অর্ণব অপেক্ষা করছে জাহ্নবীর জন্য। একসঙ্গে বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে বের হবে তারা। জাহ্নবী অস্বস্তি বোধ করছে। কখনো কোনো পুরুষ মানুষের সঙ্গে বাইরে বের হয়নি সে!
বাসা থেকে বের হয়ে জাহ্নবী উবার থেকে গাড়ি ডেকে নিলো। অর্ণবের ধারণা ছিল দুজনকে একই রিকশাতে যেতে হবে। জাহ্নবীর এই কাজে বেশ চমকে গেছে অর্ণব।
গাড়িতে দুরত্ব বজায় রেখে বসল দুজনে। অর্ণব আড়চোখে জাহ্নবীর দিকে তাকিয়ে বলল, ' আপনাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম তাইনা আপু?'
' আরে না।'
' আপু, আমরা কীভাবে বাসা খুঁজবো? টু লেট দেখে দেখে যাবো?'
' আমি আসলে বুঝতে পারছি না।'
জাহ্নবী গম্ভীর মুখে বসে রইল। এরকম পরিস্থিতিতে কী বলা উচিৎ ওর জানা নেই। তাছাড়া অর্ণবের মুখে আপু ডাকটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
ঢাকা শহরের অতি জনপ্রিয় শব্দ ট্রাফিক জ্যাম। এই জ্যাম শব্দের সঙ্গে ঢাকাবাসীর জীবন যেন আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেপ্টে আছে। সেই শব্দের কবলে পড়ল ওরা। গাড়ি এমনভাবে একই জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে রইল যে, দুজনেরই ইচ্ছে করতে লাগল গাড়ি থেকে নেমে এই জ্যাম ছেড়ে পালিয়ে বাঁচি।
অর্ণব বলল, 'আপু, আপনি কী রাগ করছেন?'
'না তো। কেন?'
'আপনাকে অযথা কষ্ট দিচ্ছি।'
'এই কষ্ট আপনিও পাবেন। ঢাকায় একেবারে চলে আসুন, জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে আপনার।'
'তাহলে কী ঢাকায় না এলেই ভালো হবে?'
অর্ণব জাহ্নবীর চোখের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে কথাটা বলল যে, জাহ্নবীর বুক ধক করে উঠল। মুহুর্তের জন্য মনে হল, অর্ণব কথাটা তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে। জাহ্নবী মনেমনে নিজেকে গালি দিলো। মনটা তুলোর মত নরম হয়ে আছে তার। সামান্য ব্যাপারেই প্রেমে পড়ার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে। কখন যে টুপ করে কারও প্রেমে পিছলে পড়ে যাবে, সেই দুশ্চিন্তায় মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকাল জাহ্নবী।
গাড়ির পাশে একটা বাচ্চা এসে দাঁড়াল। ফুল বিক্রি করতে এসেছে। একটা বালতিতে কিছু গোলাপ ফুল আর সাদা বেলী ফুলের মালা। জাহ্নবী বেলীফুলের একটা মালা কিনে নিলো। ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বাচ্চাটাকে দশ টাকা বেশী দিয়ে দিলো সে। একটা ফুল কিনে অর্ণবকে দেয়া যেতেই পারে। কিন্তু গোলাপ ফুল ভালবাসার প্রতীক, এটা জাহ্নবী জানে। একটা মেয়ে একটা ছেলেকে গোলাপ ফুল কিনে দিয়েছে এটা তার নিজেরই ভাবলে কেমন যেন লাগবে। আর বেলীফুল তো মেয়েদের ফুল, এটা ছেলেদেরকে দেয়া যায় না। জাহ্নবী বেলীফুলের মালাটা হাতে পেঁচিয়ে বসে রইল।
অর্ণব বলল, 'কী ফুল এটা?'
'বেলী।'
' খুব সুন্দর ঘ্রাণ।'
জাহ্নবী অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। মনে হল, একটা বেলীফুলের মালা অর্ণবকে দিয়ে সে তো বলতেই পারত, 'ফুলটার ঘ্রাণ খুব সুন্দর। শুঁকে দেখুন।'
যদিও জাহ্নবী এতটা আত্মবিশ্বাসী নয়। কারও সাথে সহজে মিশতে পারে না সে।
জ্যাম ছেড়ে দিলে দ্রুত লালমাটিয়ায় পৌঁছে গেল ওরা। গাড়ি হতে নেমে গনগনে রোদের উত্তাপে দুজনেরই মন ভেঙে যায় যায় দশা। অর্ণব জাহ্নবীকে বলল, 'আপু, আপনি বরং বাসায় চলে যান। আমি একাই বাসা খুঁজে নিবো।'
জাহ্নবী মনেমনে বলল, 'আর একবার আপু ডাকলে সত্যি সত্যি বাসায় চলে যাবো।'
জাহ্নবী এভাবে কখনোই বলতে পারবে না। মুখে বলল, 'আপনাকে একা রেখে গেলে মা আমাকে রাগারাগি করবে।'
' তাহলে চলুন বাসা খুঁজি।'
অর্ণবের লজ্জা করছে। একটা মেয়ের সঙ্গে বাসা খুঁজতে বেরিয়েছে সে, কথাটা শুনলে ওর বন্ধুরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে। সারাক্ষণ মজা করবে ওর সাথে। একটা ছেলে তো তার সঙ্গেই বাসা খুঁজতে যায়, যার সঙ্গে বাসাটাকে ঘর বানিয়ে তুলবে সে।
অর্ণবের ইচ্ছে কয়েক মাস চাকরি করার পর একটা বিয়ে করবে। ভীষণ লক্ষী আর ঘরপ্রিয় একটা মেয়ে। যেসব মেয়েদের সংসারে মন নেই, তাদের সাথে সংসার করে আনন্দ পাওয়া যায় না। বউ শাড়ি পরে এ ঘর, ও ঘর ঘুরে বেড়াবে। অর্ণবের চা খেতে ইচ্ছে হলে গলা বাড়িয়ে ডাকবে, 'বউ, ও বউ, এক কাপ চা দিয়ে যাও তো।'
সঙ্গে সঙ্গে চা নিয়ে হাজির হবে বউ। অর্ণব তাকে বলবে, 'এক কাপ কেন? তোমার চা কই?'
বউ বলবে, 'তুমি তো এক কাপ ই দিতে বলেছ। এখন একা একা খাও।'
অর্ণব তখন মন খারাপ করা সুরে বলবে, 'না না। তুমিও চা নিয়ে আসো। নয়তো এইযে চায়ের কাপ রেখে দিলাম। খাবোই না চা।'
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে শব্দ করে হেসে উঠল অর্ণব। জাহ্নবী অবাক চোখে তাকাল অর্ণবের দিকে। এই কাঠফাঁটা রোদে উত্তপ্ত ফুটপাত ধরে তারা হাঁটছে। গরমে কুলকুল করে ঘামছে জাহ্নবী। এরমধ্যে মজার কী খুঁজে পেলো অর্ণব?
জাহ্নবীর প্রশ্নবোধক চাহনি দেখে অর্ণব লজ্জা পেল। বলল, 'সরি আপু। আমি আসলে একটা কথা ভেবে হাসছিলাম। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।'
জাহ্নবীর রাগ হল। হাসার কারণ না জানার জন্য নয়, আবারও আপু ডাকটা শোনার জন্য। মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার পাশে একটা লিফলেট দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল জাহ্নবী।
'ব্যাচেলর রুমমেট চাই'
৬ষ্ঠ তলায় ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে একজন রুমমেট আবশ্যক। আলোবাতাসপূর্ণ খোলামেলা বাসা। সম্পূর্ণ টাইলসকৃত। কল দিন - ০১৯৪..
জাহ্নবী দাঁড়িয়ে রইল লিফলেটের সামনে। অর্ণব দ্রুত নাম্বার টুকে নিয়ে কল করল। বাসা এখনো ভাড়া হয়নি। অর্ণব বলল, 'আপনি একটু দাঁড়ান, আমি দেখে আসি বাসাটা।'
অর্ণবের বুদ্ধি দেখে রাগ হল জাহ্নবীর। এই রোদে, ফুটপাতে কোথায় দাঁড়াবে সে! নিশ্চিত মাথামোটা না হলে কেউ এভাবে বলে না। জাহ্নবী জানতে চাইলো, 'বাসা কোনটা আপনি চিনেন?'
'না। বলল যে, বি ব্লক। নয় বাই এগারো।'
' সেটা এখান থেকে অনেক দূর। আসেন আমার সঙ্গে।'
হাঁটতে হাঁটতে বাসাটা খুঁজে বের করল তারা। জাহ্নবীকে বাসার নিচে রেখে অর্ণব ওপরে গেল রুম দেখতে। মিনিট তিনেকের মাথায় হাফাতে হাফাতে নিচে এসে বলল, 'বাসা তো পছন্দ হইছে। অনেক আলোবাতাস, অনেক সুন্দর। ভাড়া পাঁচ হাজার। এডভান্স তিন হাজার।'
'আপনি কি এডভান্স দিয়ে এলেন?'
'না এখনও দেইনি। ভাবলাম আগে আপনার মতামত শুনি।'
জাহ্নবী হেসে বলল, 'আমার মতামত শুনলে এই বাসা আপনার নেয়া হবেনা।'
'কেন?'
'আপনি যেভাবে হাঁফাচ্ছেন। প্রতিদিন অফিস করে বাসায় ফিরে ছয় তলায় ওঠা সম্ভব না। এনার্জি থাকবে না।'
'আরে! দারুণ কথা বলেছেন তো। আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি। আমার তো বাসাটা এতটাই পছন্দ হয়েছে যে, আমি এডভান্স দিয়েই ফেলতাম।'
'হা হা। আমার মতামত শুনতে চাইলেন তাই বললাম। এখানে আরও ব্যাপার আছে, আপনার ছয় তলার ওপর আর ফ্ল্যাট নেই। গরমে থাকতে পারবেন না।'
অর্ণব অবাক হয়ে বলল, 'কীভাবে জানলেন?'
'গুণে দেখেছি। আর টপ ফ্লোরে অনেক গরম হয় সেটা তো আপনি জানেন।'
'থ্যাংক ইউ আপু। আপনি না থাকলে আমি একটা ভুল করে বসতাম।'
'যান ভুল করুন। এডভান্স দিয়ে আসুন।'
খানিকটা রাগত স্বরে কথাটা বলে হাঁটতে শুরু করল জাহ্নবী। অর্ণব কিছুতেই বুঝতে পারল না সে রাগ করার মতো কী বলেছে!
একটা দেয়ালে বেশ কয়েকটা লিফলেট দেখে জাহ্নবী বলল, 'সব গুলো নাম্বারে কল দিন। বাসা কয় তলায়, এক রুমে কয়জন, ভাড়া কত সব শুনে তারপর সেটা দেখতে যাবেন।'
জাহ্নবীর কথামতো সব নাম্বারে বিস্তারিত শুনে একটা পছন্দসই বাসার খোঁজ পাওয়া গেল। তৃতীয় তলায়, ব্যাচেলর ফ্ল্যাট। এক রুমে দুইজন। ভাড়া তুলনামূলক বেশী। তবে অর্ণবের মনে হচ্ছে এই বাসাটাই তার জন্য সঠিক হবে।
খুশিমনে বাসা দেখতে গেল অর্ণব। বাসার নিচে একজন ছেলে এসেছে অর্ণবকে ওপরে নিয়ে যেতে। জাহ্নবীকে দেখে বলল, 'আপু আপনিও আসুন। সমস্যা নেই।'
জাহ্নবী ইতস্তত করল। ব্যাচেলর বাসায় সে যেতে চায় না। ছেলেটা অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বলল, 'প্রথম দিনেই গার্লফ্রেন্ড নিয়া আসছো ব্রাদার? সমস্যা নেই। আমাদের বাসায় গার্লফ্রেন্ড এলাউ। বাড়িওয়ালা ওমানে থাকে। যে চাচা দেখাশোনা করে, আমরা ওনাকে প্রতিমাসে কিছু হাতখরচ দেই আর মাঝেমাঝে এটা ওটা খাওয়াই। মনে করো ওনার পেছনে তোমার কিছু খরচ হবে এইটা হইল এক্সট্রা খরচ। এর বাইরে এক্সট্রা কোনো খরচ নাই।'
ছেলেটার কথা মন দিয়ে শুনছিল অর্ণব। প্রথম সাক্ষাতেই এত কথা বলে ফেলল ছেলেটা। অর্ণব বাসাটা আদৌ নেবে কিনা, সেটা নিশ্চিত না হয়েই। কিন্তু জাহ্নবীকে অর্ণবের প্রেমিকা ভাবার কি কোনো যৌক্তিকতা আছে?
বাসাটা বেশ বড়। তবে নোংরা। কারও বিছানার সঙ্গে মশারি কাৎ হয়ে ঝুলে আছে, বিছানার ওপর জড়ানো চাদর ও মোচড়ানো কাপড় চোপর। যেন সদ্য বিবাহিত দম্পতিদের ভোরবেলার বিছানা।
ঘরের মাঝখানে হাড়ি পাতিল জমানো, ভাত খেয়ে প্লেট ফেলে রেখে গেছে কেউ। প্লেটে উচ্ছিষ্ট মাছের কাঁটা, তরকারির শুকিয়ে যাওয়া ঝোল। অর্ণব আসলে বুঝতে পারছে না, সে এই বাসা কী করে পছন্দ করবে!
একটা ছেলে মোবাইল টিপতে টিপতে বলল, 'কোন ভার্সিটি? না জব?'
' জব।'
'নতুন জব না অভিজ্ঞতা আছে?'
'নতুন। আমি একচুয়েলি ঢাকাতেই নতুন।'
'তাহলে এইসব দেখতে একটু আনইজি লাগবে। হা হা হা। কয়েকদিন থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।'
'কিন্তু আমি অনেক গোছানো।'
'তাহলে আমাদের বাসাটা তুমি গোছাইয়া রাইখো। সবাই মিলে টাকা পয়সা কিছু দেবো নে।'
কথাটা বলল প্রথম সাক্ষাতের ছেলেটা। অর্ণব বুঝল সে মজা করে বলছে। অর্ণবও হেসে বলল, 'আমি এখানে এলে বাসার চেহারাটাই বদলে যাবে।'
'তাহলে তো বাসা ভাড়া না, তোমাকেই আমাদের ভাড়া করে আনা দরকার।'
'হা হা। আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।'
মোবাইলে ব্যস্ত থাকা ছেলেটা বলল, 'ভাল লেগেছে কোন দিক থেকে? সৌরভ ওরে একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই বাসায় উঠাইয়ো। এখানে গে এলাউ না।'
তারমানে প্রথম সাক্ষাতের ছেলেটার নাম সৌরভ। সে হাসতে হাসতে বলল, 'ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। গার্লফ্রেন্ড নিয়াই আসছে বাসা দেখতে। কত্ত কেয়ারিং দেখছ?'
'তাহলে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়া আসো। চা পানি কিছু খাওয়াইয়া দাও।'
অর্ণব বিস্ময় ভরা বড়বড় চোখে একবার সৌরভের দিকে তাকাচ্ছে, আর একবার মোবাইল টিপতে ব্যস্ত থাকা ছেলেটার দিকে।
সৌরভ বলল, ' ঘাবড়াই গেছো না? আরে ভয় পেও না। আমরা সবাই একটু বেশীই ফ্রি। প্রতিদিন মনে করো একসঙ্গে চা খেতে যাই। আড্ডা দেই। ঢাকা শহরে রুমমেট তো অনেক পাবা, এমন পাবা না।'
'আপনারা আসলেই অন্যরকম।'
'তুমি চিটাগাংয়ের?'
মোবাইল থেকে এই প্রথম চোখ তুলল ছেলেটা।
অর্ণব উত্তর দিলো, 'জি।'
'আমিও। আমার বাসা বহদ্দারহাট।'
'সত্যি! তাহলে তো ভালোই হল।'
'খুব খুশি হইছো দেখি। এত খুশি হওয়ার কিছু নাই। আমার বাসা বহদ্দারহাট না। আমার বাসা, জন্ম সব ঢাকায়।'
অর্ণব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। হো হো করে হাসতে লাগল সৌরভ। বহদ্দারহাটের ছেলেটা উঠে এসে অর্ণবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বলল, 'আমি রাতুল।'
'আমি অর্ণব। আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। আমাকে এখন নিচে যেতে হবে। একজনকে দাঁড় করিয়ে এসেছি। আপনাদের সঙ্গে ফোনে বিস্তারিত কথা বলবো।'
'ফোনে অত কথা বলার টাইম আছে ব্যাটা?' সৌরভ বলল কথাটা।
রাতুল বলল, 'এখনো তো রুমই দেখলেন না। আসুন রুম দেখাই।'
অর্ণবকে পাশের একটা রুমে নিয়ে গেল রাতুল। এই রুমটা বেশ পরিচ্ছন। দুইপাশে দুটো সিঙ্গেল বেড। একটা বিছানার তোশক নেই।
রাতুল বলল, 'এইটা আমার রুম। রুমমেট আমারই দরকার। আপনি ফোনে আমার সঙ্গেই কথা বলেছেন। আপনাকে শুধু একটা তোশক কিনতে হবে। তাছাড়া সবকিছু আছে বাসায়। রান্নাবান্না করার জন্য খালা আছে। আপনি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখুন। চার রুমের এই ফ্ল্যাটে সবাই আমরা অনেক ক্লোজ বলা যায়। এই রুমমেট চলে যাচ্ছে কারণ ওর সামনে বিয়ে। নয়তো আমার মনে হয় কেউ এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাবে না।'
হাসল রাতুল। অর্ণব মুচকি হেসে ঘরের চারপাশটা দেখল। রাতুলের টেবিলের ওপর বইখাতা অনেক। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। গায়ে একটা টিশার্ট ও কোয়ার্টার প্যান্ট। চেহারা দেখে মনে হয় ভীষণ মেধাবী ছেলে। বাসার চেয়ে বাসার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে অর্ণবের বেশী ভালো লেগেছে। এবার আর জাহ্নবীর মতামতের প্রয়োজন বোধ করল না অর্ণব। নিজে থেকেই অগ্রীম টাকা দিয়ে বেরিয়ে এলো।
জাহ্নবী দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে। অর্ণব হাত জোর করে বলল, 'ক্ষমা করুন আমায়।'
অর্ণবের মুখে হাসি দেখে জাহ্নবী জানতে চাইলো, 'এত খুশি কেন আপনি?'
'বাসা পছন্দ হয়েছে। এটাতেই উঠবো।'
'সবকিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তো?'
'হুম। সবদিক থেকেই এটা ভালো লেগেছে।'
'আমার মনেহয় আরও বাসা দেখা যেতো। আরও দেখবেন?'
'না। আপনাকে আর কষ্ট দেবো না। চলুন আমরা কোথাও বসি। অনেক কষ্ট দিয়েছি।'
' মাথার তালু গরম হয়ে আছে। আমি আইসক্রিম খাবো।'
'চলুন ওই দোকানে দেখি।'
'মহিলা কলেজের কাছে একটা আইসক্রিমের দোকান আছে। ওখানে যাবো।'
'চলুন তাহলে।'
জাহ্নবীর হঠাৎ করেই মন ফুরফুরে হয়ে উঠল। এতটা সহজ সাবলীলভাবে কখনো কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সে। ধীরেধীরে নিজের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে তাহলে!
জাহ্নবী হাত উঁচিয়ে বলল, 'ওইযে ওইটা আইসক্রিমের দোকান। অনেক রকম আইসক্রিম পাওয়া যায় ওখানে।'
.
.
.
চলবে..........................................................................