আমার অন্তরালে তুমি - পর্ব ০২ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প


বর্ণ নিজের রুমে ঢুকতে ফোন বেজে ওঠে ৷ বর্ণ কল রিসিব করে কানে ধরতে বর্ণের মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠলো ৷ বর্ন কোন কথা না বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসে৷ 

৫!!

রুনা ছন্দের ফোনের মেসেজ টা দেখে  চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে ৷ ছন্দ দাঁত দিয়ে নখ কেটে যাচ্ছে ভয়ে...

"" ভাবি এখন কি হবে ওই সাইকো খুনি লোকটা মনে হয় আমাকেও ছাড়বে না ৷ ওই লোকটার মতো আমাকেও মেরে ফেলবে৷""(ছন্দ)

"" নাহ ছন্দ এমন কিছুই হবে না ৷ এক কাজ কর তুমি ঢাকা চলে যাও কিছুদিনের জন্য ""

"" কি বলছো ভাবি আমি ঢাকা চলে যাবো তাও ওই সাইকো খুনিটার ভয়ে অসম্ভব৷ সুবহা জাহান ছন্দ কখনো বিপদ থেকে পালাতে শেখেনি ৷আর না পালাবে৷ ""

"" তাহলে তুমি কি করতে চাইছো ?""

" আমি ওই লোকটাকে আইনের হাতে তুলে দিতে চাই ৷ আমি চাই খুনি টা শাস্তি পাক৷"

"" অসম্ভব তুমি এগুলো কিচ্ছু করবে না ছন্দ৷ ওই লোকটা ভয়ঙ্কর তোমার ক্ষতি করে দিতে পারে৷ "

"" স্যরি ভাবি আমি তোমার কথাটা মানতে পারলাম না৷ বাট তোমাকে একটা কথা দিচ্ছি আমি আমার খেয়াল রাখবো কিন্তু তুমি ভাইয়া বা বাবা মা কাউকে কিছু জানাতে পারবে না ৷ আমি চাইনা আমার জন্য তারা চিন্তা করুক৷""

"" আমি আগেও বলেছি এখন ও বলছি তুমি এমন কিছু করো না প্লিজ""

"" স্যরি ভাবি ৷ তখন আমি ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ৷ মাথা কাজ করছিলো না তাই ওভাবে পালিয়ে এসেছি নাহলে ...""

"" নাহলে কি ছন্দ কি করতে তুমি? যাই হোক জোহরের নামাজ পড়ে খেতে এসো তোমার ভাইয়া তোমার জন্য অপেক্ষা করছে৷""

রুনা রাগ করে ছন্দের রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ ছন্দ বুজতে পারে রুনা রাগ করে আছে৷ 

" স্যরি ভাবি আমি পারলাম না তোমার কথা রাখতে ৷ আমাকে আমার কাজ টা করতে হবে ৷ "

ছন্দ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে উজু করে এসে নামাজ পরে নিয়ে নিচে চলে আসে৷ কিচেনে যেতে দেখতে পায় ভাবি মুখ ভার করে বসে আছে আর তার ভাই কাব্য ভাবির মুড ঠিক করার চেষ্টা করছে৷

" আমি জানি ভাবি তুমি কেন মুখ ভার করে আছো কিন্তু কোন অপরাধী আমার চোখের সামনে খুন করতে দেখে আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না৷""(বির বির করে)

ছন্দ মুখে প্লাস্টিক হাসি নিয়ে তার ভাবির পাশে বসে পরে৷ 

"" দেখনা সোনা তোর ভাবি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে ৷ কি হয়েছে আমাকে কিচ্ছু বলছে না ৷""(কাব্য)

"" আরে ভাইয়া তুমি তো জানো এই সময় মেয়েদের মুডসুইং হয় ৷ এটাই হয়তো হয়েছে৷" ছন্দ রুনার হাত দুটো দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বলল" ভাবি তুমি আমায় ট্রাস্ট করো তো?"

রুনা মাথা নারে যার অর্থ হ্যা...

"" তাহলে সবটা আমার উপর ছেড়ে দেও বাকি টা আমি দেখে নিবো""

রুনা আর কিছু বললো না চুপ চাপ খেতে শুরু করে দিলো ৷ ততোখনে ছন্দের বাবা মা সাব্বির আহাম্মেদ আর কিয়ারা বেগম এসে হাজির হয়৷ 

"" একি বউমা এখনো দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ হয়নি তোমার "" রাগি গলায়..

"" আসলে মা খেতে ইচ্ছে করছিলো না৷ "" মাথা নিচু করে বললো রুনা..

"" দেখো বউমা এখন তুমি একা নও তোমার ভিতর আর একজন বেরে উঠছে ৷ তুমি যদি এখন ঠিক মতো খাবার না খাও তাহলে তো তোমার ভিতরে যে বেরে উঠছে তার কষ্ট হবে৷ ""

"" স্যরি মা আর হবে না""

"" আম্মু ভাবি স্যরি বললো তো আর এমন ভূল করবে না ৷ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে ৷ আর ভাইয়া তুমি পিজ্জার অর্ডার দেও আর ভাবি পিজ্জা খাবে ""

রুনা হা করে তাকিয়ে আছে ছন্দের দিকে রুনা ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটা এতো কেন বোঝে ওকে মনের কথা কি সাবলিল ভাবে বুজতে পারে ৷ 

৬!!

পরেরদিন ছন্দ ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে ৷ বাড়ির সামনে থেকে রিকসা পেয়ে যায়৷  বিশমিনিটের মাথায় ছন্দ ভার্সিটিতে পৌছে যায়৷ ছন্দ ভার্সিটিতে ঢুকতে সবাই  আড়চোখে ছন্দের দিকে তাকায় ৷ ছেলেরা ছন্দ কে দেখে দুরে সরে দারায় ৷ এটা দেখে ছন্দ বেশ অবাক হয় কারন এরাই প্রত্যেকদিন ছন্দ কে বিরক্ত করে ৷ আর আজ ছেলে গুলো দুরে সরে গেল? ছন্দ ছেলে গুলোর চোখে ভয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে৷ ছন্দের ভাবনার মাঝে কেউ একজন ছন্দের চোখ চেপে ধরে ৷ 

"" বন্যার বাচ্চি চোখ ছাড় বলছি"" ছন্দের কড়া কথা শুনে বন্যা ছন্দের চোখ ছেড়ে কাচুমাচু মুখ করে দারিয়ে আছে৷

"" ক মিনিট লেট করেছিস তুই?"(ছন্দ)

"" স্যরি দোস্ত বাড়ির সব গাড়ি গুলো সার্ভিংয়ে দিসে আর রিকশা পেতে কতোটা সময় লাগে তুই জানিস তো ""(বন্যা)

"" হু জানবো না কেন আমি তোর মতো বড়লোকের মেয়ে ? মধ্যবিত্ত ঘড়ের মেয়েদের সব কিছুর অবভ্যাস করে নিতে হয়৷ যাই হোক ক্লাসে চল দশমিনিট পর ক্লাস শুরু হয়ে যাবে৷""

"" হু চল""
.
.
.
.
টেবিলের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে ফাইল দেখছে বর্ণ আর পাশে দারিয়ে আছে মিহির ৷ চোখে মুখে বিরক্তি+ভয় ৷ বর্ণ নামক লোকটাকে মিহির প্রচন্ড ভয় পায় আর এই ভয়ের কারনে চাকড়ি ছাড়ার কথা টাও বলতে পারছে না৷ যদি মেরে দেয়৷ 

"" বস ..""

"" বল""

" বস আপনি শিওর এনি সে মানে ম্যাডাম?"(মিহির)

মিহিরের কথা শুনে বর্ণ টেবিলের উপর থেকে পা নামিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দারিয়ে থাইগ্লাসের সামনে গিয়ে দারায় ....

" সে আমার হৃদয়ের স্পন্দন ৷ আমার অস্তিত্ব আমার ভাবনার রানী৷ আমার বেঁচে থাকার সন্জিবনি ৷ আমার এক আকাশ ভালোবাসা ৷ আর তাকে চিনতে আমি ভূল করবো নেভার এভার ৷""

"" কিন্তু বস ম্যাডাম তো আপনাকে খুন করতে দেখেছে নিশ্চয় আপনাকে ভূল বুঝেছে?"(মিহির)

" একবার যখন আমি আমার হৃদস্পন্দন আমার ভালোবাসা কে খুজে পেয়েছি তখন সে আমায় ভূল বুঝুক আর নাই বুঝুক না কেন  আমার কাছে ওকে থাকতে হবে ৷ আর আমাকে ভালো বাসতে হবে৷ কারন আমার অন্তরালে তুমি আর এই তুমি টাকে শুধু আমার হতে হবে৷ ""

"" বস আর একটা প্রশ্ন ছিলো?"(মিহির)

মিহিরের কথা শুনে বর্ণ মিহির কে ইশারা করে বলতে..

" বস ম্যাডাম তার প... বাকিটা বলার আগে বর্ণ হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়৷

" আমাকে বের হতে হবে "" বর্ণ আর একমিনিট ও লেট না করে বেরিয়ে যায় পিছু পিছু মিহির ও চলে যায়৷

৭!!

ছন্দ ক্লাস শেষ করে বের হতে বন্যা বায়না করে ফুচকা খাবে৷ অগ্যতা ছন্দ ও রাজি হয়ে যায়৷ দুজনে ফুচকা   খাচ্ছে ৷ ছন্দ বন্যার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ৷ বন্যা এমন ভাবে ফুচকা খাচ্ছে যেন কতো বছর ফুচকা খায়নি৷ ছন্দ বন্যা খাওয়া দেখছে আর নিজে খাচ্ছে৷ 

"" জানিস ছন্দ মম ড্যাড কেউ আমাকে ফুচকা খেতে দিতে চায় না"

"" কেন?"

" এটা নাকি হাইজেনিক নয়৷ আচ্ছা শোন আমার না একটা কিউট ভাই আছে ""

"" তো !" ব্রু কুচকে জ্বিগাসা করলো ছন্দ..

"" তেমন কিছু না ভাবছিলাম তোর তো আর ভাবি হতে পারলাম তাই তোকে না হয় আমার ভাবি বানিয়ে নি""

"" কিহ..."" বন্যার কথা শুনে ছন্দের কাশতে লাগলো..

"" কিহ হলো তোর ..""

"" কি বলছিস কি তুই তোর মাথা ঠিক আছে তুই জানিস আ,,আমি একজন বিধবা ৷ তুই যেনে শুনে একটা বিধবা মেয়ের সাথে তোর ভাইয়ের বিয়ে দিতে চাইছিস?""

"" যাস্ট শ্যাটয়াপ ছন্দ তোকে আগেও বলেছি ওটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো তোর কোন দোষ ছিলো না ৷ আর আমার ভাইয়া হাজার কোটিতে একপিস তুই একবার দেখলে চোখ ফিরাতে পারবি না৷""

"" বন্যা আমি বাড়ি যাচ্ছি বিল টা আমি দিয়ে দিয়েছি তোকে দিতে হবে না৷"" ছন্দ আর এক মুহূর্ত না দারিয়ে রিকসা উঠে বসে৷ 

"" মামা রুপসা চলেন..""(ছন্দ)

বন্যা বুজতে পারছে ছন্দ প্রচন্ড রেগে গেছে নাহলে এভাবে হুট করেওকে ফেলে চলে যেতো না৷ 

" আল্লাহ মেয়েটার কপালে কি একটু সুখ শান্তি দিতে পারো না? মেয়েটা যে বড্ড ভালো ও এই কষ্ট ডিজার্ব করে না৷ "

৮!!

ছন্দ সেই দুপুর থেকে রুপসা নদীর পারে এসে বসে আছে৷ ছন্দের যখনি খুব মন খারাপ বা কষ্ট পায় তখন এই যায়গা টায় এসে বসে৷ আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷ 

সন্ধা হতে ছন্দ ব্যাগ টা কাধে তুলে নিয়ে ওটো করে বাড়ি ফিরে আসে৷ ছন্দ বাড়ি ফিরে বাসার ড্রইং রুমে ঢুকতে সবাইকে দেখতে পায় ৷ ছন্দের বাবা মা আর কাব্য তিন জনে মিলে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছিলো ছন্দ কে দেখে তারা চুপ হয়ে যায় ৷

"" আরে ছন্দ মামুনি আজ এতো  লেট করলে কেন?""(সাব্বির আহাম্মেদ )

"" টিনার বাড়িতে গিয়েছিলাম আব্বু""

"" ওহ আচ্ছা তাহলে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসো তারপর সবাই কসাথে নাস্তা করবো ৷ ""(সাব্বির আহাম্মেদ )

"" হ্যা বনু যা ফ্রেস হয়ে আয় আজ আম্মু তোর জন্য নুডুলস আর চিকেন পাকোড়া বানিয়েছে ৷ আর আমি পিজ্জার অর্ডার করে দিয়েছি কিছুক্ষনের মধ্যে এসে পরবে""(কাব্য)

"" ওকে আমি ফ্রেস হয়ে আসছি"" 

ছন্দ গম্ভির ভাবে চলে যাওয়ায় ছন্দের বাবা মা ভাই সবার কেমন যেন সন্ধেহ হচ্ছে..

"" সাবু (সাব্বির) ছন্দ কে আজ একটু বেশি গম্ভির লাগছে না?"(কিয়ারা বেগম)

"" হুম কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো আমি বুজতে পারছি না কিয়ারা""

"" আব্বু আমার মনে হয় বন্ধুদের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই এরকম গম্ভির হয়ে আছে৷""

"" তাই যেন হয় ৷ আমি আমার মেয়েটাকে কষ্টে দেখতে পারি না যে"" 

"" হু আচ্ছা আমি খাবার গুলো সার্ব করছি তোমরা এসো ৷ আর কাব্য বউমাকে নিয়ে আয় আমাদের সাথে বসে খেয়ে নিবে ৷""

"" অকে আম্মু""
.
.
.
"স্যার আমাকে ছেড়ে দিন আমি জীবনে ও আপনার সাথে বেইমানি করুম না" 

লোকটির কথা শুনে বর্ণ পাগলের মতো হাসতে লাগলো..বর্ণের মুখে এই হাসি দেখে লোকটির প্রানপাখি উড়ে যাওয়ার মতো অবস্তা ৷ 

"" স্যা,,স্যার দয়া করেন স্যার ""

"" দয়া হ্যা বর্ণ কখনো কোন বেইমান কে দয়া করে না বরং তার প্রানপাখিটাকে কেড়ে নেয় যেমন টা আজ আমি তোর সাথে করবো .."

বর্ণ গান লোড দিয়ে লোকটাকে শুট করতে যাবে তখনি মিহিরের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ মিহির ভয়ে ভয়ে ফোন টা বের করে বর্ণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে" বস বড় সাহেব কল দিয়েছে৷"

বর্ণ বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিব করে কানে ধরে.."" বর্ণ এই মুহূর্তে যেখানে থাকো না কেন আগামি পনেরো মিনিটের মধ্যে আমার সামনে চাই তোমায়..""

"" আ'ম কামিং ড্যাড.." বর্ণের কথা শেষ হতে মিস্টার চৌধুরী কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷  বর্ণ কান থেকে ফোন নামিয়ে সেই লোকটিকে বলল" ইউ আর সো লাকি ৷ এই মুহূর্তে মার হাত থেকে বেচে গেলি বাট নেক্টস টাইম তোর সামনে যখন আমি আসবো তখন তুই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবি" 

বর্ণ গাড়ি নিয়ে গোডাউন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে হাইওয়েতে এসে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো ৷ এর মাঝে বর্ণের ফোনে কতো গুলো মেসেজ আসে ৷ বর্ণ গাড়ি স্লো করে ফোনের ম্যাসেজ অপেন করে ম্যাসেজ গুলো দেখতে বর্ণে মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো৷ রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে ফেপে উঠছে বর্ণের... মিহির বর্ণের রাগ টাকে ভিষন ভয় পায় ৷ সেই ভয়ে মিহির চুপ করে বসে আছে ৷ মিহির জানে এখন কোন টু শব্দ করলে বর্ণ ওকে চলন্ত গাড়ি থেকে লাথি মেরে ফেলে দিতে পারে৷ 

পনেরো মিনিটের মাথায় বর্ণ আয়মান চৌধুরীর সামনে দারিয়ে আছে ৷ আয়মান চৌধুরী তার ছেলে কে দেখে চায়ের কাঁপ টেবিলের উপর রেখে বর্ণের দিকে তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল.......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন