জল ফড়িঙের খোঁজে - পর্ব ২৯ - অনিমা কোতয়াল - ধারাবাহিক গল্প


উঠোনের ঠান্ডা বাতাসে একটা চেয়ারে বসে চা খেতে খেতে বাইরের পরিবেশটা দেখছিল রিখিয়া। তুর্বী আর বিহান দুজনের কথাই খুব মনে পরছে ওর। তুর্বীর সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে। মেয়েটা পুরো বাচ্চাদের মত অভিযোগের সুরে বলছিল, 'রিখু ইয়ার খুব বেশি মিস করছি তোকে প্লিজ চলে আয় না। দেখ তোকে ছাড়া আমি ব্রেকআপ হওয়া, ছ্যাকা খাওয়া দেবদাসীর মত হয়ে যাচ্ছি।' তুর্বীর বলা ওসব কথা ভেবেই ফিক করে হেসে দিল রিখিয়া। মেয়েটা আসলেই খুব বেশি চঞ্চল। এই মেয়েটার সাথে হয়ত সারাজীবন থাকতে পারবেনা। কিন্তু যেদিন ছেড়ে আসতে হবে সেদিন কীকরে আসবে? কীকরে থাকবে পাগলী মেয়েটাকে ছেড়ে?
আবার বিহানের কথাও ভাবছে। ইদানিং বিহানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। বিহানের থেকে দূরে থেকে টানটা আরও বেশি অনুভব করছে। এটাই কী তবে ভালোবাসা? ভালোবাসে বিহানকে। 'ভালোবাসেনা' এই কথাটাও তো জোর দিয়ে বলতে পারছেনা। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে নিজের মনেই মুচকি হাসল রিখিয়া। হয়তো বিহানের মনেও ওর জন্যে কিছু আছে। অবশ্যই আছে, না থাকলে এতো সময় দেওয়া, মাঝেমাঝে ওভাবে কথা বলা, এতো কেয়ার করা, এসব নিশ্চয়ই করত না। নিজের মনে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখে বিহানের ফোন এলো। রিখিয়া স্ক্রিনে নামটা দেখেই দ্রুত রিসিভ করে বলল,

" হ্যালো।"

" ভালো আছো?"

" হ্যাঁ।" 

" আঙ্কেল কেমন আছে এখন?"

" আগের চেয়ে অনেকটাই বেটার।"

এরপর দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ ছিল। নিরবতা ভেঙ্গে বিহান বলল,

" কবে আসবে?"

" দুদিন পর।"

" মিস করছি তোমাকে।"

রিখিয়ার খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে 'আমিও আপনাকে মিস করছি' কিন্তু বলতে পারল না। কিছুক্ষণ দুজনে টুকিটাকি কথা বলার পর ফোন রেখে দিল ওরা।
 
ফোন বিহান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের অন্ধকারের দিকে। মন ভালো নেই ওর। একদমই ভালো নেই। সবকিছুই অসহ্য লাগছে। সেটা কেনো তার কারণ ওর জানা নেই ওর। রিখিয়া কে মিস করছে? না, সেরকম হওয়ার তো কোন কারণ নেই। রিখিয়ার প্রতি তো ওর মনে কোন অনুভূতিই নেই। সবটাই তো নাটক ছিল। হ্যাঁ বন্ধুত্ব করা, এতো ফ্রেন্ডলি মেলামেশা, এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা সবটাই একটা ড্রামা ছিলো। সেদিন রিখিয়া মিডিয়া, এতো নামিদামী বিজনেস ম্যানের সামনে ওকে চড় মেরেছিল, কিছু না জেনেই মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিল, সারারাত লকাপে ছিল, ওর বাবা-মার ওর প্রতি আরও বেশি খারাপ ধারণা জন্মালো। যেখানে ওর কোন দোষই ছিলোনা। মেয়েদের প্রতি এমনিতেই ওর রাগ ছিল। তারওপর রিখিয়ার এই কাজে ওর রাগ বেড়ে গেছিল। ওর মনে হয়েছিল রিখিয়া সেইরকমই জঘন্য কোয়ালিটির মেয়ে, যারা সিমপ্যাথি, এটেনশন আর টাকার জন্যে একটা মানুষের জীবন নষ্ট করতেও দুবার ভাবে না। তাইতো রিখিয়াকে শিক্ষা দেবে ভেবেছিল। প্রথমে রিখিয়াকে ওর প্রতি প্রচন্ডভাবে দুর্বল করে দেবে। এরপর মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে যাতে, রিখিয়া চরম কষ্ট পায়। যাতে এটা বুঝতে পারে যে মন নিয়ে খেলা করা আসলে কী হয়। প্রচন্ড রেগে ছিল রিখিয়ার ওপর। তাইতো প্লান করে রিখিয়ার মনে নিজের জায়গা তৈরীর চেষ্টায়। কিন্তু যতদিন গেল রাগটা আস্তে আস্তে কমে আসতে শুরু করল। রাগ কখনই চিরস্থায়ী হয়না। এখন আর প্রতিশোধের সেই তীব্র ইচ্ছা জাগছেনা মনে। এটাকী রাগ পরে গেছে সেইজন্য না-কি রিখিয়ার সাথে মিশে বুঝতে পেরেছে ও সেরকম না সেইজন্য সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা। কিন্তু এটাও ঠিক যে রিখিয়ার প্রতি ওর মনে কোন অনুভূতির খোঁজ ওর মতে ও পায়নি। এখন কী করা উচিৎ ওর? সব সত্যিটা বলে দিয়ে রিখিয়ার থেকে সরে আসাটাই ভালো হয়ত। কিন্তু কীকরে বলবে?

___________

দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেল। তুর্বী ড্রয়িং সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে সেন্টি মার্কা চেহারা করে চিপস খাচ্ছিল আর রিখিয়ার কথা ভাবছিল। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ পেয়েই চমীএ উঠল তুর্বী। খুশি হয়ে চিপসের প্যাকেট ফেলে দিয়ে দৌড় দিল। দরজাটা খুলে সামনে রিখিয়াকে দেখেই জাপটে ধরল। রিখিয়া হেসে জড়িয়ে ধরল তুর্বীকে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে বলল,

"ইয়ার এতদিন থাকে কেউ? দম বন্ধ হয়ে আমি মরেই যেতাম। উফফ।"

রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

" হয়েছে এবার একটু শ্বাস নাও। আর আমাকে ভেতরে যেতে দাও।"

তুর্বী সরে দাঁড়ালো। রিখিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে বলল,

" একয়েকদিনেই এই হাল হয়েছে? যদি পার্মানেন্টলি চলে যাই? তখন কী করবে?"

তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,

" দেখ রিখু একদম ফালতু বকবিনা।"

রিখিয়া হেসে দিল। দুজনেই বেশ অনেক্ষণ আড্ডা দিচ্ছে প্রায় এক সপ্তাহ পর দেখা হল তাই।

___________

সময় নিজের গতিতে চলছে। কয়েকটা দিনও কেটে গেছে। এরমধ্যে ওরা চারজন প্রায়ই দেখা করেছে গল্প-অাড্ডা করেছে। ঐদিনের পর থেকে এরমধ্যে তুর্বী কয়েকবারই খেয়াল করেছে যে সৌহার্দ্যর মনে ওর প্রতি কিছু আছে। ও সিরিয়াস না হলেও সৌহার্দ্য ভীষণ সিরিয়াস। প্রথমে মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিলেও এখন আর সেটা ভাবতে পারছেনা ও। যদি সেরকম হয় তাহলেতো মুসকিল। কারণ ও তো সৌহার্দ্যকে ভালো বাসেনা। আর নিজের মনের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেনা ও। আর যত দিন যাচ্ছে সৌহার্দ্য তুর্বীর জন্যে ততই পাগল হচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না। না পারছে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।
ওপরদিকে বিহান ভাবছে কীকরে রিখিয়াকে সত্যিটা বলবে। কোন অঘটন ঘটার আগেই সব বলে দেওয়া উচিত। আর রিখিয়া এতোদিনে মোটামুটি শিওর হয়ে গেছে যে ও বিহানকেই ভালোবাসে। কিন্তু কাউকে বলেনি এখনো।

আজ বিহানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ওরা রিখিয়া, বিহান, সৌহার্দ্য, তুর্বী চারজন মিলে রেস্টুরেন্টে এসছে। বিহান ট্রিট দেবে আজ ওদের। বিহানের তেমন বিশেষ কোন বন্ধু নেই তাই ওদের নিয়েই এসছে। ওখানেই সৌহার্দ্য একটা ছোট কেকের আয়োজন করেছে। খাওয়াদাওয়া করতে করতে চারজনই জমিয়ে আড্ডা দিল। দুজনেই গিফ্ট দিয়েছে কিন্তু রিখিয়া আলাদা করে একটা গোলাপের বুকেও দিয়েছে। খাওয়া শেষে সামনের মাঠেই জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হাটছিল ওরা। বিহান হাটতে হাটতে বলল,

" তোমাদের বাড়ির অবস্থা কী? সুস্থ আছেন তো আঙ্কেল এখন?"

" হ্যাঁ এখন ঠিকই আছে। একটু চিন্তায় থাকে আমাকে নিয়ে এই আরকি।"

" ওনাদের চিন্তা মুক্ত করতে একটা বিয়ে করে নিলেই পারো।"

রিখিয়া একটু হেসে বলল,

" আমি বিয়ে করে নিলে আমার বাবা-মাকে দেখার কেউ থাকবেনা।"

বিহান একটু অবাক হয়ে বলল,

" মানে? তোমার ভাইয়া আছে না?"

" ভাইয়া এখনই ঘুরে তাকায়না। আবার আমার বিয়ের পর। সংসারে আমি টাকা দিলে সংসারটাই চলবে না। কিন্তু আমি চলে গেলে যেটুকু পরে আছে সেটুকুও ভাইয়া শুষে খাবে। আর যাই হোক স্বার্থপরের মত ওনাদের ফেলে যেতে পারবনা।"

বিহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এই মেয়েটাকে কষ্ট দেবে বলে এতো কিছু করছিল ও? নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে এখন ওর। রাগের মাথায় সেদিনের নেওয়া সিদ্ধান্তটা একদমই ঠিক হয়নি। ভূল ভেবেছিল ও। রিখিয়া সেরকম মেয়ে নয় যেরকম ও ভেবেছিল। এরকম একটা মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাবলোই বা কীকরে? তাও এতো নিখুঁত প্লান করে এভাবে আঘাত করতে চেয়েছে? ছিঃ।

এদিকে হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এসছে সৌহার্দ্য তুর্বী। দুজনে টুকটাক কথা বলতে আর হাটছে। হঠাৎ করেই তুর্বী দেখতে পেল হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে একটা বাচ্চা রাস্তা পার হচ্ছে একটা গাড়ি সেদিকেই আসছে। দেখেই তুর্বীর কলিজা শুকিয়ে গেলো। দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে একটানে সরিয়ে দিলেও নিজে সরতে পারলনা ভাগ্যিস গাড়িটা ব্রেক করেছে তাই তুর্বী বেঁচে গেছে। কিন্তু গাড়িটার সাথে হালকা ধাক্কা লেগে পরে গেছে তুর্বী যার ফলে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে গেছিল এই ঘটনায়। হুস আসতেই দৌড়ে গেল তুর্বীর কাছে। গিয়ে ওর গালে হাত গালে হাত রেখে হাপানো বলল,

" তুমি ঠিক আছো।"

তুর্বী ঠিক আছে বলার আগেই সৌহার্দ্য ওকে পাগলের মত পুরোটা চেক করতে লাগল আর বিড়বিড় করে বলছে 'কোথায় লেগেছে দেখি'। তুর্বী অবাক হয়ে দেখছে সৌহার্দ্যকে। ও একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়াতেই সৌহার্দ্য জড়িয়ে ধরল ওকে। কিছুক্ষণ জড়িয়ে রেখে ওকে ছেড়ে দুই বাহু ঝাকিয়ে বলল,

" সবসময় এমন কর কেন তুমি? নিজেকে সুপার ওমেন ভাবো? যা খুশি করতে পারো তুমি? জানো কত ঘাবড়ে গেছিলাম। আরেকটু হলে মরে যেতাম। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার কী হত হ্যাঁ? বল আমার কী হত?"

তুর্বী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। এখন ও শিওর হয়েই গেছে যে সৌহার্দ্য ওকে ভালোবাসে। আর সেটা বুঝতে পেরে ওর সব থেমে গেছে। এরকমটা আশা করেনি ও। ও তো সৌহার্দ্যকে ভালোবাসেনা। ও সৌহার্দ্যকে সেটা দিতে পারবেনা যেটা সৌহার্দ্য ওর কাছ থেকে চায়।

_____________

রাতে তুর্বী আর রিখিয়া পাশাপাশি শুয়ে আছে। দুজনের চোখেই ঘুম নেই। তুর্বী ভাবছে যে ও চিন্তাও করেনি সৌহার্দ্য ওকে ভালোবেসে ফেলবে। ও তো এইজন্যই আগে থেকে বলে দিয়েছিল এই সম্পর্কে কোন কমিটমেন্ট থাকবেনা। কিন্তু ও তো ভালোবেসে ফেলল। না, সৌহার্দ্য অনেক ভালো একটা ছেলে। ও অনেক ভালো কাউকে ডিসার্ব করে, আরও ভালোবাসা ডিসার্ব করে। তুর্বীতো ওকে ভালো বাসিনা, ভবিষ্যতেও বাসতে পারবে কি-না জানেনা। তাই সৌহার্দ্যকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবেনা। ওই সম্পর্কে থাকলে, কাছাকাছি থাকলে সৌহার্দ্যর টান আরও বারবে। তাই কালকেই ও গিয়ে এই সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে আসবে। দূরে থাকলে সৌহার্দ্য এমনিই সব ভুলে যাবে। হ্যাঁ ও এটাই করবে। এটাই করা উচিত। একটা ছেলের ইমোশন নিয়ে এভাবে খেলার অধিকার নেই ওর। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তুর্বী। রিখিয়া বলল,

" কী ভাবো?"

" কিছুনা।"

" আমি ঠিক করে নিয়েছি জানো।"

" কী?"

" আমি কালকেই বিহানকে বলে দেব যে আমি ওকে 'ভালোবাসি'।"

তুর্বী রিখিয়ার দিকে ঘুরে শুয়ে বলল,

" ওয়াও! ফাইনালি। কিন্তু ও রাজি হবে?"

রিখিয়া লাজুক হেসে বলল,

" আমার মন বলছে হবে। এতোগুলো দিন ওর ব্যবহারগুলোতেই বোঝা গেছে ও আমায় চায়।"

" তাহলে আর কী বলে দে।"

" হুম। না বলে পারবনা। এসব বাদর টাইপ ছেলে কোনকালেই ভালো লাগতোনা আমার। কিন্তু দেখ ঐ বাদরটাকে না চাইতেও ভালোবেসে ফেললাম। একটু বেশিই ভালোবেসে ফেললাম।"

তুর্বী হেসে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। কিন্তু মন ঠিক নেই তুর্বীর। ওর সিক্স সেন্স বলছে কাল কিছু একটা হতে চলেছে। বেশ বড়সর কিছু। কিন্তু কী সেটা বুঝতে পারছেনা। যেহেতু নিজেই ক্লিয়ার না কিছু তাই রিখিয়াকেও কিছুই বলল না।

এদিকে সৌহার্দ্য আর বিহান ছাদে খোলা হাওয়ায় বসে আছে। বিহান রং সিলেক্ট করছে। আর সৌহার্দ্য ল্যাপটপ খুলে সামনে রেখে কাজ ভাবছে কিছু। বিহান রং দেখতে দেখতেই বলল,

'' কী এতো ভাবছিস? কিছু ডিসকভার করে ফেলবি না-কি?"

সৌহার্দ্য ভাবুক কন্ঠে বলল,

" কাল তুর্বীকে বলে দেব আই ওয়ান্ট টু ম্যারি হার।"

বিহান অবাক হয়ে তাকাল। তারপর বলল,

" তোর মনে হয় ও মানবে? যা বিচ্ছু মেয়ে।"

" কেন মানবেনা? ও প্রেমটাকে সিরিয়াসলি নেয়না মানলাম। বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? চির কুমারী থাকবেনা নিশ্চয়ই? পাত্র হিসেবে আমি কী খুব খারাপ না-কি?"

" সেটা না। দেখ রাজি হয় কি-না। বেস্ট অফ লাক।"

সৌহার্দ্য লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

" ওকে ছাড়া আমি একদম অচল রে। কখনও ভাবিনি ওরকম একটা মেয়েকে এতো ভালো বাসব। কিন্তু বেসে ফেললাম। ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি। একদম না।"

বিহান একটু হাসল কিছু বলল না। ও ভাবছে কাল ওকেও এক কাজ করতে হবে। রিখিয়াকে সব সত্যিটা বলে দিয়ে ওর কাছ থেকে সরে আসতে হবে। রাগের বসে ভুল পথ বেছে নিয়েছিল ও। কিন্তু সত্যিতো এটাই ওর মনে রিখিয়ার জন্যে কোন অনুভূতি নেই। থাকলে নিশ্চয়ই ফিল করত, কই ফিলতো করছেনা। তাই মেয়েটাকে শুধু কষ্ট দেওয়া বোকামি হবে এখনও তো দেরী হয়ে যায়নি। রিখিয়া নিশ্চয়ই এখনও এতটাও দুর্বল হয়নি বা ভালোবেসে ফেলেনি। ফেললে তো ওকে বলত বা ও বুঝতে পারত। তাই সেরকম কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই কাল রিখিয়াকে বলে দিয়ে এইসব কিছু এখানেই শেষ করে দিয়ে আসতে হবে। না হলে পরে আরও মায়ার জড়িয়ে গেলে মেয়েটা বেশি কষ্ট পাবে। তাই এখানেই সবকিছুর ইতি টেনে দেওয়া ভালো।

মানুষ অনেক বিচিত্র একটা প্রাণী। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিচিত্র যে দুইটি জিনিস আছে সেটা হলো রাগ আর আবেগ। আর এই দুটোর বশবর্তী হয়ে মানুষ যে সিদ্ধান্ত নেয় বা যা করে বেশিরভাগই ক্ষতিকর এবং ভুল হয়। যেমন ওরা চারজন করেছে। ছোট বাচ্চারা খুঁজে পাবে কি-না সেই অনিশ্চয়তা নিয়েও যেমন জলফড়িং খুঁজতে বেড় হয়। আর খুঁজে পেলেও জলফড়িংকে ধরতে পারবে কি-না সেই অনিশ্চয়তায় থেকে চেষ্টা করতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিফল হয় ভাগ্য সহায় হলে মাঝেমাঝে সফল হয়। ঠিক তেমনই ওদের চারজনের বেছে নেওয়া পথটাই ছিল অনিশ্চয়তার পথ। ঠিক জলফড়িং খোঁজার মত।আর এই একটা ভুল চারজনের জীবনকে কোথায় নিয়ে দ্বার করায় সেটাই এবার দেখার।
.
.
.
চলবে........................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন