কিছুক্ষণ আগে সূর্য পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে। সকালের নরম, স্নিগ্ধ, শুভ্র আলো এসে ছড়িয়ে পরেছে গোটা সিলেট শহর জুড়ে। বিভিন্ন উঁচু নিচু পাহাড় আর বিস্তৃত সবুজ প্রকৃতির ওপর সূর্যের হালকা আলোর এই আভা যেন প্রকৃতিকে চোখ ধাধানো রূপে সাজিয়ে তুলছে। অন্ধকার রুমটাকে বাইরের আলো জানালার পর্দা ভেদ করে হালকা আলোকিত করেছে। শান্ত কক্ষটি হঠাৎই এলার্মের আওয়াজে নিজের নিরবতা হারালো। টি-টেবিলে রাখা টেবিল ঘড়িটি বেজে বেজে জানান দিচ্ছে যে সাতটা বেজে গেছে। এলার্মের এই বিরক্তিকর শব্দে ভ্রু কুচকে গেল তুর্বীর। বালিশে মুখ গুজে ডান হাত বাড়িয়ে এলার্মটা বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু একটুপর ফোনেও এলার্ম বেজে ওঠল। তুর্বী বুঝে গেল যে ও এখন আর ঘুমোতে পারবেনা। অফিস যেতে হবে। আজ প্রেজেন্টেশন আছে। তাই বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে একটা খোপা করে নিল। সামনের কাটা ছোট চুলগুলো উন্মুক্তই রয়ে গেল। উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরাতেই সকালের স্নিগ্ধ আলো সারা রুমে ছড়িয়ে গেল। তুর্বী লম্বা হাই তুলতে তুলতে ওয়াসরুমে চলে গেল। ব্রাশ করে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেড় হল। মাথায় টাওয়েল পেঁচিয়ে রেখেই কিচেনে চলে গেল। গ্যাস অন করে এক কফি বানিয়ে মগে ঢেলে মগ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। কফি খেতে খেতে সিলেটের মিষ্টি সকালটা দেখছে। চোখদুটো বহু দূরের পাহাড়গুলোর দিকে। কিন্তু গভীরভাবে ভেবে চলেছে কিছু একটা। কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে কফির সাথে সাথে ভাবনাও শেষ করল। এরপর ভেতরে গিয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে অফিসে পৌঁছালো। অফিসে ঢুকে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা নিজের ক্যাবিনে চলে গেল। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে কনফারেন্স রুমে চলে গেল। গিয়ে দেখে ওর জুনিয়ররা এসে বসে আছে। ও যেতেই ওনারা দাঁড়িয়ে গেল। তুর্বী বসার সাথেসাথে ওনারা বসে পরলেন। ওপরপাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
" সব রেডি আছে?"
" ইয়েস ম্যাম।"
বলে ছেলেটি তুর্বীর দিকে একটা পেনড্রাইভ দিল। তুর্বী পেনড্রাইভটা হাতে নিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলল,
" সব করে নিয়েছ?"
সবাই 'হ্যাঁ' বলল। তুর্বী ল্যাপটপ অন করে পেনড্রাইভটা ইনসার্ট করে সব চেক করে নিল। এরমধ্যেই ওদের কম্পানির এমডি সহ আরও দুজন ক্লাইন্ট চলে এলো। তুর্বীসহ বাকিরাও দাঁড়াল। ওনারা বসে পরার পর বাকিরাও বসল তুর্বী বাদে। ও সামনে গিয়ে প্রজেক্টরে খুব সুন্দরভাবে নেক্সট প্রজেক্টের প্লান, ডিজাইন সব এক্সপ্লেইন করল। যেটা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। এরকমভাবে প্রেজেন্ট করতে খুব কম মানুষই পারে। প্লান পছন্দ না হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। তাই ডিলটা ফাইনাল করে ক্লাইন্টরা এমডি কে কনগ্রাচুলেট করে চলে গেল। এম ডি সাহেবও তুর্বীর ওপর খুব খুশি। খুশি না হওয়ার কোন কারণ নেই! তুর্বীর কারণেই অনেক বড় বড় প্রজেক্ট আর ডিল পায় এই কম্পানি। এ দুই বছরে অনেক কিছু বদলেছে। নিজের স্বপ্ন নামক জলফড়িং কে ধরতে পেরেছে ও। এই দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফলে ও আজ একজন সিনিয়র আর্কিটেক্ট হতে পেরেছে। এবং কম্পানির বেস্ট একজন এমপ্লয়ী। সবাই মুগ্ধ ওর কাজ দেখে। তবে তুর্বীর মধ্যকার সেই চঞ্চলতাটা অনেকটা কমে গেছে। সেই লাফিয়ে, ঝাপিয়ে বেড়ানো মেয়েটা এখন ম্যাচুউরড হয়ে গেছে। প্রেজেন্টেশনের ঝামেলা মিটিয়ে তুর্বী ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে হাটা দিল ও। খিদে পেয়েছে প্রচুর। ক্যান্টিনে এককাপ চা আর একটা টোস ওর্ডার করে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে দেখছে। হঠাৎ মাথায় কেউ টোকা দিল। তুর্বী ভ্রু কুচকে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল একটা ছেলে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তুর্বী ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আবার ম্যাগাজিনে মন দিল। ছেলেটার নাম মিরাজ। তুর্বী আর ওর পোস্ট আলাদা আলাদা হলেও গোটা অফিসে একমাত্র মিরাজের সাথেই একটু ভালো সম্পর্ক তুর্বীর। বাকিদের সাথে তেমন মেশেনা। মিরাজ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
" একটু চমকালে কী হয়? কী জিনিস তুই?"
তুর্বীর কাছে মিরাজের প্রশ্নটা অতি অহেতুক মনে হল। তাই কোন উত্তর না দিয়ে ম্যাগাজিনে চোখ রেখেই বলল,
" কী খাবি ওর্ডার কর।"
" তুই কী ওর্ডার করেছিস?"
" তোর আস্ত মুন্ডুটা। তুইও খাবি? শেয়ার লাগবে?"
" আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? বলনা।"
তুর্বী এবারেও মিরাজের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আরেক কাপ চা আর টোস ওর্ডার করে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলেও এল। খেতে খেতে মিরাজ বলল,
" আচ্ছা তুর.."
মিরাজকে থামিয়ে দিয়ে তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বলল,
" তোকে কতবার বলেছি যে এসব তুর-ফুর বলে ডাকবিনা আমাকে। এসব শর্ট ফর্ম আমার পছন্দ নয়।''
" আচ্ছা সরি ম্যাডাম! ভুলে গেছিলাম, এতো রিঅ্যাক্ট করছিস কেন?"
তুর্বী কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। মিরাজ বুঝতে পারছে তুর্বী একটু রেগে গেছে তাই কথা ঘোরাতে বলল,
" আজতো ফাটিয়ে দিয়েছিস ইয়ার। কী প্রেজেন্টেশন দিলি!"
তুর্বী টোস চিবোতে চিবোতে বলল,
" কেন? সবসময় খারাপ হয়?"
" আরে না। উল্টো বুঝিস কেন? তুই ও না। তোর বর তোকে কীকরে সামলাবে সেটাই ভাবছি। এতো ধৈর্য কার হতে পারে?"
তুর্বী আনমনেই বলল,
" এরচেয়েও বেশি ধৈর্য নিয়ে কেউ আমাকে সামলেছে মিরাজ।"
মিরাজ অবাক হয়ে বলল,
" কী? কে সে?"
" কেউ না। বাদ দে।"
" আচ্ছা। কিন্তু এতো ভালো করে করিস কীকরে বলবি? সেই শুরু থেকে দেখছি। এতো পার্ফেক্টলি এক্সপ্লেইন করিস, ক্লাইন্ডদের ডিমান্ড সম্পর্কে এতো ভালো বুঝিস, ওয়ার্ড সিলেকশন নিয়ে কথা হবেনা। কিন্তু এগুলো এতো প্রপারলি শিখলি কীকরে? নিজে নিজে তো এতো পার্ফেক্টলি শেখা যায় না।"
তুর্বী চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা রেখে মুচকি একটা হাসি দিল। যেই হাসির কারণ মিরাজ জানেনা। তুর্বী মুখে সেই হাসি ধরে রেখেই উঠে ওর কেবিনে চলে গেল। মিরাজ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুর্বীর যাওয়ার দিকে। মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন? কেমন জেনো! হ্যাঁ তুর্বী আগেও যেমন আলাদা ছিল, এখনো আলাদাই আছে। কিন্তু দুটো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য অনেক। তুর্বী ওর কেবিনে গিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে ফেলল। চোখ বন্ধ রেখেই আঙ্গুল দিয়ে কলম ঘোরাতে ঘোরাতে নিজের ভাবনায় মগ্ন। ওকে এতো সুন্দরভাবে কাজ তো সৌহার্দ্যই শিখিয়েছে। ঐ কয়েকমাস নিজের হাতে খুব যত্ন করে হাতে কলমে প্রপারলি কাজ শিখিয়েছে সৌহার্দ্য ওকে। ওর আজকের এই সফলতার পেছনে সৌহার্দ্যর ভূমিকা অনেকটা জুড়ে। রিখিয়া চলে যাওয়ার পর তুর্বী মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পরেছিল। ফোন করেও পাচ্ছিল না রিখিয়াকে। তারওপর সৌহার্দ্যকেও মিস করছিল ও। হ্যাঁ মিস করছিল সৌহার্দ্যর প্রতিটা কেয়ার, ভালোবাসা, কথা। একা জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল। তাই ওই জবটা ছেড়ে সিলেট চলে এসছিল। ভেবেছিল নতুন পরিবেশে হয়তো কিছুটা ভালো লাগবে। কিন্তু লাগেনি। জীবনটাও অন্যরকম হয়ে গেছিল। বারবার নিজেকে একটাই প্রশ্ন করত সবকিছুর জন্যে কী ওই দায়ী? সৌহার্দ্যকে কী মেনে নেওয়া যেত না? কিন্তু কীকরে? ওর জন্যেই কী রিখিয়া আজ নেই ওর সাথে? কিন্তু দিনশেষে কোন উত্তরই মেলাতে পারতো না। ধীরে ধীরে বুঝে গেল যে দুনিয়া ছেলেমানুষী মেনে নেয়না। দু-একদিন দেখতে খুব কিউট লাগে। কিন্তু একপর্যায়ে সবাই ছেলেমানুষীর ওপর বিরক্ত হয়ে যায়। এখন তুর্বীর মধ্যকার সেই ছেলেমানুষীটাও আর নেই। তবে কারো জন্যে ও নিজেকে বদলায় নি। ও বদলেছে কারণ ওর ছেলেমানুষী করার কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখন ওর ফোকাস শুধু ওর ক্যারিয়ারে। কিন্তু এমন কোন রাত নেই যখন ওর সৌহার্দ্যকে মনে না পরে। বড্ড মনে পরে। ভালোবাসে কি-না জানেনা তবে এটা সত্যিই যে খুব মিস করে সৌহার্দ্যকে। আর রিখিয়ার কথাতো সবসময়ই মনে পরে। ঘুম থেকে ওঠার সময়, খাওয়ার সময়, কফি করার সময়, প্রতি মুহূর্তে রিখিয়ার স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়। ওরা দুজন কেমন আছে, কীভাবে আছে এটুকুও জানেনা ও। চোখ মেলে হাতে পরে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকাল ও। যেটা রিখিয়া ওকে দিয়েছিল। গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তুর্বী। চোখ কখন ভিজে উঠেছে নিজেই জানেনা। কিছু করার নেই এখন আর। কিছুই বেঁচে নেই আর। পরে আছে দীর্ঘশ্বাস, শুধুই দীর্ঘশ্বাস!
___________
সূর্য ঢুবতে চলেছে। রুম অন্ধকার হয়ে আসছে বলে লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রুমটা বড্ড অগোছালো। জানালার পর্দা একটা গুটিয়ে রাখা, আরেকটা ঝুলছে। ফ্লোরে অনেক জায়গা ছিটে ছিটে বিভিন্ন রঙ পরে আছে। বিশাল টেবিলে অনেক রকম রঙের টিউব রাখা। অনেক রঙের ছিটে ছিটে অংশ পরে টেবিলেও লেগেছে। কিন্তু এতোকিছুতে পাত্তা না দিয়ে একমনে পেন্টিং করে চলেছে বিহান। ও বারবার ঘড়ি দেখছে আর কারও আসার অপেক্ষা করছে। বেশ অনেকটা সময় পর কলিংবেল বেজে উঠল। বিহান যেন এটারই অপেক্ষা করছিল। তুলিটা প্লেটের ওপর রেখে রুমাল দিয়ে হাত মুছে নিয়ে দরজা খুলতে গেল ও। দরজাটা খুলে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখতে পেয়ে হাসল বিহান। হেসে বলল,
" ফরিদ, ভেতরে এসো।''
ফরিদ নামক ছেলেটি বিহানের বয়সীই হবে। শ্যামলা টাইপ, ছিপছিপে শরীরের একজন। ও উত্তরে মুচকি হেসে ভেতরে এলো। ভেতরে এসে সারারুমে চোখ বুলিয়ে নিল। প্রায় দশ বারোটা পেন্টিং আছে রুমে। বিহান হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
" কয়টা নিতে বলেছে?"
ফরিদ দেখতে দেখতে বলল,
" দুইটা লাগবে আপাতত।"
বিহান ভালোভাবে বেছে নিয়ে দুইটা পেন্টিং আলাদা করে রাখল। কিন্তু ফরিদের দৃষ্টি সাইডে রাখা ঐ বিশাল পেন্টিং এর দিকে। এতো সুন্দর পেন্টিংটা যে বিহান কেন বিক্রি করতে চায়না সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা ফরিদ। এই নিয়ে কত বড় বড় ক্লাইন্টের পছন্দ হয়েছে পেন্টিং টা কিন্তু বিহান এটা বিক্রি করেনি। কী এমন আছে এই পেন্টিং এ? ফরিদ এসব ভাবতে ভাবতেই বিহান বলল,
" কখন আসবেন ওনারা?"
" চলে আসবেন। বেশি সময় নেবেন না।"
বিহান মাথা নাড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা পর দুজন লোক এলো ফ্লাটে। ওনারা এসে বিহানের সাথে প্রথমে সৌজন্যমূলক আলাপ করলেন। এরপর বিহান ওনাদের ওর সিলেক্ট করে রাখা দুটো পেন্টিং দেখালেন। ওনাদের বেশ পছন্দ হল। কিন্তু হঠাৎ ঐ বড় পেন্টিং চোখ পরতেই দুজনের চোখ আটকে গেল। দুজনের মধ্যে কালো সুট পরা লোকটা বলল,
" ওয়াও! পেন্টিং টা জাস্ট অসাধারণ। মিস্টার বিহান আপনি ওটা কেন বিক্রি করছেন না? আমরা কিনতে চাই।"
বিহান মুচকি হেসে বলল,
" সরি। কিন্তু এটা বিক্রির জন্যে না।"
" প্লিজ ভেবে দেখুন। আমরা বেশ ভালো এমাউন্ট দিতে রাজি আছি।"
" সারা দুনিয়া আমার নামে লিখে দিলেও এই পেন্টিংটা আমি কাউকে দিতে পারব না।"
ওনারা অনেক বুঝিয়েও বিহানকে রাজি করাতে পারেন নি। ও ঐ ছবিটা বিক্রি করতে পারবেনা। অবশেষে ঐ দুটো পেন্টিং নিয়েই ওনারা চেক সাইন করলেন। ওনাদের জন্যে হালকা খাবারের ব্যস্ততা করেছে। খাওয়াদাওয়া করে ওনারা চলে যাওয়ার পর ফরিদ বিহানের পাশে বসে বলল,
" একটা কথা জিজ্ঞেস করব?"
" করে ফেল।"
" ঐ পেন্টিংটায় এমন কী আছে যে আপনি এতো টাকা অফার পেয়েও ওটা বিক্রি করেন না।"
বিহান পেন্টিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
" জানিনা কিন্তু এর কাছে সবকিছুই মূল্যহীন।"
" এই মেয়েটা কী আছে আদোও?''
" আছে।"
" ভালোবাসেন মেয়েটাকে?"
" হয়তো বেসে ফেলেছি। জানিনা ঠিক। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও মন থেকে সরাতে পারিনা।"
" এখন কোথায় উনি?"
বিহান স্হির কন্ঠে বলল,
" জানিনা।"
" আমি শুধু ভাবছি যে একটা মেয়ে মনের ভেতর কতোটা গেঁথে থাকলে এরকম নিখুঁত ছবি আঁকা যায়!"
বিহান পেন্টিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে বলল,
" আচ্ছা ফরিদ, কেউ দূরে চলে গেলেই কী মনে বেশি করে গেঁথে যায়?"
ফরিদ ছোট মুখ করে বলল,
" জানিনা। যায় বোধ হয়।"
বিহান কিছু বলল না। ফরিদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
" আজ তাহলে আসি?"
বিহান সম্মতি দিল। ফরিদ চলে যাওয়ার পর বিহান স্নান করে নিল। গায়ে হালকা রং লেগে ছিল। স্নান করে বেড় হয়ে চুল মুছতে মুছতে পেন্টিংটার কাছে আবার গেল। রিখিয়ার পেন্টিং এটা। রিখিয়াকে বিহান একদিন বলেছিল, জীবনে কোন মেয়ের ছবি আঁকলে রিখিয়ার ছবিই আঁকবে। ও তাই করেছে। একটু একটু করে যত্ন করে এঁকেছে মেয়েটার ছবি। দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত। ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছোট্ট শ্বাস ফেলল ও। আজ ওর মনে হয়, সেদিন যদি রিখিয়াকে আটকাতো তাহলে হয়তো আজ ও ভালোবাসতে পারতো ওকে। এখন হয়তো বেসেও ফেলেছে। কিন্তু কী লাভ? এতোদিনে নিশ্চয়ই রিখিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী সংসার নিয়ে ভালো আছে হয়ত। ওকেও হয়তো ভুলে গেছে। যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সৌহার্দ্য? ও কী ফিরেছে দেশে? সৌহার্দ্য খোঁজে ওকে? কেন খুঁজবে? ওতো খুব খারাপ একটা মানুষ। সত্যিই খারাপ। একটা মেয়ের মন ভেঙ্গেছে, নিজের ভাইয়ের বিশ্বাস ভেঙেছে। ক্ষমার অযোগ্য ও। কিন্তু ও তো সৌহার্দ্যকে খুব ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে নিজের ভাইকে। একটাবার দেখার জন্যে মন ছটফট করে। কিন্তু ও কারো জীবনে ফিরবেনা। ও একটা অভিশাপ। ওর সাথে থাকলে কেউ ভালো থাকবেনা, কেউ না।
.
.
.
চলবে...........................................