আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

পদ্মপাতা - পর্ব ২৪ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প


!!৭০!!

তিনদিন চলে গিয়েছে। চাঁদ এখনো রত্নাদের বাড়িতে আছে। ঐদিনের পর উনি আর কোনো প্রশ্ন করেননি তাকে। শুধু বলেছিলেন,
-তোর যতদিন ইচ্ছে তুই ততোদিন আমার কাছে থাকবি মা।

চাঁদ জানালার পাশে বসে। জানালা দিয়ে দূরে ধানক্ষেত দেখা যায়। হাওয়ায় ধানক্ষেতটাকে দেখতে সবুজ সমুদ্রের মতো লাগছে। তিনদিনে প্রায় হাজার খানেক বার আবিরকে কল করেছে চাঁদ। তবে বন্ধ পেয়েছে। 

_______________

আবির আজ দেশে ফিরেছে। তিনদিনে বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তাকে। বাড়ি ফিরে নিরব হয়ে সোফায় বসে রইলো আবির। মোহনা আর তিলোত্তমা পাশে বসে বিলাপ করছেন। চাঁদ এমন করেছে আবির বিশ্বাস করতে পারছেনা। তবে মায়ের কথা, বাড়ির সবার কথা তো আর মিছে হতে পারেনা। তার উপর গ্রামবাসীর কথা। অপরদিকে দাদির মৃত্যুতে দ্বিধায় পড়ে গেলো আবির। এতোবছরের ভালোবাসায় যেনো ফাটল ধরতে শুরু করেছে। একটা অবিশ্বাসের কাঁটা যেন মনে গেঁথে গেলো তার।

মতিন আবিরকে নিজের ঘরে ডাকলেন। মতিন রকিং চেয়ারে বসে আছেন। চোখ দুটো বন্ধ। বাইরে আলো থাকলেও ঘরটায় সব জানালা বন্ধ বিধায় ঘরটা দিনের বেলায়ও অন্ধকারচ্ছন্ন। 
-বাবা, আসবো।
-হুম।
-কিছু বলবে।
-সবই তো শুনলে। চাঁদকে তো তুমিই জিদ করে রেখেছিলে। এখন তোমার কিছু বলার আছে।

আবির বুঝতে পারছে তার বাবা চাঁদের উপর ক্ষিপ্ত। আবিরের নিজেরও রাগ লাগছে। চাঁদ কি করে এমনটা করতে পারলো। এতোগুলা মানুষের কথা তো আর ভুল নয়।

-চাঁদের জন্য চৌধুরী বাড়ির দরজা বন্ধ। আবির তুমি ভাই হিসেবেও ঐ মেয়েকে এবাড়িতে জায়গা দিবেনা। আমি মারা গেলেও না। এটা তোমার বাবা হিসেবে একটা অনুরোধ রইলো তোমার কাছে।
-এভাবে বলবেন না বাবা। আপনি যা বলবেন তাই হবে।
-যাও এখন। একা থাকতে চাই।

আবির বেরিয়ে এসে নিজের ঘরে এলো। মোহনা ছেলের ঘরে প্রবেশ করলেন। মোহনার ইচ্ছে ছিলো আবিরকে বিয়ে দিয়ে দিবেন। যাতে ঐ আপদ মেয়ে আসলেও কিছু করতে না পারে। পাত্রী তো রেডি আছে নিতি। কিন্তু বাড়ির এমন পরিস্থিতিতে তিনি তা কিভাবে বলেন।

-আব্বা।
-জ্বি, মা। 
-সব তো শুনলা। চাঁদ যে এমন একটা জগন্য কাজ করবে আমি ভাবিও নাই। তুমি আমাকে একটা কথা দিবা আব্বা?
-কি কথা মা?
-চাঁদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবা না। এই আমার মাথা ছুঁয়ে কসম করো।

আবির যেনো থমকে গেলো। বাড়ির পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। তার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাসে ধরেছে বিশাল ফাটল। অভিমান আর রাগের পালা ভারী হলো তার। তাহলে চাঁদ কেনো তার সাথে ভালোবাসার নাটক করলো। আবিরের মনে পড়লো মাস শেষে টাকা পাঠাতো সে চাঁদের কাছে। তাহলে কি টাকার জন্য? আবির স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। যে নিজ থেকে পালিয়ে গিয়েছে তাকে ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। তবে এই বিয়ে বিয়ে খেলার মানে কি। দিমা আবিরকে একটা চিঠি দিয়েছিল হলরুমে থাকতে। তাতে স্পষ্ট লেখা,

"আমি আমার প্রমিকের সাথে পালিয়ে যাচ্ছি। মামা তো ভালোবাসা, প্রেমের বিয়ে কখনো মানেন না তাই আমি পালিয়ে যাচ্ছি।"

আবির লেখাটা দেখে থমকে গেলো। আর দিমা, তিলোত্তমার মুখে রহস্যময়ী হাসি। দিমা আর চাঁদের হাতের লেখা অনেকটা কাছাকাছি। তিলোত্তমাই মোহনাকে বুদ্ধি দিয়েছিলো দিমাকে দিয়ে চিঠি লিখিয়ে চাঁদকে আবিরের কাছে খারাপ বানাতে। যাতে চাঁদ পরে ফিরে আসলেও আবির তাকে ঠাঁই না দেয়। মোহনা স্বার্থপর মায়ের মতো তাই করেছেন।

!!৭১!!

আবিরকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে মোহনা আবারও বললেন,
-আব্বা, তুমি স্বার্থপর হয়ে গেলা। চাঁদের জন্য তোমার দাদি আজ নাই।

আবিরের কি হলো কে জানে। সে সিদ্ধান্ত নিলো কালকের মধ্যেই লন্ডন ফিরে যাবে। এই স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতকের দেশে আর কখনো আসবেনা সে। 
-মা। আমি আর চাঁদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবোনা।
-আমার কসম খাও আব্বা। 
-আমার এসব কসম পছন্দ না। তবে আপনি নিশ্চিত থাকেন। চাঁদের জন্য আবিরের দরজা বন্ধ। 

মোহনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে এলেন। ঐ অলক্ষী মেয়েকে কখনো তিনি তার পুত্র বধূর মর্যাদা দিবেন না।

চাঁদ হঠাৎ করেই আবিরের বাংলাদেশের নাম্বারে কল দিলো। হ্যাঁ, রিং হচ্ছে। খুশিতে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো চাঁদের চোখ দিয়ে। পেটে হাত রেখে বললো, 
-সোনা দেখিস তোর বাবা সব ঠিক করে দিবে।

আবির নিজের বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলো। সব কিছু বিষাদ লাগছে তার। আপন মানুষেরা এতো ছলনাময়ী হয়! আবির যেন পাথর হয়ে গেলো। একেবারে আবেক শূন্য। মোবাইলের রিংটোন শুনে রিসিভ করলো আবির।
-হ্যালো কে?

চাঁদের খুশিতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। একটু পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আমি। আমি চাঁদ।
-কে চাঁদ?

চাঁদ থমকে গেলো সে কি ভুল নাম্বারে কল করেছে? 

-আপনি কি মৃদুল চৌধুরী আবির বলছেন?
-জ্বি।
-আবির ভাই। আমি আপনার চাঁদ।
-আমি চাঁদ নামে কাউকে চিনিনা।

চাঁদের যেনো পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। আবির কি তাকে ভুল বুঝলো। একটু চাঁদের কথাটা শুনুক।

-আবির ভাই। আপনি এমন করছেন কেন?
-তো কি করবো? বিশ্বাসঘাতক, ছলনাময়ী কাউকে আমি চিনিনা। আমার টাকার লোভ ছিলো আগে বললেই পারতো। এতো নাটক কেন?(চিৎকার করে উঠলো আবির) আমার ভালোবাসা, আবেগ কি কোনো ছেলেখেলা ছিলো? তার জন্য আমি আমার দাদিকে হারিয়েছি। আমার দাদি মারা গিয়েছেন।

আনোয়ারার মৃত্যুর কথা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলো চাঁদ। 
-এই এই তুই একদম কুমিরের অশ্রু বের করবিনা। তোকে যদি সামনে পেতাম নিজ হাতে খুন করতাম। পরে আমি মরতাম।
-আবির ভাই আমার কথাটা 
-একদম চুপ। কি শুনবো? তুই পালিয়েছিস এটা সত্যি না মিথ্যা?
-আমাকে বলার সু
-সত্যি না মিথ্যা (বজ্রকণ্ঠ আবিরের)
-সত্য।
-ব্যস আর কিছু জানার নেই আমার। তোকে আজ থেকে মুক্ত করে দিলাম। যা তুই আমার ভালোবাসার বন্ধন থেকে মুক্ত। 
- ঠিক আছে। 
- আমার সাথে কোনোদিন কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।
- আপনিইও ভবিষ্যতে কোনোদিন আমার সামনে স্বামীর দাবী নিয়ে আসবেন না।

ফোনটা এক আছাড়ে ভেঙে ফেললো আবির। কতো স্বার্থপর হয় মানুষ। ছি।

চাঁদ স্তব্ধ, হতভম্ব। একদকে নিজের নানুমার মৃত্যু। অপরদিকে আবিরের অবিশ্বাস। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো চাঁদ। 
"তুমি আমাকে একা করে কেন চলে গেলে নানুমা। আমার যে আর আপন কেউ রইলো না।"

রত্না দৌঁড়ে এসে চাঁদকে জড়িয়ে ধরলেন। এই মেয়েটার কি অনেক দুঃখ?

চাঁদ তখনো ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। চাঁদ যদি আবিরকে বাচ্চার কথা বলতো তখন হয়তো আবির তা মেনে নিতোনা। চাঁদের চরিত্রে আঙুল তুলতো। থাকনা কিছু কথা অজানা।

!!৭২!!

চাঁদ রত্নাকে সব খুলে বলতে তিনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এই ছোট মেয়েটার এতো কষ্ট। 
-আমি আবিরের সাথে কথা বলবো।
-তোমাকে আল্লাহর দোহাই তুমি উনাকে কিছু বলবেনা।
-তুই ছোট। পেটে যে বড় হচ্ছে তার একসময় বাবার পরিচয় লাগবে তখন তুই কি করবি?
-আমি আমার বাচ্চা একাই মানুষ করবো। কাউকে চাইনা আমার। 
-বোকার মতো কথা বলিস না। তুই আবিরের স্ত্রী। চৌধুরী বাড়ির বউ তুই। নিজের অধিকার কেন ছেড়ে দিবি তুই।
-যে আমাকে বিশ্বাস করেনা সে আমার সন্তান কেও করবেনা। নিজের উপর দোষ দিলেও মানতাম তবে মা হয়ে সন্তানের উপর দোষ কি করে সহ্য করবো?
-তুই বড়ো হয়ে গেছিসরে মা।
-পরিস্থিতি আমাকে বড় করে দিয়েছে। তোমার পায়ের কাছে আমাকে একটু ঠাঁই দিবে আন্টি? 
চাঁদের ছলছল চোখ। চাহনি বেজায় করুণ। রত্নার অনেক মায়া হলো।
-আজ থেকে তুই আমার মেয়ে আর আমি তোর মা। এই বাড়ি সারাজীবনের জন্য তোর।

চাঁদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রত্নাকে। কি অদ্ভুত কাছের মানুষগুলো দূরে চলে যায়। আর দূরের মানুষগুলো আপন করে নেয়।

_________________

প্লেনে বসার সাথে সাথে আবির সব পিছুটান জীবন থেকে মুছে দিলো। আর কখনো ফিরবেনা সে এই স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতকের দেশে।
.
.
.
চলবে.............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।