রাত সাড়ে এগারো টা।
জাহ্নবী বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়ছে। বারবার চোখ বুজে আসছে ঘুমে। ভায়োলেট দরজায় ঠকঠক শব্দ করে বলল, 'আসবো আপু?'
জাহ্নবী দরজা খুলে দেখল ভায়োলেট বালিশ নিয়ে এসেছে। আজকেও ভায়োলেট ওর সঙ্গে ঘুমাবে। জাহ্নবী বলল, 'এসেছিস ভালো হয়েছে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল।'
ভায়োলেট ঝলমলে গলায় বলল, 'তাহলে এক কাজ করি চলো। গল্প করি। ঘুম পালিয়ে গেলে আবার পড়তে বসবে।'
জাহ্নবী হাসল। তখন চোখ গেল ভায়োলেটের হাতে থাকা মোবাইলটার দিকে। অর্জন নামের ছেলেটার সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারটা ভাবতেই ওর গা ঝমঝম করে উঠল।
ভায়োলেট শুয়ে পড়ল। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখে বলতে লাগল, 'মেজোপু কাল বেড়াতে যাবে।'
'বেড়াতে যাবে? কোথায়?'
'জানিনা। চট্টগ্রাম বা ওদিকে কোথাও। আমি ভালো করে শুনিনি।'
' একা যাচ্ছে?'
'না। ওরা বন্ধুবান্ধব মিলে।'
জাহ্নবী ভায়োলেটের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর দুজনেই চোখে চোখে কিছু একটা বলতে পেরে হেসে উঠল একইসঙ্গে। সামারের প্রেমিকও নিশ্চয়ই সঙ্গে যাবে। সামারের সৌভাগ্যবান প্রেমিক পুরুষটি কে, সেটা আজও জানা হয়নি জাহ্নবীর।
জাহ্নবী ভায়োলেটকে স্পর্শ করে ফিসফিস স্বরে বলল, 'আচ্ছা, ও কার সঙ্গে প্রেম করে রে?'
'একটা ছেলের সঙ্গে। এখনো প্রেম হয় নি সেভাবে।'
'সেভাবে মানে? প্রেমের আবার সেভাবে এভাবে আছে নাকি?'
'আছে না আবার? সবেমাত্র ফোনে কথা বলছে, মাঝেমাঝে দেখাসাক্ষাৎ হয়। এরপর প্রেম হতেও পারে, নাও হতে পারে।'
জাহ্নবী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিলো, 'প্রেম হলে ওরা বিয়ে করে ফেলবে তাই না?'
ভায়োলেট নিঃশব্দে জাহ্নবীর চোখের দিকে তাকালো। অনেক্ষণ কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। জাহ্নবী বই খুলে পড়তে আরম্ভ করলো।
রাত বেড়ে গেল অনেক। জাহ্নবী বেশ কয়েকবার ভায়োলেটকে ডেকে কোনো সাড়া পেলো না। খানিক্ষণ পর ভায়োলেটের মোবাইলটা হাতে তুলে নিলো জাহ্নবী। ডায়াল লিস্টে ঢুকে দেখল অর্জন আরও ফোন করেছিল কী না। অর্জনের নাম্বার থেকে কোনো কল কিংবা মেসেজ আসে নি। স্বস্তিবোধ করল জাহ্নবী। ইচ্ছে করছিল একবার কল আসুক, সে কল কেটে দেবে। কিংবা রিসিভ করে খুব করে বকা দিয়ে দেবে। পরক্ষণেই ভায়োলেটের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবল, 'ও অনেক নিষ্পাপ। আমার ওর সঙ্গে সৎ থাকা উচিৎ।
কথাটা ভাবামাত্রই ভায়োলেটের মোবাইল রেখে দিলো জাহ্নবী। এক ধরণের শান্তি অনুভব করল মনে।
সামার আজ ঘুরতে যাচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে। সকাল সকাল বাবার কাছে টাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে কেনাকাটা করতে যাওয়ার জন্য। জাহ্নবী ওর রুমে চা দিতে এলে সামার জিজ্ঞেস করল, 'আপু, যাবি?'
জাহ্নবীর ইচ্ছে করছিল সামারের সঙ্গে মার্কেটে যেতে। গত দু বছরে ওর মার্কেটে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা হয়নি। দুই ঈদে জামাকাপড় কেনার সময় সামার ও ভায়োলেট ওর জামা কিনে এনেছে। নিজের জন্য কখনো শপিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছে বা সুযোগ কোনোটাই হয়নি জাহ্নবীর। কয়েকদিন ধরে দুই বোনের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছে সে। বিশেষ করে ভায়োলেটের সঙ্গে দারুণ গল্প হয়, ভায়োলেট ওর রুমেই শুতে আসে রোজ। জীবনটাকে আজকাল অতটাও খারাপ লাগছে না। সামারের সঙ্গে শপিংয়ে যাওয়ার সুযোগটাকে একদমই মিস করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে জাহ্নবীর হাত ফাঁকা। ছোটবোন নিজের টাকায় কেনাকাটা করবে আর সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, বিষয়টা লজ্জাজনক দেখাবে। নিজে থেকে 'আমি পেমেন্ট করে দিচ্ছি' বলতে না পারলেও অন্তত 'এটা আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য' বলার মাঝেও একটা শান্তি শান্তি ব্যাপার আছে।
জাহ্নবী বলল, ' না রে যাবো না। তুই ভায়োলেটকে নিয়ে যা।'
' ও কোথায় যেন আটকে গেছে। আর ও বড্ড তারাহুরো করে। ওর সঙ্গে শপিংয়ে গিয়ে মজা নেই। শপিং মানেই তো সব মার্কেট ঘুরবো, রং বেরঙেত জিনিস দেখবো, দামাদামি করবো। সময় লাগে না বলো?'
জাহ্নবী মুচকি হেসে বলল, 'তাহলে একাই যা।'
'আপু, কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও। আজকে আমরা একসঙ্গে শপিংয়ে যাবো।'
জাহ্নবী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। রীতিমতো ধমকের সুরে সামার ওকে প্রস্তুত হতে বললে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো জাহ্নবী। বের হওয়ার পূর্বে জাহ্নবী বাবার কাছে বিদায় নেয়ার কালে তিনি জাহ্নবীকে কাছে নিয়ে বললেন, 'মা, এই টাকাটা রাখ।'
জাহ্নবী অনেক্ষণ অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। বুকের ভেতর জমে থাকা শূন্যতা ভরাট হতে শুরু করেছে। মাথার ওপর বাবা থাকা মানেই যেন একটা ছাদ। রোদ হোক, বৃষ্টি হোক, বাবা আছে মানে আমি ভিজবো না। জাহ্নবী বাবাকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছেটাকে সামলে নিয়ে প্রফুল্ল মুখে শুধু বলল, 'ধন্যবাদ বাবা।'
রিকশায় উঠে জাহ্নবীর দারুণ ফুরফুরে লাগতে শুরু করেছে। বাতাসে চুল উড়ছে, সামারের গা থেকে ভেসে আসা সুগন্ধে ওর সবকিছুই অন্যরকম লাগছে। সামার এরই ফাঁকে দুজন বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে ট্যুরের ব্যাপারে আলাপ করল। জাহ্নবী জিজ্ঞেস করলো, ' কোথায় যাচ্ছিস ঘুরতে?'
'বান্দরবান। আজকে রাতে বাস। অথচ এখনো ওরা ব্যাগ গোছায় নাই। পরে এটা ওটা ফেলে রেখে যাবে আর আমাকেই গুতাবে, সামার তোর এইটা দে না, সামার তোর ওইটা দে না।'
জাহ্নবী শব্দ করে হেসে বলল, 'তোরা অনেক মজা করিস তাই না?'
'তা তো করি ই। আমার ফ্রেন্ডস রা সবাই অনেক জোস। আজকে দুইজন আসবে, পরিচয় হলে দেখো।'
জাহ্নবী ইতস্তত বোধ করল। সে কারও সঙ্গে অত সহজে মিশে যেতে পারে না। অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে সংকোচ বোধ করে। চুপচাপ বসে থাকতে খুবই লজ্জা লাগে ওর। সামার ও ভায়োলেটের বান্ধবীরা প্রায়ই বাসায় আসে। জাহ্নবী প্রয়োজন ছাড়া তাদের সামনে যেতেও দ্বিধাবোধ করে। আজ ওদের সঙ্গে কীভাবে আলাপ করবে সেটা ভেবেই মনেমনে প্রস্তুতি নিতে লাগল।
'হ্যালো আপু, কেমন আছেন আপনি?'
'আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?'
'ভাল।'
'আজকে তো ঘুরতে যাবে। কেমন লাগছে তোমাদের?'
'অনেক আনন্দ হচ্ছে আপি। আমরা তো খুবই এক্সাইটেড। অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখব, বন্ধুরা মিলে হৈ চৈ করবো। খুব মজা হবে।'
' বাহ। বেশ ভাল। সামারের দিকে খেয়াল রেখো কিন্তু। ও একটু উদাসীন নিজের ব্যাপারে।'
'আমাদের খেয়াল রাখতে হবে না আপু। ওর খেয়াল রাখার জন্য লোক আছে।'
জাহ্নবী কথাগুলো ভেবেই ফিক করে হেসে উঠল। ওদের সঙ্গে এভাবেই আলাপ করবে সে। একটু দ্বিধা কিংবা সংকোচ করবে না। আজ সে অনেক আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবে। হাসিমুখে কথা বলার চেষ্টা করবে।
সামার জানতে চাইল, 'কি দেখে হাসছো?'
'কিছু না।'
'কার কথা মনে হয়েছে?'
জাহ্নবী মনেমনে বলল, 'তোর প্রেমিকের কথা।' কিন্তু এক কথা কখনোই সে মুখে বলতে পারবে না। সামার ও ভায়োলেট যতটা ফ্রি, তার পক্ষে এমন হওয়া সম্ভব হবেনা কখনো। একটা নিশ্বাস ফেলল জাহ্নবী।
নিউমার্কেট ও চাঁদনী চক ঘুরেঘুরে জিন্স, টপস কিনল সামার। প্রচণ্ড ভীড় ঠেলে দিব্যি হেঁটে হেঁটে কেনাকাটা করছে সে। এদিকে জাহ্নবীর অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। ভীড়ের ভেতর মানুষ তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অথচ সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার হাসিতে ফেটে পড়ছে সামার।
জাহ্নবী বলল, 'এই মিছিলের ভেতর মানুষ কেনাকাটা করে কীভাবে?'
'এভাবেই করতে হয় আপু।'
'আমি অনেক আগে একবার এসেছিলাম। তখন এত ভীড় ছিল না।'
'নিউমার্কেটে ভীড় ছিল না? বিশ্বাস হল না কথাটা।'
সামার জাহ্নবীর হাত ধরে ভীড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলো। জাহ্নবীর ধারণা ছিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় শপিংমল গুলোতে যাবে সামার। যেখানে কাঁচের ভেতর ম্যানিকুইনগুলো চমৎকার জামাকাপড় পরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু হাজার হাজার লোকের ভীড় ঠেলে কেনাকাটা করতে হবে এমনটা ভাবেনি সে।
সামার আবারও রিকশা নিলো। জাহ্নবীর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল 'আমরা কী বাসায় যাচ্ছি? তোর বান্ধবীরা কি আসবে না?'
কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারল না। রিকশা থেকে নেমে ওরা দোতলায় উঠতে লাগল। জাহ্নবী অবাক হয়ে দেখল, সে এতক্ষণ যেমন শপিংমলের কথা ভাবছিল, এবার তেমনই একটা মলে এসেছে ওরা। দারুণ দারুণ জামাকাপড় চারপাশে।
সামার জাহ্নবীকে নিয়ে হাঁটতে লাগল। জাহ্নবী চোখ ঘুরিয়ে জামাকাপড় দেখছে। সামার একটা ছেলেকে দেখে রীতিমতো ধমকের সুরে বলল, 'আমাকে এতক্ষণ অপেক্ষা করাইছস ক্যান?'
'সরি দোস্ত। রাস্তায় জ্যাম ছিল।'
'রাস্তায় জ্যাম ছিল নাকি তোর সুন্দরী স্নিগ্ধা ছিল?'
'স্নিগ্ধা এত সকালে ঘুম থেকে উঠে না।'
'তুইও কি ওর সঙ্গে ঘুমাচ্ছিলি নাকি?'
'ঘুমাতে পারলে তো ভালোই হইতো। ঘুমাতে দেয় আর কই?'
ছেলেটা দাঁত বের করে হাসছে। সামার একটা মাইর দিল ওর বন্ধুর কাঁধে। জাহ্নবী লজ্জা পাচ্ছে। বড়বোনের সামনে এভাবে দুষ্টুমি করছে ওরা। এত ফ্রি কীভাবে হয় মানুষ!
ছেলেটা জাহ্নবীকে বলল, 'হ্যালো। আমি সোহান।'
জাহ্নবী বলল, 'আমি জাহ্নবী।'
'মাই গড! আপনি বড় আপু? সামার তুই আগে বলবি না উনি তোর বড় আপু? আপু আসসালামু আলাইকুম। বেয়াদবি মাফ করবেন।'
আবারও হাসল ছেলেটা। জাহ্নবী মুচকি হেসে বলল, 'ইটস ওকে।'
সোহান বলল, 'আমি ভেবেছিলাম আপনি ওর জুনিয়র মানে ছোটবোন। নিজের বোন না, ওর আবার বোনের অভাব নাই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন বোন নিয়ে আসে।'
জাহ্নবী মনেমনে খুশি হল। হঠাৎ মনে হল, 'আমাকে দেখেই তো মানুষ ভাবে আমার বয়স চল্লিশ। আমাকে দেখতে কী আজকে ছোটবোনের মতো লাগছে? নাকি ছেলেটা কথার কথা বলল?'
জাহ্নবী উৎসুক চোখে ভাবতে লাগল কথাগুলো। সোহান বলল, 'কি কিনছোস?'
'তেমন কিছু না। তোর শার্ট দেখছোস? রুবাইয়া কতদূর? ওরে ফোন দে তো '
'রুবাইয়া বলসে সামারের টাকায় যা যা কেনার কিইনা ল। আমি সামারের কাছে টাকা পাই '
'টাকা পায় মানে? কিসের টাকা?'
'আরে আমি কি জানি? ও বলসে।'
'ঢপ মারাস না? আমি কোনোদিনও ওর কাছে টাকা নেই নাই। তুই বানাই বানাই বলছস।'
সামার আবারও মাইর দিল সোহানকে। জাহ্নবী দাঁড়িয়ে রদাঁড়িয়ে ওদের খুনসুটি দেখতে লাগল। সোহানের চোখে চশমা, গালে ছোট ছোট দাড়ি। হলুদ কালো ডোরাকাটা টি শার্টে ভীষণ ভদ্র দেখাচ্ছে সোহানকে। ওরা দুজন কথা বলতে বলতেই জামাকাপড় দেখতে লাগল। জাহ্নবী দাঁড়িয়ে রইলো একদিকে। দোতলার কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির পূর্বে আবহাওয়া যেমন মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারে ছেয়ে যায়। হঠাৎ করেই সবকিছু ভালো লাগছে জাহ্নবীর, ভীষণ ভালো লাগছে।
সামার এসে বলল, 'আপু এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আসো। আমাদের হয়ে গেছে।'
মার্কেটের অন্য এক দিকে একটা কফিশপে এসে বসল ওরা। রুবাইয়া নামের মেয়েটা এসে পড়ল। জাহ্নবীকে আগেই দেখেছে রুবাইয়া। এসেই আগে জাহ্নবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, 'হাই আপু। কেমন আছো?'
জাহ্নবী মনেমনে খুব অবাক হল। ও যা ভেবে রেখেছিল, সেটাকে এখন একেবারেই সেকেলে মনে হচ্ছে ওর। সামার ও তার বন্ধুরা ওর ভাবনার চাইতেও অনেক গুণ এগিয়ে। রুবাইয়ার গা থেকে আসা সুবাসে জাহ্নবীর মনে হল, রুবাইয়া যেন ওরই বন্ধু।
কফি খেতে খেতে ওরা বিভিন্ন প্লান নিয়ে কথা বলছিল। জাহ্নবী বুঝতে পারল না সেসব। তবে মুগ্ধ হয়ে শুনছিল। রুবাইয়া গাড়ির টিকেট বের করে টেবিলে রাখল, নোটপ্যাডে ট্যুরের যাবতীয় হিসাব নিকাশ দেখাতে লাগল ওদেরকে। সোহান মাঝেমাঝে হাস্যকর কথা বলে সবাইকে হাসাচ্ছিল। বাস ছাড়বে রাত এগারোটায়। সবার সিট সামনে পড়েছে, কেবল একটা সিট পিছনের দিকে। সেখানে কাকে বসতে হবে এটা নিয়েও তিনজনের এক পশলা তর্ক হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে তারা আগে নাস্তা করবে তারপর অন্য একটা গাড়ি তাদের নিয়ে যাবে। পথে বিভিন্ন জায়গায় সাইটসিয়িং করানো হবে। সবকিছু শুনতে শুনতে জাহ্নবীর মনে হচ্ছিল সে একটা স্বপ্নের জগতে আছে। সামার এজন্যই হয়তো বলেছিল, সে যেমন লাইফ চায় ; এখন সেই লাইফটাই এনজয় করছে। এরচেয়ে বেশী কিছু চাইনা তার।
এক পর্যায়ে রুবাইয়া জাহ্নবীকে বলল, 'আপু, সরি আমরা আসলে ট্যুর নিয়ে আলাপ করছিলাম। আপনাকে বিরক্ত হতে হচ্ছে তাইনা?'
'আরে না না, আমি ভালোই মজা পাচ্ছি। সমস্যা নেই।'
'আপু, আপনিও চলুন না আমাদের সঙ্গে। অনেক মজা হবে।'
বুকটা ধক করে উঠলো জাহ্নবীর। সত্যিই কী তা কখনো সম্ভব! সে যাবে ওদের সঙ্গে? এটা তো স্বপ্ন স্বপ্ন ব্যাপার। কিন্তু আগামীকাল ওর ইন্টারভিউ আছে। যেটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এই মুহুর্তে।
সোহান ও সামার জাহ্নবীকে যেতে অনুরোধ করল। জাহ্নবী বলল, 'অন্য একদিন যাবো। এবার তোমরা ঘুরে আসো।'
তিন বন্ধু আবারও মেতে উঠল আড্ডায়। কফির কড়া সুঘ্রাণে জাহ্নবী ওদের খুনসুটি শুনতে শুনতে বাইরে তাকিয়ে রইল। তার যদি চাকরিটা হয়ে যায়, পরের বার সে-ও যাবে সামারের সঙ্গে। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ঘুরতে যাবে সে। ভাবতেই প্রশান্তিতে বুক ভরে গেল। জীবনটা হঠাৎ ই দারুণ ভালো লাগছে জাহ্নবীর।
হঠাৎ জাহ্নবী বলল, 'আমি একটু আসছি।'
বন্ধুদের মাঝে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। ওদের মাঝখান থেকে উঠে এসে রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করে দিলো জাহ্নবী। বড় বোন হিসেবে এটা করাটা আনন্দের ব্যাপার। জাহ্নবী আরও কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে বলল ওদের টেবিলে দিয়ে আসতে। খাবার দেখে অবাক হয়ে গেল ওরা। জাহ্নবী মনেমনে হাসলো। জাহ্নবীর মনে হচ্ছে, ধীরেধীরে ঘুম ভাংছে ওর। এত বছরের জটিল ঘুম শেষে মুক্তির স্বাদ পেতে শুরু করেছে জাহ্নবী।
.
.
.
চলবে........................................................................