হাওয়াই মিঠাই |
হলে ফিরেও মীরার কান্না থামেনি। বিছানায় শুয়ে কাঁদছে তাে কাঁদছেই। রাতে খেতেও উঠলাে না। কী হয়েছে সে বিষয়ে কয়েকবার জানতে চাইলাে সুইটি-তাহিয়া। তারা বেশ চিন্তিত, তবে মীরা কাউকেই কিছু বলতে পারলাে না। আসলে কারাে কথা তার কর্ণপাতই হয়নি। তার মাথায় তখন শুধুই রাফির চিন্তা ঘুরছে।
রাফি মীরার জীবনে ঝড়াে হাওয়ার মতােই এসেছিল, আজ থেকে ৯ বছর আগে। মীরার বয়স তখন ১৬। ক্লাস টেনে পড়তাে। তখনকার মীরা আর আজকের মীরার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। তখন সে ছিল শিমুল ফুলের মােচা ফেটে সদ্য ছড়িয়ে পড়া তুলাের মতাে। কেউ চোখ গরম করে তাকালেই কেঁদে দুনিয়া ভাসাতাে। এমনকি তার সামনে অন্য ভাইবােনদের বকলে বা মারলেও সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতাে। তার এই বিশেষ গুণের জন্য তার বড় ভাই পিয়াল তাকে একটি বিশেষ নাম দিয়েছিল। সেই নাম ছিল ভ্যাঁমনি! নামটি পিয়াল দিলেও বাবা মায়ের অগােচরে সেই নাম নজু চাচ্ছ, মুমু ফুপি থেকে শুরু করে ছােট বােন ইরা এমনকি কাজের মেয়ে পর্যন্ত বাসার প্রায় সকলেই ব্যবহার করতাে। ভ্যাঁমনি বলে ডাকলেই মীরা দৌড়ে যেত। কেউ কোনাে কাজ করে দিতে বললেই সাথে সাথে লাফিয়ে পড়ে তা করে দিতাে। তার ভাই বােনেরা সারাদিন তাকে দিয়ে কাজ করাতাে। জামা ইস্ত্রী থেকে জুতাে পালিশ সবই সে খুশিমনে করে দিতাে। শুধু যদি কেউ বলতাে, বাহ রে ভ্যাঁমনি! খুব সুন্দর করে করেছিস তাে! ব্যস এইটুকু কথাতেই তার মুখে বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে উঠতাে!
মীরার ফ্যামিলি মােটামুটি রক্ষণশীলই ছিল, তাছাড়া মীরার বুদ্ধিশুদ্ধি কম বিধায় তার একা বাইরে যাওয়া একেবারেই নিষেধ ছিল। যার তার সাথে মেশাও বারণ ছিল। তাই বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে তেমন কোনাে ধারণা তার ছিল না। জয়েন ফ্যামিলি এবং একই সাথে অনেকগুলাে ভাইবােন থাকায় টিভিতেও সে কখনাে নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিছু দেখতে পারতাে না অথবা বলা ভালাে, তার কোনাে পছন্দ তৈরি হওয়ার সুযােগই হয়নি। বইটইও তেমন একটা পড়েনি সে অথবা বলা ভালাে, পড়ার সুযােগ পায়নি। বড়রা তাকে যা নিষেধ করতাে তা সে কখনােই করতাে না।
রাত জেগে পড়াশােনার অভ্যাস ছিল মীরার। কিন্তু সাথে একটা এফএম রেডিও আবশ্যক ছিল। তখনকার ছেলেমেয়েরাই ভাল বুঝবে এফএম রেডিওর মত জনপ্রিয় আর কিছুই ছিল না তখন। মীরা তার বড় বােন নীরার মােবাইল নিয়ে এফএম শুনতাে। কিন্তু নীরার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মীরা পড়লাে বিপদে। বড় ভাইয়া রাতের বেলা মােবাইল দিতে চাইতাে না। পরে মীরার বাবা ঠিক করলেন মেয়ে যখন গান শুনতে এতােই ভালােবাসে, মেয়েটাকে একটা এফএম রেডিও কিনে দেবেন। পরে আবার ভাবলেন কদিন পর তাে মােবাইল ফোনই কিনে দিতে হবে তাই একেবারেই মােবাইল কিনে দিলেন। মােবাইল পেয়ে যতটা না খুশি হলাে মীরা তার চেয়েও বেশি খুশি হলাে ত্রিশা। ত্রিশা ছিল মীরার বেস্ট ফ্রেন্ড। মীরাদের বাসার নিচতলায় তারা ভাড়া থাকতাে।
মীরার নিজস্ব ঘর বলে কিছু ছিল না। মুমু ফুপির স্বামী বিদেশে থাকতাে তাই সে তার ঘরে একা। আবার নীরা আপুও একা ঘুমাতে ভালােবাসতাে। তাই সে তার ঘরে একা থাকতাে। ইরা বাবা মায়ের সাথেই ঘুমাতাে। মীরা আজ মুমু ফুপির ঘরে তাে কাল নীরা আপুর ঘরে ঘুমাতাে। কিন্তু দুজনের কেউই মীরাকে ঘুমাতে নিতে চাইতাে না। যেদিন কেউ নিতাে না সেদিন মীরা ড্রয়িং রুমে ঘুমাতাে। একদিন মীরার মা জাহানারা মেয়েকে ড্রয়িং রুমে ঘুমাতে দেখে ফেললেন। ওখানে ঘুমানাের কারণ জানতে চাইলে মীরা সরল মনে সব বলে দিল। জাহানারা বললেন, এরপর থেকে এমন হলে বাবা মায়ের ঘরে চলে যেতে। তবে এরপর অবশ্য আর এমন হয়নি। কারণ জাহানারা সেবার নীরা কে বকেছিলেন খুব। তার কিছুদিন পর নীরার বিয়ে হয়ে গেল। এরপর থেকে নীরার ঘরে মীরা আর ইরা থাকে। তবে তখন সে ঘরে ছােট হওয়া সত্ত্বেও ইরার রাজত্বই বেশি ছিল। মীরা নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ঘুমুতে পারে বলেই সে মহাখুশি। এরচেয়ে বেশি কিছু তার প্রয়ােজনও নেই অবশ্য।
একদিন বিকেলবেলা ত্রিশা এলাে আড্ডা দিতে। ঘরে ইরা ছিল বলে ত্রিশা মীরাকে ছাদে যাবে বলে ডেকে নিলাে। ছাদে পা রাখতে যাবে ঠিক এমন সময় ত্রিশা মীরাকে সিঁড়ি ঘরে টেনে আনলাে। মীরা বলল,
"কী হলাে?"
"ছাদে যাব না। অন্য ছাদ থেকে কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা আছে। এখানেই থাকি। তাের মােবাইলটা বের কর।"
মীরা ঠোঁট উল্টে বলল,
"মােবাইল তাে ঘরে।"
ত্রিশা ডান হাতে কপাল চাপড়ে বলল,
"হাঁদারাম! তােকে না ইশারা করলাম মােবাইলটা নিয়ে আসতে?"
মীরা দাঁতে জিভ কেটে বলল,
"আয়হায়! আমি তাে খেয়ালই করিনি রে। তুই একটুখানি দাঁড়া আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।"
মীরা ধাপ ধাপ করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এক মুহুর্তের মধ্যেই আবার মােবাইল নিয়ে হাজির হলাে। তারপর সেটা ত্রিশার হাতে দিতে দিতে বলল,
"কী করবি মােবাইল দিয়ে?"
ত্রিশা হাতের মুঠোয় মুড়ে রাখা একটা কাগজ বের করে চোখ নাচিয়ে বলল,
"দেখ ভাইয়ার মােবাইল থেকে এই নাম্বারগুলাে চুরি করে এনেছি। সব ভাইয়ার ফ্রেন্ডদের নাম্বার। সবগুলাে একেবারে হিরােদের মত দেখতে।"
মীরা অবাক হয়ে বলল,
"এগুলাে দিয়ে কী করবি?"
"বা রে কী করব আর? ফোন করে বিরক্ত করবাে। এই দ্যাখ আমি কার্ড কিনে এনেছি।"
"আমরা কেন ওদের বিরক্ত করবাে?"
"উফ মীরা তুই না কিছু বুঝিস না! মােবাইল ফোন পাওয়ার যােগ্যই না তুই।"
মীরা মন খারাপ করে চেয়ে রইলাে। ত্রিশা লাফ দিয়ে পড়ে মােবাইল নিয়ে কার্ড রিচার্জ করলাে। রিচার্জ করতেই দেখলাে মােবাইলে আগে থেকেই ১০০ টাকার উপরে ব্যালেন্স ছিল। ত্রিশা অবাক হয়ে বলল,
"আরে তাের মােবাইলে যে ব্যালেন্স ছিল সেটা আগে বললি না কেন?"
"তুই তাে জিজ্ঞেস করিসনি।"
ত্রিশা আবার কপাল চাপড়ে বলল,
"উফ আল্লাহ! এই মেয়েটার মাথায় একটু বুদ্ধি দাও!"
মীরা ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাে। প্রথম নম্বারটাতে ডায়াল করলে রিং বেজে থেমে গেলাে, দুবার কল করার পরেও কেউ ধরলাে না। পরের নম্বরটাতে ডায়াল করতেই একজন ধরলাে,
"হ্যালাে কে বলছেন?"
ত্রিশা লাউডস্পিকারে দিয়ে বলল,
"কে মানে? তুমি আমাকে চিনতে পারছাে না?"
ছেলেটা অবাক হলাে,
"স্কিউজমি! কে আপনি?"
"জান! তােমার কী হয়েছে? তুমি আমাকে চিনতে পারছাে না কেন?"
"আমাকে জান বলার মত কেউ নেই আপু, হয় আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন অথবা নাটক করছেন।"
"ট্রাস্ট মি শুভ আমার এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমাকে চিনতে পারছাে না!"
ত্রিশা এবং শুভর কনভার্সেশন শুনে মীরা ওড়নায় মুখ চেপে হাসছে। ছেলেটা এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
"আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? কে আপনি?"
"তুমি আমার স্বামী, আমার বাচ্চার বাবা। তােমার নাম আমি জানবাে না? কী হয়েছে তােমার শুভ? তুমি কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছাে?"
এবার ওপাশ থেকে ছেলেটা হেসে দিলাে। তারপর বলল,
"ওয়েলডান। জানিনা আপনি কে? তবে মজা পেলাম। মাঝেমাঝে ফোন করে আমার বউ বাচ্চার খবর দিয়েন। ভাল লাগবে।"
ছেলেটা লাইন কেটে দিতেই মীরা-ত্রিশা হাসিতে ফেটে পড়লাে। ত্রিশা বলল,
"কেমন লাগলাে?"
মীরা হেসে বলল,
"তুই কী চালাক রে! কিন্তু শুভ ভাইয়া তাে দেখি প্রায়ই তােদের বাসায় আসে, তাের ভয়েস চিনে ফেলেনি তাে?"
"আরে নাহ, শুভ ভাইয়ার সাথে আমার তেমন করে কথা হয়নি কখনাে। ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা বাসায় এলে সব তার ঘরের মধ্যেই থাকে।"
"ও আচ্ছা। চল নেক্সট জনকে ফোন কর এবার।"
"আরে না। সবাইকে একদিনে ফোন করা যাবে না। তারা ফ্রেন্ড না? কথায় কথায় এসব কথা উঠলে যদি জানে একই নাম্বার থেকে একই দিনে সবার কাছে ফোন গেছে তাহলে ভাববে কোনাে উদ্দেশ্য নিয়ে ফোন করেছি।"
"হুম তাও ঠিক।"
"তুই কাগজটা রেখে দে। আবার আরেকদিন আরেকজনকে ফোন করব। আর শুভ ভাইয়াকেও ওনার বউ বাচ্চার খবর দিতে হবে তাে।"
আবার দুই বান্ধবী হেসে উঠলাে। ত্রিশা চলে গেলে কাগজটার ভাঁজ খুললাে মীরা। রাফি, শুভ, দীপু, আরিফ এই চারজনের নাম এবং নম্বর লেখা কাগজটাতে। মীরা নম্বারগুলাে ডায়েরীতে তুলে রেখে কাগজটা ছিড়ে ফেলে দিলাে।
সেদিন সন্ধ্যার পর মীরার মােবাইলে আননােন নম্বর থেকে একটা কল এলাে। মীরার মােবাইলে তেমন কোনাে কল আসেনা। নম্বরটা এখনাে বান্ধবী বা কাজিনদের দেয়া হয়নি। কদিন হলাে মাত্র।ফোনটা পেয়েছে। তাই একটু অবাক হলাে। কল রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে একটা ছেলে কণ্ঠ খুব মার্জিত ভাবে বলে উঠলাে,
"হ্যালাে কে বলছেন?"
এই একটা বাক্য শুনেই মীরার কেমন যেন একটা অনুভূতি হলাে। একটা মানুষের কণ্ঠ কী করে এত সুন্দর হয়? নাকি জীবনে প্রথম কোনাে ছেলের কণ্ঠ ফোনে শুনছে বলে? নাহ বিকেলেও তাে শুভ ভাইয়ার কন্ঠ শুনেছে, কাজিনদের কথাও শুনেছে কখনাে তাে এমন লাগেনি! তার মানে সত্যিই ছেলেটার কণ্ঠস্বর সুন্দর! ছেলেটা আবার বলল,
"হ্যালাে, হ্যালাে কে বলছেন প্লিজ?"
মীরা এবার নিশ্চিত ছেলেটার কন্ঠে জাদু মাখানাে রয়েছে। মীরা বলল,
"আমি মীরা।"
ছেলেটা ধমকে উঠে বলল,
"মীরা তুমি! তােমার কি কোনদিন লজ্জা হবে না? আবার তুমি আমাকে ফোন করেছাে? বেয়াদব মেয়ে একটা! আর কী চাই তােমার আমার কাছে?"
মীরা আচমকা ধমক শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল বিছানার উপর। এতক্ষণ যার কণ্ঠ শুনে অজ্ঞান হবার অবস্থা হয়েছিল এখন মনে হচ্ছে তার চেয়ে কর্কশ কণ্ঠ আর দুনিয়াতে নেই। মীরা ফোনটা উঠিয়ে আবার কানে ধরলাে। বলল,
"আপনার বােধহয় কোনাে ভুল হচ্ছে। আপনার সাথে তাে আজই আমার প্রথম কথা হচ্ছে। ইভেন আমার ফোনটাও একদম নতুন।"
এবার ওপাশের কণ্ঠটা একটু নেমে এলাে,
"সরি সরি আপনার মুখে শুধু 'আমি মীরা' শুনে ভয়েসটা ঠিক ক্যাচ করতে পারিনি। আসলে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের নাম মীরা কদিন ধরে সে আমাকে ফোন করে খুব বিরক্ত করছে। আমি তাকে ভেবে আপনাকে বকে দিয়েছি। সরি এগেইন।"
মীরার সেই অনুভূতিটা আবার ফিরে এলাে। এত সুন্দর কন্ঠ সত্যি আগে শােনেনি। নিজেকে সামলে নিয়ে মীরা বলল,
"আচ্ছা সমস্যা নেই।"
"কিন্তু আপনি কে? আই মিন আপনিও মীরা বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনি আমাকে কেন ফোন করেছিলেন? আমি ঠিক চিনতে পারছি না আপনাকে।"
"আমি কখন ফোন করলাম? আপনিই তাে ফোন করলেন।"
"বিকেলে এই নাম্বার থেকে কল এসেছিল কিন্তু ব্যস্ত থাকায় ধরতে পারিনি।"
"না তাে! আমি তাে কাউকে কল করিনি। আমি মােবাইলে শুধু গান শুনি, কাউকে কল করিনা। কোনাে কল আসেওনা। আপনার কল দেখে তাই প্রথমে খুব অবাক হয়েছি।"
"অ্যাঁ? আপনি কি খুব ছােট?"
"না তাে!"
"কিসে পড়েন আপনি?"
"ক্লাস টেনে।"
ছেলেটি হেসে বলল,
"তাহলে তাে শুধু ছােটই না, একেবারে বাচ্চা। তবে কল সত্যি এসেছিল, নাহলে আপনার নাম্বার আমি কোথায় পাব বলুন? আপনি কললিস্ট চেক করুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।"
"আচ্ছা।"
"আচ্ছা না। আমি লাইনে আছি, আপনি চেক করে বলুন।"
মীরা চেক করে দেখলাে সত্যি বিকেলে এই নাম্বারে কল গিয়েছিল। তখনই মীরার খেয়াল হলাে সর্বনাশ! এটা তাহলে ওই রাফি ছেলেটার নাম্বার যে তখন ফোন ধরেনি। পরে ত্রিশা শুভ ভাইয়াকে কল করেছিল। এবার কী হবে? কী বলবে সে? ত্রিশা বারবার করে বলে গেছে এই নাম্বারগুলাে থেকে ফোন আসলে বুঝে কথা বলতে, কথা না বললে আরাে ভাল। তবু ধরা খাওয়া চলবে না। মীরা ঢােক গিলে আবার ফোনটা কানে ধরলাে,
"হ্যালাে, হ্যাঁ দেখলাম বিকেলে দুটো কল গিয়েছিল। কিন্তু আমি তাে কল দেইনি! কিভাবে গেল?"
রাফি হেসে বলল,
"কেন যেন আপনার কথা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে। কিন্তু আপনার ফোন থেকে আপনি ছাড়া আর কে কল দেবে? কোথায় পেলেন আমার নাম্বারটা?"
"সত্যি আমি কল দেইনি।"
"আপনার ফোন কেউ ধরে? ব্যবহার করে?"
এবার একটু সুযােগ পেয়ে যা সে কখনাে করেনি তাই করলাে। বানিয়ে বলল,
"হ্যাঁ বাসার সবাই ধরে, সবাই ব্যবহার করে দরকার পড়লে। কেন?"
"তাহলে অন্যকেউ দিতে পারে। বিকেলে কে নিয়েছিল মােবাইলটা?"
"আমি তাে মােবাইল সাথে নিয়েই ঘুমিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ আগে উঠে দেখি ফোনটা টেবিলের উপর। এর মধ্যে কে নিয়েছে আমি তাে জানিনা।"
যদিও মিথ্যেটা টানতে কষ্ট হচ্ছিল মীরার। রাফি বলল,
"ঠিকাছে তাহলে আর কি করা! যেই হােক, তার দরকার হলে সে আবার ফোন করবে। আমি তাহলে এখন রাখছি।"
"আচ্ছা।"
ফোন রাখার পর মীরার মন খারাপ হলাে। কথা বলতে ভাল লাগছিল। এত সুন্দর কণ্ঠস্বর! ফোন রাখার পর থেকে মীরা শুধু ওই কণ্ঠের কথাই ভাবছিল।
রাতে যখন মীরা পড়তে বসেছে, ওই নম্বর থেকে আবার ফোন এলাে। মীরার হাত কাঁপছে। ছেলেটা আবার কেন ফোন করলাে বুঝতে পারছে না মীরা। ওদিকে ইরা টিভি দেখতে গিয়েছে, যেকোনাে সময় চলে আসবে। মীরা দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলাে। ওপাশ থেকে সেই জাদুমাখা কণ্ঠস্বর ভেসে এলাে,
"হ্যালাে চিনতে পারছেন? আমি রাফি। সন্ধ্যায় আপনাকে ফোন করেছিলাম, যাকে আপনি বিকেলে ফোন করেছিলেন বা আপনার ফোন থেকে অন্যকেউ করেছিল।"
"জি চিনতে পেরেছি, বলুন।"
"রিসার্চ শেষ করেছেন?"
"কিসের রিসার্চ?"
"ওইতাে আপনার নাম্বার থেকে কে আমাকে ফোন করলাে সেই রিসার্চ।"
"ও না, ভুলে গিয়েছিলাম। কাউকেই জিজ্ঞেস করা হয়নি।"
"অসুবিধা নেই, আমি অন্য কারণে ফোন করেছি।"
"কি কারণ বলুন।"
"আমি স্ট্রেইট কথা বলতে পছন্দ করি। তাই সেভাবেই বলছি, আপনার কন্ঠটা খুব মিষ্টি। সন্ধ্যায় ফোন রাখার পর থেকেই আবার শুনতে ইচ্ছে করছিল। আপনি কী না কী ভাবেন তাই ভেবে ফোন করা হয়নি। আমি কি মাঝেমাঝে এই মিষ্টি কন্ঠটা শােনার জন্য ফোন করতে পারি?"
মীরার দম বন্ধ হবার মতাে অবস্থা হলাে। সন্ধ্যা থেকে যে মানুষটার কন্ঠ শুনে তার মাথা ঘুরছে, সেই মানুষটাই কিনা উল্টো তার কণ্ঠের প্রশংসা করছে! আবার তা বারবার শােনার জন্য ফোনও করতে চাইছে? কিন্তু কী বলবে বুঝতে পারছে না! ছেলেটা আবার বলল,
"আপনি না চাইলে অবশ্য ফোন করব না।"
মীরা বলল,
"আপনার ইচ্ছে হলে ফোন করবেন। আমার সমস্যা নেই।"
"ধন্যবাদ। আজকে তাহলে রাখছি। অনেক রাত হয়ে গেছে। আর..."
"আর?"
"মিষ্টি কন্ঠটাও শােনা হয়ে গেছে।"
মীরা আর একটাও কথা বলতে পারলাে না। অচেনা কোনাে অনুরােণন তার নিঃশ্বাসের ওঠা-নামার সাথে বেজে বেজে যাচ্ছে! রাফি বলল,
"গুড নাইট।"
মীরার আর কিছু বলা হলাে না। রাফি লাইন কেটে দিল।
পর্ব ০২ | পর্ব ০৪ |