স্নিগ্ধ ভালোবাসা - আতিয়া আদিবা - অনু গল্প

পড়ুন আতিয়া আদিবা'র লেখা একটি ছোট রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প স্নিগ্ধ ভালোবাসা
স্নিগ্ধ ভালোবাসা
স্নিগ্ধ ভালোবাসা by আতিয়া আদিবা

গ্নতা সবাই পচ্ছন্দ করে কিন্তু নগ্ন হওয়া মানুষটাকে কেউ পচ্ছন্দ করে না - ছোট্ট একটা লাইন সেদিন আমার হবু স্বামীকে আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম। তবুও ছেলেটা বিয়েতে রাজী হয়ে গেলো। বেশ অবাক হয়েছিলাম। আজ বিয়ের রাতেও তার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে না সে আমাকে স্পর্শ করবে। মখমলের বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছি। রেহাল তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে।

_ কিছু বলতে চান?

_ একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

_ জ্বি বলুন।

_ সেদিন তুমি আমাকে একটা কথা বলেছিলে নগ্নতা নিয়ে। কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। তবে পুরো ব্যাপারটা এখনো ধরতে পারি নি। যদি কোনো সমস্যা না থাকে, বিষয়টা একটু খুলে বলা যাবে?

_ হ্যাঁ যাবে।

মাথার ঘোমটা সরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। চোখ দুটো মনের অজান্তেই ভিজে উঠেছে। রেহালের চোখে চোখ রেখে বললাম,

_ আমি কুমারী নই।

_ সেটা বুঝতে পেরেছি। এটার পেছনের কারনটাই জানতে চাচ্ছিলাম। কাউকে ভালোবাসতে?

_ না।

ভ্রু কুঁচকে একরাশ বিস্ময় নিয়ে রেহাল বললো,

_ তবে?

_ ক্লাস নাইনে একবার নানু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন মার দুঃসম্পর্কের এক ভাই আমার সাথে….। কথা শেষ করতে পারলাম না। রেহাল আমার হাত ধরলো। নরম গলায় বললো,

_ পরিবার থেকে আইনের সহায়তা নিয়েছিলে?

_ না। আমার সম্মান রক্ষার্থে তা আর সম্ভব হয় নি। পরিবারের মুরুব্বি যারা ছিলেন তারা বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে দেন।

_ তুমি অনেক সাহসী, নন্দিতা। একটু বসো আমি আসছি। রেহাল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। শাওয়ার ছেড়ে পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে ভালো হতো। তবে ইচ্ছে করছে না। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে, পোশাক পালটে বের হলাম। ঠিক সেসময়ই রেহাল ঘরে ঢুকলো। হাতে একটি বাদামী রঙের প্যাকেট। আমার চুল ছাড়া দেখে রেহাল বললো,

_ জলদি করে খোঁপা করে নাও দেখি! একটা জিনিস এনেছি।

আমি অবাক হয়ে রেহালের দিকে তাকালাম। ওর চোখ দুটো আনন্দে চিকচিক করছে। হাত ঘুরিয়ে খোঁপা করলাম। রেহাল কাছে এসে প্যাকেট থেকে কাঠমালতির গাজরা বের করলো। খুব মনযোগ দিয়ে আমার খোঁপায় গেঁথে দিতে দিতে বললো,

_ অতীত সবার জীবনেই কোনো না কোনো দাগ কেটে যায়। সেটা ধরে না বসে থাকাই ভালো। আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু হলো। তাই অনুরোধ করে বলছি, বর্তমান নিয়ে বাঁচো। আর নন্দিতা, নগ্নতা সবার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। আমি কখনই চাইবো না ভালো না বেসে তোমার শরীর স্পর্শ করতে। আজ যদি বলি তোমায় আমি ভালোবাসি, মিথ্যে বলা হবে। তোমার সাথে পরিচয় মাত্র কয়দিন হয়েছে। এর মাঝে বিয়ের ঝামেলা তো ছিলোই। তবে যদি বলি ভালোবাসতে শুরু করেছি, এ কথায় কোনো খাঁদ নেই।

আচমকা রেহাল খুব উৎসুক হয়ে বললো,

_ এক কাজ করা যায়, নন্দিতা। চলো আমরা আজ থেকে প্রেম করি।

রেহালের গাজরা পরানো শেষ। রেহালের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলাম,

_কিভাবে?

রেহাল দৃষ্টি স্থির রেখে খানিকবাদে বলে উঠলো,

_ তোমায় সুন্দর লাগছে।

লজ্জা পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। বিষয়টা বুঝতে পেরে রেহাল কথা ঘুরিয়ে বললো,

_ কিভাবে প্রেম করবো? এই ধরো রাতে দুজন পাশাপাশি শুয়ে চ্যাটিং করবো। ছাদে গিয়ে জোৎস্না পোহাবো। সপ্তাহে একদিন ডেট এ যাবো। মাসে দু'বার ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, আর যেদিন খুব তীব্রভাবে ভালোবাসবো তোমায়, সেদিন একটা সারপ্রাইজ আছে।

কথাগুলো বলার ফাঁকে আমার নাক টিপে দিলো রেহাল। চোখের পানি কোনোভাবেই সামলে রাখতে পারছিলাম না। লুকানোর জন্য হলেও রেহালের বুকটা আমার চাই। খানিকটা জড়তা নিয়ে রেহালকে বললাম,

_ আমি কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি? রেহাল ছলছল চোখে কাছে এসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমায়। সত্যিই! বড় শান্তির জায়গা রেহালের এই বুকখানি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন