যদি তুমি জানতে - অন্তিম পর্ব ২১ - ইসরাত জাহান তানজিলা - ধারাবাহিক গল্প


প্রায় আধা ঘন্টা ধরে তুরানের চোখ বেঁয়ে পানি পড়েই চলেছেন। তুরান ভুলে গেছে ও কোথায় আছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতো যন্ত্রণা গুলো গর্জে উঠছে। এমন একটা অতীত ছিলো রুপার! অথচ তুরান কখনো আঁচ করতেই পারেনি। 
পূজা রায় ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইলো। যেন এ কষ্ট তাঁর অনেক আগেই সয়ে গেছে। মানিয়ে নিয়েছে কষ্টের সাথে নিজেকে। 
পূজা রায় তুরানের দিকে তাকিয়ে রইল নিখুঁত দৃষ্টিতে। বড্ড মায়া হচ্ছে তুরানের জন্য! কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ছেলেটার পূজা রায় সেটা উপলব্ধি করতে পারছে। কিছু কিছু বিষয় উপলব্ধি করতেও পারলেও কিছু করার থাকে না। 
পূজা রায় নিরবতা ভেঙে আবার বললো,
-'তোমার নিজেকে সামলাতে অনেক বেশি সময় লাগবে জানি। দেখো সৃষ্টিকর্তাই তোমাদের ভিন্ন ভিন্ন পথে পাঠিয়েছে, এই নির্মম সত্যিটা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আমি তোমায় আজকে এখানে ডেকে এসব না বললেও হয়ত আমার কোন ক্ষতি হতো না কিন্তু তোমার প্রতি অন্যায় হতো। তুমি তো একটা মেধাবী, বুদ্ধিসম্পন্ন ছেলে তুমিই বলো তোমাদের পথ এক হওয়া সম্ভব?'
তুরান বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-'কোন উপায় নেই এক হওয়ার?'
-' তোমার বিবেক কে প্রশ্ন করো। কেঁদো না! ছেলে মানুষের এভাবে কাঁদা বেমানান। আরো কিছু বিষয় আছে শোনো, রুপা এখন যে সময়টা পার করছে, জীবনের কোন একটা পর্যায়ে হয়ত এর কিছুই মনে থাকবে না। তুরান নামক মানুষ টা কে চিনবে না, সেদিন হয়ত খুব বেশি দূরে না। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক শতরুপা শুধু প্রনয় কে ই ভালোবাসবে। আর আমি একজন মা আমি চাইবো আমার মেয়ে একটা ছেলের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করে আমার থেকে দূরে সরে যাক? নাকি তুমি শতরুপার জন্য ধর্ম পরিবর্তন করবে? জানি এটা কখনোই তুমি করবে না। যাক কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাটা মূর্খতা তাই এসব নিয়ে কথা না বলি। কিন্তু ধরো একটা মিরাকেল ঘটে গেলো শতরুপা মুসলমান হয়ে গেলো , তোমার সাথে বিয়ে হলো কিন্তু কিছুদিন পর ও যদি তোমায় চিনতে না পারে? ও যে ধর্ম পরিবর্তন করেছে তাও তো ওর মনে থাকবে না তাই না? ও তো ছুটে যাবে প্রনয়নের কাছে!
তুমি অনেক সংগ্রাম করে লেখাপড়া করেছো, কষ্টের সাথে যুদ্ধ করে এ পর্যায়ে এসেছো! আমি তোমায় ছোট করার জন্য এসব বলছি না বরংচ তোমার এই সংগ্রামী মনোভাব দেখে তোমার প্রতি শ্রদ্ধা হয় আমার। তোমার বাবা-মা এতটা কষ্ট করে কি পাবে তোমার কাছ থেকে? কত দায়িত্ব তোমার কাঁধে। সাহেলা যে তোমার মা'কে অপমান করেছে‌ কি পরিমান কষ্ট পেয়েছে তোমার মা তা জানো?
আজ তোমার উপর নির্ভর করছে কত গুলো মানুষের ভালো থাকা।'
তুরান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে পূজা রায়ের দিকে তাকায়।‌ পূজা রায় আবার বলতে শুরু করলো,
-' বিষয়টা হচ্ছে তুমি যদি রুপাকে এখন বলো যে তুমি বিয়ে করেছো, রুপা কে বলবা তোমায় ভুলে যেতে। আর সে জন্যই তোমায় এখানে ডেকেছি। দেখো রুপা মানসিক ভারসাম্য হীন একটা মানুষ। ওকে যদি তুমি বলো যে তুমি বিয়ে করেছো, ও যেন তোমায় ভুলে যায়! তাহলে রুপা হয়ত পাহাড় সমান তীব্র অভিমান করবে তোমার উপর! আর যদি রুপা জানে যে আমরা তোমাদের আলাদা করেছি তাহলে ও আত্মহত্যা করবে! আমি ওকে চিনি ও বড্ডো জেদি। আমার কথা গুলো খুব স্বার্থপরের মতো শুনাচ্ছে তাই না? কিন্তু এটাই বাস্তব। 
যদি তুমি আমার কথা টা শুনো তাহলে রুপার মঙ্গল, তোমার পরিবারের মঙ্গল, আমাদের সবার মঙ্গল। তুমি না শুনলেও আমার খুব বেশি সমস্যা হবে না কিন্তু রুপার রাগের সাথে পেরে উঠা খুব মুশকিল হয়ে যাবে। রুপা কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি এখন! কয়দিন বাদে ওকে ট্রিটমেন্টের জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাবো, কিন্তু ও এভাবে পাগলামি করতে থাকলে কোথায়ও নেওয়া সম্ভব না! তাই তোমায় ডেকেছি এখানে। তোমার এই হেল্প টুকু আমার খুব প্রয়োজন। আর কতটা কষ্ট সহ্য করবে ও বলো?'
কি প্রত্যুত্তর করবে তুরান? তুরানের আত্মত্যাগ করতে হবে! সকলের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসা বলি দিতে হবে। এছাড়া এর সমাধান কি হতে পারে? ভালোবাসা ত্যাগ করতে হবে! ইস কি অসহ্য যন্ত্রণা! মৃত্যুর যন্ত্রণা কি এর থেকে বেশী? ভালোবাসার মানুষ টা কে সারা জীবনের জন্য ত্যাগ করতে হবে। আর কখনো এই মুখটা দেখার সুযোগ হবেনা। কখনো না.. কখনোই না! কি নির্মম সত্যি! জীবনের কোন একটা সময়ে রুপার মনেই থাকবে না তুরান নামে কাউকে! জীবনে কোন এক সময়ে রুপার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রাস্তায়,বাসে কিংবা মার্কেটে দেখা হলেও রুপা চিনতে পারবে না তুরান কে! কি বিশ্রী রকমের বাস্তবতা।
আত্মহত্যা মহাপাপ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পাপ- পূন্যের হিসেব করা যায়? পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে! বাস্তবতার শিকলে আবদ্ধ তুরান! মুক্তি নেই এই যন্ত্রণা থেকে।
তুরান কে নিরুত্তর দেখে পূজা রায় আবার বললো,
-'কি করবে তুমি এখন বলো? ভালোবাসার মানুষটা কে এভাবে হারিয়ে ফেলা খুব কষ্টের। না পাওয়ার যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে সারা জীবন। কিন্তু বিয়েই কি প্রেমের পূর্ণতা বলো? যত প্রেমের ইতিহাস রচিত হয়েছে আজ অবধি তা তো সব ভালোবাসার মানুষটা কে না পাওয়ায় গল্পে রচিত । সকলের মঙ্গলে জন্য ভালোবাসা ত্যাগ করাটা ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার থেকে কম কিসে? তুমি ভাবো পুরো বিষয়টা ঠান্ডা মাথায়। আমি যা বলেছি তার থেকে ভালো সমাধান পাবে না কারন সমীকরণ টা খুব জটিল।' এমন জটিল সমীকরণের সমাধান ভালোবাসার মানুষ টা কে ভুলে যাওয়া। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক শতরুপা তো শুধু প্রনয় কে ই ভালোবাসবে। কি করা উচিত তুরানের তা স্বচ্ছ কাঁচের মত স্পষ্ট! কিন্তু উচিত কাজ টা করা তো খুব দুর্বিষহ। 
এত কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে প্রচন্ড রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে তুরানের। তুরানের এই জটিল সমীকরণ থেকে পালিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করছে। আগের দিন গুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে! এগুলো যেন স্বপ্নের মত নিছক হয়ে যায়। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব?
ভিতর থেকে দম বন্ধ হয়ে আসছে তুরানের। ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে অনেক মানুষ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু এভাবে ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকা যায়? এভাবে কি কেউ কখনো হারিয়েছে তাঁর মানুষ টা কে?
সব বাঁধা, ব্যবধান, বিপত্তি মিরাকেল মতো শেষ হয়ে যাক! কিন্তু তা কি হবে কখনো?
তুরান আচমকা পূজা রায়ের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে। হাত জোড় করে বলে,
-'প্লীজ কিছু একটা করুন। আমি রুপা কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না.. কিছুতেই না। এই সত্য, এই বাস্তব সব মিছে হয়ে যাক।'
পূজা রায় চেয়ার থেকে উঠে পা সরিয়ে নেয়। তুরান এমন টা করবে বুঝতে পারে নি। সাহেলা বেগম হাঁ করে তাকিয়ে রইল


ফ্যাকাশে মুখে বসে আছে রুপা।‌ পৃথিবীর সব রঙ যেন বিবর্ন হয়ে গেছে, পৃথিবীটা ধূসর কিংবা সাদাকালো হয়ে গেছে। কোন কিছুতে রং খুঁজে পায়না রুপা। তুরান বিহীন ধুধুর মরুভূমি সবটা। সব স্বপ্ন গুলো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।‌ নেই কোন চঞ্চলতা, চপলতা কিংবা প্রাণবন্ততা। এক অসীম শূন্যতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে রুপা। কান্না করা ভুলে গেছে, যেন অতি শোকে পাথর হয়ে গেছে। কি করে তুরান কে ছাড়া থাকা সম্ভব?
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকায় রুপা। অস্ফুট স্বরে বললো,
-'তুরান!'
তুরান কে দেখে কোন যেন কোন ভাবান্তর নেই। রুপার ধারনা তুরান আসবে কোত্থেকে? এ হয়ত নিছক কল্পনা।
তুরান এক দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। চুল গুলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে রুপার, চোখের নিচে কালো হয়ে আছে, মুখটা একদম পান্ডুর। তুরানের চোখ আবার ভিজে যাচ্ছে। রুপা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রুপা কেন তুরান কে দেখে কোন রিয়্যাক্ট করলো না? তুরান বুঝতে পারছে না। চোখ ভরে নিজের মানুষটা কে দেখে নিচ্ছে তুরান। কি যে মায়া রুপাতে,কি যে মোহ! এ ভুলবে কেমনে তুরান? কি যে ভালোবাসা রুপার দৃষ্টিতে! 
স্বপ্ন গুলো আছড়ে পড়ে আর্তনাদ করছে। অনুভূতি গুলো ধুকড়ে কাঁদছে, প্রিয় কে নিয়ে সুখে থাকার কল্পনা না গুলো আজ হেরে যাচ্ছে। আহা কি যন্ত্রণা!
রুপা আবার তাকিয়ে তুরান কে দেখতে পায়। রুপা আবার ভাবে এ নিছক কল্পনা বৈকি? তুরানও নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চাচ্ছে না। ভালোবাসাটা ত্যাগ করার আগে প্রিয় মুখটা দেখে নিচ্ছে চোখ ভরে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে তুরানের বুক জুড়ে, ভূমিকম্পে কম্পিত হচ্ছে তুরানের পৃথিবী। 
তুরান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-'রুপা।'
রুপা এবার তুরানের দিকে তাকায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। সত্যি কি এসেছে তুরান? নাকি এ কন্ঠটাও কল্পনা। তুরান আবার বললো,
-'কি হলো রুপা? কথা বলছো না কেন?'
রুপা হুমড়ি খেয়ে খাট থেকে নেমে ঝাঁপিয়ে পড়ে তুরানের বুকে। রুপার পুরো শরীর কাঁপছে থরথরিয়ে। তুরানের পুরো শরীরও কাঁপছে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে রাখে। কেউই কোন কথা বলছে না। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে দূরে সরে যায় তুরান। রুপা নিজের গায়ে চিমটি কেটে বললো,
-'সত্যিই এসেছো?'
-'হ্যাঁ সত্যিই এসেছি।'
রুপার ফ্যাকাশে মুখে সূর্যের লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ে। নদীর ঢেউয়ের মতো উত্তল হয়ে যায় খুশিতে। রুপার বিবর্ণ, ধূসর পৃথিবী টা মুহূর্তেই রঙিন হয়ে উঠে। রুপার স্বপ্ন গুলো সতেজ হয়ে উঠে। রুপা জানে না কিছুক্ষণ পর সব আনন্দ গুলো লাশ হয়ে যাবে।
তুরান শুধু ছলছল চোখে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রিয় মুখটা ভুলতে হবে সারাজীবনের জন্য। এই মানুষটা কে কখনো নিজের করে পাওয়া হবে না। তুরান লুকিয়ে চোখ মুছে। না.. কিছুতেই রুপার সামনে কাঁদা যাবে না।
রুপা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো উত্তেজনায়। কি বলবে বুঝে উঠছে পারছে না। তুরানের বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগলো। বাচ্চা দের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-'তুমি নাকি বিয়ে করেছো আম্মু বললো। আমি মোটেও বিশ্বাস করেনি। আমি জানতাম তুমি আসবে।'
এই বলে হাঁপাতে থাকে রুপা। যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-' ক্ষমা করো আমায় রুপা। তোমার আম্মু ঠিকই বলেছে আমি সত্যি বিয়ে করেছি। ভুলে যেয়ো আমায়।'
রুপার দিকে আর তাকালো না তুরান। এই টুকু বলেই সামনে পা বাড়ালো। এখন যদি রুপার দিকে তাকায় তাহলে তুরানের মুখ দেখে রুপা বুঝে ফেলবে এসব মিথ্যা। তুরান এলোমেলো ভাবে পা ফেলতো লাগলো। যেন মাতাল হয়ে হাঁটছে তুরান। ফিরে ফিরে তাকাতে লাগলো সেই চিরচেনা বাড়িটার দিকে। আর বার বার চোখ মুছতে লাগলো। তুরানের শরীর এখনো কাঁপছে। সেই বারান্দা, সেই ছাদ! কত শত স্মৃতি, কত সহস্র ভালোবাসা ,মায়া। রাস্তার মানুষ গুলো তুরানের দিকে তাকাচ্ছে ফিরে ফিরে। সবার কাছে কান্না টা বেমানান লাগছে। তুরানের চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, রাস্তার আছড়ে পড়ে আর্তনাদ করতে ইচ্ছে করছে। এত চাপা কান্নায় বুকটা আরো ভারী হয়ে গেছে তুরানের। আর কখনো দেখবে না রুপা কে। ভালোবাসার গল্পটা এই পর্যন্তই সমপ্ত। আর কোন আশা নেই। সুস্থ হয়ে ভুলে যাবে রুপা তুরান কে। রুপার জীবনের গল্পে থাকবে না তুরান নামক কোন অধ্যায়, কোন অনুভূতি। 
রুপা তাঁর ভালোবাসার মানুষ প্রনয়নের সাথেই সংসার করবে। কোন ক্ষত থাকবে না এ নিয়ে। সব ক্ষত , যন্ত্রণা, কষ্ট তুরানের গল্পে। রুপা সুস্থ , স্বাভাবিক হয়ে যাক! ভালো থাকুক। কিন্তু তুরান নামে কাউকে মনে থাকবে না এই ব্যাথা সহ্য করতে পারছে না তুরান।
সব ভালোবাসা, সব স্বপ্ন, কল্পনা সবই তাহলে নিছক? তুরান দিশেহারা হয়ে রাস্তার পাশে বসে পরলো। হাঁটতে পারছে না পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। 
অনেক কষ্টে বাসায় গিয়ে খাটে ধপ করে শুয়ে পরে তুরান। নিঃশব্দে কাঁদে, খুব গোপনে। কারন বন্ধুর বাসা এটা! কেউ কান্নার শব্দ শুনতে পারে! তুরান আর এত কষ্ট সহ্য করতে পারছে না, কিছুতেই না। এত অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।‌ কিন্তু মৃত্যুর পথও বন্ধ তুরানের জন্য। কাঁধে যে দায়িত্ব খুব! অনেক বড় দায়িত্ব। রুপা যদি একবার জানতো!
এত তীব্র, এত প্রখর ,এত ধারালো কষ্ট গুলোর সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত তুরান, খুব বেশি ক্লান্ত। কতগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে হুমড়ি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর না হোক অন্তত কয়েক ঘন্টার জন্য এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে তুরান।

.
চিতায় দগ্ধ হতে লাগলো রুপার লাশ। প্রখর আগুনে জ্বলে যাচ্ছে শরীরটা। সুস্থ, স্বাভাবিক শতরুপা হয়ত ভালোবাসত প্রনয়কে, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হীন রুপা কিভাবে থাকবে তুরান কে ছাড়া? পূজা রায় এটা কেন ভাবেনি? চারদিকে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে, আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। তুরান যদি একবার জানতো তাঁর ভালোবাসার মানুষ টা আগুনের চিতায় দগ্ধ হচ্ছে? কিভাবে দেখতো এ দৃশ্য? কিভাবে সহ্য করতো? কিভাবে নিজেকে সামলাতো? তুরান নি কখনো জানবে না বেঁচে নেই প্রিয় মুখটা? আগুনে ঝলসে যাচ্ছে সেই মুখটা। 
তুরান‌ হয়ত ভাববে রুপা কে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য, সুস্থ হয়ে ঘর-সংসার করছে রুপা।‌ তুরান তো জানেনা ওর মানুষ টা বড্ড বেশি জেদি। তুরান জানে না বেঁচে নেই সে আর। কি তীব্র অভিমানে চলে গেলো! শেষ বারের মতো দেখতে পারলো না একবার! আহা সেই মায়াময়ী কে! যার থুতনির নিচে কুচ কালো তিল ছিলো একটা। 
চিতার আগুন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে। শরীরটা পোড়ানো শেষ রুপার। নেই কোথায়ও এখন রুপা নামের অস্তিত্ব টা। আগুনও কেমন ক্লান্ত হয়ে নিভে যাচ্ছে। চারদিকের ধোঁয়া গুলোও নেই এখন, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জায়গাটাও পরিষ্কার হয়ে আসছে। 
আজ খুব বেশি অস্থির লাগছে তুরানের। অনেক বেশি! কেন এমন লাগছে বুঝতে পারছে না তুরান! তুরানের বার বার মনে হতে লাগলো রুপা ঠিক আছে তো?


                              ***(সমাপ্ত)***

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন