নীল চিরকুট
পর্ব ৪০
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
.
.
.
দুপুর গড়িয়ে আসন্ন বিকেলে পদার্পন করেছে সূর্য। উঠোনের উত্তর দিকে ভিন্ন রঙের চাঁদোয়া টানিয়ে সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর। একদম আড়ম্ভরহীন, সাদামাটা আয়োজন। প্যান্ডেল থেকে কিছুটা দূরে ইট বিছিয়ে করা হয়েছে রান্নার আয়োজন। আলুথালু স্বাস্থ্যবান এক ভদ্রলোক কোমরে গামছা পেচিয়ে বিশাল ডেকচিতে খুন্তি নাড়ছেন। কপালে জবজবে ঘাম। মুখভর্তি পান। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রান্নার অন্যান্য সামগ্রী। সহযোগীদের কেউ সবজি কুটছে। কেউবা মাখছেন মাংস বা মাছের মিশ্রণ। শুকনো লাকড়িতে
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের শিখা, কমলা রঙের আগুন। শেষ দুপুরের তেরছা আলোয় ঝিলিক দিয়ে উঠছে উত্তপ্ত ডেকচির গা। কিছু অল্প বয়স্ক তরুণ ব্যস্ত ভঙ্গিতে খাবার পরিবেশন করছে। কারো উপর মাংস দেওয়ার দায়িত্ব, কেউবা দিচ্ছে রোস্ট,ডাল,মাছ ভাজা। নম্রতাদের খাওয়া শেষ হয়েছে মাত্র। প্যান্ডেলের পাশে নীল রঙের টাংকিতে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোঁয়ার কাছে এসব নতুন। অসংখ্য মানুষ একই সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে। বিষয়টা নিঃসন্দেহে বিদঘুটে। ছোঁয়া চোখ-মুখ কুঁচকে হাত পরিষ্কার করল। হাত ধুতে গিয়ে পানি ছিটে ভিজে গেল শাড়ি। বড় বিরক্তিকর সব। হাত ধোঁয়া শেষে নম্রতার সাথে বরের স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলো ছোঁয়া। নম্রতাদের আসতে দেখেই বিগলিত হাসল রঞ্জন। চাহনী যথাসম্ভব নিষ্পাপ করার চেষ্টা করে বলল,
' কলিজা? জুতো কোথায় লুকিয়েছ বলবে না?'
নম্রতা দাঁত বের হাসল। হাত বাড়িয়ে বলল,
' পাঁচ হাজার টাকা দে, বলে দেব।'
রঞ্জন মুখ কালো করে বলল,
' এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না কলিজা। তুমি টাকার লোভে বারবার নিজের বরকে ভুলে যাচ্ছ, বিষয়টা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। গেইটেও জেদ ধরে পাঁচ হাজার টাকা উশুল করে নিয়েছ। এসব তো ঠিক না বউ।'
রঞ্জনের কথায় হেসে ফেলল পূজা। নম্রতা কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল,
' রাখ তোর কলিজা। আগে টাকা দে। টাকা ছাড়া বউ বউ করবি তো খবর আছে। ডিরেক্ট ডিভোর্স।'
রঞ্জন অত্যন্ত দুঃখী কন্ঠে বলল,
' আমাদের এতো এতো ভালোবাসাকে তুমি এই সামান্য টাকার কাছে বলি দিতে পারলে বউ? শুধুমাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য? আহ্! আমি মরে যাচ্ছি না কেন?'
রঞ্জনের কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলল নম্রতা। পূজার দিকে চেয়ে বলল,
' বউদি? তোমার বরকে কিছু বলবে? নাকি মাথা ফাটিয়ে স্মৃতিহারা এতিম বানিয়ে দেব?'
রঞ্জন ভাব নিয়ে বলল,
' আজ আমাদের দলটা হালকা বলে এতো জোর চালাচ্ছিস। নাদিমটা সাথে থাকলে বুঝিয়ে দিতাম বরযাত্রী কাকে বলে!'
_
প্যান্ডেলের পেছন দিকে মাটির মোটা রাস্তা। রাস্তার পাশে বিশাল এক জামগাছ। আরফান দ্রুত হেঁটে জামগাছের নিচে এসে দাঁড়াল। আরফানকে আসতে দেখেই গাড়ি থেকে সবিনয়ে নেমে এলো ড্রাইভার।
' স্যার খাওয়ন-দাওয়ন শ্যাষ?'
আরফান গাড়ি থেকে কালো চামড়ার ব্যাগটা বের করতে করতে ছোট্ট করে উত্তর দিল,
' হু।'
ড্রাইভার বেশ আগ্রহ নিয়ে আরফানের কার্যকলাপ দেখতে লাগল। মানুষটাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। ছোঁয়ার অন্যান্য বন্ধুদের মতো খিকখিক না করাটাই ভালো লাগার প্রধান উৎস। ম্যাম সাহেব বলেন, স্বল্প কথা বলা জ্ঞানী লোকের লক্ষ্মণ। আরফান কথা বলে অল্প। চুপচাপ থেকে হঠাৎ হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয়। কথাবার্তায় জ্ঞানের ছটা। ড্রাইভার মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে। আরফান পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনে মনোযোগী হল। ড্রাইভার গদগদ কন্ঠে বলল,
' স্যার আপনি মানুষটা খুব ভালা আছেন। আপনারে আমার খুব পছন্দ হইছে।'
আরফান জবাব না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। সে আহামরি ভালো কোনো কাজ করেছে কি-না বুঝার চেষ্টা করল, মনে পড়ছে না। নম্রতার মন খারাপ দেখে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এখানে আসতে হয়েছে তাকে। তারওপর নীরাও ফোন দিয়ে ঝুলে পড়ল। বাধ্য হয়েই ডিউটি শিডিউল পরিবর্তন করে নম্রতাকে সঙ্গ দিতে হলো। গাড়িটা নম্রতার বান্ধবীর। এই ড্রাইভারকে সে চিনে না। প্রথম দর্শনেই খুব পছন্দ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো কথা তাদের হয়নি। আরফানের ভাবনার মাঝেই নম্রতাকে আসতে দেখা গেল। এক হাতে শাড়ির কুচি সামলে ধীরে ধীরে হাঁটছে সে। নম্রতার দিকে এক নজর তাকিয়েই বড় আফসোস নিয়ে বলল ড্রাইভার,
' একটা কথা বলি, মাইন্ড কইরেন না স্যার। এই আফামনির সাথে আপনারে তেমন মানায় নাই। আফামণি দেখতে মা-শা-আল্লাহ কিন্তু অতিরিক্ত কথা কয়। মাইয়া মানুষ এতো কথা বলা ভালা না। মাইয়া মানুষ থাকব চুপচাপ। দশটা বেতের বাড়িতেও 'ও' শব্দ করত না। চুপচাপ মাইয়া মানুষ দিয়েই সংসারে সুখ আসে। পটরপটর মাইয়ারা কোনো কামের না। মাইন্ড করলেন স্যার?'
আরফান উত্তর দিল না। গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে মনোযোগী চোখে ফোন ঘাটতে লাগল। কপালটা হালকা কুঁচকানো। চোখ-মুখ থমথমে। আরফানের থমথমে মুখ দেখে কথা এগুনোর সাহস পেলো না ড্রাইভার। নম্রতা পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে একটু উঁকি দিয়ে মিষ্টি হাসল। হাসির বদলে হাসি ফিরে এলো না। আরফান আগের মতোই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। নম্রতার দিকে ফিরেও তাকাল না। আরফানের থমথমে মুখ খেয়াল করে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো নম্রতা। দ্বিধা নিয়ে বলল,
' আপনি ঠিক আছেন ডক্টর?'
আরফান তাকাল না। ছোট্ট করে বলল,
' হু।'
নম্রতা সাবধানে বলল,
' আপনাকে আপসেট দেখাচ্ছে নিষ্প্রভ। কিছু হয়েছে?'
আরফান গাড়ির দরজা খুলে নিজের স্যুটটা তুলে নিল। প্রচন্ড শব্দে দরজাটা বন্ধ করে বলল,
' না।'
নম্রতা বুঝল আরফান রেগে আছে। তার রাগ প্রকাশের ধরন সে ধরতে পারছে। নম্রতা অসহায় কন্ঠে বলল,
' আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।'
আরফান তাকাল না। একহাতে কালো চামড়ার ব্যাগ। অন্যহাতে ভাজ করা স্যুট নিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াল। নম্রতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অন্যদিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করল।
' রেগে আছেন কেন?'
আরফান তাকাল। অদ্ভুত ঠান্ডা তার দৃষ্টি। শীতল কন্ঠে বলল,
' আপনার বন্ধু আপনাকে ওভাবে সম্বোধন কেন করল?'
নম্রতা ব্যাপারটা ঠিক ক্যাচ করতে পারল না। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে খানিক সময় লেগে গেল। ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করল। পরমুহূর্তেই হেসে বলল,
' ও! রঞ্জনের কথা বলছেন? ও ওমনই। ভীষণ কিউট না? ওর সব কিছুই কিউট। বাই এনি চান্স, রঞ্জন যদি মুসলিম হতো এবং আমার বন্ধু না হতো তাহলে আমি ড্যাম শিওর আমি ওর উপর ক্রাশড হতাম। প্রেমে পড়তাম। বিয়েও করে ফেলতে পারতাম।'
আরফান শীতল কন্ঠে বলল,
' গুড।'
নম্রতা আড়চোখে আরফানের দিকে তাকাল। আরফানের থমথমে মুখ আরও বেশি থমথমে দেখাচ্ছে এবার। শ্যামবর্ণ মুখটিতে রক্তিম আভা। আরফান নিজের ব্যাগ আর স্যুটটা নিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা দিল। নম্রতা বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরফানের পিছু ছুটল। বিস্মিয় নিয়ে বলল,
' কোথায় যাচ্ছেন?'
আরফানের ছোট্ট উত্তর,
' ঢাকায়।'
নম্রতা আরফানের ডানবাহু চেপে ধরে বলল,
' আপনি আমায় এবোয়েড করছেন?'
আরফান দাঁড়াল। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সাবলীল কন্ঠে বলল,
' হ্যাঁ।'
নম্রতা খানিক অবাক হয়ে বলল,
' কেন! আচ্ছা, আপনি কী জেলাস?'
আরফান উত্তর দিল না। হাঁটার গতি কী খানিকটা বেড়ে গেল? হয়ত। নম্রতা আরফানের সাথে পেরে উঠতে না পেরে বলল,
' আমরা শুধুই মজা করছিলাম। উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস নিষ্প্রভ। আপনি অযথায় রাগ করছেন।'
আরফান দাঁড়াল। চোয়াল শক্ত করে বলল,
' দেন হুয়াই হি কেয়ার ইউ সো মাচ? আমি খেয়াল করেছি। লঞ্চে ও আপনাকে কোলে নিয়েছিল। কেন নিবে?'
শেষের কথাটাতে যেন এক রাশ অভিযোগ ছুঁড়ে দিল আরফান। ভারি বাচ্চামো প্রশ্ন, কেন নিবে? নম্রতার হঠাৎ হাসি পেয়ে গেল। আরফানের রাগ দেখে বুকের ভেতর অদ্ভুত এক প্রশান্তি খেলে গেল। চারপাশের বাতাসটাকে মনে হলো, স্বর্গীয়। নম্রতা নরম কন্ঠে বলল,
' আমি কোনো ফ্যাক্ট নই। আমার জায়গায় নীরা বা ছোঁয়া হলেও রঞ্জন ঠিক একই কাজ করত। রঞ্জন সবসময়ই কেয়ারিং। কাছের মানুষগুলোকে আগলে রাখতেই পছন্দ করে ও।'
আরফানের গনগনে রাগ কমল বলে মনে হলো না। প্রচন্ড রাগ নিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইল, কথা বলল না। নম্রতা মৃদু হেসে বলল,
' রঞ্জনের পাশে থাকা অতিরিক্ত সুন্দরী মেয়েটি ওর হবু বউ। মেয়েটাকে ও পাগলের মতো ভালোবাসে। এতো সুন্দরী বউ রেখে রঞ্জন আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড কেন হবে বলুন তো?'
আরফান ফিরে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে নম্রতার মুখের দিকে চেয়ে থেকে বলল,
' আপনার সৌন্দর্য সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণায় নেই নম্রতা। না জেনে লেইম রেফারেন্স টানবেন না।'
আরফানের কথাটা খুব স্নিগ্ধ শোনাল নম্রতার কানে। পুলকিত চোখে চেয়ে রইল আরফানের শ্যামবর্ণ বলিষ্ঠ চেহারায়। আরফানের দৃষ্টিও তখন নম্রতার চোখে নিবদ্ধ। বিকেলের মিষ্টি আলোয় কিছুটা সময় একান্তে কেটে গেল তাদের। বেশ কিছুক্ষণ পর হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চোখ ফিরিয়ে নিল আরফান। শক্ত গলায় বলল,
' আপনাকে কেউ উদ্ভট সব সম্বোধন করবে তা আমার পছন্দ নয়। আমি ছোট থেকেই হিংসুটে প্রকৃতির ছেলে। যা আমার নিজের তা শুধুই আমার নিজের। আমার জিনিসে কেউ তাকালেও আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি খুব একটা জেন্টেলম্যান নই নম্রমিতা।'
এক প্রকার ঠান্ডা ধমকি দিয়ে নম্রতার দিকে তাকাল আরফান। কথাগুলো ধীরেসুস্থে বলা হলেও কথার ধরনে ভেতরের তপ্ততা টের পেল নম্রতা। আরফান তার ঠান্ডা অথচ তীব্র চাহনি দিয়েই বুঝিয়ে দিল, তার প্রতিটি কথা কতটা সত্য এবং গম্ভীর।
_
দুপুরের শেষ ভাগে বড় মামার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাল নাদিম। গ্রামের মাঝে বিশাল জায়গা নিয়ে বড় মামার বাড়ি। গেইট দিয়ে ঢুকতেই একপাশে দুটো বড় বড় চৌচালা ঘর। একটা ধানের গোদাম। অন্যপাশে পুরনো একতলা বাড়ি। ডানপাশে টিনের চালা দেওয়া বৈঠকঘর। বৈঠক ঘরের পাশে শান বাঁধানো বিরাট পুকুর। পুকুরের পাশে হাঁসের খামার। হাঁসের খামারটা নতুন হয়েছে। পাঁচ বছর আগে যখন এসেছিল তখন এই হাঁসের খামারটা দেখেনি নাদিম। নাদিম ক্লান্ত নিঃশ্বাস ফেলল। বাড়ির সামনে ধান শুকানোর বড় মাঠটা পাড় করে উঠোনে পা রাখতেই বেশ কিছু প্রাণী নীরবে তাকে পর্যবেক্ষণ করল। প্রায় সবাই চাকর শ্রেণীর মানুষ। এদের কাউকেই নাদিম চেনে না। নাদিমকে তারা চিনবে এমনটাও আশা করা যায় না। নাদিম বেশ কয়েক পা এগিয়ে যেতেই একজন উৎসুক কন্ঠে শুধাল,
' আপনি কেডা? কারে খুঁজেন?'
নাদিম উদ্বেগহীন কন্ঠে বলল,
' তুমি কে? বড় মামাকে গিয়ে বলো নাদিম এসেছে।'
লোকটির চোখ সরু হলো। নাদিমের পরিচয় বুঝতে পেরে বলল,
' ভাইজান তো পরিষদে গেছে। আপনে বাড়ির ভিতরে চলেন। ভাবিজানরা আছেন ভিতরে।'
নাদিম সপ্রতিভ পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকল। কিছুক্ষণের মাঝেই বাড়ির ভেতর হালকা এক সুর ধ্বনি খেলে গেল। হাজারও আদিখ্যেতা মাখা প্রশ্ন-উত্তরের পর বড় মামী তাকে বিশ্রাম নিতে বলে রান্নার তোড়জোড় করতে ছুটলেন। নাদিমকে যে মেয়েটা ঘর দেখিয়ে দিল তার নাম পরী। শ্যামলাটে মিষ্টি মুখটা পরীর মতোই সুন্দর, স্নিগ্ধ। নাদিম কলতলা থেকে হাত-মুখ ধুয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত মেয়েটি তার পিছু পিছুই ঘুরল। ঘরে ফিরে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল নাদিম। ভ্রু কুঁচকে বলল,
' তুই পরী না? বড় হয়ে গিয়েছিস অনেক। কোন ক্লাসে পড়িস?'
পরী উজ্জল মুখে তাকাল। চঞ্চল পায়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়াল। মুখভর্তি হাসি নিয়ে বলল,
' এইবার এসএসসি দেব নাদিম ভাই।'
' বাহ্! ভালো।'
পরী উৎসুক কন্ঠে বলল,
' তুমি এতোদিন আসোনি কেন নাদিম ভাই? আব্বা তোমার কথা রোজ বলত। আমিও বলতাম।'
নাদিম হাসল। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
' কী বলতি? আমি যখন এই বাড়িতে শেষবার আসি, তখন তো তুই বেশ ছোট ছিলি। আমায় তো মনে থাকার কথা নয়।'
পরী অবাক হয়ে বলল,
' যাও! তোমাকে মনে থাকবে না কেন? তুমি তখন কি সুন্দর দেখতে ছিলে। একদম সাদা রঙের। পরীদের ছেলের মতো। খুব মনে আছে আমার।'
নাদিম শব্দ করে হাসল।
' পরীদের ছেলের মতো? তুই পরীদের ছেলে দেখেছিস?'
পরী অধৈর্য হয়ে বলল,
' উফ! না দেখলেই বা কী? আমার নাম পরী না? আমি সব জানি। পরীর ছেলেরা খুব খুব সুন্দর হয়। তখন তোমাকেও ঠিক পরীর ছেলের মতোই লাগত।'
' তখন লাগত, এখন লাগে না?'
' এখন তো তোমায় তার থেকেও বেশি সুন্দর লাগে। আগে ছেলের মতো লাগত এখন বরের মতো লাগে। পরীদের বরের মতো।'
কথাটা বলে লাজুক হাসল পরী। নাদিম কয়েক সেকেন্ড চুপ করে চেয়ে রইল পরীর চোখে-মুখে। কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করছে। তারপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করল। মনের ভেতর থেকে সুপ্ত মানব খেক খেক করে হেসে উঠে বলল,
' মুরগী নিজেই এসেছে শিয়ালের কাছে বাগি হতে। বড় মামাকে জব্দ করার চরম সুযোগ।'
নাদিম নিজের মনে হেসে বলল,
' তুমি সবসময় আমায় ডিসট্রেক্ট করার চেষ্টা করো। বড় মামাকে জব্দ করা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।'
' আরে ব্যস! এখন আমার দোষ? মেয়েটাই তো পটে গেল। পটে গেল বলেই না বললাম। ভোলা চেহারা দেখে পটে গেলে আমার কি দোষ?'
' দূর হও। আমি ঘুমাব।'
সুপ্ত মানব মনের এক কোণায় বসে কৌতুকমাখা হাসি হাসতে লাগল। বিষয়টাতে তার খুব আনন্দ লাগছে। আনন্দ লাগছে নাদিমেরও। পৈশাচিক আনন্দ।
.
.
.
চলবে............................