তোকে ঘিরে - পর্ব ৪৪ - ফাবিয়াহ্ মমো - ধারাবাহিক গল্প


বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত। এ্যাম্বুলেন্সটা দ্রুত হসপিটালে পৌঁছনোর সকল বন্দোবস্ত করে দিয়েছে পূর্ব। দলের ছেলেপিলে ডেকে দুটো গাড়ির ব্যবস্থা করে একটা এ্যাম্বুলেন্সের পেছনে টহল দিচ্ছে আরেকটা সিকিউরিটি দিচ্ছে সবাইকে আনার জন্য বড় মাইক্রোবাসটার পেছনে। পূর্ব একা ড্রাইভ করে সামনে থেকে রাস্তা ক্লিন করে দিচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য! আজ যে করেই হোক শ্রেয়াকে বাঁচানো চাই! পূর্ণতাকে নিজের গাড়িতে তুলেনি পূর্ব। ইতিমধ্যে মানুষজন জেনে গিয়েছে পূর্ব একটা রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য রাস্তায় নেমেছে, কাজেই পূর্ণতা পাশে থাকা মানে প্রত্যক্ষ ভাবে বিপদ! ওকে পরিবারের অন্যান্য সকলের সাথে মাইক্রোতে তুলে দিয়েছে দ্রুত আসার জন্য। শো শো করে সারিবদ্ধ ভাবে একসঙ্গে হাসপাতালের গেইট দিয়ে ঢুকলো অনেকগুলো গাড়ি। পূর্বের কালো গাড়িটা সবার প্রথম ঢুকতেই ডাক্তারদের একদল টিম রেডি হয়ে স্ট্যাচার আনতে নির্দেশ দিলো। মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স থেকে ধরাধরি করে বের করলো শ্রেয়াকে। ওয়ার্ড বয়, নার্স, ডাক্তার সবাই দৌড়ে ছুট লাগালো ট্রিটমেন্ট চালু করার জন্য।। হাসপাতালের বাইরে থাকা মানুষজন কৌতুহল দৃষ্টি যার যার জায়গায় দাড়িয়ে হা করে আছে। সেকেন্ডর মধ্যেই সুনশান নিরব হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হুলস্থুল অবস্থা দেখে হতবাক সবাই। পূর্ব হাত ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে মাইক্রো থেকে নামা সবাইকে হাসপাতালের ভেতর জলদি যেতে বললো। শ্রেয়ার মা পাগলের মতো ছুট দিলে উনার পিছু পিছু সবাই হনহনিয়ে দৌড়ে যায় ভেতরে। পূর্ব প্রচন্ড ব্যস্ত ভঙ্গিতে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে হাতে ফোন নিয়ে কাউকে কল দিতেই পূর্ণতা ছুটে এলো পূর্বের একদম সামনে। ঢোলা কালো বোরখার নিচের দিকে কাদায় মেখে গেছে পূর্ণতার। দু'হাতে বোরখা কোনোরকম একটু উঁচু তুলে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো, 

  - আয়মান ফোন ধরছেনা, কি করি? আমার মাথা কাজ করছেনা পূর্ব। ও কেনো এমন করছে? 

পূর্বকে ঘিরে এখনো আশেপাশে থাকা বিভিন্ন রোগীর স্বজনরা ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে আছে। পূর্ব মুখে হাত দিয়ে দেখে মাস্ক নেই! মানুষ ওকে দেখে চিনবেনা এমন পাবলিক সম্ভবত নেই! পূর্ব ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিয়ে মাস্ক বের করতেই পূর্ণতাকে চোখ দিয়ে একটা ইশারা করে। পূর্ণতা চমকে উঠতেই হঠাৎ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদেরকে দেখছে। মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে পূর্ব মুখে মাস্ক লাগিয়ে হাঁটা দিয়ে হাসপাতালের প্রবেশপথের দিকে। পূর্ণতা চোখ নিচু করে বোরখা ধরে পূর্বের পিছু পিছু যেতেই একটা ওয়াশরুমের মতো নিরিবিলি জায়গায় এসে পরলো। পূর্ণতা অবাক দৃষ্টিতে নিরিবিলি জায়গাটা দেখতেই বুঝতে পারলো এটা অনেকটা চেন্জিং রুমের মতো যেখানে বাইরে থেকে আসা মানুষের তাৎক্ষণিক পোশাক পরিবর্তনের জন্য করা হয়েছে। হাসপাতালটা প্রাইভেট ও বিলাসবহুল বিধায় এখানে মানুষ তুলনামূলক কম। পূর্ণতা রুমের সেন্টারে দাড়াতেই পূর্ব যেয়ে রুমটার দরজা লক করে দিলো। চকচক করা আভিজাত্য বেসিনের কাছে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে বেসিনের ডানপাশ থেকে টিস্যুবক্স নিয়ে পূর্ণতার পায়ের কাছে হাটু মুড়ে বসলো পূর্ব। পূর্ণতা চেচিয়ে উঠলো, 

  - কি করছো তুমি? পায়ের কাছে বসছো কেন? তুমি খবরদার বোরখায় হাত দিবেনা! 

পূর্ব কথা শুনলো না, কথা সম্ভবত কানেও নিলেনা। নির্বিকার ভঙ্গিমায় ফস ফস করে বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে পূর্ণতার বোরখার কাদা মুছতে লাগলো সে। পূর্ণতা চেচামেচি আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলে পূর্ব এমন দৃষ্টিতে তাকায় পূর্ণতা সঙ্গে সঙ্গে চুপ! হঠাৎ পকেট থেকে ফোন বেজে উঠলে কানের ব্লুটুথে ট্যাপ করে কথা বলতে বলতে কাদা পরিস্কার করা অব্যাহত রাখলো সে। 

  - এটা কি সিমেক্স ব্লাডব্যাংক? আমি ওয়াসিফ পূর্ব বলছি। আমার ইমিডিয়েটলি পাঁচ ব্যাগ রক্ত লাগবে। এক্ষুনি সবকিছু সিকু্য়েন্স করুন আমি লোক পাঠাচ্ছি। 

কথার মাঝেই পূর্ব আবার উঠে দাড়িয়ে ট্যাপের পানিতে অনেকগুলো টিস্যু ভিজিয়ে বাড়তি পানি চিপড়ে ফিরে এলো পূর্ণতার পায়ের কাছে হাটু গুজিয়ে। এই মানুষটা বড়ই অদ্ভুত। কখনো নিজের দিকে তাকায় না। কখনো নিজের জন্য ভাবেনা। নিজের বলতে যে একটি ব্যক্তিগত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা আছে সেটা সর্বদা ফলায় না। এমন দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও পরিবারের অন্যান্য মানুষরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতো, ডাক্তারের ত্রুটিতে শ্রেয়ার প্রাণ হয়তো ঝরে যেতো, হারিয়ে যেতো একটা মেয়ে কোনো মায়ের বুক খালি করে, বাবার মমতা ভরা 'মা' ডাককে আজীবনের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে যেতো সেই মানুষটা অকাল মৃত্যু ডেকে। এই শ্রেয়া কতোবার পূর্ণতাকে আগলে রেখেছে। কখনো বোনের মতো জড়িয়ে ধরেছে, কখনো পাশে থেকেছে বন্ধুর মতো। পূর্বের তো কিছুই হয়না শ্রেয়া তবুও পূর্ণতার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের শেষটুকু দিয়ে বাঁচানোর তাগিদে আছে পূর্ব। পূর্ণতার চোখ থেকে বৃষ্টি ফোটা জোড়ায় জোড়ায় ঝরছিলো গাল ভিজিয়ে। পূর্বের দিকে মাথা নুয়ে তাকালে ওকে জাপটে ধরে কাছে টানতে ইচ্ছে করে। মানুষটা সবার জন্য ভাবলেও নিজের জন্য স্বার্থপর হতে পারেনা। এইযে বিরাট বড় হাসপাতালে নিয়ে এলো, বড় বড় ডাক্তারদের বাড়ি থেকে তুলে এনে শ্রেয়ার জন্য মজুদ করলো, রক্ত শংকটে যদি না পরে এরজন্য রক্তের যোগানও দিয়ে ফেলেছে সে। পূর্বকে জীবনে পেয়ে পূর্ণতার যদি হাজারবার, অসংখ্য বার, অগণিত কষ্ট সহ্য করা লাগে তাও করবে। প্রচণ্ড সুখের চেয়ে যদি কষ্টের পাল্লা ভারি হয় সেটাও মাথা পেতে মেনে নিতে রাজি পূর্ণতা। এই অসভ্য, ফাজিল, বেয়াদব, রাগী, রাশভারী মানুষটাকেই পূর্ণতার চাই। 

পূর্ব পুরো বক্স খালি করে পূর্ণতার বোরখায় লেগে থাকা কাদাটে অবস্থা পরিস্কার করে উঠে দাড়ালো। টিস্যুর বক্সটা জায়গা মতো রেখে হাত ধুয়ে পূর্ণতার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। কালো নিকাব ভেদ করে ছলছল চোখের দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পূর্ণতার হাতদুটো ধরলো পূর্ব। সাথেসাথে পূর্ণতা চমকে উঠলো। পূর্বের হাতদুটো কি ঠান্ডা! তড়িৎ গতিতে ওর খেয়াল হলো পূর্বের কালো শার্টটা পুরো ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে। পূর্ণতা অস্থির কন্ঠে পূর্বের গাল ধরে বললো, 

  - তুমি গাড়িতে থাকার পরেও ভিজলে কি করে? দেখি কপাল দেখি। জ্বর আসলে তোমার খবর আছে দেখে নিও! আমি তোমাকে ছাড়বো না!

পূর্ব ঠোঁট প্রসার করে গালের দুপাশে সুক্ষ্ম হাসির ভাঁজ ফেললো। পূর্বকে হাসতে দেখে পূর্ণতা মুখ ফুলিয়ে ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ ফেলে বললো, 

  - তুমি হাসছো? আমি ইয়ার্কি করছি? জবাব দাও না কেনো? 

পূর্ব কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে পূর্ণতার হাতদুটোয় চুমু দিয়ে দিলো। পূর্ণতা রাগী রাগী চাহনিতে পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ব দুই গালে দু'হাত রেখে নিকাবের উপরেই পূর্ণতার ওষ্ঠযুগলের উপর ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে দিলো। বুকের কোথাও কাটা ফুটে উঠলো পূর্ণতার। পূর্বের শরীর বেশ ঠান্ডা হয়ে আছে। চকিত দৃষ্টিতে পূর্বের গাল, কপাল ও গলায় হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পর্যবেক্ষণ ভঙ্গিমায় উৎকন্ঠাযুক্ত কন্ঠে পূর্ণতা বললো, 

  - তোমার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে! কি করবো আমি তোমাকে নিয়ে? নিজের নূন্যতম খেয়ালটুকু রাখোনা আমি..আমি
  

রাগে, ক্ষোভে অদ্ভুত জেদীপনায় পূর্ণতা কথা শেষ করতে পারলো না, দাঁতে দাঁত চেপে থেমে গেলো। পূর্ব ফিক করে ঝকঝকে দাঁতে সুন্দর করে হাসতেই মোলায়েম কন্ঠে বললো, 

  - বাসায় গেলে একটু আগলে নিও। তোমার উষ্ণতায় একটু উষ্ণ করে দিও তাতেই আমার চলবে। এটুকু বিশ্বাস করতে পারো আমি অসুস্থ হবো না। ঝড়বৃষ্টি গায়ে মেখে দেদারসে থাকতে পারবো। নো টেনশন! ঠিক আছে?

সাবলীল হাসিতে পূর্ণতার দিকে ডান চোখটা টিপ মেরে দরজার কাছে চলে গেলো পূর্ব। পূর্ণতা কয়েক সেকেন্ড ঝিম মেরে চুপটি করে থাকতেই হঠাৎ ঝাঝালো গলায় বলে উঠল, 

  - আমার কথা জীবনেও শুনবেন? কখনো শুনবেন? আমার উপর মর্জি খাটিয়ে দারুণ শান্তি পান তাইনা? আসলে আমি তো আপনার কেউই না, থাকা না-থাকা একসমান!

ফোঁস করে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো পূর্ণতা। রাগ যখন ওরও উঠে তখন পূর্বকে একচুল ছেড়ে কথা বলেনা সে। দরজার লকে মোচড় দিয়ে পূর্ব মাথাটা পেছনে ঘুরিয়ে এক টুকরো মিষ্টি হাসিতে বললো, 

  - আমার সবকিছু যখন তোকে ঘিরে। পূর্ণতা ছাড়া পূর্বকে বড়ই বেখাপ্পা লাগে।  

পূর্ণতা অটলভাবে দাড়িয়ে রইলো। পূর্বের যাওয়াটা একদৃষ্টিতে দেখে স্তব্ধ ভঙ্গিতে ঢোক গিলে গলা সিক্ত করলো পূর্ণতা। প্রাণঘাতী হাসিটা বুকের কোথাও বিদ্ধ করেছে। আঘাত পেয়ে বুকের যন্ত্রটা ক্রমাগত লাফাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে মায়াময় শান্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটা কল্পনায় স্পষ্ট ভাসতেই বিড়বিড় করে উঠলো নিজের সাথে, তোমায় নিয়ে যতো স্বপ্ন দেখেছি তা ছিলো বেহিসেবী। আমার কল্পনায় যতো সুন্দর চিত্র দেখেছি, বাস্তবে তার চেয়ে বড্ড সাংঘাতিক তুমি। তোমার শান্ত হাসিটা দেখলে বারবার নিজেকে ভুলে যাই। বাধ্য হই তোমার ধারালো দৃষ্টিতে সম্মোহন হতে।।ইশশ, সত্যি তুমিহীনা আমারও নিজেকে বেখাপ্পাই লাগে...

হেসে ফেলে পূর্ণতা। বোরখা ধরে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

.

  শ্রেয়াকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে আধ ঘন্টা হলো। রুমের বাইরে সারিবদ্ধ চেয়ারগুলোতে এক এক করে সবাই বসে দোয়া প্রার্থনা করছে। শ্রেয়ার মা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে রাজিবের মায়ের কাধে মাথা হেলিয়ে দিয়েছেন। আয়মানের মা চোখ বন্ধ করে আঙ্গুলে টুকে টুকে জপমালা করছেন। খোদেজা এদিক ওদিক কিছুক্ষণ পায়চারী করে আয়মানের মায়ের পাশে বসলেন। পূর্ণতা শ্রেয়ার ঘুমন্ত বোনকে আগলে ধরে সিটে বসে আছে। পুরুষরা সবাই কিছুটা দূরে দাড়িয়ে হা হুতাশ ভঙ্গিতে একে অপরের সাথে কথা বলছেন। কথার মধ্যে শ্রেয়ার বাবা হুটহাট করে কেদেঁ দেন হাউমাউ করে। পূর্ব ডাক্তারদের প্রেসক্রাইভ মেডিসিনগুলো বহুবার চেক করিয়ে নানা স্পেশালিস্টদের কাছ থেকে রিকোমান্ড নিয়ে তারপর ওটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। দলের নয়জন ছেলেকে ব্লাড আনা, মেডিসিন পাঠানো, বাইরে দাড়িয়ে টহল দেওয়ার মতো বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিয়েছে পূর্ব। পূর্বের সুপারিশে অভিজ্ঞ নার্সরা রাত্রিকালীন ডিউটি ছেড়ে যেতে পারেনি। তবে পূর্ব নিজ দায়িত্বে সকল নার্সদের ঠিকঠাক মতো তাদের বাড়ি পৌঁছে দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যয়ভার পূর্ব নিজের কাধে নিয়েছে, শ্রেয়ার বাবা থেকে চেকটা পযর্ন্ত হাতে না নিয়ে নাকোচ করে দিয়েছে সে। ঘন্টাখানিক পর ডাক্তার এসে সবাইকে জিজ্ঞেস  

  - পেশেন্ট কি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলো? 

সবাই হুঁশ ফেরার মতো চৈতন্য দৃষ্টিতে তাকালে পূর্ব একধাপ জোরে হেঁটে এসে বলে, 

  - শারীরিক অবস্থাটা কেমন? 
  - পেশেন্ট সম্ভবত এ্যান্টি ডিপ্রেশ্ড ঔষুধ নিতো। ঔষুধগুলো খুব পাওয়ারফুল বলে মাথায় এ্যাটাক করেছে। 
  - ব্রেনে সমস্যা? 
  - আমরা এখনো এমআরআই(MRI) রিপোর্ট চেক না করে বলতে পারছিনা। তবে হাতের যে শিরাটা কেটেছে খুবই গভীরভাবে কেটে গেছে। ব্লিডিং অফ করা খুব কষ্টসাধ্য হলেও এখন কম পরিমাণে ব্লিডিং হচ্ছে। 
 

পূর্ব কয়েক সেকেন্ড চিন্তার ভঙ্গিতে ভেবে হঠাৎ চকিতে বলে উঠলো, 
  - ব্লাড কি আরো লাগবে? আনুমানিক কতটুকু লাগবে যদি বলতেন? 
  - ব্লাড আর লাগবে বলে মনে হয়না। পালস রেট স্বাভাবিক হলে আমরা যে মেডিসিনটা দিবো সেটা আনিয়ে রাখুন। 

পূর্ব সাথেসাথে পেছনে ঘুরে দলের একজনকে তর্জনী তুলে মেডিসিন আনতে নির্দেশ দিলো। ডাক্তারকে রিকুয়েস্ট করে পূর্ব একটু প্রাইভেট টক সারতে আলাদা জায়গা নিয়ে বললো, 

  - মূল সমস্যাটা বলুন। দেখুন ডাক্তার, যত টাকা লাগবে আপনি আমাকে বলবেন। তবুও আপনি দয়াকরে আমার পরিবারের সামনে ওর ব্যাড নিউজটা দিতে যাবেন না। 
  - আপনি আমাকে সত্য বলতে বারন করেছিলেন মিস্টার। সত্যি বলতে, ওই হসপিটালে শ্রেয়ার প্রাথমিক যে চিকিৎসাটা হয় সেটা একদম ভুল। ওটার সাইড ইফেক্টস হিসেবে ওর ব্রেনের বাম দিকটায় জমাটবদ্ধ অবস্থা। আপনাকে একটা সত্য বলি? রোগী হয়তো বাঁচবে না। আমি মিথ্যা আশা দেওয়ার মতো ডাক্তার নই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি কিন্তু বাঁচা-মরার দায়ভার উপরওয়ালার। পেশেন্টের সিচুয়েশন সিরিয়াসলি খুব খারাপ! আপনি কিভাবে ম্যানেজ করবেন, করুন। দোয়া করুরন যেনো বিপদটা কেটে যায়। 

পূর্ব শক্ত হয়ে যায় সত্য কথা শুনে। ডাক্তার ওর কাধে একমুহূর্ত হাত রেখে পরক্ষনে হতাশ মুখভঙ্গিতে চলে যায়। মাথা আর কাজ করতে চাইছেনা পূর্বের। মনেহচ্ছে শ্রেয়া ইচ্ছে করেই মৃত্যুর পথটা থেকে বাঁচার কোনো চান্স রাখেনি। সোজাসাপ্টা মরতে চাওয়াটাই ওর একমাত্র মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো। কিন্তু কেনো শ্রেয়া এই ভয়াবহ পথ বেছে নিলো? কি ছিলো রহস্য? অনুশোচনার ভারে তিলে তিলে কষ্ট পোহানোর চাইতে মৃত্যুটাই কি যোগ্য ভেবেছিলো? পূর্ব চোখ বন্ধ করে বুকভর্তি লম্বা নিশ্বাস টেনে নাসাপথ ও মুখছিদ্র(ঠোঁট) পথে ছেড়ে দিলো। শ্রেয়া আজ যদি মরেও যায় অনেক রহস্য আধুরা রেখে যাবে....
.
.
.
চলবে.....................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন