ভাইয়ের বন্ধু যখন বর by ভাইয়ের বন্ধু যখন বর |
আমি তিশা। আমার পরিবারে আমার মা, বাবা, আর একটা শয়তান বড় ভাই আছে। রায়হান ভাই। ওর কাজই হচ্ছে আমাকে জালাতন করা। অথচ বাড়ীর সবার থেকে বেশি আমায় ভালোবাসে কিন্তু তা এই জীবনে মুখে এনে বলেনি। কিন্তু সব কথা কি বলতে হয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। আমার জীবনের আরেক পেইন এর নাম হচ্ছে জিসান ভাই। রায়হান ভাইয়ের জিগরী বন্ধু। এখন বর্তমানে পড়ালেখা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় জয়েন হয়েছে ভাইয়ের সাথে কিছুদিন হলো। বড় ভাই তাওহিদ আর জিসান ভাই মিলে এখন সব দেখা শোনা করে। জিসান ভাইয়ের ছোট একটা বোন আছে। তারই বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার রায়হান ভাইয়ার সাথে। রায়হান আর জিসান ভাই বাল্যকালের ফ্রেন্ড বলে একসাথে বড় হয়েছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফ সব একসাথে পার করেছে। তাইতো রায়হান ভাইয়ের হাতে নিজের ছোটবোনকে তুলে দিতে কোনও সমস্যা নেই বলে জিসান ভাই মনে করে। এছাড়া রায়হান ভাই ও নিশি দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করে। বাল্যকালের ফ্রেন্ড হওয়াতে আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিলো জিসান ভাইয়ের প্রায়ই। আমার পুরো পরিবারের সবাই তাকে খুব পছন্দ করতো। শুধু আমি ছাড়া। কেনো যে আমি জিসান ভাইকে এতো ভয় পাই আল্লাহই জানে। হয়তো রায়হান ভাইয়ের মুখে উনার রাগ আর জিদের অনেক কাহিনী শুনেছি বলে। সে যা বলে তা নাকি করেই ছাড়ে। একদম ঘাড়ত্যাড়া মানুষ। আমি তো এখন হিটলার বলে ডাকি। কলেজ আর ভার্সিটি লাইফে তার অনেক কমপ্লেইন্টও আসতো। কিন্তু তাকে হাজার বার বুঝানোর পরও তার রাগকে কন্ট্রোল করাতে পারেনি কেউ। এদিক দিয়ে ব্যাচারা রায়হান ভাইয়েরও ক্লাশ নেওয়া হতো জিসান ভাইয়ের জন্য। রায়হান ভাইও কম ত্যারা ছিলো না। কিন্তু ও জেদি হলেও শান্ত স্বভাবের ছিলো। কিন্তু জিসান ভাইয়ের রাগ উঠলে কোন কিছু মনে থাকে না। যাই হোক জিসান ভাইয়া আমাদের বাসায় আসলে আমি খুব কমই তার সামনে যেতাম। কিন্ত আমি তার সামনে না গেলেও সে কোনও না কোনও ভাবে আমার সামনে এসে হাজির হতোই। আর সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমার লাইফে যেনো শনি হয়ে হাজির হয়ে যায় সব সময়।
পাঁচ বছর আগের কথা স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম বৃষ্টিতে ভিজে। রাস্তায় কোন রিকশা না পেয়ে খুবই খারাপ অবস্থা এই বৃষ্টিতে। এমনেই এই রাস্তায় তেমন মানুষ থাকে না, আর আজ বৃষ্টির কারনে একদম ফাঁকা। এমন সময় খেয়াল হলো কেউ আমার পিছে পিছে আসছে। আমি ভয়ে পিছনে থাকাবার সাহস পাচ্ছিলাম না। তাই দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করলে, পেছনে যারা ছিলো তারা আমার পথ আটকায়। আমার ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। ছেলে তিনটা খুব বাজে বাজে কমেন্ট করছে, একজনতো আমাকে ধরতে আসছিলো। ঠিক সে সময় একটা বাইক এসে সামনে দাঁড়ায়। কে এসেছে তা দেখার জন্য একটু উঁকি দিলাম, আমার প্রানটা যেনো ফিরে পেলাম। কারন এতো জিসান ভাই। সে আমাকে তিশা বলে ডাকলো।
"তিশা তুই এখানে কি করছিস, আর এরা কারা।"
তিশা যে স্কুলে পড়ে সে স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো কিছু ছেলে একটা মেয়ে কে ঘিরে রেখেছে। আর খুব অভদ্র ব্যবহার করছে। দেখে কেনো জানি ঠিক মনে হলো না। কারন এমন নির্জন জায়গায় এসব। তাই বাইকটা সাইডে রেখে সামনে গেলাম দেখতে সমস্যা কি। আর সামনে গিয়ে আমি শকড। এতো তিশা। তিশার ভয়ার্ত চেহারা আমাকে দেখে রাজ্যজয় করা একটা হাসি দিলো। ও ছেলেগুলোকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। মুহুর্তের মধ্যে আমার হ্রদস্পন্দনের গতিবিধি বেড়ে গেলো। শরীরের শিরায় শিরায় চেনো রক্ত চলাচল দ্রুত হতে লাগলো। ওর ভেজা শরীরটা তখনো আমার সাথে লেপ্টে ছিলো। ও কাঁপছে, শীতে নাকি ভয়ে বুঝা দায় ছিলো। হঠাৎ ছেলেগুলোর কথায় আমার হুঁশ আসলো। ওরা খুব নোংরা ভাবে তিশার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি নিজেকে সংযত করে তিশাকে নিজের থেকে সরালাম। ওকে সরানোর পর বুঝতে পারলাম, নেভি ব্লু কালার স্কুল ড্রেসটা বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের সাথে মিশে গেছে। যার কারনে শরীরের প্রতিটা ভাঁজগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমার মন চাইছিলো এই মেয়েকে কষে একটা চড় মারি, এতোটা কেয়ারলেস কি করে হয়। সাথে একটা ওড়না তো রাখবে। আমার শরীরের শার্টটা খুলে দিলাম, এতে আমার কোনও সমস্যা হয়নি কারন ভেতরে আরো একটা গেন্জী ছিলো।
জিসান ভাই ছেলেগুলোকে মারতে লাগলো, আর ছেলেগুলো বার বার ক্ষমা চাইছে। কারন ওরা জিসানকে চিনতে পেরেছে। তার এই রুপ দেখে আমি নিজেও ভয় পেতে লাগলাম। কিন্তু শকড হলাম যখন উনি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগল…
"How dare you touch my Lady."
তার মুখে মাই লেডি নামটা শুনে খুবই আশ্চর্য হলাম। সেদিন উনি নিজে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিলেন। কিন্তু এরপর থেকে আমার লাইফের সাথে কেমন কাঁঠালের আঠার মত লেগে গেলেন। আমি কোথায় যাবো, কার সাথে যাবো। কেনো যাবো এসব কিছু আগে শুধু রায়হান ভাইকে বলতে হতো। কিন্তু এখন তো জিসান ভাইকেও আমার প্রতিটা কাজের হিসাব দিতে হয়। আশ্চর্য হলাম আমার পরিবারের তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এই জিসান নামের লোকটা কেনো আমার লাইফে এতো আগ্রহী তা বুঝতে পারতাম না।
আমার এস এস সি পরীক্ষার পরই তাওহিদ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হলো, আর নিশি সবাইকে বলে কিছু দিনের জন্য আমাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে গেলো। এই পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু আমি সবার কথা চিন্তা করছি না, যার কথা চিন্তা করছি সে এখনো আমাকে দেখেনি। হয়তো ব্যস্ত ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তাই অনুষ্ঠানের জন্য খুব সুন্দর করে রেডি হয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। সব কিছু ভালোই চলছিলো। কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছিলো কেউ আমায় দেখছে। সবসময় নজর রাখছে। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। তেমন কিছুই দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষন পর নিশি ওদের কাজিনদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই খুব ভালো, তবে এর মধ্যে অর্কের বিহেভিয়ার আমায় একটু অন্যরকম লাগলো। কারন অনুষ্ঠানে তার পুরো ফোকাস আমার উপর। এতে অবশ্য খারাপ লাগছিলো না। বিয়ে বাড়ীতে এমন আশিক পাওয়া যায় কতো। আমি আর অর্ক বসে গল্প করছিলাম এমন সময় একটা পিচ্চি এসে বললো আমাকে ছাদে ভাইয়া ডাকছে। কোন ভাইয়া জিঙ্গেস করার আগেই পিচ্চিটা দৌড়ে চলে যায়। আসে পাশে রায়হান ভাইকে দেখতে না পেয়ে ভেবে নিলাম, রায়হান ভাই হয়তো ডাকছে। আমি ছাদে গেলাম, কাউকে দেখতে না পেয়ে চলে যেতে নিলেই, কেউ আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি চিৎকার দিতে নিলে আমার মুখে হাত দিয়ে শশশশ...।
চাঁদের আবছা আলোয় আমার সামনের ব্যক্তিটাকে চিনতে ভুল হলো না। আমার সামনে জিসান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল খুব না, খুবই ভয়ানক ভাবে রেগে আছে। আমার তো মাথার উপর দিয়ে সব কিছু যাচ্ছে এভাবে রাগার কি আছে। জিসান ভাই আমার একদম কাছে, এতোটা যে তার প্রতিটা নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে। কিন্তু আমি যেনো নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছি। আর নিশ্বাস নিতে না পারলে, কিছুক্ষন পর মনে হয় দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। আমার মুখের সামনে এসে দাঁতেদাঁত চেপে বললো...
"আমি যেনো তোকে অর্কের আসেপাসেও আর না দেখি, তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না তিশা।"
আমি তো ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছিলাম। যখন খুললাম সামনে কেউ নেই। আমি এক দৌড়ে নিচে নেমে এলাম। জিসান ভাই রায়হান ভাই ও তাদের কিছু ফ্রেন্ড মিলে এক সাথে কথা বলছিলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে যখন চিন্তা করছিলাম একটু আগের ঘটনা সত্য নাকি আমার কল্পনা। তখনিই উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এমন ভাবে তাকালো যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাবে। আমি ভয়েই সেখান থেকে চলে গেলাম। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে আমি মিস্টার ইন্ডিয়ার মতো গায়েব ছিলাম। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়, আমার অবস্থা ও সে রকম। বিয়ের দিন আমি আর নিশি এবং ওর কাজিনরা বসে কথা বলছিলাম। তখনি আরেক ভেজালের মধ্যে পড়লাম। তানজিলা ভাবীর(তাওহিদ ভাইয়ার বৌ) কাজিন আরাফ এসে আমাদের সামনে হাজির হলো। ওর স্বভাবটা কিছুটা গায়ে পড়া ছিলো। কথায় কথায় শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। বিশেষ করে আমার সাথে একটু বেশি। আমিতো যতোটা পারছি এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করছি। কিন্তু বেহায়া টাইপ কিছু লোক আছে না, আরাফ তাদের মধ্যে একজন ছিলো। হঠাৎ কোথা থেকে জিসান এসে আরাফকে সাথে করে নিয়ে গেলো, কি যেনো প্রাইভেট কথা বলবে বলে। আমিতো পুরা টাসকি খেলাম। বলে কি এসব! কিন্তু আমার কাছে কিছু ঘাপলা লাগছিলো। কারন এরপর বিয়ের কোনও অনুষ্ঠানে আমি আরাফকে দেখতে পাইনি। পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম, আরাফের নাকি হাত ভেঙ্গে গিয়েছিলো, সিঁড়ি থেকে পড়ে। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম এটা সিঁড়ি থেকে পড়ে না।
আমি কলেযে ভর্তি হয়ে গেলাম, ভালোই দিন কাটছিলো। পড়াশোনায় একটু ফাঁকিবাজ ছিলাম বলে মায়ের বকাতো ডেইলি খাওয়া লাগতো। তারপরও বেশ ছিলাম। সেকেন্ড ইয়ারে উঠার বেশ কিছুদিন পার হয়ে যাবার পর রাহয়ান ভাইয়ের বিয়ের জন্য বাবা মা তাড়া দেওয়া শুরু করলো। কিন্তু রায়হান ভাই আমাকে বিয়ে না দিয়ে নিজে আগে বিয়ে করবে না বলে দিলো। আমিতো শকড। আরে ভাই তোর বিয়ের বয়স হয়েছে তুই কর, আমারে কেনো টানিস। আমিতো এখনো কতো ছোট। বিয়ে শাদীর কি বুঝি। বাবা মার অনেক জোরাজোরিতে ভাইয়া বিয়েতে রাজি হলো। দু'মাস পরেই আমার ফাইনাল পরীক্ষা, তাই বিয়ের ডেট এমন ভাবে ফেলা হলো যাতে আমার পড়ালেখার কোনও ক্ষতি না হয়। আ...কতো চিন্তা আমার জন্য।
বিয়ের জন্য শপিং করাও শুরু হয়ে গেলো। সবাইকে দাওয়াত দেয়াও আরম্ভ হয়ে গেলো। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিলুকে দাওয়াত দিতে গিয়ে, ওর ভাই আবির'এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। অনেকদিন পর দেখা হলো বলে আবির ভাই আমাকে আর নিলুকে আইস্ক্রিম পার্লারে নিয়ে গেলো। আমরা তিনজনে আইস্ক্রিম খাচ্ছিলাম আর মজা করছিলাম। এমন সময় নিলু বলল...
"জানিস তিশা ভাইয়া না হাত দেখে ভবিষ্যৎ বলতে পারে। আমারটা বলেছে, জানিস অনেকটা মিলে গেছে। তুইও দেখা তো।"
"আরে আমি এগুলো বিশ্বাস করি না।"
আরে তিশা আগে হাত দেখাও, আমি যা বলবো তা সত্য না হলে, এই মুখ জীবনেও দেখাবো না।"
এই কথা বলে আবির ভাই আমার হাতটা নিয়ে দেখতে লাগলো। আমারতো ভীষন হাসি পাচ্ছে। কিছু কিছু কথা বললো, তা সত্য ছিলো। কিন্তু আবির ভাই এসব তো নিলুও জানে, আপনি অন্য কিছু বলেন। এসব বলে আমাকে পাটাতে পারবেন না। আমরা কথা বলছি আর হাসাহাসি করছিলাম। এমন সময় কেউ এসে আমাকে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় মারলো। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সামনে তাকিয়ে দেখি জিসান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। ফরমাল ড্রেস পরা, তার মানে নিশ্চয়ই অফিস থেকে আসছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই আমাকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে বসালো। তারপর কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার বাড়ীর রাস্তা না সেটা জানি, কিন্তু উনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। ভয়েতো আমার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিলো না, আর জিসান ভাই সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করেছে। কিন্তু তার চেহারা বলে দিচ্ছে কতোটা রেগে আছে। চোখগুলোও লাল হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ গাড়ীটা থেমে গেলো। আমি সামনে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি জায়গাটা কোথায়। অনেকটা নির্জন জায়গা, শহর থেকে কিছুটা দূরে। তাই আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। এই লোক আমাকে এখানে কেনো আনলো, মেরে ফেলবে নাতো আবার। কিন্তু জিসান ভাই তার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
"আর কতো জ্বালাবি আমায়, আর কতো পোড়াবি। পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাচ্ছি আমি। তোর অপেক্ষায় কতো রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি। তোকে একটু দেখার জন্য ছটপট করতো আমার এই মন।"
হঠাৎ আমাকে টান দিয়ে একদম সামনে এনে, তার এক হাত আমার কোমরে, আরেক হাত দিয়ে আমার যে গালে থাপ্পড় মেরেছিলো সে গালটাকে দু'আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করছে।
তুই জানিস তিশা আমি যখন জানলাম আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, তখনতো তুই ভালোবাসার মানেও বুঝতে পারতি না। তাই আমার ভালোবাসার কথা, অনুভূতি সব মনে রেখে দিতে হতো। কারন তোকে বললেও হয়তো তখন কিছুই বুঝতি না। কিন্তু এখন তো বুঝিস। তাহলেও কেনো এমন করিস আমার সাথে।
জিসান ভাইয়ের সব কথা যেনো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আমি উনার কাছ থেকে নিজেকে সরানোর চেস্টা করে বললাম,
"আমি বাসায় যাবো।" (কাঁপাকাঁপা গলায়)
উনি হঠাৎ আবার রেগে গেলো, আমাকে আরো কাছে টেনে এনে আমার ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে করে নিলো। আমি নড়তে চাইলে, তার আরেক হাত দিয়ে আমার চুলকে মুঠিতে ধরে রাখে। আমি যতই তাকে সরাতে চাইছি, সে ততোই আমাকে শক্ত করে ধরে। তাই আমি চুপ হয়ে যাই, এতে যেনো উনার জন্য আরো সহজ হয়ে গেলো। এতো বছরের মনের তৃপ্তি যেনো আজ সব মিটিয়ে ফেলছে। ১৫-২০ মিনিট পর জিসান আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে নিজের কপাল রেখে বলল,
"আজকের থাপ্পড়ের জন্য তুই যদি মনে করিস আমি তোকে সরি বলবো তাহলে ভুলে যা। কারন দোষ তোর ছিলো। আর কিস'টা ছিলো আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য। কখনো চেস্টাও করবি না আমার থেকে দূরে যাওয়ার। তোর জন্য ভালো হবে না।"
এই বলে আমার যে গালে থাপ্পড় মেরেছিলো সে গালে আরো একটা কিস করলো, শব্দ করে।
"মনে রাখিস, তুই দোষ করলে আমিই তকে জখম দেবো, আবার আমিই তোকে মলম দেবো।"
জিসান ভাই আবার গাড়ী চালাতে লাগলো, এখন বাড়ীর দিকে। আর আমি... আমিতো এখনো ঘোরের মধ্যে আছি, কি হলো আমার সাথে। এতোদিন তো ভয়ে তার দিকে তাকাতে পারতাম না, আর আজ লজ্জায়। আমারতো মন চাইছিলো চলতি গাড়ী থেকে লাফ দিই। গাড়ীটা বাড়ীর সামনে এলে, তাড়াতাড়ি নেমেই ভেতরে দৌড় দিই। জিসান ভাই কিছু বলার আগে।
দু'সপ্তাহ পর বিয়ের সব আয়োজন শুরু হলো। সে দিনের পর থেকে আমি সম্পূর্ণ ভাবে জিসান ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে সরে থাকলাম। এটা আর কেউ লক্ষ না করলেও জিসান ভাই ঠিকই বুঝতে পারলো। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার এটা করার কারনে আমার নিজের কূঁয়ায় আমি নিজেই পড়বো। বিয়ের দিন জিসান ভাইয়ের ভয়ে আমি নিশির সাথে বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে জিসান ভাই এসে, আমার হাতটা টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রায়হান ভাইয়ের সামনে গিয়ে বলল,
"রায়হান আমরা ছোট থেকে সব কাজ একসাথে করেছি, তাহলে আজ কেনো আমাকে ছাড়া তুই একা একা বিয়ে করছিস। আমার বিয়েও তোর সাথে আজ এবং এখন হবে।"
রায়হান ভাই কিছুক্ষন জিসানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, দুজনে একসাথেই বিয়ে করবো সমস্যা কি। আমি সব ব্যবস্থা করছি। তুই ঠান্ডা হ। এতক্ষন বাড়ীর সবাই যে যেখানে ছিলো ছুটে এসে পড়ছে, জানার জন্য জিসান কাকে বিয়ে করবে। জিসান ভাইকে সবাই অনেক বুঝালো যে বিয়েটা পরে করতে, কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া জিসান এক কথাই আটকে রইলো। সে আজই বিয়ে করবে, তা আবার আমাকে। আমারতো ভীষণ কান্না পাচ্ছে। হাতটাও ছাড়ছে না। আমি হাত ছাড়ানোর চেস্টা করলে, আমার দিকে ভিলেন ভাবে তাকালো। আমিতো ভয়ে আর এতো মানুষের মাঝে যেনো আরো বিড়াল হয়ে গেলাম।
অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেলো। যার থেকে দূরে সরে থাকতে চাইলাম আজ তার রুমেই বউ সেজে বসে আছি। কি কপাল আমার। যে মানুষটির সামনেই আমি আসতাম না এতোদিন, আর এখন তার সাথেই আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। এ কথা মনে পড়লেই কান্না পায়। কিছুক্ষন পর জিসান এসেই আমাকে ওযু করে আসতে বললো। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ওযু করে আসলে দুজনে নামায পরে নিই। নামায পড়ার পরই জিসান আমাকে কোলে তুলে নেয় আকস্মিক। আমার মনে হলো, আমার হার্টফেল হয়ে যাবে নিশ্চিত এখন। আমাকে বিছানায় শুইয়ে নিজেও আমার উপর শুয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে, উনার প্রতিটা নিশ্বাস আমার ঘাড়ের উপর পড়ছে।
"তোকে ছেড়ে থাকার সাধ্য আমার নেই, কারন তোকে তো আমি আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি পাগলি। তাই আমাকে ঠেলে তোর থেকে দূরে সরাতে চাইলে, আমি তোকে আরো কাছে টেনে নিবো। যতই দূরে সরে যেতে চাইবি, ততোই আমি তোর নিশ্বাসে... বিশ্বাসে মিশে যাবো।"
আমাদের বিয়ের আজ তিন বছর চলছে, আমার আজও মনে আছে রায়হান ভাই আমার মাথায় হাত রেখে বলছিলো, আমি জিসানের সাথে অনেক সুখে থাকবো। ঠিকই বলেছিলো, আজ আমিও জিসানকে অনেক ভালোবাসি। উনার ভালোবাসার পাগলামীতে নিজেকেও শামিল করে ফেলেছি। আর এখন আমার জীবন জিসান আর ঈশান কে নিয়ে পরিপূর্ণ। ঈশান আমার আর জিসানের ভালোবাসার এক অমূল্য দান আল্লাহর তরফ থেকে। আজও জিসান আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর উনার ভালোবাসা দেখে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়।
***(সমাপ্ত)***