুমি কিন্তু কি?ব্রেকআপ করবা?"
''না না কি বলো?এটা আবার কখন বললাম?"
''দেখো তুমি শুতে ও দিবানা কিস করতে দিবানা।এভাবে কিন্তু কোন সম্পর্কে টিকা যায়না।"
হুমায়রার কেন যেন ভীষন খারাপ লাগে।বলে উঠে,
''শারীরিক সম্পর্ক কি করতেই হয় রিলেশনে?এটা কি বাধ্যতামূলক?"
হুমায়রার এমন কথায় রেগে যায় হৃদয়।বলে উঠলো,
''থাকো তুমি।তোমাকে আর কল দিবোনা বায়।"
বলেই কল কেঁটে ফোন অফ করে দিলো হৃদয়।হুমায়রা অনেক চেষ্টা করেছিলো হৃদয়ের সাথে কথা বলার কিন্তু পারলোনা।চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠতে থাকে হুমায়রা।
...............................এদিকে সেদিন অফিস থেকে ফেরার পর থেকে প্রিয়াশা কে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলোনা আদনান।বাসার বাকি সদস্যদের সাথে হাসি মুখে কথা বললেও প্রিয়াশা ভালো নেই সেটা বুঝতে পারছিলো আদনান।কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছিলোনা সবার সামনে।এদিকে জুলেখা বানু দায়িত্ব নিয়েছেন বৌকে ধীরে ধীরে সব সূরা আর কুরআন শিক্ষা দেবেন নামাজ ও শেখাবেন।ব্যাপারটাতে গভীর আগ্রহ দেখা গেলো প্রিয়াশার মাঝে।রাতে দুজনে পাশাপাশি শুয়ে ছিলো।এতক্ষন যাবৎ বেলা আদনান নিশাদ বিভান কুঞ্জন লাবনী একসাথে বসে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিলো।তিনটা বাজে সবাই ঘুমোতে চলে যায়।প্রিয়াশার হাত ছোঁয় আদনান। বলতে লাগলো,
''কি হয়েছে তোমার?"
প্রিয়াশা মাথা নাড়ে।কিছু বললনা।আদনান বলল, 
''চাচী বা ধনেশ কল দিয়েছিলো?"
প্রিয়াশা মাথা নেড়ে বলল,
''না কিছুনা।"
আদনান জোর দিয়ে বলল,
''কিছু হয়েছে।বলছোনা কেন?"
প্রিয়াশা ম্লান দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
''চাকরীটা না করি?"
''কেন পাক্কা গৃহিণী হতে চাইছো?"
''হুম।"
আদনান প্রিয়াশাকে বুকে টেনে বলল,
''দুবছর হয়নি।একটাবছর হলে তারপর না হয় ডেজিগনেশন লেটার দিও।কেন কিছু হয়েছে?"
প্রিয়াশা কিছু বলতে পারেনি শুধু আদনানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন