আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

হাওয়াই মিঠাই - পর্ব ১১ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প

পড়ুন মৌরি মরিয়ম'এর লেখা একটি অসাধারণ ধারাবাহিক গল্প হাওয়াই মিঠাই'র একাদশ পর্ব
হাওয়াই মিঠাই
হাওয়াই মিঠাই

রাফি-মীরার ভালোবাসার আকাশে কয়েকদিন মেঘের ঘনঘটা থাকলেও, আস্তে আস্তে মেঘ কেটে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাফি আগের মতো প্রাণবন্ত ছিল না। চুপচাপ মনমরা হয়ে ছিলাে।

২/৩ দিন যেতে না যেতেই দুজন দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলাে। কিন্তু তখন দেখা করার কোনাে উপায় নেই কারণ মীরার মডেল টেস্ট শেষ, স্কুল বন্ধ। এক রাতে কথা বলার সময় মীরা বলল,

"রাফি, একদিন সারাদিনের জন্য দেখা করব আমরা। এই আধাঘন্টা, একঘন্টার জন্য দেখা করে আমার মন ভরে না।"

"একেবারেই দেখা করতে পারছ না, আর তুমি এসেছাে সারাদিনের কথা বলতে?"

"আজ নাহয় কাল একদিন তাে পারব।"

"হয়তাে।"

"যেদিন পারব সেদিনই যাবাে। এসব বলতে বলতে হঠাৎই মীরার মাথায় একটা বুদ্ধি এলাে। সে বলল,

"জানাে ৭ ডিসেম্বর আমাদের স্কুলের পিকনিক।"

"তাই নাকি? কোথায়?"

"গাজীপুরে।”

"আচ্ছা।"

"কিন্তু আমি যাচ্ছি না।"

"কেন যাচ্ছাে না?"

"কেন আবার তােমার জন্য।"

"আমার জন্য!"

"হু। ওইদিনই আমি সারাদিন থাকবাে তােমার সাথে।"

"এই ভূত আবার কখন চাপলাে?"

"এইমাত্রই।"

"তারপর ধরা খেলে?"

"উঁহু ধরা খাবাে না। কারন বাসায় সবাই জানবে আমি পিকনিকে যাচ্ছি। আমাকে তাে আর কেউ স্কুলে দিতে যায় না। আমি তাে একাই যাই।"

"কিন্তু পিকনিকে জন্য তাে ভােরবেলা বের হবে তখনও কেউ যাবে না তােমার সাথে?"

"নাহ, আগে কোনাে পিকনিকের সময় তাে যায়নি।"

"দেখাে তুমি যদি পারাে আমার সমস্যা নেই।"

"কিন্তু অত সকালে আমরা যাবাে টা কোথায়?"

রাফি একটু ভেবে বলল,

"আমার বাসায় আসবে?"

"তােমার বাসায়! অতদূরে!"

"অতদূর কোথায়? ব্যাংক টাউন ফার্মগেট থেকে কাছেই। এক ঘন্টাও লাগে না। আমি প্রতিদিন মহাখালী গিয়ে ক্লাস করি না? আমার তাে মনে হয় বাসে উঠলাম আর নামলাম।"

"তােমার তাে অভ্যাস হয়ে গেছে।"

"আচ্ছা তুমি আসতে না পারলে এই প্ল্যান বাদ।"

"আর যদি পারি?"

রাফি হেসে বলল,

"পারলে আসবে।"

"তুমি হাসছাে কেন?"

"তােমার কনফিউশন দেখে।"

"উফ হাসবে না তাে। আচ্ছা শােনাে তােমার বাবা-মাকে কি বলবে?"

"মা বাসায় নেই। কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি গেছে। যখন তােমার সাথে রাগারাগি হলাে তখন গেছে, তাই তােমাকে জানানাে হয়নি। আর বাবার তাে ঢাকা গিয়ে অফিস করতে হয় তাই ভােরবেলা বের হয়। বাসায় সারাদিন আমরা তিন ভাইবােন থাকি। রাহি তাে তােমার কথা জানেই আর রূপও ছােট মানুষ। সাে আমার দিক থেকে কোনাে সমস্যা নেই। তুমি চাইলে আসতে পারাে।"

"রাহি ভাইয়া আমার কথা জানে?"

"না জানার কী হলাে! এতাে ফোনে কথা বলছি সবাই তাে দেখছেই।"

মীরা দ্বন্দে পড়ে গেলাে। কী করবে ঠিক বুঝতে পারছিলাে না।

মীরা সবচেয়ে প্রিয় কালাে ড্রেসটা ইস্ত্রী করে গুছিয়ে রেখেছে। কাল খুব ভােরে বের হতে হবে। স্কুল পিকনিকে যাচ্ছে না, রাফির বাসায় যাবে! সব গুছিয়ে রাফিকে কল করলাে....

"কি করছাে?"

"তােমার জন্য মাংস রাঁধছি।"

"আমার জন্য!"

"হাঁ তােমার না প্রিয়? কাল তুমি আসার পর তাে তােমাকে এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করতে ইচ্ছা করবে না, তাই রান্নার সময় পাবাে না। এজন্য এখন রান্না করে রাখছি।"

"তুমি এখনাে মনে রেখেছাে মাংস আমার প্রিয়!"

রাফি হেসে বলল,

"এটা কি ভুলে যাবার মতাে কোনাে কথা?"

মীরা খুশিতে বাকবাকুম করতে লাগলাে। তার মােটামুটি সব বান্ধবীদেরই বয়ফ্রেন্ড আছে, কখনাে শােনেনি কারাে বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডের জন্য রান্না করেছে! সে তাে সত্যিই খুব লাকি রাফিকে পেয়ে!

রাফি রিক্সা নিয়ে গলির মােড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মীরা শালমুড়ি দিয়ে দ্রুত হেঁটে গিয়ে উঠতেই রিক্সা বাস স্ট্যান্ডের দিকে যেতে শুরু করলাে। টেনশনে মীরার অবস্থা কাহিল। রাফি মীরার একটা হাত ধরে বলল,

"ভয়ে কাঁপছাে নাকি শীতে?"

মীরা হেসে দিলাে। রাফিও হাসলাে। মীরা এখনাে একবারাে তাকায়নি রাফির দিকে। আজ রাফির সাথে তার চতুর্থবারের মতো দেখা। এখনাে রাফির চোখে চোখ রাখতে পারেনা মীরা। কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে। রাফি বলল,

"তােমাকে সুন্দর লাগছে।"

মীরা তাে একটু কাজল ছাড়া কিছু ব্যবহার করেনি। কোনাে সাজগােজ নেই তাও সুন্দর লাগছে? নাকি রাফি তাকে খুশি করার জন্য বলছে! কে জানে কী! মীরা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

"কেউ দেখে ফেলবে।"

'আচ্ছা।"

রাফি হাত ছেড়ে দিলাে।

বাসে ওঠার পর থেকেই মীরা রাফির হাত ধরে ছিলাে। ফ্যামিলি ছাড়া ওই প্রথম কোথাও যাচ্ছিল। ভয় লাগছিল আবার কিছুটা রােমাঞ্চও অনুভূত হচ্ছিলাে। রাফি অনেক কথা বলছিল, মীরা শুধু হু হা করছিলাে। ওই মূহুর্তে বলার মতাে কোনাে কথা সে খুঁজে পাচ্ছিলাে না। রাফি কখন তাকে নিয়ে বাসে উঠেছিলাে, কোথা থেকে উঠেছিলাে, কোন বাসে উঠেছিলাে আর কোথায়ইবা নেমেছিলাে তার কিছুই খেয়াল ছিল না তার। শুধু বাস থেকে নেমে দেখতে পেয়েছিলাে ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে থেকে ডান দিকে একটা রাস্তা নেমে গেছে। রাস্তার গেটের উপর বড় করে লেখা ব্যাংক টাউন। রাস্তার দুধারে অসংখ্য গাছ। রাফি একটা রিক্সা নিলাে। ৫ মিনিটের মধ্যেই রিক্সা একটা বাসার সামনে থামলাে। এখানে এসেই মীরা মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পেলাে। এই গলির শেষ বাসা এটা। পাশেই নদী বয়ে গেছে। মীরা রাফিকে জিজ্ঞেস করেছিলাে,

"এই নদীর নাম কী?"

"কর্ণতলী।"

"এই নদীর নাম শুনিনি কখনাে।"

"তুরাগ শুনেছাে?"

"হ্যাঁ।"

"কর্ণতলী হচ্ছে তুরগের শাখা নদী।"

কথা বলতে বলতেই রাফি মীরাকে নিয়ে বাসার গেটের ভেতর ঢুকলাে। ঢুকতেই দেখে শত শত বকুল ফুল ঝরে পড়ে আছে। রাফি বলল,

"দেখাে কত বকুল ফুলের বিছানা। নিচের মাটি দেখা যাচ্ছে না। তুমি চাইলে এখানে খালি পায়েও হাঁটতে পারবে, পায়ে মাটি লাগবে না।"

মীরা ফট করে জুতাে খুলে হাতে নিলাে। রাফির বকুল ফুলের বিছানায় পা রাখতেই অদ্ভুত এক আরাম অনুভূত হলাে তার পায়ে। সে আর নিজের মধ্যে ছিলো না সেদিন। একটা ঘােরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাে। চারপাশে সবকিছুই খুব সুন্দর মনে হচ্ছিল। রাফি তখনাে শক্ত হাতে তার হাতটা ধরে রেখেছিলাে!

পর্ব ১০পর্ব ১২
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।