ইহান: আমি জানি আনহা আপনার সাথে ওইরকম আচরন করে আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু ভালোবেসে কোনো অন্যায় করিনি। কারন মানুষের ফিলিংস কোনো কিছুর জন্য সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা ধর্ম বর্ন জাত কিছুই মানে না.... সেখানে আমার দোষটা কই আনহা....... আমিও তো শুধু আপনাকে চেয়েছি...............
আনহা নিজের রুমে বসে কাদতে থাকে। তার জিবনের সবচেয়ে বড় কষ্টটা আজ আনহা পেয়েছে..... তাকে ধোকা দেওয়া হয়েছে। তার সমস্ত ভালোবাসা আবেগ আকাঙ্ক্ষা এক মুহুর্তেই ইহান নিজের সত্যিটা জানিয়ে শেষ করে দিয়েছে..... আনহার পবিত্র ভালোবাসাকে কলুষিত করেছে.......
আনহা: কেন করলি তুই এমন ইহান??? যেই মানুষের উপর আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতাম সেই তুই আমার সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে আমার বিশ্বাসটাই ভেঙে দিলি...... আমার পক্ষে তোর সাথে থাকা আর সম্ভব নয়। আমি চলে যাব। এতদিনের মানুষের কথার ঘা আমার কানে লাগত কিন্তু তোর দেওয়া ঘা আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে..........
রাত প্রায় ১২টা.......
ইহান তখন থেকে নিজের বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে আছে..... আর নিজের করা কাজগুলোর কথা ভাবছে। ইহান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আর যাই হোক যা হয়েছে এর পর আনহা কোনো মতেই ইহানের সাথে থাকবে না।
ইহান: আমি জানি আনহা এর পর আপনি আমার সাথে থাকতে চাইবেন না। কিন্তু আমি তো আপনাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারব না আনহা...... এখন আপনি যদি আদ্রের কাছে ফিরে যেতে চান তবে........
......... আর কিছু ভেবে পায় না ইহান.......
ইহান: I am sorry anha but i can't Leave you....... আমি জানি অতিতে আমি অনেক ভুল করেছি কিন্তু আমার পক্ষে অতিতের ভুলের জন্য আমার বর্তমান আর ভবিষ্যত কোনোটাই নষ্ট করা সম্ভব না...... আমি আপনাকে চাই আনহা। তা সে যেভাবেই হোক। তার জন্য যদি আপনাকে জোর করে নিজের কাছে থাকতে বাধ্য করতে হয় তবে আমি তাই করব। কিন্তু তবুও আমার সেই আপনিকেই চাই....…....
ইহান: যদি ভালোবাসা দিয়ে আমি নিজের ভালোবাসা নাই পাই। তবে এবার অধিকার দিয়ে আমি আমার অধিকার আদায় করব। আমি আপনার হাসবেন্ড এবার আপনাকে সেটা বুঝতে হবে। আর আপনাকে বাচলেও আমার সাথে বাচতে হবে মরলেও আমার সাথেই..... আমি আমার #আপনিময়💓তুমিকে,,,, নিজের থেকে আলাদা হতে দেব না। দরকার হলে আমার কঠোর রুপটা আপনাকে দেখতে হবে................
তারপর ইহান রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে আনহা কাদতে কাদতে ফ্লোরেই শুয়ে পরেছে। শীতে বারবার কেপে উঠছে আনহা। ইহান গিয়ে আনহাকে কোলে তুলে নেয়। ইহানের ছোয়ায় আনহার ঘুম ভেঙে যায়.....
আনহা: কি করছিস তুই ছাড় আমাকে.... 😡😡😡 [ ইহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আনহা ]
ইহান গিয়ে আনহাকে খাটে রাখে তখনি ইহানকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু পারেনা বরং আনহাকে দুরে যেতে দেখে ইহান ওকে আরো কাছে টেনে নেয়।
ইহান: আপনি ভুলে যাবেন না আনহা এখন কিন্তু লুকানোর মত আমার মাঝে কিছু নেই যা জানার সবটাই জানা হয়ে গেছে। তাই বলছি শান্ত হয়ে থাকুন নাহলে সত্যি সত্যি এর মাসুল আপনাকে দিতে হবে......
আনহা: কেন করছিস তুই এরকম। আর কি চাই তোর......
ইহান: চাওয়া আমার একটাই। তাও সেটা অনেক আগে থেকেই। সেটা হচ্ছেন আপনি শুধু পার্থক্য হচ্ছে আগে আপনাকে চাইতাম কিন্তু এখন আপনার মাঝে নিজের ওয়াইফকে চাই........
আনহা: সেটা কোনোদিন ও সম্ভব না। আমি তোর সঙ্গে কোনোদিন ও থাকব না।
ইহান: সেটা আপনার ব্যপার.... আমার এসব জেনে কাজ নেই। যাই হোক খেয়েছেন…...
আনহা:.......
ইহান: আপনার চোখ মুখ বলেই দিচ্ছে আপনি কিছু খাননি..... আমি আসছি....
[ বলেই ইহান খাবার আনতে চলে গেল। তারপর খাবার এনে আনহার সামনে দিল। কিন্তু আনহা তা ছুয়েও দেখবে না ইহান তা জানে..... তাই ইহান নিজেই আনহাকে খাইয়ে দিতে গেল.........
ইহান: দেখুন আনহা আমার এই জিনিসটা একদম পছন্দ না। আর আপনিও খাবার নষ্ট করা পছন্দ করেন না তাই বলছি খেয়ে নিন........
আনহার দিকে খাবার তুলে দিতেই আনহা তা ফেলে দিল। এটা দেখে ইহানের প্রচন্ড রাগ উঠে...... ইহান আনহার দুগাল চেপে ধরে খাবারটা মুখে দিতেই আনহা তা ফেলে দেয়.....
ইহান: আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন আনহা। আপনি কাল থেকে কিছুই খাননি.... না খেলে শরীর খারাপ হবে..... 😡😡😡
আনহা: শরীর খারাপ না মরে যেতে চাই আমি......
ইহান: কেন মরে যেতে চাইছেন আদ্রের কাছে যেতে দিচ্ছি না বলে........
আনহা: হমম.... তাই। আমি আদ্রের কাছেই যেতে চাই কিন্তু তুই যেতে দিতে চাস না। তাই তোর সাথে থাকার চেয়ে মরেই যাওয়াই ভালো...... 😡😡😡
ইহান: ও তাই নাকি.... তা ভালো। আচ্ছা তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আদ্রের কাছে যেতে না দিলে নিজেকে শেষ করে দিবেন......
আনহা: হুমম.....
ইহান: ওকে...... [ বলেই খুব রেগে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে তারপর কিছু একটা এনে আনহার সামনে দেয়। ]
আনহা: এসব কি???
ইহান: আমি আপনার স্বামী তাই আপনার ইচ্ছের দাম দিতে চাইছি....
আনহা: মানে....
ইহান: মানে স্বামী হিসেবে স্ত্রীর ইচ্ছে পুরন করা আমার কর্তব্য। আপনি দুটি ইচ্ছার কথা বলেছেন......
১. আদ্রের কাছে আপনাকে যেতে দেওয়া।
২. আর দুই আপনাকে মেরে ফেলা.....
জানেন তো আমি হৃদয়হীন নই যে স্ত্রীর ইচ্ছে অপুর্ন রাখব আবার coward নই যে নিজের স্ত্রীর ইচ্ছে পুরন করার জন্য তাকে পরপুরুষের হাতে তুলে দেব। তাই স্বামী হিসেবে আমার চয়েজ ২ নাম্বারটা। কারন আমি আমার স্ত্রীর জন্য দুনিয়ার সব সুখ এনে দিতে রাজি কিন্তু তাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে রাজি নই। এর চেয়ে আমি তাকে নিজ হাতে মেরে তার সাথে নিজেকে শেষ করে নিজেকে একজন আর্দশ হাসবেন্ড মনে করব.........
আনহার ইহানের কথার আগা মাথা কিছুই খুজে পাচ্ছে না। ইহান কি বলতে চাইছে তাই বুঝতে পারছে না আনহা.........
ইহান: এই নিন আনহা...... [ খুব ধারালো একটা ছুড়ি🗡🗡🗡 এগিয়ে দিয়ে ]
আনহা ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে.......
ইহান: কিহল মিস আনহা.... সরি মিসেস. ইহান..... ধরুন ছুড়িটা। আর শেষ করুন নিজেকে। আপনার জন্য 2nd option আমার বেশি পছন্দ.....
আনহা:.........
ইহান: কাজটা আমি করতাম। কিন্তু কি করব আমি তো আপনাকে নিয়ে বাচতে চাই কিন্তু আপনি চান মরতে তবে তাই তবে.....
আনহা:........
ইহান: কিহল আনহা পারবেন নাকি..... না পারলে বলুন..... আমি এগুলো রেখে দেই। তবে একটা কথা মনে রাখবেন আপনি যাই করেন আদ্র কেন কারো কাছেই আপনি যেতে পারবেন না..... আপনার সারাজিবনের প্রতিটি মুহূর্ত আপনাকে আমার সাথেই কাটাতে হবে। সেটা সেচ্ছায় বা জোর করে.......
আনহা:.........
ইহান: এইখানেও আপনার জন্য ২টি অপশন।
১ হয় আপনাকে আমার সাথে সারাজীবন স্বামী -স্ত্রীর মত থাকবেন নয়ত
২. নিজেকে শেষ করবেন......
এখন বলুন কোনটা চান.............
তারপর আনহা গিয়ে ইহানের হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে নেয়......
আনহা: তোর সাথে থাকার চেয়ে নিজেকে শেষ করে মরে যাওয়াই ভালো। তাই আমারো তোর দেওয়া 2nd option টাই বেশি পছন্দ.......
ইহান আনহার কথায় একটুও অবাক হয় না। শুধু বাকা ঠোঁটে হাসি দেয়। কারন ইহান খুব ভালো করেই জানে আনহা এটাই করবে।
ইহান: হুমম করুন.... আমিও তাই চাই। নিজের স্ত্রীকে আরেকজনের কাছে দেখার চেয়ে তার মৃত্যু দেখাই ভালো...... তাহলে কাজ শুরু করুন....
[ বলে ইহান সোফায় বসে পরে। আর আনহার যেন ইহানের কথায় প্রচন্ড অপমান বোধ হচ্ছে। এসব কথা শোনার চেয়ে মৃত্যুটাই ভালো..... এসব ভেবেই চোখ বন্ধ করে ধারালো ছুড়িটা আনহা নিজের বাম হাতের শিরার উপর রাখে। আর ইহান সোফায় বসে আনহার কাহিনিগুলো দেখেতে থাকে........
আনহা হাতে ছুড়িটা ছোয়াতেই চামড়া থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরতে থাকে। আর ইহান দেখতেই থাকে।
ইহান: আমিও দেখতে চাই আমাকে পিছু ছাড়াতে কি করতে পারেন আপনি।
আনহা চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাস নিয়ে ছুড়িটা শিরার উপর টান দিতে ধরলেই ইহান উঠে খুব দ্রুত আনহার হাত থেকে ছুড়িটা ফেলে দিয়েই আনহার ঠোঁট জোরা নিজের দখলে নিয়ে খুব শক্ত করে আনহাকে জড়িয়ে ধরে....... ঘটনার আকস্মিকতায় আনহা কিছু বুঝতে পারে না শুধু এইটুকু ছাড়া যে সে এখন অন্য কারো দখলে.....
বেশ কিছুক্ষন পর ইহান আনহাকে ছেড়ে ওর চোখের দিকে তাকায়.... আনহা নিজের চোখ বন্ধ করে আছে...... এইটা দেখে ইহান আনহার ভেজা চোখে পরশ বুলিয়ে দেয়।
ইহান: আপনি ভাবলেন কি করে ইহান তার আপনিময়💓তুমির কিছু হতে দেবে.....
এইটা শুনে আনহা ওর দিকে তাকায়......
ইহান: সত্যি বলছি আপনাকে মেরে ফেলব। কিন্তু তখন যখন দেখব আপনি আমার নন.... কিন্তু এখন সব দিক দিয়ে আপনি আমার আনহা। তাই নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের ক্ষতি করার মত বোকা আর যাই হোক আমি নই আনহা..... [ আনহার পুরো মুখে ভালোবাসার পরশ বুলয়ে ]
আনহা কি করবে আনহার কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না আনহা। ইহান ওকে পাথর বানিয়ে দিয়েছে।
ইহান: আপনি বসুন আমি খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।
ইহান খাবার মেখে আনহার সামনে ধরলেই আনহা নিজের মুখ ফিরিয়ে নেয়। এইটা দেখে ইহান রেগে গিয়েও শান্ত হয়ে যায়। তারপর তাচ্ছিল্যের হাশি দিয়ে বলে......
ইহান: আপনি কি চান আনহা আমি এমন কিছু করি যা আপনার খারাপ লাগুক। আমি চাইনা এমন কিছু করতে যদি আপনি আমাকে বাধ্য না করেন তবে.....
আনহা:..... [ নিচের দিকে তাকিয়ে কাদছে ]
ইহান: খেয়ে নিন আনহার.... 😡😡😡
আনহা:.......
ইহান: খেয়ে নিন [ ধমক দিয়ে ]
ইহানের ধমকে আনহা কেপে উঠে..... তারপর আর কথা বাড়িয়ে কাদতে কাদতে খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে প্লেটের অবশিষ্ট খাবার ইহান খেয়ে নেয়।
ইহান: আসলেই বউয়ের ভাগের খাওয়ার জিনিসের মজাই আলাদা.....
তখনি আনহার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আদ্রোর কল। আনহা ইহানের দিকে তাকায় আরেকবার মোবাইলের দিকে। আনহা রিসিভ বাটনে দিতেই ইহান ওর ফোন কেড়ে নেয়......
আনহা: আমার মোবাইল.....
ইহান মোবাইলটা নিয়ে একটা আছাড় মারে। মুহূর্তেই তা গুড়ো হয়ে যায়।
ইহান: যাহহহ ভেঙে গেল। সে যাই হোক আপনার আর মোবাইলের দরকার কি তাই বলুন। আপনার হাসবেন্ডকে কল দিতে হবে না সে ঠিক সময় মত তার বউয়ের টানে চলে আসবে। আর যদি খুব বেশি ভালোবাসার কথা বলার শখ জাগে তা জমিয়ে রাখবেন আমি আসলে তা আমাকে বলবেন। আর বাবার বাড়িতে না হয় হাসবেন্ড এর মোবাইল দিয়ে কল দিলেন। আমার সবকিছুই তো আপনার..... আর যদি কোথাও যাওয়ার হয় তবে আমি নিয়ে যাব..... আর আমাকে না বলে বাড়ির বাইরে এক পা পরলে তার পরিনতি কি হবে তার কল্পনাও করতে পারবেন না আপনি।
আনহা: তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস???
ইহান: তুই নয় তুমি.... আমি চাই আমার বউ আমাকে তুমি করে বলুক। আর বাড়াবাড়ি.... সেটা এখনো করিনি কিন্তু এবার করব...
আনহা: ইহান......
ইহান: হুসসস.... [ আনহার ঠোঁটে আঙুল রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করে। ] এখনো কিছুই হইনি........
আনহা: আমি আগেই বলেছি.......
ইহান: একটা কথা আনহা। আপনার মতে আমি টিচার স্টুডেন্ট এর সম্পর্ক অপমান করছি। কিন্তু আপনি তো স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ককে অপমানিত করছেন। আমি ছোট হলেও আপনার হাসবেন্ড তো তাই বলছি আমি না হয় পাপী তাই পাপ করেছি। কিন্তু আপনি তো শিক্ষক হয়েও যদি আমার মত ভুল করেন তাহলে আপনি তো আমার চেয়েও খারাপ হয়ে যাবেন।
আনহা:..............
ইহান: আমি তো তাও যাকে ভালোবাসি তার সাথেই খারাপ করেছি আর তাকেই বিয়ে করেছি কিন্তু আপনি স্বামী থাকার পর যদি এসব করেন তবে।🤔🤔🤔
আনহা:.......
ইহান: সে যাই হোক আশা করব আপনি আপনার সন্মান আমার কাছে বজায় রাখবেন। আপনাকে খারাপ কিছু না বলার কারন আমি আপনাকে সন্মান করি। আর এটা জেন সবসময় বজায় থাকে......
ইহানের এই কথা শুনে আনহা ওর দিকে তাকায়। জোর না করেও যে কাউকে শুধু কথার মাধ্যমে কোনোকিছুর জন্য বাধ্য করা যায় ইহানকে না দেখলে হয়ত আনহার এটা জানাই হত না.............
ইহান: এবার লক্ষী মেয়ের মত ঘুমাবেন। আমার পিচ্চি বউ.....কুকি..... [ আনহার গাল টেনে ]
ইহান আনহাকে শুইয়ে দেয়। তারপর ওর শরীরে কাথা দিয়ে ওর খুব কাছে গিয়ে বসে। ইহানকে দেখে আনহা ওপাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে.......
এইটা দেখে ইহান বাকা হেশে বলে.....
ইহান: এটা করলে তো হবে না। বিয়ে করেছি কি এমনি এমনি....
[ বলেই আনহাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে ]
ইহান: শক্ত করে এইভাবে বুকে জড়িয়ে রাখার জন্য বুঝলেন। [ গাড়ে একটা কিস করে ]
আনহা:......
ইহান: I love you Anha.....
আনহা:.........
ইহান: আজ এর উওর না পেলেও একদিন ঠিক এর উওর হ্যা হবে দেখে নিবেন। সেদিন আর আপনার কাছে আমার আর আপনার এই সম্পর্কের কোনোকিছুই অস্বাভাবিক মনে হবে না। বরং আপনি নিজেই সবটা মেনে নিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিবেন..... নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবেন আমাকে....... [ আনহার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ]
আনহা শুধু একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে......
তারপর আনহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে..........
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় প্রায় ৩ মাস...... এই কয়দিনে ইহান আনহাকে যতবার নিজের কাছে টানতে চেয়েছে আনহা ততবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে....... ইহান হাজার চেয়েও আনহার সাথে নিজের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে পারেনি। ইহান আনহাকে জোর করে এখানে না রাখলেও আনহা ইহানের কথায় বাধ্য হয়েই ওর সাথে থাকছে......
আনহার একটাই কথা সে ইহানের সাথে থাকবে না। আর ইহান ও আনহাকে ছাড়বে না। যার কারনে ওদের সম্পর্কের কোনো উন্নতি না ঘটলেও একে অপরের থেকে দুরত্বটা অনেক বেড়েছে। কিন্তু আনহার প্রতি ইহানের ভালোবাসা, কেয়ার & শ্রদ্ধা একটুও কমেনি। কারন ইহান আনহাকে ভালোবাসার চেয়েও সন্মান করে বেশি। আর আনহা ইহানের ভালোবাসায় বাধা না পরলেও নিজের প্রতি ইহানের এই সন্মানের জন্য ওর ওকে ছেড়ে যেতে পারছে না............…......
হঠাৎ একদিন আনহার শরীরটা খারাপ করে সকাল থেকে বমি বমি হতে থাকে.... কিন্তু ইহানকে কিছু বলে না।
ইহান অফিস থেকে বাড়ি এসে রুমে যেতেই আনহার আবার বমি আসে। ও দৌড়ে ওয়াসরুমে যায়। ওয়াসরুম থেকে বের হলে ইহান বেশ চিন্তিত হয়ে আনহার কি হয়েছে জানতে চায়। আনহা কিছু বলতে যাবে তখনি মাথা ঘুরে পরে যায়।
ইহান আনহার পরে যাওয়া দেখে পাগলের মত করতে থাকে.........
আনহার জ্ঞান ফিরতেই আনহা নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে। পাশে খুব চিন্তিত হয়ে বসে আসে ইহান। আনহার জ্ঞান ফেরাতে ও যেন প্রান ফিরে পেয়েছে।
ইহান: আপনি ঠিক আছেন আনহা। কোথাও কষ্ট হচ্ছে নাতো আপনার??? কি হয়েছে আপনার কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলুন আমাকে.......... [ কাপা গলায় ]
তখনি ডক্তর আসে........
ডাক্তার: Relax Mr. Ahmad..... ওনি একদম ঠিক আছে.... আপনারা আমার সাথে কেবিনে আসুন......
তারপর ইহান আর আনহা দুজনে ডাক্তারের কেবিনে যায়......
ডাক্তার: ওনি কি হয় আপনার মি. অয়ন.....
ইহান: আমার ওয়াইফ.....
ডাক্তার: Oh I see..... এই বয়সেই বিয়ে করছেন। আপনি খুব বেশি ফাস্ট মি. অয়ন.....
ইহান: মানেটা বুঝলাম না। আমার ওয়াইফের কি হয়েছে।
ডাক্তার: লাভ ম্যারেজ তাই না।
ইহান: জি.... মানে.....
ডাক্তার: বুঝতেই পারছি দুজনেই কম বয়সি তার উপর বিয়ে করেছেন লাভ মেরেঞ্জ। মুচকি হেশে.....
এইটা শুনে আনহা অবাক হয়ে ইহানের দিকে তাকায়..... ইহান একটু মুচকি হাসে....
ইহান: জি..... বুঝতেই পারছেন। দুজন দজনকে খুব ভালোবাসি তাই দুরে থাকতে না পেরে বিয়ে করে নিয়েছি....[ কিছুটা লজ্জা নিয়ে ]
ইহানের এমন কথায় আনহা অগ্নি চোখে ওর দিকে তাকায়.....
ডক্টর: হুমম সমবয়সী মেয়ের সাথে প্রেম করলে যা হয় আর কি.।।।।
আনহা: এইযে কে বলেছে আমি ও......
ইহান: জি ঠিক বলেছেন। অতিরিক্ত বেশি ভালোবাসি তাই। কিন্তু বউতো রাগ করার জন্যই.।।।।
ডক্টর: গুড......
ইহান: আচ্ছা ডক্টর আনহার হয়েছে কি.....
ডক্টর: ওনি একা নয় আপনার ও কিছু হতে চলেছে.....
ইহান: মানে.....
ডক্টর: কংগ্রাচুলেশনস..... আপনার ওয়াইফ কনসিভ করেছে..... আপনি বাবা হতে চলেছেন.........
কথাটা শুনে ইহান আর আনহা দুজনেই নির্বাক হয়ে যায়। একে অপরের মুখের দিকে তাকায়.......
ডক্টর: আপনারা কি খুশি নন। না মানে আপনাদের বয়স তো বেশি না তাই আরকি। এখনি কি বেবি নিতে চান.....
এইটা শুনে ইহান ডক্টরের মুখের দিকে তাকায়........
ইহান: আমি বাবা হতে চলেছি.... [ কাপা কন্ঠে ]
ডক্টর: হুমম 🙄🙄🙄
ইহান গিয়েই ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তারপর ডাক্তারকেই কোলে তুলে নাচা শুরু করে..... ইহানকে ছাড়াতে ডাক্তারের ঘাম ছুটে যায়..... ইহান গিয়ে পাগলের মত পুরো হাসপাতালের সবাইকে জানায় সে বাবা হতে চলেছে..... পুরো হাসপাতালের সবাইকে মিষ্টি আনিয়ে বকশিস দেয়......
ইহান: আমি বাবা হতে চলেছি.... [ আনন্দে আত্নহারা হয়ে ]
আনহা অবাক চোখে ইহানকে দেখতে থাকে। যে ছেলেকে বাচ্চা হয়েও বাচ্চামি করেনি কোনোদিন। আজ সে নিজে বাবা হওয়ার কথা শুনে বাচ্চামি করছে। যেন পৃথিবীতে সে একাই বাবা হচ্ছে.......
ইহান গিয়েই আনহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়.... তারপর আনহার কপালে, গালে পুরো মুখে চুমো একে দেয়.....
ইহান: আনহা আপনি নিজেও জানেন না আপনি আজ আমাকে কত বড় খুশির সংবাদ দিয়েছেন। আমি বাবা হতে চলেছি। আপনি মা হবেন। আমাদের ছোট্ট সংসারে ছোট্ট একটা বেবি আসবে আনহা.... [ আনহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ]
আনহা নিজের অজান্তেই ইহানকে জড়িয়ে ধরে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। যার থেকে দুরে চলে যাওয়ার জন্য আনহার এত প্রচেষ্টা তার অংশই কিনা আনহা তার নিজের মধ্যে ধারন করছে.........
আনহা: [ কি করব আমি। না ইহানকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছি আর না ওকে ছেড়ে যেতে পারছি। আর এখন কি করব??? এই বেবির কথা শুনে ইহান যতটা খুশি হয়েছে কিভাবে আমি ওর খুশিটাকে ওর থেকে কেড়ে নেব........ ]
ইহান: Thank you so much আমাকে এত বড় একটা খুশি দেবার জন্য.........
—
আনহা: [ কি করব আমি। না ইহানকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছি আর না ওকে ছেড়ে যেতে পারছি। আর এখন কি করব??? এই বেবির কথা শুনে ইহান যতটা খুশি হয়েছে কিভাবে আমি ওর খুশিটাকে ওর থেকে কেড়ে নেব........ ]
ইহান: Thank you so much আমাকে এত বড় একটা খুশি দেবার জন্য.........
ইহান নিজের খুশিতে এতটাই ব্যস্ত যে আনহার কথা ভুলেই গেছে। বেবির কথা শুনে আনহা কি ভাবছে তার কোনো খেয়াল নেই ইহানের..... ও বাবা হবে বলে নিজের আনন্দে মেতে আছে........
গাড়িতে বসে ইহান বকবক করছে আর আনহা মাথা নিচু করে শুধু ইহানের কথা গুলো শুনছে........
ইহান: আনহা বেবির কি নাম রাখব বলেন তো। আপনার নামের সাথে মিল রেখে নাকি আমার নাম। আচ্ছা কি বেবি হবে মেয়ে নাকি ছেলে। আমার তো মেয়ে চাই একদম আপনার মত...... [ নিজের মনে কথা গুলো বলছে ]
আনহা:..........
আনহা কোনো কথা বলল না। স্থীর ভাবে তাকিয়ে রইল জানালার দিকে.........
বাসায় এসে আনহা ইহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুমে চলে গেল...... ইহান তেমন কিছু না ভেবে একটু বাইরে গেল.....
তারপর প্রায় ২ ঘন্টা পর ইহান বাড়ি আসে। তবে সাথে বেবিদের খেলনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস নিয়ে আসে......
ইহান: দেখুন আনহা এখানে বেবির & আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস আছে। আর যা যা দরকার আমাকে বলবেন আমি নিয়ে আসব....
আনহা: তোর সাথে কিছু কথা ছিল.....
ইহান আনহার কাছে যায়। তারপর ওর গাল ধরে.…...
ইহান: একটা নয় আনহা আপনার হাজারটা কথা শুনব আমি। আপনি যা বলবেন তাই শুনব। আপনার জন্য যে খুশি আমি পেয়েছি তা সুদে আসলে আমি ফেরত দেব আনহা.....[ আনহার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে ]
ইহানের কথা শুনে আনহা কিছু বলতে গিয়েই পারে না ও শুধু ইহানকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে........
ইহান: আপনি আমাকে এত বড় একটা উপহার দিয়েছেন আজ আমিও আপনাকে কিছু দিব। [ প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে ]
তারপর বেড়িয়ে আসে............
মাঝরাতে ইহান রুমে যায়। আনহা বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ইহান ধীর পায়ে আনহার কাছে যায়........... আনহার খুব কাছে গিয়ে ওকে দেখতে থাকে......
ডাক্তার ঠিকি বলেছে ইহান আনহার সমবয়সী। কারন আনহার বয়স বেশি হলেও ওর চেহারার মাঝে তার কোনো ছাপ নেই। বরং ওকে দেখলে যে কেউ এটাই বলবে ওর বয়স ২০/ ২১ এর বেশি হবে না। অদ্ভুত এক মায়া রয়েছে আনহার মাঝে প্রথম ৫ বছর পর ভার্রসিটিতে যেদিন ইহান প্রথম আনহাকে দেখেছিল। সেদিনি যেন আনহাকে দেখে ইহানের অনুভুতি ভালোবাসা নামক খাচায় বন্দি হয়............
আজ আনহাকে তার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে ইহানের কাছে..... অমায়িক মায়াবী লাগছে। হয়ত ও মা হবে তাই...... ভাবতেই ইহানের হাশি পাচ্ছে.......
আনহার মুখে গরম নিশ্বাস পরতেই ওর ঘুম ভেঙে যায়। আর ইহানকে নিজের কাছে দেখতে পায়....... এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে...... ইহানের শান্ত চোখের চাওনি যেন আনহার অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি করেছে ইহানের জন্য...... আনহা ইহানের গালে নিজের হাত ছোয়ায়.........
আনহা: কি হয়েছে....... [ এক হাত দিয়ে ইহানের গাল ধরে ]
[ আনহা বর্তমানটা ভুলে গেছে। ইহানকে সেই পিচ্চিটাই মনে হচ্ছে আনহার কাছে। ও নিজের পিচ্চিকে ভালোবাসায় ছুইয়ে দিচ্ছে...........
আনহা: কি???
ইহান:........ [ মাথা নাড়ে কিছু হয়নি বলে ]
আনহা উঠে বসে। তারপর ইহানকে নিজের কোলে শুইয়ে দিয়ে ইহানের মাথায় বিলি কাটতে থাকে। আর গুন গুন করতে থাকে চোখ বন্ধ করে।
আনহা: আচ্ছা ইহান আমাকে ছেড়ে থাকতে কি তোর কষ্ট হবে.......
ইহান:............
আনহা: আচ্ছা বেশি খারাপ লাগবে। যদি আমি না থাকি তবে...... [ ইহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ]
এইটা শুনে ইহান আনহার হাতটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে শক্ত করে৷
আনহা: কিরে কথা বলছিস না কেন???
ইহান উঠে বসে..... তারপর আনহার গাল দুইটা নিজের হাতে আবদ্ধ করে......
ইহান: এমন কথা বলবেন না আনহা...... আমি ৫ বছর বেচেও মরে ছিলাম আপনাকে ছাড়া। আপনাকে ফিরে পেয়ে নিজের প্রান ফিরে পেয়েছি। আর আপনার কাছে থাকার জন্য আমি আপনাকে বিয়ে করেছি তাই প্লিজ এমনটা বলবেন না.......... তাইলে আমি মরে যাব আনহা.... [ কান্না করে ]
ইহানের মুখে মরার কথাটা শুনে আনহা নিজেই ইহানকে বুকের মাঝে টেনে নেয়........ আর ইহান ওকে জড়িয়ে কাদতে থাকে। এই ইহান বাচ্চাদের মত কাদছে। আনহা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ইহান নিজেকে যতটা ম্যাচুয়ড দেখার চেষ্টা করুক না কেন ওর মনের দিকের বাচ্চাটা রয়েই গেছে। এই ৩ মাস ওর সাথে থেকে বুঝতে পারছে। ইহান বাইরে যতই বড় হতে চায় না কেন ?? আনহার কাছে এসে ছোটবেলার মত বাচ্চামি করতে থাকে। আনহার কাছে যার আবদারের শেষ নেই............
আনহা: ইহান থাম তুই এবার.....
ইহান মাথা তুলে আনহার আরেকটু কাছে যায়। আনহা ইহানের কপালে নিজে থেকে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দেয়। ইহান উঠে আনহাকে কোলে তুলে নেয়।
আনহা: কি করছিস তুই.....
ইহান: কোনো কথা বলবেন না আনহা আপনি।
তারপর ইহান আনহাকে নিয়ে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে ওকে ছাদটাকে দেখার ইশারা করে আনহাকে নামিয়ে দেয়......
আনহা অবাক হয়ে চারদিকে দেখতে থাকে। আনহার মনের মতন করে সব ডেকোরেশন করে রেখেছে ইহান.......
আনহা গিয়ে প্রতিটি জিনিস দেখতে থাকে। এক অদ্ভুত ঘোর আসে....... দেখতে দেখতে আনহার চোখ যায় একটা হাতের বেসলেটের দিকে।
আনহার বেসলেট টা চিনতে বাকি থাকেনা।হ্যা এইটাই আনহা যাবার সময় ইহানকে দিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ইহান আনহার সামনে এটা ফেলে দেয় যার কারনে ভেঙে যায়.....
আনহা: এটা তো......
ইহান: কি ভেবেছিলেন আমি সেদিন ফেলেদিয়েছিলাম আনহা......???
আনহা: আমার সামনেই তো.......
ইহান: আপনি যাওয়ার পর আপনার দেওয়া সবকিছুই আপনাকে মনে করার কারন ছিল। আপনি চলে যাবার পর অনেকবার আমি আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার জন্য কাদতাম। কারন সেখানেই আমি আপনাকে পেতাম। আর তখনি এইটা পেয়েছি আর নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছি...........
আনহা:..........
ইহান: জানেন আনহা আমার জিবনের সবটা জায়গা আমি আপনাকে ঘিরে কাটিয়েছি। সেখানে অন্য কেউ ছিল না আপনি ছাড়া......
আনহা:.......
ইহান: আর এখন কি জানেন আনহা.... আমার চাওয়ার মাঝে আরেকটু জিনিস যোগ হয়েছে আর তা হচ্ছে আমাদের বেবি...
এইটা শুনে আনহা করুন চোখে ইহানের দিকে তাকায়........
ইহান: হুমম আপনি, আমি আর আমাদের বেবি এই ৩ জনকে নিয়ে সাজাবো আমি আমার ছোট্ট একটা সংসার......
আনহার ইহানের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাশি হাশে কারন যে স্বপ্নটার কথা আনহার বলা উচিত সেটা ইহান বলছে কিন্তু আনহা মেনে নিতে পারছে না।
ইহান: আচ্ছা আনহা আমাদের ভিতরে যত দুরত্ব আছে আমাদের বেবি আসলে তা মুছে যাবে তাই না আনহা..... আমাদের মাঝে সবটা নরমাল হয়ে যাবে। আমরাও সব হাসবেন্ড ওয়াইফের মত থাকব তাই না আনহা.......
আনহা:.........
ইহান: আপনিও আমাকে ভালোবাসবেন ঠিক আগের মত। আর আমি আপনাতেই তুমিকে খুজে নেব আনহা। আর এসব আমাদের ছোট একটা বেবি আসলেই হবে তাই না আনহা...........
আনহা:.......
ইহান: তাইত আমি এই বেবিটাকে এত করে চাই......
আনহা:.........
ইহান: আনহা দেখুন....
আনহা: আমি এই বেবিটা চাই না ইহান....[ নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় ]
কথাটা শোনা মাত্র ইহানের মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেল। ওর পুরোটা খুশি এক নিমিষেই মাটিতে মিশে গেল......
ইহান: মানে.... বেবিটা চান না মানে কি??? [ কাপা কাপা গলায় ]
আনহা: তুই ঠিক শুনেছিস এই বেবিটা আমি চাই না। আর না চাই তোর সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক হোক...... [ এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে ]
কথাটা শুনে ইহান আনহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পরছে ইহানের......
ইহান: কেন আনহা??? [ করুন চোখে আনহার দিকে তাকিয়ে ]
আনহা চোখ বন্ধ করে নিজের মত শক্তি সঞ্চয় করে তারপর বলে........
আনহা: আমি চাই না আমাদের মাঝে এমন কেউ আসুক যার জন্য আমাদের বাধ্য হয়ে একসাথে থাকতে হয়। কোনো জোরের সম্পর্কে আমি কোনো নতুন অস্তিত্ব চাই না।
ইহান: আনহাহহহহ...... আপনি এটা কিভাবে বলতে পারেন শুধু আমার উপর রাগ করে আপনি আমার বেবিকে.......
আনহা: আমি জানি ইহান তুই এতে কষ্ট পাবি কিন্তু আমি তোকে কোনো মিথ্যে আশা দিয়ে রাখতে চাইনা। আমি যেটা চাই না সেটার মিথ্যে আশা দিয়ে তোকে ভুলাতে চাই না।
ইহান: কেন আনহা এই জন্য আপনি আমাকে ভালোবাসেন না নাকি এই জন্য আপনি আদ্রের কাছে ফিরে যেতে চান.....
আনহা:.........
ইহান: প্লিজ আনহা চুপ করে থাকবেন না কিছু তো বলুন.....
আনহা: আমি তোকে খুব ভালোবাসি ইহান কিন্তু বিশ্বাস কর হাসবেন্ড হিসেবে তোকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে পসিবল না। এই ৩ মাসে আমি অনেক চেষ্টা করেছি নিজের মন থেকে হাসবেন্ড হিসেবে মেনে নেওয়ার কিন্তু বিশ্বাস কর পারিনি......
ইহান:.......
আনহা: আর আদ্রের কথা বলছিস ওকে তো আমি সেদিনি নিজের মন থেকে মুছে ফেলেছি যেদিন ও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমি ওর কাছে যেতে চায়নি বরং তোর থেকে দুরে যেতে চেয়েছি........
ইহান: কেন আনহা আমি কি এতটাই খারাপ যে একটা বার আমাকে নিজের হাসবেন্ড হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। আমি জানি আপনি আমার বয়সে বড়। সমাজের কাছে একটু বেমানান কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি........
আনহা:.........
ইহান: আচ্ছা এমন কোথায় বলা হয়েছে বরকে তার বউয়ের থেকে বড় হতে হবে। মহান আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হযরত মোহাম্মদ ( স.) এর প্রথম স্ত্রী তার চেয়ে ১৫ বছরের বড় ছিলেন। তবুও তাদের পবিত্র ভালোবাসা এই দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ। আমরা তো তার অনুসারী। তারা যা করে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের অনুসরণ করার কথা আমাদের বলেছেন। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমি কোনো অন্যায় করিনি।
আনহা:........
ইহান: ইউসুফ নবীর জন্য আল্লাহ জুলেখাকে জুটি হিসেবে রেখেছিলেন যে কিনা ইউসুফ নবীর চেয়ে অনেক বেশি বড়। আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাকে অত্যন্ত মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তো বয়সকে সীমাবদ্ধ করে দেননি......
আনহা:......
ইহান: আর সামাজিক ভাবে এটা নতুন নয় যে বউকে বরের চেয়ে বড় হতে হবে বা বউ বড় হলে বিয়েটা ঠিকবেনা। যদি তাই হত তাহলে হাজার হাজার পার্রফেক্ট কাপলদের বিয়ের পর ডির্বোস হয়ে যেত না।
আনহা:.........
ইহান: আমি আপনাকে ভালোবাসি এইটা কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয় আনহা। আমি কি আপনার মনের কোথাও নিজের জন্য স্বামীর জায়গাটা তৈরি করতে পারিনি। এতটাই ব্যর্থ আমি.........
আনহা: আমি জানি ইহান তুই আমাকে ভালোবাসিস এতদিনে তোর সাথে থেকে আমি তা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি কি করব বলত আমিও যে নিরুপায়। আমিও নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠছি না। পারছি না তোকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে...... [ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই কেদে দিল ]
ইহানের চোখ গড়িয়ে পানি পরছে। এক নিমিষেই ওর স্বপ্ন যেন চোখের সামনে ভেঙে যাচ্ছে........
আনহা: আচ্ছা মনের উপর কি কারো জোর থাকে??? আমাকে ভালোবাসা থেকে তুই যেমন নিজেকে দুরে রাখতে পারিসনি নিজের মনের উপর জোর খাটাতে পারিস নি। তেমনি আমিও পারছি না তোকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে। এখন তুই বল কি করব আমি.......
ইহান:.........
আনহা: আমি জানিনা তোকে স্বামী হিসেবে তোকে মানতে পারব কিনা। আর তুই ও আমাকে ছারবি না। আর তাই আমার কাছে এই একটাই পথ খোলা আছে তা হলো নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া। আর তোকে অধিকার দেওয়া..........
ইহান:.........
আনহা: বাকিটা এখন তোর হাতে আমি আমার সবটা তোর উপর ছেড়ে দিলাম। এখন তুই কি করবি তুই ভেবে দেখ। সন্মান করিস না তুই আমাকে এই সন্মান রাখার কর্তব্য এখন তোর আমি আমার নিজের মনের কথা বলে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চাই..........
নির্বাকের মত ইহান এতক্ষন আনহার কথা শুনল.......
ইহান: তাহলে এখন কি চান আপনি......
আনহা: বললাম তো এখন যা হবে তোর ইচ্ছায়। তুই যদি চাস আমাকে মুক্তি দিবি নাহলে তুই যদি চাস জোর করে নিজের কাছে রেখে নিজের অধিকার আদায় করবি তাহলে তাই সই...... শত হলেও তুই আমার হাসবেন্ড। শুধু একটাই কথা আমি তোর সাথে থাকতে চাই না.........
ইহান: আমার উপর..... [ তাচ্ছিল্যের হাশি দিয়ে নিজের ঠোঁটে কামর দিয়ে কান্না আটকায় ] কি বলব আনহা আপনাকে??? আর কি বলার আছে আমার। যা বলার আপনি বলে দিলেন.....
আনহা: বললাম তো তুই যা চাইবি তাই হবে....
ইহান: [ এতটাই যদি আমার মনের কথা ভাবতেন তাহলে এই কথা বলতেন না। ] হুমমম সন্মান করি আমি আপনাকে। আপনি যখন এই ৩ মাস নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের মনের কথা বলেছেন আমি আপনার ইচ্ছে পুরন করব।
আনহা: তুই আমাকে......
ইহান: হুমম দেব মুক্তি। এত কিছুর পর ও যখন আপনি আমার কাছে থাকতে চাইবেন না তাহলে আর আমার পক্ষে ও আপনাকে নিজের কাছে জোর করে রাখা উচিত না। আপনি যদি আমাকে ভালো না বাসতেন তাহলে হয়ত স্বামীর অধিকার নিয়ে আপনাকে জোর করে নিজের কাছে রেখে দিতাম। কিন্তু আপনি তো আমাকে স্বামী হিসেবেই মানতে পারছেন না। এর কি করব আমি???
আনহা: আমি তো.।।।।
ইহান: প্লিজ আনহা কিছু বলবেন না। কোনো সাফাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না আমি। আমি আপনাকে মুক্তি দেব এটাই আপনার জন্য ইমপোর্টেন্ট। আমি কি ভাবলাম তা না........
আনহা:...... [ মাথা নিচু করে আছে ]
ইহান: আপনি আমার কাছে আগেও সন্মানের ছিলেন এখনো আছেন আর ভবিষ্যতেও থাকবেন শুধু একটাই আপনি হয়ত তখন ইহানের লাইফে থাকবেন না............
আনহা: একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করে নিস। দেখবি আমাকে ভুলে গেছিস.......
ইহান: যে বয়সে আপনি ছাড়া কোনো মেয়েকে নিজের চোখে ভালো লাগাতে পারলাম না। শত শত মেয়ের মাঝে আপনাকেই চাইলাম সে কিনা আরেকজনকে পেয়ে আপনাকে ভুলে যাবে......
আনহা:........
ইহান: হুমম তা হয়ত যাব। তবে আমাকে নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক নিজেকে সামলে নেব। আর ভাববেন না আমি আপনার সাথে কোনো অন্যায় করব না। আমার স্ত্রী হিসেবে যা যা পাপ্য আপনার তা আপনাকে বুঝিয়ে দেব......... [ দেয়ালে হেলান দিয়ে ]
আনহা: তাহলে আমি কি চলে যাব......???
ইহান: হুমম...... [ শান্ত গলায় চোখ বন্ধ করে ]
আনহা: ঠিক আছে..... [ বলেই পা বাড়ায় কিন্তু ইহান আনহার হাত ধরে ফেলে ]
ইহান: কোথায় যাচ্ছেন.......[ গম্ভীর গলায় ]
আনহা: তুই তো বললি আমি যাব.......
ইহান: হুমম যাবেন। তবে আজ নয় ১ বছর পর।
আনহা: মানে...... [ বেশ অবাক হয়ে ]
ইহান তখন আনহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে। দুইহাত দিয়ে আনহার কোমর জড়িয়ে ওর পেটে মাথা রাখে......... আনহা বেশ অবাক হয়......
ইহান: যাবেন আপনি। আটকাবো না কিন্তু আমার বেবিকে আমার কাছে দিয়ে........ [ আনহার পেটে মুখ গুজে ]
আনহা: কিন্তু.........
তারপর কিছুক্ষন পর ইহান উঠে দারায়......
ইহান: আমি জানিনা আনহা আপনি আমার কাছ থ্রকে যাওয়ার পর কি করবেন। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছি আপনার কাছে ওর প্রানের ঝুকি আছে। আপনি হয়ত ওকে এই দুনিয়ার মুখ দেখাতে চাইবেন না।
কথাটা শুনে আনহার বুকে মোচর মারে......
ইহান: আপনার হয়ত নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা করবেন। আর এই বেবি আপনার পথে কাটা হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আর আমার বেবি কারো গায়ের কাটা হতে চাইনা।
আনহা: ইহান......
ইহান: আমাকে বলতে দিন আনহা..... আমার আর নিজেকে গোছানোর মত কিছুই নেই। আপনি চলে গেলে আমার বাচার কারন হিসেবে আমার বেবিকে চাই। তাই আপনাকে আমার বেবিকে আমার হাতে তুলে দিয়ে এখান থেকে যেতে হবে। ওকে লালন করার জন্য ওর বাবাই যথেষ্ট।
আনহা:.........
ইহান: নিজের উপর এতটুকু বিশ্বাস আছে ওর বাবাই ওর মা সরি ওর জন্মদাত্রীর চেয়ে ওকে ভালো শিক্ষা দিতে পারবে।
একটা মেয়ের কাছে হয়ত এর চেয়ে অপমানের কিছু হয় না। আর এটাই আনহার কাছে মনে হল......
ইহান: কারন জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। তার জন্য অনেক বলিদান দিতে হয়। তবে সেসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আনহা:।।।।
ইহান: এই ১ বছর আপনি আমার কাছে স্ত্রী নয় আমার বেবির জন্মদাত্রী হয়ে থাকবেন। ১ বছর পর আমি নিজে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দেব। আর চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে নিজের প্রতি দুর্বল করব না। আর না স্বামী হিসেবে কোনো কিছু চাইব। শুধু বেবি বাবাই হিসেবে নিজের বাবা হওয়ার হক আদায় করব।
আনহা:..........
ইহান: আর বেবি হয়ে গেলে আপনাকে আপনার পাপ্য দিয়ে মুক্তি দিয়ে দেব......... এখন নিচে চলুন।
আনহা: আমি কেন........
ইহান: আমি কিছু শুনতে চাইনা। চলুন......
আনহা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তাই দেখে ইহান আনহাকে কোলে তুলে নেয়....... তারপর আনহাকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর ওর গায়ে কাথা টেনে নিজেও ওপাশ ফিরে শুয়ে পরে। আর আনহা অবাক চোখে ইহানকে দেখতে থাকে........
আনহা: কেউ এমনটাও হতে পারে তোকে না দেখলে জানা হত না ইহান........
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইহান দেখে আনহা ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এটা নতুন না প্রতিদিন ই ইহান এভাবেই পায়। আনহা ঘুমের ঘোরে ইহানকে জড়িয়ে ধরে। ইহান প্রতিদিনের মত আনহার কপালে চুমো দিতেই কালকের কথা মনে পরে ও নিজেকে সামলে নিয়ে আনহার থেকে সরে আসে.......
নিজে রেডি হয় অফিসের জন্য। তারপর আনহাকে ডেকে ঘুম থেকে তোলে......
ইহান: দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসুন আমার তারা আছে।
আনহা কিছু বুঝতে পারে না। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইহান খাবার নিয়ে বসে আছে। আনহা আসতেই ওকে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
ইহান: আমি জানি আপনার খাবার খবর। আপনার খামখেয়ালিপনার জন্য আমি আমার বেবিকে কষ্ট দিতে পারব না। তাই খেয়ে নিন....
তারপর ইহান নিজ হাতে আনহাকে খাওয়ায় মাথা নিচু করে। আর আনহা ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাবারটা ইহানের হাত থেকে খায়....... তারপর ওকে মেডিসিন দিয়ে নিজেও কিছুটা খায়।
ইহান: আমি চলে যাচ্ছি। দুপুরে আসতে দেরি হলে খেয়ে নিবে। আর কোনোরকম বাচ্চামি করবেন না যাতে বেবির কিছু হয়......
আনহা: শুধু কি বেবির চিন্তা নাকি তার মায়ের.....
ইহান: বেবির অধিকার নিলেও তার মায়ের অধিকার ছেড়ে দিয়েছি...... [ বলেই চলে গিয়েও ফিরে আসে যে ভালোবাসা ইহান প্রতিদিন আনহার কপালে দিত আজ তা আনহার পেটে দেয়। ইহান আনহার পেটে ঠোঁট ছুইয়ে বেড়িয়ে যায় ]
এইটা দেখে আনহা মুচকি হাসে.....
আনহা: কতটা পাগল তুই.......
অফিসে গিয়ে ইহান আনহার চিন্তায় ডুবে আছে। ঠিক তখনি ওর ফোনে একটা কল আসে। আর ওর মাথায় রক্ত চরে বসে.......
ইহান: আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি.....