যদি তুমি জানতে - পর্ব ১২ - ইসরাত জাহান তানজিলা - ধারাবাহিক গল্প


রুপা নিজের অনিচ্ছাকৃত ভাবে সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর সাথে তাঁদের গাড়িতে কমিউনিটি সেন্টারে গেলো। রুপার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেছে। ইচ্ছা ছিলো তুরানের সাথে এক রিকশায় চড়ে যাবে। তুরানের সাথে রিকশায় চড়তে খুব ভালো লাগে রুপার। মুখে চরম বিরক্ত ভাব নিয়ে গাড়িতে বসে রইলো রুপা।
রুপা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছার একটু পর পরই তুরানও চলে আসলো। তুরান কে দেখা মাত্রই রুপার মন খারাপ উবে গেল। তুরানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিলো।
রুপা এতক্ষন তুরানের অপেক্ষায় গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাহেলা বেগম অনেক বার সেধেছে ভিতরে যাওয়ার জন্য কিন্তু রুপা কোন কথা না বলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলো।
-' এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কার জন্য ওয়েট করছেন সুন্দরী?'
-' আমার সুন্দর মানুষ টার জন্য।'
মুখ গম্ভীর করে রুপা আবার বলে,
-' আমি উনাদের সাথে আসতে চাই নি জোর করে নিয়ে আসছে। আমার ইচ্ছা ছিলো আপনার সাথে আসবো।'
-' সে জন্য মন খারাপ করা হয়েছে? এখন মন ভালো করুন আমি এসে গেছি।'
তুরান একটু থেমে সিরিয়াস হয়ে আবার বলে,
-' আমাদের একটু দূরে দূরে থাকতে হবে। সাহেলা আন্টি সন্দেহ করতে পারে।'
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে জোর গলায় বলল,
-' করলে করুক! চলুন তো গেটের ভিতরে।'
গেট দিয়ে ঢুকতেই রুপার চোখে আটকে যায়। রুপা অবাক হয়ে দেখছে সব কিছু। কত সুন্দর করে সাজানো! অবাক চোখে রুপা চার দিকটা দেখছে। গেটের উত্তর দিকে সাজানো হয়েছে স্টেজ। নানা রকমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টেজটা। রুপার দৃষ্টি আবার আটকে যায় স্টেজে‌ বসে থাকা বর‌ বউ কে দেখে। কত সুন্দর গহনা ঘাঁটি আর লাল শাড়ি তে বউ সেজেছে নীড়া। একদম অন্যরকম লাগছে নীড়াকে । নীড়ার বর টাও বেশ চমৎকার। রুপা আনমনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব অবলোকন করতে লাগলো। 
-' রুপা বউ সাজতে ইচ্ছে করছে বুঝি?'
রুপার ভাবনার জগৎ থেকে না বেরিয়েই বেখেয়ালি মনে বলল,
-' হু।'
-' আরে বাবা তাকিয়ে থাকার কি আছে এভাবে?'
রুপা এবার মনযোগ দিয়ে তুরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-' আমাদের এমন বিয়ে হবে কবে?'
তুরান একটা চেয়ার টেনে বসলো। রুপাও পাশের চেয়ার টায় বসলো।
-' আর কয়েক মাস পরে আমার ফাইনাল ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শেষ। তারপর আর তোমার বউ হওয়া ঠেকাবে কে?'
তুরান চিন্তিত গলায় আবার বলল,
-' আচ্ছা রুপা তোমার ফ্যামিলি যদি আমাদের বিয়ে নিয়ে কোন ঝামেলা করে? আই মিন তাঁরা মানবে তো?'
রুপা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-' মানা না মানা তাঁদের ব্যাপার। লাইফ আমার সিদ্ধান্ত আমার! সংসার তো আর তাঁরা করবে না।'
রুপার কাছ থেকে এমন সিরিয়ার কথা শুনা যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু। তুরান হেসে বললো,
-' খুব সিরিয়াস কথা বলতে পারেন দেখছি।'
তুরান একটু থেমে বললো,
-' বলা যতটা সহজ করা ততটা সহজ না।'
-' রুপার কাছে বলা যেমন সহজ করা তার থেকে বেশী সহজ। আমি এখন রোমান্টিক মুডে আছি। এসব কথা বাদ দেন।'
তুরান আবার হেসে দিলো। সাহেলা বেগমের ডাকে চলে গেল রুপা। তুরান একা একা বসে বোর ফিল করছে। অনুষ্ঠানে কত মানুষ অথচ ওকে এখন একা একা বসে থাকতে হচ্ছে। তুরানের ইচ্ছা করছে নিজের মাথায় বারি দিতে, কেন যে সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে না সেই অপরাধে।অথচ রুপা টা একদম ওর বিপরীত মেরুর মানুষ যেন। কত অল্প সময়েই মানুষের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলতে পারে। তুরানের এমন চুপ-চাপ স্বভাবের কারণে সবাই ভাবে তুরান হিংসুটে টাইপের মানুষ। অথচ কেউ বুঝে না যে কারো সাথে কথা বলতে আনইজি লাগে ওর।
-' এই যে ভ্যাবলাকান্ত মশাই।'
পিচ্চি কারো গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকালো রুপা। তুরান যথারীতি হাঁ করে তাকিয়ে রইল। কালকে সেই রোজা পিচ্চি টা। এই নাম তো শুধু ওকে রুপাই‌‌ ডাকতো।
-' হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেন? লুপা আপু ডাকছে।'
তুরান নড়েচড়ে বসে বলল,
-' ভ্যাবলাকান্ত মশাই কে?'
-' আমি জানি নাকি। ওই লুপা আপু আপনায় দেখিয়ে বললো ভ্যাবলাকান্ত মশাই টা কে বলো আমি ডাকি।'
রুপার কাজ‌ তাহলে! রোজা খুব মিষ্টি দেখতে। আরো বেশী মিষ্টি ওর বলা কথা গুলো। সামনে দাঁত না থাকার কারণে র কে ল বলে। তুরান রোজার কথা শুনে কে জানি খুব বেশি মজা পায়।
-' আচ্ছা.. আচ্ছা তোমাল নাম টা যেন কি বলছিলে কালকে?'
মেয়েটা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তুরানের দিকে। 
-' আমায় ব্যাঙ্গাচ্ছেন?'
এই বলেই হনহনিয়ে চলে গেল রোজা। তুরান হাসতে লাগলো। 
তুরান রুপার কাছে গেলো। রুপা তুরান কে একটু আড়ালে নিয়ে গেলো। 
-' তুমি জানো আমি একা একা বসে বসে বোর হচ্ছিলাম?'
-' এত মানুষের মধ্যেও যে একা একা বোর হয় তাঁর জন্য আমার বিশেষ কিছু করার নেই।'
-' তুমি জানো না আমি কারো সাথে কথা বলতে পারি না?'
রুপা চোখ রাঙিয়ে বলল,
-' এসব বদ অভ্যাস বাদ দেন তো। সবার সাথে মিশে থাকার চেষ্টা করবেন।'
হঠাৎ কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায় রুপার। খানিকটা আবেগী হয়ে বলল,
-' একটা চুমো দিলেন না।'
তুরান রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কেমন করে অভিযোগ করে মেয়েটা! তুরানের হৃদস্পন্দন খানিকক্ষণের জন্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তূরান আশেপাশে চোখ বুলিয়ে রুপা কে একটু কাছে টেনে নিলো।
-'দিবো চুমো?'
রুপা মাথা নিচু করে বলল,
-' হুম।'
রুপার চোখেমুখে লজ্জার রক্তিম আভা।কেমন জড়োসড়ো হয়ে চুপসে গেল রুপা। রুপার এমন লজ্জা পাওয়া দেখতে ভালো লাগছে তুরান। তুরান রুপা কে লজ্জা দেওয়ার জন্য আবার বললো,
-'কোথায় দিবো?'
রুপা লজ্জা পাচ্ছে আবার মেজাজও খারাপ হচ্ছে। তুরানের সব সময় রুপা কে লজ্জা দেওয়ার ধান্দা। রুপা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
-' ছাড়ুন। লাগবে না কিছু।'
তুরান ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বলল,
-' লাগবে না কেন? বৃথা চেষ্টা করো না। ছাড়বো না।'
রুপা তুরানের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। তুরান কাছে আসলেই রুপার ইচ্ছা করে দৌড়ে পালাতে,আবার পালিয়ে গেলে নিজের বোকামির জন্য নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা করে। 
তুরান রুপার দুই গালে হাত দিয়ে রুপার মুখটা উঁচিয়ে ধরলো। রুপা এখনো চোখ বুঁজে আছে। তুরান সাত-পাঁচ না ভেবে রুপার ঠোঁটে‌ আলতো করে ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিলো। সর্বাঙ্গে কেঁপে উঠলো রুপা মনে হচ্ছে এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে। হার্ট বিট অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে গেছে। রুপা বরাবরের মত হঠাৎ তুরানের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেলো। তুরানের কাছে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছিলো।এমন অদ্ভুত রকমের অনুভূতির সাথে রুপা মোটেও পরিচিত ছিলো না।
রুপা দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। এই প্রথম তুরান ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছে। এ ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করার মত না।
তুরান নিজের মনে হাসছে। রুপা খুব বেশি লজ্জা পেয়েছে। লজ্জা পাওয়া ব্যাপারটার মধ্যেও অন্যরকম ভালোলাগা, মুগ্ধতা কাজ করে। রুপা কোথায় পালিয়ে গেল? তুরান আশেপাশে তাকাতে লাগলো। রুপা দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি।তুরান আস্তে গিয়ে রুপার পাশে দাঁড়ালো। রুপার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
-'রুপা।'
রুপা হকচকিয়ে পিছনে তাকালো। তুরানের ঠোঁটে আবার দুষ্টুমির হাসি ,হাসিটা যেন রুপাকে লজ্জা দিতে চাচ্ছে।
রুপা তুরানের গায়ে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিতে লাগলো।
-' কুত্তা, শয়তান, বিলাই আপনি! লজ্জা দেন শুধু আমায়।'
-' তোমার হাতের মার এতো মিষ্টি কেন?'
তুরান উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। 
-'রুপা,থামো। চারদিকে মানুষ কিন্তু।'
রুপা জিহ্বায় কামড় দেয়। বিড়বিড় করে বলে,
-' আসলেই তো।'
রুপা বার বার নীড়া আর নীড়ার বরের দিকে তাকাচ্ছে। খুব মানিয়েছে দুই জনকে। ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে ,সবাই বর আর বউয়েয় সাথে ছবি তুলছে। প্রত্যেক টা মেয়েকেই বোধ হয় বিয়ের সাজে মিষ্টি লাগে।
তুরান আর রুপা বর বউয়ের দুই পাশে বসে অনেক গুলো ছবি তুললো। ছবি তোলার ব্যাপারে তুরান ইন্টারেস্টলেস কিন্তু রুপা খুব ইন্টারেস্টেড! রুপা ইচ্ছা করছিলো তুরানের হাত ধরে ছবি তুলতে, কিন্তু এত মানুষের ভিতর তা সম্ভব না।
রুপা আবার বিয়ার আনন্দে মত্ত হয়ে গেলো। তুরান আগের মত এক কোণে চেয়ারে বসে রইলো। রুপার অনেক বেশী আনন্দ হচ্ছে। 
কিছুক্ষণ পর রুপা তুরান কে খুঁজতে লাগে। তুরান চেয়ারে বসে আসে, তুরানের চেয়ার ঘেঁষে আরেকটা চেয়ারে বসে আছে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে ,তুরান মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে তুরানের সাথে ছবি তুলছে। রুপা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল! তুরান কি রুপার মত এই মেয়েটাকেও ভালোবাসে? রুপার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। রুপা বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে। আর বুঝতেও চাইলো না। তুরান কেন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলবে? রুপার মাথায় আগের মত যন্ত্রণা হতে লাগলো। আগের মত সবকিছু ভাঙচুর করতে ইচ্ছে করল। তুরান রুপাকে খেয়াল করে নি।
রুপা দৌড়ে সাহেলা বেগমের কাছে গেলো। রুপার চোখ অদ্ভুত রঙ ধারণ করেছে। অস্বাভাবিক লাগছে রুপাকে। রুপার অবুঝ ব্রেন এখন উত্তাল হয়ে গেল । সাহেলা বেগম রুপা কে দেখে ঘাবড়ে গেলো । রুপার এই রুপ সাহেলা বেগম চিনে। রুপা যখন অস্বাভাবিক হয়ে যায় তখন এমন দেখায় রুপা কে। রুপা ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,
-' আমি বাসায় যাবো, এক্ষুনি বাসায় যাবো।'
সাহেলা বেগম কথা না বাড়িয়ে রুপাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলতে লাগলো। এত মানুষের ভিতর যদি রুপা পাগলামি করে তাহলে মান - সম্মানের প্রশ্ন। সাহেলা বেগম বুঝতে পারলো না রুপা কেন এমন আচরন করছে?রুপা তো স্বাভাবিকই ছিলো।


বাসায় এসে ক্লান্ত মুখে সোফায় বসে রইল সাহেলা বেগম। অনুষ্ঠান শেষ না হতেই চলে আসতে হলো। রুপার হঠাৎ হলোটা কি তাও বুঝতে পারছে না। প্রায় স্বাভাবিকই তো হয়েছিলো রুপা আবার কেন এমন করছে? এত বড় সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝে রুপার ব্যাপারে মাথা কাজ করে না সাহেলা বেগমের। আর রুপার প্রতি অসম্ভব মায়া পড়ে গেছে,ওর সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহারও করতে পারে না সাহেলা বেগম। হয়ত নিঃসন্তান হওয়ায় জন্য মায়াটা আরো তীব্র রুপার প্রতি।
কারো কাছে কিছু না বলেই রুপা কে নিয়ে চলে এসেছে। আজিজ চৌধুরী যদি খোঁজ করে? সাহেলা বেগমের মনে হলো ফোনে একবার জানিয়ে দেওয়া উচিত।রুপার এমন অসময়ের পাগলামির জন্য নিশ্চয়ই রেগে যাবে আজিজ চৌধুরী।
রুপা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রুমে বসে আছে। রুপার বুক ফেটে কান্না আসছে। তুরান অন্য মেয়ের সাথে কেন কথা বললো? আবার ছবিও তুললো! রুপা থাকতে তুরানের কেন দরকার অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার? তুরান ভার্সিটি, টিউশনে আরও কত জায়গায় যায়। তখনো কি এভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলে? এই বিষয় নিয়ে কখনো ভাবা হয় নি রুপার। এমন সন্দেহ রুপার মনে কখনোই ঢুকে নি। রুপা ড্রেসিং টেবিলের কাছে রাখা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারলো। সাহেলা বেগমের কানে গিয়ে এই বিকট শব্দ টা পৌঁছলো। হতাশ ভঙ্গিতে বসে রইল সাহেলা বেগম। প্রায় এক বছর ধরে রুপাকে ভালো করার চেষ্টা করছে, রুপা হান্ড্রেড পার্সেন্ট না হলেও ফিফটি পার্সেন্ট সুস্থ হয়েছিলো। নিজেকে একটু হলেও সফল মনে হয়েছিল সাহেলা বেগমের। কত ভরসা করে রুপার মা-বাবা চিকিৎসার জন্য সাহেলা বেগমের কাছে রাখলো। রুপা যদি আবার এবনরমাল আচরণ করে ,কি জবাব দিবে রুপার মা-বাবার কাছে? রুপা যে স্টেডে আছে এই স্টেডের রোগিরা খুব বেশী সেনসেটিভ মাইন্ডের হয়। কারো কাছ থেকে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরন পেলেই পাগলের মত আচরন করে। বিয়ে বাড়িতে কত মানুষ ,কে রুপার সাথে কি বিহেভ করছে কে জানে।
উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়ে আসে রুপা।‌‌‌ ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,
-' আমি আবার ওখানে নিয়ে যাও।'
সাহেলা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললো,
-' কি হয়েছে তোর? কেউ কি তোর সাথে খারাপ বিহেভ করছে? আমার কাছে বল অন্তত।'
সাহেলা বেগম রুপার সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো,
-' কি হয়েছে আম্মু টা? আমায় বলো।'
-' একটা মেয়ে আমার সাথে খারাপ বিহেভ করছে। ওই মেয়ের সাথে আমার কথা আছে চলো।'
-' আরে এই টুকু বিষয়ের জন্য কেউ এমন করে? আমি তো ভয় পেয়েছিলাম। তখনই তো আমার কাছে বললেই হতো। আমরা দুই মা-মেয়ে মিলে মেয়েটার হাত -পা ভেঙে দিতাম।'
-' কিছু করতে হবে না তোমার তুমি আমার সাথে চলো।'
-' এখন আর কোথায়ও যেতে হবে না। এখন একটু ঘুম দে। আর ওখানে গিয়েই বা এখন কি করবি? অত মানুষের ভিতর কারো সাথে সিন ক্রিয়েট করলে মানুষ খারাপ বলবে।'
-' আমি কোন খারাপ বিহেভ করব না। তুমি যাবে কিনা?'
সাহেলা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললো,
-' আমি তোকে চিনি। এখন কোথায়ও যেতে হবে না।'
সাহেলা বেগমের কোন কথা মানতে রাজি না রুপা। সোফার উপর থাকা চায়ের গ্লাস টা ফ্লোরে‌ ছুঁড়ে মারে। সাহেলা বেগম কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। বলে আর কি হবে? ওর মাথা ঠিক থাকলে ও তো এমন করত না। কত লক্ষ্মী,ভদ্র ছিলো রুপা। সাহেলা বেগম একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-' চল।'
গাড়িতে বসে ফুঁসছে রুপা। সাহেলা বেগম শঙ্কায় পড়ে গেল। কিসের জন্য রুপা আবার অনুষ্ঠানে যাবে? গাড়ি থামাতেই নেমে যায় রুপা, গেটের ভিতরে ঢুকে আশেপাশে কাউকে খুঁজতে থাকে। সাহেলা বেগম রুপা কে অনুসরণ করেছে। কি করে বসে রুপা কে জানে। 
তীব্র বেগে একটা মেয়ের দিকে ছুটে যায় রুপা। সাহেলা বেগম বুঝতে পারলো রুপা সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে খুঁজে পেয়েছে।সাহেলা বেগম কে উপেক্ষা করে রুপা চড় বসিয়ে দেয় তুরানের সাথে বসে থাকা সেই মেয়েটার গালে। চার দিকের সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুর্তির মত। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বললো,
-'হোয়াট ইজ দিজ?'
মেয়েটা বোধ হয় কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। এভাবে অপরিচিত কেউ যদি এসে কারো গালে চড় মারে, সবারই তখন বিস্ময় লেগে যায়। 
একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছিলো তুরান। রুপা চোখ লাল করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে । তুরান দ্রুত গতিতে সেখানে আসলো। তুরানও যথারীতি হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মেয়ে টা আর কিছুই বলছে না। 
-' আরে রুপা হয়েছে কি? তুমি ওর গালে থাপ্পড় দিলে কেন?'
-' তুরান তুমি ওকে চিনো? কি একটা অবস্থা দেখো। কোত্থেকে এসে চড় মারলো।'
রুপার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
-' এই মেয়ে প্রবলেম কি তোমার? মাথায় সমস্যা নাকি? কি হয়েছে কি তোমার?'
রুপাকে এভাবে কথা বলার তুরানের গায়ে লাগলো। 
-' রুপা তুমি ওকে থাপ্পড় দিলে কেন?'
রুপা ঘৃন্য ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-' সেটা তোর কাছে বলতে হবে? ক্যারেক্টারলেস কোথাকার।'
রুপা এ কথাটা কাকে বললো ঠিক বুঝতে পারলো না সাহেলা বেগম। রুপা কেন ক্যারেক্টারলেস বললো তুরান কে? তুরানও কিছুই বুঝতে পারলো না। সাহেলা বেগম পাশে থাকায় কিছুই বলতে পারলো না।
সাহেলা বেগম বিনয়ী গলায় বলল,
-' প্লীজ মা তুমি ওর আচরণে কিছু মনে করো না।'
এই টুকু বলে সাহেলা বেগম থেমে আবার ইশারায় বললো,
-' ওর মাথায় সমস্যা আছে।'
মাথায় সমস্যা থাকলে সে মানুষ কে আর কি বলা যায়। 
মেয়েটা শুধু বললো,
-' ইট'স ওকে আন্টি।'
পাশ থেকে এক ভদ্র মহিলা বললো,
-' মাথায় সমস্যা পাগলা গারদে রাখলেই তো পারেন। নয়ত তো মানুষ কে এভাবে জ্বালাতন করবে।'
কথাটা সাহেলা বেগমের মনে যতটা লাগলো তার চেয়ে বেশি লাগলো তুরানের মনে। দোষ যেহেতু রুপার তাই এর প্রত্যুত্তরে কি আর বলা যায়? ভদ্র মহিলার দিকে তেড়ে গেলো রুপা। সাহেলা বেগম রুপার হাত ধরে ফেললো। রুপা মহিলা টার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,
-' আমি পাগলা গারদে যাবো কেন? তুই যা পাগলা গারদে। হাতা কাটা ব্লাউজ পড়ে অসভ্য,বেহায়া মহিলা।'
রুপা কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মহিলা টা চরম অপমান বোধ করলো। মহিলাটা কিছু বলতে গেলো কড়া গলায় কিন্তু সাহেলা বেগম হাত ধরে টেনে রুপাকে নিয়ে গেলো। আর এক মুহূর্ত‌ না দাঁড়িয়ে রুপাকে জোর করে গাড়িতে বসালো।
আজিজ চৌধুরী এই কান্ড দেখি নি তো? দেখলে বলবে রুপা কে ওর মা-বাবার কাছে দিয়ে আসতে। অন্যের মেয়ের জন্য নিজের মান- সম্মান নষ্ট করতে কেউই চাইবে না।
সারা পথে রুপাকে রাগালো সাহেলা বেগম। রুপার এমন আচরণের জন্য সাহেলা বেগম সত্যিই লজ্জিত।
মেয়েটা রুপাকে এমন কি বললো যার জন্য রুপা এভাবে রেখে আছে? সাহেলা বেগম যত যাই জিজ্ঞেস করছে রুপা নির্বিকার। একটা কথাও বলছে না। 
একটু পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রুপা। অভিমানী গলায় বলল,
-' সবাই আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসতে বলো। আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসো।'
রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? রুপার যদি মানসিক উন্নতিই না হয় তবে ওকে এভাবে সাহেদা বেগমের কাছে রেখেই কি লাভ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন