হাওয়াই মিঠাই |
সেদিন মীরা স্কুলের ভেতর গিয়ে তার বান্ধবীর কাছে শুনেছিলাে রাফি কয়েকবার ফোন করেছে। মীরা রেগেমেগে আগুন হয়ে যখন কলব্যাক করেছিলাে তখন রাফি আবার কেটে দিল। মীরা জানতাে রাফি কলব্যাক করার জন্য কেটেছে, এমনটাই সবসময় হয়। কিন্তু মীরার তর সইলাে না। রাগের মাথায় আবার কল দিল। রাফি আবার কেটে দিল। কিন্তু রাফি কলব্যাক করার আগেই মীরা আবার কল দিল। এবার রাফি কলটা রিসিভ করে বলল,
"আরে ভাই কলটা ব্যাক করার সময় তাে দেবে।"
মীরা রাগী রাগী গলায় বলল,
"মিথ্যাবাদী! না এসেও বলেছাে এসেছাে!"
রাফি বলল,
"একটু ধৈর্য ধরাে, আমি কলব্যাক করে বলছি সব।"
মীরা এবার কেটে দিল। রাফি কলব্যাক করার সাথে সাথেই সে রিসিভ করল। রাফি এবার মীরাকে কিছু বলার সুযােগ না দিয়েই বলল,
"মিথ্যাবাদী শুধু কি আমি একা? আপনি নন?"
মীরা এবার ঘাবড়ে গেল। বলল,
"মানে?"
"বলেছিলেন আপনি সুন্দর নন। আপনার নাকি বিশাল এক সমস্যা আছে!"
"মানে! তুমি আমাকে দেখেও সামনে আসােনি?"
"আপনাকে যতটা সুবােধ বালিকা ভেবেছিলাম ততটা তাে আপনি নন মীরা।"
মীরা এবার গলার স্বর নরম করে বলল,
"আপনি আপনি করছাে কেন?"
রাফি হাসি চেপে বলল,
"তুমি কালাের বদলে নীল পরেছাে কেন? আমাকে আগে দেখবে বলে চালাকি করেছাে? তুমি যে এত চালাকি করবে আমি তাে কল্পনাও করতে পারিনি মীরা!"
"তুমি! তুমি আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে? আমাকে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তােমার ভালাে লেগেছে খুব?"
"একদমই না।"
"তাহলে কোথায় ছিলে তুমি? ১০০ বার কল করেছি তােমাকে। ব্যস্ত ব্যস্ত ব্যস্ত! আমার সাথে দেখা করতে এসে এত কথা কার সাথে শুনি?"
"আমার ফোন থেকে আমাকে কল করলে ব্যস্ত পাবে না তাে কী পাবে?"
মীরা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাে। রাফি হাসছে মিটিমিটি। তারপর বলল,
"তুমি বিদেশী?"
"না। আমি বাংলাদেশী।"
"কিন্তু আমি একজন বিদেশীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে তােমাকে ফোন করেছিলাম।”
"ওটা আমি ছিলাম।"
"তুমি লেন্স পরেছিলে?"
"না।"
"তােমার চোখ এম্নি এম্নিই নীল রঙের?"
"হ্যাঁ।"
"বাংলাদেশী কারাে গায়ের রঙ কি এত ফরসা হয়?"
"কই এত ফরসা? এভারেজ।"
"তােমার চুলগুলাে কালার করা?"
"না।"
"তাহলে ব্ল্যাক আর ব্রাউনের একটা কম্বিনেশন যে?"
"ন্যাচারালিই এমন।"
মীরা মানতে পারলাে না। সে জোর দিয়ে বলল,
"বাংলাদেশীদের গায়ের রঙ, চুলের রঙ, চোখের রঙ, হাইট কোন কিছুই এমন হয় না রাফি।"
"আরে আমার বাংলা শুনেও কি তােমার মনে হয় আমি বিদেশী?"
"তা হয় না।"
"তাহলে?"
"কিন্তু তােমার ইংলিশ এক্সেন্ট একদম বিদেশীদের মতাে।"
"তুমি সুন্দর করে ইংলিশ বললে তাই আমার মনে হলাে আমারাে সুন্দর করেই বলা উচিত।"
এবার মীরা ধমকে উঠলাে,
"তুমি কালাের বদলে সাদা শার্ট পরেছাে কেন? আর কোথায় গেল তােমার পানির বােতল?"
রাফি এবার হেসে বলল,
"ঠিক তুমি যে কারনে কালাের বদলে নীল পরেছাে সেই কারনেই।"
মীরা এবার একটু রেগেই গেল,
"তুমি আমাকে তখনই নিজের পরিচয় দিলে না কেন?"
রাফি অবাক হয়ে বলল,
"ওমা আমি কিভাবে জানবাে তুমিই আমার মীরা! তখন তাে আমি চিন্তায় মরছি। তােমার বান্ধবী বলেছে তুমি বেরিয়েছো স্কুল থেকে। তাই আমি কালাে জামা পরা বােতল হাতে কাউকে খুঁজছি। অন্যকারাে দিকে তাকানাের সময় আছে? তুমি ফোন ফেরত দিয়ে চলে যাওয়ার পর আমি তােমার বান্ধবীকে ফোন করতে গিয়ে দেখি এতক্ষণ আমার নাম্বারে ডায়াল করা হয়েছে। তখন বুঝলাম তুমিই আমার মীরা। আমি দিলাম দৌড়। কিন্তু ততক্ষণে তুমি স্কুলে ঢুকে গেছাে।"
"ধ্যাত!"
"আচ্ছা মীরা তুমি একটু কষ্ট করে আবার বের হও। তখন তাে তােমাকে দেখিনি সেভাবে। এক পলকের দেখা শুধু৷ আর ফোনটাও তাে তােমাকে দেয়া হয়নি।”
"এখন আবার বের হওয়া অসম্ভব। আমাদের স্কুলে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। আমি চাপা মেরে বের হয়েছিলাম, আরেকবার অসম্ভব।"
"সর্বনাশ! তাহলে এভাবেই ফিরে যেতে হবে?"
"এছাড়া কোনাে উপায় নেই।"
"তােমার পরীক্ষা শেষ কখন?"
"৫ টায়।"
"আমি অপেক্ষা করি।"
"তােমার না সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাস আছে? তুমি ক্লাস মিস দেবে না। আজকে চলে যাও। কাল এসাে আবার। কাল আমার ১ টা পরীক্ষা। বাসায় বলব ২ টা পরীক্ষা। তাহলে পুরাে বিকেলটাই তােমার সাথে থাকতে পারব।"
রাফি হেসে দিলাে। মীরা বলল,
"হাসছাে যে?"
"প্রেমে পড়ে তােমার মত সুবােধ বালিকারাও কত সুন্দর মিথ্যে বলতে পারে।"
এবার মীরা লজ্জা পেলাে। রাফি বলল,
"আচ্ছা তােমার কী সমস্যা যেন আছে বলেছিলে? আমি তাে কোনাে সমস্যা দেখলাম না।"
মীরা আমতা আমতা করে লাজুক স্বরে বলল,
"না মানে সমস্যাটা এখন আর সমস্যা মনে হচ্ছে না।"
রাফি একটু ভেবে বলল,
"তুমি কি তােমার হাইটকে সমস্যা ভাবছিলে?"
"হ্যাঁ।"
রাফি হেসে বলল,
"যখন আমি জানললাম একটু আগে যে মেয়েটা আমার মােবাইল থেকে ফোন করে গেল, সেই মেয়েটা আমার মীরা! তখন আমার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা এসেছে সেটা হলাে, মীরা এত লম্বা! বিশ্বাস করাে, সবাই বলতাে আমার ভাগ্যে খাটো মেয়ে জুটবে। যদিও আমার এইসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তবুও এত পারফেক্ট ম্যাচ করেছে বলে ভাল লাগছে।"
"আর আমাকে সবাই বলতাে আমার ভাগ্যে খাটো ছেলে জুটবে। এমনকি আমার হাইটের কারণে ছেলেরা আমার ধারেকাছেও আসেনা। আমার কখনাে কোনাে ছেলেবন্ধু হয়নি শুধু এই কারণেই।"
"হাইট কতাে তােমার?"
"৫ ফিট ৮ ইঞ্চি। তােমার নিশ্চয়ই ৭ ফিট?"
রাফি এবার হাে হাে করে হেসে দিল। তারপর বলল,
"অত লম্বা মানুষ হয় নাকি? আমি শুকনা বলে বেশি লম্বা লাগে। আমি ৬ ফিট ২ ইঞ্চি।"
"যাই হােক, আমি হিল পড়তে পারব এতেই খুশি।"
রাফি এবার খুব মজা করে রসিয়ে রসিয়ে বলল,
"আচ্ছা ধরাে আমি তােমার চেয়ে খাটো হলে কি করতে? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে চলে যেতে?"
মীরা লজ্জা পেলাে। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বলল,
"আমি খাটো হলে কি তুমি এই কাজ করতে?"
"মােটেও না, ছেলেদের থেকে মেয়েরা খাটো হবে এটা তাে স্বাভাবিক। আমি তাে কপাল গুনে তােমার মত লম্বা মেয়ে পেলাম।"
"হয়েছে হয়েছে, এবার যাও। আমি পরীক্ষা দিতে ঢুকবাে এখন।"
মীরার সেদিন খুব বেশি নার্ভাস লাগছিল। আগেরদিন কিন্তু অতটা লাগেনি। স্কুল বন্ধ শুধু মডেল টেস্ট হচ্ছে তাই মীরা স্কুল ড্রেস পরেনি আগেরদিন। কিন্তু সেদিন রেডি হওয়ার সময় জাহানারা হঠাৎ বললেন স্কুল ড্রেস পরেই যেতে হবে। স্কুল ড্রেস পরে রাফির সাথে কোথায় যাবে সে? স্কুল গার্ল ডেটে এসেছে দেখে লােকে হাসবে না? কিন্তু কিছু করার নেই। মা বলেছে মানে করতেই হবে। স্কুল ড্রেস পরেই গেল সে। বাসার সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়াে করে নামতে গিয়ে একটুর জন্য পড়ে যায়নি। রিক্সায় উঠতে গিয়ে চাকার সাথে টান লেগে ক্রসবেল্টের এককোণায় একটুখানি ছিঁড়ে গেছে। ভাগ্যিস জামা ছেঁড়েনি। পুরােটা সময় বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলাে। পরীক্ষার খাতায় যে সে কী লিখলাে তা নিজেও জানে না।
রাফি অপেক্ষা করছিল স্কুলের পাশেই একটা ক্যাফেতে। মীরা আগে আগে পরীক্ষা শেষ করে খুব দ্রুত পায়ে ক্যাফেতে ঢুকলাে। রাফি দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে গেলাে এবং সামান্য হাসলাে। রাফিকে দেখেই মীরার হৃদপিণ্ডের ক্রমাগত কম্পন বেড়ে গেল। মীরা অনেকটা কাঁপতে কাঁপতে কাছে যেতেই রাফি বলল,
"বসাে।"
মীরা বসলাে কিন্তু কিছু বলার শক্তি নেই। এই অপরিচিত মানুষটা কিনা ওর ভালােবাসার মানুষ! প্রতিদিন একেই আই লাভ ইউ বলে? এর জন্যই মনের ভেতর এত উথালপাতাল? মীরা রাফির দিকে সরাসরি তাকাতে পারছে না। এত সুন্দর একটা ছেলের দিকে তাকানাে প্রায় অসম্ভব। তার উপর সে কখনাে কোনাে ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি।আত্মীয়স্বজন আর ভাইরা ছাড়া আর কোনাে ছেলের সাথে তার পরিচয়ই নেই। রাফি কিন্তু ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে ছিল। প্রথম কথাটা রাফিই বলল,
"এই তােমার নাম মেহেরজান? মীরা না? তুমি মিথ্যে বলেছ?"
মীরার ক্রসবেল্টের উপর লাগানাে নেমপ্লেটে ইশারা করে দেখালাে রাফি। মীরা রেগে বলল,
"মেহেরজান আমার ভালাে নাম।"
রাফি একটু মজা করার জন্য বলল,
"তাহলে মীরা কি খারাপ নাম?"
মীরা এবার আরাে রেগে গিয়ে বলল,
"উফফ মীরা আমার ডাকনাম।"
রাফি হাে হাে করে হাসলাে। কেন যেন মীরার এই জিরাে লেভেলের সেন্স অফ হিউমার তার দারুণ লাগে। রাফির হাসি দেখে মীরার রাগ নিমিষেই মিটে গেল। সে মুচকি হেসে বলল,
"আজ তাহলে কালাে পরলে!"
"প্রতিদিনই পরি। কাল চালাকি করতে গিয়ে সাদা পরেছিলাম। গলায় দড়িও অবশ্য পড়েছে।"
মীরা আবার হাসলাে। সে রাফির দিকে একবারাে তাকাচ্ছে না। আশেপাশে এদিকে সেদিকে তাকাচ্ছে শুধু। রাফি বলল,
"কেমন আছাে মীরা?"
"ভাল আছি।"
তারপর আবার চুপ। রাফি বলল,
"আমাকে জিজ্ঞেস করবে না, আমি কেমন আছি?"
"কেমন আছাে?"
"ভাল না।"
"কেন?"
"কারন আমার খুব আফসােস হচ্ছে।”
"কী নিয়ে?"
"কেন আমি ক্যাফের দেয়াল, চেয়ার, টেবিল এসব হলাম না সেই আফসােস!"
মীরা চেয়ারের কোণা খুঁটতে খুঁটতে জিজ্ঞেস করলাে,
"এ আবার কেমন আফসােস?"
"তুমি দেয়াল, চেয়ার, টেবিল এসব দেখে দেখে মুখস্থ করে ফেলছাে কিন্তু আমার দিকে একবারাে তাকাচ্ছো না। এসব হলে তাে তােমার সব এটেনশন আমি পেতাম।"
মীরা ইতস্তত করে বলল,
"না মানে আমার খুব নার্ভাস লাগছে।"
"আমার দিকে তাকাও মীরা।"
মীরা তাকালাে। রাফি তাকিয়ে রয়েছে ঠিক মীরার চোখের দিকে। রাফির চোখদুটো অদ্ভুত নীল রঙের চোখ। খাঁড়া লম্বা নাক। রােদ থেকে এসেছে বলেই বােধহয় মুখটা লাল হয়ে আছে। ছােট ছােট দাঁড়িগুলাে গালের উপর শুয়ে আছে। যেন খুব বাধ্য তারা। চুল আর দাঁড়ির রঙটা ভারী অদ্ভুত! অর্ধেক বােধহয় কালাে, বাকীগুলাের কোনােটা বাদামী, কোনােটা লাল, কোনােটা খয়েরী, কোনােটা ছাইরঙা, দু একটা সাদাও রয়েছে। এমন চুল দাঁড়ি সে আগে কখনাে কারাে দেখেনি। রাফির চোখ আর চুলগুলাে দেখে ওর একটু হিংসেই হলাে। একটা ছেলের চুল এত সুন্দর হওয়ার কি কোনাে দরকার ছিল? তাছাড়া সে কালাে না হলেও আহামরি ফরসাও নয়। রাফির গায়ের রং তার থেকে চার গুণ ফরসা। এটা তার জন্য কিছুটা মন খারাপের বিষয় বটে। রাফির কথায় মীরার ধ্যানভঙ্গ হলাে,
"মীরা তােমার গলার তিল টা ভয়ানক।”
মীরা এই কথার অর্থ বুঝলাে না। বলল,
"ভয়ানক কেন? ভয়ের কী হলাে?"
রাফি একটু ঝুঁকে মীরার ঠিক চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"তিল টা অনেকটা বন্দুকের গুলির মতাে। যে কেউ খুন হয়ে যাবে এত কাছ থেকে দেখলে।"
মীরা এবার বুঝলাে। তাড়াতাড়ি ওড়না দিয়ে ঢেকে ফেললাে তিল টা। রাফি হেসে ফেলল।
মীরা তখন চুপ করে ছিল। তার খুব নার্ভাস লাগছিল, খুব! সাথে ছিল অস্বস্তি, একই সাথে আবার খুব ভালও লাগছিল। সে যেন এক মিশ্র অনুভূতি! রাফি তার এই অবস্থা দেখে বলেছিল,
"বলে কি ভুল করলাম? আমি আসলে তােমাকে লজ্জায় ফেলতে চাইনি। মেয়েদের লজ্জা সুন্দর হলেও তার নিজের কাছে সেটা অস্বস্তিকর বলেই মনে হয় আমার। তাই এটা আমি কখনােই করি না। কিন্তু এত সুন্দর জিনিস দেখে তার মালিক কে না জানানােটা অপরাধ বলে মনে হয়েছে।"
মীরা মুচকি হাসলাে। মন চাচ্ছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। রাফি বােধহয় ব্যাপারটা বুঝলাে। তাই প্রসঙ্গ পালটে খাবার অর্ডার করলাে। তারপর রাফি নিজ উদ্যোগেই অন্যান্য বিষয়ে গল্প করলাে। মীরা শুধু হু হা করে যাচ্ছে। রাফি বলল,
"আচ্ছা... আমার মীরা ফোনে অনেক কথা বলে, সামনাসামনি এত চুপচাপ কেন?"
"প্রথমদিন তাে, আমার নার্ভাস লাগছে। কোনাে কথা খুঁজে পাচ্ছি না।"
রাফি বলল,
"অসুবিধা নেই, আর দু'একদিন দেখা করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি অপেক্ষা করবাে।"
মীরা একটু তাকালাে রাফির দিকে। রাফি তাকিয়েই ছিল। চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে যেন! মীরা তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলাে। রাফি বলল,
"মীরা আমি তােমার পাশে এসে বসি? যদি তােমার কোনাে আপত্তি না থাকে।"
"এসাে।"
মীরা সরে বসলাে। রাফি মীরার পাশে গিয়ে বসলাে। মীরার আরাে বেশি নার্ভাস লাগতে শুরু করলাে। রাফি একটা হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
"ধরবে?"
মীরা কি করবে বুঝতে পারছিলাে না। হাত না ধরা মানে রাফিকে রিফিউজ করা। কিন্তু রাফি তাে তার ভালােবাসার মানুষ, হাত ধরাটা বােধহয় স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম দেখা বলেই হয়তাে কেমন একটু লাগছে। দোনােমনা করতে করতে হাতটা ধরলাে মীরা। রাফি আরাে একটু কাছে এসে মীরার কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু স্বরে বলল,
"এখনাে কি অপরিচিত লাগছে?"
রাফির গলাটা এত কাছ থেকে শুনতে পেয়ে অদ্ভুত লাগছিলাে মীরার। মনে হচ্ছিলাে সে যেন ফোনেই কথা বলছে। একইসাথে খুব স্বাভাবিক লাগছিল। মনে হচ্ছিলাে এইতাে তার চেনা সেই নিজের মানুষটা! বলল,
"না, এখন সব ঠিক আছে। আরাে আগে এলে না কেন এপাশে?"
"তােমাকে দেখছিলাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। তুমি খুব সুন্দর মীরা। খুব স্বচ্ছ, খুব প্রসন্ন। বিশেষ করে তােমার চোখ দুটো! ইচ্ছে করে ডুবেই থাকি।"
পর্ব ০৭ | পর্ব ০৯ |