আনহার যদিও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু বাবার কথা ভেবে যেতে হবে। সারাদিন আনহার সাথে ইহানের কথা হয় না। ..... বিকেলের দিকে আনহার মোবাইলে একটা কল আসে। আনহা বেশ খুশি হয়েই মোবাইলের কাছে যায়। গিয়ে দেখে আননোন নাম্বার..... মোবাইলে কলটা ধরে....
আনহা: হ্যালো.......
ওইপাশে: কেমন আছো অর্নি.......
ওইপাশে থাকা লোকটার কথা শুনে আনহার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে। এই কন্ঠোটা আনহার খুব পরিচিত...... মুহুর্তে আনহার দুনিয়া উলট পালট হয়ে যায়। কন্ঠোটা ভেঙে আসে কান্নায়.... ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দেয় আনহা। নিজের মুখে অস্পষ্ট ভাবে বলে উঠে....
আনহা: আদ্র.............. [ কান্না জড়িত কন্ঠে ]
আদ্র: হুমম.... চিনতে পেরেছ আমাকে....
আনহা: ভোলার কি কিছু আছে আদ্র.... আর মনে করার কোনো কি কারন আছে... [ ফুপিয়ে কান্না করে ]
আদ্র: আমি জানি আনহা সেদিন তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম। সত্যি নিজের জন্য একটু সেলফিস হয়ে গিয়েছিলাম.... কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পেরেছি তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি....
আনহা: বুঝতে যখন পেরেছ তাহলে ফোন কেন দিয়েছ...
আদ্র: আমি তোমার সাথে একটাবার দেখা করতে চাই...
আনহা: কেন দেখা করতে চাও.... আমি এখন অন্য কারো বউ। আমি মেরেড।
আদ্র: আমি জানি তোমার সাথে ইহানের বিয়ে হয়েছে। আর এটাও জানি বিয়েটা তুমি বাধ্য হয়ে করেছ....
আনহা:.........
আদ্র: প্লিজ আনহা আমি শুধু একবার তোমার সাথে দেখা করতে চাই। প্লিজ না করো না.... [ মিনতি করে ]
আনহা: বললাম তো আমি পারব না।
আদ্র: প্লিজ শেষ বারের মত। আর কোনোদিন চাইব না। তোমাকে কিছু বলার আছে আমার না করো না।
আনহা কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর বলে...
আনহা: ঠিক আছে আমি আসছি....
তারপর আনহা তৈরি হয়ে একটা রেষ্টুরেন্টে আদ্রের সাথে দেখা করতে যায়। আদ্র আগে থেকেই আনহার জন্য ওয়েট করছিল....
আনহা: কেন ডেকেছ আমাকে....??? নিজেই ত সব ভুলে চলে গিয়েছিলে তাহলে আবার কেন???
আদ্র: ক্ষমা চাইতে....
আনহা: ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। প্রত্যেকের নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার স্বাধীনতা রয়েছে। আর তাই তুমি যা করেছ তাতে আমি রাগ করিনি শুধু একটা প্রশ্ন ছিল। গিয়েছিলে যখন আমাকে বলার একটা বার প্রয়োজন বোধ করলে না কেন।
আদ্র: আমি এমন একটা পরিস্থিতি গিয়েছিলাম যে আমার হাতে সময় ছিল না তোমাকে বলার মত.... আর আমি ওখানে গিয়ে অনেকবার তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু পারিনি।
আনহা: এখন কেন আমাকে এসব বলছ.....
আদ্র: ক্ষমা চাওয়ার জন্য.....
আনহা: বললাম তো আমি আর রেগে নেই.... যাই হোক আমি এখন যাই....
আদ্র: আনহা.....
আনহা: তোমার বলা শেষ হয়েছে নাকি বাকি আছে বাকি থাকলে তারাতারি বলো আমাকে যেতে হবে.....
আদ্র:......
আনহা: তাহলে আসি.....
তখনি আদ্র আনহার হাত ধরে.....
আদ্র: আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই আনহা.....
আনহা: সেইটা পসিবল না । তুমি দেরি করে ফেলেছ। এখন আমি ইহানের স্ত্রী।
আদ্র: এটা সবাই খুব ভালো করে জানে ইহান বাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে তোমার সন্মান রাখতে.... আর তুমি ও তাই ইহানকে বিয়ে করেছ.... ইনফেক্ট তোমরা দুজনে একসাথে থাকবে না বলে ঠিক করেছ....
আদ্রের এমন কথায় আনহা বেশ অবাক হয়।
আনহা: তুমি...
আদ্র: আমি কিভাবে জানি তাইত.... আসলে তুমি কাল দুপুরে উকিলের কাছে গিয়েছিলে তখন আমি তোমাকে দেখি....
আনহা: [ ইহান বাড়ি দিয়ে যাওয়ার পর আমি উকিলের কাছে গিয়েছিলাম এটা ত ইহান জানে না। ] তাতে কি.....😡😡😡
আদ্র: তুমি যদি ইহানের সাথে থাকতে না চাও তবে আমার কাছে ফিরে এসো আনহা। কথা দিচ্ছি এবার তোমাকে নিরাশ করব না।
আনহা: তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
আদ্র: আমি বিদেশ গিয়ে অনেকবার তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আনহা হাজার চেষ্টার পর ও পারিনি৷ না তোমার সাথে আর না তোমার কোনো রিলেটিভ এর সাথে৷
আনহা:........
আদ্র: তুমি যদি চাও এবার সবার সামনে আমি তোমায় আপন করে নেব.... আর ইহান ও তোমার সাথে থাকতে চায় না। আর কিভাবে তুমি ওর সাথে সংসার করবে বল।
আনহা:
আদ্র: ও কোনোদিক দিয়েই তোমার সাথে ম্যাচ করে না আনহা। তোমরা দুজনেই আলাদা। তাছাড়া তোমরা নিজেরাও একসাথে থাকতে চাও না আনহা.....
আনহা: আমি আজ আসি আদ্র.....
আদ্র: আমি তোমাকে এখনো ততটাই ভালোবাসি। আর তোমার উপর জোর করব না। যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করবে। আমি ফিরে পেতে চাই তোমাকে.....
আনহা আর কথা বাড়ায় না....... চলে আসে নিজের বাড়ি.... আদ্রের সাথে তেমন কথা না বললেও আনহা মনটা ফুরফুরে হয় আদ্র ফিরি আসায়। কিন্তু বুঝতে পারে না ইহানকে কিভাবে বলবে......
সন্ধ্যার পর ইহান আসে। ইহান এসে দেখে আনহা বেশ খুশি.... ইহান মনে করে হয়ত নিজের বাড়ি এসেছে বলে আনহা খুশি...
ইহান: এত খুশি কেন???
আনহা: তোকে একটা কথা বলার ছিল....
ইহান: বলুন....
আনহা: আদ্র ফিরে এসেছে.....
[ আনহার মুখে আদ্রের কথাটা শোনা মাত্রই ইহানের চেহারা কালো মেঘে ঢেকে যায়। মুহূর্তে অজানা একটা ভয় গ্রাস করে ইহানকে। এত অপেক্ষার পর ইহান আনহাকে কাছে পেয়েছে ঠিকি কিন্তু নিজের করি পায়নি। আর আনহার সাথে সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হয়নি কিন্তু এখন আদ্র.... আনহা যদি আদ্রের কাছে যেতে চায় কি করে ফেরাবে.....
আনহা: কিরে চুপ করে আছিস কেন???
ইহান: তাতে কি হয়েছে??? ওনি তো চিরদিনের জন্য চলে যায়নি। ফিরছে তাতে কি???
আনহা: ও চায় আমি ওর কাছে ফিরে যাই।
[ কথাটা শুনে ইহানের বুকের ভিতর মোচর দেয় ]
ইহান: ওনি কি জানেন না আপনি বিবাহিতা.....
আনহা: হুমম জানে। আর এটাও জানে তোর সাথে বিয়ে হয়েছে.....
ইহান: তাহলে এসব কথা বলার মানে কি??
আনহা: ও জানে তোর আর আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। আমরা একে অপরের সাথে থাকতে চাই না তাই.......
এবার ইহান রেগে যায়.......
ইহান: আমাদের হাসবেন্ড & ওয়াইফের কথা ওনি কিভাবে জানল😡😡😡 প্রাইভেসি বলতে কি কিছু নাই। আমাদের ভিতরে কি হয় সেটা অন্যকেউ কেন জানবে???
আনহা: আমি কিছু বলিনি ও নিজেই জেনেছ....
ইহান: কিভাবে.....
আনহা: আমি ডির্বোসের জন্য উকিলের কাছে গিয়েছিলাম সেখান থেকে....
কথাটা শুনেই ইহান আকাশ থেকে পরে.....
ইহান: আপনি ডির্বোসের জন্য এপ্লাই করেছেন। তাও আমাকে না জানিয়ে.....[ অবাক চোখে ]
আনহা: হুমম। তোকে তো আগেই বলেছি। আরেকটা কথা আদ্র আমাকে ওর কাছে ফিরিয়ে নিতে চায়। এখন তুই কি বলিস ডির্বোসের পর আমার কি করা উচিত........
ইহান: আগে ডির্বোস হোক তারপর দেখব। আর রেডি হয়ে নিন.... আপনাকে নিয়ে বাসায় যাব...
আনহা: কিন্তু ডির্বোস......
ইহান: সেটা পেতে আপনাকে আমার বাসায় থাকতে হবে.... ১০ মিনিট টাইম। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি.......
তারপর ইহানের কথায় আনহা রেডি হয়ে গাড়িতে বসলে ইহান গাড়ি স্টাট দেয়....... আনহা নিজের মনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইহান ওর দিকে তাকিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মন দেয়.....
ইহান: [ অনেক কষ্টে আমি একবার আদ্রকে আপনার লাইফ থেকে সরিয়েছি ওকে দুরে পাঠিয়ে দিয়েছি কিন্তু এবার যদি ও আপনাকে আমার থেকে দুর করতে চায়। তবে আপনার ভালোবাসার মানুষ বলে সে পার পাবে না আনহা। ]
অতিতে..........
আনহার জন্মদিনে ভার্রসিটিতে আসলে সবাই আনহাকে wish করে আর গিফট দেয়। কিন্তু ইহান দেয় না। কারন ও আনহাকে সবার আগেই গিফট দিয়েছিল। যদিও আনহা সেটা জানে না। তাই আনহা ভেবেছিল আনহাকে ইহান wish করবে কিন্তু সেটা হয় না।
আদ্র, ইহান, আনহা অন্তি সবাই একসাথে ছিল তখনি আনহা বলে.....
আনহা: আদ্র তুমি কিন্তু বলেছিলে আজ আমাক ঘুরতে নিয়ে যাবে।
আদ্র: ওকে মেম আপনি যা বলবেন। আজকে কেন কোনোদিন ও না করব না।
আনহা: চলুন....
আদ্র: চলো.... [ তারপর কিছু একটা ভেবে ইহানের কাছে যায় ] ইহান আজ তোমার মেমকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাচ্ছি ও আজ তোমাকে পরাতে পারবে না। তুমি যেন কিছু মনে কর না। [ একটু পিন মেরে বলল ]
ইহান: Let's enjoy... আজকে আনহার ছুটি... ওনি আজকে বেড়াবেন....[ শুকনো হাসি দিয়ে ]
আদ্র: তোমার খারাপ লাগছে....
ইহান ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আদ্র কিছু সন্দেহ করছে ওকে নিয়ে.....
ইহান: হুমম লাগছে কিন্তু আনহা নয় অন্য কারো জন্য.... সে যাই হোক আমি আসি......[ বলে বেড়িয়ে যায় ]
আদ্র: অনেক চালাক ভাব নিজেকে তাই না ইহান। আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি আনহাকে নিয়ে তুমি কিছু ফিল কর কিন্তু সেটা স্টুডেন্ট - টিচারের মত নয়..... অন্য কোনো ভাবে...... যা আমি হতে দেব না। কারন এটা অন্যায়। তুমি ছোট তাই বুঝতে পারছ না.....
তারপর আদ্র আনহাকে নিয়ে যায়....
আদ্র: আজ তুমি না বললেও তোমাকে নিয়ে যেতাম তোমার প্রিয় জায়গায়....
আনহা: তাইত এত ভালোবাসি চল...
ঠিক ১৫ মিনিট পর.....
আদ্র আনহাকে নিয়ে মাঝরাস্তায় গেলে আদ্রের বাইক টা বন্ধ হয়ে যায়। আদ্র নেমে বাইকটা দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে.....
আনহা: কিহল....
আদ্র: নষ্ট হয়েছে....
আনহা: এখন...
আদ্র: আজ আর যাওয়া হবে না।
কথাটা শুনে আনহার মন খারাপ হয়.....
আনহা: আচ্ছা....
তখনি ইহানের ফোন আসে.....
আনহা: হা বল....
ইহান: আপনার ব্যাগে মনে হয় আমার নোটস...
আনহা: দারা দেখছি.... আরে হ্যা পেয়েছি...
ইহান: আজকে কি দিতে পারবেন। আসলে আমার দরকার ছিল। কিন্তু আপনি তো আদ্র এর সাথে ঘুরতে গেছেন...
আনহা: আর ঘোরা... আদ্রের বাইক নষ্ট হয়ে গেছে....
ইহান: তাহলে....
আনহা: প্লান ক্যান্সেল.....
ইহান: আপনি কোথায় আছেন বলুন আমি নোটস নিয়ে যাচ্ছি....
আনহা: আমি.......
ইহান: আমি আসছি।
ঠিক ৫ মিনিট পর ইহান একটা বাইক নিয়ে আসে......
আনহা: এতো তাড়াতাড়ি তাও বাইক কোথায় পেলি.....
ইহান: আজ আমি বাইক নিয়ে এসেছি। আপনি খেয়াল করেনি। আর আমি পাশেই ছিলাম তাই তারাতাড়ি আসতে পেরেছি।
আনহা: তা ভালো.....
ইহান: আচ্ছা আমার নোট টা দিন আমি চলে যাই.......
আনহা: এইনে....
ইহান চলে গিয়ে আবার ফিরে আসে......
ইহান: আপনি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন আমার মনে হয় না ওনার বাইক আজ ঠিক হবে তাছাড়া এখানে কোনো গাড়িও আসবে বলে মনে হয় না। এখন কি করবেন....
আনহা: সত্যি কি করব বলত....
ইহান: ভাবুন....
আনহা: আমি কি ইহানের সাথে বাসায় যাব আদ্র....
আদ্রের কিছুতেই আনহাকে যেতে দেবে না। কিন্তু এখন ও বাধ্য কারন সন্ধ্যার পর আনহার বিপদ হতে পারে.....
আদ্র: ঠিক আছে যাও তুমি....
আনহা গিয়ে ইহানের বাইকে বসে পরে। এটা দেখে ইহান আদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দেয়....
ইহান: সরি আজকে আপনার গার্লফ্রেন্ড বাসায় যাবে তাই ঘুরতে যেতে পারবে না। মন খারাপ করবেন না.....
ইহানের কথায় আদ্রের গা যেনো জ্বলে যাচ্ছে....
আদ্র: আমার কথা আমাকে ফেরত দিচ্ছ.... ইহান....
ইহান: নাহহ শুধু বুঝিয়ে দিলাম। আমার সাথে গেইম খেলার চেষ্টা করবেন না তাহলে নিজে পস্তাবেন।
আদ্র: তোমাকে আমি দেখে নিব...
ইহান: আগে বাইক দেখেন..... আর এমনিতেও কয়দিনের মেহমান আপনি......
[ বলে আর দাড়ায় না আনহাকে নিয়ে বাইকে করে চলে আসে ]
আদ্র: তুমি ভুল করছ ইহান। তুমি যেটা চাইছ তা কখনোই হবার না।
আনহা: এই তুই কই যাস....
ইহান: গেলেই দেখতে পাবেন।
আনহা: এটা তো বাড়ির রাস্তা না....
ইহান: হুমম কারন বাড়ি যাচ্ছি না। [ বাকা হেশে ]
তারপর আনহা ইহানকে ওর পছন্দের জায়গায় নিয়ে যায়.....
নদীর তীরে বালুর চরে......
আনহা: তুই এখানে নিয়ে এলি কেন???
ইহান: কেন ভালো লাগেনি আপনার....
আনহা: আমি খুশি মানে.... [ আনহা গিয়েই ইহানের হাতটা ধরে দৌড়। আনহার এমন আচরনে ইহান জাস্ট অবাক হয়। ]
ইহান: আনহা প্লিজ থামুন....
আনহা ইহানকে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। তারপর ওর গাড়ে মাথা রেখে গোধুলি লগ্ম দেখেতে থাকে....
আনহা: আজকের দিনটা আমি আদ্রের সাথে এভাবে কাটাতে চেয়েছিলাম... [ নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ]
ইহান: [ শুধু আজ নয় আনহা সারাজিবন আপনি আপনার প্রতিটি মুহূর্ত আমার সাথে কাটাবেন। যেখানে আদ্র না শুধু ইহানকে পাবেন ]
তারপর ইহান আনহাকে বাসায় দিয়ে নিজের বাসায় ফিরে আসে.....
তারপর নিজের রুমে গিয়ে ওর প্রাইভেট রুমে যায়। সেই রুমের কথা ইহান ছাড়া কেউ জানে না। ওর নিজের রুমের সাথে এটাচ করা। কিন্তু এমন ভাবে দেখলে বোঝা যায় না।
ইহান ভিতরে ডুকতেই আনহার ছবি গুলো ইহানের মুখে উড়ে আসে.... এখানে আনহার হাজার হাজার ছবি আছে। প্রতিটি মুহুর্তের ছবি আছে এখানে যা ইহান লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছিল।
ইহান: অনেক হয়েছে আনহা এবার আপনাকে আদ্রকে ছাড়তে হবে। আমার কিছু করার নেই। আদ্র থাকলে ওনি কখনো আমাকে আপনার সাথে থাকতে দেবেনা........
তার কিছুদিন পর আনহা অন্তির সাথে ওর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়..... হঠাৎ করে যেতে হয় আনহাকে কোনো এক রিলেটিভের বিয়ের জন্য নিজেদের নয়। কিন্তু দুর সম্পর্কের.......
বিয়ে শেষে কিছুদিন পর আনহা ঢাকায় ব্যাক করে। কিন্তু আদ্রোর কোনো খোজ পায় না। পরে খবর নিয়ে জানতে পারে। আদ্রো স্কলারশিপ পেয়েছে বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য। তাই ও চলে গিয়েছে।
আনহা: গেলে যেতে না করতাম না। কিন্তু একটা বার আমাকে বলে যাবার কি প্রয়োজন পড়ল না।
তারপর আনহা একবারে ভেঙে পরেছিল। তখন ইহান ছায়ার মত পাশে থেকে আনহাকে আগলেছে.... ইহান আর অন্তি এই সময় পুরো পুরি আনহাকে সাপোর্ট দিয়েছে।
ইহান: সরি আনহা এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।
এভাবে কেটে যায় সময়। আনহা অনার্স কমপ্লিট করে মার্স্টাসে ভর্তি হয়.... আর ততদিনে ইহান আনহাকে নিয়ে আরো বেশি প্রটেক্টটিভ হয়ে উঠেছিল। অন্তি ছাড়া কোনো মেয়েকেও ইহান আনহার আশে পাশে সহ্য করতে পারত না। এমনকি অন্তি যখন বেশিক্ষন আনহার সাথে থাকত সেটাও ওর পছন্দ হত না।
একদিন কতগুলো ছেলে আনহাকে খুব বিরক্ত করে আর এইটা ইহান জানতে পারে...... আর তার পরেরদিন আনহা জানতে পারে কে বা কারা যেন ছেলেগুলোকে মেরে খুব খারাপ অবস্থা করেছে। তার কিছুদিন পর ওরা আনহাকে সরি বলে যায়.......
অন্তি: আচ্ছা আনহা একটা কথা বলত....
আনহা: বল.... [ বই দেখতে দেখতে ]
অন্তি: যখন আদ্র ছিল তখনও তোকে অনেক ছেলে প্রপোজ করত। কিন্তু ও যাওয়ার পর কেউ করল না। আবার যারা করেছিল তারা পরে তোকে বোন বানিয়ে কেটেছে ব্যাপার কি???🤔🤔🤔
আনহা: জানিনা। আর না জানার ইচ্ছে আছে। এসব নিয়ে আর ভাবিনা। যা ছিল আদ্র যাওয়ার সাথে চলে গেছে......
অন্তি: কিন্তু....
আনহা: কোনো কিন্তু না.... আমি আসছি....
অন্তি: আসলেই অদ্ভুত.........
আনহার মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে আর আনহাও রাজি হয়ে যায়। কারন না করার কোনো কারন নেই...... ততদিনে ইহান আনহার পরিবারের ও ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল। ইহানের বয়স তখন কেবল ১৯। ইহান আনহার বাসায় যায়......
আনহার মা: ইহান এসোছ... নেও মিষ্টি খাও....
ইহান: কিসের আন্টি......
মা: আনহার বিয়ের.....
[ কথাটা শুনে ইহানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে ]
ইহান: আনহার বিয়ে মানে... উনি রাজি হয়েছেন???
মা: আর কত না করবে। মেয়ে যখন বিয়ে তো করতেই হবে তাই না.......
ইহান: আমি আজ আসছি আন্টি....... [ বলে চলে যায় ]
তারপর আনহার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। সবাই বিয়েতে খুব খুশি। কিন্তু বিয়ের ঠিক একদিন আগে আনহার বিয়েটা ভেঙে যায়........ তারপর অনেকবার বিয়ের জন্য ট্রাই করে কিন্তু প্রতিবার এক ঘটনা হয়। সবকিছু ঠিক থাকে কিন্তু শেষ মুহূর্তে সবটা শেষ হয়ে যায়.......
এভাবেই কেটে যায় ২ বছর। অসংখ্য বার বিয়ে হতে গিয়েও হয় না।
তারপর নিজে থেকে একদিন আনহার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে.... কিন্তু বিয়েটা আর ওই ছেলেটার সাথে হয় না। হয় ইহানের সাথে। আর তার পরের বাকি কাহিনিটা সবার জানা.....
বর্তমান.. …........
আনহা: কি করছিস??? দেখে গাড়ি চালা ইহান..... [ বলেই গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুড়িয়ে কোনোরকম এক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাচায় ]
আনহা: কি করছিস তুই.....
ইহান স্টেয়ারিং এর উপর মাথা দিয়ে আনহার দিকে তাকায়। আনহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বুকে জড়িয়ে ধরে....
আনহা ইহানের ব্যাবহারে জাস্ট অবাক হয়ে যায়.......
তারপর ইহান আর কোনো কথা বলে ওকে নিয়ে বাড়িতে যায়......
ইহান: আনহা আপনি বাড়ি যান আমি আসছি....... [ তারপর চলে যায় ]
আনহা কিছুই বুঝতে পারে না কি হয়েছে..... ও ভিতরে যায়.......
ইহান একটা খোলা জায়গায় যায়। নিজের যত রাগ সব গাড়ির উপর দেখায়। খুব জোরে জোরে গোল করে মাঠে গাড়ি ঘুরাতে থাকে.....
ইহান: আমি যদি পারতাম তাহলে ২ বছর আগেই আপনাকে নিজের করে নিতাম কিন্তু আমি সেটা চাইলেও করতে পারতাম না। কারন আমার সময় দরকার ছিল। আদ্রকে আপনার লাইফ থেকে দুর করার পর আমি জানতাম আপনি আর কারো সাথে জড়াবেন না। কিন্তু ২ বছরের মাথায় আপনি বিয়ে করতে রাজি হন। কিন্তু আমি সবটা শেষ করেছি কিন্তু এখন যখন আমি আপনাকে পেয়েছি আপনি আমার কাছে ধরা না দিয়ে চলে যেতে চাইছেন। আমি তো এটা হতে দেব না আনহা............
আর ওদিকে আনহা সর্দিতে মরে যাচ্ছে... কিছুক্ষন পর পর খালি হ্যাচ্চো দিচ্ছে..... তখনি মনে পরে ইহান ওকে ওষুধের কথা বলেছিল। আনহা গিয়ে ওষুধটা খায়। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। এরপর কিছুক্ষন পর পর করে ৩ বার খায় ওষুধ টা। কিন্তু সর্দি আর কমেনা.......
আনহা: কি ওষুধ রে এত বার খেলাম তাও কমল না😡😡😡😡 ওই যদি অসুখ সারাতে না পারিস তবে কিসের ওষুধ রে তুই.....
আনহার অবস্তু দেখে ওষুধের মনে হচ্ছে ওকে বলতে.... " মা ছেড়ে দে একবারের জন্য সব ওষুধ খেলে কি আর অসুখ ছাড়ে 😭😭😭 শুধু শুধু বদনাম ]
আনহা: নাহহহ এবার তোকে পুরোটাই খাব.....[ বলেই পুরো বোতলের ওষুধ টাই পানি মত ঢকঢক করে খেয়ে নেয়.......
আনহা: যাহহহ এবার শান্তি.... [ ঢেকুর তুলে ] কিন্তু মাথাটা কেমন করছে না। সবটা একটার জায়গায় কেমন ২ / ৩ টা লাগছে না। [ বলে ঠাস করে পরে যায় ]
প্রায় রাত ১০ টার দিকে ইহান আসে...... এসে যা দেখে তা দেখে ওর চোখ কপালে....
ইহান: আনহা কি হয়েছে আপনার।।।।।
আনহা: আমার না সব কেমন জানি উল্ট লাগছে😭😭😭
ইহান: উল্টোই লাগবে কারন আপনি মাটিতে মাথা আর বিছানায় পা দিয়ে শুয়ে আছেন।🙄🙄🙄🙄
আনহা: হায় আল্লাহ আমি তো খেয়ালি করিনি....😲😲😲
ইহান: হুমম কিন্তু কি হয়েছে আপনার....🙄🙄🙄
আনহা: তোর দেওয়া ওষুধ খুব বাজে খাওয়ার পর সর্দি কমলো না বরং মাথা ব্যাথা করছে.......
ইহান: আপনি কতটুকু খেয়েছেন???🙄🙄🙄
আনহা: একটু খেয়ে কাজ হয়নি তাই পুরো বোতলটাই সাভার করে দিয়েছি। তবে খেতে খারাপ না😇😇😇😇
এবার ইহান বুঝতে পারে ওষুধের ওভার ডোজে আনহার নেশা হয়েছে........
ইহান: আমি আপনাকে বলেছি এক চামচ খেতে। যাই হোক চলুন শুইয়ে দি.....
[ আনহাকে কোলে তুলে নিয়ে শুইয়ে উঠে যেতেই। আনহা পিছন থেকে ইহানকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করে ]
ইহান: কিহল আপনার???
আনহা: তুই না খুব পচা.... 😭😭😭
ইহান: কেন???
আনহা: আমার কথা শুনিস না। 😭😭😭
ইহান: কি কথা শুনিনি আপনার???
আনহা: এই যে আমি একটা কথা বললে তার কোনো গুরুত্ব তুই দেস না।
ইহান: আপনি বড় হয়ে যদি বাচ্চামো করেন তাতে আমি কি করতে পারি।
আনহা: আমি মোটেও ছোট নই অনেক বড়। তাই তুই আমার সব কথা শুনবি।
ইহান: হুমম.... কি কথা.....
আনহা: আমি আদ্রোর কাছে যাব....
এইটা শুনে ইহান আনহার দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে।
ইহান: কেন???
আনহা: ও আমায় অনেক ভালোবাসে।
ইহান: আমি যে ওর চেয়ে বেশি আপনাকে ভালবাসি তার বেলায়।
আনহা: মিথ্যে কথা। তুই শুধু বকিস আমায়...
ইহান: বাচ্চামো করেন কেন???
আনহা: আমি বাচ্চা নই। আমি তাই আদ্রর কাছে যাব।
ইহান: আর যদি যেতে না দেই আটকে রাখি তবে।
আনহা: পালিয়ে যাব😁😁😁
ইহান: তখনো যদি না দেই তবে।।।।
আনহা: তাহলে আমি ঘুমাব......
ইহান: আচ্ছা তবে তাই করুন.।।।।। [ আনহার কপালে ভালোবাসার পরশ একে..... ]
আনহা আবার ইহানকে জড়িয়ে ধরে ইহানের গালে একটা কিস করে......
ইহান: এটা কি হল....
আনহা: তুই দিলি তাই আমিও😁😁😁😁
ইহান: I love u anha..... এবার কি বলবেন???
আনহা: Lebo 3..... [ ইহানের গলা জড়িয়ে ঠোঁট উলটে ইহানের বুকে মাথা রাখে আনহা। ]]
ইহান: [ আচ্ছা আজ যদি নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসতে চাই তবে কি খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে আমার। আমি নিরুপায় আনহা.... আমি এটা করতে চাইনি কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করলেন এটা করতে। আমি এমনিতেও আপনাকে কারো সাথে সহ্য করতে পারিনা। আর হাসবেন্ড হিসেবে অন্য কারো সাথে তো নয়ই। আমাকে এটা করতেই হবে অত্যন্ত আপনাকে আমার কাছে আটকে রাখার জন্য........... ]
তারপর ইহান আনহার কপালে ভালোবাসার পরশ ছুইয়ে আনহাকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। ভালোবাসায় ছুইয়ে দেয় আনহাকে..........
—
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইহান দেখে আনহা ঘুমিয়ে আছে। ও আর আনহাকে ডাক দেয় না। আনহার কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। তারপর রেডি হয়ে বেড়িয়ে যায়। ও জানে এসবের পর আনহার রিয়েকশন কেমন হবে।
ইহান: ভাগ্যিস বাবা মা কাল চলে গেছে। এবার যে কি হবে আল্লাহই জানে.......
আনহার ঘুম ভাঙলে মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে। প্রচন্ড ব্যাথা করছে মাথায়। ঘড়ির দিকে তাকাতেই আনহার চোখ ছানাবড়া। ১১ টা বাজে। এত বেলা করে ও ঘুমোয় না। আনহা বিছানা থেকে নামতেই নিজের দিকে খেয়াল যায়। নিজেকে দেখে ওর বুঝতে বাকি থাকে না কাল রাতে ওর সাথে কি হয়েছে.........
মুহুর্তের মধ্যে পুরো পৃথিবীটা আনহার মাথায় ভেঙে পরে। কি হয়েছে সেটা ভাবতেই আনহার পুরো শরীর কাপতে থাকে....... ওর মুখ থেকে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না। চোখের সামনে ঝাপসা দেখছে আর চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পরছে......
আনহা: কি করলি এটা তুই ইহান..... নিজ হাতে এভাবে সবটা শেষ করে দিলি। কেন করলি......... [ ভাবতেই আনহার মাথাটা ভারি হয়ে আসে ]
তারপর আনহা গিয়ে শাওয়ার অন করে তার নিচে শান্ত হয়ে বসে দেয়ালে মাথাটা হেলান দেয়।
সারাদিনে ইহান আর বাড়ি আসে না। রাতের দিকে বাড়ি ফেরে ইহান। বাড়িতে ঢুকতেই ও অবাক বাড়িতে কেউ নেই। এমনকি কোনো কাজের লোক ও নেই। পুরো বাড়ি অন্ধকার। ইহান কিছু বুঝতে না পেরে রুমে যায়।
ইহান: আনহা..... আনহা...... আনহা আপনি কোথায়............
রুমে ডুকে লাইট জালায় ইহান। আনহাকে দেখে বেশ অবাক হয়। আনহা বিছানার এককোনে হাটুতে মুখ গুজে রয়েছে। ইহান চেয়েও আনহাকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না। আনহাকে এতটা শান্ত দেখে ইহানের কলিজায় পানি শুকিয়ে যাচ্ছে..... ইহান খুব সফটলি আনহাকে ডাকে.......
ইহান: আনহা...... [ কাধে হাত দিয়ে ]
আনহা শান্ত চাওনিতে ইহানের দিকে তাকায়। ইহান আনহার চোখে চোখ রাখতে পারল না। চোখ টা নামিয়ে নিল.... আনহার পুরো মুখ ফলে লাল হয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর কান্না করার ফল। চোখ মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না.......
আনহা: কেন করলি এটা.... [ খুব শান্ত ভাবে গুটিশুটি মেরে বিছানার দিকে তাকিয়ে কাপতে কাপতে ]
ইহান:........
ইহান: কেন করেছিস এমন..... [ একটু জোরে ]
ইহান: আমি........
তারপর আনহা উঠেই ইহানের গালে নিজের শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। ব্যলেন্স রাখতে না পেরে ইহান দু পা পিছিয়ে যায়.....
আনহা গিয়ে ইহানের শার্টের কলার ধরে বলতে শুরু করে......
আনহা: যখন তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি এই সম্পর্কটা চাই না। যখন এই সম্পর্কের কোনো মানেই নেই তাহলে কেন করলি এটা...... এটা জেনেও আমাদের কারো পক্ষে এই সম্পর্ক রাখা পসিবল না। তারপর ও কেন করলি এটা...... আমরা কেউ তো এই সম্পর্ক চাই না তাহলে কেন করলি এটা....... [ কাদতে কাদতে ফ্লোরে বসে পরে ]
এবার ইহান চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে নেয়। ও এসব হবে জানত কিন্তু নিজের কাছে এতটা খারাপ লাগবে তা জানা ছিল না।
আনহা: কেন করলি তুই এটা??? আমার সাথে এত বড় অন্যায় কেন করলি??? [ অঝোরে কান্না করে ]
এবার ইহান কথা বলে......
ইহান: আমি অন্যায় করেছি। অনেক বড় অপরাধ করেছি আমি তাইত..... আচ্ছা মেনে নিলাম আমি অপরাধ করেছি। তবে আপনাকে এবার আমার অপরাধটা কোথায় হয়েছে সেটা বলতে হবে....... মানে আমি কি অন্যায় করেছি.......
আনহা বেশ অবাক চোখে ইহানের দিকে তাকায়........
আনহা: মানে.... তোকে এখন আমাকে এটা বলতে হবে তুই কি অন্যায় করেছিস.....??? তুই জানিস না, বুঝতে পারছিস না.....
ইহান: হ্যা জানিনা আর না বুঝতে পারছি ..... আপনি বলুন কি অন্যায় করেছি আমি আপনার সাথে আর কি অপরাধ আমার.....
আনহা এবার প্রচুর রেগে ইহানকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে ধরলে ইহান আনহার হাতটা ধরে.....
ইহান: আপনি ভুলে যাবেন না আনহা আমি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও আমি আপনার হাসবেন্ড...... তাই আমার শরীরে হাত তোলার আগে আপনাকে ১০ বার ভাবা উচিত। আপনি এখনো বাচ্চা নেই আনহা...... আপনার এতটা বুঝ আমি আশা করতে পারি.......
আনহা: আমাকে টাচ করার পার্রমিশন তোকে কে দিয়েছে..... কেন করলি তুই এটা.....
ইহান: হ্যা অন্যায় করেছি আমি... আমি মানছি আপনার দিক থেকে মনে হচ্ছে আমি অন্যায় করেছি। এটা করার জন্য আপনার সন্মতির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আপনি কেন ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার হাসবেন্ড। আপনার উপর আমার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার বোধ থেকে যদি আমি আপনার কাছে যাই তবে আমার মতে আমি কোনো অন্যায় করিনি.... আর এমনিতেও অধিকার যখন আমার রয়েছে তখন এরকম ভুল আমি আবার করব দরকার হলে.......
আনহা: কিন্তু আমি মানিনা এই সম্পর্ক। আমি নিজের ইচ্ছায় তোকে বিয়ে করিনি। আর না তোকে স্বামী হিসেবে মানি......
ইহান: কিন্তু আমি সেচ্ছায় আপনাকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আর আপনি না মানলেও আমি আপনাকে মনে প্রানে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানি। আর স্বামী হিসেবে কোনো অন্যায় করিনি আমি....
আনহা: আমি মানিনা কিচ্ছু মানিনা....
ইহান: আপনাকে মানতে হবে আনহা। আমি আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিয়ে করিনি। আর না দয়া বা করুনা করে। বিয়ে মানুষের বার বার হয় না। একবারই হয় আর আমি আপনার সাথে সারাজিবন কাটাতে চাই আনহা.....
আনহা: আমি তোর সাথে থাকতে চাই না। তুই সেই ইহান নস যাকে আমি চিনি।। আমি চলে যাব তোকে ছেড়ে.... চলে যাব [ পাগলের মত কান্না করে ]
ইহান গিয়ে আনহাকে জড়িয়ে ধরে।
ইহান: আনহা প্লিজ শান্ত হন। আমার কথাটা শুনুন..... আনহা....
আনহা: তুই ছাড় আমাকে। আমি তোর সাথে থাকব না। এইটা কোনো বিয়ে না। এখানে কিছুই নেই না বিশ্বাস না ভালোবাসা। আমি থাকব না তোর সাথে.......
ইহান: আনহা প্লিজ আমার কথাটা একটা বার শুনুন....
আনহাকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না ইহান। ও পাগলের মত করছে......
ইহান: I love u Anha........ তাই আপনাকে বিয়ে করেছি। নিজের অজান্তেই আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি.... [ আনহার মুখ নিজের মুখের কাছে এনে শক্ত করে ধরে খুব জোরে চিল্লিয়ে ]
আনহা এইটা শুনে শান্ত হয়ে যায়.... অশ্রুসিক্ত চোখে ইহানের দিকে তাকায়..... তারপর ইহান শান্ত ভাবে বলে.....
ইহান: হ্যা আনহা। ভালোবাসি আপনাকে। কেন কিভাবে জানিনা। শুধু জানি আপনি আমার। আমি জানি আপনার থেকে ছোট হয়েও এই জিনিসটা ভাবা আমার ভুল ছিল কিন্তু আমি এই ভুলটার জন্য কখনোই অনুতপ্ত নই.... বরং এই ভুলটা বার বার করে আমি আপনাকে চাই। আমার #আপনিময়💓তুমি করে............
ইহানের মুখে আপনিময়💓তুমি শব্দটা শুনে আনহার বুকে মোচর দেয়। কারন এইটা আনহাকে সেই ছায়া মানুষ টাই বলত যে কিনা আনহাকে বার বার জোর করে কাছে টেনে নিত কিন্তু ধরা দিতে গিয়েও ধরা দিত না। যাকে আনহা হাজার বার ধরার চেষ্টা করেও পারেনি। আনহার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ওই লোকটা আর কেউ নয়.... ইহান......
আনহা: তারমানে.... বিগত ৪ বছর যাবত যে বারবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছে সে অন্য কেউ নয় তুই ইহান..... [ আনহার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলল ]
ইহান এইটা শুনে আনহাকে ছেড়ে দারায়। মুহুর্তে ইহানের চোখে মুখে কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে.... এখন কি বলব সে আনহাকে......
ইহান: [ এ আমি কি বলে ফেললাম ]
আনহা: কিরে কথা বলছিস না কেন???
ইহান:........
আনহা: তারমানে ওই লোকটা তুই ছিলি। যার জন্য দিনের পর দিন আমাকে..... [ আর সহ্য করতে পারল না আনহা নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে আনহার ]
ইহান:............
আনহা: ছিহ ইহান... ছিহ। আজ আমার নিজের প্রতি ঘৃন্য হচ্ছে। আমি একটা ভুলকে ভালোবেসেছি.... নিস্পাপ ফুলের কলির মত আমি তোকে ভালোবেসেছি। নিজের স্নেহের সাথে তোকে আগলে রাখতে চেয়েছি আর তুই তার বিনিময়ে আমাকে এই প্রতিদান দিলি ইহান.....
ইহান আর কিছু বলতে পারে না। কারন ও খুব ভালো করেই জানে ওর অন্যায়টা ছোট কোনো ভুল নয়.....
ইহান: I'm sor.....
বলার আগেই আনহা ইহানকে আরেকটা থাপ্পড় মারে।
আনহা: আমার সাথে এমন করার আগে কি তোর একটা বার বিবেগে বাধল না। তুই আমার আর তোর বয়সের কথা না হয় বাধ দেয়। এসব করার আগে একটা বার তো ভাবা উচিত ছিল আমি তোর টিচার হই.....
ইহান:.......... [ মাথা নিচু করে ]
আনহা: তুই শুধু আমার স্নেহ ভালোবাসাকে অপমান করিসনি। সবচেয়ে বড় সম্পর্ক নিজের শিক্ষকের সম্পর্ক টাও কলংকিত করেছিস..... কিভাবে পারলি....
ইহানের চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আনহা ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে.....
আনহা: জানিস ইহান ছোট বেলা থেকেই তোকে কখনো নিজের থেকে আলাদা কিছু মনে করিনি। সেই প্রথম যেদিন তোকে দেখেছিলাম কেন জানিনা তোর প্রতি আলাদা একটা মায়া জন্মেছিল। একটা ছোট্ট নিস্পাপ ছেলে সবার মার খেয়ে মাঠের কোনে গাল ফুলিয়ে বসে ছিল। খুব মায়া হচ্ছিল পিচ্চিটার জন্য.....
ইহান:...........
আনহা: কারো সাথে যখন পিচ্চিটা না মিশে আমার সাথে মিশত নিজেকে অনেক হ্যাপি করতাম। আস্তে আস্তে পিচ্চিটা যখন আমার জন্য পাগলামি করত নিজের অজান্তেই বার বার নিজেকে ওর গারজিয়ান মনে করতাম। আর ভাবতাম আর যাই হোক ওকে কষ্ট পেতে দেব না। যে মেয়ে সবার কাছে ছোট ছিল একমাত্র ইহান নামের ওই পিচ্চিটার জন্য নিজেকে বড় ভাবত..... সবসময় খালি একটাই কথা মনে পরত আর যাই হোক আমার পিচ্চিটাকে আমি কোনো কষ্ট পেতে দেব না। কারন খুব সরল ছিল আমার পিচ্চিটা....
ইহান:.....
আনহা: তারপর যেদিন পিচ্চিটাকে ছেড়ে আসলাম নিজের বুকে পাথর বেধেছিলাম। বুঝেছিলাম ওর অনেক কষ্ট হয়েছে..... কিন্তু ওর চেয়ে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছিলাম তা ওকে চেয়েও বুঝাতে পারিনি না বুঝাতে চাইনি.......
ইহান:.......
আনহা: ওকে ছেড়ে আমি ৫ বছরে বিশ্বাস কর পিচ্চিটাকে একবার ও ভুলতে পারিনি... কারন আমি ওর """আপনি""" ছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো পাপ ছিল না ইহান........
তখন ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরত কিন্তু তাতে কোনো রকম পাপ ছিল না তা ছিল নিস্পাপ.....
ইহান:..........
আনহা: তারপর যখন ওকে ভার্রসিটি তে দেখি ৫ বছরের খুশি একসাথে হয়েছিলাম। হাতে চাঁদ পাওয়ার মত খুশি হয়েছি...... ভেবেছিলাম ৫ বছরের অভিমান আমি ভেঙে দেব..... আমার নিস্পাপ ইহানকে আমি নিজের স্নেহের চাদরে মুড়িয়ে নেব.....
ইহান:........
আনহা: কিন্তু আমি ভুল ছিলাম জানিস.... আমি ওকে নিস্পাপ ভাবলেও ও আমার কাছে নিস্পাপ হয়ে ফেরে অত্যন্ত জঘন্য একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল। যার কারনে আজ আমাকে এর মাসুল দিতে হচ্ছে......
ইহান: চুপ করুন আনহা...... আর শুনতে পারছি না। প্লিজ আমাকে এভাবে বলবেন না......
আনহা: যেটা আমি অমৃত শুধা ভেবে বিলিয়েছি তা আজ বিষ হয়েছে...... ভুল ছিলাম আমি... তোর দোষ নেই। আমি অপাত্রে দান করেছি। শাস্তি আমাকে পেতেই হত তাই পাচ্ছি। ঠিক করেছিস তুই কোনো ভুল নেই তোর.......
ইহান: আমাকে.......
আনহা: চলে যা ইহান আমার সামনে থেকে.... তোর মুখ দেখলে নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে। আমি নিতে পারছি না। প্লিজ আমি তোর পায়ে ধরি তাও তুই চলে যা.... [ হাত জোর করে কান্না করে ]
ইহান আর কিছু বলতে পারল না আনহাকে....…. ইহান আনহার সামনে থেকে চলে আসে....... আর আনহা মেঝেতে লুটিয়ে কান্না করতে থাকে.........
ইহান: আপনি তো কত সহজেই সবটা বলে দিলেন। কিন্তু আমার পক্ষে তো সবটা এতটা সহজ ছিল না আনহা..... আমি যখন বুঝেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি নিজের প্রতি অনেক রাগ হয়েছিল। সবটা শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম নিজের অন্যায় আবদারের কাছে..... কিন্তু পারিনি মন আর মতিষ্কের মাঝে বিবেগটাই হেরেছে আবেগের কাছে.... আমি জানতাম আপনি কোনোদিন আমাকে মেনে নিবেন না কিন্তু আমি তো অপারগ ছিলাম..... আমি তো কোনোদিন আপনাকে অন্যকিছু ভাবিনি শুধু """ আপনিময়💓তুমি""" ভেবেছি আপনাকে আনহা........ যাকে আর যাই হোক কখনো ছেড়ে থাকার কথা ভাবিনি। আর আমি আপনাকে অপমান করতে চাইনি আনহা শুধু ভালবেসেছি..... তার জন্যই আপনাকে বিয়ে করে নিজের ভালোবাসাকে পেতে চেয়েছি...... এতে কি ভুল ছিল আমার.........
ইহান: আমি জানি আনহা আপনার সাথে ওইরকম আচরন করে আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু ভালোবেসে কোনো অন্যায় করিনি। কারন মানুষের ফিলিংস কোনো কিছুর জন্য সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা ধর্ম বর্ন জাত কিছুই মানে না.... সেখানে আমার দোষটা কই আনহা....... আমিও তো শুধু আপনাকে চেয়েছি...............