চাপা আর্তনাদে চিল্লিয়ে উঠলো মেহনূর। রুমের প্রতিটি দেয়াল যেনো সাক্ষী হিসেবে মৌন রইলো। অসহ্য ব্যথায় চোখ খিঁচে আছড়ে পরলো কান্নায়, সাথে-সাথেই মাথা নামিয়ে ফেললো বিছানার দিকে। পৈশাচিক আনন্দে হাসি ফুটলো কারোর, তবুও রক্তাক্ত হাতটা সে ছাড়লো না। রক্তে মাখামাখি হওয়া সাদা ব্যান্ডেজের হাতটা আরো তীব্রযোগে মুচড়ে ধরলো, মুচড়ে দিতেই ঠোঁট কুঁচকে দাঁত শক্ত করলো রজনী ইবনাত। ব্যথায় কুন্ঠিত হওয়া মেহনূর গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে পারলো না, গলনালীর কাছে সব শব্দগুলো তার জট পাকিয়ে গেলো। অবনত অবস্থায় চোখ কুঁচকেই ডানহাতটা দিয়ে চাঁদর খামচে ধরলো। মুচড়ে ধরার প্রবণতা যতো তিলতিল করে বাড়ছে, ততোই পাঁচ আঙ্গুলের মুষ্ঠিতে বিছানার চাদরটা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। আড়চোখে তার হাতের দিকে তাকালো রজনী, ফিক করে আবারও প্রাপ্তিসূচকের হাসি দিলো। দৃষ্টিটা হাতের উপর স্থির রেখে মুচড়ে ধরা হাতটা অকস্মাৎ ছেড়ে দিলো। ছেড়ে দিতেই বিছানার উপর ধপ করে ব্যান্ডেজযুক্ত হাতটা পরে গেলো। সাদা ব্যান্ডেজটার রঙ পালটে লালবর্ণের রূপ নিয়েছে, শুকনো হাতটা যেনো কয়েক মিনিটের তাণ্ডবলীলায় তরতাজা রক্তে মেখে গেছে। রজনী নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, মেহনূরের জন্য তার নিজের হাতটাও পরিষ্কার নেই। রক্তের অংশাবশেষ তার হাতকেও রাঙিয়ে দিয়েছে, সেটা দেখে মনে-মনে কিছুটা ঘৃণার উদ্রেক হলো। দ্রুত হাতটা পরিষ্কার করার জন্য আশেপাশে তাকালো, কিন্তু মুছার জন্য কিছু না পেয়ে শেষমেশ মেহনূরের আচঁলটার দিকে চোখ আঁটকালো। মেহনূর তখনও বিছানায় মাথা নুইয়ে কাঁদছে, ব্যথায় জর্জরিত হাতটা যেভাবে ধপ করে ফেলেছিলো সেভাবেই পরে আছে। রজনী চুপচাপ মেহনূরের আচঁলটা টেনে হাত মুছতে নিলো, এই সুযোগে আবারও মেহনূরের দিকে আড়চোখে তাকালো রজনী। কোনোরূপ বিশেষ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হাত মুছতে-মুছতেই ব্যঙ্গতার কন্ঠে বললো ,
- তোমার গালটায় ঠাটিয়ে চড় দিলে ভালো হয়। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের চেহারাই হয় চড়-থাপ্পর খাওয়ার জন্য। তুমিও তাদের থেকে ব্যতিক্রম নও। তোমার সাথে শত্রুতা করার ইচ্ছা নেই। শত্রুতা করতেও যোগ্যতা থাকা লাগে, একটা সমান-সমান ব্যাপারও আছে, এই দুটোর একটাও তোমার মধ্যে নেই। আমি ভেবেছিলাম ইউ আর এ্যা স্ট্রং ওপোনেন্ট। এখন তোমার অবস্থা দেখে আশ্চর্য হবো নাকি হাসবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। মাহতিম তোমার মতো গণ্ডমূর্খ ধরে আনবে, সেটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
মেহনূর মাথা নত করে রাখলো তখন, উঠানোর সাহস হলেও জোর পেলো না। মাহতিমের একটা কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো, ' তোমার শান্ত, চুপচাপ স্বভাবটা আমার ভালো লাগে। ' সহসা ব্যথা ভুলে চোখ বন্ধ করলো মেহনূর, ঘেঁটে-ঘেঁটে সেই দিনটার কথা স্মরণ করতেই আবার চোখ আবার খুলে তাকালো। মাহতিম যদি গণ্ডমূর্খকে বিয়ে করে তাহলে এই মহিলার সমস্যা কি? সে কেনো মেহনূরের সাথে অমানুষের মতো আচরণ করছে? যেখানে বিয়ের পুরো ব্যাপারটাই মাহতিম নিজে দেখেছে, সেখানে এই মহিলার অবৈধ হস্তক্ষেপ স্বাভাবিক ঠেকলো না। মেহনূর ঢোক গিলে একটু স্থির হওয়ার চেষ্টা করলো, ব্যথায় হাতটা অসাড় হয়ে আছে তার। নাড়াচাড়া করতে গেলেই মারাত্মক পীড়া দিচ্ছে। রজনী সেখানে আর দাঁড়িয়ে থাকলো না, যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখন। দরজার বাইরে পা দিতেই হঠাৎ কি যেনো ভেবে পা থামিয়ে ফেললো। মাথাটা পিছু ফিরিয়ে মেহনূরের বিপন্ন অবস্থা দেখে আরেকবার হাসার চেষ্টা করলো, সেই হাসিটা ভূতুড়ে কান্ডের মতো কিছুক্ষণ স্থায়ী থেকে এরপর গম্ভীরতায় আচ্ছন্ন হলো। তীব্র ক্ষোভে জর্জরিত হয়ে মনে-মনে বলতে লাগলো,
- তোমার স্বামীকে তো শায়েস্তা করতে পারবো না। সে অধিকারও আমার নেই। কিন্তু সে হয়তো জানে না তার কলিজার উপর হাত লাগিয়ে কি কি কারুকাজ দেখাতে পারি। তোমার স্বামীকে কাদা-জল খাইয়ে ছাড়বো মেহনূর লক্ষ্মী। তোমার স্বামীকে কঠিনভাবে জব্দ করবো।
দাঁতে-দাঁত পিষে কটমট ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো রজনী। এরপর পা চালিয়ে হরদম গতিতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। নিরুপায় মেহনূর ব্যথিত চোখ তুলে রজনীর যাওয়া দেখলো, মহিলার দাপট-চলন-অঙ্গীভঙ্গি সবই যেনো অন্য মাত্রায় প্রকাশ পাচ্ছে। শহরে এভাবে চলাফেরা করা মহিলাগুলো এতো সহজে দাপট দেখায় না, নেহায়েত এর পেছনে বিশাল ' কারণ ' লুকিয়ে আছে।
.
ফোনের দিকে প্রায় আটজোড়া চোখ উন্মুখ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাদের অবস্থা এমন, যেনো ফোনের মধ্যেই জান ঢুকে যাচ্ছে। চিন্তায় সবার মুখের অবস্থা বারোটা বেজে গেছে, কেউ স্বস্তিতে নিশ্বাস পযর্ন্ত নিতে পারছে না। নীতি উদ্বেগের যাতনায় রীতিমতো নখ কামড়াচ্ছে, দাঁত দিয়ে নখ কাটছে বারবার। তৌফ ডান হাতের তালুর সাথে বাঁহাতের তালুটা ক্রমাগত ঘষাঘষি করছে, সৌভিক হাতে ফোন নিয়ে স্ক্রিনের দিকে ব্যকুলদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাকিদের অবস্থাও একই। হঠাৎ নিরবতা পণ্ড করে ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠল, ওমনেই হুড়মুড় করে উঠলো আটজনের দৃষ্টি। ধুকধুক-ধুকধুক করে হৃদপিন্ড লাফাতেই সৌভিক সবার মুখের দিকে একবার-একবার করে তাকিয়ে নিলো, জোরে দম নিয়ে সেটা শব্দ-সহকারে ছাড়তে-ছাড়তে নোটিফিকেশন অপশনে বৃদ্ধাঙ্গুল রাখলো। সাথে-সাথে স্ক্রিনের রঙ পালটে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে ঢেকে গেলো, চোখের সামনে স্পষ্ট হলো ছোট্ট একটা ভয়েস টেক্সট। সৌভিক আবারও বুকভর্তি নিশ্বাস টেনে সেখানেও বৃদ্ধাঙ্গুল স্পর্শ করলো, আঙ্গুল উঠাতেই বাজতে লাগলো বাচ্চা কন্ঠের আতঙ্কিত সুর। প্রতিটি কথা শুনতে-শুনতেই বুকের পৃষ্ঠে ' ধ্বক-ধ্বক ' করে তীড়ের মতো কঠিন কিছু বিদ্ধ হলো, সৌভিক হাতের ফোন ফেলেই দৌড়! সৌভিকের পিছু-পিছু ধুপধাপ শব্দ করে দৌড় লাগালো সবাই। সৌভিক ছুটে গেলো মাহদির রুমের দিকে, বাকিদের মধ্য থেকে মেয়েদের দলটা ছাদের দিকে পা চালালো। অবশিষ্ট দুজন হতভম্বের মতো দু'দলের গতিপথ দেখে চিন্তিত হয়ে উঠলো, কোনদিকে পা চালাবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতেই শেষমেশ মাহদির রুমের দিকে ছুট লাগালো। সৌভিক বন্ধ দরজায় ধাক্কায় মেরে একইগতিতে রুমের ভেতরে ঢুকলো, বিছানার কাছে আসতেই হতবাক দৃষ্টিতে থমকে গেলো। বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশে মুখ ঠেসে বিলাপ করছে মাহদি। দুহাতে বালিশটাকে শক্ত করে খামচে ধরেছে সে, বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজেই অস্ফুট সুরে আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে। সৌভিক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো, মাহদিকে টেনেটুনে বালিশ থেকে উঠিয়ে সোজা করে বসালো। ইতিমধ্যে মাহদির শিশুসুলভ বাচ্চা মুখটা কান্নায় লাল হয়ে গিয়েছে, চোখদুটো টলমল করছে, হিঁচকে কান্নায় ঠোঁট উলটে হাতের উলটোপিঠে অনবরত চোখ ডলছে সে। সৌভিককে সামনে দেখেও কান্না থামাতে পারছিলো না মাহদি, ঠোঁট উলটে কেদেঁই যাচ্ছিলো তখন। সৌভিক প্যান্টের বাম পকেট থেকে রুমাল বের করে মাহদির মুখ মুছে দিতে লাগলো, চোখে ডলতে থাকা হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজের দিকে মুখটা ঘুরালো। পেছন থেকে হুরহুর করে সিয়াম ও তৌফ ঢুকলো, বিছানার দিকে নজর পরতেই চটপট করে বিছানায় এসে বসলো। সৌভিক চোখ মুছে দিতেই ঘটনাটা আবার শোনার জন্য শান্তভাবে তাগাদা দিলো। মাহদি চোখ-মুখ লাল করে তিনজনের দিকেই তাকাতে লাগলো, অথচ মুখ ভেদ করে অত্যাচারের দৃশ্যটা বর্ণনা করলো না। তৌফ, সিয়াম সৌভিকের মতোই তাড়া দিলো মাহদিকে, একে-একে তিনজনের মুখে অনুরোধ শুনে বিগলিত কন্ঠে বলতে লাগলো মাহদি,
- তোমাদের কথামতো সেখানে নজর রাখতে গিয়েছিলাম। সবকিছু ঠিকই ছিলো। মা যখন রুমে ছিলো তখনও সবকিছু ঠিক ছিলো। যেই মা কাজের উছিলায় রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তখনই মামী বউয়ের হাতটা নিয়ে মনের সুখে মোচড়াতে লাগলো। সকালেই নীতি আপু বউয়ের হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে, সেই হাতে ইচ্ছে করে ব্যথা দিয়েছে মামী। তৌফ ভাইয়া, এখন তুমিই বলো মামী বউয়ের হাতে ওভাবে ব্যথা দিলো কেনো? খুব রক্ত পরছিলো তৌফ ভাইয়া। আমি ভয়ে কোনোমতে ভয়েস রের্কড করেছি, সেটাই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে রুমে চলে এসেছি। আমি ওই রজনী মামীর সামনে যাবো না ভাইয়া। আমাকে ওই ডাইনী মহিলার কাছে পাঠিও না। আমি ভাইয়াকে সব বলে দিবো, আমি বিচার দিবো, ওই মহিলাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। ভাইয়া ওই ডাইনীকে ছাড়বে না!
মাহদি তিরিক্ষি মেজাজে গজগজ করতে লাগলো, চোখ দিয়ে আর পানি পরলো না। চোখদুটো যেনো প্রতিশোধের শিখানলে দাউদাউ করে জ্বলছে, ওরা তিনজন কিচ্ছু বললো না। ভারী নিশ্বাসে দম ছাড়লো সবাই, মাহদির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তিনজন একে-অপরের মুখপানে উদ্বিগ্ন চেহারায় তাকালো। তৌফ কিছুক্ষণ নিরব থেকে গুমর কন্ঠে বললো,
- দেখছোস না এবার? আমি কি তোদের মিথ্যা বলছিলাম? এই মহিলা যে নিজের ভাতিজির প্রতিশোধটা ঠিকই তুলবো এই কথাটা কি ভুল বলছিলাম? আসতে-না-আসতেই দামড়ি বেডির পিনিক শুরু। একমাত্র মাহতিমের দোষে আজ মেহনূর ভুগতাছে! আর এইদিকে শা'লায় বাঘের কাছে হরিণ দিয়া ফিল্ড মা'রাইতে গেছে। মুখটা খারাপ করতে চাইছিলাম না, তাও খারাপ হইলো।
তৌফের রাগান্বিত মুখ দেখে মাহদি পিটপিট করে তাকালো। কপালটা সামান্য কুঁচকে ওদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
- তোমরা কার কথা বলছো? ভাতিজিটা কে?
তৌফ প্রশ্নটা শুনতে দেরি, সঙ্গে-সঙ্গে ত্রস্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিতে গেলো, কিন্তু মাঝপথে তাড়াতাড়ি কথা ছিনিয়ে নিলো সিয়াম। আমতা-আমতা করে ' মানে, ওইযে মানে ' করতেই চটপট মিথ্যা সাজিয়ে বললো,
- রজনী মামী তো আগে থেকে খারাপ এটা তো তুই জানোস। মানে, মাহতিম যে উনার চুজ করা মেয়ে বিয়ে না করে নিজের পছন্দমতো বিয়ে করেছে, এটা নিয়ে ক্ষোভ আরকি।
মাহদি এ কথা শুনে আরো ক্ষেপে গেলো। কপালটা কঠিনভাবে কুঁচকে বিছানায় তৎক্ষণাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
- আমার ভাই যাকে মন চায় তাকে বিয়ে করবে, এতে ওই মহিলার কি? আমরা কি ওর টাকায় চলি না ঘুরি? উলটো আমাদের বাবা ওই মহিলাকে হেল্প করেছিলো। উনাকে থাকার জন্য আমাদের বাড়িতে জায়গা দিয়েছিলো। সাহস কতো বড়, আমার ভাইয়ের পার্সনাল লাইফে ইন্ট্যরফ্যার করে! ভাই কাকে বিয়ে করবে, না-করবে এটা অবশ্যই তার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে না।
উত্তেজিত মাহদিকে দেখে শঙ্কায় দরজার দিকে তাকাতে লাগলো ওরা। না-জানি গলার স্বর রজনীর কান পযর্ন্ত চলে গেছে। যদি না যায় তবেই ভালো। ওরা দ্রুত মাহদির হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে ফেললো, সিয়াম চটাশ করে ওর মাথায় জোরেশোরে চাট্টি মারলো। ব্যাথায় ' উফ ' করতেই ঠোঁট গোল করে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো মাহদি, সিয়ামের দিকে ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
- অসহ্য তো! আমাকে মারছো কেনো? আমি কি করেছি? তোমরা ওই মহিলাকে ভয় পাও? ওই ব'দ মহিলাকে ভয় পাও? সত্যি তোমাদের দিয়ে কিচ্ছু আশা করা যায় না। আমি ভাইয়াকে সব বলে দিবো! সব বলে দিবো। মামীকে যদি গুল না খাইয়েছি, আমিও মাহদি আনসারী না। আমার বউয়ের প্রতিটা চোখের পানির হিসাব নিবো, ভাইয়া আসুক। ভাইয়া ওই মহিলাকে ছাড়বে না।
তাড়াতাড়ি মাহদির মুখে হাত চাপা দিলো তৌফ। মাহদিকে আর বলতে না দিয়ে চিন্তিত সুরে বললো,
- চিল্লাস না কেচুটে কোথাকার! তোর ভাই এখন আমাদের সাথে নেই। ওই ব্যাটা যেখানে গেছে সেখান থেকে ভুলেও ওর হেড চিফ আসতে দিবে না। পাগলামো করিস না মাহদি। অফ থাক এখন।
মাহদি ছোটাছুটি করতে নিয়েছিলো কেবল, তৌফের দিকে তাকিয়ে ধীরে-ধীরে শুনে শান্ত হয়ে গেলো। মাহতিম যেখানে আছে সেখান থেকে আসলেই চট করে ফেরা যায় না। একবার সাইকেল থেকে পরে পা ভেঙ্গেছিলো মাহদির, পায়ের একটা জায়গায় তিনটে সেলাই লেগেছিলো রীতিমতো। মাহতিমকে পুরো ঘটনা জানানোর পরও সে আসতে পারেনি, কল করে নিজের ব্যর্থতার কথা জানিয়ে কল কেটেছিলো। প্রায় তিনটা মাস বিছানায় কাটিয়েছে তবুও বড় ভাইকে কাছে পায়নি। এরপর থেকেই মাহদি এটা ভালো করে জানে, বাড়িতে কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে তার ভাই সবার মতো ঝটপট আসতে পারবে না। কড়া নিয়মের মধ্যে যার জীবন বেধেঁ থাকে, নিয়ম ভেঙ্গে নিজের আত্মসর্বস্ব ক্ষুণ্ণ করে সে কখনো আসবেনা।
.
নীতি খুব সাবধানে ব্যান্ডেজের কাপড় পেঁচাতে লাগলো, কোনোক্রমেই যেনো ব্যথার উৎপাত সৃষ্টি না হয় সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখলো। মেহনূরকে পেইন কিলার খাইয়ে নানা কথার জালে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখছে ফারিন। রজনীর বিষয়ে যেনো আগে থেকেই প্রশ্ন না করুক তার জন্য বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। মেহনূর ব্যাপারটা ঠিকই পরিষ্কার করে বুঝতে পারছে, ওরা কেউই চাচ্ছে না রজনীর বিষয়টা আলোকপাত করতে। কেমন যেনো মিইয়ে-মিইয়ে থাকছে ওরা। মেহনূরকে সবসময়ের মতো চুপচাপ দেখে নীতি চিকিৎসার বাক্সটা বক্স করে আলামারিতে রাখতে গেলো। দ্বার খুলে রাখতে-রাখতেই স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
- ভাবী, তোমার সবকিছুই আমার ভালো লাগে। মেয়েলি যতো স্বভাব থাকা উচিত সবটাই তোমার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে আছে। কিন্তু একটা জিনিসের ভারি অভাব।
নীতি বাক্সটা জায়গা মতো রাখতেই কথার মাঝে থেমে গেলো। আলামারিটা ভালোভাবে বন্ধ করে এবার মেহনূরের দিকে তাকালো, সেখান থেকে সরে বিছানায় আসতে-আসতেই প্রীতি ও ফারিনের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা ইশারা করলো। ইশারাটুকু দুজন কিভাবে বুঝলো সেটা অনুমান করতে পারলো না মেহনূর, চটপট ভঙ্গিতে বিছানা থেকে নেমে রুমের বাইরে চলে গেলো তারা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ঘটনাটা গভীরভাবে চিন্তা করবে, তখনই মেহনূরের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে একদম মুখোমুখি হয়ে বসলো নীতি। মেহনূরের কৌতুহল দৃষ্টিকে কেন্দ্র করে বাকি কথাটুকু বলতে লাগলো,
- এই অভাবটা তুমি এখনও টের পাচ্ছো না। তুমি বয়সে ছোট হলেও আশাকরি তোমার বুদ্ধি যথেষ্ট অমায়িক ভাবে আছে। যতটুকুই আছে ততটুকু খাটিয়ে আমাকে শুধু একটা কথার জবাব দাও, তুমি যে অতিরিক্ত মাত্রায় চুপচাপ থাকো সেটা কি কোনো পুরুষের সহ্য হবে? তোমাকে কোনোকিছু জিজ্ঞেস করা হলে বেশিরভাগ সময়ই চুপ করে থাকো। কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেলে কিন্তু আমারও চরম রাগ লাগে। সেদিক দিয়ে ভাইয়া এখনো তোমার সাথে বিদ্রুপ আচরণ করেনি। ভাইয়া তোমার প্রতি যথেষ্ট কনসার্ন ভাবী। ফিউচারে কখনো যদি ভাইয়ার ক্যারেক্টার নিয়ে গুজব উঠে আশা করবো তুমি তাতে কান দিবে না। আমি ভাইয়ার সহোদর বোন না, কিন্তু ছোট থেকে এমনভাবেই মানুষ হয়েছি কোনোদিন বড় ভাইয়ের অভাব ফিল করিনি। ভাইয়ার যদি আপন কোনো বোন থাকতো, হয়তো এতোটাও আদর করতো না যতটা আমরা পেয়েছি। খারাপ লাগছে এখন, তোমার সাথে বেশিদিন স্পেন্ড করতে পারছি না। দু'ঘন্টা পরেই আমার আর প্রীতির ফ্লাইট। টিকিটটাও ভাইয়া এ্যাজেন্সীতে বলে বুক করে দিয়েছে, আমার যেতে হবে ভাবী।
নীতির দিকে তাকিয়ে চুপ থাকতে পারলো না মেহনূর। নীতিকে অপ্রত্যাশিত ভাবে চমকে গিয়ে জাপটে ধরলো দুহাতে। নীতি হা করে পরিস্থিতির দোলাচলে আশ্চর্য হয়ে গেছে, মেহনূর কখনো জাপটে ধরতে পারে এটা কল্পনার দৃশ্যপটে ভাবাও যেনো মুশকিল। মেহনূর জাপটে ধযে চোখ বন্ধ করে নিচু সুরে বলতে লাগলো,
- আপনি আরো কিছুদিন থাকলে খুশী হতাম। আপনাদের আড্ডায় যুক্ত থাকতে পারাটাও আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিলো। আমি কখনো মানুষের মাঝে থাকতে পারিনি, আড্ডায় কখনো কেউ হাত ধরে টানেনি, কেউ বলেনি ' তুমি আমাদের সাথে থাকো।' আপনি থেকে গেলে খুব ভালো হতো। কেনো জানিনা, আমার খুব খারাপ লাগছে। সবাই এক-এক করে চলে যাচ্ছে। এই বাড়িটা আপনাদের ছাড়া শূণ্য লাগবে আপু।
মেহনূরের কথায় আলতো করে হেসে দিলো নীতি। সেও মেহনূরকে দুহাতে স্নেহের ডোরে আগলে ধরলো। মাথায় একটা হাত বুলিয়ে দিতেই স্বহাস্য সুরে বললো,
- হুট করে যদি ফ্যাস্টিভ্যালের ইভেন্টটা না হতো, তাহলে আমি সত্যিই থেকে যেতাম। আমিতো আগেও বলেছি তোমার সবকিছুই আমার ভালো লাগে। তুমি মন খারাপ কোরো না ভাবী। আমি জক্কি সামাল দিয়ে আবার বিডিতে আসবো।
.
ঠিক দুপুরের মধ্যেই লাগেজ রেডি করে নিচে নামলো নীতি-প্রীতি। জনে-জনে সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে যেয়ে উঠলো। একই গাড়িতে চড়ে বসলো সিয়াম। নীতি-প্রীতিকে এয়ারপোর্ট নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে যাবে একটু। পরশুদিন একইভাবে সৌভিক ও তৌফ নিজের কর্মক্ষেত্রে চলে যাবে। বাড়িতে থাকবে শুধু সামিক ও সাবির, এর মধ্যে ফারিন চলে যাবে হোস্টেলের জায়গায়, মাহদি আপাতত বাসা থেকে এক পা-ও নড়বে না। যদি তাকে স্কুলে পাঠানোর কথা তুলে তাহলে বরফ খেয়ে ঠাণ্ডা বাধিয়ে বাসায় থেকে যাবে। রজনী নামক ডাইনীর কাছে তার বউকে ফেলে যাবে না। রজনী সেদিনের ঘটনার পর হুট করেই ভালো সাজতে শুরু করলো, মেহনূরের আশেপাশে ঘুরঘুর করতো ঠিকই, কিন্তু কোনো ধরনের ক্ষতি করতো তার। মাহদির সর্তক দৃষ্টি শুধু রজনীর ক্রিয়াকলাপের উপর আঁটকে থাকে। চুম্বকের মতো রজনীর পিছু-পিছু সারা বাড়ি ঘুরতে থাকে, তার বিশ্বাস রজনী একা পেলেই মেহনূরকে আবার ঘায়েল করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া মাহদি যে গোয়েন্দার মতো মস্তিষ্ক নিয়ে এই বয়সেই পিছু লেগেছে সেটাও রজনীর কাছে ধরা খাবে না। দিনের-পর-দিন এমন করেই যেতে থাকলো, জমজমাট বাড়িটার মানুষ হিসেবে থেকো গেলো কেবল পাঁচ জন। সবাই নিজেদের দীর্ঘকালীন ছুটি কাটিয়ে ব্যস্ত জীবনের দিকে ছুটে গিয়েছে। অপরদিকে বাড়ির মানুষজন স্বাভাবিক মেজাজে তাদের দিন গুজরানে ব্যস্ত হয়েছে।
দিনপন্ঞ্জিকার দিন হিসেবে প্রায় আটটি দিন পেরিয়ে গেলো। চোখের পলকে চলে দিলো একটি নিরব সপ্তাহ। ঋতু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রকৃতি এখন শ্রাবণের মায়ারূপকে আলিঙ্গন করেছে। গ্রীষ্মের তপ্ততাকে রুখে দেওয়ার জন্য বর্ষণের ঢল নেমেছে সর্বত্র। নীলচে আকাশটা আকস্মিকভাবে পালটে যায় এখন। সূর্যকে ঢেকে দিতে আসে তাণ্ডবকারী কালোমেঘ। মেঘে-মেঘে ব্যাপক ঘর্ষণে সৃষ্টি হয় বজ্রপাতের হাহাকার। দালানকোঠা যেনো কেঁপে যেনো প্রতিটি বাজের হুঙ্কারে। এমনই রোদনধারার দিনে প্রকৃতির বিষণ্ণতায় উপন্যাসের শক্ত মোলটে ডুবে ছিলো মেহনূর। শাড়িটাও আজ কায়দা করে পরা। বাঙালি সাজে শাড়ি পরেছে সে, শাড়িটার রঙও ভারি সুন্দর। গাঢ় নীলের জামদানী শাড়ি, সঙ্গে নীলরঙের ব্লাউজ। চুলগুলো কিশোরীর মতো বেণী করা, বেণীর কিছু-কিছু জায়গায় মাহদির কারসাজিতে গুঁজে আছে বকুল ফুল। মুঠোভর্তি বকুল ফুল কুড়িয়ে মেহনূরের চুলে হাসি-হাসি মনে গুঁজে দিয়েছে মাহদি। ব্লাউজটা যেনো লম্বায় খাটো হয়েছে একটু, শাড়িটাও যেনো ভুলবশত নিচে নামিয়ে পরেছে। খুঁতখুঁতে মনটা বারবার কেমন যেনো অনুভব করছে, আবার অলসতার কাছে হেরে বসে শাড়ি ঠিক করতে ইচ্ছে করছে না। বিছানায় বসে জানালার সাথে ঘেঁষাটে দিয়ে বই পড়ছে মেহনূর, হাতে সুন্দর একখানা রোমান্টিক উপন্যাস। বইটা অজ্ঞাতনামায় কুরিয়ার করেছে কেউ, কিন্তু মেহনূরের সুপ্ত মন জানে কাজটার ইতিহাস। নিছক কেউ বই পাঠাতে যাবে না, দাদাভাই বই পাঠালেও সেটা মেহনূর জানতে পারতো। এক কার্টুন রাজ্য পাঠানোর ক্ষমতা যেনো একটা মানুষের আছে, সেই মানুষটা কতো দূরে আছে সে হিসেবে জানা নেই। আকাশটা কঠিনভাবে অন্ধকার করেছে আজ, গুড়ুম-গুড়ুম করে মেঘও ডাকছে। বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গটা অকস্মাৎ করে মেঘ ফাটিয়ে জোরে একটা শব্দ করে, এরপর তলিয়ে যায় অজানায়। উপন্যাসের শব্দমালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের লীলা দেখায় মগ্ন ছিলো মেহনূর, কেনো জানি খুব করে ইচ্ছে করছে তার একটু কন্ঠ শোনার জন্য। মানুষটা বুকভরা আক্ষেপ, প্রচণ্ড হতাশা, ব্যর্থ একটা চাওয়া নিয়ে চলে গিয়েছে, একদিনও খোঁজ নেয়নি সে। ওই অসভ্য খ্যাত মানুষটা কিন্তু সত্যি-সত্যিই তার কথা পালন করেছে, ভুলেও মেহনূরের প্রতি তীব্র আসক্তিটা প্রকাশ করেনি। আটটা দিন পেরিয়ে যাচ্ছে তন্মধ্যে একদিনও খোঁজ নেয়নি। আনমনে আকাশে তাকিয়ে হেসে দিলো মেহনূর। কোলের বইটা বন্ধ করে বুকমার্ক গুঁজে দিলো, সেটা রেখে দিতেই হাত বাড়ালো বালিশের দিকে। বালিশের তলা থেকে টেনে বের করলো বাদামী রঙের নান্দনিক ডায়েরী। ডায়েরীর মোলাটের সাথেই যুক্ত থাকে সুন্দর একটা বলপয়েন্ট। মেহনূর ডায়েরীটা খুলে কলমটা ঠিক করে নিলো, ফকফকা একটা পৃষ্ঠা খুলতেই কোলে একটা বালিশ টেনে তার উপর ডায়েরী রাখলো। কলমের নীলচে কালিতে বাংলাক্ষর সাজিয়ে মনের অব্যক্ত কথা লিখতে লাগলো। বৃষ্টি নামার পূর্বমূহুর্তে জোরে বাতাস ছাড়লো, মেহনূরের কানের কাছে গুঁজা চুলগুলো উড়তে লাগলো তখন। নিবিষ্ট মনে লিখে যাচ্ছিলো মেহনূর, ধ্যান নেই কোথাও।
১২ মে ২০১৯,
শ্রাবণ মাস।
আকাশে প্রচুর মেঘ জমেছে। কোথাও কোনো আলো নেই। বিদঘুটে অন্ধকারে প্রকৃতি ঢেকে আছে, গুড়-গুড় শব্দ হচ্ছে খুব। রুমের আলোটা এখনো জ্বালাইনি, ভেবেছি জ্বালাবো না। এই রুমটা অন্ধকারই ভালো, এতে আলো থাকার প্রয়োজন দেখি না। আপনার শয়নকক্ষে চলে এসেছি, আপনার বিছানায় থাকছি এখন। ছাদের রুমটায় সারাদিন কাটাই, শুধু রাতটুকুর জন্য আপনার রুমটাই সম্বল। আট দিন যাবৎ আপনাকে দেখি না। কতদূরে পাড়ি জমিয়েছেন তাও জানি না। এখন কেউ আমায় জ্বালাতন করেনা, আপনি যেভাবে কথার জালে লজ্জায় মারতেন সেরকম কেউ নেই। আপনাকে অসভ্য বলতে গেলেও এখন হাসি। দিনশেষে আপনি তো আমার সাথেই অসভ্যতামি করেন। আপনি যে এতোবড় উচ্চপদের মানুষ তা আমি অনুমানও করতে পারিনি। আপনার হাসিসুলভ আচরণটা সবসময় আপনাকে প্রাণোচ্ছল বানিয়ে রেখেছে, কখনো বুঝতেই দেয়নি আপনার মধ্যে সামরিক কর্মকাণ্ডের নীতিনিষ্ঠতা আছে। আপনি কোন্ বাহিনীর মানুষ সেটা জানতে পারিনি। তবে, আপনার পড়ার টেবিলে এমন কিছু ছবি দেখেছি সেটা হয়তো আপনি নিজেই পেন্সিল দিয়ে এঁকেছেন। ছবিটার অর্থ কিছুই বুঝিনি, কিন্তু নর্থ-সাউথ-ইষ্ট-ওয়েষ্ট এগুলোর প্রথম অক্ষরগুলো লেখা ছিলো। আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছি আনসারী সাহেব। আমাকে ক্ষমা করার জন্য আপনি ফিরে আসুন। আপনার অনুপস্থিতি আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এইযে দেখুন ডায়েরীর পাতায় কতো সুন্দর করে মনের কথাগুলো বলতে পারছি, অথচ আপনি সামনে থাকলে কিছুই বলতে পারি না। তখন আপনি আমাকে আবেগহীন ভাবেন, আরো হয়তো ভাবেন আমি বোধহয় বেশিই চাপা। হ্যাঁ, আমি চাপা। একটা সত্যি কি জানেন? নিরবে যখন একাকী থাকি, তখন দুনিয়ার সবচেয়ে চন্ঞ্চল মেয়েটা কেবল আমি। একাকীত্বের দুনিয়ায় আগন্তুকের মতো আপনি আমার মনের আঙিনায় ঠাঁই নিয়েছেন। আপনার হাসিমাখা অধরদুটো....
আচমকা জোর গলায় ডেকে উঠলো মারজা। একাধারে ' মেহনূর মা ' বলে ডেকেই যাচ্ছে। শ্বাশুড়ির ডাকে প্রচণ্ড কৌতুহল হলো মেহনূর, দ্রুত ডায়েরী-কলম ওভাবে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো পৃথিবার বুকে। বৈরি আবহাওয়ায় বাতাসের তেজে খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির বড়-বড় ফোঁটা ঢুকতে লাগলো। মূহুর্ত্তের ভেতর ডায়েরীর পৃষ্ঠা ভিজে গিয়ে নীলচে কালি সর্বত্র সরিয়ে পরলো। বাতাসের আরেকদফা হিংস্রতায় ডায়েরীর উপর বৃষ্টির ছাঁট লাগলো আবার। এবার বিগড়ে গেলো অক্ষরগুলোর লেখা। প্রকৃতি যেনো পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠেছে, ডায়েরীর উপর ক্রিয়া ফলিয়ে প্রচণ্ড খুশীতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। ঠাস-ঠাস ভূমি কাঁপিয়ে চর্তুদিক বজ্রাহত হলো, প্রকৃতির এমন ভয়াবহ রূপ যেনো অশনীসংকেতের বার্তা দিচ্ছে। ইশারা দিচ্ছে অশুভ কিছুর আগমন। আবার দালান কেঁপে উঠলো, সাথে-সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে গেলো আনসারীর বাড়ি।
.
.
.
চলবে...............................