রাফিন মাথায় হাত দিয়ে ব্যথায় কাতর হয়ে পিছন ঘুরে তাকালে দেখে আবির মাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাথা থেকে সমান তালে চোটের কারনে রক্ত পড়ছে, রাফিন বেডে ভর দিয়ে উঠে দাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হতে থাকলে...আবির হাত থেকে মাইক ফেলে মমর হাতের দড়ি, পায়ের বাধন ও মুখের কাপড়ের গেড়ো খুলে বলে উঠে-
--বদমাইশ মেয়ে! এই ভাবে কেউ প্ল্যানিং করে! আমাকে জানালে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো! মিরা কোথায়? উঠ!
মম চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে চোখের পানিতে টলমল অবস্থায় বলে উঠে-
--ভাইয়ু মি...রা, মিরা আপুকে বেহুশ করে দিয়েছে ভাইয়ু....তুমি কিছু করো....
আবির মমর চোখের পানি মুছে দিয়ে শান্ত হতে বলল। রাফিন বারবার মাথা ধরে বিছানায় ভর দিয়ে দাড়াতে যেয়ে পড়ে যাচ্ছে। আবির রুমের সবদিকে চোখ বুলাতেই মিরাকে বিছানার পাশে ফ্লোরে হাত-পা বাধা অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। আবির মিরার কাছে তাড়াহুড়ো করে যেয়ে বসলো।।। বেহুশ মিরার হাতের বাধন খুলতেই আবির মাথা ঘুরিয়ে চেচিয়ে বলে উঠল-
--সিনু তুই পালা! জলদি পালা! আম্মু খালামনি লামিয়া আসছে তোকে নিতে! পালা পালা!
মম শাড়ি ধরে পালাতে যেয়েও থেমে গেল। আবিরকে বলে উঠলো-
-- না ভাইয়ু আমি একা পালাতে পারবো না!! মিরা আপু সাথে না আসলে বাসার সবাই উনাকে কথা শুনাবে।। আমি একা যাব না! গেলে মিরা আপুকে সঙ্গে নিয়ে পালাবো!
আবির মিরার সব বাধন খুলে রাগী গলায় মমকে বলল-
--তুই কি গাধা! সিনু তোর হাতে সময় কম! পালা!!!মিরা হুশে নেই! ও পায়ে চেপে যেতে পারবে না!
--আমি যা ব না ! আমি যাবনা, শুনছো? আমি যদি যাই সাথে আপুকে নিয়েই যাব!
আবির মিরার গাল ধরে উঠানোর সঙ্গম করছে...কিন্তু মিরার উঠার সম্ভাবনা নেই। মাথা চুলকাচ্ছে আবির....মিরাকে একা ফেলে বোন যাবে না। এখানে মিরার উঠার পসিবিলিটি নেই। আম্মু, খালামনি সবাই আসছে কনেকে বিয়ের মন্ঞ্চে নিয়ে যেতে। রাস্তা আওড়াতে পারছেনা আবির। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস ছেড়ে আদরের বোনের দিকে তাকালো সে। কাদছে মম। আবির মিরার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই সাথেসাথে মিরাকে কোলে তুলে নিল। মিরাকে কোলে তুলে মমকে বলে উঠলো-
--চল! সময় কম! আমি রান্নাঘরের জানালা দিয়ে যাচ্ছি। তুই মেইন দরজা দিয়ে প্যান্ডেলের পিছন রাস্তা ধরে পালা! সাফিনের গাড়ির সামনে ওয়েট কর! আসছি! পালা!!
ভাইয়া মিরা আপুকে কোলে তুলে রুমের বাইরে চলে গেল। আমি মাথার ঘোমটাটা লম্বা করে সামনে টেনে মুখ ঢেকে যেই দৌড় দিব রাফিন আমার পা টেনে ধরলো। একটুর জন্য ফ্লোরে ধপ করে পড়িনি। ও মাথায় হাত দিয়ে শরীরে-কপালে ঘাম ছুটিয়ে আমার পা ধরে আছে!!
--তোকে আমি যেতে দিব না....তুই যাবি না...তোকে আমি বিয়ে করবো...তুই পালাতে পারিস না...তুই আমার আমার আমার..যেতে দিব না...
আমি পা ছাড়ানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালালেও কাজ হয়না। পা ক্রমান্বয়ে ধাক্কা দিয়ে চলছি রাফিন ছাড়ছেই না। চিৎকার দিয়ে ভাইয়াকেও ডাকতে পারছিনা! উপায় উপায় উপায়!! কই পাবো উপায়!! হঠাৎ শাড়ির আচলের শেষ কোনাটায় নজর গেল। সাফিন ভাইয়ার দেয়া মরিচের গুড়া আচলের খুটে বেধে রেখেছিলাম আমি। এখন উত্তম সময় মরিচের গুড়া ছুড়ে দেওয়ার! চটজলদি হাত চালিয়ে মরিচের গুড়া এক খামচে নিয়ে মুখের ওপর ঢিল মারতেই রাফিন চিৎকার দিয়ে পা ছেড়ে দিল।মরিচের ঝাঝে চোখ ডলছে.... আমিও ছাড়া পেয়ে শাড়ি ধরে পালিয়ে গেলাম। মেইন দরজা অতিক্রম করে প্যান্ডেলের পিছনে সবার দৃষ্টিকোণে ধূলা দিয়ে পার হলাম। প্যান্ডেলের যে সাইডটার পিছনে হাটছি, বিপরীতে মানুষ কম। সকল গান বাজনার সাইন্ড বক্স রাখা। প্যান্ডেল পার করেই ঘোমটা ফেলে দৌড়......এক দৌড়ে সাফিন ভাইয়ের ওখানে গাড়ির দরজা ধরে হাপাচ্ছি। মনিরা আমাকে দেখে পানির বোতল এগিয়ে দিচ্ছে। ইতি মিরা আপুর ব্যাপারে প্রশ্ন করছে। সাফিন ভাই গাড়ি স্টার্ট দিতে তৈরী!
--মম মিরা আপু কোথায়? আপু না আসলে আমরা যেতে পারবো না!!!
--ওই ইতালি চাপাখোর ধিংড়ি চুপ যা! ওরে আগে পানি খাইতে দে। সাফিন ভাই তুমি পরে গাড়ি স্টার্ট দেও,
মনিরার হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে তিনঢোক খেয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম। ইতি টিস্যু দিয়ে আমার পুরো মুখ মুছিয়ে বলে উঠলো-
--তুই ঠিক আছিস? অল পার্ফেক্ট? মিরা আপু কোথায় রে??
--আবির ভাইয়া নিয়ে আসছে।।সব পরে বলছি দোস্ত...বলছি...
গাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালাম, মুগ্ধ বিনা হুশে সিটে হেলে বসে আছেন। খয়েরী রঙের পান্জাবী, বুকের দুইপাশে কালো সুতার কাজ। বোতাম দুটো খোলা, পরিস্কার সাদা বুকটা দেখা যাচ্ছে। চুলগুলো দেখলে টেনে ধরতে ইচ্ছে করে কিন্তু উনি আমায় নিজ থেকে এ সুযোগটা কখনোই দেননি!!আফসোস আমার এটুকুতে!! উনার বন্ধ চোখগুলা না সুন্দর!! কেমন করে চোখজোড়ার পাপড়ি গুলো মায়া লাগিয়ে দিচ্ছে!! লালচে ঠোটের আকৃতিক গঠন না বলাই বাহুল্য। ঠোটদুটোর দিকে তাকালে প্রথমদিন যেভাবে কফির মগে চুমুক লাগাচ্ছিলেন, সেই প্লটটা চোখের সামনে ভেসে আসে আমার। উনি একটু বেশিইই মনোমুগ্ধকর!!!
একটু পর আবির ভাইয়া মিরা আপুকে নিয়ে হাজির। আমরা সবাই গাড়ির এখানে পৌছে গেছি। সমস্যা বাধলো, বসা নিয়ে। আগে ছিলাম আমরা পাচজন। মুগ্ধকে কিডন্যাপ করলে ছয়জন। গাড়ির সিট ছয়'তে সীমাবদ্ধ। আবির ভাইয়া আমাদের সাথে যাবেন বলে বায়না চেপে বসেছেন। সাফিন ভাই ড্রাইভিং সিটে বসে একটা ওয়ে বললেন-
--গাইজ, আমার কথা শোন। আমরা কার জন্য তুলকালাম টাস্ক করলাম? মমর জন্য না?
আমি সাফিন ভাইকে চুপ করিয়ে বলে উঠলাম-
--আমার কথা শোনো সবাই। সাফিন ভাই কি বলবেন আমি বুঝে গেছি। ইতি তুই সাফিন ভাইয়ের পাশে বসবি। আমি মনিরা মুগ্ধ লাস্টে। আবির ভাইয়া আর মিরা আপু দ্বিতীয় লাইনে। ডান। সবাই বসো!
সবাই গাড়িতে বসলাম। আমি মাঝে। ডানপাশে মুগ্ধ আমার কাধে মাথা রেখে এখনো বেহুশ। বামে মনিরা ইয়ারফোনে গান শুনছে। সাফিন ভাই ড্রাইভ করছেন। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পনে সাতটা। গাড়ির ভেতরে ইনার লাইট জ্বালানো হয়নি তাই বাইরে সাথে সামন্জস্য রেখে গাড়ির ভেতরেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘুমে বিভোর সব। সাফিন ভাই আর আমি জেগে আছি। মুগ্ধ ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে বিশ মিনিট হলো। কিন্তু উনি আমার সাথে রাগ করে কথা বলছেন না। কাজি অফিস আসতে ত্রিশ মিনিটের মতো বাকি। এরপর বিয়ে।
মুগ্ধ ভাই সিটে হেলান দিয়ে বাইরে মুখ করে রেখেছেন। রাগে শক্ত বলিষ্ঠ হয়ে বসে আছেন। কথা তো বলছেন না আমি যাও টুকটাক বলি উনি জবাব দেননা। আমি উনার কানে কানে বললাম-
--প্লিজ রাগ করে থাকবেন না....আমি তো আপনার জন্যই এতসব ঝুকি উঠালাম, তাইনা?? বলুন তো আমার মতো মেয়ের কিডন্যাপ করার দরকার ছিলো নাকি? ছিলো?
আমার দিকে করুণ চাহনিতে একবার তাকালেন। তাও কিছু বললেননা। আমারও অসহ্য লাগছে উনার চুপচাপ ব্যবহার। দেরি না করে উনার কোলে বসে নিলাম। মুগ্ধ আমার দিকে হকচকিয়ে হা করে আছেন। পরক্ষনে ছয়শো ভোল্টের এটিটিউড নিয়ে আমাকে সরিয়ে দিয়ে আগের জায়গায় নেওয়ার শূন্য ফলাফলে চেষ্টা করলেন। একটুও ফলপ্রসু হয়নি। আমি অটল সেজে 'এভেন্জারস' এর আয়রন ম্যানের মতো কোলে বসে উনার চোখে হাই ডোজে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ জানালার বাইরে মুখ করে নিলেন। ব্যাপারটা ফালতু লাগলো! আমি উনার হাত ধরে বলে উঠলাম-
--বিয়ে কি করবেন না? আমায় বিয়ে করতে সমস্যা? বলুন না প্লিজ.....
মুগ্ধ উনার হাত ছাড়িয়ে হাতভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। খারাপ লাগছে আমার। নিজের অবস্থার দিকে একবার তাকালাম। জোরজবরদস্তি করে ভুল করছি? আমি তো উনার চোখে কুৎসিত। আবার, রূপা আপুকে দেখলাম উনি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে। আমার সাথে রূপা আপুর রূপের পর্যায়ে যায় না।রূপা আপুকে একবার দেখলেই মনে ধরার মতো সুন্দরী। এখন কি আপুকে পেয়ে উনার ক্ষেত্রেও মত পরিবর্তন ঘটলো?? আমি ম্লান গলায় জিজ্ঞেস করলাম-
--মুগ্ধ ভাই আপনি কি রূপা আপুকে ভালোবাসেন? ভালোবাসলে বলুন, আমি কিছু বলবো না, আপনাকে বাসায় দিয়ে চলে যাব। আমি স্বার্থপর না ভাই।
মুগ্ধ ভাইয়া আমার কথায় অপছন্দতা প্রকাশ করছেন, সেটা জবাব না দেওয়ার ইচ্ছাটা বলে দিচ্ছে। মনটা ভেঙ্গে গেল। কান্না পেলেও জমের মতো হাতের মুঠোতে নখ চেপে বসে আছি। নিজের ব্যথা নিজের সাথেই থাকুক, অন্যকে দেখিয়ে সান্ত্বনা পাওয়ার দরকার কি!! শরীরের জায়গায় জায়গায় ব্যথা করছে। দৌড়াতে যেয়ে পায়ের তালু কেটে ছিলে গিয়েছে। আমি খালি পায়ে ছিলাম, রাস্তায় পড়ে থাকা ছোট ধাড়ালো ইটের টুকরো পায়ে বিধে জখম হয়ে গেছে। যার জন্য সব সহ্য করে পরিকল্পনা করলাম সেই আমাকে দেখতে পারছেনা। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি সিটের ওখানে যেতে নিলে মুগ্ধ ভাই কোমর চেপে ধরলেন। এক টানে নিজের সাথে ধরে গালে গাল ঘষে বলে উঠলেন-
--আমি রাগ করে আছি। রাগ ভাঙা। রূপার নাম নেওয়ার দরকার নেই। কুইক!
দুইহাতে কোমর চেপে আমার গলায় ঠোট ছুয়িয়ে দিলে কেপে উঠি আমি। গলায় নাক ঘষতেই নেশাক্ত গলায় উনি বলে উঠলেন-
--রাগ ভাঙাতে বলেছিলাম!রাগ ভাঙা!
--রাগ কিভাবে ভাঙ্গায়? আমি জানি না...
--বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস এখন বলিস রাগ ভাঙ্গতেই জানিস না!
--আমি পারি না....মাফ করবেন। সরি...
--কি যেনো বলেছিলি, রূপাকে ভালোবাসি? #যদি_বলি_ভালোবাসি??
--আপনাকে ফিরিয়ে আমি অজানায় চলে যাব। নির্জনবাসে বাস করবো। কখনো আপনার কাছে এবং আব্বু আম্মুর কাছে ফিরে আসবোনা।
--বড় বড় কথা দেখি বলতে ভালোই পারিস।।। টর্চার নিতে পারবি?
উনি গলায় নাক ছোয়ানো বাদ দিয়ে অলরেডি টর্চার শুরু করে দিয়েছেন। চোখ খিচুনি মেরে বসে আছি, গলায় টর্চারের পরিমান বেড়ে চলছে। ব্যথায় আস্তে করে কুকড়ে উঠলে উনি থেমে যান।। আমার দুইগালে হাত রেখে নাকে নাক লাগিয়ে বলে উঠলেন-
--লুক পাকনি, তাকা আমার দিকে। আমার মতো ক্লাসলেস ছেলেকে আজীবনের জন্য নিতে পারবি? তুই আমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করছিস, ভেবেছিস লোকেরা কি বলবে? তোকে খোচা মেরে আমার অনুপস্থিতিতে কত কথা শোনাবে? কত আজেবাজে কথা বলবে....
--আমার জন্য আপনি লজ্জিত হবেন? তাহলে প্লিজ আমাকে চলে যেতে দিন। আমি একা থাকতে পারবো। সাফিন ভাইকে বলে দিচ্ছি গাড়ি ঘুরাতে।
--চুপ! কাজি অফিস আসতে কতক্ষণ?
--জানা লাগবে না, আপনি একজন ডক্টর, আমার কাজে আপনার পেশাজীবনে দাগ লাগবে...ভুলে গিয়েছিলাম। সরি। আমি গাড়ি ঘুরাতে বলে দিচ্ছি।
--টর্চার কি গাড়িতে সবার সামনে করবো? ব্যাথায় আবার চিৎকার করলে দোষ দিতে আসবিনা।
.
.
কাজীর সামনে বসে আছি। কাজী সামনের আসনে বসে কাগজপত্র রেডি করছে।গাড়ির মধ্যে মুগ্ধ আমাকে উনার টর্চার থেরাপির শিকারী বানাবেন বলে নোটিফিকেশন দিয়েছেন।। কুনো হয়ে বসে আছি চেয়ারে, পাশে বসে মুগ্ধ কানে ফোন নিয়ে কথা বলছেন। পিছনে সবাই খাবারের লিস্ট বানাচ্ছে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কে কি অর্ডার করবে। আমার এদিক দিয়ে অবস্থা খারাপ। উনার নোটিশ বার্তায় আমি চরমতম ভয়ে আছি। গাড়িতে যে কি করবেন!!! কাজী বুড়ো আঙ্কেল নাকে চশমা রেখে আমাদের দিকে সুযোগ পেলেই তাকান। কিছুক্ষণ পর সব কাগজ রেডি করে আমাদের দিকে দিয়ে বললেন-
--পালিয়া বিয়ে করতাছেন নি??
মুগ্ধ উনার কথায় চুল গুলোতে আঙুল ডুবিয়ে সামনে থেকে পিছনে নিলেন। উনার চুল এমনেতেই কিউট কিউট...তার উপর লোভ লাগাচ্ছেন! ওই চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছামত কবে পূরন হবে ব্যকুল হয়ে আছি!! উনি হাসিমুখে কাজিকে বলে উঠলেন-
--আঙ্কেল, কিডন্যাপিং বিয়ে বুঝলেন!!! সভ্য শান্ত অবুঝ মেয়েটা দেখছেন না!!এই মেয়েটা আমায় আপনার এখানে কিডন্যাপ করে এনেছে!!বিয়ে করবে বুঝলেন!! ইন্ট্রেসটিং না!!
কাজী থতমত হয়ে নাকের চশমা ঠেলে চোখে নিয়ে বলে উঠলেন-
--জমানা মাশাআল্লাহ পরিবর্তন হইয়াছে।। আগে ছইল মাইয়াক তুলিয়া আনি বিয়াশাদি করিতো। জমানা বদলায়া হইয়া গিয়াছে বিপরীতটা। লও লও কাগজ সাইন করিয়া দেও। তিনবার করিয়া কবুল কবুল বলিয়া বিবাহ সম্পন্ন করিয়া লও।
মুগ্ধ ভাইয়া কাগজ নিয়ে দেখছেন, কাগজ উল্টিয়ে সব দেখে বলে উঠলেন-
--একটা কলম হবে প্লিজ??
কাজি আঙ্কেল কলম দিলে মুগ্ধ ভাইয়া কাগজের উল্লেখ জায়গায় সাইন করে দেন। উনি আমার দিকে কাগজ ঠেলে বলে উঠলেন-
--সাইন করো বউ। কিডন্যাপিং করে বিয়ে করার স্বাদ না তোমার!!! নাও, সাইন ইট। সে 'কবুল'!
কাগজ নিয়ে সাইন করে দিলাম, উনার উটের গলায় "বউ বউ বউ" ডাক, ভিন্নধর্মী সুর!!! আল্লাহ ও আল্লাহ মাফ করো! ক্ষমা করো!! উনি আবার আগের ফর্মে চলে আসলো নাকি? আমার সিচুয়েশন তাহলে শেষ! জিন্দাবাদ মম! জিও জিন্দাবাদ! ইউর রাদিফ মুগ্ধ ইজ অন ফায়ার!!সে পুরোনো শয়তান ফর্ম চলে এসেছে!!
উনি চেয়ারের নিচে আমার পায়ে গুতা মেরে কবুল বলতে বলছেন। 'কুইক পাকনি কুইক সে কবুল'। আমি হালকা ঢোক গিলে এক নিশ্বাসে বলে উঠলাম-
--কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল!!!
বলতেই কানে হাহা হোহো হাসি শুনতে পাচ্ছি। কুচকানো এক চোখ খুলে পরিস্থিতি দেখছি, মুগ্ধ ঝকঝকে দাতে... খিলখিলিয়ে হাসছেন। অসম্ভব সুন্দর হাসি!! গালের ডানপাশে ছোট্ট গর্ত উনার! ইশশ...টোল পড়ে ডাক্তার সাহেবের! মারাত্মক আপনি রাদিফ মুগ্ধ!! উনি আমার হাতের ভাজে হাত মিলিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলেন-
--ওরে পাকনি তিনবার কবুল বলতে হয়!!তুইতো তিনবারের জায়গায় দশবার কবুল বলে দিয়েছিস!! (হেসে)
হাসি থামিয়ে আমার দিকে চেয়ারটা ঘুরিয়ে হাতচেপে মাথা নুয়িয়ে মুচকি হাসিতে বলে উঠলেন-
--কবুল কবুল কবুল,
কাজিসহ সাফিন ভাই, মনিরা, ইতি, মিরা আপু, আবির ভাইয়া 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে করতালিতে মাতিয়ে দিলেন। আবির ভাইয়া শিষ বাজিয়ে দিচ্ছেন....সাফিন ভাই 'হৈহৈ' করে পারেননা এখানেই এক নাচ দিয়ে বসেন। মুগ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, হালকা হাসি দিয়ে মনোমুগ্ধকর ভাবখানা......হঠাৎ উনি চোখ টিপ মেরে বিনা শব্দে ঠোট নাড়িয়ে বলে উঠলেন-
--মিসেস রাদিফ আবরার মুগ্ধ!! ওয়েট ফর দ্যা ক্লাইম্যাক্স!!