হুমায়রা নিজের ঠোঁটজোড়া মুছে নিলো।হৃদয় ওর দিকে হাসছে বাঁকা ঠোঁটে।আজকাল হুমায়রা হৃদয়ের প্রতি অনেক বেশি টান অনুভব করলে ও মাঝে মাঝে মনে হয় হৃদয় কি সত্যিই ওকে ভালবাসে তো?ওকে সত্যিই পেতে চায় তো?ভাবতেই হুমায়রার চোখের কোল গড়িয়ে বেয়ে পড়ে অশ্রু কনা।হৃদয় হুমায়রার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।একহাত হুমায়রার নিতম্বে রেখে অপর হাত দিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,
''উফ এত রসালো ঠোঁটের স্বাদ আগে পাইনি।"
হৃদয়ের এ কথায় অবাক দৃষ্টিতে তাকায় হুমায়রা।বলল,
''মানে কি?কি বলতে চাও.....আগে পাওনি মানে?"
হুমায়রার কথায় জিভ কাঁটে হৃদয়।ও জানে হুমায়রাকে যা বুঝাবে তাই বুঝবে।শুধু শুধু মাথা খাঁটিয়ে কষ্ট করবে কেন ও?এখন কিছু বলে হুমায়রাকে বুঝিয়ে দেবে ও। কারন মেয়েটা ওকে প্রচুর বিশ্বাস করে অন্ধভাবে ভালবাসে।হুমায়রার নিতম্বে চাঁপ দিয়ে হৃদয় বলল,
''ডার্লিং মজা করছিলাম।বলেছিলাম না তুমি আমার ফার্স্ট লাভ।তোমার সাথে কিস করা ও আমার জীবনে প্রথম।"
হুমায়রা বলল,
''তখন না বললে এমন টেস্ট আগে পাওনি।ঐটার মানে কি তাহলে?"
হৃদয় রেগে গিয়ে বলল,
''এত প্রশ্ন করছো কেন?সন্দেহ করছো?"
হুমায়রা শংকিত হয়ে বলল,
''না কেন সন্দেহ করবো?আমি তো ভালবাসি।"
হুমায়রার ফের বোকামো কথায় হৃদয় হেসে বলল,
''আই লাভ ইউ টু হুমু বেবি।আরেকবার কিস করতে চাই।"
হুমায়রা মানা করতে পারেনা।হৃদয় ওর ঠোঁটজোড়া আবার ও আঁকড়ে ধরে। হুমায়রার চোখজোড়া গড়িয়ে পানি পড়ছে।কাল রাতে কথা না বলতে পেরে প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠেছিলো হুমায়রা।সারারাত একটু ও ঘুমাতে পারেনি ও।হৃদয় যদি ওকে সত্যিই ছেড়ে দেয় ও কি করবে?ও তো বাঁচতে পারবেনা।ও তো হৃদয়কে নিজের জীবনে চায়।পরিবারের অমতে ও হৃদয়কে লাগবে ওর।যদি কেউ নাও মেনে নেয় তাহলে পালিয়ে যাবে আপার মতো।সবাই একসময় না একসময় মেনে অবশ্যই নেবে। ভাবতেই হুমায়রা শক্ত করে চুমু দিতে থাকে।আজ সকালে প্রহর ভাইকে কল দিয়ে হৃদয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলো ও।তারপর হাজার মাফ চেয়েছিলো কেঁদে কেঁদে।হৃদয়ের শুধু একটাই কথা ওকে চুমু খেতে দিতে হবে নাহলে এই সম্পর্ক থাকবেনা।হুমায়রা রাজি হয়ে যায় এবং চলে আসে ধানমন্ডি লেকে প্রেমিক পুরুষটির সাথে দেখা করতে।ওকে দেখে হৃদয়ের অভ্যন্তরের পৌরুষত্ব জেগে উঠে।কোন কথা বার্তা ছাড়াই ওকে চুমু দিতে শুরু করে।প্রারম্ভিক ভাবে ব্যাপারটা খারাপ লাগলে ও ধীরে ধীরে বেশ আরামবোধ করতে থাকে ও।অনেকটা সময় হৃদয় সরে আসে।দুজনে খুঁটিনাটি কথায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।হঠাৎ হৃদয়ের কল আসে।হুমায়রার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ক কথা বলে আবার হুমায়রার কাছে ফিরে আসে হৃদয়।মিষ্টি হেসে জানতে চায় হুমায়রা,
''কে কল দিয়েছিলো?"
''জেনে কি করবা?"
গলায় কিছুটা রক্ষ ভাব হৃদয়ের।হুমায়রা মন খারাপ করে বলল,
''কেন আমি জানলে কি হবে?"
''তুমি আমাকে সন্দেহ করছো হুমায়রা।যাই হোক আমি গেলাম তুমি কলেজে চলে যাও।"
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় হৃদয়।হুমায়রা ওর হাত টেনে বলল,
''প্লিজ সন্দেহ করিনাই.....তুমি যেওনা।"
হৃদয় এগিয়ে এসে একটু হেসে বলল,
''কাজে যাই। পরে দেখা হবে।"
''ওকে।"
হৃদয় চলে যায়। হুমায়রা কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ে।
................................. এদিকে অফিসে আসে আদনান আর প্রিয়াশা।প্রিয়াশা বসের রুমে চলে যায় আর আদনান নিজের কেবিনে।লাঞ্চ টাইমে বেরিয়ে আসে আদনান। প্রিয়াশাকে বেরুতে না দেখে চিন্তিত হয় ও।সব ঠিক আছে তো?মেয়েটা বের হয়নি কেন এখনো।তখনই দৃষ্টি এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।আদনানের কাছ ঘেঁষে বলল,
''স্যার কাল জানেন শরীর এত খারাপ ছিলোতাই আসতে পারিনি।আই মিস সো মাচ!!!!"
আদনান একটু সরে এসে বলল,
''কি মিস করলেন এতো?"
''স্যার আপনাদের সবাইকে।তাছাড়া আপনার আন্ডারে কাজ করতে এতো আনন্দ লাগে।কি বলবো!!!"
বলেই আদনানের আরেকটু কাছে এগিয়ে আসে দৃষ্টি।আদনান বলল,
''প্লিজ একটু দূরে থেকে কথা বলুন।"
দৃষ্টি হেসে বলল,
''সয়ার আজ কি হয়েছে আপনার?দূরে সরাচ্ছেন যে?"
আদনান কিছু না বলে মৃদু হাসে।দৃষ্টি বলল,
''স্যার চলুন একসাথে লাঞ্চ করি।"
আদনানের দৃষ্টি বসের রুমে।প্রিয়াশা বের হচ্ছেনা।আদনান বলল,
''ওয়েট।"
দৃষ্টি আবার বলল,
''স্যার আমি ক্ষুধার্ত। যাবেন?"
আদনান দৃষ্টির কথায় পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে বসের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো বস বেরিয়ে এসে বলল,
''আদনান আপনি?কিছু লাগবে?"
আদনান রুমের ভেতর তাকায়।প্রিয়াশা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।আদনান বলল,
''না স্যার।"
ওনি বললেন,
''তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?লাঞ্চ করবেননা?"
আদনান মাথা ঝাঁকিয়ে সরে আসে সেখান থেকে।স্যার ক্যাফেটেরিয়ায় যাওয়ার জন্য বের হয়।তখনই আদনান দৌড়ে বসের রুমে প্রবেশ করে।প্রিয়াশা ফাইল ঠিক করছিলো।আদনান স্ত্রীর কোমড় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''প্রিয়!!!"
প্রিয়াশা বলল,
''আপনি এখানে?"
''চিন্তা হচ্ছিলো তুমি এখনো কেন বের হচ্ছনা? তাই এলাম। কি হয়েছে?"
প্রিয়াশা পিছনে ফিরে বলল,
''কাজ ছিলো।"
আদনান খেয়াল করলো প্রিয়াশার চোখে মুখে ভয় আতঙ্ক ঠিক তেমনটাই যেমনটা হতো ওর চাচার বাসায় থাকা কালীন।আদনান প্রিয়াশাকে দেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,
''সব ঠিক আছে?"
প্রিয়াশা ম্লান হেসে বলল,
''আরেহ চলুন খুব খিদে পেয়েছে।"
আদনান ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বলল,
''চলো তাহলে।"
আদনান প্রিয়াশা বেরিয়ে আসতেই দৃষ্টি এগিয়ে এসে আদনানের কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল,
''চলুন স্যার।"
প্রিয়াশা রেগে আদনানের হাত জড়িয়ে ধরে রেগে বলল,
"আদনান চলুন তো। বুঝিনা আজকালকার মেয়েরা অন্য জামাইয়ের দিকে তাকায় কোন সাহসে?চোখ গুলো আঙ্গুল ঢুকিয়ে তুলে ফেলা উচিৎ।"
প্রিয়াশার আকস্মিকভাবে রেগে যাওয়া বেশ অবাক হয় দৃষ্টি পাশাপাশি ওর মনে হলো প্রিয়াশা আদনানকে নিজের জামাই হিসেবে সম্বোন্ধন করেছে।অবাক দৃষ্টিতে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে দৃষ্টি।এদিকে আদনান আর প্রিয়াশা একটা টেবিলে বসে পড়ে পাশাপাশি। তখনই বস এসে বললেন,
''বাহ আজ দুজন একসাথে লাঞ্চ করবে নাকি?আমি তোমাদের জয়েন করতে পারি?"
আদনান হেসে বলল,
''শিওর স্যার। বসুন না।"
বস এসে ওদের সামনে বসে পড়ে।প্রিয়াশা আদনানের দিকে আরো একটু ঘেঁষে বসে।মনে হচ্ছিলো প্রিয়াশা ভয় পাচ্ছে।ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত মনে হয় আদনানের।
............................এদিকে সেদিন বিকেলে বিভান বেলার পাশে দাঁড়ায়।বেলা পূর্নাকে মাথা গোসল করিয়ে খাটে দাঁড় করিয়ে কাপড় বদলে দিচ্ছে।বিভান এসে বেলার কাঁধের দিকে ঝুঁকে বলল,
''বেলা রানী!!!"
বেলা হঠাৎ কেঁপে উঠে স্বামীর অকস্মাৎ আগমনে।
আজ অনেকদিন পর স্বামীর এই ডাকে বেলার মনটা আনন্দে ভরে উঠে।তারপর আড়চোখে বিভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
''হঠাৎ এভাবে ডাকলেন।"
বিভান বেলার কাঁধে হাত ছুঁয়ে বলল,
''একটা কথা ভাবছিলাম।"
মেয়ের দিকে মন দিলো।পূর্না হঠাৎ খুব কাশছে। নাক ও টানছে সকাল থেকে।এতক্ষনে চারবার কাশি দিয়েছে পূর্না।বিভান মেয়ের নাক পরিষ্কার করে দিয়ে বলল,
''ভাবছিলাম আমাদের বিয়েতে তেমন কিছু করতে পারিনি।তাই সবাইকে খাওয়াতে নিয়ে যাই। "
বেলা মৃদু হেসে বলল,
''খারাপ না।বলুন তাহলে।"
বিভান মেয়েকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।সবাই মোটামুটি রাজি হয়ে গেলো।সাঁঝ আর সাইমনকে ও আসতে বলা হলো।ইকরাম রাহমানকে বিভান অনেকটা কষ্টে রাজি করালো।ওনার সামনে চাইনিজের কথা বলতেই বলে দিয়েছিলেন,
''যাবোনা আমি। "
কিন্তু বিভান ইকরাম রাহমানের পাশে এসে বলেন,
''বাবা প্লিজ চলুন।আমার খুব ভালো লাগবে।"
''আমি কোথাও যামুনা তোমরা যাও।"
এদিকে নিশাদ ঠিক করলো চাইনিজে খাওয়া দাওয়া করে ইদ্রির কাছে যাবে।বাবাকে না করতে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
''আব্বা চলেন।সবাই যাইতেছে।"
ইকরাম রাহমান বললেন,
''কইলাম তো তোরা যা।আমি যামুনা।"
বিভান বলল,
''থাক আমরা কেউ যাবোনা আপনি না গেলে।পূর্না অনেক খুশি ছিলো।নিশাদ যাও তোমার আপাকে নিষেধ করো পূর্নাকে রেডি করাতে।"
নাতনি খুশি ব্যাপারটা কানে যেতেই মনটা খারাপ হয় ইকরাম রাহমানের।ওনার মনে হতে থাকে বাচ্চাটা খুব কষ্ট পাবে আজ ওনি মানা করলে।নিশাদ রুম থেকে বের হতেই ইকরাম রাহমান বললেন,
''তোরা রেডি হ।আমি যাবো।"
বিভান নিশাদ দুজনে মৃদু হাসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।
এদিকে হুমায়রা বায়না ধরলো ও যাবেনা।রুমের দরজা চাঁপিয়ে বসে আছে।বেলা রেডি হচ্ছিলো।কুঞ্জন এসে বলল,
''আপা হুমায়রা আপু নাকি যাবেনা।"
বেলা শাড়ীতে সেফটিপিন লাগিয়ে বলল,
''তুই পূর্নাকে দেখ কোথায় ও। আমি হুমায়রাকে ডেকে আনছি।"
বোনের কথায় কুঞ্জন বেরিয়ে ডাকতে থাকে পূর্নাকে।বেলা শাড়ী ঠিক করে হুমায়রার কাছে যাওয়ার জন্য।
!!!!
ছোট্ট রুমটায় প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে বেলাকে থামায় বিভান।বেলার কাঁধে হাত রাখতেই পিছনে তাকায়।বিভান বলল,
''রেডি হওয়া হয়নি তোমার?কই যাও?"
বেলা ফিসফিস করে বলল,
''আমার হয়ে গেছে।হুমায়রা কে রেডি হতে বলি।আপনারা অপেক্ষা করুন।"
বিভান ভ্রু কুঁচকে বলল,
''ও এখনো রেডি হয়নি কেন?"
বেলা বলল,
''আপনি গিয়ে পূর্নাকে দেখুন.........আমি ওকে দেখছি।"
বিভান আর কিছু বলতে পারেনা।পূর্নার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।এদিকে বেলা হুমায়রার রুমে নক করে বলল,
''আছিস ভিতরে?"
ভিতর থেকে হুমায়রার জবাব না পেয়ে বেলা ভিতরে প্রবেশ করতেই হুমায়রা কান থেকে ফোন সরিয়ে বলল,
''আপা কিছু বলবি?"
বেলা কিছুটা রেগে বলল,
''রেডি হসনি কেন?"
''যাবোনা আমি।"
''কেন?কি করবি বাসায়?"
বোনের গলায় খানিকটা ঝাঁঝ অনুভব করলো হুমায়রা।ও গম্ভীর কন্ঠে বলল,
''পড়বো।"
বেলা শান্ত কন্ঠে বলল,
''এই তোর পড়ার নমুনা কানে ফোন রেখে?আসার পর থেকে অনেক কিছু দেখতেছি বুঝতেছি কিন্তু কিছু বলছিনা।বলছিনা দেখে মনে করবিনা তুই পার পেয়ে যাবি।তুই কি বুঝতে পারছিস ফেমিলি থেকে কতো দূরে সরে যাচ্ছিস?কোন আইডিয়া আছে তোর?জলদি রেডি হয়ে নেয়।কোন কথা বাড়াবি না।"
হুমায়রার প্রচুর রাগ হচ্ছে বোনের কথায়।ইচ্ছে হচ্ছে বোনের করা অতীতের সকল কুকীর্তি তুলে ধরতে। নিজে তো ঠিকই প্রেম করে ভেগে গিয়েছিলো সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো আর এখন ভাষন দিচ্ছে।এই বড় ভাইবোন গুলো নিজেরা যাই করুকনা কেন ছোটদের আদেশ উপদেশ দিতে ভালোই পারে।কিন্তু ও এমনটা করতে পারবেনা।ওকে এই পরিবারে কেউ তেমন পছন্দ করেনা।আপা আসার পর থেকে তো আরো না।ওর কোনভাবেই ইচ্ছে হচ্ছেনা যেতে।তবে আপা যদি বাসার সবাইকে ওর নামে ভুলভাল কিছু বলে তাহলে ব্যাপারটা ওর জন্য মোটেই ভালো হবেনা।এদিকে বোনের কোন জবাব না পেয়ে বেলা বলল,
''কিরে কি বললাম?জলদি উঠ।"
হুমায়রা খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমের পথে পা বাড়ায়।বেলা বেরিয়ে আসে।আজ খুব কঠোর হয়ে গিয়েছিলো ছোট বোনটার সাথে।তবে বেলার ভয় হচ্ছে হুমায়রা ঠিক কি করতে চাইছে সে জন্য।বয়স কম কি থেকে কি করে ফেলে কে জানে?হুমায়রা বেরিয়ে এলে সবাই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আদনান জানালো সাইমন আর সাঁঝ রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি আছে।জাহানারা বেগম আসবেননা। কোন এক রিলেটিভ কে দেখতে যাবেন ওনি।বিভান কল দিয়েছিলো ওনিকে।বলছিলো,
''দাদি আপনি আসলে ভালো লাগতো।"
জবাবে জাহনারা বেগম বলছিলেন,
''না দাদা ভাই আমার বান্ধুবী খুব অসুস্থ।তাছাড়া মিতুল আর সাঁঝ সাইমন যাচ্ছে।আরেকদিন আসবো আমি।"
রেস্টুরেন্টে পৌছে বেলা বিভান আর বাকি সবাই সাঁঝ সাইমনকে দেখতে পায়।সাঁঝ দৌড়ে এসে মা বা আর ভাই বোনকে জড়িয়ে ধরে।তবে হুমায়রার মাঝে কোন টান পায়নি সাঁঝ।ব্যাপারটা বেশ অবাক লাগে ওর কাছে।কান হুমায়রা সাঁঝকে বেশ পছন্দ করতো।সব কিছুই শেয়ার করতো কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ অন্য হুমায়রাকে আবিষ্কার করেছে ও।এদিকে পূর্না দৌড়ে সাঁঝের কোলে চড়ে বলল,
''তোমাকে মিত কলেতিলাম কালামনি।"
সাঁঝ ভাগনীর গাল চুমোতে ভরিয়ে দেয়।হঠাৎ ওর চোখ চলে যায় প্রিয়াশার দিকে।পূর্নাকে কোলে নিয়ে প্রিয়াশার দিকে এগিয়ে আসে সাঁঝ।সাঁঝকে আসতে দেখে প্রিয়াশা নিজেকে অপরাধী অনূভব করতে থাকে।তবে সাঁঝ এসে মিষ্টি হেসে বলল,
''কেমন আছো ভাবি?"
সাঁঝের এই কথায় প্রিয়াশার ভয় সংকোচ সব দূর হয়ে গেলো।হেসে বলল,
''আলহামদুলিল্লাহ আপু।তুমি?"
''আলহামদুলিল্লাহ। কেমন লাগছে বাসায়?সবাই খেয়াল রাখছে তো?"
''খুব ভালো।তোমরা সবাই অনেক ভাল।মা খুব খেয়াল রাখছে।আর বড় আপা তো আজকে আমাকে চা করে দিলো অফিসে যাওয়ার মুহূর্তে। খুব ভালো লাগলো।জীবনে প্রথম এতো ভালবাসা পাচ্ছি।"
সাঁঝ হেসে বলল,
''আপা এমনই।সবার খুব খেয়াল রাখতে জানে।"
এদিকে বোনকে বৌয়ের সাথে কথা বলতে দেখে আদনান সন্তুষ্টির হাসি দিলো।প্রিয়াশাকে সবাই এত কমসময়ে মেনে নেবে ভাবতেই পারেনি ও।নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হয় আদনানের।
সাইমন বিভানের কাছে এসে বলল,
''থ্যাংকস ভাই ট্রিটের জন্য।"
বিভান সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলল,
''দাদি আসলে খুশি হতাম।ভালো হতো খুব।"
''দাদি আসলে ওনার বান্ধুবীকে দেখতে গেলো।নাহলে আসতো।"
হালকা কথা বার্তার আর খাওয়া দাওয়ার মাঝে আনন্দঘন অনেকটা সময় কেঁটে যায়।খাবার শেষে সবাই মিলে ছবি তুলছিলো।বিভান এসে নিশাদের পাশে দাঁড়ায়।বেচারা কে অনেকটা সময় যাবৎ কিছুটা চিন্তিত লাগছে
বিভান বেলার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
''নিশাদের কি হয়েছে?"
বেলা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ইদ্রিকে ভাবছে নিশাদ।ভাইয়ের এখন ছোট্ট প্রেমিকাটাকে সময় দিতে হবে
বেলা বলল,
''কিছু খাবার কিনে পার্সেল করে আমাকে দাও।"
বিভান কোন কথা ছাড়া কিছু খাবার পার্সেল করে সেই প্যাকেট গুলো বেলাকে দেয়।বেলা সেগুলো নিয়ে নিশাদের কাছে এসে দাঁড়ায়।এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফোন চেক করছিলো নিশাদ।বেলা নিশাদের কাঁধে হাত রাখতেই ও পিছে তাকায়।তারপর বলল,
''আপা কিছু বলবি?"
বেলা নিশাদের দিকে প্যাকেট গুলো ধরে বলল,
''দেরি হচ্ছে। এগুলো নিয়ে ইমতিয়াজদের বাসায় যা।ইদ্রি অপেক্ষা করছে তোর।"
নিশাদ বোনের দিকে অবাক চোখে তাকায়।বড় বোনটা আসলে ওর জীবনে অনেক বড় একটা বন্ধু হয়ে এসেছে যেটা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।নিশাদ বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''থ্যাংক ইউ আপা।এত খেয়াল রাখার জন্য।"
তারপর সরে আসে নিশাদ।বলল,
''আমি আসি তাহলে।"
বেল মাথা ঝাঁকায়।নিশাদ বেরিয়ে যায়।
............................এদিকে বাবার মৃত্যুর আজ একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলো।কবে যে সাতটা দিন চলে গেলো বুঝতেই পারেনি ইমতিয়াজ।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফোনের দিকে দৃষ্টি দেয় ও।গ্যালারীতে পদের চারজনের ছবি দেখছে।মায়ের কোলে ইদ্রি খুব ছোট ও আর একপাশে ইমতিয়াজ তারপাশে বাবা।ইমতিয়াজ কে ধরে রেখেছে।
চোখের কোল গড়িয়ে অশ্রু বেরিয়ে আসে গাল বেয়ে।দ্রুত চোখ মুছে ছবি বদলালো ও।হঠাৎ দরজায় নক পড়ে।ইমতিয়াজ মাথা ঘুরিয়ে দেখে মা দাঁড়িয়ে।মৃদু হেসে বলল,
''মা তুমি?"
মাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।অনেক ক্লান্ত লাগে আজকাল।সৈয়দা এসে ছেলের পাশে বসে বললেন,
''কি করিস বাবা?"
ছবি গুলো লুকিয়ে মায়ের দিকে তাকায় ইমতিয়াজ।একটু করে হেসে বলল,
''কিছুনা মা।তোমার খারাপ লাগছে?"
''নারে আমি ঠিক আছি।ইদ্রির তো পরিবর্তন হচ্ছে তবে ও এখন ও মানছেনা তোর বাবা নেই।"
ইমতিয়াজ স্থির দৃষ্টিতে চেয়েছিলো মায়ের দিকে।মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''ঠিক বলেছো।তবে আগের থেকে ভালো পরিবর্তন হয়েছে।"
সৈয়দা বেগম আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখনই হঠাৎ রানু খালা দৌড়ে এসে বললেন,
''খালা নিশাদ বাবা আইছে।ইমতিয়াজ বাবারে ডাকতিয়াছে।"
ইমতিয়াজ মাথা ঘুরিয়ে বলল,
''আপনি যান আমি আসতেছি।"
রানু খালা চলে গেলেন। ইমতিয়াজ বেরিয়ে আসে রুম থেকে।নিশাদ ডাইনিং রুমে টেবিলের ওপর কয়েকটা প্যাকেট রেখে দাঁড়িয়ে ইদ্রির রুমের দিকে চেয়ে আছে।ইমতিয়াজ নিচে নেমে এসে নিশাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
''আমাকে ডেকে ঐখানে তাকিয়ে আছিস?"
নিশাদ মাথা ঘুরিয়ে মৃদু হেসে বলল,
''না। বিভান ভাই আজ খাইয়েছে ওনাদের বিয়ে উপলক্ষে।তোকে ডাকতে বলেছিলো কিন্তু তোর সেল অফ ছিলো।আন্টির নম্বর ও ছিলোনা তাই পাঠিয়ে দিলো।"
ইমতিয়াজ ম্লান হেসে প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
''কি দরকার ছিলো বল?"
''সেটা বুঝবিনা।বস খেতে শুরু কর আন্টিকে নিয়ে।"
কিছুক্ষনের মাঝে সৈয়দা বেগম ও নেমে আসেন।ইমতিয়াজ একটা প্লেটে কিছু খাবার বেড়ে নিশাদ কে দিয়ে বলল,
''যা নিজ হাতে খাইয়ে দে।"
নিশাদ মৃদু হেসে প্লেটটা হাতে নিয়ে যেতে থাকে।সৈয়দা বেগম কথাটা শুনে কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন নিজ পুত্র ইমতিয়াজ আর নিশাদের দিকে।
ইদ্রির রুমে আসে নিশাদ।ইদ্রি শুয়ে আছে। দরজা খুলতেই মাথা ঘুরিয়ে পিছে তাকায় ও।নিশাদ এগিয়ল গিয়ে বসলো ওর পাশে।তারপর ওকে বসিয়ে বলল,
''দেখো বিভান ভাই আজ খাইয়েছিলো।তোমার জন্য ও পাঠালো।"
নিশাদের হাত আঁকড়ে ধরে ইদ্রি। বলে উঠে,
''বাবার সাথে কথা হয়েছে আপনার?"
ইদ্রির কথার জবাবে নিশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''আঙ্কেল সবসময় চায় তুমি ভালো থাকো সুস্থ থাকো।তোমাকে এভাবে দেখতে ওনার ভালো লাগছেনা।"
''বাবা আমাকে কিভাবে দেখলো?"
''ওনি তোমার বাবা।ওনি বুঝতে পারেন তুমি ভালো নেই।"
ইদ্রির চোখের কোনা ভরে এলো।নিশাদ চামচে করে একটু পাস্তা ভরে দিলো ইদ্রির মুখে।নিশাদ এবার বলল,
''ইদ্রি তোমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে।কলেজে যাওয়া শুরু করতে হবে তোমাকে।এভাবে ঘরে থাকলে স্বাভাবিক হতে পারবেনা তুমি।"
ইদ্রি কিছু বলছেনা।নিশাদ আবার বলল,
''কাল সকালে রেডি থেকো তোমাকে নিয়ে বের হবো।"
স্থির চোখে নিশাদের দিকে তাকায় ইদ্রি।জিজ্ঞেস করে,
''কই যাবেন?"
''দেখা যাবে কই যাই।রেডি থেকো শুধু।"
ইদ্রি মাথা ঝাঁকিয়ে নিশাদের হাতে খেতে শুরু করে।"
ইদ্রি আর নিশাদকে দরজার অপরপাশ থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সৈয়দা বেগম।মেয়েকে ধীরে ধীরে ঠিক হতে দেখে চোখ ভরে আসে ওনার।অজানা ভালবাসা জাগতে শুরু করে ওনার মনে নিশাদকে ঘিরে।