আপনিময় তুমি - পর্ব ০১ - আরিয়ানা জাবিন মেহের - ধারাবাহিক গল্প


বাসর ঘরে বধু বেশে বসে আছে আনহা। কিছুক্ষন আগেই তার বিয়ে হয়েছে। আনহার বেশ অদ্ভুত লাগছে বউ বেশে এখানে বসে থাকতে। একটু অবাক হওয়ার কথা আনহা কেন তার হাসবেন্ড রুমে বসে এমন করছে। হ্যা প্রতিটি মেয়ের হয়ত এই সময় ভয় লাগে বা অন্যরকম ফিলিংস হয়। কিন্তু আনহার ক্ষেত্রে তা সর্ম্পূন আলাদা।

বিয়েটা আসলে কেমন ছিল তা ঠিক বলতে পারছে না। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে ঠিক হলেও শেষে বাধ্য হয়েই পরিবার তাকে বিয়েটা দিয়েছে। কেন এমনটা হয়েছে ঠিক বুঝতে পারছে না আনহা। আজ আনহার বিয়ের কথা ছিল বিয়েটাও হয়েছে কিন্তু যার সাথে হওয়ার কথা ছিল তার সাথে নয় বরং অন্য কারো সাথে। এমনটা নয় আনহা তাকে চিনে না। তাকে সবচেয়ে বেশি জানে আনহা সবচেয়ে যদি কেউ ভালো করে জানে তবে সে আনহা। কিন্তু হয়ত জানা টাই বড় না চেনা টাই বড় কথা...

অদ্ভুত হলেও সত্যি আনহার বিয়ে তার চেয়ে প্রায় ৫ বছরের ছোট একটা ছেলের সাথে হয়েছে। আর ছেলেটা আর কেউ নয় তার স্টুডেন্ট তবে স্কুল বা কলেজের নয় ছেলেটার ছোট বেলার প্রাইভেট টিউটর ছিল আনহা ।

এবার পরিচয়ে আসা যাক........

ইহান হচ্ছে আনহার সেই স্টুডেন্ট যার সাথে অর্নি মানে আনহার বিয়ে হয়েছে। ইহানের পুরো নাম ইহান আহমেদ অয়ন। ডাকনাম অয়ন। যদিও আনহার কাছে সে ইহান যেমন ইহানের কাছে অর্নি... আনহা। আনহা নামটা ইহানের ডাকা। ইহান আনহাকে এই নামেই সম্বোধন করত সবসময়। [ কেন তা পরে জানবেন ]

ইহানের বয়স সবে ২১ বছর। উচ্চতা ৬ ফুট+..... মেয়েদের মত দুধসাদা ফর্সা৷ একটু আচর লাগলেও লাল হয়ে যায়। ধনী বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ওর বাবা একজন বিজনেস ম্যান। মাত্র ২১ বয়সেই মার্স্টাস শেষ করে ইহান। এখন বাবার বিজনেস সামলায়। ধনী পরিবারের হলেও ইহান অন্য স্বাভারের একটি ছেলে। বেশ শান্ত শিষ্ট আর চাপা স্বভাবের। কয়েকটা জিনিস নিয়েই ওর দুনিয়া..... [ কেন, কিভাবে বাকিটা আস্তে আস্তে জানবেন........... ]

আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আনহা । পুরো নাম আনহা মাহমুদ অর্নি।সবাই অর্নি বলেই ডাকে। উচ্চতা ৫.৪ ফুট। দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। কোনো দিক দিয়ে কারো চেয়ে কম যায় না। বেশ খোলামেলা আর প্রানোচ্ছল স্বভাবের।

আনহার বয়স এখন ২৬। হ্যা একটু বেশি না হলেও কম নয়। কারন আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে এই বয়সী মেয়েরা অবিবাহিত থাকলে যা হয় আরকি........ তবে লেট করে বিয়ে করা ইচ্ছেকৃত নয়।

মধ্যবিত্ত হলেও আনহাদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল বলা চলে। কোনো কিছুর কমতি নেই। পড়ালেখায় যথেষ্ট ভালো আনহা। আর ওর মা বাবাও তাই একমাত্র মেয়ের পড়ালেখা নিয়ে কোনো বাধা দেয়নি।

আনহা যখন ভার্রসিটিতে উঠে তখন ওর রিলেশন হয় একটা ছেলের সাথে। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিদেশে পরার সুযোগ পাওয়ার কারনে ওর বিএফ চলে যায়। আর সম্পর্কের ওইখানেই ইতি টানা হয়। তারপর আর কিছু ভাবেনি আনহা এসব নিয়ে । বিয়ের প্রস্তাব আসতো প্রচুর কিন্তু না করে দেয়। মাস্টার্স কমপ্লিট হওয়ার পর আনহা নিজেই ভাবে এবার ওর বিয়েটা করা উচিত। আর ওর বাবা মাও বলছিল তাই ও রাজি হয়ে যায়। বিয়েও ঠিক হয়ে যায় কিন্তু তখনি ঘটে অন্য বিপক্তি অজানা কারনেই আনহার বিয়েটা ভেঙে যায়। পরে আবার বিয়ের জন্য ট্রাই করা হলে বার বার একি ঘটনা রিপিট হতে থাকে বিয়েটা হতে গিয়েও হয় না। ছেলে পক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে না করে দেয়। একসময় আনহার জন্য সম্বন্ধ আসাই বন্ধ হয়ে যায়। এটা নিয়ে আনহার মাথা ব্যাথা না হলেও ওর বাবা মা খুব ভেঙে পরে। একমাত্র মেয়ে বলে কথা..... কারন পাড়া প্রতিবেশি আত্নীয়রা ছেড়ে কথা বলবে না।

এভাবেই প্রায় দুবছর কেটে যায়..... আনহার বয়স এখন ২৬ বছর। এখন বিয়ের প্রস্তাব আসাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তখনি একটা বিয়ের প্রপোজ আসে আনহার জন্য। খোজ খবর নিয়ে দেখে ছেলে ভালো কিন্তু একটু গরীব। আনহার আপক্তি না থাকলেও ওর বাবার থাকে। কিন্তু তবুও মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সুখি করতে পারবে এইটা ভেবে শান্তি পায়। তাই ঠিক করে ছেলেকে নিজেই হেল্প করবে এমন চিন্তা করেই আনহার বিয়েটা ঠিক করে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না বিয়ের সময় জানতে পারে ছেলে আনহাকে বিয়ে করবে না। যে মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল তার সাথেই পালিয়েছে। যদিও কথাটা কারোই বিশ্বাস যোগ্য ছিল না। কিন্তু তবুও সত্যি.......

এইটা দেখে আনহা ভেঙে পরে। এবার আনহা নিজেই কষ্ট পেয়েছে। এতদিন পর বিয়ে ঠিক হলো তাও ভেঙে গেল। নিজের চেয়ে বেশি কষ্ট বাবা-মায়ের জন্য লাগছে। কারন তারা এবার খুব আশা নিয়ে ছিল। এতদিন পর ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ শেষ মুহূর্তে এসে সবটা শেষ হয়ে গেছে। আনহা বউ সেজে নিজের মনে কাদছিল ঘরে বসে। এইদিকে নানা লোকে নানা কথা বলা বলি করছিল। ওই যেমন বলে তেমনি.... ওর বাবা যেন পাথর হয়ে বসে আছে। এমনিতে আনহার বিয়ে হচ্ছিল না। তা যেটা হয়েছে তাও ভেঙে গেল। এখন কেউ আনহাকে বিয়ে করবে না এটাই স্বাভাবিক...... অনেকে এসে আনহাকে বাজে কথা বলছিল। কিন্তু ওদের শোনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।

তখনি ইহান আসে। ইহান এসে আনহার বাবার কাছে গিয়ে ওনার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে পরে।

বাবা: দেখ বাবা ইহান আজ আমাদের সবটা শেষ হয়ে গেল। আমার মেয়েটার বিয়েটা হতে গিয়েও ভেঙে গেল। আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল..... [ কাদতে কাদতে ]

ইহান:.......

বাবা: আমি আমার মেয়ের চোখে অপরাধী হয়ে গেলাম। ওকে সুখি করতে পারলাম না। এখন আমি আমার মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দিব??? আর কেই বা ওকে বিয়ে করবে....??? [

ইহান: আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তবে আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই [ আনহার বাবার হাত ধরে ]

বাবা: এসব কি বলছ তুমি.... [ বেশ অবাক হয়ে ]

ইহান: আপনি ঠিক শুনেছেন। আপনি যদি চান তবে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

বাবা: কিন্তু তুমি তো ওর চেয়ে অনেক ছোট।

ইহান: আমি জানি আমি ওনার ছোট। কিন্তু উনাকে বিয়ে করতে চাই। এখন আপনি যদি রাজি থাকেন তো তবেই.......

বাবা: না বাবা আমার মেয়ের সন্মান বাচানোর জন্য আমি তোমার সাথে......

ইহান: আমি আমার কথা জানিয়েছি। বাকিটা আপনারা ভেবে দেখুন......

আনহার বাবা চিন্তায় পরে গেলেন। কিন্তু রাজি হওয়া ছাড়া আনহার বাবার আর কোনো পথ খোলা নেই। কারন বিয়ে ভাঙার চেয়ে ইহানের সাথে বিয়ে হওয়া ভালো। ইহানের বয়স কেবল ২১ তবে সে মার্টাস কমপ্লিট করেছে। এখন বাবার ব্যবসা দেখছে। আর ওর চেয়ে ভালো ছেলে আনহার জন্য তিনি নিজেও পাবেন না।

বাবা: কিন্তু তোমার বাবা মা কি মেনে নেবেন।

ইহান: ওইটা আমার উপর ছেড়ে দিন। আমি ওনাদের একমাত্র সন্তান ওনারা ঠিক মেনে নিবেন। আপনি বিয়ের ব্যাবস্থা করুন।

তখন আনহা চেয়ে ও কিছু করতে পারেনি। আনহা বিয়েটা করতে চায়নি। কিন্তু বাবা মায়ের মুখ চেয়ে না করতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়েই সে তার স্টুডেন্টকে বিয়েটা করেছে।

তখনি দরজাটা খোলার শব্দ হয়। আর আনহা বর্তমানে ফিরে আসে.........

আনহা তার দিকে তাকাতেই দেখে ইহান এসেছে। আনহা এবার ঘরটাকে ভালো ভাবে দেখে নেয়। কোনো প্লানিং ছাড়া এতটা সুন্দর ভাবে ঘর সাজানো যায় তাও এই কম সময়ে আনহার জানা ছিল না। পুরো রুম বেলি ফুল আর লাইটিং এর মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। আনহার মনের মত করে।

ইহানকে দেখে আনহা বিছানা থেকে নেমে ওর কাছে যায়। ইহান একটা মুড নিয়ে দারিয়ে আছে.....

আনহা: আমি জানি ইহান তুই..

[ জিহবায় কামর দিয়ে। কারন ইহান আনহাকে খুব সন্মান করে। কিন্তু আনহা ওকে তুই করেই ডাকে। কারন খুব ছোট থেকেই চেনে ওকে ]

আনহা: দেখো ইহান আমি জানি তুমি আমার সন্মান বাচানোর জন্য বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে। তাই আমি চাই না কোনো জোরের সম্পর্কে তুমি থাকো। আমি তোমাকে ডির্বোস দিয়ে দিব। আর এমনিতেও আমি তোমার বয়সে অনেক বড়। তাই......

ইহান ছোটবেলা থেকেই বেশ শান্ত। তাই ও শান্ত ভাবেই আনহার কথা শুনলো মাথা নিচু করে। তারপর নিজের হাতের ঘড়ি খুলে রাখতে রাখতে বলল.....

ইহান: আপনি কি আর কিছু বলবেন। মানে এখানে আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিছু কি চাই আপনার।

ইহানের কথায় আনহা বেশ অবাক হলো। কাকে কি বলল আনহা।

আনহা: এই তুই শুনতে পাচ্ছিস না। আমি তোকে কিছু বলছি??? 😡😡😡

ইহান: বলুন কি বলবেন???[ বিরক্ত হয়ে ]

আনহা: আচ্ছা আমি যদি তোর মত পিচ্ছি জামাই নিয়ে সংসার করি লোকে কি বলবে??? আর আমরা কেউ ইচ্ছে করে বিয়ে করতে চাইনি। তাই বলছি আমাকে ডির্বোস দে...

এইটা শুনে ইহান আনহার দিকে তাকায়..

ইহান: [ সত্যি আমি আপনাকে ইচ্ছে করে বিয়ে করেনি আনহা বাধ্য হয়েই করেছি। কারন আপনি ছাড়া নিজেকে চিন্তাও করতে পারিনা। আর অন্য কারো স্ত্রী হিসেবে,,,,,না।....মনে মনে বলল ] দেখুন আপনি বড় হয়েছেন ঠিকি কিন্তু আপনার ম্যাচুরিটি এখনো হয়নি।

আনহা: আমার স্টুডেন্ট হয়ে তুই আমাকে জ্ঞান দিস। এত সাহস তোর। স্কেল কই??? 😡😡😡

ইহান: দেখুন এখানে আপনি আমাকে পড়াচ্ছেন না আর না আমি আপনার স্টুডেন্ট। আমি হাসবেন্ড হই আপনার।

আনহা: এইটাই তো বুঝতে পারছিস না। তাই তো ডির্বোস চাইছি।😁😁😁

এবার একটু রেগে যায় ইহান......

ইহান: আচ্ছা কোন আইনে বিয়ের দিন রাত ১২ টা বাজে ডির্বোস দেওয়া যায়। ডির্বোসের জন্য না হলেও ছয় মাস টাইম লাগে।

আনহা: তাইতো এইটা তো ভাবিনি। তার মানে ছয় মাস এখানে থাকতে হবে। আচ্ছা সমস্যা নেই আমি কাল বাসায় চলে যাব। আর ৬ মাস পর ডির্বোস করে নিব। 😁😁

ইহান আনহার কথা শুনে উঠে দারায়। তারপর আনহার দিকে এগিয়ে যায়। আনহার কাছে আসতেই আনহা ওই পাশে কিছু দেখতে পায় না কারন বয়সে আনহা বড় হলেও হাইটে ইহান অনেক বেশি বড় 6 ফুট+।

আনহা: ইসস আগেই তুই ভালো ছিলি কান টানতে সুবিধা হত। এখন ধরতেও পারব না।

ইহান: আপনার উদ্ভট চিন্তা শেষ হলে শুতে চলুন প্লিজ। আমার কাজ আছে।

আনহা: কিন্তু ঘুম আসবেনা কাল বাসায় গিয়ে ঘুমোবো বলে চলে যেতে নেয়। তখনি ইহান আনহার হাত ধরে।

ইহান: আপনার ডির্বোস চাই তাইতো।

আনহা: হুমম। নাইলে কি তোর মত পিচ্চির সাথে সংসার করব। পাগল আমি।

আনহা কথাগুলো জেন ইহানের কানেই গেল না। ঘোর দৃষ্টিতে আনহার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।

আনহা: ইহান..... ওই ইহান ... আরে ওই গাধা....

তখনি ইহান আনহাকে টেনে কাছে আনে। তারপর খুব সফটলি আনহার ঠোঁট স্পর্শ করে। এটা দেখে আনহা অবাকের শীর্ষে। চোখ বড় করে ড্যাব ড্যাব তাকিয়ে থাকে .. কি করল এটা ইহান। ও ২৪০০০ হাজার ভোল্ট ঝটকা খেয়ে দারিয়ে আছে। ইহান আনহার গালে হাত দিয়ে নেশা দৃষ্টি কাটিয়ে ওর থেকে সরে দাঁড়ায়.....

ইহান: পিচ্চি হলেও আমি আপনার হাসবেন্ড। আর ডির্বোস পেতে হলে আপনাকে ৬ মাস এখানে থাকতে হবে আমার স্ত্রী হয়ে।

আনহা: তুই.... 😮😮😮

ইহান: হুমম আমি.... [ আনহার কাছে গিয়ে ]

তারপর আনহাকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে যায়। আনহা অবাক হয়ে ইহানকে দেখতে থাকে। আর ইহান তা দেখে বাকা ঠোঁটে হাসতে থাকে। তারপর কোলে তুলে ছাদে এনে আনহাকে দোনলায় বসিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। তারপর বলে........

ইহান: [ আপনাতে আমি তুমিকে চাই... কিন্তু তুমি করে না..... তাইতো তুমি আমার...

#আপনিময়💓তুমি...
আমার অপ্রত্যাশিত পাগল ভালোবাসা ]

আনহা অবাক হয়ে দেখে ইহানকে......

ইহান দোলনায় বসিয়ে দোলনা দুলায়। তারপর আনহার কোলে মাথা রেখে আনহার হাত নিজের মাথায় দেয়।

ইহান: চুল গুলো একটু টেনে দিন না।

আনহা নিজের অজান্তেই ইহানের চুল গুলো টানতে থাকে। আর ইহান পরম আবেশে ঘুমিয়ে পরে আনহার কোলে তখনি আনহা ফিরে যায় অতীতে। যেদিন ইহানের সাথে ওর প্রথম দেখা........

প্রায় ১৩ বছর আগের কথা........

তখন আনহা কেবল ক্লাস 7 এ পরে তখনি একদিন টিফিনের সময় মাঠের শেষে বসা একটা ছোট্ট ছেলেকে দেখতে পায়। ছেলেটা রোগা-সোগা হলে বেশ কিউট দেখতে। লম্বা লম্বা চুল গুলো চোখের উপর বারি খাচ্ছে। পিচ্চিটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে টিফিনের বদলে বাকি বাচ্চাদের হাতে মার খেয়ে মাঠের কোনায় টিফিনবক্স হাতে নিয়ে বসে আছে......

এভাবেই কয়েকদিন আনহা দেখে ছেলেটাকে । কিন্তু একদিন দেখে ছেলেটা টিফিনবাক্স না খুলেই গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সেদিন আনহা নিজে থেকেই ওর কাছে যায়.....

আনহা: এই পিচ্চি কি করছিস একা একা বসে.....

আনহার কথা শুনে ওর দিকে তাকায়.....

ইহান:........ [ নিচের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে ]

আনহা: কিরে.... বল...

ইহান:......

আনহা গিয়ে বেঞ্জে বসতেই ছেলেটি দৌড়ে পালিয়ে গেল...এটা দেখে আনহা নিজেকে দেখে নিল....

আনহা: নাহহহ... সবাই পেত্নী বললেও এখন তো আমাকে মানুষের মত লাগছে... তাহলে পালালো কেনো... 🙄🙄🙄

কিছুক্ষন ভেবে....

আনহা: তারমানে ও সত্যি ভু -ভু-ত- ত দেখেছে.... 🙄🙄 ভুতত.... [ বলে নিজেও দৌড় দিলো ]

পরের দিন.........


আনহা: এই পিচ্চি কি করছিস একা একা বসে.....

আনহার কথা শুনে ওর দিকে তাকায়.....

ইহান:........ [ নিচের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে ]

আনহা: কিরে.... বল...

ইহান:......

আনহা গিয়ে বেঞ্জে বসতেই ছেলেটি দৌড়ে পালিয়ে গেল...এটা দেখে আনহা নিজেকে দেখে নিল....

আনহা: নাহহহ... সবাই পেত্নী বললেও এখন তো আমাকে মানুষের মত লাগছে... তাহলে পালালো কেনো... 🙄🙄🙄

কিছুক্ষন ভেবে....

আনহা: তারমানে ও সত্যি ভু -ভু-ত- ত দেখেছে.... 🙄🙄 ভুতত.... [ বলে নিজেও দৌড় দিলো ]

পরের দিন......... আনহা সেই একভাবে ছেলেটাকে দেখতে পায়......

আনহা: এইটা কেমন ছেলেরে কথাও বলল না। আবার পালিয়েও গেল🤔🤔🤔

আনহা আবার ওর কাছে যায়....

আনহা: এই পিচ্চি কাল কথা না বলে ওভাবে পালিয়ে গেলে কেন???

ইহান:...... [ আনহার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে ]

আনহা: কি ব্যপার কথা বলবে না নাকি😡😡😡

ইহান:.......

আনহা: [ আজব কথা বলতে পারে না নাকি।] আচ্ছা বুঝতে পেরেছি তুমি কথা বলতে পারো না।

উহান:...... [ ড্যাব ড্যাব করে আনহার দিকে তাকিয়ে ]

আনহা: [ আহারে... এত্ত কিউট ছেলেটা কথা বলতে পারে না। তারপর আনহা ইশারায় ইহানকে কিছু বুঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু ইহান কিছুই বুঝতে না পেরে ওর নিচের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে ]

আনহা: ইসসস.... আগে যদি Btv সাংকেতিক খবর মন দিয়ে দেখতাম তাইলে আমিও আজ এই পিচ্চির সাথে কথা বলতে পারতাম। [ মন খারাপ করে ] আচ্ছা এই পিচ্চি শোন.... [ কিন্তু কই এখানে তো কেউ নেই......]

আনহা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে পিচ্চি চলে গেছে। আনহা বুঝতে পারে টিফিন পিরিয়ড শেষ.......


এভাবেই প্রতিদিন আনহা টিফিন পিরিয়ডে ইহানের কাছে গিয়ে একা একা বকবক করত আর ইহান মাথা নিচু করে শুনত। একটা কথাও বলত না। প্রথম প্রথম ইহানের বিরক্তি লাগলেও পরে ইহান আনহার কথা গুলো শুনে যেত..... কারন ইহান নিজে থেকে কারো সাথে মিশতে পারত না কখনো। আনহাই প্রথম যে ইহানের কাছে এসে ওর সাথে কথা বলত......

অন্তি: আচ্ছা অর্নি [ আনহার ডাক নাম ] তুই প্রতিদিন ওই পিচ্চি ছেলেটার সাথে কি এমন কথা বলিস.......

আনহা: আর বলিস না ছেলেটা কথা বলতে পারে না.... আর সবাই ওকে মারে। আমার খুব খারাপ লাগে তাই আমি ওর সাথে গিয়ে কথা বলি। আমার ভালো লাগে কথা বলতে.....

অন্তি: তাহলে বাদরের মত হাত মুখ বেকাস কেন???

আনহা: আরে ও তো বোবা কালাও হবে শুনতে পায় না। তাই এরকম ভাবে বলি। যতটুকু বোঝে আরকি... তা আইডিয়া কেমন???

অন্তি: তোর মত এলিয়েনের আইডিয়া এলিয়েনের মতই হবে....

আনহা: অন্তি😭😭😭

অন্তি: ওই দেখ তোর জান.....

আনহা: ওরে আমার ফু... চো... কা.... জানু দাড়াও আমি আসছি....

অন্তি: ফুচকা.... 😡😡😡

তারপর দুজন মিলে ফুচকা খায়। ইহান স্কুল থেকে বেড়িয়ে আনহাকে ফুচকা খেতে দেখে ঠোঁট উলটে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনি ওর গাড়ি আসে.... আর ইহান নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যায়.......


পরের দিন টিফিন পিরিয়ডে ইহান টিফিন বক্স খুলে বসে থাকে.... কিন্তু কিছু খায় না ঠিক তখনি আনহা আসে। এ কয়দিনে ইহান আনহাকে সহজভাবে নিতে না পারলেও আনহার কাছে ইহান যেন ওর একটা ফ্রেন্ড হয়ে গেছে। ও প্রতিদিন এসে ইহানের সাথে বকবক করে নিজের সারাদিনের কাজের বিস্তারিত বর্ননা করে। কিন্তু ইহান শুনতে চায় কিনা তা শুনতে চায় না।

আনহা নিজের টিফিন বাটি নিয়ে এসে ইহানের পাশে বসে পরে। ইহান প্রতিদিনের মতই নিজের টিফিন বক্সটা একবার খুলে দেখে তারপর বন্ধ করে নেয়। আর ইহানের পাশে বসে আনহা খেতে থাকে আর বকবক করতে থাকে....

আনহা: জানিস পিচ্চি আজ আমি নিজের হাতে খাবার বানিয়েছি। ঝাল মিষ্টি আর টক একদম আমার মনের মত.... আহা কি খেতে....

আনহার এমন কথায় ইহান আজকে টিফিন বক্সটা একটু ইচ্ছে নিয়ে খুলল। কিন্তু খুলেই হতাশ হয়ে আবার তা বন্ধ করে নিল। তারপর মুখ ভার করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল.....

আনহা: আচ্ছা তুই টিফিন খাস না কেন??? তোর কি ক্ষিদে পায় না নাকি???

ইহান:.....

আনহা:আচ্ছা তুই কি এনেছিস দেখি... [ ইহানের হাত দেখে বাটিটা নিয়ে নেয় ] এমা এসব কি... [ নাক ছিটকে ] এসব ছাইপাস কেউ কিভাবে খায়.... তুই এসব কিভাবে খাসরে। আমার তো দেখেই বমি আসছে......

ইহান নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। এবার আনহা বুঝতে পারে ইহান না খেয়ে কেন প্রতিদিন তা ফেলে দেয়। কারন বাটিতে স্যান্ডুইচ, ফল আর একটা সিদ্ধ ডিম আছে। আসব এইটুকু ছেলে কেন যেকারো কাছেই বিরক্তিকর৷...

আনহা: তোর কি ক্ষিদে পেয়েছে...???

ইহান:..... [ মাথা নেড়ে না বলল ]

আনহা দেখল ইহান ওর খাবারের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। বেশ বুঝতে পারছে ও আনহার খাবারটা খেতে চায়। কিন্তু বলতে পারছে না।

আনহা: এখন আমি এতগুলো খাবার কিভাবে খাব.... আর আমিতো খাবার ফেলতে পারি না। আল্লাহ নাইলে পরে কপাল থেকে খাবার উঠাই নিব😭😭😭

ইহান এমন কথা শুনে আনহার দিকে তাকায়.....

আনহা: আল্লাহ প্লিজ তুমি আমার কপাল থেকে খাবার উঠাই নিয়ো না। 😭😭😭 আমি ইচ্ছে করে খাবার নষ্ট করছি না নেহাত খেতে পারছি না তাই.... আচ্ছা আমি যদি কাউরে খাওয়াই... [ ইহানের দিকে তাকিয়ে ] এই পিচ্চি প্লিজ আমাকে হেল্প কর খেতে তুই হেল্প করলে আল্লাহ রাগবে না। আর আমার কপাল থেকে খাওয়ন নিবে না। 😭😭😭

ইহান:......

আনহা: ওই পিচ্চি তুই কি চাস আল্লাহ খাবার উঠাই নেক😡😡😡

ইহান মাথা নেড়ে না বলল....

আনহা: তাইলে খা না পিচ্চি প্লিজ😭😭😭

ইহান খাবার টার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হ্যা বলল.....

আনহা: [ এইবার লাইনে আসছে। কিন্তু আমার ভাগে কম পরব যাই হোক। ] নে.....

ইহান খেতে গেল কিন্তু পারল না কারন পরোটার সাথে আনহার বানানো পাও ভাজির ভাজিটা উঠাতে পারল না। এটা দেখে আনহা হেশে নিজেই ওকে খাইয়ে দিল। ইহান এই প্রথম কারো হাতে খেল। ছোট হলেও ওকে নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়। ও আনহার দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে.....

আনহা: আরো খাবি....

ইহান: [ মাথা নেড়ে না বলল ]

আনহা: [ হায়রে আর থাকলে তো খাওয়াইমু। আল্লাহ ক্ষিদে পায়নাই তাই এত খাচ্ছে পাইলে কি হত🙄🙄🙄 ]

ইহান খাবার টা খেয়ে ফোকলা দাতে একটা মুচকি হাশি দেয়। এই প্রথম ইহানের মুখে হাশি দেখল আনহা। ওর পেট টা ভরে গেল। তখনি ঘন্টা দিয়ে দেয়। ইহান চলে যায়। আর আনহা নিজের বাটির দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বাটিতে লেগে থাকা ভাজিটা আঙুল দিয়ে মুছে খেয়ে কান্না করে দেয়.....

আনহা: আমার ভাজি 😭😭😭

তারপর ও চলে যায়। টিফিনে কিছু পায় না বলে ছুটির পর বাসায় গিয়ে খাওয়া শুরু করে।

মা: কিরে এভাবে খাচ্ছিস কেন???

আনহা: ক্ষিদা লাগছে খাওয়ন দেও।

মা: যাওয়ার সময় এতটা খেয়ে গেলি। টিফিনে নিয়ে গেলি। এখন আবার এত ক্ষিদে...

আনহা: আব্বু... 😭😭😭

মা: আচ্ছা থাম.... দিচ্ছি....,


এভাবেই আনহার সাথে ইহানও ওর সাথে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু সেখানে কথা আনহা বলত ইহান শুধু শুনত। এমন করে ওদের দিন গুলো কাটতে লাগল।

কিছুদিন পর হঠাৎ আনহা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। আর প্রতিদিন টিফিনের সময় ইহান আনহার জন্য অপেক্ষা করত। কিন্তু আনহা আসত না। তাই ও বাসায় গিয়ে প্রচন্ড কাদত। কারন আনহা ছাড়া ইহানের কোনো সঙ্গী ছিল না। আনহাই ছিল ওর একমাত্র সঙ্গী।

এভাবে কয়েকদিন কাটার পর আনহা স্কুলে আসে। আনহা বরাবরের মত টিফিনের সময় ওই বেঞ্জে গিয়ে ইহানের পাশে বসে। আনহাকে দেখে ইহান মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে নেয়। তখনি আনহা ইহানের হাত ধরে নেয়।

আনহা: এই পিচ্চি কই যাস....

ইহান:.......

আনহা: রাগ করেছিস আমার উপর। আসলে এতোদিন আমার অসুখ ছিল তাই আসতে পারিনি।

ইহান:........

আনহা: বললাম তো সরি। [ কান ধরে ] আচ্ছা এই দেখ তোর জন্য আমি নিজের হাতে পাও-ভাজি বানিয়ে এনেছি তুই পছন্দ করিস বলে।

ইহান:......

আনহা: এখনো রেগে থাকবি। আচ্ছা তোকে কথা দিচ্ছে আর কোনোদিন তোকে না বলে কোথাও যাব না। কিছু হলে তোকে বলব.... এবার তো খা....

ইহান:.....

আনহা: বুঝতে পেরেছি... বলে ইহানকে টেনে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। [ আর ইহান ও চুপচাপ আনহার হাতে খেয়ে নেয় ] বড্ড বেশি মানি পিচ্চিটা কিন্তু আদর করলে সব ঠিক😁😁😁 এই জন্য তোকে এত ভালোবাসি..... চল পিচ্চি..... তোর নামটাও আমার এখনো জানা হলো না...... যাই হোক পিচ্চিটাই ঠিক আছে....

এভাবেই আনহার সাথে কাটতে থাকে ইহানের দিন গুলো। ভাগ্যের পরিহাসে দুইটি ছোট্ট হৃদয় একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়। ইহান আনহাকে পেয়ে নিজের সঙ্গী পেয়েছে। আর আনহা পেয়েছে কথা বলার মানুষ.......


বর্তমান..........

আনহা ঘুমের ঘোরে নিজের উপর কিছু ফিল করতে পারে। আর ঠোঁটের উপর কিছু স্পর্শ করতে পারে। কিছু একটা আনহাকে খুব শক্ত করে ধরে আছে। আনহা চেয়েও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। নিজের চোখ মেলে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে আনহা। ওওও বার বার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যর্থ হয় আনহা।

এবার আনহা সহ্য করতে পারে না। ধম বন্ধ হয়ে আসছে আনহার। তাই খুব জোরে চিতকার করে উঠে। পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আশেপাশের দেখতেই দেখে ও ইহানের রুমে বেডের উপর শুয়ে আছে। কিন্তু ও তো দোলনায়..... তাহলে কি ইহান .... কিন্তু কই ইহান.... আনহা

আনহা গিয়ে লাইট জালাতে দেখে ইহান সোফায় শুয়ে আছে। আর কানে হেডফোন লাগানো...

আনহা: ওও তারমানে এইজন্য ও আমার চিতকার শোনেনি যাক ভালোই হলো। নাইলে ওকে কি বলতাম। কিন্তু এটা যদি আবার হয় তবে......

[ তারপর আনহার আয়নার দিকে চোখ গেল........ আনহার চোখ কপালে.....

আনহা: এটা..... [ ভয় পেয়ে ]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন