পদ্মপাতা - পর্ব ১৬ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প


!!৪৬!!

রাতের খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লো চাঁদ।গানের আওয়াজে তার মাথা ব্যথা করছে।

আবার শুরু হলো একটি নব্যদিনের সূচনা। বিয়ে বাড়িতে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বড় বড় পাতিলের আওয়াজ হচ্ছে। রান্নাবান্নার প্রস্তুতি চলছে বোধহয়। বরযাত্রী আসবে দুপুর বারোটায়।এখন বেলা দশটা।গরুর গোশত বসানো হয়েছে। মশলার তীক্ষ্ণ গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।মতিন মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে একটা গরু কিনেছেন। অবশ্য নিজের পোষা দুইটা ছিল।তবুও কিনেছেন। উঠানে বড় করে খাবারের প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। 

চাঁদের শরীর কিছুটা ভালো এখন। সোফায় চুপচাপ বসে আছে সে। এইসব ভিড় ভালো লাগছেনা তার। আবিরকে সকাল থেকে দেখেনি। সেই যে রাতে গেলো। আর চাঁদের সাথে দেখা করেনি। সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো আবির। পাঞ্জাবি তার ঘামে শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছে। চাঁদ একমনে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। আবির টেবিলে গিয়ে একগ্লাস পানি খেলো। বাড়ির বড়ছেলেদের এতো কাজ। হাঁপিয়ে গিয়েছে আবির। সেই সকালে কোনোমতে নাস্তা করেছে। এরপর কাজে ডুবে গিয়েছিল সে। পানি খেতে খেতে আবির চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদও আবিরের দিকে। হঠাৎ চোখ মারলো আবির। চাঁদের চোখ তো ছানাবড়া। সে ভাবতে পারছেনা তার আবির ভাই এতো বেহায়া।

বরযাত্রী আসলো একটার দিকে। বিয়ে পড়ানো শেষ। এবার কনে বিদায়ের পালা। আবিরকে প্রমা যথেষ্ট ভয় পায়। আজ আবিরকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কেঁদেছে প্রমা। চাঁদ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রমা শেষবারের জন্য চাঁদের কাছেও এসেছে বিদায় নিতে। চাঁদের অনেক কান্না পাচ্ছে। কান্নাটাকে লুকিয়ে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছে সে তার প্রমা আপুকে। মোহনা কাঁদছেন। মতিন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরুষের তো কাঁদতে নেই। তবে মতিনের কলিজাটা যে ছিঁড়ে যাচ্ছে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো প্রমা।

!!৪৭!!

কেটে গিয়েছে ছয়টা মাস। চাঁদ দশম শ্রেণিতে উঠেছে। বর্তমানে চাঁদ লঞ্চে বসে আছে। লঞ্চ ঢাকা রওনা দিবে কিছুক্ষণ পর। মূলত মোহনাকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা যাচ্ছে চাঁদ। দিমার এসএসসি এক্সাম তাই দিমা আসতে পারেনি। তিলোত্তমা দিমার এক্সামের কারণে আসেনি। ধান কাটা হয়েছে মতিন আর করিমও ব্যস্ত। এদিকে মোহনার কোমরে ব্যথা বেড়েই চলেছে। আবিরের সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা তাই সে আসতে পারবেনা। সবদিক বিবেচনা করে চাঁদকে নিয়েই ঢাকা রওনা দিলেন মোহনা। বাসাবোতে তার ভাইয়ের বাসায় দুইদিন থাকবেন। আবির বলেছে ঢাকা মেডিকেলে দেখাবে তাকে। চাঁদ বেজায় খুশি। কতোগুলো দিনপর আবির কে দেখবে সে। আবিরের পরীক্ষার কারণে গত তিন মাস ধরে বাড়ি যায়না সে। 

চাঁদ পানির দিকে তাকিয়ে হারিয়ে গেলো অতীতে। তাদের সম্পর্কটা অনেক গাঢ় হয়েছে। আবির যেনো চোখে হারায় চাঁদকে। চাঁদ মেলাতে পারেনা এটাকি আদোও তার আবির ভাই। এই তো সেদিনের কথা। 

____________________
আবির চাঁদের ঘরে এসেছে। 

-এই নে এইটা পরে তাড়াতাড়ি রেডি হ তো।
-এটা কি আবির ভাই?
-শাড়ি। শোন চোখে কাজল দিস।
-বাড়ির কেউ জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?
-বলবি আবির ভাই দিয়েছে।
-কিন্তু 
-বেশি কথা বলিস তুই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। চুল খোলা রাখবি।

চাঁদ কালো জামদানী শাড়িটা পড়লো। তার হাঁটু সমান চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চোখে একটু কাজল দিলো। মোহনা,তিলোত্তমা, দিমা, মতিন এবং করিম দাওয়াত খেতে গিয়েছেন প্রমাদের বাড়ি। বাড়িতে কেবল আনোয়ারা আর রুমা। আনোয়ারাকে আবির বলেছে সে আর চাঁদ ঘুরতে যাবে। তিনি দুরুক্তি করেননি। 

গেটে দাঁড়িয়ে আবির। হঠাৎ একটা মিষ্টি কন্ঠ কানে এলো তার। 

-আবির ভাই।

আবির পিছনে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এটাকি কোনো মানুষ না পরী! কালো কুচকুচে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠলে সেই দৃশ্যটাকে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। চোখদুটো হয় সার্থক। আবিরের মনে হলো সেই চাঁদের চেয়ে তার চাঁদ সুন্দর। অনেক অনেক সুন্দর। 

কালো জামদানীতে দুধ সাদা একখানি মুখ। হরিণীর ন্যায় চোখ আর হাঁটু সমান চুল। আবিরের হাতটা চলে গেলো বুকের বামপাশে। যেখানে প্রচুর ব্যথা করছে। সেকি তবে হার্ট অ্যাটাক করলো?

!!৪৮!!

সেদিন তারা রূপসা জমিদার বাড়ি ঘুরেছিলো। কি মধুর সে স্মৃতি। চাঁদের মনটা চায় আবার সে স্মৃতিতে ফিরে যেতে। 

চাঁদ আর মোহনা বসে আছে এম ভি সোনার তরী লঞ্চে। যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। এইতো আর কিছুক্ষণ পরেই চাঁদ দেখা পাবে তার আবির ভাইয়ের। দীর্ঘ সাড়ে তিনঘণ্টা জার্নি শেষে তারা পৌঁছালো ঢাকা সদরঘাট। 

লঞ্চ থেকে নেমে আবিরকে ফোন করলেন মোহনা। ঐতো আবিরকে দেখা যাচ্ছে ভিড়ের মাঝে সে হাত নাড়ছে। মোহনা আর চাঁদ এগিয়ে গেলো সেদিকে। 

-আসসালামু আলাইকুম মা, কেমন আছেন?কোনো সমস্যা হইছে আসতে।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম আব্বা। না, আব্বা কোনো সমস্যা হয় নাই।
-কিরে চাঁদ কেমন আছিস?
-ভালো,আবির ভাই আপনি?
-আমিও ভালো।

আবির মায়ের হাতের ব্যাগটা নিজের হাতে নিলো।

-মা, চলো আগে মামার বাসায়। গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিবে। তারপর বিকালে ডাক্তার দেখাবো। 
-আচ্ছা, আব্বা।
-কাল ঢাকা শহর ঘুরবা মা।
-আমি কি আর পায়ের ব্যথায় ঘুরতে পারবো আব্বা। তুমি বরং চাঁদকে নিয়ে ঘুরো। মেয়েটা এই প্রথম ঢাকা আসলো।
-ঠিক আছে, মা।

আবির খুব খুশি হয়েছে। তার প্রেয়সীকে কতোদিন ধরে দেখেনা। বুকটা অশান্ত হয়ে ছিলো। এখন বইছে ঠান্ডা হাওয়া।

চাঁদ বেশ বুঝতে পেরেছে তার আবির ভাইয়ের চালাকি। সে আবিরের দিকে তাকালো। তারা সিএনজির জন্য দাঁড়িয়ে। আর আবির পিছনে ঘুরে ঠোঁটটা গোল করে চুমো দেখালো। চাঁদ এবার পুরোপুরি নিশ্চিত তার আবির ভাই বড্ড বেহায়া।
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন