!!৩১!!
আবিরের এমন ডাকে চাঁদ তার পাশে গিয়ে বসলো।আবির একদৃষ্টিতে তার প্রেয়সীকে দেখে যাচ্ছে। চাঁদ মাথা নিচু করেই বসে রইল।নিরবতা ভেঙে আবির বললো,
-ব্যাঙের মতো মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?
চাঁদের কোনো সাড়া নেই।আজ কথা না বলার পণ করেছে নাকি মেয়েটা।আবির অধৈর্য হয়ে বলে,
-চাঁদ,কি হয়েছে? মন খারাপ।
চাঁদ মাথা উচুঁ করে একবার আবিরের দিকে তাকায়।এই দৃষ্টিতে যেন ছিলো একরাশ অভিমান। আবির চাঁদের আড়ালে মুচকি হেসে বলে,
-গল্প শুনবি চাঁদ?
-বলেন।
-শোন,একদেশে এক রাজকুমার ছিলো সে একটা রাজকন্যাকে অনেক ভালোবাসতো।তবে রাজকুমারকে তার ভালোবাসা পেতে হলে সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে।আর রাজকন্যাটাও ছোট।রাজকুমারের মন বুঝে না।এদিকে রাজকুমারের বাবা রাজকন্যার সাথে তাকে কখনো মেনে নিবে না।তার জন্য অন্য রাজকন্যা ঠিক করে।রাজকুমারের মাথায় এবার আকাশ ভেঙে পড়ে।অবশেষে বাবাকে কিছু বুঝিয়ে যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে বুঝালো।এবার সে গেলো তার রাজকন্যার মন ভাঙাতে।বেচারী অভিমান করে বসে আছে।গল্প শুনে কি বুঝলি?
-কি বুঝলাম?
-আরে,তুই কি বুঝলি আমি কিভাবে জানবো?
-আপনে না আবির ভাই অনেক কথা প্যাচাঁন।
-নে তোর জন্য রসমলাই এনেছি।
বলেই চাঁদের হাতে প্যাকেটটা দিলো আবির।চাঁদ এবার খানিকটা অভিমানের সুরেই বললো,
-আপনে না নিতি আপুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন।আমার জন্য আবার রসমলাই আনতে গেলেন কেনো?
-সারারাত রামায়ণ পড়ে সকালে উঠে বলে সীতায় কার বাপ।
মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলে আবির।এই মেয়েরে এতোক্ষণ কি বললো সে।আবির মনেমনে বলে,
-এই মেয়ে কবে বড় হবে আর আমার কথা বুঝবে!
-না,কিছু বলিনি।আর এতো কথা বলিস কেনো তুই।আমার ইচ্ছে হয়েছে এনেছি।খেলে খা নয়তো না খা।যত্তসব।
বলেই খানিকটা রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে গেলো আবির।চাঁদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আবিরের যাওয়ার পানে।তারপর নজর গেলো রসমলাইয়ের প্যাকেটে।এবার আর অভিমান কাজ করলো না।গপাগপ খেয়ে নিলো কয়েক পিস।
!!৩২!!
রাতে খাবার টেবিলে একত্রিত হয়েছেন সবাই।রুমা,প্রমা,দিমা,করিম,তিলোত্তমা, মতিন,মোহনা।রহিমা আর পচুঁও আছে।তবে আনোয়ারা আসেননি ঘরে খাবেন।আবির আর চাঁদও এসে বসেছে।সবাই টুকটাক কথা বলছে আর খাচ্ছে।নিতির মুখটা থমথমে।সে একমনে খেয়েই চলেছে। মতিন জিজ্ঞেসা করলেন,
-নিতি মায়ের কি মন খারাপ?
-না,আংকেল।এমনি।
-শোন সবাই যখন আছো তাহলে বলি সামনের মাসেই তো প্রমার বিয়ে। আমি চেয়েছিলাম আবিরের আকদটাও করে রাখতে।তবে ছেলে আমার সময় চেয়েছে। নিতি মা তোমার কোনো সমস্যা আসে।
-আমি কি বলবো আংকেল।আমিও এখন বিয়ে করতে চাই না।
-যাক। তাহলে তো ভালোই হলো।
চাঁদের মনে হলো আবির ভাইয়ের বিয়ে হবেনা আর তার মন থেকে ভারী একটা পাথর নেমে গেলো।অবচেতন মস্তিষ্ক হঠাৎ হিসেব মিলাতে লাগলো।আবিরের গল্পটাকে বিশ্লেষণ করতে লাগলো।রাজকন্যা,অন্য রাজকন্যা,বিয়ে,অভিমান দিয়ে কি বুঝালো আবির ভাই।রাতে খাটে শুয়ে শুয়ে ঘটনাগুলোকে পুনরায় খন্ডাকারে সাজালো চাঁদ।সবকিছু কি ইশারা করছে আবির ভাই তাকে ভালোবাসে?
আনোয়ারার ঘরে প্রবেশ করলো চাঁদ।বড্ড অস্থির লাগছে তার।কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন।আনোয়ারা আধশোয়া হয়ে শুয়ে ছিলেন।চাঁদকে কাছে ডাকলেন।চাঁদ গেলো তার কাছে।আনোয়ারার কোলে মাথা রেখে চাঁদ বললো,
-নানুমা ভালোবাসা কি?
-আমার বইনের মনে হঠাৎ এই প্রশ্ন?কি ব্যাপার?
-উফফ,নানুমা বলোনা।
-ভালোবাসার কোনো ব্যাখা নাইরে বইন।এটা এক অজানা বন্ধন।যখন দেখবি কারো জন্য মনটা আনচান করে, ছটফট করে তার কাছে যেতে ইচ্ছে করে।এটাই ভালোবাসা।
চাঁদ ভাবলো নাতো আবির ভাই না থাকলে তো তার মন আনচান করেনা।তাকে দেখতে ছটফটও লাগেনা।উল্টো চাঁদ আরো হাফ ছেড়ে বাঁচে। পাটকাঠিদের সাথে খেলতে পারে,গাছে উঠতে পারে,মাছ ধরতে যেতে পারে কেউ বকেনা।
-আচ্ছা, নানুমা। কেউ যদি সারাদিন শাসন করে আবার আদর করে তাহলে সেটা কি ভালোবাসা ধরা যায়?
-ভালোবাসলে সবচেয়ে বেশি থাকে অধিকার। যে তরে ভালোবাসবে সে তরে শাসন করবে আবার আদরও করবে।
চাঁদ আবার ভাবলো আবির নিজেই চাঁদকে শুধু বকে তবে অন্যকেউ বকলে তা মানতে পারেনা।এটা ঠিক।
এবার যেনো দোটানায় পড়ে যায় চাঁদ।কিছু না বলে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
আজ সাধারণ দিনের মতোই একটা দিন।তবে কি কারণে যেনো ডোবার ব্যাঙটা এক নাগাড়ে ডেকে চলেছে।আসলে বেচারার মনে বিয়ের স্বাদ জেগেছে। তবে ব্যাঙ প্রজাতির সুন্দরীরা তাকে পাত্তা দেয়না। বিরহে বেচারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।আর একনাগাড়ে ডাকার পণ করেছে। কিছুক্ষণ পর হয়তো আরো কিছু তার মতো হতভাগা তার সাথে যোগ দিবে।
আবির আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।মনটা য
অনেক বিষণ্ণ তার।আবার পনেরো - বিশ দিন পর আসবে সে।একেবারে প্রমার বিয়ের সময়।চাঁদকে না দেখলে তার যে কতোটা ছটফট লাগে তা কেবল সেই জানে।চাঁদ কবে বুঝতে পারবে তাকে।নিতিও আজ দুপুরে খেয়েই চলে যাবে।আবির সকালের ব্রেকফাস্ট করেছে।এবার বাড়ি ছাড়ার পালা।চাঁদকে অনেক খুঁজলো সে। না,মেয়েটা নেই।একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গেটের দিকে পা বাড়ালো আবির।
!!৩৩!!
চাঁদ দুইতলার বারান্দায় লুকিয়ে আবিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। হিসেব মতে অন্য সময়ের মতো তার খুব খুশি হওয়ার কথা।আজ থেকে আবার চাঁদ স্বাধীন। তবে এবারে আবিরের ব্যবহারটা অন্যরকম ছিল।কেমন জানি ঘোর লাগানো। আর সব বারের মতো এবার চাঁদ খুশি হতে পারছেনা।বুকটায় কেমন জানি চিনচিন ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে দৌঁড়ে গিয়ে আবিরকে ঝাপটে বলতে আপনি কোথাও যাবেননা আবির ভাই। কোথাও না।বড়চাচি সবার সামনে যেমন ছেলেকে ধরে কান্না করলো ঠিক তেমনভাবে।তবে তিনি তো মা।তবে চাঁদ কি?কেনই বা এমন করবে!সে তো সামান্য আশ্রিতা মাত্র।
আবিরের একটুও যেতে ইচ্ছে করছেনা।তবে পড়াশোনা করলেই কেবল নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে আর চাঁদকে আপন করতে পারবে।ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আবির রিকশায় চেপে বসলো।গন্তব্য চাঁদপুর লঞ্চঘাট।আবির প্রতিবারই এমন কষ্ট পায়।তবে চাঁদের ব্যাপারটা সে জানেনা।তার প্রেয়সী কি ভাবে।এইবার তো চাঁদকে যথাসম্ভব মনের ভাব বুঝাতে চেয়েছে আবির।তার চাঁদ কি বুঝেনি।আর কিভাবে বুঝালে বুঝবে মেয়েটা।পরেরবার এসে সম্পূর্ণ মনেরভাব বলবে সে চাঁদকে এটা ভেবে মনস্থির করলো আবির।যদি চাঁদ রাজি থাকে তাহলে গোপনে বিয়ে করে রাখবে।হারাম সম্পর্কের চেয়ে হালাল সম্পর্ক ভালো।পরে পিএইচডি করে এসে একেবারে নিজের ঘরে তুলবে তার চাঁদকে।
_________________
সময়টা কেটে যাচ্ছে আপন স্রোতে।ঢাকায় এসে আবির ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার লক্ষ্যে পড়াশোনায় আর টিউশনিতে।
চাঁদ পড়েছে মহা জ্বালায়।স্কুল,পড়াশোনা,গাছে উঠা কিছু ভালোলাগে না তার।মন খালি আবিরকে দেখতে চায়।আবিরের কথা শুনতে চায়।বকা খেতে চায়।তাই চাঁদ চুপিচুপি আবিরের ঘর থেকে একটা ছবি নিয়ে এসেছে আবিরের।মন খারাপ হলেই একমনে আবিরের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকবে।আর আবির সেজে কথা বলবে,
-চাঁদ,গাছে উঠতে মানা করেছিনা।বাদরের মতো না ঝুলে নিচে নাম।
-চাঁদ,তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।বেয়াদব মেয়ে।
নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসে দেয় চাঁদ।এ এক সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতি। এরকম তো আর কখনো হয়নি।এ যেন মিষ্টি তীব্র যন্ত্রণা।
.
.
.
চলবে............................