!!৪৯!!
বিকালে মোহনাকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে গেলো আবির। এক্সরে করে দেখা গেলো তেমন গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। বার্ধক্যজনিত কারণেই কোমড়ে আর পায়ে ব্যথা হয়। ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। নিয়মিত খেলেই ব্যথা কমে যাবে মোহনার। আবির মোহনাকে মামার বাড়ি পৌঁছে দিয়েই হলে ফিরে গেলো। মোহনার চাচাতো ভাই রবিউল। বাসাবোতে পরিবার নিয়ে থাকেন প্রায় পনেরো বছর ধরে। উনার দুই মেয়ে রুমকি ঝুমকি। চাঁদের সাথে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে তাদের। অবশ্য তারা চাঁদের চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড়। তবে চাঁদের চেহারায় একটা মায়া আছে। খুব সহজেই অপরিচিতরা তাকে পছন্দ করে ফেলে।
পরেরদিন নয়টার দিকে আবির এসেছে। চাঁদকে নিয়ে এখন বেরুবে সে। রুমকি ঝুমকির পরীক্ষা চলছে। নয়তো তারাও যেতো। তারা তো বারবার বলছে,
-আবির ভাই এতোবছর ঢাকা আছো আমাদের নিয়ে একদিনও ঘুরতে গেলে না।আর আজ সুযোগ ছিলো আমরা যেতে পারলাম না।
-তোদের নিয়ে অন্যদিন বেরুবো।
-এ্যাহ, তুমি বললে আর বিশ্বাস করলাম। দেখা যাবে একবছর আর বাসাবো মুখীই হবে না তুমি।
-তা এমনিতেও হবে। স্কলারশিপ পেলে সোজা লন্ডন।
চাঁদ আজ একটা হালকা খয়রী আর বাদামীর মিশ্রণে থ্রি-পিস পরেছে। মাথায় উড়নাটা ঘুমটা করে দেওয়া। চুলগুলো বেণী করে রাখা। এতোদিন হাঁটু সমান ছিলো আর এখন পায়ের গোড়ালি ছুঁই ছুঁই।
আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার চাঁদের পানে।মেয়েটা যা পরে তাতেই ভালোলাগে। সেও আজ খয়রী পাঞ্জাবি পরেছে। ব্যাপারটা নিতান্তই কাকতালীয়।
-আব্বা, সন্ধ্যার আগে ফিরা আইসো।
-ঠিক আছে,মা।
বাড়ির নিচে নেমে রাস্তায় এসে একটা রিকশা নিলো আবির।
-আপনি বহুত চালাক আছেন আবির ভাই।
আবির ভ্রু কুঁচকে বললো,
-কেন?
-আহারে সহজ-সরল মানুষটা। রুমকি ঝুমকি আপু না আসায় আপনি অনেক খুশি তাইনা।
-খুউউব।
চাঁদ আর কথা বাড়ালোনা। তার আবির ভাই ইদানীং বেশরম হয়ে গিয়েছেন।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি জানিস?
-কোথায়?
-হাতিরঝিল।
-জায়গাটা কি অনেক সুন্দর?
-ঢাকার মাঝে সুন্দরই বলা চলে।
হাতিরঝিল জায়গাটা মোটামুটি পছন্দ হলো চাঁদের। তবে তার কাছে তার পদ্মাই প্রিয়।
-আবির ভাই জায়গাটা সুন্দর। নিচে পানি উপরে ব্রিজ। ভালোই।
-এমনভাবে বলেছিস যেনো বেশি একটা ভালোলাগেনি।
-সত্যি বলতে পদ্মা বেশি সুন্দর। আর কোনো নদীই আমার ভালোলাগেনা।
-হায়রে, পদ্মার নাকানিচুবানি খেয়েও তোর শিক্ষা হয়নি। শোন চাঁদ আসলে একেক জায়গার একেক সৌন্দর্য। হাতিরঝিলের সৌন্দর্যই এক আবার পদ্মার পাড়েরই আরেক। তুই কি জানিস এই যে আমরা এখন ব্রিজের পারে দাঁড়িয়ে আছি ঢাকার মানুষের কাছে জায়গাটা কতো প্রিয়। যান্ত্রিক জীবন থেকে সরে এসে একটু শান্তি পাওয়া যায়। আমরা তো সকালে এলাম বিকালে আসলে দেখতে পারতি কতো মানুষ।
মানুষ ঘাড় ফিরিয়ে চাঁদের চুলের দিকে তাকাচ্ছে। ঢাকা শহরে এতো লম্বা চুলের মেয়ে খুবই কম দেখেছে তারা। আবির বিষয়টায় বিরক্ত।
-খোঁপা করে আসতে পারলিনা।
-কেন আবির ভাই?
-না,এমনি। বাদ দে। আইসক্রিম খাবি চল।
ব্রিজের কিছুটা দূরে এসে আইসক্রিম কিনে চাঁদের হাতে দিলো আবির। দুইজনে হাঁটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। দিনটা মেঘাচ্ছন্ন। রোদ নেই আকাশে। হালকা বাতাস বইছে।
-তোর বয়স কত হলোরে চাঁদ?
-সতেরো।
-আমার জানিস কতো?
-কতো?
- পঁচিশ। তোর থেকে আট বছরের বড় আমি।
- আপনি কিছুদিন পর চলে যাবেন তাইনা আবির ভাই?
ছলছল চোখে প্রশ্ন করলো চাঁদ।
-এই বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেনো?আমি কি সারাজীবনের জন্য যাচ্ছি। আর স্কলারশিপ মাত্র এপ্লাই করলাম।
-আপনি চলে গেলে আমার কি হবে আবির ভাই। বড়মামা যদি আমাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেন। আমি মরে যাবো আবির ভাই একদম মরে যাবো।
আবিরের হাত থেকে আইসক্রিম পরে গেলো। তার বুকটা হঠাৎ করেই ছ্যাতঁ করে উঠেছে।
-আবার মরার কথা বললে থাপ্পড় একটাও মাটিতে পড়বে না।
আবির কতোক্ষণ ভাবলো। আসলে সে পরীক্ষার চাপে এই বিষয়টি গুরুত্বই দেয়নি।
!!৫০!!
-আমায় বিয়ে করবি চাঁদ?
আবিরের চোখে আকুতি। চাঁদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
-আবির ভাই।
-দেখ আমি কোনো মজা করছিনা।আমায় বিয়ে করবি কিনা বল?যদি তুই রাজি থাকিস তাহলে এখনই বিয়ে করবো।
-কিন্তু বড় মামা জানলে?
-আমি যদি স্কলারশিপ পাই তাহলে বাবা বলেছিলেন আমি যা চাই তা দিবেন। বিদেশ থেকে ফিরে আমি তোকে চাইবো।
-বড়মামা যদি আমাকে এর আগেই বিয়ে দিয়ে দেন।
-সেজন্যই তো বিয়ে করে রেখে যাবো। যেনো আমার চাঁদকে কেউ না নিতে পারে।
-আমি আপনাকে বিশ্বাস করি আবির ভাই। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।
-তুই রাজি?
-আপনি যা ভালো মনে করেন।
শাহবাগের হাতিরপুল বাজারে কাজী অফিসে বসে আছে চাঁদ,আবির আর আবিরের দুই বন্ধু তপন এবং হবিব। কিছুক্ষণ বাদেই বিয়ে পড়ানো হবে। যদিও চাঁদের জন্ম নিবেদন পত্র কিংবা আইডি কার্ড নেই। তবে কাজীর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেওয়াতে তিনি রাজি হয়ে গিয়েছেন। চাঁদ তরতর করে ঘামছে। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা কি ঠিক? সে কি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? সে তো আবির ভাইকে ভালোবাসে?
চাঁদের মাথায় ঘুরছে এসব।
-চাঁদ।
-জ্বি, আবির ভাই।
-দেখ বুঝে সিদ্ধান্ত নে। তুই না চাইলে চল বাড়ি দিয়ে আসি তোকে।
-না,আবির ভাই।
আবির আর কথা বাড়ালো না। কাজী মোফাজ্জল চাঁদকে জিজ্ঞেস করলেন,
-আপনি রাজি থাকলে বলুন কবুল।
চাঁদ মাথা নিচু করে রইলো। আবির তার ডান হাতটা আঁকড়ে ধরেছে।
-কি হলো বলুন। কনে কি রাজি না?
অবশেষে চোখের জল ফেলে আস্তে আস্তে কবুল বলে দিলো চাঁদ। আবিরও বলে দিলো কবুল। একটা সাইন আর তিনটা বুলি আজ তাদের বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছে।
হাবিব, তপন জড়িয়ে ধরলো আবিরকে। কাজী অফিস থেকে তারা বের হলো একটার দিকে। এইতো কিছুক্ষণ আগেও আবির আর চাঁদের সম্পর্ক ছিলো মামাতো আর খালাতো ভাইবোন। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন তারা স্বামী স্ত্রী।
!!৫১!!
দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে খাবার খেলো তারা। অতঃপর ফিরে এলো বাসাবো মামার বাসায়। এরমাঝে দুজনের মাঝে আর কোনো কথা হয়নি। চাঁদ কি লজ্জায় কথা বলছেনা নাকি ভয়ে। আবির আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করেনি। মেয়েটাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে চাঁদের হাতে আটহাজার টাকা দিলো আবির।
-এটা কি আবির ভাই?
-দেখ চাঁদ তোর আবির এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ায় নি। যতটুকু সাধ্যছিলো ততটুকু দেনমোহর নিজের স্ত্রীকে দিলাম।
-আমার টাকা চাইনা আবির ভাই।
-প্রথমে তো ভাই ডাকলে একটা থাপ্পড় খাবি। দ্বিতীয়ত এটা তোর হক। তুই চাইলেও কিংবা না চাইলেও তোকে নিতে হবে। আমি যেদিন অনেক টাকা ইনকাম করবো সেদিন তোকে আমার রাণী করে ঘরে তুলবো।
-তাহলে কি ডাকবো আমি আপনাকে?
-আবির বলে ডাকবি।
-তা হয় নাকি আপনি আমার কত বড়।
-তাহলে আর কি ওগো শুনছো নয়তো বাবুর আব্বু বলেও ডাকতে পারিস আমি মাইন্ড করবোনা।
-ইস্,যা।
-এ্যাহ্, বিয়ে হইছে বাবু হবেনা আপনার।
-আপনি আসলেই বেশরম।
-শুধু তোমারই জন্য।
.
.
.
চলবে..........................