দারোয়ানের কাছে রুপার অসুস্থতার কথা শুনে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে ছিল তুরান। কিছু সময়ের ব্যবধানে সব ওলটপালট হয়ে গেলো, সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে তুরানের যেন এখুনি ঘুম টা ভেঙে যাবে। দারোয়ানের কথা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না তুরান। শেষ পর্যন্ত গেটের ভিতরে ঢুকলো। কত পরিচিত সব কিছু! এই সেই বারান্দা যেখানে রুপা দাঁড়িয়ে থাকত। তুরানের চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। বুকের ভিতরের কষ্ট গুলো আরো প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। আজিজ চৌধুরীর বাসার মেইন গেটে বড়সড় একটা তালা ঝুলানো। তুরান বার বার তাকাচ্ছে বাসাটার দিকে,
স্মৃতি বিজড়িত প্রত্যেক টা জায়গা। তুরানের চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। তুরান এলোমেলো পায়ে গেটের বাইরে চলে আসলো। ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে পিছনে। কিছুদূর গিয়ে তুরান আবার ফিরে আসলো। এসে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো,
-'রুপা কে কেন হসপিটালে নেওয়া হয়েছে ?কোন হসপিটালে নেওয়া হয়েছে ?'
দারোয়ানের এক ফালি হেসে বললো,
-'জানি না বাবা কিছুই।'
দারোয়ানের হাসির মানে খুঁজে পেলো না তুরান। তবে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসির মানুষ টা কেও কুৎসিত লাগবে।
তুরান পুনরায় হতাশ হলো, আশাহত হয়ে ফিরে গেলো।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল রুপা কে দিশেহারা হয়ে খুঁজছে তুরান। দুই চোখ যে দিকে যায় সেদিকেই রুপা কে খুঁজে বেড়ায় তুরান। তুরান জানে রুপা কে এসব জায়গায় থেকে লাভ নেই, তবুও অবচেতন মনে খুঁজতে লাগলো।
তুরানের হঠাৎ মনে হলো বাবা-মায়ের কথা। সকাল হসপিটাল ছাড়ার কথা ছিলো, এখন দুপুর হয়ে গেলো। পৃথিবীর সমস্ত কিছু ভুলে ছিলো এতক্ষণ তুরান। এপর্যায়ে আরেকটা চিন্তা এসে জড়ো হলো তুরানের মাথায় তা হলো এই মুহূর্তে বাসা পাবে কই?মাসের মাঝামাঝি সময় এখন। বাবা-মা কে নিয়ে কোথায় যাবে এখন? চিন্তায় মাথা ধরে যাচ্ছে তুরানের। এমন সিচুয়েশন ফেস করার জন্য তুরান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
.
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে রুপা। জ্বরের চোটে হুঁশ নেই। জ্বর এখনও কমেনি। জ্বরে বেহুঁশ রুপা এখনো জানেই না যে তাঁর ভালোবাসার মানুষটার সাথে কত দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে তাঁর। জানবেও বা কেমনে? জ্বরের জন্য চোখ মেলেই তাকাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সাহেলা বেগমও রুপা কে এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। রুপার বাবা-মাও আসছে হসপিটালে। সাহেলা বেগমের মুখে চিন্তার ছাপ। নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে সাহেলা বেগমের। রুপার বাবা-মা সাহেলা বেগমের প্রতি আস্থা রেখে রুপা কে সাহেলা বেগমের বাসায় রেখেছিলো চিকিৎসার জন্য। আর এখন যদি রুপার বাবা-মা তুরান আর রুপার সম্পর্কের কথা জানে তাহলে সাহেলা বেগম কিভাবে মুখ দেখাবে রুপার বাবা-মা কে? রুপার জীবনে কত যে একটা কালো অধ্যায় আছে! সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছে না আজও রুপা। তার উপর বিপরীত ধর্মের দুই জন মানুষ আর রুপাকে এতটা ভালোবাসে প্রনয়! সেখানে সাহেলা বেগম কি করে তুরান কে সায় দিবে? সায় দিলেই কি এই সম্পর্ক সম্ভব? সাহেলা বেগম জানে তুরান যথেষ্ট ভালো মানুষ হিসেবে! কিন্তু রুপা আর তুরানের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলেই সাহেলা বেগম হিংস্র হয়ে উঠে। কত চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত রুপা কে একটা সুস্থ জীবন দেওয়ার জন্য , হাজার হোক রুপা সাহেলা বেগমের পেশেন্ট। আর এমন একটা পরিস্থিতি তে বাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছে রুপা আর তুরানের সম্পর্ক। রুপার জীবন থেকে তুরান কে সরিয়ে দিলে আবার কত শত পাগলামি করে রুপা কে জানে? এরকম একটার পর একটা এক্সিডেন্ট রুপার লাইফে ঘটতে থাকলে মেয়েটি কিভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে? সে কি আদৌ সম্ভব? সব বিপদ কি রুপার জন্যই?
এপর্যায়ে খুব বেশি বিরক্ত হয়ে গেছে সাহেলা বেগম। সাহেলা বেগমের এখন মনে হচ্ছে রুপার দায়িত্ব নিয়ে ভুল করেছেন। তুরানের মত একটা মিউচুয়াল ছেলে কিভাবে রুপার সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারলো?
তুরান কি জানে না রুপা হিন্দু? এত কষ্ট করে তিলে তিলে রুপা কে সুস্থ করে তুলছে আর সেখানে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! সাহেলা বেগমের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।
সাহেলা বেগম কে এভাবে আনমনে বসে থাকতে দেখে আজিজ চৌধুরী এগিয়ে গেলো সাহেলা বেগমের দিকে।
সাহেলা বেগমের মুখ দেখেই বুঝতে পারছে রুপার বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। ব্যাচেলর ছেলেদের এজন্যই বাসা ভাড়া দিতে নেই।
আজিজ চৌধুরী গিয়ে সাহেলা বেগমের পাশে বসলো। আজিজ চৌধুরীর উপস্থিতি টের পেলো সাহেলা বেগম।
-'এত কি ভাবছো শুনি?'
সাহেলা বেগম মুখ তুলে তাকালো আজিজ চৌধুরীর দিকে। ক্ষীণ শ্বাস ফেলে বললো,
-'কই কিছু না তো।'
-'অত ভাবাভাবির কাজ নেই আমাদের আর। যাঁদের মেয়ে তাঁদের কাছে দিয়ে দেও।'
আজিজ চৌধুরী একটু থেমে আবার বললো,
-'মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে একদম রুপা তাই না? দুনিয়াধারির কিছুই বুঝেনা! প্রেমটা তো ভালোই বুঝে। জাতে পাগল তালে ঠিক!'
সাহেলা বেগম এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-'এত চেঁচামেচি করেছো কেন? আস্তে কথা বলো এটা হসপিটাল! তাছাড়া রুপার বাবা-মা এখানে, শুনে ফেলবে ওরা। আর স্বার্থপরের মত কথা বলছো? মেয়েটার জীবনে যা ঘটেছে তাতে মানসিক ভারসাম্য হারানো অস্বাভাবিক কিছু না। রুপা যদি তোমার মেয়ে হতো?'
-' সব সময় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবা না। ওর জীবনে যা হয়েছে সত্যিই দুঃখজনক। তাই বলে অন্যের মেয়ের গ্লানি আমরা আর কতদিন বয়ে বেড়াবো? আচ্ছা মানলাম ওর সমস্ত দায়িত্ব আমরা পালন করবো! এর মানে এই না ওর জন্য আমাদের মান-সম্মান নষ্ট করবো।'
সাহেলা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-'তোমার এই আজাইরা প্যাঁচাল আমার শুনতে ভালো লাগছে না সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো?'
-'এগুলো আজাইরা প্যাঁচাল না? আচ্ছা রুপা তো আমাদের মেয়ের মত। আনফরচুনেটলি রুপার সাথে তুরানের সম্পর্ক হয়ে গেছে , মনে করো আমরা রুপা কে গাইডলাইন দিয়ে ঠিকমতো রাখতে পারি নি এটা আমাদের ফল্ট। কিন্তু এই সম্পর্কের কথা যদি রুপার বাবা-মা জানে তবে আমাদের দিকে আঙুল তুলে দোষারোপ করতে ভাববে না একবার। আমরা তাঁদের মেয়ের জন্য কি করেছি কি না করেছি সেটাও ভাববে না। দুনিয়াটা বড্ডো স্বার্থপর।'
-' প্যাঁচিয়ে গ্যাচিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বলো কি বলতে চাও? রুপা কে ওর বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে দিবো এটা চাও?'
-'এছাড়া আর উপায় কি? রুপা যখন সুস্থ হয়ে তুরানের কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কি করবে? ওকে ওর বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে দেও,কারো কাছে এসব জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাবে না । আর আমাদের জিজ্ঞেস করলে বললো তুরান বাসা ছেড়ে চলে গেছে আমরা কিছুই জানি না।'
সাহেলা বেগম কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
-'হুম।'
-' আমরা তুরানের প্রতি রাগের বশে যা করেছি তা অন্যায়।'
সাহেলা বেগম অগ্নিচোখে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-'তুরানকে যদি পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতাম তাহলে কি ও বুঝতো? কখনোই বুঝতো না। হয়ত রুপাকে নিয়ে পালিয়ে যেতো। তাই যা হয়েছে রুপার জন্যও ভালো হয়েছে তুরানের জন্যও ভালো হয়েছে।'
—
দুপুরের কাঠফাটা রোদের মধ্যে হন্য হয়ে বাসা খুঁজছে তুরান। ব্যস্তময় শহরের সব দিকে ব্যস্ততা। এত ব্যস্ততার মাঝেও অসহায়ত্বে গ্রাস করছে তুরান কে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কেউ সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে কেউ বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে বেঘোরে ঘুমায়। কেউবা বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু সেসবের কিছুই তুরানের করা সম্ভব না । তুরানের কাঁধে যে অনেক দায়িত্ব। তিন বোনের দায়িত্ব, বাবা-মায়ের দায়িত্ব যাঁরা প্রতিনিয়ত অভাবের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এত অসহ্য যন্ত্রণা, এত অসহ্য বিরহের মাঝেও তুরান কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে বেড়াচ্ছে।
তুরান ক্লান্ত হয়ে রাস্তার কাছে বেঞ্চে বসে পড়লো। ক্লান্ত শরীর, ক্লান্ত সব চিন্তাভাবনায় হতাশ হয়ে বসে রইলো তুরান। চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো রুপার কথা। রুপার প্রতিটি পাগলামি ,রুপার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত। তুরান চিৎকার করে উঠলো। এই চিৎকারের মানে রুপা কে ছাড়া থাকা কখনোই সম্ভব না।
তুরানের এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে এখানেই বসে থাকতে। কিন্তু জীবনেরর টানে উঠতেই হবে, হাঁটতেই হবে। এই ক্লান্ত পথ চলতেই হবে। এটাই জীবন! মানুষ ইচ্ছে করলেই পালাতে পারেনা এই ক্লান্ত পথ থেকে।
বাসা খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কিন্তু বাসা মিলাতো পারলো না। বাবা-মা কে নিয়ে কোথায় যাবে এই অসময়ে? নিজেকেও আরো বেশি অসহায় মনে হতে লাগলো তুরানের। বার বার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে তুরানের।
.
রুপার জ্বর কিছুটা কমেছে। কিন্তু পুরোপুরি হুঁশ ফিরেনি। খুব বেশি জ্বরের কারনে দিশেহারা অবস্থা রুপার। রুপা চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করে হসপিটালে। রুপার মাথার কাছে রুপার বাবা-মা আর ছোট ভাই বসা। সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী বারান্দায় বসে আছে।
রুপার মা রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জ্বরে একদম ক্লান্ত হয়ে গেছে রুপার।
রুপা নিজের বাবা-মা কে অগ্রাহ্য করে সাহেলা বেগম কে ডাক দিলো। রুপার ডাকে সাড়া দিয়ে সাহেলা বেগম রুমে আসলো। সাহেলা বেগম কে দেখে রুপা ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
-'আমার জ্বর কমে গেছে বোধ হয় দেখো। এখন বাসায় যেতে পারবো না?'
-' হ্যাঁ যেতে পারবে। কিন্তু আমার বাসায় না তুমি এখন থেকে তোমার বাবা-মায়ের সাথে থাকবে।'
রুপা বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-' বাবা মায়ের সাথে থাকবো মানে?'
সাহেলা বেগম ফিকে হেসে বললো,
-' মানে খুব সহজ।'
সাহেলা বেগম রুপার বাবা-মা কে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
-' এঁদের সাথে থাকবে।'
-' আমি তাঁদের সাথে কেন থাকতে যাবো? আমার ওখানে মন টানে না। তবুও কেন জোর করছো? আমি তোমাদেরকে বাসায় থাকলে খুব বেশি প্রবলেম হয় তোমার? আমার প্রতি তোমাদের একটুও মায়া হয়নি যে আমায় জোর করে বিদায় করে দিতে চাচ্ছো।'
এক নাগাড়ে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে রুপা। সাহেলা বেগম তেমন কোন উত্তর দিচ্ছে না। সাহেলা বেগমের আচরণে রুপার মা ও অবাক না হয়ে পারলো না । সাহেলা বেগম ই তো রুপা কে কত আগ্রহ করে নিজের বাসায় রাখলো! কিন্তু আজ হঠাৎ হলো কি?
সাহেলা বেগম রুপার মায়ের উদ্দেশ্য বললো,
-'আমি মাঝে মাঝে না হয় তোর বাসায় গিয়ে ওকে ট্রিটমেন্ট করে আসবো।'
রুপার মা বললো,
-' রুপা এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু তুই তো সব সময় বলতি রুপা সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তোর বাসায় থাকবে। আজ হঠাৎ রুপা কে আমাদের কাছে দেওয়ার জন্য এত তোরজোর করছিস এর পিছনে কি কোন কারন রয়েছে?'
-' না,না কি কারন থাকবে আবার? তোর তো একটাই মেয়ে , প্রত্যেক মা ই চায় সন্তান কে কাছে রাখতে। তাছাড়া রুপা আমার বাসায় ছিলো ট্রিটমেন্টের জন্য। রুপা প্রায় সুস্থ এখন, বাকী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যা।'
সাহেলা বেগমের কথা শুনে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে রুপা। কেমন অপরিচিত মানুষের মত আচরণ করছে সাহেলা বেগম। রুপা আচমকা সাহেলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,
-' আমি তোমাদের বাসায়ই থাকবো। কোথায়ও যাবো না।'
রুপার কথা শুনছে না সাহেলা বেগম। সাহেলা বেগম জানে রুপা কেন যেতে চাচ্ছে না। সাহেলা বেগম এখন শুধু চাচ্ছে যে করেই হোক রুপা কে রুপার বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে আসা। রুপা যদি তুরানের সাথে পালিয়ে যায়?তখন কি করবে সাহেলা বেগম? কি জবাব দিবে রুপার বাবা-মা কে? রুপার বাবা-মা তখন সাহেলা বেগম কে দোষারোপ করতে এক মূহুর্তও চিন্তা করবে না। আর দুই জন বিপরীত ধর্মের মানুষের প্রেমের বিষয় কে কিভাবে সাপোর্ট দিবে সাহেলা বেগম? রুপা যদি সম্পূর্ণ সুস্থ হতো কিংবা হিন্দু না হতো তাহলে হয়ত এমন সিদ্ধান্ত সাহেলা বেগম নিতো না। এর জন্যই সাহেলা বেগম কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে। তুরানের প্রতি অন্যায় করেছে কিন্তু সাহেলা বেগমের ভাবছে এই অন্যায় টাই তুরানের জন্য মঙ্গল।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো রুপা রুপার বাবা-মায়ের সাথেই থাকবে। সাহেলা বেগম কিছুতেই রুপার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। রুপা রুপার বাবা-মায়ের কাছে থাকবে এতে রুপার বাবা-মায়ের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেতে লাগলো কিন্তু সাহেলা বেগমের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারন খুঁজে পাচ্ছে না।
রুপা ফ্লোরে পা আছড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। কিছুতেই যেতে রাজি হচ্ছে না। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেলো। রুপার আজকের এই কান্না সাহেলা বেগমের মন ছু্ঁতে পারছে না বোধ হয়। আজিজ চৌধুরী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
কষ্টে রুপার বুক ফেটে যাচ্ছে। তুরান কে ছাড়া কিছুতেই থাকা সম্ভব না। রুপা জানেই না সাহেলা বেগমের বাসায় গেলেও তুরান কে পাওয়া সম্ভব না।
কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে গেলো রুপা। বেহুঁশ অবস্থায়ই রুপা কে গাড়িতে করে নিয়ে চললো রুপার বাবা-মা।
.
তুরান এক রাতের জন্য তুরানের বন্ধুর বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। তুরান তুরানের বাবা-মা কে নিয়ে বন্ধুর বাসায় উঠলো। তুরানের বাবা-মা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না তুরানের বন্ধুর বাসায় যেতে। তাঁরা গ্রামের বাড়িতেই চলে যেত চাইলো। তুরান অনেক বুঝিয়ে তাঁদের এখানে রাখলো। তুরান খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো তুরানের উপর তুরানের বাবা-মা চাপা অভিমান করে আছে।