রংধনু - পর্ব ৬৪ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


গেট খুলে বেরিয়ে এলো ইদ্রি।নিশাদ চোখ তুলে তাকালো ভালবাসার মানুষটির দিকে। কোন হাসি নেই সেই সুন্দর চেহারায় মলিনতা যেন গ্রাস করে নিয়েছে।গায়ে সাদা রং এর কামিজ জড়ানো আর কাঁধের একসাইডে ঝুলে আছে সাদা উড়না আর অপরপাশে সাদা চিকন ফিতার ছোট্ট ব্যাগ।চেহারায় কোন সাজ নেই।লম্বা চুল গুলোকে একসাইড করে ক্লিপ দিয়ে আটকানো।আর পিঠের ওপর ছাড়া এলোমেলো চুলগুলো ছড়িয়ে।ইদ্রিকে পুরোটা দেখে নিয়ে ওর চেহারায় তাকায় নিশাদ।বেশ মোহময়ী লাগছে প্রিয়তমাকে একদমই পরী।ইদ্রি ধীর পায়ে হেঁটে নিশাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত চেঁপে ধরে।ঘন্টাখানেক আগে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ইমতিয়াজের বাসার উদ্দেশ্যে ছুটে চলে আসে নিশাদ।কাল বলেছিলো ইদ্রিকে নিয়ে বেরুবে।আসার সময় অবশ্য ইমতিয়াজ কে কল দিয়ে বলেছিলো যেন ইদ্রি রেডি হয়ে যায়।তারপর রিকশা নিয়ে চলে ইদ্রিদের বাসার সামনে। ইদ্রির এমন ভাবে হাত ধরায় বেশ অবাক হয়।ইদ্রির চোহারায় কেমন এক মলিনতা এসে গেছে।নিশাদ ইদ্রির হাত শক্ত করে ধরে বলল,
''সব ঠিক আছে।কিছু হবেনা। "
ইদ্রি নিশাদের আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে একদম লেগে দাঁড়ায়।ইদ্রির কাঁধে হাত রাখে নিশাদ তারপর ওকে নিয়ে এগুতে শুরু করে গাড়ির দিকে।গাড়ির কাছে আসতেই ইদ্রি বলল,
''রিকশায় চলুন,গাড়ি না........."
''কেন ইদ্রি?"
কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদ।ইদ্রি বলল,
''বদ্ধ কোন কিছুই ভালো লাগছেনা।এমন কোথাও নিয়ে যান যেখানে নিশ্বাস ফেলতে পারবো।নিশাদ ইদ্রিকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে।একটু এগুতেই রিকশা দেখতে পেলো ওরা।তারপর ভাড়া ঠিক করে দুজনে উঠে বসে।ইদ্রিকে শক্ত করে ধরে আছে নিশাদ।ইদ্রির শরীরটা বেশ দূর্বল হয়ে গেছে।রিকশায় বসে আছে তবে শক্ত হয়ে বসেনি মনে হচ্ছে পড়ে যাবে।নিশাদ জড়িয়ে ধরতেই ইদ্রি ওর কাঁধে মাথা রাখে।কিছুক্ষন পর ওরা সেই পার্কের সামনে এসে থামে যেখানে ইমতিয়াজ ওদের মিলিয়ে দিয়েছিলো।নিশাদ ইদ্রিকে নিয়ে নেমে হাঁটতে শুরু করে।ইদ্রির চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই।হাঁটতে হাঁটতে ওরা এসে থামে সেই জায়গায় যেখানে নিশাদ ওকে প্রচন্ড ভালবেসে বুকে টেনে নিয়েছিলো আর উষ্ণ ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলো।সে জায়গায় এসে ওরা একটা বেঞ্চের ওপর পাশাপাশি বসে।ইদ্রি চোখ তুলে তাকায় সামনে।সেই ঘাস সেই পরিবেশ তবে ওর কিছু ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।বরং মনটা কেমন যেন হয়ে গেছে।কোন চিন্তা আসেনা কোন অনূভুতি ও আসেনা।নিশাদ ইদ্রির হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
''ইদ্রি সবাই এগিয়ে যায়।যত আপনজন আমাদের ছেড়ে চলে যাক না কেন আমাদের কিন্তু তাদের জন্য থেমে গেলে চলবেনা।জীবন টা খুব ছোট।এই ছোট জীবনে আমাদের অনেক রকমের সময় পার করতে হয়।অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।কিন্তু আমাদের জীবন তো চলতেই থাকে ইদ্রি।জীবনটাতো চাবি নিয়ন্রিত নয় যে চাবি ঘুরিয়ে দিলাম জীবন থেমে গেলো আবার ঘুরালাম চলতে শুরু করলো।যা হয়ে যাক জীবন চলতেই থাকে।আর চলার পথে অনেক বাঁধা আসে বিপর্যয় আসে।সেগুলোকে অতিক্রম করতে হয়।ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা।উঠে দাঁড়াতে হয় ইদ্রি।জীবন তো একসময় শেষ হয়ে যাবে তখন আর উপায় থাকবেনা।তোমার বয়স কম।অনেক সময় আছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার।তুমি ভেঙ্গে পড়লে নিজের আপনজনকে সামলাবে কিভাবে?তোমার জীবনে অনেকসময় পড়ে আছে।ভেঙ্গে না পড়ে উঠে দাঁড়াও আর আঙ্কেলের স্বপ্ন গুলো কে পূরন করো ইদ্রি।তুমি ওনার একমাত্র মেয়ে ছিলে।তোমার প্রতি ওনার ভালবাসার কোন কমতি ছিলোনা কিন্তু কি করতো বলো উপরওয়ালার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেনি।কিন্তু ওনি তোমাকে দেখে কষ্ট পাচ্ছেন ওনি চায় তুমি ওনার সব স্বপ্ন পূরন করো।তুমি খুশি থাকো তাহলেই ওনি শান্তি পাবেন।তুমি চাওনা ওনি ভালো থাকুন?বলো ইদ্রি।"
নিশাদের কথায় কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে গেছিলো ও।কথা গুলো মিথ্যা নয়।আসলেই বাবার তো স্বপ্ন ছিলো ওকে নিয়ে আর ও সেগুলোকে আড়াল করে ফেলেছে।কিন্তু কি করবে ইদ্রি।ওর যে কোন কিছুই ভাল  লাগছেনা যেকোন কিছুতেই মন সায় দেয়না।বরং কাঁদতে ইচ্ছে করছে।বাবা বুঝি সত্যিই চলে গেলো ওকে ছেড়ে চলে গেলো।আর ভাবতে পারেনা ও।পাশে বসে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে চায় ও।আর অপেক্ষা করেনা ইদ্রি জড়িয়ে ধরে নিশাদকে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।নিশাদ ওর পিঠে হাত রেখে ওকে বুকে আগলে নেয় তবে কিছু বলেনা।অনেকটা সময় পেরিয়ে যায় সেভাবে।বিকেলে ইদ্রিকে খাইয়ে ওদের বাসার সামনে নিয়ে আসে নিশাদ।ইদ্রি নিশাদের দিকে একবার তাকিয়ে গেটের ভেতর ঢুকে যায়।ইদ্রি যেতেই ইমতিয়াজের নম্বরে কল দেয় নিশাদ। কয়েকটা রিং হতেই ইমতিয়াজ রিসিভ করে বলল,
''কিরে কি খবর?"
নিশাদ শান্ত কন্ঠে বলল,
''আমার মনে হয় না ওকে আর বুঝাতে হবে।একটু সময় দে একা ছাড়িসনা।আশা করি ও বেশি দেরি করবেনা নিজেকে স্বাভাবিক করতে।আমি আসবোনা দু একদিন।ওই আমাকে কল দিবে আসার জন্য, সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবো।"
ইমতিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 
''শিওর তুই?"
''আশা রাখছি।"
ইমতিয়াজ মৃদু হেসে বলল,
''ইনশাল্লাহ। তা....... আচ্ছা কিছুনা।"
সাঁঝের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ও থেমে গেলো ইমতিয়াজ। নিশাদ বুঝতে পেরে বলল,
''ভালো আছে সাঁঝ।"
ইমতিয়াজ বলল,
''আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই ও ভালো থাকুক।"
''হুম।আজ বাসায় আসবে ওরা।আমাকে সাঁঝ কল দিয়েছিলো।"
সাঁঝের আসার কথা শুনে ইমতিয়াজের মনের গভীরে হৃদয় ফাঁটা আর্তনাদ করে উঠে।বারবার মনে হতে থাকে সাঁঝ ওর নেই।অন্য কারোর হয়ে গেছে।ইমতিয়াজ বলল,
''আচ্ছা বাসায় যা।ইদ্রির চিন্তা করিসনা আমি আছি।"
নিশাদ ফোন কেঁটে রিকশা নিয়ে বাসার জন্য বেরিয়ে পড়ে।রিকশায় থাকাকালীন অবস্থায় বেলার কল আসে ওর ফোনে।বেলা বলল,
''কই তুই?"
''আপা আসতেছি।ওরা আসছে?"
''হু। তুই চলে আয় জলদি।বেশিক্ষন হয়নি আসছে।"
''ওকে।"
পাশ থেকে বোনদের হাসির শব্দে মুহূর্তেই মনটা ভীষন ভালো হয়ে যায় নিশাদের।
.......................এদিকে সাঁঝ ঘরে ঢুকেই মা কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।জুলেখা বানু কেঁদে ফেলেন। বলতে লাগলেন,
''তুই আইসোস আম্মার বুকে।আর যাইতে দিমুইনা আমার আম্মারে। "
সাঁঝ ও কেঁদে ফেলে।সরে এসে মায়ের চোখ মুছে বলল,
''আম্মা আমি আইছি তো কাইন্দোনা।"
এরপর বেলার দিকে তাকায় সাঁঝ।বোনকে দৌড়ে জড়িয়ে ধরে ও।লাবনী ও সাঁঝকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে আদনান সাইমনের কাছে এসে বলল,
''তোমার সম্পর্কে বড় তাই তুমি করেই বললাম।কেমন আছো?"
সাইমন হেসে বলল,
''সমস্যা নাই ভাইয়া।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন?"
''ভালো।দাদি কেমন আছেন?"
''ভালোই।"
ইকরাম রাহমান আর জুলেখা বানুকে সালাম দেয় সাইমন।বিভান ওদের ভিতরে এনে বসায়।পূর্না কে নিয়ে ওদের আসর মেতে উঠে।সন্ধ্যায় নিশাদকে আসতে দেখা যায়।বোনকে দেখে বুকে টেনে নেয় নিশাদ।সাইমন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''ভালো আছেন ভাইয়া?"
নিশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''ভালো তুমি?"
''আলহামদুলিল্লাহ।"
''দাদি কেমন আছেন?"
''ভালো।"
সাঁঝকে সরিয়ে বলল,
''সাঁঝ তোরা বোস।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।"
সাঁঝ চোখ মুছে বলল,
''ঠিক আছে ভাই।"
নিশাদ চলে গেলো নিজ রুমে।কিছুক্ষন পর প্রিয়াশা সবার জন্য চা নিয়ে এলো আর পূর্নার জন্য দুধে চকলেট সিরাপ মিশিয়ে নিয়ে এলো।সবাইকে চা দিয়ে পূর্নাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,
''আম্মু দেখেন আপনার জন্য কি এনেছি?"
পূর্না মামীর হাতে চকলেট দুধ দেখে হেসে বলল,
''এগুলা আমাল?"
প্রিয়াশা পূর্নার গাল টিপে দিয়ে বলল,
''হ্যা আম্মু তোমার।খাও এখন।"
পূর্না পুরোটা খেয়ে বলল,
''ত্যাংক ইউ মামী।"
প্রিয়াশা হেসে ওর গালে চুমু দিয়ে বলল,
''ওয়েলকাম মা।"
হঠাৎ কুঞ্জন এসে বলল,
''বাহ মামী ভাগনীর তো সেই জমে গেলো।কি ভাবি কি জাদু করলেন?"
প্রিয়াশা হেসে বলল,
''জাদু করতে হয়না ভাইয়া আদর করলেই বাবুরা কাছে আসে।"
কুঞ্জন হাত বাড়িয়ে বলল,
''মামার কাছে আসো।"
পূর্না মামার কোলে উঠে গিয়ে বলল,
''মামী তুমি লাগ কলোনা।পলে তোমাল কোলে আতবো।"
এমন কথায় হেসে ফেলে প্রিয়াশা।আদুরে কন্ঠে বলল,
''আচ্ছা মা করবোনা রাগ।"
কুঞ্জন ভাগনীকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে নাস্তার পর্ব চলছে।হুমায়রাকে কয়েকবার ডেকেছিলো ওরা কিন্তু আসেনি ও।সাঁঝের বেশ খারাপ লাগে এই ব্যাপার গুলো।
অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।তেমন কেউই হুমায়রার কাছে গেলোনা।ভাবছিলো ওর সময় হলে ঠিকই আসবে।কুঞ্জন কয়েকবার বোনের কাছে গিয়েছিলো তবে ধমক খেয়ে ফিরে আসে।এদিকে সন্ধ্যা আটটা বেজে গেছে।সবাই এশার নামাজ পড়তে বসেছে।জুলেখা বানু নামাজ পড়ে তরকারির লবন দেখে সাঁঝের রুমটায় এসে দেখে হুমায়রা ঘরে নেই।এরুম ওরুম করে খুঁজেন কোথাও পেলেননা মেয়েকে।হঠাৎ কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে ওনার।চিৎকার করে ডাকতে থাকেন সবাইকে।কিছুদিন যাবৎ মেয়ের এমন অবাক আচরন দেখছিলেন ওনি তবে আজ যেন ভয় লাগছে মেয়ের অনুপস্থিতিতে। 

!!!!

মুহূর্তের মাঝেই পুরো ইকরাম রাহমানের পরিবারে হৈ চৈ লেগে গেলো।জুলেখা বানু কাঁদছেন গুঁমড়ে।সাঁঝ আর বেলা মায়ের দুপাশে বসে ওনাকে সামলাচ্ছে।বেলা বলছে,
''আম্মা চিন্তা কইরোনা ও হয়ত ছাদে গেছে।চইলে আইবো।"
জুলেখা বানু কেঁদে কেঁদে বলছিলেন,
''তুই দেখছিলি বেলা মাইয়াডা কেমন বদলাইয়া গেছিলো কারোর লগেই থাকেনা কথা কয়না।হারাডাদিন ফোনে ফুসুরফাসুর করে।কে জানে গেলো কই মাইয়াডা?"
সাঁঝ মাকে জড়িয়ে বলতে লাগলো,
''ভাইয়ারা গেছে তো খুঁজতে। চইলা আসবে।"
এদিকে বিভান নিশাদ আদনান বেরিয়ে গেছে হুমায়রাকে খুঁজতে।কুঞ্জন ছাদে গেলো বোনকে খুঁজতে।কিছুক্ষন পর ফিরে এলো মাথা নুইয়ে।কুঞ্জন ফিরে এসে মাকে কাঁদতে দেখে ওর মন ভীষন খারাপ হয়ে গেলো।এদিকে সাঁঝ ভাইকে দেখে বলল,
''কিরে পেলি?"
''না আপা।"
বলেই মাথা নোয়ায় কুঞ্জন।ইকরাম রাহমান এদিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে ছিলেন বাহিরে।ছেলের কথায় পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল,
''অসভ্য মাইয়াডা ফোনডাও নিলো না।কে জানে কই আছে কমজাতের মাইয়া।"
সাঁঝের রুমে বসে আছে সাইমন।এমন পরিবেশে ওর অনেক বেশি চিন্তিত লাগছে। কি হচ্ছে আসলে?কই গেলো হুমায়রা?ভাই বোন মা বাবা আর সবাই কে টেনশন দিয়ে গেলো কই?বলে ও তো যেতে পারতো।বালিশ টেনে মাথা টা একটু এলিয়ে দেয় সাইমন।মাথাটা বড্ড ধরেছে ওর।আসার আগে ছিলো না ব্যাথাটা হঠাৎ হুমায়রার গায়েব হয়ে যাওয়ায় কেমন এক উত্তাপ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।কেমন এক দমবন্ধ পরিস্থিতি সব কেমন মন মরা হয়ে গেছে ভাবতেই সাইমনের কেমন লেগে উঠে।মাকে কাঁদতে দেখে বেলা লাবনীকে বলল,
''যেয়ে একটু পানি নিয়ে আয়।আর সাইমন কে দেখ কি করছে?পারলে চা করে দে।"
লাবনী মাথা ঝাঁকিয়ে যেতে নিবে তখনই প্রিয়াশা বলল,
''লাবনী তুমি মা কে পানি দাও আমি চা করছি।"
লাবনী বলল,
''ভাবি চা বসাবো আমি।"
প্রিয়াশা লাবনীর গাল টিপে দিয়ে বলল,
''তুমি যাও পানি নিয়ে আমি চা বসাচ্ছি বুঝলে ননদিনী।"
লাবনী মাথা ঝাঁকিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো।এদিকে পা চেঁপে চেঁপে বাড়ির পিছনের পরিত্যাক্ত জায়গাটায় এসে দাঁড়ায় হুমায়রা।ওকে তো এখানেই আসতে বলেছিলো হৃদয়।তবে হৃদয়কে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।কেমন ভয় লাগছে যেন ওর।হৃদয় বলেছিলো ফোন যেন না আনে সাথে করে।নাহলে পরিবারের লোকজন কল করবে।ও কিছুটা সময় কাঁটাবে হুমায়রার সাথে এখানে।ভাবতে ভাবতে কেমন অন্যমনষ্ক হয়ে যায় হুমায়রা।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''জানু আমি এখানে।"
হুমায়রা চমকে উঠে পিছে তাকিয়ে দেখে হৃদয় আর দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে।হুমায়রা বলল,
''এত দেরি হলো।অনেকক্ষণ হলো দাঁড়িয়ে আমি।ওনারা কারা?"
''আমার বন্ধু বেইব।এই হুমু আসো বেশি সময় নেই।"
হুমায়রা অবাক কন্ঠে বলল,
''কই আসবো.......কিসের সময় নেই? কি বলছো বুঝতে পারছিনা।"
হুমায়রার কথায় ওরা শব্দ করে হাসতে লাগলো।হুমায়রা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ওদের চেহারার দিকে তাকায়।কেমন যেন এক হিংস্র মনোভাব ফুঁটে উঠেছে।হুমায়রা কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলল,
''দেখো আমি বাসায় না বলে এসেছি।কি বলবে বলো আমি বাসায় যাবো।"
হঠাৎ একটা ছেলে এসে ওর হাত ধরে বলল,
''কই যাবে ভাবি।আজ একটু আমাদের ও আনন্দ দাও।এতোদিন হৃদয় তোমার ঠোঁটের মজা নিয়ে এসেছে।আজ আমাদের তোমার পুরো শরীরের স্বাদ নিতে দাও।কিরে হৃদয় ঠিক বললাম না?"
হৃদয় হেসে বলল,
''একদম।হুমু জান প্লিজ আমাদের অসন্তুষ্ট করোনা।তাহলে কিন্তু তোমার জন্য একেবারেই ভালো হবেনা।"
হুমায়রা বুঝে গেলো কি হতে যাচ্ছে ওর সাথে।এ কাকে বিশ্বাস করলো ও?কিছুক্ষন আগের নেয়া সিদ্ধান্তটা ওর জীবনের এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে ওর।কিছুক্ষন আগে সবাই যখন নামাজের জন্য তৈরি হচ্ছিলো তখনই হৃদয়ের কল আসে ওর নম্বরে।হুমায়রা কল রিসিভ করতেই হৃদয় বলল,
''জান তোমাকে খুব দেখতে মন চাইছে।"
হুমায়রা ফিসফিস করে বলল,
''বাসায় সাঁঝ আপা আর দুলাভাই আসছে।বের হবো কিভাবে?"
হৃদয় দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
''আরে বেবি তুমি বেরিয়ে আসো।তোমাদের বাসার সবাই এখন নামাজের জন্য।তুমি চলে এসো বেশি সময় লাগবেনা।তোমাকে একটু দেখবো শুধু।নামাজের আগেই বাসায় পৌছে দেবো।"
হুমায়রা বলল,
''কই আসবো?"
''তোমার বাসার পিছনের বিলটা আছেনা?ওখানে।"
''কিন্তু ঐখানে যাওয়া মানা।"
''আরে বাবা আমি আছি তো।আসো তুমি।"
হুমায়রা কিছু বলতে গিয়ে খেয়াল করলো ফোন কেঁটে গেছে।তারপর কি করবে ভাবছিলো ও।বাসার সবাই নামাজ পড়বে।এখনই সময় বের হওয়ার।গায়ে একটা উড়না জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে হুমায়রা নিঃশব্দে।
ও সুযোগ পেয়ে ঐ ছেলেটার হাতে কামড়ে দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।ওর পিছু তিনজন ও দৌড়াতে শুরু করে।কিন্তু হুমায়রা বেশি দূরে যেতে পারেনি।ওকে টেনে ধরে দুজন।হৃদয় সামনে এসে জামার টেনে ছিড়ে দেয়।ওর মুখের ওপর গায়ের উড়নাটা বেঁধে দেয় শক্ত করে।হুমায়রা চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে ও পারেনি।ওকে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দেয়া হয় মাটির ওপর।ও শুনছিলো হৃদয় বাকি দুজনকে বলছে, 
''তোরা খেয়াল রাখ কেউ আসে কিনা।আগে আমি কইরা লই তারপর তোরা ওকে?"
অপরএকজন তাড়া দিয়ে বলল,
''ঐ হালা জলদি কর।আমরাও তো করুম।"
হৃদয় দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে হুমায়রার ওপর।ওর গলায় কামড়ে দিতে থাকে।"
হুমায়রা কাঁদতে থাকে হৃদয়কে সরানোর চেষ্টা করতে করতে।আজ নিজের ওপর বেশ রাগ লাগছে ওর।কিভাবে পারলো এমন একজনকে যে কি না ওর শরীরকেই চেয়েছে।গলা ব্যাথা করছে।পুরো শরীর জ্বলছে।ভোঁতা শব্দ তুলে কাঁদতে থাকে হুমায়রা।এদিকে বিভান আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসে বাড়ির পিছনের পরিত্যাক্ত জায়গায়।তারপর ফোনের লাইট মারতে থাকে আশেপাশে।এগিয়ে আসতে থাকে সামনে।ময়লা বিলটার পাশে এসে দাঁড়াতেই ওর কানে এলো এক অদ্ভুত শব্দ।বিভান ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে তাকাতে থাকে। কারোর গুনগুনিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসতেই সেদিকে দৌড়ে যায় বিভান।কিছু সামনে আসতেই দেখলো দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আর একজন কিছু করছে শুয়ে।বিভান জোরে চিৎকার করে বলল,
''এই কে ঐখানে?"
সাথে সাথে পিছনের দুজন দৌড় দিলো।অপরজন উঠে যেতে নিবে তখনই বিভান দৌড়ে তাকে ধরে বলল,
''কি করছিস এখানে?"
ছেলেটা বলল,
''আপনার জানার ব্যাপার না।যান এখান থেকে।বিভান হঠাৎ পিছে তাকিয়ে দেখলো হুমায়রা উঠে বসেছে।কাঁদছে ও ছেড়া জামা দিয়ে শরীর ঢাকতে ঢাকতে।বিভান পাশ থেকে একটা ডাল এনে  হৃদয়কে পেটাতে শুরু করে।মারের একপর্যায়ে হৃদয় বিভানকে লাথি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।বিভান চিৎকার করে বলল,
''হারামিগুলো পালাচ্ছিস কেন এখন?"
হঠাৎ মনে পড়ে হুমায়রার কথা।পিছে ফিরে এগিয়ে আসে হুমায়রার দিকে।হুমায়রা লজ্জায় কাঁদতে কাঁদতে গা ঢাকার চেষ্টা করছিলো।বিভান নিজের গায়ের চাদরটা নিয়ে হুমায়রার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ওর মুখের বাঁধন খুলে দেয়।তখনই বিভানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে হুমায়রা।বলছিলো,
''ভাইয়া মাফ করে দেন।আমি ভুল করে ফেলেছি মাফ করে দেন।"
বিভান বুঝতে পারলোনা কিসের মাফ চাইছে হুমায়রা।বিভান বলল,
''হুমু কেঁদোনা বাসায় চলো।সব ঠিক আছে আসো।"
হুমায়রাকে দাঁড় করিয়ে ওকে ধরে বাসার দিকে আনতে থাকে বিভান।মাথায় হাজার চিন্তা ঘুরছে।কি বলবে সবাইকে?কি দেখলো ও?সবার অবস্থা কেমন হবে?ভাবতেই গলা আটকে আসছে বিভানের।এদিকে হুমায়রাও কাঁদছে একনাগাড়ে।বিভানের খুব অসহায় লাগছে এখন।বাসার গেটের সামনে ওরা।
এদিকে বেলা মাকে খুব জোর করে শুইয়ে রেখেছিলো।কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মা।সাইমন ড্রয়িংরুমে এসে বসলো কেবল।তখনই কলিংবেল বেজে উঠে।লাবনী গিয়ে দৌড়ে দরজা খুলে দেখে বিভান আর হুমায়রা দাঁড়িয়ে।হুমায়রার গায়ে বিভানের খয়েরী চাদর জড়ানো।লাবনী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।বোনকে এভাবে দেখবে ভাবতেই পারেনি।সাইমন উঠে দাঁড়িয়ে যায় বিভান আর হুমায়রা কে দেখে।বলে উঠে, 
''বড় ভাইয়া আর হুমায়রা!!!"
সাইমনের কথায় সাঁঝ আর বেলা খাট থেকে নেমে এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়।বিভান ততক্ষনে হুমায়রা কে নিয়ে রুমে এসে যায়।ইকরাম রাহমান দাঁড়িয়ে যান বসা থেকে।কিছু বলতে পারলেননা।কি হয়েছে তার মেয়েটার?
জুলেখা বানু শোয়া থেকে উঠে বসে।মেয়েকে এমন দেখে বুঝতে পারছেননা কি হয়েছে?বেলা বলল,
''বিভান ওর এ অবস্থা কেন? কি হয়েছে?"
বিভান বলল,
''বেলা আগে ওকে রুমে নেয়ার ব্যাবস্থা করো।প্লিজ!!"
বেলা আর সাঁঝ এগিয়ে গিয়ে বোনকে ধরে।খেয়াল করলো হুমায়রার সারাশরীর ভীষন কাঁপছে।বেলা আর সাঁঝ ওকে নিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।বিভান ঘরে প্রবেশ করে সাইমন কে জিজ্ঞেস করে,
''নিশাদ আর আদনান আসেনি?"
সাইমন মাথা নাড়ে।বিভান ফোন বের করে আদনান আর নিশাদকে কল দেয়।এদিকে বেলা হুমায়রাকে নিয়ে ফ্রেশ করাতে যায়।সাঁঝ হুমায়রার কাপড়চোপড় বের করে রেখেছে।
হুমায়রা বাথরুমে ঢুকে।ওর চোখ ভারি হয়ে এলো অশ্রুতে।আর সামলাতে পারেনা নিজেকে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেলাকে। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে হুমায়রা।বলছিলো,
''আপা খুন করে ফেল আমাকে।প্লিজ মেরে ফেল আমাকে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন