বেশ অনেকটা রাত হয়েছে। নিজের মনেই অজস্র কল্পনা জল্পনা করতে করতে তুর্বী ওর ফ্লাটের সামনে এসে পৌছলো। সৌহার্দ্য চলে যাওয়ার পর বেশ অনেকটা সময় ঠায় মেরে বসে ছিল ওখানে। সবটাই এলোমেলো লাগছিল। মানুষ অনেকসময় এমন অনেক কাজ করে ফেলে যার পরে নিজেই অশান্তিতে ভুগতে থাকে। কী ভুল করেছে সেটা জানা থাকেনা কিন্তু মনে হয় যে ভুল হয়ে গেছে, বড্ড ভুল হয়ে গেছে। ওখানে কতক্ষণ থেকেছে জানা নেই। এরপর কোথায় গেছে কী করেছে নিজেও জানেনা। শুধুশুধুই এদিক ওদিক হেটে বেড়াচ্ছিল। তবে দরজার সামনে এসেই টনক নড়ল ওর। এতো রাত করে ফেরার পরেও রিখিয়া ওকে ফোন করে একটাবার খোঁজ নিলোনা। এরকমতো আগে কখনও হয়নি। আজতো বিহানকে প্রপোজ করার কথা ছিল ওর। কোন ঝামেলা হয়নি তো?কিছু হয়নি তো মেয়েটার? তুর্বী দ্রুত কলিং বেল বাজালো। বেশ কয়েকবার বেল বাজানোর পরও যখন দরজা খুলল না তখন তুর্বী ধাক্কাতে লাগল। কিন্তু তবুও খোলেনি। এবার ও ঘাবড়ে গেল। কিছু করতে যাবে ঠিক তখনই দরজা খুলল রিখিয়া। রিখিয়াকে দেখে চমকে উঠল তুর্বী। ওর চোখ নাক লালচে হয়ে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা প্রচুর কেঁদেছে। তুর্বীর দিকে একপলক তাকিয়ে রিখিয়া ভেতরে চলে গেল। তুর্বী বেশ অবাক হল, কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে ভেতরে গিয়ে দেখল রিখিয়া ফ্লোরে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। ও বুঝে গেছে যে আজ ভয়ানক কিছু হয়েছে। না হলে মেয়েটা এভাবে ভেঙ্গে পরতো না। ও ব্যাগটা ফেলে গিয়ে রিখিয়াকে দুহাতে ধরে বলল,
" কী হয়েছে?"
রিখিয়া কোন পতিক্রিয়া দেখাল না, ওভাবেই বসে রইল। তুর্বী হালকা ঝাকিয়ে বলল,
" বল? বিহান কিছু বলেছে?"
রিখিয়া কথা বলছেনা তাকাচ্ছেও না তুর্বীর দিকে। তুর্বী ঠান্ডা মাথায় কয়েকবার জিজ্ঞেস করল। কিন্তু রিখিয়া কোনটারই উত্তর দিল না। তুর্বী এবার একটু রেগে গেল। রেগে গিয়ে ধমকে বলল,
" রিখু বলবি কী হয়েছে?"
রিখিয়া এবার শান্ত চোখে তুর্বীর দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুর্বীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। তুর্বী থমকে গেল। রিখিয়াকে এভাবে কাঁদতে এর আগে কোনদিন দেখেনি ও। ওর হৃদপিণ্ডে গিয়ে লাগছে এই কান্না।
____________
ড্রয়িংরুমের সোফায় সৌহার্দ্য আর বিহান দুজনেই মনমরা হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালোলাগছেনা এখন ওদের। বিহানতো ঐ সময়ের পর থেকে একদম চুপ হয়ে আছে। নিজের পরে আজ প্রথম অন্য কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিয়েছে ও। আগেতো শুধুই নিজেকে কষ্ট দিত। অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছে ও। এতো জঘন্য কাজ কীকরে করল? রাগ সত্যিই ভয়ংকর। রাগের বসে নেওয়া সিদ্ধান্ত আর কাজের জন্যে কোন না কোন দিন মানুষকে পস্তাতেই হয়। তাইতো জ্ঞানী ব্যাক্তিরা বলেন যে, রাগান্বিত অবস্থায় কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিও না। জিম ওয়েবও বলেছেন যে, 'রাগ হল নষ্ট হয়ে যাওয়া আবেগ।' সুতরাং নষ্ট কোন কিছুই ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনা।
এদিকে সৌহার্দ্য কফিশপ থেকে বেড়িয়ে একটা নিরিবিলি পার্কে বসে বেশ অনেকসময় কেঁদেছিল। যাকে বলে নিরব কান্না। না গলা দিয়ে আওয়াজ হয়েছে, আর চোখ দিয়ে তেমন জল পরেছে। তবুও এই কান্নাটা অদ্ভুত যন্ত্রণার ছিলো, ভীষণ যন্ত্রণার। ওখান থেকে সোজা বিহানের ফ্লাটেই এসছিল ও। কিন্তু বিহানকে কিছু না বলেই ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে চলে গেছে। লম্বা শাওয়ার নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে এরপর বেড়িয়েছিল। কিন্তু বিহান বুঝে গেছিল যে কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে, আর সেটা তুর্বীকে নিয়ে। প্রথমে বিহান কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সৌহার্দ্য স্বাভাবিক হওয়ার পরে বিহান প্রশ্ন করায় সৌহার্দ্য তুর্বীর বলা কথাগুলো বলে দেয়। সবটা শুনে বিহান চুপ হয়ে গেছিল। কিছুই বলেনি। কী বলবে? তুর্বীতো সৌহার্দ্যকে আগেই বলে রেখেছিল। সৌহার্দ্য দুর্বল হয়ে পরেছে এতে তুর্বীর হাত ছিলোনা। তুর্বী যখন বুঝতে পেরেছে যে সৌহার্দ্য দুর্বল হয়ে পরেছে তখন নিজেই সরে গেছে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে তুর্বীর এই ছেলেমানুষীর জন্যই কিন্তু সৌহার্দ্যর মত একটা ছেলে আজ এতোটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ও নিজে কী করেছে? ওতো ইচ্ছে করে, জেনে বুঝে একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়েছে। ভাগ্যিস রিখিয়া এখনও ওকে ভালোবাসেনি। তাহলে সারাজীবনেও নিজের অপরাধের জন্যে আফসোস মিটতো না ওর। তবে নিজের ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে বিহানের খুব কষ্ট হচ্ছে, ভীষণ কষ্ট। আচ্ছা রিখিয়াও কি সৌহার্দ্যর মতই কষ্ট পাচ্ছে? না, রিখিয়া নিশ্চয়ই এতোটাও কষ্ট পাচ্ছেনা। সৌহার্দ্যতো তুর্বীকে ভালোবাসে কিন্তু রিখিয়াতো ওকে ভালোবাসে না। তাই এতোটা বেশি কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কলিং বেলের আওয়াজে দুজনেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো। বিরতিহীনভাবে কেউ কলিংবেল চেপে যাচ্ছে। বিহান উঠতে নিলে সৌহার্দ্য বলে উঠল,
''আমি যাচ্ছি''
বিহান বসে রইল। সৌহার্দ্য গিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে বেশ অনেকটাই অবাক হল। কারণ তুর্বী দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্য কিছু বলবে তার আগেই তুর্বী হনহনে পায়ে ভেতরে চলে গেল। সৌহার্দ্য বোকা বনে গেল তুর্বীর এরকম কাছে। তুর্বী ভেতরে গিয়ে দেখে বিহান বসে আছে ফ্লোরে। তুর্বীকে দেখে বিহান দাঁড়িয়ে গেল। তুর্বী এগিয়ে গিয়ে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিল বিহানকে। বিহান গালে হাত রেখে অবাক হয়ে তাকাল। আসলে রিখিয়া সবটাই খুলে বলেছে তুর্বীকে। আর এসব শুনে নিজেকে সামলাতে পারেনি ও। রিখিয়া বারণ করার পরেও ঐ মুহূর্তেই ও বিহানের ফ্লাটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে। আরেকটা থাপ্পড় মারতে গেলে কেউ ওর হাত ধরে ফেলল। তুর্বী সেদিকে তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুর্বী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
" হাত ছাড়ো। মেরে ফেলব ওকে আজ আমি।"
তুর্বী এগোতে নিলে সৌহার্দ্য ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
" তোমার সাহস কীকরে হয় আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তোলার? দেখ তুর্বী, তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই তোমার সব ছেলেমানুষী মেনে নেই। তার মানে এই নয় তুমি আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলবে আমি মেনে নেব। কী করেছি ও? থাপ্পড় মারলে কেন?"
তুর্বী হাত ছাড়িয়ে বলল,
" সেটা তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করো। যে ও কী করেছে?"
সৌহার্দ্য একবার বিহানের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার তুর্বীর দিকে তাকি ভ্রু কুচকে বলল,
" কী করেছে ও?"
বিহান এতক্ষণ হয়ে যাওয়া কান্ডে অবাক হয়নি। ও বুঝতে পারছে তুর্বী কেন এসব বলছে। তাই ও সৌহার্দ্যকে থামাতে যাবে তার আগেই তুর্বী বলল,
" ঠকিয়েছে আপনার ভাই রিখুকে। মিথ্যা অভিনয় করে, ইচ্ছে করে মেয়েটাকে নিজের প্রতি দুর্বল করে দিয়েছে। আর আজ যখন রিখিয়া ওকে ভালোবাসে, যখন ও আজ খুশি মনে বিহানকে ভালোবাসি বলতে যাচ্ছিল তখন আপনার ভাই ওকে ছুড়ে ফেলে দিল।''
সৌহার্দ্য বেশ অবাক হল। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। কিন্তু কিছু একটা ভেবে ও তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
" হতেই পারেনা। হ্যাঁ এটা ঠিক যে বিহান অন্যরকম। অনেক মেয়ের সাথেই ওর সম্পর্ক ছিল বা আছে। কিন্তু ও আজ অবধি কাউকে ঠকায় নি। সেই সব মেয়েরা জেনে শুনেই টাইমপাসের জন্যেই আসতো ওর কাছে। যদিও আমি এসব সমর্থন করিনা। কিন্তু এটাও জানি ইচ্ছে করে ও কারো মন ভাঙবেনা। হয়তো রিখিয়া ভালোবেসে ফেলেছে ওকে। কিন্তু তারমানে তো এটা না যে বিহানকেও ভালোবাসতে হবে। বিহান হয়তো রিখিয়াকে বন্ধু হিসেবেই দেখেছে। তাইতো বিহান?"
বিহান কিছুই বলছে না। যে মুহূর্তে তুর্বী বলেছে রিখিয়া ওকে ভালোবাসে , সেই মুহূর্তে বিহান থমকে গেছে। কিছু বলার মত ভাষা ওর নেই। সৌহার্দ্য বলল,
" এখন রিখিয়া ভালোবেসে ফেললে ওর কী দোষ? তবে হ্যাঁ রিখিয়া মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। আমি বিহানকে বোঝাবো যাতে ভেবে দেখে কিন্তু ফোর্সতো করতে পারিনা তাইনা?"
তুর্বী তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল,
" তোমার ভাই আগে কারো মন ভেঙ্গেছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু আজ ভেঙ্গেছে। হ্যাঁ আজ ও ইচ্ছে করেই মন ভেঙ্গেছে রিখুর।"
" সেটা তোমার মনে হতে পারে। আমার সেরকম কিছুই মনে হচ্ছেনা। আর তাছাড়াও তোমার মুখে এরকম কথা মানায় মিস তুর্বী আহমেদ?"
তুর্বী একটু অবাক হল সৌহার্দ্য 'তুর' না বলে পুরো নাম নেওয়াতে। তাই অবাক কন্ঠে বলল,
" মানে?"
সৌহার্দ্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
" বাদ দাও। রিখিয়া কষ্ট পেয়েছে বলে তুমি কষ্ট পেয়ে এসব করেছ আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এতে ওর দোষ নেই। তবুও আমি দেখছি বিহানকে মানানো যায় কি-না। তাই এখানে সিনক্রিয়েট করোনা, এটা তোমার ছেলেমানুষীর জায়গা নয়। ইউ ক্যান গো।"
" এখানে থাকতে আসিনি আমি। তবে আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন আমি ঠিক বলছি নাকি না।"
বলে তুর্বী চলে গেল। সৌহার্দ্য তুর্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল। তবে ও বিহানকে তখনই কিছু জিজ্ঞেস করল না। বিহান তো প্রায় পাথরের মত বসে আছে। রিখিয়া সত্যিই ওকে ভালোবেসে ফেলেছে ব্যাপারটায় যতটা চমকেছে তারচেয়েও বেশি নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে। কী করেছে কী ও?
কিছুক্ষণ পর সৌহার্দ্য এসে বসল বিহানের পাশে। কিছুক্ষণ বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল,
" রিখিয়া মেয়েটা কিন্তু ভালো। তুই ভেবে দেখতে পারিস।"
বিহান চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
'' ভাবার কোন জায়গা আমি রাখিনি ব্রো। তুর্বী যা বলেছে সবটাই সত্যি। ঠকিয়েছি আমি মেয়েটাকে। ওর মন ভেঙ্গে দিয়েছি, ইচ্ছে করে। শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে।"
সৌহার্দ্য এরকম কথা শোনার জন্যে মোটেও তৈরী ছিলোনা। বিহান এমন করতেই পারেনা। ও একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
" তুই গিল্টি ফিলিং থেকে এসব বলছিস না? রিখিয়া কষ্ট পেয়েছে তাই তোর গিল্টি ফিল হচ্ছে। তাই তুই তোর নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিচ্ছিস তাইতো? "
বিহান শক্ত কন্ঠে বলল,
" না ব্রো আমি যেটা বলছি একদম সত্যিই। প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে গেছিলাম। যা করেছি ইচ্ছে করেই করেছি। আর যখন বুঝতে পারলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ওকে কষ্ট দেব বলেই এসব করেছি আমি।"
সৌহার্দ্য অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ বিহানের দিকে। চোখ ছলছল করছে ওর। ও ভাবতেও পারেনি নি যে বিহান এমন একটা কাজ করবে। ও নিজেই এবার প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। বিহান অবাক হল। ও জানে ও যা করেছে তারপর সৌহার্দ্যর এরকম আচরণ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে চড়টা আশা করেনি। কিন্তু বিহানকে আবার অবাক করে সৌহার্দ্য আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল,
" আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তুই এতোটা নিচে নামবি। অধঃপতন হয়েছিল তোর আমি জানতাম। জেনে শুনেও তোকে ছাড় দিতাম শুধুমাত্র তোর অতীতের কথা ভেবে। কিন্তু তাই বলে এতো জঘন্যতম কাজ করবি সেটা ভাবি নি।"
বিহান মাথা নিচু করে নিল। সৌহার্দ্য আবার বলল,
" রিখিয়ার মত একটা ভালো মেয়ের সাথে এরকম করার আগে তোর বিবেক তোকে আটকায় নি? এখনতো আমার মনে হচ্ছে তোর মধ্যে বিবেক বলে কিচ্ছু নেই। বাবা, ফুপা-ফুপি ঠিক বলেছিল তুই কারও যোগ্য নস। এখনতো আমার সন্দেহ হচ্ছে পাঁচ বছর আগে তোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, রেপিস্ট এর যে ট্যাগ তোর নামের আগে বসেছিল সেটা আদোও মিথ্যা অভিযোগ কি-না। এখনতো আমারও সন্দেহ হচ্ছে, সত্যিই নির্দোষ ছিলি তো?"
বিহান এবার অবাক চোখে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। চোখ ভরে এলো ওর। সারা দুনিয়া যে মুহুর্তে ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তখন এই সৌহার্দ্য ওকে দুহাতে আগলে রেখেছিল। সে ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে বুক ফেটে যাচ্ছে ওর। সৌহার্দ্য ওখানে আর দাঁড়াল না। বিহানের ওপর রেগে থাকলেও শেষের কথাটা মন থেকে বলেনি ও। কিন্তু বলে ফেলেছে। কী করত? আজকে ওর দুজন ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকেই ও আঘাত পেয়েছে। একজন ওর মন ভেঙেছে, আরেকজন বিশ্বাস। বাতাসও আজ বড্ড বিষাক্ত লাগছে। সৌহার্দ্য যেতেই বিহান হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পরল। চোখ দিয়ে দু ফোটা জলও গড়িয়ে পরল। সত্যিই নিকৃষ্ট এক ব্যাক্তি ও। তাইতো সবাই ওকে ছেড়ে চলে যায়। সৌহার্দ্যও চলে গেল। কাউকে কাঁদিয়ে নাকি কেউ সুখে থাকতে পারেনা। রিখিয়াকে কাঁদিয়েছে বলে না হয় ওও এখন কাঁদছে মেনে নিল। কিন্তু মায়া? মায়া কীকরে এখনও সুখে আছে? ওরও তো শাস্তি প্রাপ্য ছিল তাইনা? কিন্তু তার বদলে মিথ্যা অপবাদের দহনে বিহান নিজেই পাঁচ বছর যাবত জ্বলছে। এ কেমন অবিচার?
ঐদিকে তুর্বী আর রিখিয়া মুখোমুখি চুপচাপ বসে আছে। রিখিয়াকে তুর্বী ওর আর সৌহার্দ্যর সব ঘটনাই খুলে বলেছে। রিখিয়া এখনও উত্তর দেয়নি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিখিয়া বলল,
" তুমি কষ্ট কেন পাচ্ছ? তোমার তো এক্সপিরিমেন্ট ফুলফিল হয়েছে তাইনা? আমারই ভুল ছিল সেদিন মজার ছলে ওনার নাম নিয়েছিলাম।"
" রিখু আমি.."
" অনেক রাত হয়েছে। ক্লান্তি আমি, একটু ঘুমাব তুর্বী।"
রিখিয়ার মুখেও 'তুর্বী' ডাকটা শুনে তুর্বী অবাক হল। কিছু বলার আগেই রিখিয়া গিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে পরল। তুর্বী কয়েকবার ডাকার পরেও সাড়া দিলোনা রিখিয়া। তুর্বী হতাশ হয়ে এসে বেডে বসে দুহাতে চুল টেনে ধরল। আচ্ছা ও কী সত্যিই বিশাল বড় অন্যায় করে ফেলেছে? রিখিয়া আর সৌহার্দ্য দুজনেই এভাবে দূরে ঠেলে দিল ওকে? যদিও সৌহার্দ্যকে ও নিজেই দূরে ঠেলেছে। কিন্তু সেটাতো সৌহার্দ্যর ভালোর জন্যেই।
ভোররাত, চারপাশটা খুব বেশিই নিস্তব্ধ। বিশাল এক তুফানের পর যেমন সবকিছুই শান্ত হয়ে যায়। পরিবেশটা আজ ঠিক সেরকমটাই মনে হচ্ছে। সবকিছুই একেবারে এলোমেলো হয়ে গেছে। আজ শুধু শুধু দুটো ভালোবাসার সম্পর্ক ভাঙেনি। হয়তো দুটো বন্ধুত্বের সম্পর্কও ভেঙ্গে গেছে। একদিনের ঝড়ে সবটা ওলোটপালট হয়ে গেছে, সবটা।
.
.
.
চলবে...............................................