গোধূলীর রঙিন ছোঁয়া (পর্ব ০৩)

পড়ুন ফারহানা ছবি'র লেখা গল্প গোধূলীর রঙিন ছোঁয়া পর্ব ০৩
গোধূলীর রঙিন ছোঁয়া
গোধূলীর রঙিন ছোঁয়া

সাজিতের জমজ বোন মিহু এসে কয়েকবার দরজায় নক করে ডেকেছে তবুও কোন আওয়াজ করেনি সাজিত৷ একসময় মিহু দরজার ওপাশ থেকে ফিস ফিস করে কিছু বলতে সাজিত তখনি দরজা খুলে দেয়৷ মিহু রুমে ঢুকে লাইট অন করে পুরো রুমের দিকে তাকাতে আতঁকে ওঠে৷ সাদা ফ্লোরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ৷ রক্ত শুকিয়ে গেছে৷ মিহু ভয়ে ভয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকাতে সাজিত বলে ওঠে,

"কোন কথা নয় মিহু৷"

"সাজিত তুই এমন করছিস কেন? সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷ আর তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস বল? আমি সব ঠিক করে দেবো৷"

"তুই সব ঠিক করে দিবি? কিন্তু কি করে তা কি ভেবে দেখেছিস?"

"হ্যাঁ, তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷"

"ঠিক আছে আমি তোর কথা মেনে নিলাম, তবে বিয়ের আগে পর্যন্ত যদি সবটা ঠিক না হয় তাহলে তুই আমার খারাপ রুপ টা দেখবি।"

"শান্ত হ সব ঠিক হয়ে যাবে৷ এই মিহু থাকতে তার ভাইয়ের কোন ক্ষতি হতে দিবে না৷"

মিহু ড্রয়ার থেকে ফাস্ট-এইড বক্স বের করে সাজিতের ডান হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়৷ বেশ অনেকটাই কেটে গেছে৷ মিহু ব্যান্ডেজ করে একজন সারভেন্ট কে বলে রুম ক্লিন করতে৷

জীবন মাহমুদ সাজিতের বাবা ভিষণ ভাবে ব্যস্ত তার ছেলের বিয়েতে, একদন্ড বসে থাকতে পারছে না। এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে৷

"এই যে এভাবে ছুটছো কেন হুম, বুড়ো বয়সে হাড়গোড় ভাঙতে চাও বুঝি?" (মিসেস সাহারা )

"দেখো সাহারা একদম আমাকে বুড়ো বলবে না, আমি যথেষ্ট ইয়াং বুঝছো?"

"হ্যাঁ খুব বুঝতে পেরেছি৷ এখন বলুন তো আপনার বড় ছেলে কোথায়? তার ছোট ভাইয়ের বিয়ে অথচ তার কোন পাত্তা নেই কেন?"

"সেটা আমি কি করে বলবো? দেখো গিয়ে কোথায় বসে আছে।"

"নাহ! গতকাল দুপুর থেকে তাকে বাড়িতে আর দেখতে পাওয়া যায়নি৷"

সাহারার কথা শুনে জীবন মাহমুদের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ৷ তার ছেলে যে হুট হাট করে কিছু করে না সেটা জীবন মাহমুদ খুব ভালো করে জানে৷ এর মানে দাঁড়ায় সে সব কিছু আগে থেকে প্লান করে রেখেছিলো৷ কিন্তু এখন সে কোথায়? প্রশ্ন গুলো ভীষণ রকম ভাবাচ্ছে জীবন মাহমুদকে।

"চা টা খেয়ে নাও, আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি৷"

মিসেস সাহারা চায়ের কাপ জীবন মাহমুদ'এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যান৷

জীবন মাহমুদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চিন্তায় ডুবে যায়৷ অন্যদিকে প্রিয়াকে খুব সাবধানে রুমে রেখে রেডি করাচ্ছে তার মা নিশিতা বেগম৷

"মেয়ে টা কেন যে এমন করলো বুঝতে পারছি না৷ জানিস প্রিয়া তোর বাবা ভিষণ রেগে আছে প্রাণোর উপর, ভিষণ ভালোবাসে তোদের তিন ভাই বোনকে, কিন্তু কাল প্রাণো যা করলো তার জন্য তোর বাবা ভিষণ ক্ষেপে আছে৷ মনে হয় না প্রাণোকে এতো তড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবে৷"

"মা এতো চিন্তা করো না৷ আমার মনে হয় আপু ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ হয়তো কোন কারণে আমাদের সবাইকে সবটা বলে উঠতে পারেনি তাই পালিয়ে গেছে৷ তুমি প্লিজ আপুকে ভুল বুঝো না৷"

"ভুল বুঝবো না বলছিস? কিন্তু পাঁচ জন মানুষ যখন জানবে প্রাণো পালিয়েছে তখন কি হবে বুঝতে পারছিস?"

"মা প্লিজ এখন এই সব কথা বাদ দাও৷ ভালো করে আমাকে সাজাও৷"

"হুম, জানি প্রাণোর পালানোর বিষয় টা যদি বিউটিশিয়ানরা পাঁচ কান না করে তাই তো সাদমান তাদের আসতে বারণ করে দিয়েছে৷"

"ঠিক করেছে দাভাই৷ আমি আর দাভাই আমার আপুর জীবন নষ্ট হতে কিছুতেই দিবো না, মা তুমি দেখো নিও৷" (বিড়বিড় করে বললো প্রিয়া)

"কিছু বললি প্রিয়া?"

"না মা কিছু না।"

বলে স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো প্রিয়া....।

সাদা ভাত, মাংস, মাছ ভাজা আর ডাল দিয়ে সবাই খুব তৃপ্তি সহকারে খেয়ে ঢেকুর তুললো৷ প্রাণো প্রথমে অল্প খেয়ে উঠে গেল রেস্টুরেন্টের বড় টেরেসে৷ টেরেসে এসে দাড়িয়ে প্রাণো মন খুলে নিশ্বাস নিচ্ছে৷ টেরেসে দাঁড়িয়ে প্রাণো মেঘ কন্যাকে হাত দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে৷ মেঘ গুলো হাওয়ায় ভেষে চলছে৷ অদ্ভুত এক মনোরম পরিবেশ৷ কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রাণোর মনে থাকা সব কষ্ট গুলো উধাও হয়ে গেল৷ এতো উঁচুতে দাঁড়িয়ে প্রাণো বান্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করছে৷ চারিদিকে সবুজের সমারহ৷ একজন প্রকৃতি প্রেমির জন্য হয়তো এটা একটা বেস্ট জায়গা৷ প্রাণো হাত দু'টো ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে৷ ঠান্ডা শীতল হওয়া প্রাণোর শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে, সাথে সাথে ওড়নার ফাঁক গলে প্রাণোর আদভেজা চুল গুলো উড়িয়ে নিচ্ছে৷ প্রাণো মেঘ ছোঁয়ার চেষ্টা করতে করতে গুন গুন করে গেয়ে উঠলো,

ও মেঘ ও মেঘ রে তুই যা না উড়ে,
আমার বন্ধু থাকে যে শহরে.....
ও মেঘ ও মেঘ রে তুই বলিস বন্ধুরে,
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে৷
মেঘের সাথে মেঘের খেলা,
বন্ধু করলো অবহেলা।
মেঘের সাথে মেঘের খেলা,
বন্ধু করলো অবহেলা.....
বন্ধু আমার রইল কোন দূরে,
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে।
মেঘ শুধু দুঃখ পেলে কাঁদে,
রংধনু হয়ে আবার হাসে,
আমার দুঃখ গুলো আমায় নিয়ে,
সেই মেঘের ভেলায় চড়ে ভাসে৷
বৃষ্টি ঝড়ে অবেলা,
বন্ধু করলো অবহেলা,
বন্ধু আমার রইল কোন দূরে।
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে,
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে....

গানটুকু শেষ করতে পেছন থেকে হাততালির আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে তার গুনোধর বান্ধবী আর আকাশ, নিলয়, সাগর, স্মরণ সাথে আর কয়েকজন দাঁড়িয়ে হাসি মুখে হাত তালি দিচ্ছে৷ প্রাণো কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে তখনি স্মরণ বলে ওঠে,

"বাহ! গানের গলাতো তোমার বেশ সুন্দর, কিন্তু গতকাল রাতে কেন গাইলে না?"

"ধূর স্মরণ পুরানো কথা বাদ দে, এখন যে গান টা গাইলো না... দোস্ত কলিজা একদম ঠান্ডা হয়ে গেল৷"(নিলয়)

স্মিতা, সাফা, ঐশী প্রাণোর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

"দোস্ত ঠিক সময়ে এখানে না এলে হয়তো তোর গান টা মিস করে যেতাম৷"

"স্মিতা এখন আমার ইচ্ছে করছে কি জানিস... প্রাণোর গালে ঠুস করে একটা চুমু খেতে।"

প্রাণো সাফার কথা শুনে সাফার মাথায় চাঁটি মেরে বলে,

"তোরা থামবি৷ কি সব বাজে বকে যাচ্ছিস তখন থেকে হুম, আমার গানের গলা এতোটাও ভালো নয় যতোটা বলছিস।"

"তাই না! জানেন স্মরণ ভাইয়া ভার্সিটিতে যে কোন অনুষ্ঠানে টিচার্সরা গানের জন্য এই প্রাণোকে ডাকে, অন্য কেউ চান্স পায় না৷"

"বাহ প্রাণো, তোমার তো বেশ গুন আছে।"

"এখন কি এই সব কথাই চলবে? কোথাও কি ঘুরতে যাবেন না আপনারা?"

প্রাণোর কথা শুনে স্মরণ বলে উঠলো,

"হুম যাবো৷ আজ শুধু আশে পাশে ঘুরবো কাল সকাল সকাল মেঘলা ঘুরতে যাবো৷"

"ওকে তাহলে চলুন যাওয়া যাক।"

সাগর আর স্মিতা দু'জনে গল্প করছে আর হাঁটছে৷ আকাশ ঐশীর সাথে হাঁটছে, আর সাফা নিলয়ের সাথে। স্মরণ আর প্রাণো পাশা পাশি হেঁটে চলেছে৷ দু'জনে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত৷ মনোমুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি দেখছে৷ প্রাণো বরাবর ফুল ভিষণ ভালোবাসে, আর আশে পাশে বনোফুল সাথে নানা রঙের জবাফুল দেখতে পেল৷ লাল হলুদ সাদা, প্রাণো ফুল গুলো না ছিঁড়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে৷ হুট করে স্মরণ একটা রক্ত জবা ফুল ছিঁড়ে প্রাণোর চুলে গুঁজে দেয়৷ স্মরণের এমন কান্ডে প্রাণো হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো৷ কি হলো সেটা বোঝার চেষ্টা করছে৷ এক মিনিট পর প্রাণো খেয়াল করে স্মরণ তার মতো হেঁটে এগিয়ে গেছে, সে পেছনে পড়েছে অনেকটা। প্রাণো যে এখনো বুঝতে পারেনি স্মরণ তার চুলে ফুল গুঁজে দিয়েছে৷ প্রাণো ছুটে গিয়ে স্মরণের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো৷ স্মরণ প্রাণোর মুখভঙ্গি দেখে কিঞ্চিৎ হেসে দিলো৷ ইঁটের রাস্তা, দু'পাশে প্রচুর গাছ৷ উচু নিচু রাস্তা, গতকাল বৃষ্টি হওয়ার দরুন নিচু জায়গা গুলোতে পানি জমে আছে৷ এতো চুপচাপ থাকতে প্রাণোর মোটেও ভালো লাগছে না, বিধায় নিজ থেকে বলতে লাগলো,

"স্মরণ ভাইয়া জায়গাটা ভিষণ সুন্দর তাই না?"

প্রাণোর মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে স্মরণের মোটেও ভালো লাগলো না৷ কপাল কুঁচকে প্রাণোকে পাল্টা প্রশ্ন করে,

"কাকে ভাইয়া বলছো প্রাণো?"

"কেন আপনাকে! আপনি তো আমার বড় হবেন৷ এখন আপনি বলুন আমি কি আপনার নাম ধরে ডাকতে পারি?"

"আপনি আমার নাম ধরে ডাকবেন মিস প্রাণো।"

"স্যরি এটা আমি পারবো না৷ আপনি মে বি আমার বড় ভাইয়ের বয়সি হবেন, তাহলে কি করে আপনাকে নাম ধরে ডাকি?"

"তাহলে কিছু বলে ডাকার প্রয়োজন নেই।"

কথাটা বলে রেগে জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো৷ প্রাণো বোকার মতো ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো স্মরণের রেগে যাওয়ার কারণ,

"ছেলেটার মাথায় কি কোন সমস্যা আছে? নাহলে চেনে না জানে না এমন একটা মেয়েকে তার নাম ধরে ডাকতে বলে৷"

ভাবতে ভাবতে প্রাণো হুট করে পা পিছলে খাদে পড়ে যেতে নিলে স্মরণ প্রাণোর হাত ধরে ফেলে৷

"ভাইয়া প্লিজ আমার হাত ধরে রাখুন৷ এখান থেকে পড়লে আমি নির্ঘাত আল্লাহ প্রিয় হয়ে যাবো৷"

প্রাণোর এমন উৎভট কথা শুনে স্মরণের রাগটা যেন হুর হুর করে বেড়ে গেল৷ বাসে করা অপমান আর নাম ধরে ডাকায় তার শোধ টা এবার নিয়ে নিবে বলে মনে মনে ঠিক করে স্মরণ বাঁকা হেসে বলল,

"হাত ধরে রাখতে পারি একটা শর্তে, যদি তুমি শর্তটা মানো তাহলে তোমাকে এখান থেকে উঠতে সাহায্য করবো৷"

"কিহ! শর্ত?"

"জ্বি! এখন বলুন শুনবেন শর্ত?"

প্রাণো পড়েছে বিপাকে আর তার সুযোগ নিয়ে স্মরণ যে শর্ত জুড়ে দিবে এটা প্রাণো কখনো আশা করেনি৷ যেহেতু এখন সময় তার সাথে নেই তাই তাকে শর্ত শুনতে এবং মানতে হবে৷

"বলুন আপনার কি শর্ত আছে?"

"প্রথমতঃ শর্ত বাসে আমার সাথে করা মিসবিহেব এর জন্য স্যরি বলতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ আমার নাম ধরে ডাকতে হবে৷ তৃতীয়তঃ আমাকে তুমি বলতে হবে নো আপনি আপনি। চতুর্থতঃ আমরা আজ থেকে বন্ধু। পঞ্চমতঃ যতোদিন বান্দরবান থাকবে, ঠিক ততোদিন আমার সাথে ঘুরতে বের হবে, সাথে তোমার বান্ধবীরা থাকলে আমার সমস্যা নেই৷ এই কটাই শর্ত ছিলো৷"

"ব্যাস এই কয়টা শর্ত? আরো কিছু থাকলে সেটাও জুড়ে দিন৷" (দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে স্মরণের দিকে তাকিয়ে বললো প্রাণো)

স্মরণ তার চোখের চশমাটা ঠিক করে বলে,

"নাহ! আপাততো এই কথা শর্ত মানলে চলবে৷ তবে একটা কথা, যদি শর্ত মেনে এখান থেকে উঠে শর্ত ভঙ্গ করার চেষ্টা করো তাহলে তোমাকে কোলে তুলে খাদে ছুঁড়ে মারবো৷ এন্ড আই মিন ইট।"

লাস্ট কথাটা স্মরণ যে সিরিয়াস হয়ে বলেছে তা তার মুখ দেখে বুঝতে পারলো প্রাণো৷ প্রাণো এখনকার মত বাঁচার জন্য বলে উঠলো,

"ওকে, বাসের ঘটনার জন্য স্যরি৷ আর আমি আপনার নাম ধরে ডাকবো৷ তুমি বলে ডাকবো৷ আর আজ থেকে আপনি আমার বন্ধু৷ যতোবার ঘুরতে বের হবো ততোবার আপনাকে থুক্কু তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো৷"

"দ্যাট'স লাইক এ্যা গুড গার্ল।"

বাঁকা হেসে কথাটা বলে প্রাণোর হাত ধরে জোরে টান দিয়ে তুলতে, প্রাণো স্মরণের বুকে হুমড়ে খেয়ে পড়ে৷ ভয়ে প্রাণো স্মরণের শার্ট ঘামচে ধরে আছে৷ ভয়ে প্রাণোর বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করছে৷ স্মরণ প্রাণোর অবস্তা দেখে হেসে ফেলে৷

"এই যে ম্যাম আমার বুকটা কি বিছানা যে এখনো লেপ্টে আছেন?"

প্রাণোর কানে কথা পৌছানো মাত্র প্রাণো স্মরণের থেকে ছিটকে দুরে সরে দাড়ায়৷ লজ্জায় প্রাণোর গাল দুটো লাল হয়ে আছে৷

স্মরণ প্রাণোকে সহজ করার জন্য বলে উঠলো,

"প্রান, শর্ত গুলো মনে আছে তো? একটা শর্ত যদি ভঙ্গ হয় তাহলে তোমাকে আমি কি করবো বুঝতে পারছো তো?"

প্রাণো রক্ত লাল চক্ষু নিয়ে স্মরণের দিকে তাকিয়ে কাট কাট গলায় বলে উঠলো,

"আমার নাম তাসনিম কবির প্রাণো, প্রান নয়৷ নেক্সট টাইম থেকে এই ভুল করবেন না মিস্টার স্মরণ৷"

কথা টা বলে দৌড়ে রিসোর্টে চলে গেল প্রাণো৷ স্মরণ প্রাণোর রাগ টা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে, তাকে প্রান বলে ডাকায় প্রাণো এমন রিয়েক্ট করেছে৷ স্মরণ তার ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,

"তুমি শুধু প্রাণো নয়, তুমি আমার প্রাণ৷ স্মরণের প্রাণ৷ আর এই স্মরণ বেঁচে থাকতে তোমায় অন্য কারোর কখনো-ই হতে দিবো না৷ তুমি শুধু আমার শুধু আমার প্রাণ৷"

স্মরণ ধিরে সুস্থে রিসোর্টের ভিতরে যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগলো৷ হঠাৎ স্মরণের ফোন টা বেজে ওঠে,স্মরণ ফোন বের ফোনের স্কিনে ভেষে ওঠা নাম টা দেখে মুচকি হেসে কল রিসিভ করে......

"হ্যালো সব ঠিক আছে দোস্ত?"

"একদম ইয়ার, তুই তো জানিস স্মরণ কখনো তার ভালোবাসার জিনিস অযত্ন করে না৷ বরং ভালোবেসে আগলে রাখে৷"

"হুম জানি, আমার বেস্টফ্রেন্ড কেমন। যাই হোক আমার কলিজার টুকরার দিকে খেয়াল রাখিস জানিস তো ও কতোটা আপসেট এখন?"

"তার মন ভালো করার জন্য তো আমি আছি তাই না শা..."

বাকিটা বলার পূর্বে ফোনের অপাশ থেকে বলে উঠলো,

"দোস্ত এখন রাখছি পরে কথা হবে।"

"ওকে বাই এন্ড টেক কেয়ার।"

" ইউ টু।"

স্মরণ কল ডিসকানেক্ট করে প্রাণোর কটেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়৷ স্মরণ নিজের দ্বিধা কাটিয়ে প্রাণোর দরজায় নক করে বেশ কয়েকবার৷ প্রাণোকে দরজা খুলতে না দেখে স্মরণ ফিরে যেতে নিলে দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পেছনে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে প্রাণো দাঁড়িয়ে, চোখে কাজল লেপ্টে আছে৷ প্রাণো যে কেঁদেছে তা বেশ বুঝতে পারছে স্মরণ৷ প্রাণো ভাঙা গলায় স্মরণ কে বলল,

"আ-আপনি?"

"স্যরি প্রাণো আমার জন্য তুমি আপসেট হয়ে গেলে৷"

"ইট'স ওকে।"

"তো ভিতরে যেতে বলবে না? বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে?"

প্রাণো দীর্ঘ শ্বাস ফেলে স্মরণ কে বললো,

"স্যরি! ভিতরে এসো।"

স্মরণ ভিতরে ঢুকে বেতের চেয়ারে বসে৷ প্রাণো তখন বলে,

"এখানে না বসে ব্যালকনিতে গিয়ে বসি চলো?"

স্মরণ মিষ্টি করে হেসে বলে,

"ওকে।"

সূর্য ডুব ডুব হয়ে আছে৷ আকাশ'টা বেশ লাল কমলা রঙ ধারন করেছে৷ মেঘ গুলো তার-ই মাঝে ভেষে বেড়াচ্ছে৷ তার নিচে সবুজের সমারহ৷ অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে দু'জনের মনে, এমন পরিবেশে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে প্রাণো আর স্মরণ৷

"প্রাণো, তোমার কি মন খারাপ?"

"একটু।" (নির্লিপ্ত গলায় বললো প্রাণো)

"আমি তোমায় সত্যি আমার বন্ধু ভাবি প্রাণো৷ তুমি যদি আমায় বন্ধু ভেবে থাকো তাহলে সবটা আমাকে বলে হালকা হতে পারো।"

প্রাণো জোর পূর্বক ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে স্মরণকে দেখতে লাগলো। মানুষটা একটু গম্ভির হলেও খুব একটা খারাপ না৷ নাহলে এভাবে স্যরি বলার জন্য ছুটে এতো না৷ প্রাণো মনে মনে ভিষণ লজ্জিত হলো এটা ভেবে তখন এই মানুষটার সাথে ভিষণ খারাপ ব্যবহার করেছে৷ কিন্তু প্রাণ নামটা শুনে যে সাজিতের কথা মনে পড়ে যায়৷ এটা কি করে বোঝাবে!

"প্রাণো যদি ইচ্ছে না হয় তাহলে তোমায় কিছু বলতে হবে না৷ আচ্ছা তোমার সম্পর্কে কিছু বলো৷"

"আমার নাম তাসনিম কবির প্রাণো৷ অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি৷ বাবা জুনাইদ কবির একজন বিজনেসম্যান৷ মা নিশিতা বেগম একজন গৃহিনী৷ আমি মেজো আর আমার দাভাই সাদমান কবির বর্তমানে বাবার সাথে বিজনেসে হাত দিয়েছে৷ আর একটা ছোট বোন আছে তানিশা কবির প্রিয়া৷ এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে৷"

"এবার আপনার, স্যরি তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?"

প্রাণো যে তার মন খারাপের কারণ লুকাতে সহজ হওয়ার অভিনয় করছে সেটা দেখে হাসি পাচ্ছে স্মরণের।

← পর্ব ০২ পর্ব ০৪ →

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন