ফোন ফেলে আমি চিৎকার মেরে ভাইয়ার রুমের দিকে দৌড়...
-ভাইয়া, ভাইয়া...ভাইয়া... দরজা খোলো ভাইয়া...প্লিজ ভাইয়া দরজা খোলো...খোলো দরজা প্লিজজ...
ভাইয়া দরজা খুলে আমার অবস্থা দেখে ভীত হয়ে গেছেন। পাশের রুম থেকে আম্মু দরজা খুলে চুলের খোপা পেচাতে জিজ্ঞেস করলেন, "কিরে কিরে কে চিৎকার করলো?? কি হইসে?"। মিরা আপু উনার রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে কাধে হাত রেখে একইভাবে প্রশ্ন করতে লাগলেন। ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলছেন...আমি তাও হাপাচ্ছি...জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছি...বেসামাল হয়ে যাচ্ছি ভয়ে..
-সিনু সিনু দেখ আমরা সবাই এখানে...এই যে আমি সামনে..শান্ত হ সিনু...ঠিকমতো শ্বাস নে..(মিরা আপুর দিকে তাকিয়ে) ওই মিরা যা একগ্লাস পানি নিয়ে আয়....যা জলদি...
ভাইয়া আমাকে উনার রুমে নিয়ে বিছানায় বসালেন। মাথায় ক্রমশ হাত বুলিয়ে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন...আম্মু যেয়ে আব্বুকে ডেকে তুলে রুমে আসলেন, পিছু পিছু আব্বু হাজির....মিরা আপু পানির গ্লাস আনলে ভাইয়া জোর করে পানি খাইয়ে ছাড়লেন।
-সিনু প্লিজ শান্ত হ বোন...এইভাবে হাফালে সমস্যার সমাধান হবে? সব খুলে না বললে আমরা বুঝবো? দেখ আমি তো সামনে কিছু হবে না তোর...বল কি হয়েছে..
আমি বড় বড় ঢোক গিলে ধীরেসুস্থে শ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করলাম। কয়েকবার স্বাভাবিক শ্বাস ছেড়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
-ভাইয়া...কককে জজানি আআমার ফফোফোনে খুখুনের ভিডিও...
আমি আর বলতে পারলাম না। ভয়ের ঘ্রাসশক্তি বেশি ছিলো বিধায় আমার গলা আটকে আসছিলো...ভাইয়া মিরা আপুকে বলে ফোন আনার ব্যবস্থা করলেন। ঠিকি সবাই সেই খুনের ভিডিওটা দেখতে পেল। একাটা লোকের হৃৎপিন্ড চার পাচজন লোক খুবলে খুবলে শেষ করছে। লোকটা জীবন্ত ছিলো...কি আহাজারি চিৎকার...বীভৎস লীলাখেলায় লোকটাকে খুন করা হচ্ছিল...আম্মু এক চিৎকার দিয়ে আব্বুর হাত চেপে ধরেছে। মিরা আপু "আল্লাহ" বলে রীতিমতো চোখ বন্ধ করেছেন। শুধু ভাইয়া, আব্বু পুরোটা ভিডিও দেখতে সক্ষম হয়েছেন।
-********** তোকে এই ভিডিও দেওয়ার সাহস কে পেলো! ওর কলিজা যদি আমি টুকরা না করছি! আমার নামও আবির আহমেদ না! *******রে আমি দেখিস কি হাল করি!
আব্বু ভাইয়াকে এক ধমক মারলেন। বড়দের সামনে মুখ খারাপ করতে নেই ভাইয়া সেটা কয়েক মূহুর্তের জন্য মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। ভাইয়া আমার ফোনটা তার কাছে রেখে দিলেন। আমাকে মিরা আপুর রুমে ঘুমাতে যেতে বললেন। মিরা আপু আর আমি তার রুমে যেয়ে ঘুমম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আপু পাশে নেই। সম্ভবত ভার্সিটি গিয়েছেন। আমি আমার রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম। উনি রান্না করছেন।
-আম্মু ভাইয়া চলে গেছে?
-এইতো দশ মিনিট হলো গেল। ভালো কথা, আবির বালিশের নিচে ওর ফোনটা রেখে গেছে। তোর ফোনটা এখন থেকে ওর কাছে থাকবে নাকি,
-আচ্ছা সমস্যা নেই।
সকালে নাস্তা শেষে রেডি হচ্ছি মনিরার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করবো। কালরাতের ঘটনা ওকে না জানালে আমার পেট ফুলে ব্যাথা শুরু করবে। গোলাপি কামিজ, কালো পায়জামা পড়ে নিলাম। চুলটা সাইড বেনি করে বামপাশে এনে গলায় কালো রঙের ওড়নাটা দিয়ে নিলাম। মুখে হালকা পাউডার এবং ঠোটে লিপবাম দিয়ে ব্যাগটা নিয়েই দৌড়। রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি অপজিট গেটের সামনে দাড়িয়ে মুগ্ধ ভাইয়া। কালো শার্ট, প্যান্ট...বামহাতে সাদা এফ্রন ঝুলানো, বামহাতে ঘড়ি, কানে ফোন নিয়ে কথা বলছেন। মাথার ব্যান্ডেজ খুলে কপালের একপাশে জোড়ালোভাবে স্কচট্যাপ ব্যান্ডেজ ক্রস করে আটকানো।চুলগুলো সবসময়ের মতো খাড়া হয়ে আছে। অবশ্য দেখতে কিউট! উনি ফোনে কথা বলতেই আমার দিকে তাকান, পরক্ষনে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উনি আমাকে ইগনোর করে চলছেন। ভালো ভালো!!আমি উনার ভাব দেখে রিকশা ছাড়া ওখান থেকে হাটা ধরলাম...
_রেস্টুরেন্টে,
- মম কেউ তোর উপর লেসার মারছে! কি সাহস রে মাইরি!!
-আর বলিস না...রাতে ওই ভিডিও দেখে আমার অবস্থা টাইট হয়ে গেছিলো। তুই যদি ভিডিও দেখতি দুই দিন বাথরুমে যেতে পারতি না..
-আফা মুই রাতে বাথরুমে এমনেই কম যাই...হাঙ্গেপাঙ্গে ভিডিও দেখলে দিনে যাওয়াও আটকা পড়বো..
-তুই ফাজলামি শুরু করলি? আমি এখানে সিরিয়াস ম্যাটারে কথা বলতে আসছি!
-আফা কয়েল লাগবো কয়েল?ভালোবাসার কয়েল?? লাগবো নি??
-ওই তোকে যে বারবার মুখ ছুটিয়ে বলতেছি আমি সিরিয়াস বিষয়ে কথা বলতে আসছি তোর কানে কি ঢোকে না!
-মমু ডাইলে লবন দেসো নাকি দেবা..
-তোরে জুতার বারি দিবো হারামজাদি! দেখ মেজাজটা খারাপ করিস না !
-ধ্যাতরি মাইয়া! মজাটাই বরবাদ করে ছাড়লি। আচ্ছা বল...কোন সিরিয়াস ম্যাটারে কথা বলা বাকি আছে ...
-লিসেন, রাদিফ মুগ্ধ ইজ ব্যাক! শুনছিস! মুগ্ধ ভাইয়া এসে পড়েছে! সোজা পাইপ বেয়ে আমার রুমে এন্ট্রি...
-এহ্ খাইসে! পিক আসে? ভাইয়া কি সুন্দর হইসে? নাকি আগের মতোই? আগের মতো থাকলেও সমস্যা নাই উনি যেই সুন্দর মানুষ।
-থাম! আমি এইখানে উনার সৌন্দর্য নিয়ে ডিসকাস করতে আসিনি! উনার কান্ড কারখানা বলতে আসছি!উনি একটা লুইচ্চা, প্রথম দিন এসেই আমাকে টিশার্ট, প্লাজো পড়ুয়া দেখছে! কমেন্ট করছে হট!
-সাব্বাশ! ভাই এখনো তোরে পছন্দ করে ইটস প্রুভড!
-মনিরা ফান মুডে কথা ঘুরাবি না প্লিজ, উনি একটা বিরক্তিকর মানুষ, আমার সহ্য না।
মনি..... কিছু বলতে যেয়ে মুখ আটকে থেমে গেলাম, চোখ কুচকে নজর গেল দুই টেবিল আগে এক ছেলের দিকে.....সে আর কেউ মুগ্ধ ভারাক্রান্ত মহাশয়! মুগ্ধ ভাইয়া রেস্টুরেন্টে এক মেয়ের সাথে ডেটিং করছে!
-হেই হেই..মম...হই...ছেমরি ওই...কি দেখোস!
আমি থম মেরে মুগ্ধ ভাইয়ার দৃশ্য দেখছি। মনিরা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো। একবার দূরে বসা মুগ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার থ মেরে বসে থাকা আমার দিকে তাকাচ্ছে। পাশ থেকে ও বলে উঠলো-
-মম ওই ছেলে কে? চিনোস?ছি তুই বেশর্মার মতো তাকায়া আছোস কেন?
ওর কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। ঠিকি তো বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছি কেন? উনার লাইফ। উনার সবকিছু তাতে আমার কি?
-কিরে মম কে ওইটা? আমাদের হবু দুলাভাই নাকি????দেখতে কিন্তু মারাত্মকককক জোশশ...পুরাই বাচ্চা!!
-কানের নিচে এমন এক থাপ্পড় মারবো না দুলাভাই ভুলে দুলাআপু শুনবি!হারামি চুন্নি কোথাকার!
-তুই আমারে চুন্নি বললি কেন! আমি কি চুরি করছি!
-...একটু আগে পার্সের মধ্যে টিস্যু কে ঢুকালো? রেস্টুরেন্টের টিস্যু কে চুরি করলো! শালা চুন্নি! আমি কি দেখি নাই মনে করছোস!
-থাক! আমিতো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো...
.
.
দুপুরে গোসল করে ছাদে কাপড় শুকাতে যাই। হঠাৎ দেখি মুগ্ধ ভাইয়ার বাসার ছাদে ওই রেস্টুরেন্টের মেয়েটা বসে আছে। মেয়েটা অনেক মর্ডান, স্টাইলিশ। চুলগুলা লাল বান্দরের মতো লাল কালার, ঠোটে বেগুনি লিপস্টিক...পুরা খাচ্চরনি টার মতো লাগতেছে। টপস পরিধানে সাথে জিন্স। ওড়না বামকাধে সেফটিপিন মেরে ঝুলিয়ে রাখছে। পায়ে ছেলেদের মতো স্পাইক সুজ। এক কথায় খ্যাত! আমি তারের ওপর ভেজা কাপড় নেড়ে দিতেই মুগ্ধ ভাইয়া একটা ট্রে করে চায়ের কাপ, বাটিতে করে নুডলস আনলেন। টেবিলে রেখে মেয়েটার দিকে বাটি আর চা দিয়ে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চেয়ার টেনে বসলেন। ওমা! মেয়েটা নুডলসের বাটি নিয়ে ভাইয়ার চেয়ারের সাথে চেয়ার লাগিয়ে ঘেষে বসল! আবার কাটা চামচে নুডলস তুলে ভাইয়ার মুখে ধরে খেতে বলল...দূর থেকে উনাদের প্রেমপিরিতি দেখে আমার গা জ্বলছে! উফ! এই ভুতপেত্মীর সাহস কত! মুগ্ধের গা ঘেষে লটরপটর করছে। অনেক জোরাজুরি শেষে মুগ্ধ ভাইয়া মুখে নুডলসগুলো মুখে নিলো!মেয়েটা নুডলস খাইয়ে দিয়ে কি খুশি! মনে হচ্ছে দুইমাসের কোলেরবাচ্চাকে কাতুকুতু করে খাওয়ালো! মুগ্ধের বাচ্চা তোরে যদি সাইজ না করছি! আমি কাপড় নেড়ে দেয়া বাদ দিয়ে দৌড়ে নিচে গেলাম। দাড়া বেটা! তোর ইটিস পিটিস আমি ছুটাইতেছি....
মুগ্ধ এক মেয়ের সাথে ফূর্তি আমেজে মাতোয়ারা হলে মম দৌড়ে এক ধোলাই দিতে যায়। ওর আম্মুকে আন্টির বাসায় যাচ্ছে বলে দৌড়ে যায় মুগ্ধের বাসায়। বিল্ডিংয়ের গেট দিয়ে ঢুকে সিড়ি বেয়ে সোজা ছাদে যায়। নাকে মুখ রাগের দমকা...ছাদে ঢুকে মুগ্ধের সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ায় মম। শক্ত ডেভিল রাগী টগবগ চাহনি! হঠাৎ মমকে সামনে দেখে মেয়েটা এবং মুগ্ধ হাসি থামিয়ে ওর দিকে তাকায়। মেয়েটা মুগ্ধকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,
-Beb who is she?
মুগ্ধ তাচ্ছিল্যের সুরে জবাব দেয়,
-She is nobody, Babe. পাশের বাসায় থাকে। সারাক্ষন আমার পিছে ঘুরঘুর...কত না করলাম, আমি ওকে সহ্য করতে পারিনা।তাও দেখছো চলে আসছে। You know, আমি এসব মেয়েদের দেখতে পারিনা। But she is a dumb!
মম হা করে মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ টোটালি তাকে ইগনোর করছে মমর বোঝা শেষ।। সে কোমর থেকে হাত সরিয়ে মুগ্ধের দিকে রাগ ঝারতে শুরু করে! দুইহাত দিয়ে শার্টের কলার খামচে টেনে দাড় করায় মুগ্ধকে....এমন কাজে মুগ্ধ পুরো ফ্রিজড! ঘটনাক্রমে মেয়েটা পাশ থেকে দাড়িয়ে পড়লে মম কলার টেনে মুগ্ধের লম্বা হাইটের মাথা তার দিকে টেনে ঝুকিয়ে বলে উঠে,
-Listen Mr. Mugdho! আমাকে আন্ডারস্টিম্যাট করার কথা চিন্তাও করবেন না!One more thing! এই লাল্লু চুলের ভুতপেত্মীর কাছ থেকে দূরে না থাকলে জবাই করে ছেড়ে দিব! It's my challenge! I'm not your cheap type of toy!So bye!
মুগ্ধ গলায় টান খেয়ে বলে উঠে-
-সিনু ঘাড়ে ব্যাথা পাচ্ছি! কলার ছাড়! লিমিট ক্রস করবি না বলে দিলাম!ছাড়!
মম আরো জোরে কলার মুচড়ে ধরলে মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে মমর দিকে ঝুকে থাকে। হাত দিয়ে কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও মম বাঘের মতো ধরে রাখে....ফলাফল শূন্য...
-আমি এখনো লিমিটে আসিনি মুগ্ধ! লিমিটে আসলে এই ভুতপেত্নী নিয়ে বসার স্কোপ পেতেন না! I'm dangerous! More than your craziness! Its my last warning! দূরে থাকবেন এদের থেকে!Bye!