১!!
আতঙ্কিত চোখে বর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে ছন্দ৷ একটা মানুষ কতোটা ভয়ঙ্কর হলে লাশের সামনে বসে রবিন্দ্রনাথের গান শুনতে পারে৷ "তোমার খোলা হাওয়া"
ছন্দ শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে চাপা পায়ে জানালার পাশ দিয়ে সরে আসে৷ চৌধুরী বাড়ির পিছুন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে ৷ ততোখনে বর্ণ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে বাইরে এসে কাউকে না দেখতে পেয়ে ফিরে যেতে নিলে সূর্যের আলোতে কিছু একটা চকচক করে ওঠে ৷ বর্ণ তখনি মাটি থেকে জিনিসটা তুলে নিয়ে দেখে একটা নূপুর...
" নূপুর এখানে? তার মানে আমি ঠিক শুনেছিলাম কেউ একজন এখানে লুকিয়ে সব টা দেখেছে.."" কথাটা বলতে বলতে বর্ণের কপালের দুপাশের রগ রাগে ফুলে ফেপে উঠলো, "" যেই হও না কেন কাজ টা মটেও ঠিক করোনি লুকিয়ে সবটা দেখে৷ এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে ৷ " নূপুর টার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো বর্ণ ৷ ততোক্ষনে মিহির এসে বর্ণের পাশে দারায়....
"" এতোক্ষন কোথায় ছিলিস?"" রাগি গলায় প্রশ্ন করলো বর্ণ...
মিহির শুকনো ঢোক গিয়ে শুকনো ঠোট জোড়া ভিজিয়ে বলতে লাগলো"" বস আ,,আমি একটু ওয়াশরুমে গিয়ে ছিলাম..""
উওর টা বর্ণের মন মতো না হওয়ায় মিহিরের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল" এখানে কোন মেয়ে এসেছিলো আর সে আজিজ কে মার্ডার করতে দেখে ফেলে ৷ আর তুই খুব ভালো করেই জানিস আয়ান চৌধুরী বর্ণ কখনো কোন মার্ডারের প্রমান রাখি না ৷ ""
"" ইয়েস বস মেয়েটাকে খুজে বের করে জানে শেষ করে দিবো""
" নাহ মেয়ে টাকে জীবন্ত আমার সামনে দেখতে চাই""
"" পেয়ে যাবেন বস...""
বর্ণ আবারো সেই লাশের সামনে ইজি চেয়ারে বসে গ্লাসে ওয়াইন খেতে লাগলো৷ বর্ণের এমন কাজ দেখে মিহিরের পেটের ভিতর সব যেন গুলিয়ে আসছে ৷ একটা মানুষ কতোটা নির্দয় ভয়ঙ্কর হলে খুন করে আবার সেই লাশের সামনে রিলাক্স হয়ে ওয়াইন খেতে পারে ভাবতেই মিহিরের পুরো শরীলে কাটা দিয়ে উঠছে৷
২!!
বাড়িতে ঢুকে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে ছন্দ৷ এখনো চোখের সামনে সেই নৃশংসতা ভাসছে৷ কিভাবে একটা লোক ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে ৷ ছন্দের কানে সেই মৃত লোকটির চিৎকার ভেসে আসছে ৷ ছন্দ তার দু হাত দিয়ে কান দুটো চেপে ধরে দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে কাদছে৷
ছন্দ কে এভাবে রুমে ছুটে যেতে দেখে ছন্দের ভাবি রুনা ছুটে আসে ছন্দের কাছে কিন্তু রুমের সামনে এসে দেখে ছন্দ ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে৷
"" ছন্দ বনু কি হয়েছে দরজা কেন বন্ধ করে রেখেছো?""(রুনা)
ভাবির গলা পেয়ে ছন্দ দ্রুত চোখ মুখ মুছে নিয়ে ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে দরজা খুলে দেয়৷
"" ভাবি তুমি! তুমি কখন এলে ?""
"" তার আগে বলো তোমার কি হয়েছে? তুমি এভাবে ছুটে এলে কেন? আর তোমার চোখ মুখের এই অবস্তা কেন দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা নিয়ে বেশ ভয়ে আছো?"
"" না,,নাহ ভাবি আমি কেন ভয় পাবো ৷ তুমি একটু বেশি ভাবছো ৷ "
"" চুপ খুব বেশি বড় হয়ে গেছো তাই না? কি হয়েছে আমাকে সবটা খুলে বলো নাহলে তোমার ভাইয়া কে সবটা বলবো কিন্তু তারপর তোমার ভাই তোমার থেকে সব টা জেনে ছাড়বে""
ভাইয়ের কথা উঠতে ছন্দ আতঁকে ওঠে কারন বাবা মায়ের থেকেও ছন্দ তার বড় ভাই কাব্য কে ভিষন ভালোবাসে আর কাব্য বোন বলতে অজ্ঞান৷ যদি কাব্য ঘুনাখরেও জানতে পারে ছন্দ কোন কারনে আপসেট তাহলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে দিবে ৷
"" নাহ ভাবি আমি তোমাকে সবটা বলছি তুমি প্লিজ ভাইয়া কে কিছু বলো না ৷আমি তোমাকে সব টা বলবো" ছন্দ রুনা কে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার উপর বসে পরে৷ রুনা টেবিলের পানির গ্লাস টা নিয়ে ছন্দের মুখের সামনে ধরে.." পানি টা খেয়ে শান্ত হও দেন আমাকে সবটা খুলে বলো ""
ছন্দ তার ভাবির কথা মতো পানিটা খেয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেলে বলতে লাগলো"" আজ ক্লাস ড্রপ হওয়াতে আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে আসছিলাম ৷ আমাদের এলাকার সামনে রিকশা থেকে নেমে পরি৷ তখনি কোথা থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে বলতে লাগলো"" আপু আপু আমার বলটা একটু এনে দিবে?"
" বল! আমি কেন তোমার বল এনে দিবো? আমি কি তোমাকে চিনি?"(মজা করে)
"" এ্যা এ্যা এ্যা তুমি বল এনে দিবে কিনা বল এ্যা এ্যা ""
"" ওহ মাই লাক এই মেয়ে কাঁদছো কেন হুম ""
"" তাহলে বলো তুমি আমাকে আমার বল টা এনে দিবে?""(বাচ্চা মেয়েটি)
"" এনেদিবো তার আগে বলো তোমার নাম কি ?""
"" আমার সুমু সবাই সুমু পাখি বলে ডাকে""
"" মাশাআল্লাহ তুমি যেমন কিউট তোমার নামটাও বেশ কিউট ৷ এখন বলো বলটা কোন দিকে আছে?""
"" ওই যে বাড়িটা দেখছো (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে) ওই বাড়িটায় ঢুকে পরেছে""
ছন্দ বাড়িটার দিকে কিছুক্ষন হ্যা করে তাকিয়ে থাকে৷
"" ওহ মাই লাক একি এলাকায় থাকি অথচ এই বাড়িটা আমার চোখে পরে নি ৷ এত্তো সুন্দর বাড়িটা পুরো যেন রাজ প্রাসাদ ৷"" সুমুর চিৎকারে ছন্দ তার ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে৷
"" আপু তুমি আমার কথা শুনছো না কেন ? যাও না আমার বল টা এনে দেও না""
"" হু দিচ্ছি কিন্তু তুমি এখানে দারিয়ে থাকবে আর একচুল নরবে না ওকে""
"" ওকে""
৩!!
ছন্দ সুমুকে দার করিয়ে গেটের ভিতর ঢুকে যায় ৷ ছন্দ বেশ অবাক হয় এটা দেখে এতো বাড়ি অথচ কোন গার্ড নেই৷ ছন্দ ধিরে ধিরে বাড়িটার চার পাশে বলটা খুজতে থাকে ৷ খুজতে খুজতে ছন্দ বাড়ির পিছুনের দিকটায় চলে আসে আর তখনি একটা চিৎকার শুনতে পায় ৷ সেই চিৎকার শুনে সেদিকে এগোতে থাকে ৷ একটা সময় ছন্দ বাড়ির পিছুনের দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকে পরে ৷ ভিতরে ঢুকতে চিৎকারের শব্দ আরো বারতে লাগলো৷ ছন্দ সেই শব্দ অনুসরন করে একটা রুমের জানালার সামনে গিয়ে দারায়৷ ছন্দের চোখ জোরা রুমের ভিতরে তাকাতে ভয়ে আঁতকে ওঠে ৷ একটা লোক গান শুনতে শুনতে হাতে চিকন ধাড়ালো ছুড়ি নিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকা লোকটার চোখে গেথে দিয়ে চোখ বের করে আনে তারপর সেম ওয়েতে দ্বিতীয় চোখ খুচে বের করে ৷ এতেও যেন তৃপ্তি পেলনা লোকটি ৷ সেই ছুড়ি দিয়ে নিচে পরে থাকা লোকটির জিব্হা টা কেটে ফেলে ছুড়ি দিয়ে গালে হাতে পায়ে কেটে দিচ্ছে আর লোকটি ছটপট করে যাচ্ছে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা অবদি৷ কিন্তু তার এই ছটপটানি লোকটার মন গলাতে পারেনি ৷ লোকটি একটা ইলেকট্রিক করাত নিয়ে লোকটির দেহ দু খন্ড করে ফেলে ৷ ছন্দ আর সহ্য করতে পারলো না ছুট্টে বেরিয়ে আসে সেই বাড়ি থেকে....
ছন্দ কথা শেষ করে তার ভাবির মুখের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো তার মতো তার ভাবিরও চোখে মুখে একরাস আতঙ্ক ভয়ের ছাপ৷ ছন্দের এখন ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজে দুটো চর লাগাক ৷ কি দরকার ছিলো ভাবি কে এই সব জানানোর? এখন হলোতো নিজের সাথে সাথে এখন এই মানুষটা অসুস্থ শরীল নিয়ে চিন্তা করবে৷ (রুনা ছন্দের ভাবি চারমাসের প্রেগনেন্ট )
"" ছন্দ বোন তুমি কিছুদিন বাড়ি থেকে একদম বের হবে না ঠিক আছে?"
ছন্দ মাথা নারলো যার অর্থ হ্যা সে বের হবে না ৷
রুনা তার হালকা উচু পেট নিয়ে ধিরে ধিরে হেটে দরজার খুলে বেরিয়ে গেল ৷ ছন্দ কিছুক্ষন তার ভাবির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷
ছন্দ শাওয়ার নিয়ে শাড়ি চেন্জ করে ত্রিপিস পরে বের হয়ে দেখে ছন্দের ফোনটা বাজছে ৷ ছন্দ ফোনটা তুলে দেখে আননোন নাম্বার ৷ ছন্দ কলটা রিসিব করে কানে ধরতে ফোনের অপাশ থেকে শুধু নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল ছন্দ ৷ ছন্দ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করেও যখন কোন আওয়াজ পেল না তখন ছন্দ বিরক্ত হয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে থাকে তখনি টং করে ছন্দের মেসেজ রিংটন টা বেজে ওঠে ৷ ছন্দ মেসেজ টা অপেন করে...
" You didn't do the job right You have to get severe punishment for it I am coming to take the storm in your life from being ready"
মেসেজ টা পরে ছন্দের ভয়ে হাত পা কাঁপছে ৷
" কে করেছে মেসেজটা? আর কেন ? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য নাকি ... বাকিটুকু বলার জন্য সাহস পাচ্ছে না ছন্দ গলা শুকিয়ে আসছে বার বার .."
৪!!
অন্যদিকে বর্ণ শাওয়ার নিয়ে সেম ড্রেস পরে বের হয় ৷ মিহির মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে বর্ণের সামনে ..
"" বস বড় সাহেব আপনাকে বাড়িতে ডেকেছে""
মাথা নিচু করে বললো মিহির৷ মিহিরের কথা শুনে বর্ণ ওয়াইনের বোতলের ছিপি খুলে বাকি টুকু ওয়াইন খেয়ে নিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে মিহির কে গাড়ি বের করতে বলে ৷ মিহির বর্ণের কথা মতো মিহির চলে যায়৷ বর্ণ তাকিয়ে আছে সামনে পরে থাকা ছবিটার দিকে৷ ছবিটা হাতে নিয়ে বর্ণের দু-চোখ জোরা চকচক করতে লাগলো ৷ বর্ণের ঠোটের কোনে বাকা হাসি ৷ হঠাৎ মিহিরের গলার আওয়াজ শুনে আগুন চোখে মিহিরের দিকে তাকাতে মিহির ভয় পেয়ে যায়৷
"" ব,,বস গাড়ি রেডি..""
"" গেটলস্ট..""
মিহির আর একমুহূর্ত না দারিয়ে দ্রুত বর্ণের সামনে থেকে সরে যায়৷ বর্ণ মিহিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ছবিটার দিকে তাকাতে বর্ণের রাগ যেন সিথিল হয়ে যায়৷
"" টিয়াপাখি একবার যখন তোমাকে হারিয়ে পেয়েছি তখন তোমাকে আর হারিয়ে যেতে দিবো না ৷ দুনিয়া ধ্বংস করে হলেও তোমাকে এই আয়ান চৌধুরী বর্ণের হতে হবে৷ কারন তুমি আমার জেদ নও আমার ভালোবাসা ৷""
.
.
.
বর্ণ চৌধুরী ম্যানশনে ঢুকতে আয়মান চৌধুরী বর্ণ কে প্রশ্ন করে"" বর্ণ আজিজ খানের সাথে আজ তোমার মিটিং ছিলো?""
"" ইয়েস ড্যাড বাট হি ডিডেন্ট কাম""(বর্ণ)
"" ওয়াট বাট হুয়াই?"(আয়মান চৌধুরী)
"" আই ডোন্ট নো ড্যাড" বর্ণের কথা শেষ হতে মিসেস বর্ণালি আসে"" শুরু হয়ে গেল বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতে অফিসের কাজ নিয়ে পড়লে তোমরা"
"" নো মম ড্যাড যাস্ট আস্কড করলো মিস্টার আজিজের সাথে মিটিংটা হয়েছিলো কিনা""
"" বুজলাম এখন ফ্রেস হয়ে এসো লান্চ করবে ""
"" ওকে মম""
বর্ণ নিজের রুমে ঢুকতে ফোন বেজে ওঠে ৷ বর্ণ কল রিসিব করে কানে ধরতে বর্ণের মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠলো......